গল্প: #দুর্বোধ্য_ইন্দ্রজাল
লেখিকা:#স্বর্ণা_সাহা_রাত
||পর্ব ৪|| (অন্তিম)
ব্রেকফাস্ট শেষ করে অর্থী আর তন্দ্রা অর্থীর দাদুর ঘরে আসে। অর্থী ওর দাদুকে বলে,
‘দাদু একটা সমস্যায় পড়ে গেছে আমার বান্ধবী, খুব গুরুতর সমস্যা। তুমিই এখন ওর শেষ ভরসা। ওকে তুমি সাহায্য করো।’
অর্থীর দাদু বলে উঠলো,
‘শান্ত হও তুমি, তোমরা দুজন বিছানায় বসো, আমি শুনি তোমার কি সমস্যা।’
তন্দ্রা বলে উঠলো,
‘খুব বিপদে পড়ে গেছি, একটা ইন্দ্রজালে বাধা পড়ে গেছি, আস্তে আস্তে বাঁধন আরও শক্ত হয়ে আসছে, ওখান থেকে মুক্তি পেতে চাই আমি, একেবারে মুক্তি।’
‘কি হয়েছিলো সব আমাকে খুলে বলো।’
তন্দ্রা শুরু থেকে সব কিছু অর্থীর দাদুকে বললো। অর্থীর দাদু তন্দ্রাকে জিজ্ঞাসা করলো,
‘তুমি কি ছেলেটাকে আগে থেকে চিনতে? কোনো সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো তোমাদের মধ্যে?’
তন্দ্রা উত্তর দিলো,
‘না, আমি ওনাকে কালকেই প্রথমবার দেখেছি কিন্তু ওই লোকটা মানে ওই পিশাচটার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিলো সে আমাকে আগে থেকেই চেনে।’
‘আচ্ছা তোমার হাতটা দেখি একটু, একটা জিনিস দেখার আছে।’
‘হুম’
কথাটা বলে তন্দ্রা নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো। অর্থীর দাদু হাত দেখতে দেখতে অনেক কিছু, যা তন্দ্রার জীবনের সাথে মিলে গেছে। তন্দ্রা উৎসুক ভাবে জিজ্ঞাসা করে ওঠে,
‘এখন তাহলে বলুন না, আঁধারের সাথে আমার কি সম্পর্ক?ও আমার পেছনে কেনো পড়ে আছে?’
অর্থীর দাদু গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
‘তোমার জীবনের কোনো অংশেই তো আঁধারকে পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘তাহলে? তাহলে আমি কিভাবে জানবো আঁধার আমার পিছু নিয়েছে কেনো?’
‘আঁধার নিজেই বলবে, ও তোমার পিছু কেনো নিয়েছে।’
অর্থী এতক্ষন সব শুনছিলো, ওর দাদুর এই কথা শুনে অবাক হয়ে বলে উঠলো,
‘আঁধার কিভাবে বলবে ওকে?’
তন্দ্রাও একই প্রশ্ন করে বললো,
‘আসলেই তো, আঁধার কিভাবে এসব কথা বলবে আমায়, আমি তো নিজেই ওর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
‘পালিয়ে বেড়ালে কি সব সমস্যার সমাধান হয় তন্দ্রা দিদিভাই?’
তন্দ্রা কথাটা শুনে চুপ করে গেলো, অর্থীর দাদু তন্দ্রাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে বললেন,
‘কোনো চিন্তা করোনা, আমি যখন একবার তোমার এই সমস্যার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছি তখন এই সমস্যাকে মেটানোর দায়িত্বও আমার। তবে হ্যাঁ, তোমাকে শুধু আমার কথামতো কাজ করে যেতে হবে।’
তন্দ্রা অর্থীর দাদুর এই কথায় সম্মতি দিয়ে বললো,
‘এখন আমার কি করণীয়?’
‘তুমি কালকে যে গ্রামে গিয়েছিলে, তোমাকে আবার সেখানে যেতে হবে।’
তন্দ্রা একথা শুনে আঁতকে উঠে বললো,
‘আবার যাবো ওখানে?’
‘হ্যাঁ যাবে, তবে এবার আমিও তোমার সাথে যাবো। তোমার ওই গ্রামে যাওয়া অনেক জরুরি, কারণ ওখানেই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।’
‘ঠিকাছে তাহলে আমি যাবো সেখানে।’
অর্থী ওদের কথার মাঝে বলে বসলো,
‘আমিও যাবো তোমাদের সাথে, আমাকেও নিয়ে চলো তন্দ্রাদের গ্রামে।’
তন্দ্রা অর্থীর কথা শুনে বললো,
‘না, তুই যাবিনা। তোর যদি কোনো বিপদ-আপদ হয়?’
‘দাদুভাই তো যাচ্ছেই, তাহলে আমি গেলে কি সমস্যা?’
‘কিন্তু…!’
অর্থীর দাদু তন্দ্রাকে বলে উঠলো,
‘তুমি চিন্তা করোনা, ও যদি যেতে চায় যাবে, আর আমি তো ওর সাথে আছি, কোনো বিপদ ওকে ছুঁতেও পারবেনা।’
‘আচ্ছা আপনি যখন বলছেন ও যাবে, তাহলে এখানে আমি আর কি বলবো, আসুক ও আমাদের সাথে।’
অর্থীর দাদু, অর্থী আর তন্দ্রা রেডি হয়ে নিলো ওদের গ্রামে যাওয়ার জন্য। তন্দ্রারা বের হয়ে গাড়িতে ওঠে, আঁধারকে সকাল থেকে কেউই দেখেনি। তন্দ্রা গাড়ি চালিয়ে একটানে নিজের গ্রামে চলে এলো। গ্রামের বাড়িতে ঢুকতেই তন্দ্রা আশ্চর্য হয়ে গেলো, বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে কোনো জনপ্রাণী নেই বাড়িতে নেই। অর্থী তন্দ্রাকে জিজ্ঞাসা করলো,
‘কিরে কাউকে তো দেখতে পাচ্ছিনা, কেউ বাড়িতে নেই নাকি, বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে কেউ নেই।’
‘আমি তো ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছিনা, আজকে তো বরং বাড়ি ভরে থাকার কথা, আমার বড়ো জেঠু মারা গেছে সেই কারণে তাহলে বাড়িতে এতো নীরবতা কেনো সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।’
অর্থীর দাদু বলে উঠলো,
‘আগে ভেতরে চলো, এখানে থেকে এসব ভাবলে তো আর কোনো উত্তর পাওয়া যাবেনা।’
তন্দ্রা, অর্থী আর অর্থীর দাদু তন্দ্রাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। বাড়িতে গিয়ে দেখে সত্যিই কেউ নেই, তন্দ্রা এ ঘর, ও ঘর খুঁজতে শুরু করলো, পুকুরপাড়ে গেলো, বাগানে গেলো তারপর জমিতে গেলো কিন্তু কোথাও কাউকেই খুঁজে পেলো না, কাউকে জিজ্ঞাসা করলেও সে কিছুই বলতে পারছেনা। তন্দ্রারা আবার ওদের বাড়িতে ঢুকলো, যদি ওরা বাড়িতে ফিরে আসে। তন্দ্রারা বাড়িতে ঢুকেও দেখে ওরা এখনো আসেনি। তন্দ্রা বার বার ফোন করলেও ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তন্দ্রার হঠাৎ মনে হলো তন্দ্রার আশেপাশে কেউ অবস্থান করছে, তন্দ্রা জোরে চিৎকার করে উঠলো,
‘সামনে আসুন আঁধার, আমার সামনে আসুন। আমি জানি আপনি এখানেই আছেন, আমি আপনাকে অনুভব করতে পারি, সামনে আসুন আমার।’
আঁধার নিজের দৃশ্যমান রূপ নিলো, তবে হ্যাঁ সেই ভয়ংকর চেহারায় নয়, সুন্দর চেহারার রূপ নিলো। আঁধার হাসছে। তন্দ্রা চিৎকার করে বললো,
‘আমার পরিবারের লোকেরা কোথায় আঁধার?’
‘আমি কিভাবে বলবো?’
তন্দ্রা আরও রেগে গিয়ে বললো,
‘বলুন আমার পরিবারের লোকজন কোথায়, আমি জানি আপনিই ওদের সাথে কিছু করেছেন।’
অর্থীর দাদু তন্দ্রাকে বললো,
‘শান্ত হও, ওর সাথে শান্তস্বরে কথা বলো। ভুলে যেও না তোমার পরিবারের সবাই কিন্তু ওর কাছে আছে।’
তন্দ্রা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো। তারপর মিনতির স্বরে বলে উঠলো,
‘ওদেরকে ছেড়ে দিন না প্লিজ, আঁধার আমি আপনাকে রিকোয়েস্ট করছি ওদেরকে ছেড়ে দিন’
আঁধার বলে উঠলো,
‘ছেড়ে দেবো এতো সহজে?’
‘আঁধার প্লিজ!’
‘আচ্ছা ছেড়ে দেবো, তবে একটা শর্ত আছে।’
‘কি শর্ত?’
‘আজকে রাতে তুমি আমাদের বাড়িতে যাবে, আমার সাথে দেখা করতে।’
‘আপনার বাড়িতে?’
অর্থীর দাদু পাশ থেকে বলে,
‘রাজি হয়ে যাও তন্দ্রা, ও যা বলছে সেটাটেই রাজি হয়ে যাও।’
‘কিন্তু আমি তো ওনার বাড়ি বা ওনার সম্পর্কে কিছুই জানিনা, তাহলে আমি রাজি হয়েও বা কি করবো?’
‘সেটা পরে বুঝে নিও, এখন ও যা বলে তাতেই রাজি হয়ে যাও।’
আঁধার অর্থীর দাদুর সাথে তন্দ্রাকে এতো কথা বলতে দেখে, তন্দ্রাকে বলে উঠলো,
‘এই লোকটার সাথে তোমার এতো কথা কিসের তন্দ্রা? তুমি আমার সাথে কথা বলো, লোকটা কে হয় তোমার? তান্ত্রিক এনেছো তুমি সাথে? আমার ক্ষতি করার জন্য তুমি সাথে করে তান্ত্রিক এনেছো? আমার কিছু হয়ে গেলে কিন্তু তুমি তোমার পরিবারকে কখনো পাবেনা।’
তন্দ্রা বলে উঠলো,
‘না, না উনি তোমার কোনো ক্ষতি করবেনা, আমি বলছি।’
অর্থীর দাদু বলে উঠলো,
‘আমি চাইলে তোমার সাথে আগেই অনেক কিছু করতে পারতাম সে ক্ষমতা আমার আছে কিন্তু করিনি তো, আর তন্দ্রা যখন বলেই দিলো তোমার ক্ষতি না করতে তখন তো আরও করবোনা।’
আঁধার সন্দেহচোখে তাকিয়ে বললো,
‘কিভাবে বিশ্বাস করবো তোমাদের, আমার ক্ষতি না চাইলে সাথে তান্ত্রিক কেনো আনলে তন্দ্রা?’
তন্দ্রা আঁধারকে বললো,
‘তুমি তো আমাকে ভালোবাসো, নিজের ভালোবাসাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারছোনা আঁধার, এই তোমার ভালোবাসা?’
‘আচ্ছা বিশ্বাস করছি।’
‘এখন আমার পরিবারকে ছেড়ে দাও, প্লিজ!’
‘তোমাদের চিলেকোঠার ঘরে ওনারা বন্দী আছে, অজ্ঞান হয়ে আছে সবাই।’
অর্থী বলে উঠলো,
‘একমাত্র চিলেকোঠার ঘরটাই তো আমরা দেখিনি।’
আঁধার তন্দ্রাকে বললো,
‘রাতে আসবে কিন্তু তন্দ্রা, এখন আসছি!’
আঁধার অদৃশ্য হয়ে গেলো। অর্থীর দাদু তন্দ্রাকে বললো,
‘তোমাদের বাড়ির অনেক দিনের বয়স্ক কোনো মানুষ বেঁচে আছে কি, তোমাদের বাড়ির না হোক গ্রামের কোনো মানুষ?’
‘হ্যাঁ আছে, আমার বাবার মাই তো আছেন, কিন্তু কেনো?’
‘তোমাদের গ্রামের কোনো রহস্য আছে, যেটা শুনতে হবে সেজন্য। তাহলেই বোঝা যাবে আঁধারের সাথে তোমার সম্পর্ক!’
তন্দ্রা, অর্থী আর ওর দাদু চিলেকোঠার দিকে গেলো। ওখানে গিয়ে দেখলো বাড়ির প্রত্যেকটা লোক অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কোনোরকমে চোখেমুখে জল ছিটিয়ে সবার জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হলো, জ্ঞান ফিরতেই সবাই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, তারা দেখেছে আঁধারের ভয়ংকর রূপ!তন্দ্রার মা তন্দ্রাকে জড়িয়ে বলতে লাগলো,
‘ঠিক আছিস তুই? তোকে ওই পিশাচটা কিছু করেনি তো? আর তোরা এখানে কেনো, তোর তো শহরে থাকার কথা ছিলো।’
তন্দ্রা বললো,
‘সব কিছু পরে হবে। ঠাকুমা তুমি আমাকে বলো আঁধার কে? আর আমার সাথে আঁধারের কি সম্পর্ক?’
তন্দ্রার ঠাকুমা চুপ করে আছে, তন্দ্রা ঠাকুমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো,
‘প্লিজ ঠাকুমা, আমাকে বলো, নাহলে খুব বিপদ হয়ে যাবে।’
তন্দ্রার মা-বাবা বলে উঠলো,
‘বলেন মা, তন্দ্রা কি বলে?’
তন্দ্রার ঠাকুমা বললো,
‘আইচ্ছা, শোন!তোর সাথে না আমার ছোটো ননদ মানে তোর পিসি ঠাকমার সাথে আঁধারের প্রেম ছিলো, দুইজন দুইডারে জান দিয়া ভালোবাসতো। তখনকার দিনে তো আর প্রেম করা এতো সহজ আছিলোনা, তবুও তাগো মধ্যে প্রেমের সম্পক্ক গড়ে উঠছিলো, লুকায় লুকায় দেখা করতো দুইডায়, আমার শশুরমশাই তার মাইয়া আর পোলাগো মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করেনাই, গ্রামে থাকলেও পোলা, মাইয়া সবাই স্কুলে যাইতো। আমার ননদের নামও আছিলো তন্দ্রা, ঠিক ঠিক তোর মতোই দেখতে, দুজনের মুখে খুব মিল পাওন যায়, তাগো কথা জানাজানি হয়ে গেছিলো, আঁধারের পরিবারও কিন্তু স্বচ্ছল আছিলো কিন্তু আমার শশুর আর যাই হোক না ক্যান প্রেম করা তিনি দুচোক্ষে সহ্য করতে পারতেন না, মাইয়ার প্রেম করার কথা শুনে তিনি তন্দ্রারে খুব মারেন, সেই মাইর খাইয়া তন্দ্রার খুউব জ্বর আসে, সেই জ্বরেই মাইয়াটা মইরা যায়, আর আঁধার তন্দ্রার মারা যাওয়ার পর কিরম একটা চুপচাপ হইয়া যায়, ওর বাবা ওরে শহরে পাঠায়, একদিন শহর থাইকা আসতে নিয়া ওর গাড়ি একসিডেন্ট হয় আর ওই সাথে সাথেই মারা যায়। আঁধারগোরে আগের বাড়িটায় নাকি আঁধারের আত্মা ঘোরাফেরা করে সবাই তাই কয়, অপঘাতে মৃত্যু তো, আঁধারের বাড়ির লোক ওই আগের বাড়ির পাশে বাড়ি করে থাকে এখন। আমার ছোটো ননদ তন্দ্রা মারা যাওয়ার পর আমাগোর বংশে আর কোনো মাইয়া হয়নি, ওর মরার পর তুইই প্রথম মাইয়া হইছিলি, আমার স্বামী তোর সাথে ওনার ছোটোবোনের মুখের হুবহু মিল পাইয়া তোর নামও তন্দ্রা দেয়।’
‘তার মানে আঁধার আমাকেই তার প্রেমিকা তন্দ্রা মনে করছে।’
‘তোর জন্মানোর পর থাইকা তুই যতবারই এই গ্রামে আইতি ততোবারই কোনো না কোনো ভ্যাজাল হইতো আর এইবারও!’
‘ভেজাল হতো মানে?’
তন্দ্রার বাবা বলে উঠলো,
‘তুই যতবারই এই গ্রামে আসতিস ততবারই কোনো না কোনো বিপদে পড়তিস, যখন তোর পনেরো বছর ছিলো তখন একবার এখানে এসে তুই নিখোঁজ হয়ে গেছিলি, তারপর থেকে আমরা তোকে এই গ্রামে নিয়ে আসিনা। দীর্ঘ বারো বছর পর বড়ো ভাই অসুস্থ জন্য তোকে এই গ্রামে তাকে দেখার তিন সপ্তাহ আগে নিয়ে আসছিলাম।’
‘তার মানে সেই দিন থেকেই আঁধার আমার পিছু নেয়, আর বার বার কোনো না কোনো কারণে আমাকে এই গ্রামে নিয়ে আসে, যাই হয়ে যাক আজকে আমি ওর বাড়ি যাবোই।’
অর্থীর দাদু বললো,
‘আমিও আঁধারের মুক্তির জন্য ব্যবস্থা করবো, তাই আমিও তোমার সাথে যাবো।’
‘হুম!’
তন্দ্রার এই কথা শোনার পর থেকে বাড়িতে কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেছে, সবাই তন্দ্রাকে আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তন্দ্রা আজকে যাবেই, আজকে কিছু একটা করতেই হবে।
রাতের বেলা,
তন্দ্রা সবার থেকে বিদায় নিয়ে আঁধারের পুরোনো বাড়িতে আসে সাথে অর্থীর দাদুও আসে। আঁধার তন্দ্রার কাছে আসতেই অর্থীর দাদু আঁধারকে বন্দী বানিয়ে নেয়, আঁধারকে জিজ্ঞাসা করে,
‘তুই চলে যাচ্ছিস না কেনো তন্দ্রার জীবন থেকে?’
‘আমি তন্দ্রাকে নিয়ে তারপরেই যাবো।’
‘আমি তোকে মুক্তি দেবো, তুই তন্দ্রাকে ছেড়ে দে।’
‘সম্ভব না, আমি যাই হয়ে যাক তন্দ্রাকে ছাড়বো না।’
‘তোকে মুক্তি দেই, আবার জন্ম নিস্!’
‘কিন্তু তন্দ্রার সাথে তো তাহলে আমার আর মিল হবেনা। তন্দ্রা মারা গেলেই একমাত্র আমাদের মিল সম্ভব, নয়তো কোনোদিনও আমিও মুক্তি পাবোনা। আর আমি মুক্তি না পেলে কাউকে শান্তিতে বাঁচতে দেবো না।’
তন্দ্রার বাড়ির সবাই, আঁধারদের বাড়ির সবাই এখানে এসে উপস্থিত হয়। আঁধার নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে মুক্ত হয়ে যায়, তারপর তন্দ্রার মাকে আঘাত করে, আর তার শরীরে অবস্থান নেয়। তন্দ্রার মায়ের শরীরে থেকেই নানাভাবে তন্দ্রার মাকে আঘাত করতে থাকে আঁধার, তন্দ্রা আঁধারকে মিনতি করে,
‘ছেড়ে দাও আমার মাকে।’
‘আমি মরতে রাজি হলেই একমাত্র তোমার মা ছাড়া পাবে নয়তো পাবেনা, চয়েজ এখন তোমার!’
তন্দ্রার পরিবারের লোক তন্দ্রাকে না করতে থাকে, কিন্তু তন্দ্রা ওদের না উপেক্ষা করে বলে,
‘আমি রাজি তুমি আমার মাকে ছেড়ে দাও।’
আঁধার তন্দ্রার মায়ের শরীর থেকে বের হতেই অর্থীর দাদু আবার আঁধারকে বন্দী করে ফেলে। আঁধার চিৎকার করে বলে ওঠে,
‘এটা তুমি ঠিক করলে না তন্দ্রা, এটা তুমি ঠিক করলে না। আমি আবার মুক্ত হবো, আমার সব শক্তি দিয়ে মুক্ত হবো।’
অর্থীর দাদু বলতে থাকে,
‘তন্দ্রা ও ছাড়া পেয়ে যাবে, ও খুব শক্তিশালী আত্মা, ওকে বন্দী বানানো সহজ না।’
আঁধার আবার নিজের শক্তি ব্যবহার করে বেরিয়ে আসে, আর এবার গিয়ে তন্দ্রার বাবার শরীরে প্রবেশ করে বসে, আর অনেকভাবে আঘাত করতে থাকে। তন্দ্রা বলে,
‘আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে, আমি তোমার হবো। বাবাকে ছেড়ে দাও প্লিজ!’
‘বিশ্বাস করবো কিভাবে?’
‘এবার সত্যি বলছি, কোনো ধোঁকা দেবো না, প্রয়োজনে তুমি আমার শরীরে ঢোকো, আর আমাকে শেষ করে দাও, নিজের প্রিয়জনদের এভাবে দেখার চেয়ে নিজে মরে যাওয়া ভালো।’
‘আমি কিছু কথা বলতে চাই তন্দ্রা, যদি অনুমতি দাও তবে বলি? তবে হ্যাঁ আমার কথা বলাকে তোমরা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করোনা, প্লিজ!’
‘ঠিক আছে বলো, কেউ কিছু করবেনা তোমায় আমিও বলছি এই কথা!’
আঁধার তন্দ্রার বাবার শরীর থেকে বের হয়ে বলতে শুরু করলো,
‘আমি তোমার সাথে কখনো এরকম করতাম না তন্দ্রা, কখনো না!আমি তো তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তবুও দেখো সেই তোমাকেই মারতে চাইছি। কিন্তু আমার কিচ্ছু করার নেই। তোমাকে যে আমার হতেই হবে, আমি তো দোষ না করেই শাস্তি পেয়েছি, তাহলে আরেকটা দোষ করে যদি তোমাকে পাই তাহলে দোষ আমি কেনো করবো না?’
‘ম মানে?’
‘আমার মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিলো না তন্দ্রা!’
‘সেটা তো আমি জানি, আপনার কার একসিডেন্টে মৃত্যু হয়েছিলো।’
‘সেটা তো সবাই জানে, কিন্তু এর পেছনের ঘটনা কেউ জানেনা।’
‘এর পেছনের ঘটনা মানে?’
‘তোমার বাবা আমাকে মেরে ফেলেছিলো তন্দ্রা, তোমার বাবা!’
‘আমার বাবা মানে, এই জন্মে আমার দাদুর বাবা?’
‘হ্যাঁ, সে-ই!’
‘সে কিভাবে আপনাকে… মানে!’
‘তোমার বাবা তোমার মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী মানতো, সেদিন আমার আর তোমার সম্পর্কের কথা জানার পর তোমার বাবা তোমাকে খুব মারে,যার কারণে তোমার প্রচন্ড জ্বর আসে, আর সেই জ্বরে তুমি মারা যাও আর তোমার বাবা আমাকে দোষী বানায় যে আমার জন্য তোমার মৃত্যু হয়, তাই সে আমাকে গাড়ি একসিডেন্ট করে মেরে ফেলে। তারপর যখন আমি এসব জানতে পারি তখন বুঝতে পারি, একমাত্র তুমিই আমার এই জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে পারো, আমি তো তোমাকে মারতে চাইনা, কিন্তু আমি অপারক!তবে হ্যাঁ তোমার মৃত্যুর পর আমরা দুজনেই মুক্তি পাবো, তবে আমরা আবার জন্ম নেবো নিজেদের বংশে, তোমার মৃত্যুর পর তোমার বংশের প্রথম মেয়ে সন্তানের সাথে আমার বংশের ছেলে সন্তানের বিয়ে হবে!তাহলেই এই ইন্দ্রজালের সমাপ্তি ঘটবে, আর সবার মুক্তি হবে।’
আঁধার কথাগুলো বলতে বলতে তন্দ্রার শরীরে ঢুকে যায়, তন্দ্রা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘আঁধারের শেষ কথাগুলো যেনো পালন করা হয়, এটা আমার শেষ ইচ্ছা!সবার কাছে ক্ষমা চাইছি আমি ক্ষমা করে দিও তোমরা আমায়! তন্দ্রার মাঝে থাকা আঁধার একটা কাচের বড়ো ধারালো টুকরো নিজের পেটে বসিয়ে দেয়, আর নিজের জীবনের সমাপ্তি ঘটায়!
পরিশিষ্ট: তন্দ্রার মৃত্যুর এক বছর পর আঁধারদের বংশে একটা ছেলে সন্তান জন্মায় যার নাম রাখা হয় আঁধার, তার দু’বছর পর তন্দ্রাদের বংশে তন্দ্রার বড়ো ভাইয়ের একটা মেয়ে সন্তান হয় যার নাম রাখা হয় তন্দ্রা।
‘সমাপ্ত’
[রি-চেক করিনি, ভুলগুলো একটু বুঝে নেবেন!শেষটা হয়তো ভালো হয়নি, আমি দুঃখিত এর জন্য!)