দ্বাবিংশতি পর্ব -০১

দীর্ঘ বাইশ বছর পর বাংলাদেশে এসেছে রাই।তাও তার বাবা-মায়ের খোঁজে।অবশ্য সে জানে তাদের খুজে বের করা এত কঠিন কোনো বিষয় না।তাই তো রাই তার বাবার ইন্ডাস্ট্রির কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ করার পর খুব সহজেই চৌধুরী বাড়ির ঠিকানা পেয়ে গেল।এখন শুধু গন্তব্যে পৌঁছানোর অপেক্ষা।

ঠিকানা সংগ্রহ করে রাই সোজা তার হোটেলে গিয়ে চেকিং করলো।এরপর সুটকেস সহ বিল পে করে নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।মাথায় হেলমেট পড়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে গুগল ম্যাপ ফলো করতে করতে এক সময় সে চৌধুরী মঞ্জিলের সামনে এসে পৌঁছালো।বেশ সুন্দর একটা বাড়ি।বোঝাই যাচ্ছে ডুপ্লেক্স সিস্টেমে তৈরি করে এই বাড়িটি বেশ যত্নের সাথেই গড়ে তুলেছে তার বাবা।নিজের বাবার কথা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে যায় রাইয়ের।

চৌধুরী মঞ্জিলের গেটের সামনে বাইক নিয়ে হর্ন বাজাতেই সামনে থাকা দুজন দারোয়ান রাইয়ের সামনে এগিয়ে আসে।

“আপনি কে?”

রাই নিজের হেলমেট খুলে কথা বলার আগেই একজন দারোয়ান বলে উঠে,

“আরেহ,ফাইজা আপামনি।আপনে?আসলে আমরা আপনারর চিনতে পারিনাই।দুঃখিত!”

এরপর সে তার পাশে থাকা দারোয়ানকে দরজা খুলে দিতে বলে।দরজা খোলা পেয়ে রাই বাইক সহ ভেতরে চলে যায়।এরপর সোজা গিয়ে সদর দরজার আগে থেমে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় দরজায় ধাক্কা দেয়।দরজায় শব্দ হচ্ছে শুনে ফাইজা গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

সদর দরজা খোলা পেয়ে ফাইজাকে উপেক্ষা করেই রাই হলরুমের ভেতরে চলে যায়।

“হেই!এই যে আপনি!কে আপনি?পরিচয় দিন।”

“অসহ্য যন্ত্রণা তো।”রাই এবার নিজের হেলমেট খুলে দেয়।

ফাইজা রাইয়ের পেছনে থাকায় সে শুধু রাইয়ের বেক দেখতে পায়।আপাদমস্তক কালো শার্ট পেন্ট পরিহিত একটা ছেলে!ঘাড়ের ওপর চুলগুলো পড়ে আছে।বাতাসে চুলগুলো উড়ে যেতেই ফর্সা ঘাড়টা ফুটে উঠে ফাইজার চোখে।

“আপনার নাম?”

“রাই চৌধুরী।” (ফাইজার দিকে ঘুরে)

ফাইজার দিকে তাকিয়ে রাই আর ফাইজা দুজনেই চমকে উঠে।একজন আরেকজনের ডুপ্লিকেট বা জেরক্স কপি বলা চলে।রাই ভালো মত ফাইজাকে পরখ করে।পরনে এপ্রোন নিচে গোলাপি রঙের জামা আর কোমড় পর্যন্ত ঝোলানো চুল।গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা।হাইটে তার সমানই;হাতে মেডিকেলের বই।

রাই খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেও ফাইজা তাকে দেখে ভূত ভূত বলে চিল্লাতে থাকে।ফাইজার চিৎকার শুনে রাধুনি নিপা খালা দৌড়ে আসে।এসে একই রকম দুজনকে দেখে সে ভয় পেয়ে যায়।এরপর সেও “বড় আপা গোওঅঅ ভূত আইসে বাড়িত” বলে চিল্লাতে শুরু করে।

“স্টপ ইট,ইয়ার।তুমি ফাইজা না?”

“হুম।” (ভয়ে ভয়ে)

“মেডিকেল স্টুডেন্ট?”

“হুম।কিন্তু তুমি কীভাবে জানো!”

“বাহ,তার মানে আমার বোনও অনেক টেলেন্টেড।”

“কি?বোন!”

“হুম,বোন।”

তাদের কথোপকথন চলতে থাকলেও নিপা খালা স্টীল চিল্লাতেই আছে।নিপার এমন ভয়ানক চিৎকার শুনে মিসেস চৌধুরী ওরনা গায়ে দিয়ে দোতলা থেকে নিচতলায় আসলেন।

“কি হয়েছে,ফাইজা?”

হলঘরে প্রবেশ করে দুই ফাইজাকে একসাথে দেখে তার চলা বন্ধ হয়ে গেল।কারণ এদের মধ্যে একজন সম্পূর্ণ মেয়েলি আর একজন পুরুষালি গেটআপে আছে।

ফাইজা তার মাকে দেখে তাকে গিয়ে জরিয়ে ধরে বললো,

“আম্মু,হু ইজ শি?”

ফাইজার মুখে আম্মু ডাক শুনে রাই নিজের চুলগুলোকে ফ্লিপ করলো ছেলেদের মত।আর তখনি মিসেস চৌধুরীর চোখ গেল রাইয়ের বাম গালে থাকা তিলের ওপর।সাথে সাথেই তার শরীরে ভয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল।হাত-পায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।রাই নিজের মাকে এমন চমকাতে দেখে মুচকি হাসলো।
সে বুঝতে পারলো যে তার মা তাকে চিনতে পেরেছে।
তাকে জরিয়ে ধরার জায়গায় তার মা এক জায়গায় ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

এদিকে ফাইজার বাবা অর্থাৎ রিজভী সাহেব তখন ইন্ড্রাস্ট্রিতে কিছু কাজে যাওয়ার জন্য নিচে আসতেই এই পরিবেশ দেখে থেমে গেলেন।রাই তার বাবার দিকে তাকিয়ে ভালোমতো দেখলো।পঞ্চাশোর্ধ একজন লোক;চোখে বেশ মোটা চশমার গ্লাস।ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে তার দিকে আসছিলেন।নিজের আসল বাবাকে দেখে রাই তার সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।মিসেস চৌধুরী প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে কিছু বললেন না।

রাই সোজা গিয়ে তার বাবাকে জরিয়ে ধরলো।তার বাবা রাইয়ের এই কান্ডে যেন সপ্তম আকাশ থেকে সোজা মাটিতে পড়ে গেল।রাই তার বাবার কানে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

“বাবাই!”

রাইয়ের বাবা রাইকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দিয়ে বললেন,
“তোমার না দুদিন বাদে বিয়ে ফাইজা?একি অবস্থা করেছ নিজের!এত বড় বড় চুল ফেলে দিয়েছ কেন?”

“বাবা,আমি এখানে!”সামনে থেকে ফাইজার আওয়াজ শুনে রিজভী সাহেব রাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।না,রাই তো কথা বলে নি!তাহলে কে কথা বললো?

এতক্ষণে ফাইজা কিছুটা নরমাল হয়ে তার বাবার সামনে হেটে এসে দাড়ালো।দুই ফাইজাকে দেখে রিজভী সাহেব তার স্ত্রীর দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকাতেই তার স্ত্রী মাথা নাড়ালেন।মুহুর্তেই রিজভী সাহেবের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

“রাইমা?”

“নাহ,শুধু রাই!”

এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে রিজভী সাহেব নিজ থেকে গিয়ে রাইকে জড়িয়ে ধরলেন।এই দৃশ্য দেখে ফাইজা অজ্ঞান হয়ে যেতে যেতেও কোনো ভাবে সারভাইভ করলো।
তার বাবা কাউকে জরিয়ে ধরেছে?রিজভী চৌধুরী কাউকে জরিয়ে ধরেছে!আসলেই ছেলেটার সাহস আছে বলতে হবে।কিছুক্ষণ বাদে রিজভী চৌধুরী রাইকে নিজের থেকে সরিয়ে বললেন,

“কেমন আছিস?মা!”

“এতদিন ভালো ছিলাম না!এখন ভালো আছি।” (হেসে)

“মা?বাবা,তুমি ওকে মা কেন বললে!ও তো ছেলে!”

রিজভী সাহেব হাসলেন।যা দেখে ফাইজা আবারো ভূত দেখার মত চমকে রইলো।তিনি হেসে বললেন,

” ও তোর বড় বোন,ফাইজা।”

“আমার বড় বোন?”

“হু!”

“কিন্তু..” ফাইজার কথা শেষ হওয়ার আগেই রিজভী সাহেব রাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“তোর ক্ষুধা লেগেছে না,রাইমা?”

“না,আমি খেয়ে এসেছি।তুমি কোথাও যাচ্ছিলে?বাবা।”

“হু,ইন্ড্রাস্ট্রিতে।তুই যাবি আমার সাথে?তাহলে গাড়িতে বসে এতদিনের সব ঘটনা শুনতেও পারবো।আর তোকে সব ঘুরিয়েও আনা যাবে।চল তাহলে।”

রাইয়ের প্রতি বাবার এমন অদ্ভুত ব্যবহার দেখে ফাইজা বেক্কলের মত দাঁড়িয়ে রইলো হলরুমের মাঝেখানে।ফাইজা ত্র মায়ের দিকে একবার তাকাতেই দেখতে পেল তার মাও হাসছে এসব দেখে।তার মানে তার মা সব জানে!শুধু সেই এখানে বেকুব বনে আছে?না, না এমনটা হতেই পারেনা।তারও সব জানতে হবে!হঠাৎ করে ওর বোন কোথা থেকে উদয় হলো!তাই সে আস্তেধীরে নিজের মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো।আর মায়ের দিকে আসামীর মত হেসে তাকালো।

“হিহিহি,আম্মুউউউউ!”

“এই যে,এখন আবার বাদরামি শুরু করবি না বলে দিলাম ফাইজা।” এটা বলেই তাদের মা মেয়ের মধ্যে খুনসুটি শুরু হয়ে গেল।

__________________________________________

২.

রাই আর তার বাবা সদর দরজার বাহিরে বেরিয়ে দাড়াতেই রাইয়ের বাবার চোখ রাইয়ের বাইকের উপর পড়লো।

“তোমার বাইক,রাই?”

“হুম।”

“চাবি দাও।”

রাই তার বাবার কথার মানে বুঝলোনা।তার বাবা হেসে তাকে বললো,

“আমি বাইক চালাইনা আজ অনেক বছর।যেহেতু,এই জিনিসটা আমার মেয়ের।তাই বাবা হিসেবে এটা চালানোর অধিকার আমারও আছে,রাইট?”

রাই মাথা নাড়িয়ে তার পকেট থেকে চাবিটা বের করে তার বাবার হাতে দিতেই তার বাবা বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলেন।রাই তার বাবার পেছনে বসে নিজের হেলমেটটা তার বাবাকে দিয়ে দিলো।আর তার বাবার কাধে শক্ত করে চেপে ধরে বসলো।তার বাবা মেইন রোডে প্রবেশ করে তাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো,

“রামিসা কেমন আছে,রাই?”

“আম্মা?মারা গেছে দুই মাস চার দিন হয়েছে!”

কথাটা শুনেই রাইয়ের বাবার হাত কাপতে লাগলো।
রাই বলতে শুরু করলো,

“আম্মু,আমাকে নিজের মেয়ের মত মানুষ করেছে এই বাইশটা বছর।আমার যতদূর মনে পড়ে আব্বুও আমাকে অনেক আদরে রেখেছে।দুইমাস আগে আম্মুর ক্যান্সার ধরা পড়ে।আমি তখন বুসানে পড়ালেখার জন্য
ছিলাম।আম্মু ফোন দিয়ে অনেক কান্না করছিলো।আর আব্বুকে বলার সাহস পাচ্ছিলোনা।তাই অগত্যা আমাকে সন্ধ্যার ফ্লাইটে ইটালির উদ্দেশ্যে রওনা হতে হয়।আমি গিয়ে শুনি এই অবস্থা।এরপর আম্মুকে হাসপাতালে নেই!সেখানে ডাক্তার বলে দেন সরাসরি লাস্ট স্টেজ ব্রেইন ক্যান্সার।আর মাত্র দুইমাস লাস্ট করতে পারে আম্মু।এরপর থেকেই আমরা হাসপাতালে থাকি।আমার সেমিস্টার গ্যাপ যায়।আর আম্মুও দিনে দিনে অসুস্থ হতে থাকে।মারা যাওয়ার একদিন আগে আম্মু আমার হাত ধরে তোমাদের কথা বলে যায়।আর তোমার কাছে মাফ চায়।আসলে,আম্মু ভেবেছিলো যে কখনো যদি আমার আসল আম্মু আমাকে নিয়ে যেতে চায়।তখন সে কিভাবে থাকবে আমাকে ছাড়া!তাই এই
সত্য গোপন করার জন্য সে তার কলিজার আপন ভাইয়ের সাথে দীর্ঘ বাইশ বছর যোগাযোগ করেনি।আম্মুর মারা যাওয়ার পর আব্বু অনেক ভেঙে পড়ে।আর আমার নামে সব সম্পত্তি উইল করে দিয়ে তিনিও ড্রিংকস করে রোড এক্সিডেন্ট করেন।এরপর তাকেও হারাতে হয় আমার।কিছুদিনের ব্যবধানে দুজন প্রিয় মানুষকে একসাথে হারিয়ে আমি পাগল প্রায় হয়ে যাচ্ছিলাম।তখনই বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।কিন্তু লাস্ট সেমিস্টার থাকায় সেমিস্টার দিয়ে এরপর আমাকে এখানে আসতে হয়েছে।”

রাইয়ের ঘটনা শেষ হতে হতেই তার বাবা আর সে চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করে।বাইক পার্ক করে রাইয়ের বাবা রাইয়ের হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো।রাইকে দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।এদিকে,ফাইজার হবু বর কিছু ফাইল আর ডকুমেন্টস এর জন্য সেদিন রিজভী সাহেবের অফিসে অপেক্ষা করছিলো।নিজের রুমে রাইকে নিয়ে ডুকে সায়ানকে দেখেই চমকে উঠেন রিজভী সাহেব।

“হাই,আঙ্কেল।”

“সায়ান,তুমি এখানে?”

“আসলে আঙ্কেল বাবা,কিছু ফাইল আর ডকুমেন্টস এর জন্য পাঠিয়েছিলো।ও,ফাইজা তুমি!”

রাইকে ফাইজা মনে করে সায়ান রাইয়ের হাত ধরতে গেলেই রাই তার হাত উল্টো করে ধরে হাটুতে লাত্থি তাকে দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।নিজের মেয়ের এমন কান্ডে হেসে ফেলেন রিজভী সাহেব।

এদিকে ব্যাথা পেয়ে সায়ান রক্তচোখে রাইকে বলে,

“কি হয়েছে ফাইজা?”

“সায়ান,ও ফাইজা না বাবা।”

“মানে?”

“ও ফাইজার বড় বোন!রাই চৌধুরী।”

“কি বলছেন এগুলো আঙ্কেল!মজা করছেন কেন!আর ফাইজা এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে কেন?”

এবার রাই তার বাবাকে বলে,

“বাবাই,আমি আমার বোনের হাজবেন্ডের সাথে আশপাশটা ঘুরে দেখি,কি বলো তুমি?তুমিও ততক্ষণে কাজ গুলো সেরে ফেলো!”

“আচ্ছা,মা যা ঘুরে আয়।সায়ান ওকে বাহিরটা ঘুরিয়ে দেখাও তো একটু বাবা।”

সায়ান জানে আঙ্কেলের কথা এফোড়ওফোড় করলে তিনি রেগে যাবেন।তখন হিতে বিপরীত কিছু হলে তার এত বছরের প্ল্যানে পানি ঢালতে হবে।তাই সে রাইকে নিয়ে রুমের বাহিরে আসলো।রাইকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেল।রাই সবাইকে বসতে বলে সায়ানের সাথে নিচে নামার উদ্দেশ্যে লিফটে প্রবেশ করলো।লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সায়ান চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

“কি শুরু করেছ,ফাইজা?”

“আমি ফাইজা না,মিস্টার সায়ান।”

“তুমি ফাইজা না তো কে?মজা নিও না তো!”

“এই অ্যাটিটিউড নিয়ে আপনি ফাইজাকে সামলাবেন কীভাবে,সায়ান সাহেব!আমার তো মনে হয় না যে আপনি ফাইজার জন্য পারফেক্ট।”

কথাটা শুনেই সায়ান রাইয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।ফাইজা ভীতু ধরনের ওর মধ্যে হঠাৎ এত ভাব কোথা থেকে এসে ভর করলো?না,আজ ফাইজাকে রাতারাতি অনেক বেশি ফর্সা লাগছে।আবার গালে তিলও এসে পড়েছে।ওর এত বড় বড় চুল কোথায় চলে গেল!

রাই সায়ানের হাবভাব দেখে তার আইডি কার্ড বের করে দেখালো।যেখানে স্পষ্ট লেখা,

“রাই রোসালাইন।
এইজঃ২২
ন্যাশনালিটিঃইটালিয়ান”

“তুমি মানে আপনি ইটালিয়ান?”

“হুম।”

“আসলেই আপনি ফাইজার বড় বোন?”

“জি।”

সায়ান এবার অন্যদিকে ঘুরে মাথা চাপরাতে লাগলো।বড় মেয়ের জায়গায় ছোট মেয়েকে বিয়ে করে কি করবে সে!এবার তার কি হবে!

“আপনি বাহিরে থাকতেন কেন?মিস রাই।”

“পারসোনাল ম্যাটার।”

“প্রবলেম নেই!বলতে পারেন আমাকে।এটলিষ্ট আমি আপনার বোনের হবু জামাই।”

“হবু জামাই!আসল জামাইয়ের ট্যাগ নিয়ে আসুন আগে।এরপর দেখবো বলা যায় নাকি।”

সায়ান বুঝলো,মেয়েটা বেশ বুদ্ধিমতী আর শক্ত ব্যক্তিতের।ফাইজার চেহারা হলেও সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের।এমন চলতে থাকলে আঙ্কেল তার ইন্ডাস্ট্রির দেখভালের দায়িত্ব ওকে দিয়ে দিবে।তখন আমি স্কব কিছু সামলাবো কীভাবে?!

“আপনার ফোনে ফাইজার নাম্বার আছে?”

“জি!”

“আপনার ফোনে কি ফাইজার মোবাইল নাম্বার আছে?”

“ওহ,হুম আছে।কেন?”

“ওকে কল দিয়ে আমাকে ফোনটা দিন তো।”

সায়ান দ্রুত ফাইজার নাম্বারে কল দিয়ে রাইকে ফোনটা দিলো।

“হ্যালো,সায়ান ভাইয়া।”

“ফাইজা,আমি রাই।”

“রাই?আপু!”

“হুম।”

“তোমার কাছে সায়ান ভাইয়ার ফোন কেন,আপু?সব ঠিক আছে?”

“হ্যাঁ,সব ঠিক আছে।তুমি কোথায়?”

“আমি মাত্র মেডিকেল ক্যাম্পাসে এসেছি।কিছু হয়েছে,রাই?”

“আমি আসছি ওখানে।তুমি বাহিরে অপেক্ষা করো।”কথাটা বলেই রাই ফোন কেটে দিলো।

” আপনি ফাইজার মেডিকেল চিনেন?”

“না।তবে আপনি চিনেন আশা করি।আমাকে এড্রেস দিন আমি ওখানে যাবো।”

“আপনার প্রবলেম না হলে আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি?”

“প্রবলেম আছে।আপনি এড্রেস দিয়েই আপাতত সাহায্য করুন!”

সায়ান বুঝতে পারলো এই মেয়ে এত সহজে বসে আসার মানুষ না।ওকে পটাতে হলে অন্য রাস্তা ধরতে হবে।তাই সে রাইকে ফাইজার মেডিকেলের এড্রেস দিয়ে রিজভী সাহেবের কামরায় ফিরে এলো।রাইকে দেখতে না পেয়ে এবার রিজভী সাহেব সায়ানকে প্রশ্ন করলো,

“রাই কোথায়,বাবা?”

“ফাইজার মেডিকেলে গেল মাত্র।”

“এই মেয়েটাও না।ছোট্ট কাল থেকেই বড় চঞ্চল প্রকৃতির।একে নিয়ে আর পারলাম না।দেখ একদিনেরই কেমন নিজের বাবার লাইফস্টাইল চেঞ্জ করে দিলো।”

“হুম,তা তো দেখতেই পাচ্ছি।” (বিড়বিড়িয়ে)

“সায়ান,আমি চিন্তা করছিলাম এক সপ্তাহের মধ্যে আমার পদটা রাইকে দিয়ে দিলে কেমন হয়!”

“ভালোই হয়।কিন্তু,রাই তো মাত্র আসলো।তাই আগে ওকে এডজাস্ট হওয়ার জন্য টাইম দেওয়া উচিত।”

“হুম,তাও ঠিক।”

এদিকে রাই ফাইজার ক্যাম্পাসে গিয়েই গোলমাল পাকিয়ে ফেললো।তার বাইক নিয়ে গিয়ে সে সোজা ভার্সিটির প্রফেসর শুদ্ধের গাড়িতে লাগিয়ে দিলো।

চলবে,
#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#সূচনাপর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here