দ্বাবিংশতি পর্ব -১২

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_১২

২৫.🐙

“হ্যালো,রাই স্পিকিং।”

“ফাইজার হাতে ফোনটা দিন।”

“আপনি কে?”

“সায়ান।”

সায়ানের নাম শুনে রাইয়ের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সে তার ফোনটা ফাইজার হাতে ধরিয়ে দিলো।এরপর সন্তর্পণে বললো,’সায়ান।’

ফাইজা ফোনটা নিয়ে জবাব দিলো।

“আসসালামু আলাইকুম।”

“নাটক শেষ হয়েছে?তাহলে বাসায় চলে আয়,ফাইজা।নাহলে আর কখনো এই বাড়িতে আসার কথা ভাবিস না।”

“আচ্ছা।”

“আচ্ছা?তোর কি মনে হয় না তোর বেশিই সাহস বেড়ে গেছে ওই মেয়েকে পেয়ে?তোর ওই বোন তোকে কতদিন দেখে রাখে আমিও দেখবো তো।বেশি পাখা ঝাপ্টানো পাখির পাখা কীভাবে কাটতে হয় তা সায়ানের ভালোমত জানা আছে”

“জানা থাকলে ভালো।আর আমি আমার বোনের কাছে অনেকটাই সেইফ।আর যাইহোক আমাকে পশুর মত তো মারে না এটাই বেশি।”কথাটা বলার সময়ই ফাইজার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো কান্না আটকানোর চেষ্টায়।সে শক্ত করে রাইয়ের হাত ধরে আছে।রাই ফাইজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসার চেষ্টা করলো।

রিজভী সাহেব আর বসু সাহেব এসে কিছুক্ষণের মধ্যেই রাই আর ফাইজাকে নিয়ে বাসায় চলে গেলেন।ফাইজাকে এতদিন বাদে দেখে রাইয়ের মা তাকে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলো।

২৬.🐙

“ফাইজা।”

“আম্মু।”

“কেমন আছিস?”

“ভালো..” ফাইজার সাথে একান্তে কথা বলার জন্য মিসেস চৌধুরী তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।

আর রিজভী সাহেব চিন্তিত দৃষ্টিতে রাইকে ডাকলো,

“রাই!”

“বলো বাবাই।”

“কিছু ভাবলে?”

“হুম,ভেবেছি তো অনেক কিছুই।এখন দেখি কি করা যায়।তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন?”

“সায়ান কল দিয়েছিলো।বললো ফাইজাকে আজকেই দিয়ে আসতে নাহলে ফাইজাকে ও ডিভোর্স দিয়ে দিবে।”

“সায়ান এত বোকা না বাবা।তুমি এত চিন্তা করো না।আর ডিভোর্স দিলেও ফাইজার সামনে অনেক ব্রাইট ফিউচার পড়ে আছে।ও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে।”

রাতে খাবার শেষে চৌধুরী বাড়ির যে যে যার যার রুমে চলে গেল।ফাইজা তার রুমে থাকা বিশালাকৃতির আয়নাটার সামনে বসে নিজের জামাটা খুললো।বেশ ভালোই মেরেছে সায়ান।জায়গাগুলোতে রক্ত জমাট বেধে নীল হয়ে গেছে।ফাইজার কান্না পাচ্ছেনা।তবে বেশ অভিমান হচ্ছে তার ভাগ্যের ওপর।যাইহোক এসব ভেবে আর লাভ নেই।তাই সে আপন মনে ক্ষত জায়গা গুলোতে ওষুধ লাগিয়ে শুয়ে পড়লো।আর সাথে সাথে ঘুমিয়েও পড়লো।

২৭.🐙

ফাইজা ঘুমানোর আগে ঘূর্ণাক্ষরেও চিন্তা করলোনা কাল তার ওপর কি আসতে চলেছে।সকাল সকাল চৌধুরী বাড়িতে কলিংবেল বাজতেই আছে।রাই সারারাত ঘুমাতে পারেনি।শুধু এপাশ-ওপাশ করেই রাত পার করেছে।আবার এত সকালে কলিংবেলের শব্দে রাইয়ের কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল।

সে কোনোমতে বিছানা থেকে নেমে ঘোরের মধ্যেই দরজা খুলে দিলো।আর বললো,

“কি লাগবে?”

“রাই?”শুদ্ধের ডাকে রাইয়ের তন্দ্রাঘোর নিমিষেই গায়েব হয়ে গেল।

“তুমি এখানে?এত সকালে!”

“নাতাশা আর আমার বিয়ে ঠিক ফিক্সড হয়েছে নেক্সট বুধবারে।”

“আয়লা,বিয়ের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।” বলেই রাই চলে যেতে নিলো।

আজ শুদ্ধের ধৈর্যের সীমা বাধ ভেঙে গেল।সে উচ্চস্বরে বললো,

“বিয়ে করার সময় মনে ছিলোনা তোমার?এখন এমন করে কি বুঝানোর চেষ্টা করছ তুমি?আমি জানিনা তোমার মাথায় কি ঘুরছে।জাস্ট লেট মি নো!আমার কি কোনো ভুল হয়েছে।”

রাই অন্য সময় বেশ এগ্রেসিভলি ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করলেও আজ পারলোনা।

“বিয়ে করে নাও!আমি কি না করেছি একবারো!এতদিনেও তুমি তোমার পরিবারকে জানাও নি তুমি ম্যারিড?আরো ভুল খুজবো?”

শুদ্ধ এবার রাইয়ের হাত ধরে তাকে তার দিকে ঘুরিয়ে ভালো মত রাইয়ের চোখ পরিক্ষা করলো।

“তুমি কি কিছু খেয়েছ?”

রাই সশব্দে হেসে বললো,”না!যাও তোমার পরিবারকে বলো।আমি বাকিটা দেখছি।”

শুদ্ধ রাইয়ের দিকে অবিশ্বাস্য ভাবে একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গেল।

২৮.🐙

ফাইজার ঘুম ভাঙলো সকাল দশটায়।সে নিচে নেমে দেখলো রাই আর তার বাবা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

“কি অবস্থা তোমাদের?”

“এখানে বসো ফাইজা।”

ফাইজা রাইয়ের পাশে এসে বসলো।ফাইজার বাবা তাকে সরাসরি বললো,

“রাইয়ের হাতে অনেক দায়িত্ব,মা।আমি চাই আমার ইন্ডাস্ট্রিটা এখন তুমি নিজের হাতে সামলাও।পারবেনা বাবার এই অনুরোধ রাখতে?”

“কি!”

“যা শুনলে তাই।এখন শুধু হ্যাঁ বা না বলো।”(রাই)

“কিন্তু আমি তো এসবের কিছুই জানিনা।”

“আমি শিখিয়ে দিবো আর বাবা তো আছেই।” রাইয়ের স্পষ্ট জবাবে ফাইজা রাজি হয়ে গেল।

সেদিন দুপুরেই বেশ ঘটা করে ফাইজাকে চৌধুরী গ্রুপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হলো।সাথে একটা পার্টিও রাখা হলো।নতুন চেয়ারম্যানকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু এত মানুষের ভীরেও ফাইজা রাইকে খুজছে।কারণ সে যে এই কয়দিনেই রাইকে অনেক বিশ্বাস করে ফেলেছে।আর বড় বোনের গুরুত্ব কি তা জানতে পেরেছে। রাই মেয়েটা আর যাইহোক বড্ড মুখচোরা স্বভাবের ভালোবাসার ক্ষেত্রে।

হঠাৎ ভীরের মধ্যে রাইকে দেখে ফাইজা ডাক দিলো,”রাই!”

ফাইজার ডাকে সবাই রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ওই যে রাই ম্যাম!”

রাই ধীরে ধীরে ফাইজার কাছে আসলো।এরপর সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ফাইজাকে নিয়ে সে তার বাবার অফিসের ছাদে চলে গেল।ছাদে গিয়েও তারা দুজনই নিশ্চুপ।কোনো কথাই খুজে পাচ্ছেনা তারা।

এমন আজব অবস্থা দেখে ফাইজা তাদের মাঝখানের নিরবতা ভেঙে রাইকে বললো,

“রাই তোমার কি মনে হয় আমি এত বড় দায়িত্ব সামলাতে পারবো?”

“হুম।”

“শুধু হুম?”

“ফাইজা!আই থিংক সায়ান মেইবি এতক্ষণে জেনে গেছে তুমি এখানের বর্তমান চেয়ারম্যান।তোমার আন্ডারে সবকিছু।তাই এখন ও তোমার কাছে আসবেই।বাকিটা তোমার ইচ্ছা তুমি কি করবে।যাই করো ভেবে চিনতে করো।আমার আর কিছুই বলার নেই।”

ফাইজা দেরিতে হলেও রাইয়ের কথার অর্থ বুঝতে পারলো।আর সত্যি সত্যিই ঘন্টা দুয়েক বাদে শুদ্ধ আর সায়ান একসাথে এসে চৌধুরী বাড়িতে উপস্থিত হলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here