গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৩
সপ্তাহ খানেক আগে সেঁজুতি হাসান সাজি আর রেনুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে। বাড়ির অবস্থা দেখে পুরো বাড়ি পরিস্কার করায় লেগে পড়লো। বাড়িতে মানুষ না থাকলে সেই বাড়ি আর বাড়ি থাকে না।ধুলো ময়লা জমে একাকার হয়ে যায়।পুরো এক সপ্তাহ ধরে গুছিয়েছে সব।
সাজি বাড়ি ফিরেছে ঠিকই কিন্তু পুরোপুরি ফিরতে পারেনি।তার মন আটকে আছে ওই বাড়িতে। সাদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে পড়তেই মন খারাপ করছে বারবার। এই একসপ্তাহে সাদ ভাইকে কে একবারও দেখতে পায়নি সাজি,না পেরেছে কথা বলতে। আশেপাশে থাকলেই শুধু হুটহাট ভালোবাসা জেগে উঠে তা না হলে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। একটা কল কি দেওয়া যেতো না! আমার মোবাইল নেই তো কি হয়েছে মায়েরটাতে দিতে পারতো। হু নোছ!হয়তো ওই রশনি শা*কচু*ন্নীর সাথে আড্ডা দিচ্ছে।সাজির মনে অভিমানের পাহাড় জমা হতে লাগলো। মনের ঈশান কোণে ঈষৎ কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। অভিমান হবেই বা না কেন! মন মস্তিষ্ক জুড়ে জেঁকে বসা মানুষটা ভুলতে বসেছে তাকে। সব মিলিয়ে বসন্তে বর্ষার আগমন।
নির্দিষ্ট কক্ষে বসে ফাইল চেক করছে সাদ। আজ চেয়ারম্যানের সাথে মিটিং আছে। এগারোটায় কনফারেন্স রুমে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। এতো শত ব্যস্ততার মাঝেও মোবাইলের স্ক্রীন লক খুলে ওয়াল পেপার দেখতে একটুও ভুল করছে না। প্রতিবার মুচকি হেসে ওয়াল পেপারে দেওয়া ছবিটা দেখছে। ওয়াল পেপারে সাজির শাড়ি পরা ছবি দেওয়া যা রিমির বার্থডেতে তোলা হয়েছিল। যেখানে সাজি শাড়ির আঁচলটা ছড়িয়ে বসে মুচকি হেসে কানের পাশে গুঁজে দেওয়া ফুল ঠিক করছে,ঠিক তখনই ছবিটি ক্লিক করা হয়েছে। ছবিটাতে সাজিকে অনন্য লাগছে। সব মিলিয়ে ছবিটা সাদের খুব প্রিয়। তা ছাড়া শাড়ি পরা ছবির অভাব নেই। কয়েকটা ছাড়া প্রায় সবই ক্যানডিড ছবি। বুঝাই যাচ্ছে কেউ লুকিয়ে চুরিয়ে তুলেছে।
স্ক্রীন লক খুলে ওয়াল পেপারে হাত বুলোয় সাদ। বিড়বিড় করে বার কয়েক বলে উঠলো,,” আমার প্রিয়তমা”একটা সপ্তাহ সাজঁবাতিকে দেখেনি সাদ। ব্যাস্ত সময় পার করার কারনে খোঁজ খবর নেওয়ার জো নেই। আচ্ছা এই সাময়িক দূরত্বে প্রিয়তমা-কি খুব বেশি অভিমান করবে? নাকি রেগে যাবে।সাদ মুচকি হেসে ফাইলে চোখ বুলিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, যার সকল রাগ অভিমান আমাতে সীমাবদ্ধ সে রাগলেই-বা কি? রাগুক ,অভিমান করুক, অভিযোগের ঢালি সাজাক। প্রিয়তমার রাগ অভিমান ভে*ঙ্গে দেওয়ার দায়িত্বটা নাহয় আমিই নিলাম।
সপ্তাহ গড়িয়ে মাস পেরুলো।সাদের সাথে সাজিঁর কথা হয়না এই একমাস। সাদ অনেক বার এবাড়ি এসেছে কিন্তু সাজি কথা বলেনি। এমন ভাবে এড়িয়ে গেছে যেন সামনে কেউ ছিলোই না। সাদের প্রতি অভিমান হয়েছে খুব। রাগে অভিমানে কথা বলা বন্ধ করলেও ঠিকই মায়ের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে সাদ ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করে নেয় সাজি।
সকাল থেকেই দরজা আটকে বসে আছে সাজি। ভ*য়ে হাত পা অসাড় হয়ে গেছে। হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে ছুটে চলছে। টেনশনে দাঁত দিয়ে নখ কা*টতে কা*টতে নখ ভোতা করে ফেলেছে সাজি। খবরে ব্রেকিং নিউজ দেখেই এই অবস্থা। বড় বড় করে এইচএসসি রেজাল্ট প্রকাশের খবরটাই দিচ্ছে। সেই থেকেই সাজির অবস্থা শোচনীয়। সেঁজুতি হাসান বার কয়েক দরজায় ক*রাঘা*ত করে গেছেন। কিন্তু সাজিঁ সব শুনে বসে আছে। আজ পণ করেছে দরজা খুলবে না। বাই এনি চান্স রেজাল্ট খারাপ হলে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে আজীবন এই রুমেই কাটিয়ে দিবে। তাও দরজা খুলবে না।
সেঁজুতি হাসান রাগে গজগজ করতে করতে জুবায়েরকে কল দিলো। মা মেয়ে ঝগড়া হোক, কিংবা টেনশন সব কিছুতেই জুবায়ের ফেঁ*সে যায়।
না বউয়ের হয়ে কথা বলতে পারে ,না মেয়ের হয়ে কথা বলতে পারে। দুই দিকেই বিপদ।
জুবায়ের কল রিসিভ করতেই সেঁজুতি ফে*টে পড়লো,, তুমি তোমার মেয়েকে কিছু বলবে? সকাল থেকে দরজা আটকে বসে আছে। রেজাল্ট দিচ্ছে না যেন তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে।
জুবায়ের ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। মেয়েটা একদম তার মায়ের জেরক্স কপি। জুবায়ের কোমলমতি গলায় বলল,, তুমি একটু শান্ত হও। মেয়েটা টেন*শনে আছে তাই দরজা আটকে বসে আছে। তুমি যে ভাবে চি*ল্লা*চিল্লি করছো এতে করে আমার বাচ্চাটা ভ*য় পাবে সেঁজুতি।
সেঁজুতি দাঁত কিড়মিড় করে বললো,, তুমিতো আমাকে খ*লনায়িকা বানিয়ে দিচ্ছো। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি ওর সৎ মা। সমস্যার সমাধান দিতে বলেছি, আমাকে ব্লেম করতে বলিনি।
জুবায়ের হতাশা ভরা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, তুমি শান্ত হও আমি সাদকে বলছি। সাদকে ছাড়া তোমার মেয়ে কাউকে ভয় পায় না। ও এসে তোমার মেয়েকে ঠিক করবে। তুমি শান্ত থাকো।মেয়েটার সাথে একদম চিল্লফাল্লা করবে না।
~তোমার জং*লি মেয়ের জন্য ছেলেটা অফিস ফেলে আসবে? আমাকে জ্বা*লা*চ্ছে সাথে ছেলেটাকেও শা*ন্তি দিচ্ছে না।স্ত্রীর কথায় মুচকি হাসলো জুবায়ের।
সেঁজুতি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে নরম গলায় বলল,, স্যরি জুবায়ের।
~ স্যরি বলতে হবে না। আমি জানি তুমি সাজিকে নিয়ে চিন্তিত।
~ কি করবো বলো সকাল থেকে দরজা আটকে বসে আছে। নাস্তা ওবদি করেনি। রেজাল্ট নিয়ে আমার টেনশন নেই খারাপ হোক ভালো হোক একটা হলেই হবে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে বসে আছে। শরীর খারাপ করবে না বলো?
জুবায়ের কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,, তুমি শান্ত থাকো।এমন তোমার ক্ষেত্রেও হয়েছে সেঁজুতি টেনশন করনা ঠিক হয়ে যাবে। আমি সাদকে বলছি সাদ এসে দেখে নিবে।
সেঁজুতি ফোন কেটে সাজির ঘরের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজে লেগে পড়লো।
পরো রুম জুড়ে পায়চারি করছে সাদ। এই নিয়ে দুইটা মিটিং ক্যানসেল করা হয়ে গেছে। রায়হান ল্যাপটপের সামনে বসে মুচকি মুচকি হাসছে। সাদ রায়হানের হাঁসি দেখে চোখ রাঙ্গালো। রায়হান ভয় পেলো না বরং মুখটিপে হেসে বললো,, স্যার আমার মনে হচ্ছে ম্যামের নয় আপনার রেজাল্ট বের হচ্ছে। এতো টেনশনে আপনাকে কখনোই দেখিনি।
সাদের যায় যায় অবস্থা। রেজাল্ট থেকে সাজির জন্য টেনশন হচ্ছে বেশি। রেজাল্ট ওর আশানুরূপ না হলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দরজা আটকে রুমে বসে কাঁদবে। যা সাদের একটুও সয্য হবে না।তাইতো টেনশনে পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করছিল।সাদ ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। কপালে আঙ্গুল ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,, ফা*ল*তু কথা বন্ধ করে আবার ট্রাই করো।
রায়হান ঠোঁট কামড়ে হাঁসি আটকানোর চেষ্টা করে ল্যাপটপে চোখ বুলিয়ে বললো,, সা*র্ভা*র ডাউন। রেজাল্ট দেখতে সমস্যা হচ্ছে স্যার। আমাদের মতো অনেকেই আছে যারা রেজাল্ট দেখতে চাচ্ছে। আপনি একটু ধৈর্য ধরুন আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সাদ বিরক্তে “চ” শব্দ করে মোবাইলে ট্রাই করতে লাগলো।
চেয়ার ছেড়ে হুট করে উঠে পড়লো সাদ।চেয়ারের উপর থেকে কোট নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো। রায়হান হা করে তাকিয়ে আছে। সাদের এমন কাজে হতভম্ব। রায়হান বুঝতে পারেনা স্যার এতো গম্ভীর হওয়ার সত্বেও মাঝে মধ্যে স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের মতো কাজ করে কেন। হুটহাট ভীষণ আবেগি হয়ে যায় ঠিক যেমন ওইদিন গাড়ির মধ্যে হয়েছিলো,তাও ঘুমের ঘোরে।
এতক্ষণে রেজাল্ট সবাই পেয়ে গেছে হয়তো। আচ্ছা আমিকি ফেইল করেছি? মায়ের কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না কেন? শিওর ফেইল করেছি। সাজি পায়চারি করতে করতে নিজে নিজে বিড়বিড় করছে। একপর্যায়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেছে। হাত কচলে পায়চারি করতে করতে কেঁ*দে ভাসাচ্ছে।
দরজায় ঠক ঠক শব্দে থেমে গেল সাজিঁ।চোখ মুছে দরজার দিকে তাকালো। কেউ খুব ভদ্রভাবে দরজায় নক করছে। চোখ ভেঙে কান্না পাচ্ছে সাজির। নাক টেনে দরজার সামনে দাঁড়ালো। ঠিক তখনই মিহি কন্ঠে ডাক পড়লো, সাজঁবাতি!
গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৪
সাদের এমন ডাকে ডুকরে কেঁদে উঠলো সাজি। নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হয়েছে,তা না হলে সাদ ভাই আসবে কেন?এমন করেইবা ডাকবে কেন? সাজি মুখে হাত চেপে কাঁদছে।
সাজির কান্নার আওয়াজ পেয়ে সাদ উতলা হয়ে উঠে। দরজায় ধা*ক্কা দিয়ে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বললো,, দরজা খুলতে বলেছি সাজি। তাড়াতাড়ি দরজা খোল নয়তো ভে*ঙে ফেলবো।
সাদের এমন কথায় হিচকি তুলতে তুলতে দরজার খুলে দিল সাজি। টাইয়ের নট ডিলে করতে করতে রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করলো সাদ।
সাজি মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে। সাদ সাজির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মুখ থেকে জোর করে হাত সরিয়ে নিল। সাজির চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে উঠেছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছিল। সাদ আলতো হাতে সাজির চোখ মুছে দুগালে হাত রেখে বলল,, এতো কাঁদতে হয়? পরীক্ষা তো সব ভালোই দিয়েছিস। তাহলে কাদছিস কেন?কনফিডেন্স নেই নাকি?
সাজি কান্নারত গলায় বলল,, ফেইল করেছি তাইনা সাদ ভাই?
সাদ মুচকি হেসে আলগোছে সাজির চুল ঠিক করে দিতে দিতে বললো, ফেইল না তবে অল্পের জন্য গোল্ডেন মিস হয়েছে। সাদের কথা শুনে সাজি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,সত্যি!
সাদ দুই ভ্রু নাচিয়ে বলল, সাদ কখনো মিথ্যা বলে না। সাজঁবাতির ব্যাপারে তো কখনোই না।
সাদের কথা শেষ হতে না হতেই ঝড়ের গতিতে সাদের বুকে ঝাঁ*পিয়ে পড়লো সাজি। সাজির এমন কাজে সাদ হতভম্ব হয়ে গেছে। দুহাত দু’দিকে ছড়িয়ে মুখটা ইষৎ হাঁ করে রেখেছে।সাদ বুঝতে পারছেনা কি করবে। মেয়েটা খুব বেশি কষ্ট পেলে কিংবা খুব বেশি খুশি হলে এমন কাজ করে বসে। নেহাত আজ রেজাল্ট দিয়েছে নয়তো আজকের দিনটা বিগত একটা মাসের মত যেতো। সাদ লম্বা শ্বাস নিয়ে দু’হাতে আগলে নেয় সাজিকে। সাজি খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,, সাদ ভাই আমি পাশকরে ফেলেছি। ভেবেছিলাম পরীক্ষা ভালো দিলেও ভাগ্য হয়তো সহায় হবে না। কিন্তু দেখেছেন আমি এপ্লাস পেয়েগেছি। রাতের ঘুম হা*রাম করা সফল হয়েছে বলুন?
সাজির যেন খুশির ঠিকানা নেই ।সাদ সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, বিগত একমাস আমার ঘুম হা*রাম করাটাও সফল হয়েছে।
সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই সাজির সম্বিৎ ফিরল। হকচকিয়ে সাদকে ছেড়ে সরে আসতেই সাজিকে আটকে দিলো সাদ।
সাজির মাথাটা বুকে আলতো করে চেপে ধরে নরম গলায় বলল,এইখানটায় ক*ষ্ট হয় সাজি। কাজের চাপে থাকায় খোঁজ খবর নিতে পারিনি। কিন্তু তার শাস্তি এতো কঠিন হবে জানতাম না। দেখেও না দেখার মতো কি করে থাকতি তুই? কই আমিতো পারতাম না!সেইতো বাহানা দিয়ে চলে আসতাম।কি করে থাকতি তুই বল!
সাদের কথায় সাজির ভীষণ খারাপ লাগলো।সাজি বুঝতে পারছে ব্যাস্ত না থাকলে সাদ কখনোই এমন করতো না। নিজের ভিতর অপরাধবোধ কাজ করছে। সাজি দুহাতে সাদের পিঠ জড়িয়ে ধরে বললো,, ভীষণ রেগে ছিলাম। একটা কল দিয়ে খবর নিলে কি হতো!মিস করতাম খুব। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে ঠিকই খবর নিতাম আমি। আপনার মতো না যে সব ভুলে বসে থাকবো। হুহ!
সাজির কথা শুনে সাদ মুচকি হেসে বললো, কেন খবর নিতি অভিমানী! আমি কে হই যে খবর নিতে হবে?
সাদের কথা শুনে সাজি মাথা তুলে সাদের দিকে তাকালো। সাদ দুই ভ্রু উঁচিয়ে বললো,, কেন খবর নিতি বল! সাদের এমন কথায় সাজি আমতা আমতা করে বলল,, নিজেকে প্রশ্ন করুন। আপনি কেন এতো উতলা হতেন?
সাদ সাজির কথা শুনে ঠোঁট চেপে হেসে সাজির কপালে আলতো করে ঠোঁট আটলো। সাজি চোখে বুঁজে নিতেই সাদ সাজির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,, আমার প্রিয়তমা তুই! সাজেঁর বেলায় ইষৎ অন্ধকার ঘরের সাজবাতি তুই। তাই এতো উতলা হই।
সাদের তপ্ত নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়তেই শিউরে উঠলো সাজি। পিঠে জড়িয়ে রাখা হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো । কেঁপে উঠা ওষ্ঠদয়ে না বলা কিছু কথা বলার চেষ্টা করতেই সাদের এমন কথায় থেমে গেলো ।সাদের মুখে প্রিয়তমা শব্দটা ভীষণ আদুরে ঠেকছে কানে।
সাদ সাজির মুখের দিকে তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ সরে দাঁড়ালো। মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়েগেছে। আর কিছুক্ষণ তাকালে হয়তো কোনো ভুল করে ফেলবে। সাদ সরে দাড়াতেই সাজি আর একসেকেন্ডও অপেক্ষা করলো না। দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো। সাদ ভাই নামক মানুষটার সামনে আর কিছুক্ষণ থাকলে লজ্জায় ম*রে যেতো।সাজি সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বার কয়েক সাদের বলা কথাটা আওড়ালো,, প্রিয়তমা, প্রিয়তমা,প্রিয়তমা,।
দুইদিন ধরেই জুবায়ের কিছু বলবে বলবে বলছে। কিন্তু বরাবরই কিছুনা বলে কাটিয়ে দিচ্ছে।
আজ জুবায়ের এই নিয়ে পঞ্চম বারের মতো অনিলাকে কল দিয়েছে। জুবায়েরের একটাই কথা মেয়ের রেজাল্ট দিয়েছে তাই একসপ্তাহ গিয়ে থাকতে হবে। অনিলা বুঝতে পারছেনা রেজাল্টের সাথে এক সপ্তাহ থাকার কি সম্পর্ক। কিন্তু জুবায়ের শুনতে নারাজ। ছোট ভাইয়ের আবদার করা দেখে অনিলা আর না করতে পারলো না। বিনা বাক্যে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লো। তাছাড়া সাজিকেও কথা দিয়েছিলো পরীক্ষা শেষ হলে সপ্তাহখানেক তার সাথে থাকবে। অবশেষে এখন সময় হলো।
এইদিকে সাজি ভীষণ খুশি। বাবাকে বলে ফুপ্পিকে আনানোর ব্যবস্থা করেছে ভাবতেই লাফিয়ে উঠছে।ফুপ্পি বাড়ি এলে সাজি বাড়ি থেকে বের হওয়ার লাইসেন্স পেয়ে যায়। ড্রাইভার আংকেল এসেছে সপ্তাহ দুই হলো,বের হলেও কোনো সমস্যা হবে না।বাবাকে বলে রেখেছে ফুপ্পি এলেই ঘুরতে বের হবে। মেয়েটার কোনো আবদার আজ ওবদি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পূর্ন করতে পারেনি। তাই মেয়ের কথায় জুবায়ের আর না করতে পারলো না।
সাদের অফিস থেকে কল আসার পর পরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। অফিসের কাজে আউট অফ টাউন যেতে হবে। কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে হয়তো দুইদিন সময় লাগবে। সাদ তার মাকে কল করে সবটা জানিয়ে রায়হানকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
অনিলাকে পেয়ে সাজি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। পুরোদিন ফুপ্পির পেছনে পেছনে ছুটছে।
কাল ঘুরতে বের হবে এই নিয়ে নানান রকম প্ল্যানিং করে ফেলেছে। সেই প্ল্যানিং গুলো বাবার সাথে শেয়ার করবে বলে বার কয়েক কল করলো। কিন্তু বারবার ফোন সুইচ অফ আসায় মেসেজ করে দিলো।
পরেরদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই যথা সময়ে সাজি আর অনিলা বেরিয়ে পড়লো।পুরো বিকেলটা শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াবে। রাতের খাবার খেয়ে তবেই ফিরবে। সাজির এমন কথা শুনে সেঁজুতি ক্ষেপে গেলেও অনিলা রহমানের সামনে কিছু বলতে পারেনি। অনিলা ইশারায় মানা করেছে কিছু বলতে। রেনুর যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও চাঁদের শরীর ভালো নেই যার দরুন রেনু যেতে পারেনি। অগ্যতা সাজি আর অনিলা রহমান বেরিয়ে পড়লো।
সাদের কাজ শেষ হতেই রায়হান সহ বেরুলো। দুইদিন লাগার কথা সেখানে একদিনেই সব কাজ হয়ে গেছে। আপাতত বাড়ি ফেরার পালা। দুইদিনে অনেক ধকল গেছে। সাদ মায়ের কাছে শুনেছে সাজি সহ ঘুরতে বেরিয়েছে।সাজি প্রায় সময় অনিলা রহমানকে নিয়ে ঘুরতে বের হয় তাই সাদ তেমন একটা মাথা ঘামালো না। গাড়িতে বসে সাজির ছবি গুলো এক এক করে দেখতে লাগলো। সাদের মতে সাজি নামক মেয়েটা তার ক্লান্তির অবসান। আপাতত প্রিয়তামার মুখায়বব দেখে সেই ক্লান্তির রেশ কাটাতে চাইছে সাদ।
অন্যদিকে সেঁজুতি পুরো ঘর জুড়ে পায়চারি করছে। কাল থেকে জুবায়ের কল করছে না। অনলাইনেও নেই। সেঁজুতি যতবার নাম্বারে কল দিয়েছে ততবারই ফোন সুইচ অফ বলছে। সেঁজুতি গা দিয়ে ঘাম ছুটে গেলো। জুবায়ের কখনো এমন করে না। তাহলে আজ কি হলো। সেঁজুতির মন মস্তিষ্ক জুড়ে সব অদ্ভুত বা*জে খেয়াল আসছে। সেঁজুতি মোবাইল হাতে নিয়ে আসফাস করছে। দুইদিন আগেও লোকটার সাথে রাগ দেখিয়েছে এই ভেবেই চোখ জোড়া ভিজে উঠলো।
ইনশাআল্লাহ চলবে,,
(