দ্বাবিংশতি পর্ব -০২+৩

#দ্বাবিংশতি💜
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_২+৩

৩.

রাই দেখলো শুদ্ধের গাড়িতে সামান্যই স্ক্র্যাচ পড়েছে।তাই নিয়ে রাইয়ের আশেপাশে মেডিকেলের অর্ধেকের বেশি ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এখন দেখার পালা এই দৃশ্য দেখে শুদ্ধ কি করে!পার্কিংলটে এত কোলাহল কিসের তাই দেখতে গিয়ে ফাইজার চোখ আসমানে।আজকে রাই শেষ!শেষ পর্যন্ত প্রফেসরের গাড়িতে গিয়েই ম/র/তে হলো ওর?শুদ্ধও তার লেকচার শেষ করে এদিকেই আসছে।আজ তার একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।কারণ আজ তার জানটুশের জন্মদিন।আর সে অনেক বায়না করেছে একটা গোলাপি টেডি আনার জন্য।যা কিনতেই শুদ্ধের তাড়াহুড়ো করে ক্লাস শেষ করা।

নিজের গাড়ির সামনে এত ভীড় দেখে শুদ্ধ ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেল।সবাই কানাঘুষা করছে রাইকে মাঝে রেখে।আর রাইও এখান থেকে এক পাও নড়তে পারছেনা এই ভীড়ের জন্য। ফাইজা আশেপাশের মেয়েগুলোকে অনেক বুঝানো চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি।তাদের একটাই কথা এই ছেলের কত বড় সাহস প্রফেসরের গাড়িতে স্ক্র্যাচ তৈরি করার।আগে প্রফেসর শুদ্ধ আসবে।তাকে একচোট রাম ধোলাই দিবে এরপর এই ছেলের শিক্ষা হবে।ফাইজা দেখলো রাইয়ের হাতটা অস্বাভাবিকভাবে কাপছে।এতক্ষণে ভীড় ঠেলে শুদ্ধ রাইয়ের সামনে পৌছে গেছে।

রাইকে তার সামনে শুধু সাদা একটা শার্টকে দেখতে পাচ্ছে তাও অনেক ঘোলা।এরপর আর তার কিছু মনে নেই।সে যখন চোখ খুললো তখন তার আশেপাশে অনেক সাংবাদিককে দেখতে পেল।তার পুরো পরিবার বিশেষ করে তার বাবা তার হাত ধরে তার পাশেই বসে আছে।হঠাৎই সেখানে শুদ্ধের আবির্ভাব ঘটলো।

“এ কি অবস্থা?আপনারা এত মানুষ এখানে কি করছেন?পেশেন্টের ফ্যামিলি বাদে সবাই বেরিয়ে যান,প্লিজ।”

প্রথম প্রথম সাংবাদিকেরা বাহিরে যেতে না চাইলেও ফাইজা সবাইকে ঠেলে বের করে দিলো।এরপর রিজভী সাহেব শুদ্ধের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ডাক্তার,রাই কেমন আছে?”

“চিন্তা করবেন না।হঠাৎ কোনো কারণে শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিলো তাই এমন মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেছে।আজকে রাতটা চেকআপ এ থাকলে কালকে ঠিক হয়ে যাবে।”

“আচ্ছা,ডাক্তার।”

এরপর ডাক্তার শুদ্ধ ফাইজাকে ডেকে বললো,

“ওর এখন রেস্টের প্রয়োজন,ফাইজা।সো আই থিংক তোমরা এখন বাসায় যেতে পারো।কারণ ওকে দেখার মত এনাফ স্টাফ আর সিকিউরিটি আছে এখানে।”

ফাইজা মাথা নেড়ে তার বাবা-মার কাছে গিয়ে এসব বলতেই তার বাবা একবারে সোজাসোজি না করে দিলেন।

“তোমরা বাসায় যাও।দরকার পড়লে পিয়াসকে ফোন দিয়ে তোমাদের নিয়ে যেতে বলো।আমি রাইয়ের সাথে আজকে এখানেই থাকবো।”

রাই এবার অতিকষ্টে চোখ খুলে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

“বাবাই,তুমি ওদের সাথে বাসায় যাও।আমি ঠিক আছি।একটা রাতেই ব্যাপার!আমি নিজেকে সামলে নিবো।তুমি যাও।আর এখন ওদের সিকিউরিটির বেশি দরকার কারণ বাহিরে অনেক সাংবাদিক ওদের জন্যই অপেক্ষা করছে।”(রাইয়ের হঠাৎ ওয়েদার চেঞ্জের জন্য ঠান্ডা লেগে গলার স্বর বেশ মোটা হয়ে গেছে।তাই তার স্বর অনেকটা ছেলেদের মতই শোনাচ্ছিলো।)

রাইয়ের কথায় রাইয়ের মাও সম্মতি জানালেন।তাই অগত্যা মেয়ের কথা মানতে আর পরিবারের সুরক্ষার জন্য রিজভী সাহেবকে বাড়ি ফিরে যেতে হলো।কিন্তু সে যাওয়ার আগে শুদ্ধকে অনেক করে বলে গেল,

“ডাক্তারবাবু,আমার বাচ্চাটাকে দেখে রাখবেন।দোহাই লাগে আপনার।ও অন্য কান্ট্রি থেকে এসেছে তো তাই তেমন কিছুই জানে না এখানকার।আপনি দয়া করে আজ রাতটার জন্য ওর খেয়াল রাখবেন,প্লিজ।”

“কিন্তু আমি তো..!কথা শেষ করার আগেই ফাইজার বাবা শুদ্ধের হাত ধরে বললো,

” নিজের বাবার বয়সী একজনকে মানা করো না, বাবা।”

শুদ্ধ আর মানা করতে পারলোনা।কিন্তু আজ যে শ্রেয়ার বার্থডে।আজ শুদ্ধ বাসায় না গেলে শ্রেয়া সারারাত কান্নাকাটি করবে।তাও কি করার সে রাইয়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো।রাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শুদ্ধ তাকে ঘুমিয়ে পড়তে বললো।

“ধন্যবাদ,ডাক্তার।”

“কেন?”

“আব্বুকে ম্যানেজ করে বাসায় পাঠানোর জন্য।”

“ওহ,ইটস ওকে।এমনিতেও আপনাকে দেখার জন্য এখানে অনেক মানুষ আছে।”

“আচ্ছা।”

“একটা প্রশ্ন করার ছিলো!”

“জি বলুন!”

“একজন ছেলে হিসেবে আই থিংক আপনার ওয়েট অনেক কম।খাবার ভালো মত খাওয়ার ট্রাই করবেন।নাহলে বড় ধরনের কিছু হতে পারে।”

“আচ্ছা,ট্রাই করবো।”

রাই আর শুদ্ধের কথা শেষ হতেই শুদ্ধের ফোনে কল আসে।শুদ্ধ নাম্বারটা দেখেই ঘাবড়ে যায়।সে রাইকে ‘এক্সকিউজ মি’ বলে করিডোরে গিয়ে কল রিসিভ করে।আর রাই নিজের ফোনটাকে আশেপাশে খুজতে থাকে।না,কোথাও নেই!এখন সে কি করবে?কি একটা অবস্থা।সারারাত কি সে ঘাস কেটে পার করবে?নো ওয়ে!

এছাড়াও সেলাইন নেওয়ায় রাইয়ের নিজেকে এখন অনেকটাই চাঙ্গা লাগছে।তাই সে সাবধানতার সাথে নিজের হাতে লাগানো ক্যানোলাটা খুলে পাশে থাকা টিশুটা দিয়ে নিজের রক্তপড়া বন্ধ করে করিডোর দিয়ে চোরের মত হাটতে থাকে।হঠাৎই সে শুনতে পায় শুদ্ধ বলছে,

“মামুনি,সত্যি আজকে একটা ইমারজেন্সিতে আছি।কালকেই আমি তোমার টেডি নিয়ে যাবো।”

ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেল না।

“আহারে আমার জন্য ডাক্তারবাবু বাচ্চাটার কি একটা অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।”

রাই এবার গিলটি ফিল করতে লাগলো।তাই সে নিজের রুমে গিয়ে হাসপাতালের ড্রেস গুলো চেঞ্জ করে নিজের শার্ট আর প্যান্ট পড়ে নিলো।এরপর নিজের পকেট চেক করতেই সে হাজার টাকার সাতটা নোট খুজে পেল।এরপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে আসতেই দেখলো শুদ্ধ রুমে নেই।সে করিডোরে প্রবেশ করতেই শুদ্ধ তাকে দূর থেকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এলো।

“এই ছেলে, তুমি কি পাগল?”

“ডাক্তার সাহেব!”

“কি?” (বিরক্তিকন্ঠে)

“বাহিরে যাবেন?”

“কিহহ!”

“আই মিন আমার ক্ষুধা লেগেছে সেই আকারের।আর আমি এখন ঠিকও আছি।ট্রাস্ট মি!”

“কখনোই না।পাগল হয়েছ নাকি তুমি!যাও কেবিনে গিয়ে রেস্ট নাও।আমি তোমার সাথে কোথাও
যাচ্ছিনা।”

তখনই একজন নার্স রাইয়ের শরীর কেমন আছে তা দেখার জন্য রুমের দিকে আসতে লাগলো।রাইয়ের শ্রবণশক্তি প্রখর।সে একধাক্কায় শুদ্ধকে নিয়ে দরজার পেছনে লুকিয়ে পড়লো।এরপর শুদ্ধের মুখ শক্ত করে চেপে ধরলো।শুদ্ধ জানে এমন অবস্থায় সে এই ছেলের সাথে ধরা পড়লে কারো সামনে।সেই খবর পুরো হাসপাতালে পারমাণবিক বোমার মত ছড়িয়ে পড়বে।

তাই সেও অনেক চেপে দাড়ালো।রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে নার্স ভড়কে গিয়ে অন্যদের ডাকতে গেল।আর তখনি রাই শুদ্ধর হাত ধরে করিডোর দিয়ে সন্তর্পণে পালিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসলো।শুদ্ধ বাহিরে আসার পর খেয়াল করলো রাইয়ের হাত বেশ নরম।ছেলেদের হাত এত নরমও হয়?আর সে দেখিতেও বেশ মায়াবী!তাকে আসলে কি বলা উচিত?মায়াবী পুরুষ?না,না।এটা আবার কেমন শব্দ!

“মেইন গেইট কোনদিকে?ডাক্তার সাহেব?”

“কি?ওহ,ওইদিকে।”

শুদ্ধ রাইয়ের হাত ধরে মেইন গেইট পেরিয়ে বাহিরে আসলো।ঘড়িটা উচু করতেই সে দেখলো দশটা বাজে।শহুরে এলাকায় দশটা মানে কিছুই না।সে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই রাই নিজের বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো।

“পাগল হয়ে গেছ নাকি?”

“মানে?”

“তুমি স্টিল সিক।নামো বাইক থেকে।” শুদ্ধের কথা শুনে রাই সুড়সুড় করে বাইক থেকে নেমে গেল।এরপর শুদ্ধের গাড়িতে উঠে বসলো।শুদ্ধ বললো,

“কোথায় যাবে?”

“উম,মার্কেট এরিয়ার আশেপাশের কোনাও রেস্তোরাঁয়!”

শুদ্ধ বুঝতে পারলোনা এই ছেলে এমন আজব ব্যবহার কেন করছে?বড়লোকের ছেলেরা কি এমনই হয়!ম্যানারসল্যাস?

মার্কেট এরিয়ায় গিয়ে পৌছাতে শুদ্ধের আধা ঘন্টা লেগে গেল।সে গাড়ি থামাতেই রাই এক লাফে বাহিরে বের হয়ে গেল।

“সাবধানে।”

“আচ্ছা।”

শুদ্ধ বাহিরে বের হতে হতে রাই আশেপাশে চোখ বুলাতেই একটা পুতুলের দোকান দেখতে পেল।ততক্ষণে শুদ্ধ তার পাশে এসে দাড়িয়েছে।

“ওই যে ডাক্তার সাহেব রেস্তোরাঁ!” বলেই ভোঁ দৌড় দিলো রাই।রাইকে এমন বেপরোয়া হয়ে দৌড়াতে দেখে শুদ্ধও তার পিছনে পিছনে ছুটতে শুরু করলো।শেষমেশ রাই পুতুলের দোকানে ঢুকেই হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে দিলো।সে একটার পর একটা দেখেই যাচ্ছে।

“এই ছেলে!এটা রেস্তোরাঁ না।”

“আমি জানি।আপনার বেবির ফ্যাভরিট কালার কি ডাক্তার সাহেব?”

“মানে!”

“ওই যে বাচ্চাটা আপনার কাছে টেডি চাচ্ছিলো।সরি আমি এক্সিডেন্টলি শুনে ফেলেছি।আমার জন্য কেউ সাফার করবে এটা হতেই পারেনা।তাও একটা বাচ্চা এটা তো সম্ভবই না।”

এবার শুদ্ধ বুঝতে পারল ছেলেটার এত কান্ডের কারণ।সে না জেনেই শুধু শুধু ছেলেটাকে খারাপ ভেবেছে।
এবার শুদ্ধ গোলাপি রঙের মধ্যে একটা টেডি কোলে নিয়ে বার কয়েক দেখতেই রাই কাউন্টার থেকে বিল পে করে শুদ্ধকে টানতে টানতে বাহিরে বেরিয়ে গেল।

“ডাক্তার সাহেব!”

“এমা,বিল পে করে বাহিরে আসতে হয়।ওয়েট আমি বিল পে করে আসি।”

“বিল আমি পে করেছি।”

“কি,কেন?”

“চিল,এটা আমার তরফ থেকে আপনার বাচ্চার জন্য একটা গিফট।”

শুদ্ধ কিছু বলার আগেই রাই বলতে লাগলো,

“আপনি এখন বাসায় চলে যান।আমি এখান থেকে গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে চলে যাবো।গো গো!”

শুদ্ধ রাইয়ের দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

“তোমার নাম কি?”

“রাই।আপনার?”

“শুদ্ধ রাহমান।রাই ছেলেদের নাম হয়?”

“হুম,বেশ হয়।আচ্ছা,বা বায় আমি গেলাম।”

রাই রাস্তা পার হতে গেলেই শুদ্ধ পেছন থেকে ডাক দেয়।

“যার জন্য গিফট কিনলে তাকে নিজের হাতে গিফট না দিয়েই চলে যাবে?”

রাই থেমে পেছনে তাকালো।শুদ্ধ হাসলো রাইকে পেছনে তাকাতে দেখে।

চলবে,

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_৩

৪.

“আমায় নিয়ে বাসায় গেলে আপনার ওয়াইফ কিছু বলবেনা?”(আশ্চর্যকন্ঠে)

“বাসায় চলো,তখনই দেখতে পাবে।”

রাই আর শুদ্ধ তখন রওনা হয় শুদ্ধের বাড়ির উদ্দেশ্যে।সারারাস্তা রাই গাড়ির কাচের বাহিরে মাথা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস অনুভব করছিলো।আসলেই বাংলাদেশের মানুষগুলো বেশ ভালোই।হঠাৎই রাইয়ের আরাভের কথা মনে পড়লো।

“কেমন আছে,আরাভ?সে কীভাবে পারলো রাইকে ছেড়ে এত দূরে চলে যেতে।রাই তো তাকে আজও ভালোবাসে।নিজের চেয়েও বেশি।আর কিছুদিন এরপর রাই সবকিছুকে আবার সেগুলোর আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিবে।এই উদ্দেশ্যেই তো তার বাংলাদেশে আসা।”

“নামবে না,রাই?”

শুদ্ধের কথা শুনে রাই খেয়াল করলো গাড়ি থেমে গেছে বহুক্ষণ আগেই।কিন্তু সে আরাভের স্মৃতিতে ডুবে থাকায় টের পায়নি।অগত্যা সে তার সমান টেডিটাকে কোলে নিয়ে কোনোমতে গাড়ির বাহিরে এসে দাড়ালো।

“হুম,চলুন।”

রাইয়েরা এখন একটা ছয়তলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বাড়িটা বিভিন্ন রঙের লাইট দিয়ে সাজানো।ডাক্তার সাহেব নিশ্চয়ই তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসেন।তাই তো এত আয়োজন।রাই আর শুদ্ধ সিড়ি বেয়ে দোতালায় গিয়ে জুতা খুলে একটা ফ্ল্যাটে ঢুকলো।রাই দেখলো সাদা জামা পরিহিত একটা বাচ্চা পরী সবার মাঝে বসে আছে।শুদ্ধকে দেখতে সে দৌড়ে আসলো।

“মামা!আমি জানতাম তুমি আসবে।”

“শ্রদ্ধা কোথায়?শ্রেয়া!”

“আম্মু,তোমাকে মামা ডাকছে।”

“তোর মামাকে বল তার বোন ডেকোরেশনের কাজ করছে সেই দুপুর থেকে।সেও যাতে এসে আমাকে সাহায্য করে।”

“সর!আমি মাত্র বাহির থেকে এসেছি।তুই দুলাভাইকে বল!”

“শালাবাবু,তোমার কি মনে হয় আমাকে তোমার বোন বসিয়ে রেখেছে?আমাকে নিয়েই সে কাজে নেমেছে।বাঁচাও আমায়,শালাবাবু।”(নিবিড়)

“দুলাভাইইই,আপনার কথা শোনা যাচ্ছেনা।আমি গেলাম!” (দুষ্টমি করে)

এতক্ষণে শুদ্ধর পেছন থেকে এবার রাই বেরিয়ে আসতেও শুদ্ধের মা বললো,

“তুমি কে বাবা?তোমাকে তো আগে দেখিনি।”

“আমার বন্ধু,আম্মু।”

“এহেম এহেম,আমার এই ছেলের বন্ধুও আছে জানতাম তো!”

রাই হাসলো।এরপর গিয়ে শুদ্ধের মায়ের পাশে বসলো।
শুদ্ধের মা রাইকে দেখে বললো,

“তোমার নাম কি,বাবা?”

“রাই,আন্টি।”

“আচ্ছা,রাই।তুমি কোথায় থাকো?”

“আমি এই তো বুসানে ছিলাম এতদিনে।এক্সামের শেষ তাই বাসায় এসেছি।”

“এটা আবার কোথায়?”

“সাউথ কোরিয়াতে।”

রাইকে দেখে এতক্ষণে শুদ্ধের মেয়ে কাজিনরা ক্রাশ খাওয়া শুরুও করে দিয়েছে।

শাম্মি তো বলেই ফেললো,”তোমার নাম কি,ভাইয়া?”

“রাই।”

“আয়হায়,নাবিহা দেখদেখ ছেলেটা আমার কথার জবাব দিয়েছে!”

রাই ওদের কান্ড দেখে হাসলো।এরপর আন্টিকে অন্যদের সাথে কথা বলতে দেখে সে ধীরে ধীরে শ্রেয়ার কাছে গেল।

“তোমার নাম কি,আম্মু?”

“আমার নাম শ্লেয়া।”

“কি?”

“শ্লেয়া।”

“ওহ,এই নাও তোমার গিফট শ্লেয়া।”

“টেডি!!!”

রাই নিজের সমান বড় টেডিটাকে শ্রেয়ার সামনে রাখতেই সে টেডিকে ফেলে রাইকে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরলো।

“এটা তুমি আমার জন্য এনেছ?”

“হুম,ছোট একটা সাদা পরীর জন্য এনেছি।”

শুদ্ধ ফারাবির সাথে এতক্ষণ কলে কথা বলছিলো।এবার শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই সে শ্রেয়াকে এত খুশি হতে দেখে রাইয়ের দিকে তাকালো।ছেলেটা আসলেই আলাদা ধরনের।

শ্রেয়া রাইকে জরিয়ে ধরেই বললো,

“তুমি আমার মামি হবে?”

“মামি?”

“হুম,শুদ্ধ মামার বউ!”

“ডাক্তার শুদ্ধ তোমার মামা হয়?”

“হুম।কেন তুমি জানো না?”

“এই যে এখন জানলাম।কিন্তু,তুমি কীভাবে জানলে আমি মেয়ে?”

“ইশশ,বাবা তুমি কত্ত কিউট!তোমাকে দেখেই তো আমার মামি মামি ফিল হচ্ছে।”

রাই শ্রেয়ার বাচ্চামি দেখে হাসলো।এবার শুদ্ধ কল কেটে এগিয়ে আসলো।

“কি কথা হচ্ছে?তোমাদের!আমাকেও বলো?”

শুদ্ধের কথা শেষ হতেই ঘড়িতে বারোটা বেজে গেল।আর সবাই একসাথে শ্রেয়াকে উইশ করলো।টেবিলে কেক সাজানো হলো কয়েকধরনের।ভ্যানিলা,স্ট্রবেরি,চকলেটি সহ নানা ফ্লেভারের।কেক দেখেই রাইয়ের সেই আকারে ক্ষুধা পেয়ে গেল।আসলেই তো সে কখন থেকে না খেয়ে আছে!শ্রেয়ার বার্থডে পার্টি শেষ হতে হতে দুইটা বেজে গেল।শ্রেয়া ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগেই।তাই, বাড়ির বড় সদস্যরা গল্প করছিলো।দুইটা বাজলে সবারই ঘুম পেতে শুরু করে।শুদ্ধর মা তাকে ডেকে বলে,

“শুদ্ধ?”

“জি,আম্মু।”

“রাই তোর রুমে থাকুক?গেস্টরুমে মানুষ ভর্তি।আর বন্ধু মানুষ গল্প কর যেহেতু ও এতদিন পর দেশে এসেছে।”

“কিন্তু!আচ্ছা ঠিক আছে,আম্মু।আজকের জন্যই তো প্রবলেম নেই।”

শুদ্ধ রাইকে ডেকে সবার মধ্যে থেকে তার রুমে নিয়ে গেল।এরপর সে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো।আর রাই তার তার রুম ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।অনেক প্রাইজ আর সার্টিফিকেটে ভরে আছে রুমটা।তার মাঝে শুদ্ধ আর একটা মেয়ের গ্র্যাজুয়েশনের ছবি খুব যত্ন করে রাখা।এই সেই মেয়ে তাহলে!শুদ্ধ রুম থেকে বের হয়ে রাইকে এসব দেখতে দেখে বললো,

“তুমি কি নিয়ে পড়ছিলে বাহিরে?”

“ল’!”

“ওহ,তাহলে তো ভালোই।কোন ইয়ারে?”

“শেষ ফাইনাল দিয়ে আসলাম।কয়েকদিন পর রেজাল্ট দিবে।”

“ওহ!এত দ্রুত?”

“তিন বছরের কোর্স ছিলো।তাই এত দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছে।”

“আচ্ছা,অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়।”

“ডাক্তার সাহেব,এটা আপনার গার্লফ্রেন্ড?”

“না,হবু বউ।কেন তোমার ভালোটালো লেগেছে নাকি?ও কিন্তু আগে থেকে বুকড।হিহিহি।”

রাই শুদ্ধের দিকে তাকালো লোকটার হাসি বেশ মিষ্টি।রাই এবার বিছানায় না শুয়ে বারান্দার ইজিচেয়ারে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

“এখানে কেন তুমি?”

“এমনি।আমার ইনসোমোনিয়ার প্রবলেম আছে অনেক আগের থেকেই।তাই আমি সবসময়ই রাতটা খোলা আকাশের নিচে কাটাতে পছন্দ করি।কিন্তু এখানে তো বদ্ধ শিকলের ভেতর শুয়ে আছি আমি।”

“আচ্ছা,তাহলে থাকো এখানেই।মশার কামড় খাও!”

“মশা নেই বাহিরে।”

শুদ্ধ রাইয়কে আরকিছু বললোনা।কারণ সে ইতিমধ্যেই জেনে গেছে রাই অনেক জেদি ধরনের।এছাড়াও কাল তার অনেক কাজ বাকি আছে।আর তাই সে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে গেল।

৫.💜

শুদ্ধ ঘুমিয়ে গেছে কনফার্ম করার পর রাই পিঠে হাত দিয়ে তার ইন্নারটা হালকা করে দিলো।ইন্নার হালকা হওয়ায় অনেকক্ষণ পর রাই ভালো মত নিশ্বাস নিতে পারলো।রাই তো এটাই চেয়েছিলো সবাই তাকে ছেলে ভাবুক!এটাই তো ভালো।রাইয়ের এখনো স্পষ্ট মনে আছে তার হাই স্কুলের একটা ঘটনা।

“রাই?”

“ইয়াপ,এলেক্স!”

“ইউ স’ দিস গার্ল?শি ইজ আওয়ার নেক্সট টার্গেট।”

“ওকে,আই উইল গেট হার ফর ইউ,এলেক্স।”

“মাইগড,তি আমো<'3 মাই লাভ।" "ওকে,ওকে।নাও লেটস গো টু আওয়ার নেক্সট ডেইট?" "শিওর,লেটস গো।" সেদিন রাতে মেয়েটাকে বাচানোর জন্য ছদ্মবেশীনি রাইকে এলেক্সকে মে/রে ফেলতে হয়েছিলো। "ইউ সেইভ মাই লাইফ!থ্যাংকস গেরান্ডে ফ্রাতেলো(বড় ভাই)। সেদিন রাতে তিয়ানকে টেনে হিচড়ে এলেক্স তাদের আড্ডাখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় রাইও তার সাথে ছিলো।তিয়ানকে বাঁচাতে রাই তার হাতে থাকা টাইটেনিয়াম রড দিয়ে এলেক্স এর মাথায় আঘাত করতেই তার মাথা ফেটে এক ফিনকি রক্ত বেরিয়ে আসে।এরপর এলেক্সের বেশ অনেকটাই রক্তক্ষরণ হয়।যার কারণে সে মারা যায়।তার হাত নিস্তেজ হতেই তিয়ান ছুটে এসে রাইকে জরিয়ে ধরে।বেচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিয়ান রাইকে সেদিন থ্যাংকস জানিয়ে দৌড়ে নিজের হোস্টেলে ফিরে গিয়েছিলো। সেদিন থেকেই রোসালাইন থেকে বদলে রাইকে রাই হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হয়েছিলো।আর যেই মেয়েটাকে রাই বাচিয়েছিলো সে রাইয়ের বেস্টফ্রেন্ড তিয়ানতিয়ান।তিয়ানতিয়ান কিছুদিন ধরেই বারবার রোসালাইনকে বলছিলো যে তাকে কেউ ফলো করে।আর এরপর রোসালাইন তিয়ানকে ফলো করে দেখলো তাদের কিছু সিনিয়ররা তিয়ানকে ফলো করে।সেদিন রোসা নিজের চুল কেটে,টাইট ইন্নার পড়ে সম্পূর্ণ ছেলেদের বেশে গিয়ে সিনিয়রদের সাথে ইচ্ছা করে ধাক্কা খেয়েছিলো।ওখানের একটা ছেলে গে থাকায় রাই তার নজরকাড়া রুপ দিয়ে তাকে খুব সহজেই পটিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়।আর সেই ছেলেই সিনিয়রদের লিডার থাকায় সিনিয়রের বফ হিসাবে রাই খুব সহজেই গ্রুপ মেম্বারদের ভীড়ে মিশে থাকতে পারে।আর এটাই তাকে তিয়ানকে বাচাতে সাহায্য করে। মানুষ হয়তো কখনো জানতে পারলে রাইকে ভুল বুঝবে।কিন্তু রাইয়ের হাতে সেদিন এছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলোনা।ইটালির মত দেশে হয়ত এগুলো হওয়া সহজ।কিন্তু যার সাথে যা হয় সে তার বাকিটা জীবন একটা ট্রমা নিয়েই বেচে থাকে।তার যন্ত্রণা একজন সাধারণ নাগরিক বুঝবেনা। এরপর থেকে রাই তার এই রুপেই নিজেকে বেশি সেইফ ফিল করত।ধীরে ধীরে রাই তার কানেকশন আর ব্রেইন ইউজ করে খুব সহজেই ইটালির আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন ওয়ান্টেড মাফিয়ায় পরিণত হয়েছিলো।কিন্তু সে সবসময় তার গ্রুপের ছেলে-মেয়েদের সাহায্য করে ভালো পথে আনার পেছনে অনেক কাজ করেছে।রাইয়ের আন্ডারে ইটালিতে ওই এইজেই সাতটা স্কুল ছিলো।এখন তো এর সংখ্যা বেড়ে শতাধিকে পৌছেছে।কিন্তু এত কিছুর পরও রাই আজ এখানে।কারণ সে যে হেরে যেতে শিখেনি।আর তার বিশস্ত কেউই তাকে হারিয়ে দিয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতে যে কখন রাই ঘুমিয়ে পড়েছে তার তা মনে নেই।কিন্তু সকাল পাঁচটায় আজানের শব্দে রাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়।সে আবার ফিরে যায় রাইয়ের বেশে।ডাক্তার সাহেব এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।লোকটাকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।কিন্তু লোকটা তো রাইয়ের নিজের নয়।তাই রাই নিজেকে সামলে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।এরপর এসে ইজিচেয়ারে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।সকালে ছয়টায় এলার্মের শব্দে শুদ্ধের ঘুম ভাঙতেই সে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।এরপর বারান্দায় রাইয়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো। ছেলেটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।ঘুমন্ত শিশুদের মতোই ঘুমিয়ে আছে রাই।হঠাৎই কি ভেবে শুদ্ধ রাইয়ের কপালে নিজের হাত ঠেকিয়ে রাইয়ের তাপমাত্রা মাপতে গেলে রাই চোখ খুলে শুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইলো। "না,তাপমাত্রা তো ঠিকই আছে।" মনেমনে কথাটা বলে রাইয়ের দিকে তাকাতেই রাইকে জেগে থাকতে দেখে শুদ্ধ ভয়ে লাফিয়ে পিছিয়ে গেল। চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here