দীর্ঘ রজনী পর্ব -২১+২২

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২১

সাদের তাকানোর ধরনে রশনি আর শেফালি হকচকিয়ে গেল। দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো।

সাদ সোজা হয়ে বসে রশনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, সাজির সাথে কথা হয়েছে?

সাজির কথা শুনতেই রশনি বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো, নাহ হয়নি।আসলে খেয়াল করিনি।

রশনির কথায় সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায়।
তাদেরো বিশ্বাস হচ্ছে না রশনির কথা।

সাদ সোফায় হেলান দিয়ে বসে তাচ্ছিল্য করে হাসলো।

রশনি সাদের রিয়েকশন দেখে ভেতরে ভেতরে ভীষণ রাগলো। এই মেয়ের সাথে কথা বলার কি আছে! দেখলেই গা জ্বলে উঠে রাগ লাগে,যদিও সেই রাগ সাদের সামনে জিবনেও দেখানো যাবে না। একেতো সাদকে ভীষণ ভয় পায়, দ্বিতীয়ত সাদ এমনিতে কথা কম বলে। রাগ দেখাতে গিয়ে ব্যাপার আরো বিগড়ে যাবে।

সাদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে পুনরায় সোজা হয়ে বসলো।রশনিকে উদ্দেশ্য করে শিতল কন্ঠে বললো,, ব্যাপারটা কেমন একটা লাগলো না? তোর সাথে যারা বসে ছিল তারা ওবদি তোর কথায় হকচকিয়ে গেল। তাদেরো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তুই চোখ থেকেও অ*ন্ধ। তোর সামনে গোটা একটা মানুষ বসা ছিল তুই দেখিসনি, খেয়াল করিসনি?লাইক সিরিয়াসলি রশনি?

সাদের কথায় রশনি একেবারে চুপসে গেল।
শেফালী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এইদিকে আমজাদ আর জিহাদ আড় চোখে সাদের ভাব ভঙ্গি লক্ষ্য করছে। বিন্দু সাদের পাশে বসে মনোযোগ দিয়ে সাদের কথা শুনছে। সাদ ভাইয়া মানুষটা মিথ্যা কথা আর মিথ্যা ছলচাতুরি করা মানুষদের মোটেও পছন্দ করে না। তিনি স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড একজন মানুষ। বিন্দু সাদকে নিজের আইডল মানে। বিন্দুর মতে সাদ ভাই ভুল বলতেই পারে না।

~ তুই খেয়াল করিসনি কিন্তু ঠিকই তাকে নিয়ে ফিসফিসিয়ে আলোচনা , স*মা*লোচনা করায় ব্যাস্ত ছিলি। খেয়াল করা থেকে মনে পড়লো, সাজি সালাম দিয়েছিলো। তার উত্তর তো দিয়েছিস তাইনা?

সাদের কথায় শেফালী মাথা নিচু করে ফেললো।সাদ ভাই তাকে সরাসরি কিছু না বললেও তার সাথেইতো রশনি এই নিয়ে কথা বলেছিলো।তার মানে তাকেও বলছে। এই ভেবেই মুখ ভার হলো।

~ জনসম্মুখে কানে কানে কথা বলা ব্যাড ম্যানার্স মধ্যে পড়ে রশনি। তোর সামনে তুই বাদেও আরো পাঁচজন মানুষ ছিল, যারা কিনা তোর ছোট । কিন্তু তুই তাদের সামনে কানাকানি করছিস! এতো বড় হলি রশনি ,আজ ওবদি ম্যানার্স শিখতে পারলি না। আর না পারলি নিজের ছোটদের শেখাতে।

সাদের এহেন কথায় রশনি মাথা নিচু করে ফেললো।

সাদ পুনরায় বলে উঠলো,তার চেয়ে বড় কথা তুই একটা মেয়ের সামনে বসে তাকে নিয়ে আরেকজনের সাথে আলোচনা করছিস। আলোচনা বললে ভুল হবে স*মা*লোচনাই করছিস। সেক্ষেত্রে ভেবে দেখ সামনে বসা মেয়েটার কেমন লাগে। সাজি কোনো বাইরে মেয়ে নয় যে তাকে নিয়ে কানাকানি, আলোচনা, স*মা*লোচনা করলে আমি চুপ করে থাকবো। তোরা যেমন আমার আত্মীয় সেও আমার আত্মীয়। ওকে নিয়ে কেউ বা*জে কথা বললে যেমন আমার রাগ লাগবে, তেমনি তোদের নিয়ে কেউ কোনো বা*জে কথা বললেও আমার খা*রাপ লাগবে, রাগ লাগবে।

~রশনি মাথা নিচু করে মিনমিনে গলায় বলল,, আমি ওকে নিয়ে কিছুই বলিনি।

সাদ ভ্রু কুঁচকে নিরেট স্বরে বলল,, আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না রশনি। কে কি ভাবে কথা বলছে কাকে নিয়ে কথা বলছে কোন নজরে তাকাচ্ছে সবই বুঝতে পারি। তাই সাফাই গাইতে হবে না।

সাদ টেনে নিঃশ্বাস নিলো অতঃপর কোমলমতি গলায় বলল,,বেড়াতে এসেছিস হেসে,খেলে, আনন্দে সময় কা*টা। ভেতরগত তিক্ততা দিয়ে না ভালো থাকা যায়, না ভালো সময় কাটানো যায়। তোদের মতো সজিও এই বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। আমি যতটুকু জানি ওর সাথে তোদের কোনো প্রকার রেষারেষি নেই।তেমন দেখা হয় না তাহলে রেষারেষি থাকবে কেন?
সাজি চঞ্চল মেয়ে , মিশতে পছন্দ করে। কেউ ওর দিকে তাকিয়ে হাসলেও তাকে আপন ভেবে নেয়। মিশে দেখ সময় ভালো যাবে।

রশনি সাদের কথায় ভেতরে ভেতরে রেগে ফে*টে পড়লেও সামনে মাথা নেড়ে সায় জানায়।

~ যা তোরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করবো।

বিন্দু পাশ থেকে বলে উঠলো,, ভাইয়া তুমি এখনো না খেয়ে আছো?

সাদ মুচকি হেসে বিন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,, হুম। অফিসের কাজ করছিলাম তাই এখনো ওবদি খাওয়া হয়নি। কিন্তু তোর চোখে চশমা কেন বুড়ি?

বিন্দু মৃদু হেসে চশমা ঠিক করে বললো,, দূরের জিনিস ঠাওর করতে পারিনা ভাইয়া। যদিও সেটা এতো ইম্পর্ট্যান্ট না,তাও ডাক্তার চশমা ধরিয়ে দিলো।

বিন্দুর কথায় সাদ নিঃশব্দে হেসে বললো,, ডাক্তার ঠিক কাজ করেছে। এখন যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। সব ভাই-বোন একসাথে ডাইনিংএ বসবো।

রশনি আর শেফালি ধপাধপ পা ফেলে গেস্ট রুমে চলে গেলো,বিন্দুও তাদের পেছন পেছন ছুটলো ।

কিন্তু আজাদ আর জিহাদকে যেতে দিলো না সাদ। তারা উঠে দাড়াতেই সাদ বলে উঠলো,,

~তোরা কোথায় যাচ্ছিস? তোদের সাথে কথা এখনো শেষ হয়নি । বস!

সাদের এমন কথায় জিহাদ আজাদের হাত চেপে ধরলো। না জানি সাদ ভাই আবার কোন বিষয় নিয়ে পেছনে পড়ে।আজাদ সোফায় বসে পড়লো।তার সাথে জিহাদও বসলো

সাদ দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর গলায় বলল,, মেয়ের দিকে এমন ভাবে তাকাও যাতে তাদের অস্তিত্ব না লাগে। এমন ব্যবহার করো যাতে তারা ইনসিকিউর ফিল না করে। ওকে!!

আজাদ না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করলো,, কি নিয়ে কথা বলছেন ভাইয়া? ঠিক বুঝলাম না।

সাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,না বোঝার মতো কিছুতো বলিনি আজাদ! তোরা দুজন যেই ভাবে সাজির দিকে তাকাচ্ছিলি সেটা দেখেই বলছি। আমি ছেলে তাই ছেলেদের দৃষ্টি ভঙ্গি বুঝতে দেরী হয় না। কোন ছেলে কোন মেয়ের দিকে কোন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সেটা একপলক দেখেই বলে দিতে পারি। তোদের এই দৃষ্টিভঙ্গির কারনে একটা মেয়ে কতোটা অস্বস্তিতে পড়ে জানিস তোরা? দৃষ্টি সংযত কর দুজনে। হয় তাকানোর দরকার নেই, নয়তো এমন ভাবে তাকা যেন আমার চোখে সেই তাকানো ভুল না লাগে। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?

~ স্যরি ভাইয়া! আসলে,,

সাদ আজাদকে থামিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,স্যরি বলতে হবে না। তার বদলে কিছু কথা বলি যা সব সময় মনে রাখবি।”
~একটা মেয়ের কাছে সেই পুরুষ উত্তম যে মেয়েদের সম্মান করে, এবং সম্মান রক্ষা করে। একজন পুরুষ হিসেবে নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে একজন নারী অন্য পুরুষ দ্বারা প্রস্তুত অবস্থা পড়লে সে তোমার কাছে সাহায্য চাইতে আসে। একজন নারীর দিকে ভরসার দৃষ্টিতে তাকাও যাতে সে তোমার দৃষ্টিতে অপ্রস্তুত না হয়ে পড়ে, আর না অস্বস্তি বোধ করে। একজন পুরুষের জন্য সব চেয়ে গৌরবের বিষয় তখনই হয় যখন সে কোনো মেয়ের জন্য ভরসার যোগ্য হয়ে ওঠে।

সুতরাং ভক্ষক না হয়ে রক্ষক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমি জানি আমার ভাইয়েরা অবশ্যই সেই চেষ্টা করবে। কি তাইতো?

আজাদ আর জিহাদ এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে সাদের কথা শুনছিলো। সাদ ভাই ঠিকই বলেছে। ভক্ষক না হয়ে রক্ষক হতে হবে।

দুইজন সাদের কথায় মুচকি হেসে বলল,, হ্যা ভাইয়া। আমরা চেষ্টা করবো।

সাদ মুচকি হেসে বলল,, মনে রাখতে হবে সম্মান, শ্রদ্ধা বাধ্য হয়ে নয় বরং সেটা প্রতিটা নারীর প্রাপ্য।

——-

~সেজুতির ভাইয়ের ছেলেকে তুই মে*রে*ছিস সাদ?

অনিলা রহমানের কথায় সাদ থমকে দাঁড়ালো।

ছেলের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে আছে অনিলা।

সাদ স্বভাবিক ভঙ্গিতে বললো,, আমি কেনো মা*রতে যাবো?

অনিলার কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। চিন্তিত গলায় বলল,, তাহলে কে মে*রে*ছে! আমিতো ভেবেছিলাম তুই করেছিস এইসব।

সাদ পকেটে হাত গুঁজে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,, আমি কেন মা*রবো, আমার এতো সময় নেই। আমার লোকেরা মে*রেছে। চিন্তা করোনা শুধু ভে*ঙ্গেছে। একেবারে পুঁ*তে ফেলেনি যে এইটাও তার ভাগ্যে।

অনিলা ছেলের যাওয়ার পানে হা করে তাকিয়ে আছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। )গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২২ (১ম খন্ড)

সাজির সাথে বিন্দুর বেশ ভাব জমেছে। বিন্দু আর সাজি চাঁদকে নিয়ে বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছে।রশনি,শেফালি তো আগে থেকেই বাগানে ছিল। তাই বিন্দু সাজিকে রশনির আর শেফালির কাছে নিয়ে গেল।ভেবেছে একসাথে গল্প করলে বেশ মজাই লাগবে।

শেফালী তখন রশনির সাথে সাদের রিলেশনের ব্যাপারে আলাপ চারিতায় ব্যাস্ত।

~ তোর কি মনে হয় আপু সাদ ভাইয়ের কোনো এফেয়ার আছে? আমারতো মনে হয় না। একেতো রাগী তার উপর গম্ভীর । কোন মেয়ে চাইবে এমন একটা হাঁটা চলা প্রেশার কুকারের সাথে রিলেশনশিপে যেতে? তুই চিন্তা করিস না তোর রাস্তা ক্লিয়ার। জেঠিকে পটিয়ে ঝোপ বুঝে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যাবি। ব্যাস কাজ শেষ।

রশনি শেফালীর কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, খবরদার সাদকে নিয়ে এমন কথা বলবি তো। প্রেশার কুকার কাকে বলছিস তুই! থা*ব*ডে দাঁ*ত ফেলে দিবো। সাদকে নিয়ে এইসব বলা আমি মোটেও পছন্দ করিনা। আফ্টার অল হি ইজ মাই লাইফলাইন।কোনো বা*জে কথা নয় ওকে!

বিন্দু চশমা খুলে ওড়না দিয়ে মুছে নিলো। শেফালী কথা শুনে সাজির হাঁসি পেলেও রশনির কথায় ভীষণ রাগ লাগলো। আসার পর থেকেই এর হাবভাব ঠিক লাগছিলো না। এখন তো পুরোপুরি শিওর এই শা*কচু*ন্নী সাদ ভাইয়ের গলায় ঝু*ল*তে এসেছে। ঝু*লা*চ্ছি দাঁড়া। কথা দিয়েই ক*লি*জা এ*ফাড় ওফা*ড় করে দিবো।

বিন্দু গলা খাকিয়ে রশনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, সাদ ভাইয়ের রিলেশন আছে কি নেই এইটা আমাদের জন্য আন্দাজ করা মুশকিল । কারন আমরা সাদ ভাইদের থেকে অনেকটাই দুরে থাকি। বছরে একবার দেখা হয় এতে এতো শিওর হয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।

রশনি সাজির দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। শেফালী চেহারার ভঙ্গি না বদলালেও ভেতরে ভেতরে সাজিকে দেখে ভীষণ অখুশি।

চাঁদ সাজির চুল ধরে খেলছে। সাজি চাঁদের দিকে তাকেলেও কান খাঁড়া করে ঠিকই বিন্দুর কথা গুলো শুনছিলো।

বিন্দু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,, ওয়েট!ওয়েট!ওয়েট! সাজিতো সাদ ভাইয়েদের থেকে তেমন একটা দুরে থাকে না। তাছাড়া সপ্তাহে প্রায় আসা যাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সাজিরতো জানার কথা সাদ ভাইয়ের রিলেশন আছে কি নেই!

বিন্দুর কথা শুনে তৎক্ষণাৎ তাকালো রশনি। শেফালী চোখ বড়বড় করে সাজিকে দেখছে।

সাজি ভেতরে ভেতরে খুশিতে লাফিয়ে উঠার জোগাড়। এতক্ষণ এমন একটা প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলো। যাক অবশেষে টিউব লাইট জ্বলেছে।সাজি মুখাবয়ব সিরিয়াস করলো। কিছুটা ভয় পাওয়ার ভান ধরলো।

রশনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,, তুমিকি সাদের ব্যাপারে কিছু জানো?

সাজি ভয় জড়ানো গলায় বলল,, সাদ ভাই জানলে খবর করবে। না বাবা আমি কিছু বলতে পারবো না।

শেফালী সাজির পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে কাঁধ জড়িয়ে ধরে। অতঃপর মিহি গলায় ফিসফিসিয়ে বললো,, সাদ ভাই কেন,আমরা চারজন ছাড়া একটা কাক পক্ষিও জানতে পারবে না।

সাজি শেফালীর এমন কাজে মনে মনে ভেংচি কাটলো।

বিন্দু চশমা নাকের ডগায় এনে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, উই আর ফ্রেন্ডস্ ইয়ার। আমরা কোন দুঃখে বলতে যাবো। তাছাড়া বলে থা*প্প*ড় খাবে কে!

সাজি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। চো*রা চোখে আশেপাশে তাকিয়ে কন্ঠ খা*দে নামিয়ে বললো,, সাদ ভাইয়ের রিলেশন আছে মানে!আলবত আছে। একহাজার পার্সেন্ট শিওর।

বিন্দু বাদে আর দুইজনের মুখে যেন আমাবস্যা নেমেছে। বিন্দু রশনির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে মনে মনে বললো,, সাদ ভাই ডিজার্ভ বেস্ট। কিন্তু তুমি বেস্টের মধ্যে পড়োনা রশনি আপু। তুমি সাদ ভাইয়ের যোগ্য নও।

রশনি মুখের অবস্থা থমথমে । পারলে এখনই কেঁদে দেয়।

শেফালী আচম্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো ,, তুমি এতোটা শিওর হয়ে বলছো কি করে?

সাজি দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে বললো,, আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড সাদ ভাইকে পছন্দ করে। তার প্রপোজাল নিয়ে সাদ ভাইয়ের কাছে গেছিলাম। জানো!সাদ ভাই রেগেমেগে একাকার , পারলে আমাকে মে*রেই ফেলে। পরক্ষনে শান্ত হয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,, “আমার ভালোবাসার মানুষ আছে।যাকে আমি খুব ভালোবাসি।”

রশনি কম্পিত গলায় বলল,, সত্যি কি আছে?

বিন্দু রশনির কথায় ফো*ড়ন কে*টে বলল,, সাদ ভাই মিথ্যে বলেনা রশনি আপু, সেটা আমরা সবাই জানি।

শেফালী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,, তুমি দেখেছো সেই শা*ক*চু*ন্নীকে?

শেফালীর কথায় দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সংযত করলো সাজি। এই মেয়ে তাকেই শা*ক*চু*ন্নী বলছে? শা*ক*চু*ন্নী আমি না শা*কচু*ন্নী তো তোরা। জো*ম্বী কোথাকার!

শেফালী সাজিকে ঝাঁকিয়ে বললো,, কি হলো কিছু বলছো না কেন? মেয়েটা কেমন বলো?

সাজি মুচকি হেসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, মেয়েটা খুব কিউট।একদম আমার মতো কিউট। দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে। এতোটাই কিউট। সাদ ভাই আর তাকে একসাথে দেখে যে কেউ বলে উঠে ” মেইড ফর ইচ আদার। দে লুক কিউট টুগেদার।”

রশনি কিছু বলতে নিবে তার আগেই সাজি পেছনে ঘুরে স্টাইল মেরে হাঁটা ধরলো। এক একটা শব্দ আর কদম রশনিকে জ্বা*লি*য়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ছোট করে দিয়েছি তাই দুঃখিত।😞)গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২২ (২য় খন্ড)

সন্ধ্যা হতেই আড্ডার আসর বসেছে। কিন্তু সেই আসরটা ঠিক জমে উঠছে না। কারন রশনি, শেফালী,সাজি কেউই নেই। রশনি সাদের রিলেশনের ব্যাপার নিয়ে আপসেট, রশনির জন্য শেফালীও আসনি ঘাপটি মে*রে রুমে বসে আছে।

সাজি সাদের উপর ভীষণ রেগে আছে। যদিও সেই রাগ দেখানোর সাহস তার নেই।হয়তো দেখা গেল রাগ দেখাতে গিয়ে থা*প্পড় খেয়ে মান সম্মান বিসর্জন দিতে হয়েছে। আবার এইটাও মানতে পারছে না রশনি সাদ ভাইকে ভালোবাসে। ভালোবাসে কি! রিতিমত তার জন্য ঘাপটি মেরে বসে আছে।পারলে এখনই কাজী অফিস গিয়ে তিন কবুল পড়ে আসে। ভালোবাসবে কেন?এই মেয়ের এতো সাহস? আর সাদ ভাই!সেতো বোকা মানুষ নয় যে রশনির ফিলিংস সম্পর্কে জানবে না। অবশ্যই জানে জেনে বুঝে মজা নিচ্ছে। সাজি দাঁত কিড়মিড় করে ফুঁসে উঠে মৃদু চি*ৎকার করে বললো,, ধুরন্ধর লোক! সাদ ভাই আপনি একটা গির*গিটি! ক্ষনে ক্ষনে রূপ বদলান। আজ থেকে সাদ নাম আর সাদ নামক ব্যাক্তিকে ব*য়*কট করা হলো। এই লোকের সাথে কথা তো দুর তার সামনে ওবদি যাবো না।সাজি সাদকে ব*য়*কট করলো হুহ! ব*য়কট! ব*য়কট!

সাজির এমন চিৎকারে চাঁদ ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো। চাঁদের কান্না দেখে নিজের মাথা নিজে চা*টি মে*রে চাঁদের কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগল সাজি।

সাদ বার কয়েক চোখ বুলিয়ে সাজিকে খুঁজলো। কিন্তু সেই খোঁজ ব্যার্থ। দুপুরের পর থেকে একবারও মেয়েটা চোখের সামনে পড়েনি। সাদ চিন্তা করে দেখলো তার কোনো কথায় সাজি কষ্ট পেয়েছে কিনা। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। তাহলে এতো লুকোচুরি কিসের! সাদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আজাদ আর জিহাদের সাথে বসে গল্প করছে। যদিও গল্প কম ছোট ভাইদের পরামর্শই বেশি দিচ্ছিলো।

রাতে খাবারের সময় সাজি ছাড়া সবাই খেতে বসেছে। সাদ পাশের চেয়ারটা খালি দেখে মায়ের দিকে তাকালো। অনিলা রহমান ছেলে সমস্যা বুঝে মুচকি হাসলো। মায়ের হাসি দেখে সাদ করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
অনিলা চওড়া হাসি দিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,, অনেক আগেই ক্ষিদে পেয়েছে। সেইজন্য খাওয়া দাওয়া করে ঘুমোচ্ছে।

মায়ের কথায় সাদ হতাশ হলো। এই মেয়ের কোনো কিছুই ইদানিং বুঝতে পারে না। হুটহাট রেগে যাওয়াটা রো*গে*র মতো হয়ে গেছে। কেন রেগে আছে সাজঁবাতি? রেগে আছে নাকি ভয় পাচ্ছে?
সাদ আজ সত্যি বুঝতে পারছে না সাজির হয়েছে কি। একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়ে খাওয়া কমপ্লিট করলো সাদ। এই মেয়ের একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। অন্তঃস্থলে ক*ঠিন রো*গ বাঁধিয়ে ফেলেছে এই মেয়ে।

খাওয়া শেষ হতেই একে একে সবাই রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।সাজি অনিলার সাথে ঘুমাচ্ছ। তাই রশনি, শেফালী আর বিন্দু সাজি যেই রুমে থাকতো সেখানেই ঘুমাবে। সাদের পাশের রুমটা আজাদ আর জিহাদকে দেওয়া হয়েছে।
রশনি বিছানায় বসে মুখে হাত চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁ*দ*ছে। শেফালী বারবার শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে,তবে কান্নার বেগ বাড়ছে ব-ই কমছে না। একতরফা ভালোবাসা রশনিকে ভীষণ পী*ড়া দিচ্ছে।
বিন্দু রুমে ঢুকে রশনিকে এই অবস্থায় দেখে রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো। চশমা ঠিক করে লম্বা শ্বাস নিয়ে সাদের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করলো। সাদ ভাইকে ভয় পেলেও কিছু কথা ক্লিয়ার করা খুব দরকার।তা না হলে অযথা কেউ আশায় বাসা বেঁধে পরে মৃ*ত্যু য*ন্ত্রনা ভোগ করবে।

কেউ দরজায় নক করছে শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো সাদ। এই সময় কে এসেছে তা ভেবে উঠে বসলো। এমনিতেই সাজির টেনশন তার উপর এখন আবার দরজায় নক সব মিলিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে দরজা খুললো।

দরজা খুলতেই বিন্দু মৃদু হেসে বলল,, দুঃখিত ভাইয়া এই সময় বিরক্ত করছি।

বিন্দুকে দেখে সাদের বিরক্তির রেশ কে*টে গেল। এই ছোট্ট বোনটা বড্ডো প্রিয় তার। ছোট হলেও তার আচার ব্যবহার বিজ্ঞব্যক্তির মত। বয়সের তুলনায় অনেকটাই বুঝের সে। বড়দের সম্মান,শ্রদ্ধার পাশাপাশি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে। যার দরুন সাদ বিন্দুকে খুব স্নেহ করে।

সাদ দরজা ছেড়ে মুচকি হেসে বলল,, কোনো সমস্যা নেই। তা ছাড়া এমন বিরক্ত ভালোই লাগে। ছোট বোন থাকবে আর বিরক্ত করবে না তাকি হয়? বাইদা ওয়ে, আমি যতটুকু জানি আমাদের বিন্দু কাউকে বিন্দু পরিমাণ বিরক্ত করার মত মেয়ে না।

সাদের কথায় বিন্দু মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো’ আসলে ভাইয়া কিছু কথা ছিলো।

~আগে বস পরে শুনবো।

বিন্দু কাউচে গুটিসুটি মে*রে বসে আমতা আমতা করে বলল ,,যদিও আমি ছোট মানুষ এইসব নিয়ে আলোচনা করা আমার সাজে না তাও বাধ্য হয়ে এসেছি। খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ব্যাপার ভাইয়া।

বিন্দুর কথায় চিন্তিত হলো সাদ।কি এমন কথা যার জন্য এইসময় বিন্দু এইখানে এলো!এতোটা দ্বিধা সংকোচে ভুগছে যে বলতেই পারছে না।

বিন্দু ঠিক করা চশমা দ্বিতীয় বার ঠিক করলো। বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, আসলে ভাইয়া রশনি আপু তোমাকে খুব পছন্দ করে তাও অনেক আগ থেকেই। যদিও ওর পছন্দ একতরফা। কিন্তু আজ তোমার রিলেশনের কথা শুনে ভীষণ ভে*ঙে পড়েছে। আমি জানি না বিশ্বাস করেছে কিনা। কিন্তু যদি সত্যি তোমার রিলেশন থেকে থাকে! তাহলে রশনি আপুকে ক্লিয়ার করে বলে দিলে ভালো হয়। এখনো খুব একটা দেরি হয়নি। এখন জানলে অন্ততপক্ষে বেশি কষ্ট পাবেনা।

বিন্দুর কথা শুনে সাদ বিস্মিত হলো। সাদ রশনির ব্যাপারটা আন্দাজ করেছে ঠিক। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেনি । সাদ সব সময় ব্যাপারটাকে হাওয়ায় উঠিয়ে দিয়েছে। এখন বিন্দুর মুখে শুনে ব্যাপারটা সিরিয়াস মনে হচ্ছে। হুট করে সাদের মস্তিষ্ক জুড়ে তার রিলেশনের কথাটা বেজে উঠলো।রশনি কিভাবে জানলো তার রিলেশনের কথা?

সাদ চোখ ছোট ছোট করে বললো,, আমার রিলেশনশিপের কথা শুনার পর বলতে? সেটা কে বলেছে রশনিকে?

বিন্দু কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল,, আসলে ভাইয়া আজ বিকেলে তোমার রিলেশনের কথা হচ্ছিল। আমরা দুরে থাকি যার দরুন শিওর ছিলাম না। কিন্তু সাজির তো জানার কথা তাই সবাই মিলে সাজিকে জিগ্গেস করলো। এক কথায় ফোর্স করার পর জানতে পারি তোমার লাইফে কেউ আছে।

বিন্দুর কথায় সাদ হতবাক হলো। সাজি বলেছে এই কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।

~ তা কি কি বলেছে আমার রিলেশনশিপের কথা?

~বলেছে কারো সাথে রিলেশন আছে। ইভেন একহাজার পার্সেন্ট শিওরিটির সাথে মেয়েটার বর্ননা দিয়েছে।

সাদের যেন অবাকতার রেশ কাটছেই না। কিন্তু ছোট বোনের সামনে ঠিক করে এক্সপ্রেস-ও করতে পারছে না। তাই শান্ত কন্ঠে বললো,, কেমন বর্ননা?

বিন্দু মুচকি হেসে বলল,, মেয়েটা নাকি খুব কিউট। একদম সাজির মতো কিউট। দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে, এতোটা কিউট। সাথে এটাও বলেছে,যে কেউ তোমাদের দুজনকে দেখলে বলে যে” মেইড ফর ইচ আদার।দে লুক কিউট টুগেদার।”

বিন্দুর কথা শুনে সাদের চোয়াল ঝুলে যাওয়ার জোগাড়। সাজির উপর রাগবে নাকি হাসবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
সাদ নিরেট স্বরে বলল,, ঠিক আছে। আমি দেখছি কি করা যায়। রশনির ব্যাপারটা আমি সামলে নিবো। তুই বরং ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।

বিন্দু উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,, ভাইয়া একটা কথা বলি? যদিও আমার পার্সোনাল ওপেনিয়ন।

~ হ্যা বল!

বিন্দু মুচকি হেসে বলল, ইউ এন্ড সাজি মেইড ফর ইচ আদার। অলসো লুক কিউট টুগেদার।

বিন্দুর কথা শুনে মুচকি হাসলো সাদ। বিন্দুর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো,, পাকা বুড়ি যা ঘুমোতে যা।

বিন্দু যেতেই সাদ দরজা আটকে দিলো। সাজির বলা কথা গুলো ভেবে ঠোঁট প্রসস্ত করে হাসলো।

~হুম!দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে তাইনা! আর কি বললো যেন!ও হ্যা মেইড ফর ইচ আদার,দে লুক কিউট টুগেদার। সাজঁবাতি রেগে আছে। রাগের কারনটা স্পষ্ট। রশনির কারনেই রেগে আছে। ভীষণ রেগে আছে। রেগেই রশনিকে জ্বা*লা*তে এইসব বলেছে।লাইট অফ করে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো সাদ। চোখ বুজে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,, এই মেয়েটা কি করছে টা কি? ভ’য়ং’ক’র অ*সুখ বাঁধিয়ে খান্ত হয়নি। এখন আবার ধৈর্যের বাঁধ ভা*ঙার জন্য কেন উঠে পড়ে লেগেছে!
_________

সকাল সকাল উঠে রশনিরা বেরিয়ে পড়লো। আরো একটা দিন থাকার কথা ছিলো কিন্তু রশনি থাকবেনা বলায় আর কেউ আগ্ৰহ প্রকাশ করলো না।

সাদ দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে তাদের সাথে দেখা করতে পারেনি। কিন্তু সাজির সাথে দেখা হয়েছিল।
ঘড়ির কাঁটা এগারোটা বরাবর। সাজি অনিলার রুম থেকে মাথা বের করে সাদের রুমের দিকে চাইলো। দরজা বন্ধ দেখে গুটি গুটি পায়ে সাদের রুম ক্রস করে যেইনা সামনে এগোবে ওমনি হাতে টা*ন পড়লো। একটানে রুমের ভেতরে নিয়ে দরজা লক করে দিলো সাদ।

এই দিকে হঠাৎ এমন কান্ডে ভয় পেলো সাজি। চমকে উঠে যেইনা চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই মুখ চেপে ধরলো সাদ।

সাজি চোখ বড় বড় করে সাদের দিকে তাকালো। ভয়ে ভয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে ছাড়তে বলল। কিন্তু সাদ তো সাদই। ছাড়ার কথাতো দূর উল্টো দেয়ালের সাথে চেপে আরেকটু কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো।

সাদের এমন কাজে সাজি সাদের চোখে দিকে তাকালো। সাদ মুচকি হেসে সাজির চোখে চোখ রেখে ধীর গলায় বলল,, কে যেন বলেছিল আমার গার্লফ্রেন্ড দেখতে পুরোই সাজির মতো কিউট।

সাদের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করলো সাজি। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে শুরু করলো সাজি।না জানি কয়টা থা*প্পড় খেতে হয়।

সাজির ভিতু মুখাবয়ব দেখে মুচকি হেসে সাজির কপালে চুমু আটলো সাদ। অতঃপর আদুরে গলায় বলল,, ইউ নো হোয়াট?দেখলেই আদর দিতে ইচ্ছে করে এতোটা কিউট।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here