দীর্ঘ রজনী পর্ব -১৭+১৮

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:১৭

গাড়ি থামিয়ে নিশ্বঃচুপ হয়ে বসে আছে সাদ। নিরবতা ভাঙ্গার প্রয়োজন মনে করেনি। সে চায় পাশে বসা রমনী নিরবতা ভেঙ্গে কিছু বলুক,প্রশ্ন করুক।
কিন্তু সেই রমনী নিরবতা ভাঙ্গতে নারাজ। সেতো বাইরের অন্ধকারচ্ছন্ন পরিবেশ দেখায় মত্ত।

খানিকটা বিরক্ত হলো সাদ। সিট বেল্ট খুলে ঘুরে বসলো সাজির দিকে। চুড়ি বিহীন শূন্য হাত জোড়া নিজের হাতের আদলে নিতেই কেঁপে উঠলো সাজি। আচম্বিত হয়ে তাকালো সাদের দিকে। সাদের নরম দৃষ্টি আরো বেশি কাঁপিয়ে তুলছে তাকে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সাদ খানিকটা পোক্ত করলো হাতের বাঁধন।
সাজি চোখে সুধালো, কি করছেন?

চোখের ভাষা পড়তে দেরী হলো না। বক্র হেসে মাথা কাত করলো সাদ। অতঃপর ডান হাত উঠিয়ে সাজির খোঁপা খুলে কৃত্রিম ফুল ছুড়ে ফেললো বাইরে। মূহুর্তে চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে পড়লো।

সাদের এমন কাজে থমকে গেলো সাজি। চোখ জোড়া কোটর থেকে বেরিয়ে আসার জোগাড়। জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলো, কি হলো সাদ ভাই? হঠাৎ করে এতো অপরিচিত লাগছে কেন আপনাকে? কথা গুলো মনে মনে আওড়ালেও মুখ দিয়ে বেরুলো না। কম্পিত ঠোঁট জোড়া দাঁত দিয়ে চেপে ধরে কম্পন থামালো।

সাদ আলতো হাতে সাজির চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠলো,, শাড়ির সাথে খোলা চুলে সুন্দর লাগে তোকে। চুল বাধবি না,তোর খোলা চুল আমার পছন্দ তাই চুল বাঁধবি না।

সাদের এহেন কথায় একরাশ লজ্জায় নুইয়ে গেলো সাজি। চোখ বুজে মাথা নিচু করলো। সাদ পেছনের সিট থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে খুললো। ঝনঝন শব্দে মাথা উঠালো সাজি।

চুড়ির দোকান খুলে বসেছে সাদ । হরেক রংএর কাঁচের চুড়ি। সেই প্যাকেট থেকে বেছে বেছে লাল চুড়ি খুঁজে নিতে ব্যাস্ত সে।

সাজি তা দেখে মিনমিনে গলায় বলল,, এতো চুড়ি কার সাদ ভাই?কিই বা খুঁজছেন এতো?

সাদ অতি মনোযোগী হয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,, সব আমার প্রনয়িনীর। তার জন্যই লাল চুড়ি খুঁজছি।

সাজি অবুঝের মতো চুড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে বলল,, দিন আমি খুঁজে দিচ্ছি।

সাদ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। মেয়েটা সবটা না বুঝেই করছে। বুঝলে হয়তো লজ্জায় নুইয়ে পড়বে। সাদ রহস্য করে বললো,,

~ সত্যি খুঁজে দিবি?

সাজি হাত থেমে গেল। টনক নড়লো সাদের কথায়। বারকয়েক সাদের বলা কথাটা মনে মনে আওড়ালো। এইখানে আসা ওবদি যা যা ঘটলো সবটা পুনরায় চিন্তা করলো। সাজি সবটা বুঝতে পেরে ভীরু চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,, প্রনয়ীনি?

সিটে মাথা এলিয়ে সাজির একহাত টেনে বুকের বাঁ পাশে চেপে ধরলো সাদ। ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত গলায় বলে উঠলো,, হুম! এইখানটায় থাকে সে। অনেক বছর হলো জেঁকে বসেছে।বড্ডো অবুঝ ওই মেয়ে।

থমকালো সাজি,কিঞ্চিত আবাক হলো। সাদের চেপে ধরা হাতের দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল। ঘোর লাগা চোখে চাইলো। না হাত সরালো, না চোখ সরালো। বরং বিনা দ্বিধায় জিজ্ঞেস করলো,, এখন কোথায় সে?

সাদ সাজির চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বলল,, ঠিক আমার চোখে সামনে , হৃৎপিণ্ডের খুব কাছে। দেখবি তুই তাকে?

সাজি তৎক্ষণাৎ হাত সরিয়ে মাথা নাড়ালো। সাদ বাঁকা হেসে দু মুঠো লাল চুড়ি সাজির হাতে পরিয়ে দিতে দিতে বললো,, তোর নজর লাগবে সাজি। তোর মতো চঞ্চল মেয়ের নজর লাগবে। আমার প্রনয়ীনি যে বড্ডো সরল ,বড্ডো ভীতু।তোর নজর লাগবে।

সাজি মুচকি হেসে মাথা নোয়ালো। বুকের ভেতর কালবৈশাখী ঝ*ড় উঠেছে অনূভুতির ঝড়।সবটাই সাদকে ঘিরে।সাজি জানে সাদের প্রনয়িনী কে। তাও মুখে শোনার লো*ভ সামলানো মুশকিল।সাজি অতোটাও বোকা নয় যে এতো কিছুর পরেও বুঝবে না। বরং জেনে বুঝেও বোকার মতো রইলো। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো। এতো সকাল ধরা দিবেনা তাকে। আরেকটু পোড়াবে।

সাজি রাগ, ভয় উপেক্ষা করে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। আর সাজির এই লাজুক চেহারাই সাদের কাছে উত্তর স্বরূপ। উত্তরের অপেক্ষা রইলো না তার। ক্ষীন ইচ্ছে থাকলেও সাদ জানে এই রমনী তাকে সেই উত্তর এতো সহজে দিবে না। এই রমনী তাকে জ্বা*লিয়ে পু*ড়িয়ে শে*ষ করে তবেই উত্তর দিবে।

সাদ গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। সাজির পাশের দরজা খুলে হাত ধরে নামালো। ঈষৎ আলো আর ঝিরঝির বাতাস সব মিলিয়ে এই পরিবেশ অনূভুতি ব্যাক্ত করার জন্য উপযুক্ত। সাজি দুজনের হাতের বাঁধনের দিকে তাকালো। সাদ বক্র হেসে বলল,, মিলিটারি ক্যাম্পে এইভাবে হাঁটা যায় না সাজবাতি। সেই হিসেবে আমি মিলিটারি ক্যাম্প থেকে ভালোই।

চমকে উঠলো সাজি। তার যতটুকু মনে পড়ে এইকথা শুধু তার বাবাকেই বলেছিলো। তাহলে সাদ ভাই শুনলো কি করে?বাবা বলে দেয়নি তো? ঘা*বড়ে গেল সাজি। আড়চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সাদ রসিকতা করে বললো, তুই চাইলে সত্যি সত্যি তোকে মিলিটারি ক্যাম্পে রেখে আসতে পারি।

~আমি কখন বললাম এইসব?

~তুই বলিসনি। হয়তো আমি ভুল শুনেছি।

~শুনতেই পারেন।

সাদ সাজির হাত সামনে এনে কোমলমতি গলায় বলল,, প্রসঙ্গ যেখানে সাজি,সাদ সেখানে ভুল শুনতেই পারে না।

সাজি মুচকি হেসে সাদের হাত ধরে সামনে পা বাড়ায় । তার সাথে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি হানা দেয়। সাজি মুচকি হেসে মিনমিনে গলায় বলল,,ভালোবাসেন সাদ ভাই?

সাদের পা থেমে গেল। সন্দিহান হয়ে সাজির দিকে তাকালো। সাজির দুষ্টু হাসি উপলদ্ধী করতেই জবাব দিলো,, উঁহু বাসি না।

~ তাহলে সেই দিন গাড়ির ভেতরে ঘুমের ঘোরে বললেন কেন?

সাজির কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,, মানে! কি বলেছি?

সাজি আড় চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,, ভালোবাসি সাজবাতি। বড্ড বেশি ভালোবাসি।

সাদের চোখ জোড়া কোটর থেকে বেরিয়ে আসার জোগাড়। কপালে সুক্ষ্ম ভাজ ফেলে বললো,, সত্যি?

সাজি সাদের হাত ছাড়িয়ে শাড়ির আঁচল ধরে দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো,, এই সাজি মিথ্যা বলেনা সাদ ভাই। আপনি আরো আগেই ধরা পড়েছেন। বিশ্বাস না হলে আপনার পিএ কে জিজ্ঞেস করুন।

পিএর কথা বলতেই মনে পড়লো, ওইদিনের পর থেকে রায়হান তাকে দেখলেই মিটমিট করে হাসে। সেই হাসির কারন এতো দিন না বুঝলেও এখন ঠিকই বুঝতে পারছে।
সাদ মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তার মানে সে অনেক আগেই বলে দিয়েছে?তার সাজবাতি অনেক আগেই জেনে বসে আছে! তাহলে এতো দিন জিজ্ঞেস করলো না কে? আফসোস হচ্ছে খুব এই ভেবে,এতো বছরের ভালোবাসা ঘুমের ঘোরে প্রকাশ পেলো?

সাদ দৌড়ে পেছন থেকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি ঠেকালো।সাজি চোখ বন্ধ করে ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো। সাদ ফিসফিস করে বলে উঠলো,, ভালোবাসিস সাজবাতি? একবার বেসে দেখ। এই সাদ তোকে ঠকাবে না।

সাজি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে পেছনে ঘুরলো। সাদের হাত ধরে গাড়ির দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো, ছিঃ সাদ ভাই এইসব কোন ধরনের কথা। আমি কেন এইসব করতে যাবো? তওবা তওবা।মা শুনলে মা*রবে।

সাদ ঠোঁট টিপে হেসে বলল,, ওকে দ্যান ফাইন। বিয়ের পর বাসিস। আপাতত আমি ছাড়া কারো দিকে না তাকলেই চলবে।

সাজি গাড়িতে বসলো। সিট বেল্ট বেঁধে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, বুঝ হওয়ার পর থেকে কারো দিকে তাকাতে দিয়েছেন! যে এখন এতো কিছুর পর দিবেন। ঘাড় ত্যাড়া।ভালোবাসবো না ছাই।আগে সব ধমকের বদলা নিবো। চোখের সামনে কোনো ছেলে পড়লে দুই এক মিনিটের প্রেম সেরে ফেলবো।

সাদ গাড়ি স্টার্ট করে নিরেট স্বরে বলে উঠলো ,, ভালোবাসা অন্ধ হয়। আমার আবার অন্ধ বউ নিয়ে সংসার করতে কোনো অসুবিধা নেই। এমন চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। নয়তো চো*খ দুটো খু*লে ফ্রিজে রেখে দিবো।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অনিয়মের জন্য অনেক অভিযোগ আছে কিন্তু কিছুই করার নেই 🥺😞)গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:১৮

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেঁজুতি। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। আজ সকালে তার ভাইয়ের ফোনে একটা কল এসেছে তাও আবার হাসপাতাল থেকে। লোকটা জানিয়েছে নিশানকে কেউ বেধম পি*টি*য়ে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে। সেখান থেকেই কিছু লোক ধরাধরি করে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছে। অজ্ঞান অবস্থায় থাকায় পেশেন্টের বাড়ির লোকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। এখন জ্ঞান ফিরেছে তাই পেশেন্টের বাড়ির লোকজনকে জানাচ্ছে।

রাতে নিশান বাড়ি ফেরেনি। মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছিলো , অফিসের কাজে শহরের বাইরে যাচ্ছে। এরপর কেউ আর মাথা ঘামায়নি। সকালে হাসপাতালের কল পেয়েই সবাই কান্না জুড়ে দিয়েছে। সবার মাঝে সেঁজুতিই ছিল যে মুখে আফসোস করলেও মনে মনে বেশ খুশি। সেঁজুতির মতে একটা মেয়েকে যে ম*লে*ষ্ট করার চেষ্টা করে তার বেঁ*চে থাকার অধিকার নেই। সেইখানে এতো শুধু হাসপাতালে ভর্তি। সেঁজুতি মনে মনে তাদের শুকরিয়া আদায় করলো যারা নিশানকে বে*ধম পি*টি*য়েছে ।

নিশানের তথ্য মতে রাতে একদল ছেলে পেলে গাড়ি থামিয়ে হঠাৎ আ*ক্রমন করে বসে। গাড়ির চালককে ছেড়ে দিলেও তাকে ছাড়েনি। হাত পা বেঁধে জা*নো*য়া*রের মতো মে*রে*ছে।একটা সময় ব্যাথ্যার চো*টে সে সে*ন্সলেস হয়ে যায়।

ছেলের মুখে সবটা শুনে সাজির মামী লুনা আহাজারি করে কাঁদছে। সন্তানের এই অবস্থা মায়ের জন্য ঠিক কতোটা পীড়াদায়ক সেটা শুধু একজন মা-ই জানে। লুনা বুক থাবড়ে কাঁদছে। সেঁজুতি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সবার সন্তান সবার কাছে মূল্যবান লুনার ক্ষেত্রেও তাই। নিশান অ*পরাধ করলেও সে লুনার একমাত্র ছেলে যাকে লুনা নাড়ি ছেঁড়া ধন বলে আক্ষায়িত করে। তেমনি সাজিও সেঁজুতির একমাত্র মেয়ে, যে মেয়ের সাথে নিশান জ*গ*ন্যতম কাজ করতে চেয়েছিল। লুনাকে দেখে সেঁজুতির কষ্ট হলেও নিশানের জন্য বিন্দু পরিমাণ খারাপ লাগা কাজ করছে না। লুনাতো মা! কোনো মা কখনো চাইবে না তার সন্তান খারাপ হোক। তবে মা মা-ই হয়, সন্তানের জন্য পুরো পৃথিবীর বিপক্ষে যেতে দুবার ভাববে না, এইবার হোক সেই সন্তান জ*গ*ন্য অপ*রাধী।

এইদিকে আমজাদ স্ত্রীকে শান্তনা দিতে ব্যাস্ত। পুরুষদের কাঁদতে নেই।পুরুষ হওয়ার কারনে আমজাদ কাঁদতে পারছে না। তা নাহলে কষ্ট তারও হচ্ছে। তার মতে ঘরের পুরুষেরা যদি কাঁদে, তাহলে তাদের উপর ভরসা করে থাকা রমনীদের ভে*ঙে গুঁ*ড়িয়ে যেতে দেরী হবে না। এইজন্যই আমজাদ শক্ত হাতে সবটা সামলাচ্ছেন।

নিশানের বাম পায়ের গোড়ালির হাড়ে ফ্রেকচার হয়েছে, বাঁ হাতের আঙ্গুল,আর ডান হাতের কব্জিতে ফ্রেকচার হয়েছে। কপালে কে*টে গেছে, সাথে পুরো শরীরে অসংখ্য মা*রে*র দা*গ যা হকিস্টিক দ্বারা করা হয়েছে। নিশানের অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে যারা মে*রে*ছে তাদের নিশানের উপর কোনো ক্ষো*ভ ছিল। যা মে*রে মিটিয়ে গেছে।সব মিলিয়ে নিশানকে কমপক্ষে দুই মাস কিংবা তারো বেশি সময় ধরে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে। আপাতত এক সপ্তাহ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করবে। পরে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখানেই বেড রেষ্টে রেখে সেবা যত্ন করে সুস্থ করতে হবে।

একদিকে পুলিশ অন্যদিকে হাসপাতালে ফর্মালেটি সবটাই আমজাদকে দেখতে হচ্ছে। ভাইয়ের এই ক্রাইসিসের সময় তার পাশে সেঁজুতিকেই থাকতে হবে। দুই ভাই বোন একজন আরেকজনের খুঁটি। সেঁজুতি তার ভাইকে খুব ভালোবাসে। সেঁজুতির আজ বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ভাইয়ের খাতিরেই এখনো ওবদি এইখানে আছে। মা আর লুনা দুইজনকেই তাকে সামলাতে হবে।জুবায়ের সবটা শুনে আর মানা করেনি। সাজি ওর ফুফুর কাছে আছে দেখে থাকার জন্য অনুমতি দিয়েছে।

____

এইদিকে আজ দুইদিন সাদ সাজির দেখা পায়নি। মাথার চুল টা*নতে টা*নতে পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে সাদ। একপ্রকার রাগে হিস হিস করছে।

~ এই মেয়েকে সবটা জানানো একদম উচিত হয়নি। দুই দুইটা দিন চোখের সামনেই পড়ছে না। একবার খালি সামনে পাই! ভালোবাসি বলেকি মাথায় উঠে নাচবে?থা*প্প*ড় মে*রে দাঁত ফেলে দিবো। উফ!!!এই জন্যই বলে বেশি ভালোবাসা দেখাতে নেই, অতি ভালোবাসায় মাথায় উঠে নাচে। অফিস থেকে ফিরে ছুটাচ্চি নাচ।

সাজি পা টিপে টিপে কিচেনে চলে গেলো। সাদের হাতে পড়লেই তার খবর আছে। এইদিকে রেনু টেবিল মুছতে মুছতে যোহুরির চোখ দ্বারা সাজিকে পর্যবেক্ষণ করছে। দুইদিনে সাদ ভাইয়া আর সাজি আপাকে নিয়ে তার গবেষণা করা শেষ। দুইয়ে দুইয়ে চার না হয়ে, দুই আর দুই পাশাপাশি বসিয়ে বাইশ মিলিয়ে ফেলেছে। এখন শুধু হাতেনাতে ধরার অপেক্ষা।

সিংকের পাশের প্লেট বাটি সরিয়ে উপরে উঠে পা গুটিয়ে বসলো সাজি। এইভাবে ফুপ্পির পাশে বসে আবদার জুড়ে দেওয়া সাজির ছোট বেলার অভ্যাস। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।

সাজিকে কিচেনে দিকে আসতে দেখে অনিলা রহমান বাটি করে আমের আচার নিয়ে রাখলো। বিনা বাক্যে সাজির হাতে ধরিয়ে আবার রান্নার কাজে মনোযোগ দিলো।

~ ওয়াও ফুপ্পি! তুমি কি করে জানলে এখন আমার আচার খেতে ইচ্ছে করছে?

সাজির উচ্ছাস দেখে অনিলা রহমান হেসে বললো,, তোর জন্মের পর আমিই তোকে প্রথম কোলে নিয়েছি। জুবায়ের নিতে চেয়েছিল আমি দেইনি। তোর জন্মের পর সেঁজুতি অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এককথায় আমিই তোর দেখা শুনা করি। প্রথম মুখে ভাত আমিই দেই। তোকে আমি আমার মেয়ের মতো কোলেপিঠে করে বড় করেছি সাজি। তাহলে তোর ইচ্ছে অনিচ্ছে আমি জানবো না কেন?

সাজি মুখে লেগে থাকা তেল মুছে অনিলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। দুগালে চুমু দিয়ে আদুরে গলায় বলল,, এই জন্যই বেশি ভালোবাসি তোমায়।

অনিলা সাজির কাজে হেঁসে উঠে বললো,, ঠিক আছে ছাড়! মাংস গুলো পু*ড়ে যাচ্ছে।

~ ছেড়ে দিলাম। এখন আমাকেও শেখাও। তুমি কিভাবে কি রান্না করছো।

~ রান্না পরে শেখাবো। আগে বল সাদের সাথে ঝগড়া হয়েছিলো কেন?

অনিলা রহমানের কথায় সাজি শুকনো ঢোক গিলে বললো, কি বলো ফুপ্পি? ঝগড়া! সাদ ভাইয়ের সাথে? তোমার রাগী ছেলের সাথে ঝগড়া করার মতো সাহস আমার কি আছে?

অনিলা রহমান ঠোঁট টিপে হেসে বলল,, আমার ছেলে অতোটাও রাগী নয় যতটা তুই মনে করিস। আর রইলো সাহসের কথা। এই সাহস তোর বেশি থাকার কথা।

ফুপ্পির কথায় সাজি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার কথার আগা মাথা কিছুই বোধগম্য হলোনা।

~ তোর বেলায় একটু রাগ দেখায় সত্য তবে সেটা তোর ভালোর জন্যই। আমার রাগী ছেলেটা তার রাগের আড়ালে তোর জন্য যত্ন, ভালোবাসা লুকিয়ে রাখে।

অনিলা রহমানের কথা কর্ণোগোচর হতেই মনে পড়লো দুইদিন আগে সাদের সাথে কাটানো সেই মূহূর্তের কথা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সাজি। সাজির ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে পাজা কোলে তুলে নিলো । সাদের কোলে থাকা অবস্থায় ঘুম ভেঙ্গে গেল সাজির। কোল থেকে নামতে ছুটোছুটি করেছিল ঠিকই কিন্তু সাদ নামতে দেয়নি। উল্টো ধমকে চুপ করিয়ে দিলো। মায়ের সামনে দিয়ে রুমে নিয়ে বিছানায় রেখে তবেই খান্ত হলো।তখনই সাজি রেগে বলেছিলো এমন করলে আর চোখের সামনেই পড়বে না।
সব শুনে সাদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সাদ বেরিয়ে যেতেই সাজির টনক নোড়লো।শাড়ির কুচি অবস্থা শোচনীয়,দুইকদম হাঁটলেই মানসম্মান সব পায়কারী দরে বিক্রি করে দিতে হতো। ভাগ্যিস কোলে তুলে নিয়ে এসেছিল।নয়তো সাদ ভাই আর ফুপ্পির সামনে খুলে গেলে মুখ দেখানো মুশকিল। সেই লজ্জায় আজ দুইদিন সাদ ভাইয়ের সামনে পড়েনি সে। সত্যি সাদ ভাইয়ের রাগের আড়ালে ভালোবাসা,যত্ন লুকিয়ে রাখে। সাদ ভাই নামক মানুষটা যত্ন করে ভালোবাসতে জানে। আগে বুঝতে পারেনি সত্য তবে এখন সেই মানুষটির বসবাস পুরো হৃৎপিণ্ড জুড়ে। কখন যে এতোটা জায়গা দখল করেছে কে জানে!

~ কিরে কোথায় হারালি? আচার গুলো শেষ কর পরে না হয় মুচকি মুচকি হাসবি!

অনিলা রহমানের কথায় সাজি ভাবনার জগৎ থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। কোনোরকম আমতা আমতা করে আচারের বাটি নিয়ে রুমের দিকে ছুটলো। এইখানে থাকলে লজ্জায় ম*রে যাবে।বিড়বিড় করে নিজেকেই নিজে ধি*ক্কার জানালো।ছিঃ সাজি তোর এই অ*ধঃপ*তন! প্রেম ভালোবাসা তোকে ডোবালো। মুচকি হেসে নিজেকে নির্লজ্জ প্রমাণ করছিস তুই। কি লজ্জা! কি লজ্জা!

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here