দ্বাবিংশতি পর্ব -১৪ ও শেষ

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#অন্তিমপর্ব

৩১.🐙

সায়ান খান বাড়িতে প্রবেশ করতেই আমেনা বেগম তার কাছে ছুটে আসলেন।

“কিরে,সায়ান?ফাইজা কোথায়?ওকে দেখছিনা যে!”

“কেন ফাইজাকে দিয়ে কি করবে,বড় আম্মু?”

“কি করবো মানে?তুই জানিস না?তোর বাবার সব সম্পত্তি এখন ওর কাছে তাই এখন ওকে এখানে এনে রাখলেই আমাদের লাভ হবে।তুই বুঝতেছিস না আমি কি বলছি?”

“হুম,খুব ভালো করে বুঝতেছি।” (বিড়বিড়)

“আচ্ছা,আমি ওকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি আগে কিছু প্ল্যান বানাই।”

সায়ানের কথা শুনে আমেনার বেগমের বুক থেকে পাথর নেমে গেল।না,তার মানে খান ইন্ডাস্ট্রিও তাদের চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিও তাদের।এসব ভাবতেই আমেনা বেগম খুশি হয়ে গেলেন।সায়ান নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।নিজের রুমে থাকা তার বাবা-মায়ের ছবিটাকে জরিয়ে ধরে সে অনেকক্ষণ কাঁদলো।

“আসলেই কি সায়ান এতবছর অন্ধকারের মধ্যে ছিলো?কিন্তু কীভাবে?ও তো অনেক চতুর ধরনের।তাহলে?”

সায়ান কিছুই ভাবতে পারছেনা এখন।তার সব গুলিয়ে যাচ্ছে।কোনো মতে খাটে বসে নিজের আইপ্যাডটাকে হতে নিয়ে সে গুগুলে প্রবেশ করে রাইয়ের দেওয়া তথ্য গুলোকে খুজতে লাগলো।রাইয়ের কথা মত সেখানে সত্তিই সব আছে।তার মানে কি?না,না।এত তাড়াতাড়ি কোনো কিছুতে ঝাপ দেওয়া যাবেনা।

সায়ানকে রাতে আমেনা বেগম অনেকবার ডাকলেও সে খাবার খেতে আসেনা।অগত্যা সায়ান অসুস্থ ভেবে আমেনা বেগম নিচে খাবার রেখেই নিজের রুমে চলে যান।

৩২.

আমেনা বেগমের খুশি যেন ধরছেনা।আফজাল খান বেশ কাঠখোট্টা ধরনের মানুষ।সে বারান্দায় সিগারেট ফুকতে ফুকতে তার স্ত্রীর খুশিতে পানি ঢেলে দিয়ে বললেন,

“কি হয়েছে,আমেনা?তোমাকে আজ বরাবরের চেয়ে একটু বেশিই খুশি লাগছে যে।”

“আরেহ,ফাইজার বাবার কাজ ভাবলেই আমার হাসি পায়।কি বোকা ধরনের একটা সিদ্ধান্তই না নিলেন!আমাদের কাজ আরো সহজ হয়ে গেল এখন আগের থেকে!তাই না?”

“তোমার মত মহিলাদের এই জন্যই কিছু জানাতে নেই।কিছু হয়েছে নাকি না জেনেই আগে থেকেই লাফালাফি শুরু করে দাও।”

স্বামীর মুখ এই কথা শুনে আমেনা বেগম মুখ ভার করে শুয়ে পড়লেন।কিন্তু শুয়ে শুয়েও সে হাসতে লাগলেন।এদিকে সায়ানের সারা রাত কাটলো এপাশ-ওপাশ করে।সকালে সে নিজেদের বিশাল ড্রয়িংরুমে নিত্যদিনের মতোই তার চাচাকে ওই পিস্তলটাকে পরিষ্কার করতে দেখলো।প্রতিদিন সে এড়িয়ে গেলেও আজ সে তার চাচার কাছে গিয়ে বসলো।

একটু গলাটা ঝেড়ে কেশে সে বললো,

“চাচা?”

“হুম,সায়ান।”

“তুমি এটাকে এত বছর ধরে প্রতিদিনই পরিষ্কার কেন করো?”

“হঠাৎ এই প্রশ্ন?এর আগে তো কখনো তোমাকে এর প্রতি উৎসুক হতে দেখিনি।ব্যাপার কি সায়ান?”

“না,মানে।ব্যাপারটাকে সামলাতে সায়ান বললো,মানে আমি চৌধুরী বাড়িতে যাবো ভাবছিলাম আজকে।একবারে খালি হাতে যাওয়া ঠিক হবে না!তাই আরকি!”

“তুমি অফিসে সূর্যকে বললেই সে তোমাকে একটা দিয়ে দিবে।আমার এইটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই আমি ছাড়া কেউই একে ছুতে পারে না।”

“আচ্ছা,আচ্ছা।সমস্যা নেই চাচা।”

সায়ান কথা বলা শেষ করে উঠে যেতেই সায়ানের চাচা তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো।সায়ানের মতিগতি তার কাছে ঠিক লাগছেনা কাল থেকেই।

৩৩.

সায়ান সূর্যের সাথে দেখা করে তাদের কাছে থাকা আগের ফাইলগুলো চেক দিয়ে দেখে সবই সত্যি।তার মানে রাই তাকে মিথ্যা বলে নি!

সায়ান সব দেখে সূর্যের থেকে একটা গান নিয়ে তার বাবা-মার কবরের কাছে চলে যায়। বাবা-মার কবর জিয়ারত শেষ করে তার ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।সায়ান হাইস্পিডে গাড়ি চালিয়ে এসে নিজের বাড়ির সামনে থামে।

ভেতরে প্রবেশ করে সে দেখলো ভেতরে কেউ নেই।সিড়ি বেয়ে সে তার চাচার রুমে যেতেই দেখলো তার চাচার হাতে সেই ওল্ড মডেলের গানটা আছে।তার চাচা একবার নিচের দিকে তাকিয়ে এরপর তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।সেদিন খান বাড়িতে পরপর তিনবার গুলি চলে। আশেপাশে বেশি বাড়ি না থাকায় এই বিকট শব্দ গুলো খান বাড়ির দেয়াল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো।

এরপর কেটে গেছে ৫ বছর,

“ফাইয়াজ,এই ফাইয়াজ!উঠ স্কুলে যেতে হবে।আম্মুর অফিসে যেতে হবে,বাবা।উঠ রেডি হয়ে নাও।”

“না,আমি উঠবোনা।আগে বলো রোসালাইন কবে আসবে?ওর সাথে খেলি না কতদিন!আমি স্কুলে যাবো না ও না আসলে।”

“আসবে আসবে,তুমি আগে স্কুলে যাও।স্কুল থেকে আসার পর দেখবে ওরাও এসে পড়েছে।”

ফাইয়াজকে স্কুলে দিয়ে ফাইজা নিজের অফিসে চলে গেল।এখন সে একজন ডাক্তার+বিজনেসম্যান।আবার এক বাচ্চার মাও।হঠাৎ এসব ভাবতে ভাবতে ফাইজার ফোনে ফারাবির কল আসে।

“হ্যালো,ফারাবি?”

“শুদ্ধ আর রোসালাইন এয়ারপোর্টে আছে।আমি ওদের পিক করতে গেলাম।রাই ভাবি আসতে পারেনি।ওনার একটা ডিল আছে।কালকে এসে পরবে বলেছে।”

“ডিল,ডিল আর ডিল?এগুলো দিয়ে জীবন চলে?ভাল্লাগেনা।কতদিন হয়ে গেল।ধ্যাত!আচ্ছা,তুমি গেলে একেবারে আব্বু-আম্মুকেও নিয়ে এসো কিন্তু।”

“আচ্ছা।”

ফারাবির কল কেটে দেয়।ফাইজা আবার ডুবে যায় পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনায়।সেদিন নিজের বাবা-মার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সায়ান সহ আফজাল সাহেব আর আমেনা বেগম তিনজনই একজন আরেকজনের হাতে খু/ন হন।এর একমাস পর ফাইজা জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট।প্রথমে অনেক ডিপ্রেশনে থাকলেও আসতে আসতে তার পরিচয় হয় প্রফেসর শুদ্ধের দুষ্ট কাজিন ফারাবির সাথে।সময় যেতে থাকে আপন গতিতে।সাতমাস পর ফারাবি ফাইজাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানায়।ফাইজা প্রথমে না মানলেও পরে রাই আর সবার জোড়াজুড়িতে সে হ্যাঁ বলে দেয়।এখন এই ফাজিল,চটপটে লোকটা আর তার ছেলেকে ঘিরেই তার জীবন।

রাই আর প্রফেসর শুদ্ধও তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠে একে অপরের কাছে নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে।যার ফলস্বরূপ রোসালাইনের জন্ম হয়।ছোট্ট রোসালাইন বয়সে ফাইয়াজের চার মাসের ছোট।কিন্তু দুইজনই একজন অপরজনের জান-প্রাণ।একদন্ডও একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারেনা।এভাবেই কেটে যাচ্ছে রাই,শুদ্ধ সহ সবার জীবন।

এতটুকু পড়ে থামলো ফাইজা।এখানেই সমাপ্তি ঘটলো দ্বাবিংশতি গল্পটার।এই বইটার নাম অদ্ভুত রাখার কারণ ছিলো রাই আর ফাইজার বাইশ বছরের বিচ্ছেদ।দীর্ঘ বাইশ বছরের পর এখন গিয়ে রাই,ফাইজা সহ চৌধুরী বাড়ির সবারই চরিত্রেরই শুভ সমাপ্তি ঘটলো।ফাইজা এখন মাঝে মাঝে লেখা-লেখিও করে।আর সে চেয়েছিলো তার সর্বপ্রথম লেখাটা তার আর তার কাছের সবার জীবনকে ঘিরে হবে।আর হলোও তাই।আজ দুইমাস হলো দ্বাবিংশতি বইটা বাজারে বের হয়েছে।ইতিমধ্যেই বইটার পাঠকসংখ্যা আকাশছোঁয়া।ফাইজার লেখালেখির কাজে রাইও তাকে সাহায্য করেছে অনেক দিক দিয়ে।তাই ফাইজা তার এই বইয়ের কৃতিত্ব রাইকে দিয়েছে বলেই জানায় ফাইজা।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here