তুমি আমার প্রেয়সী ৩ পর্ব -০১

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১

সাফাত আর কিছু বলতে পারলো না। সাফাতের ধরে রাখা অহির হাতটা ডিলে হয়ে আসে। আচমকা সাফাত নিচে ঢলে পড়ে। সাফাতের এভাবে পড়ে যাওয়ার মানে অহি বুঝতে পারছে না। সাফাতকে কয়েক বার ডেকেও যখন অহি সাড়া পেলো না। তখন অহি ভয় পেয়ে যায়। মনের মাঝে অজানা ভয় হানা দেয়। অহিও ফ্লোরে বসে পড়ে আর সাফাতের মাথা নিজের কোলে তুলে নেয়। অনবরত সাফাতকে ডাকতে থাকে।

সাফাত,, এই সাফাত! তুমি কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? এই সাফাত তুমি কথা বলছো না কেনো? প্লিজ সাফাত চোখ খুলো। প্লিজ একটাবার চোখ খুলো।

অহির শত আকুতি মিনতিতেও সাফাত চোখ খুলে তাকালো না। আগের মতোই নির্জীব হয়ে পড়ে আছে। অহি এবার ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো। অহি চিৎকার করে কণাকে ডাকতে লাগলো।

কণা,,, কণা,,,, আদিয়াত ভাইয়া এদিকে আসেন একবার।

সাফাত একবার চোখ খুলে তাকাও। এই দেখো আমি তোমার ওপর আর রেগে নেই। তোমাকে ক্ষমাও করে দিলাম তবুও একটা বার চোখ খোলো।

আদিয়াত কণার গালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই অহির ডাক শুনে দুজনেই চমকে ওঠে। আদিয়াত বা কণা কেউই বুঝতে পারছে না অহি এভাবে চিৎকার কেনো করছে? দুজনের মাঝে কারোরই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে আওয়াজটা সাফাতের রুম থেকে আসছে। দুজনেই সাফাতের ঘরের দিকে ছুটে।

সাফাতের রুমে এসে সাফাতকে এভাবে অঙ্গান অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে কণা আতকে ওঠে। কণাও গিয়ে সাফাতের পাশে বসে সাফাতকে ডাকতে শুরু করে।

৭১

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সাফাত। স্যালাইন চলছে। কেবিনের বাইরে থেকে অহি এক ধ্যানে সাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। অতিরিক্ত উইকনেসের জন্য সাফাত ঙ্গান হারিয়েছে। উইকনেসের কারণ হচ্ছে সাফাত কিছুদিন ধরে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না নিজের শরীরের প্রতি প্রচণ্ড রকম অবহেলা করছে।

হসপিটালের করিডোরের চেয়ারের বসে আছে আদিয়াত। অাদিয়াতের বুকে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে কণা। সাফাতের জন্য কেঁদে কেটে অস্থির কণা। আদিয়াতের আরেক পাশে বসে আছে তিশান আহম্মেদ। উনি অনেকটাই নির্জীব হয়েই বসে আছেন।

অহি সাফাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই খেয়াল করলো সাফাকের চোখের পাতা ইষৎ কাঁপছে। হাতের আঙ্গুলগুলোও নড়াচড়া করছে। অহি বুঝতে পারছে সাফাতের ঙ্গান ফিরছে। অহি দৌড়ে যায় ডক্টর ডাকতে।

৭২

বন্যার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে নোমান। নোমান বুঝতে পারছে না কী বলবে। তার মাঝে প্রবল অপরাধবোধ কাজ করছে। বন্যার চোখে চোখ মিলাতে পারছে না। বন্যার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছে না।

মাথা নিচু করেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ভুলেও বন্যার দিকে তাকাচ্ছে না। নোমান ভাবছে সে না চাইতেও বন্যাকে অনেক বেশি আঘাত করে ফেলেছে। নোমান বন্যাকে অনেক কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু তার কণ্ঠনালী দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। যেনো কেউ তার গলা চেপে ধরে আছে। দম আটকে আসছে তার। ফট করেই নোমান বন্যার হাত চেপে ধরে। কিন্তু বন্যার দিকে তাকায় না। নিচের দিকে তাকিয়েই বলতে শুরু করে।

আই’ম সরি বন্যা। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি। গতকাল অতিরিক্ত ড্রিংকস করে ফেলেছিলাম। তাই নিজেকে কনট্রোল করতে পারিনি। আই’ম রিয়েলি সরি। প্লিজ ফর গিভ মি। প্লিজ আমার ওপর রেগে থেকো না। প্লিজ একবার আমার সাথে কথা বলো। তোমার এই মৌনতা আমি মেনে নিতে পারছি না। তোমাকে আঘাত করার অপরাধবোধ আমাকে ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। তুমি আমাকে শাস্তি দাও। তুমি আমাকে যা শাস্তি দিবে তাই আমি মাথা পেতে নিবো। তবুও আমার সাথে রাগ করে থেকো না।

বন্যা শান্ত স্বরে জবাব দেয়, আমি তো আপনার ওপর রেগে নেই।

নোমান বন্যার দিকে তাকায়। বন্যার মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ করা। চোখ মুখে বিষণ্ণ ভাব। নাকটা হালকা লাল হয়ে আছে। চোখ দুটো কিছুটা ফোলা ফোলা। বন্যার মাথার ব্যান্ডেজ যেনো নোমানের বুকে তীরের মতো বিঁধছে।

আমি জানি তুমি আমার ওপর রেগে আছো। রেগে থাকাটাই স্বাভাবিক। আমার জন্য তুমি কতোটা ব্যথা পেলে। আমি যদি নিজের…..

আমি জানি তখন আপনার সেন্স কাজ করছিল না। আপনি সঙ্গানে যে আমাকে কখনোই আঘাত করতে পারেন নাহ সেটা আমি ভালো করেই জানি। আপনি আমার হাজবেন্ড। আমার ওপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে ইনফ্যাক্ট আঘাত করার।

প্লিজ এভাবে বলো না। আমি তোমার হাজবেন্ড তাই বলে আমি তোমাকে আঘাত করতে পারি না। তোমাকে আঘাত করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না। ইচ্ছে করছে নিজের হাত দুটো কেটে ফেলি।

বন্যা এবার নিজে থেকেই নোমানের হাত দুটো ধরে।

আপনি আমাকে যতটা না আঘাত করেছেন তার থেকে নিজেকে বেশি আঘাত করছেন। দেখুন হাত দুটোর কী অবস্থা করেছেন?

নোমান জবাব দেয় না। কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। বন্যা আজ নিজে থেকে তার হাত ধরেছে।

গতকাল নোমান বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অতিরিক্ত ড্রিংকস করে ফেলে। অতিরিক্ত ড্রিংকস করার ফলে আউট অফ কনট্রোল হয়ে যায়। হেলে দুলে যখন বাসায় প্রবেশ করে তখন বন্যা নোমানকে ধরতে আসলেই নোমান বন্যাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ধাক্কাটা বেশ জুড়েই ছিল। যার ফলে বন্যা টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়। ফলস্বরুপ বন্যার কপালের অনেকটাই কেটে যায়।

৭৩

কেটে গেছে কিছুদিন। সাফাতকে ঐদিন বিকালেই বাসায় নিয়ে আসা হয়। সাফাত এখন একদম সুস্থ। সাফাতের সাথে অহির একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। ইদানীং আদিয়াত ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অনেক রাত করে বাসায় ফেরে। কণার সাথে ঠিক মতো কথা বলারও সময় পায় না। এই নিয়ে কণা অভিমান করে। আদিয়াত তার অভিমানীর অভিমান ভাঙানোর জন্য বলেছিল বিকালে ঘুরতে নিয়ে যাবে।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো কিন্তু আদিয়াতের আসার খবর নেই। সময় যত গড়াচ্ছে কণার অভিমানের পাল্লা তত ভারী হচ্ছে। কণা অনেকবার আদিয়াতকে কল করেছে কিন্তু আদিয়াত একবারের জন্যও কণার কল রিসিভ করেনি। কণা আবার কল দেয়। আর মনে মনে ঠিক করে নেয় এবার যদি আদিয়াত কল না ধরে। তাহলে সে আর আদিয়াতকে কল দিবে না। ইনফ্যাক্ট আদিয়াতের সাথে কথাও বলবে না। কিন্তু এবার কল রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে এক নারী কণ্ঠস্বর কণার কানে এলো। কণার ভ্রু কুচকে যায়।

হ্যালো!

কণা রুক্ষ কন্ঠে বলে, এই কে আপনি? আদিয়াতের ফোন আপনার কাছে আসলো কীভাবে?

আমি আদিয়াত স্যারের পিএ এলিনা । স্যার মিটিংয়ে গেছেন। তাই উনার ফোনটা আমার কাছে দিয়ে গেছেন।

আদিয়াতে পিএ একজন মেয়ে এটা শুনেই কণার রাগ ওঠে যায়। কণা এবার কাঠ কাঠ গলায় বলে,

আপনি এলিনা আর টেলিনা যায় হোন না কেনো তাতে আমার মাথা ব্যথা নেই। আপনি আদিয়াতের কাছে ফোনটা দিন।

এলিনাও রেগে যায় তার নাম এমন ব্যঙ্গ করায়।

স্যার এখন মিটিংয়ে আছেন। তাই ফোন দেওয়া যাবে না। স্যার রাগ করবেন।

আপনার স্যার রাগ করবেন নাহ। আপনি গিয়ে বলুন কণা ফোন করেছে।

এই মেয়ে আপনি কে বলুনতো? তখন থেকে কথা বলে যাচ্ছেন। সোজা কথা কানে যায় না।

আমি আপনার স্যারের বউ।

হা হা স্যারের বউ। হাউ ফানি। প্রতিদিন এমন অনেক মেয়েই ফোন দেয় স্যারের বউ সেজে।

কণার রাগটা তরতর করে বাড়ছে। রেগে মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই এলিনা কল কেটে দেয়। এতে যেনো কণার রাগটা আকাশসম হয়ে গেলো। রেগে হাতের ফোনটা ছুঁড়ে মারে। মুহুর্তের মাঝেই ফোনটা ভেঙে দুই খন্ড হয়ে যায়।

চলবে……….
]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here