#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_৪
৬.
“কি হলো?আপনি এমন ব্যাঙের মত লাফ দিলেন কেন?”
“এমনি হঠাৎ তোমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছি।বাই দ্যা ওয়ে,তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।তোমাকে হাসপাতালে দিয়ে আসি।”
“এত দ্রুত?”
“হুম,তোমার বাবা জানতে পারলে যে তুমি হাসপাতালে ছিলে না সারারাত।আমার মান-সম্মান সব যাবে।আঙ্কেল অনেক করে বলেছে আমাকে তোমার খেয়াল রাখতে।কিন্তু রাই একটা কথা না বললেই নয়।তুমি ছেলে হয়েও অনেক মায়াবী ধরনের।”
“আমি মেয়ে নই এই বিষয়ে আপনি এত শিওর কীভাবে?শুদ্ধ সাহেব!”
“এমনিতেই।”
“ডোন্ট জাজ আ বুক বাই ইটস কভার,শুদ্ধ সাহেব।”
শুদ্ধ বুঝতে পারলোনা রাই কি বুঝাতে চাইছে।তাই সে এই বিষয়টা নিয়ে এত ঘাটাঘাটিও করলোনা।যাইহোক,রাই ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নামতেই সে নাবিহার সাথে ধাক্কা খেল।এত সকালে নাবিহাকে দেখে রাই বললো,
“এত সকালেই ঘুম ভেঙে গেল তোমার?”
“না,ভাইয়া।কলেজ আছে তো তাই উঠতে হলো।আচ্ছা ভাইয়া,একটা জিনিস জিজ্ঞেস করলে বলবেন?”
“হুম,শিওর বলো।”
“আপনার ফেসবুক আইডি বা সোশিয়াল কোনো একাউন্টের নাম জানতে পারি?”
“হুম জানতে পারবেনা কেন?’রাই রোসালাইন’ফেসবুক আইডির নাম।”
নাবিহা তার হাতে থাকা ফোনটা ঘেটে অনেক কষ্টে একটা আইডি খুজে পেল।কিন্তু আইডির ভেতরে প্রবেশ করতেই সে চারশো চল্লিশ ভোল্টের কারেন্টের ঝটকা খেল।ততক্ষণে রাই আর শুদ্ধ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েছে।
রাই একটা ইটালিয়ান কোম্পানির চেয়ারম্যান সিইও এন্ড মেইন শেয়ার হোল্ডার।গুগল থেকে নাবিহা সহজেই জানতে পারলো কোম্পানিটা রেঙ্কের দিক থেকে ইটালিতে টপ টেইন কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফার্স্ট।তার মানে রাই মাল্টিবিলিয়নিয়ার?আর সে এমন সাধারণ বেশে শুদ্ধের সাথে ঘুরছে?
শুদ্ধ ভাইয়ার বন্ধুর কাহিনি দেখার পর থেকে নাবিহা বার বার ফিট খাচ্ছে আর সবাই বাড়ির সবাই ওর মাথায় পানি দিচ্ছে।এদিকে শুদ্ধ রাইকে ভালোমত হাসপাতালে পৌছে দিয়ে নিজের রুমে যেতে নিলেই রাই শুদ্ধের হাত ধরে তাকে দাঁড়াতে বলে।শুদ্ধ রাইকে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই রাই বলে উঠে,
“শুদ্ধ সাহেব?”
“হুম।”
“আপনার নাম্বারটা দেওয়া যাবে?”
শুদ্ধ কিছুক্ষণ ভেবে শুধু শুধুই রাইকে নিজের নাম্বারটা একটা কাগজে লিখে দেয়।এরপর সে চলে যায়।রাই ভাবতে থাকে শুদ্ধকে সে কীভাবে সব সত্যি কথা বলবে?
একঘন্টা পর রাইকে তার বাবা-মা এসে বাসায় নিয়ে যায়।রাই শুদ্ধকে শেষ বিদায় জানাতে চাইলেও শুদ্ধ কোথায় আছে তা না জানায় তার এভাবেই চলে যেতে হয়।সেদিন ক্লাস শেষে শুদ্ধ নিজের চেম্বারে যাওয়ার সময় ডিউটিরত ডাক্তার তাকে ডেকে বলে,
“শুদ্ধ?”
“জি,সায়নী আপু।”
“জানিস,তুই যেই মেয়েটাকে কালকে কোলে তুলে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে এসেছিলি না?আজ শুনলাম নার্সরা বলাবলি করছিলো সে নাকি রাতের বেলার তার রুমে ছিলোনা।”
“কি?”
“হু,শুদ্ধ।আমি যা শুনেছি তাই বললাম।”
“ওয়েইট,রাই মেয়ে?”
“ওর নাম রাই?হুম,ও মেয়ে।ওর জামা পালটানোর সময় আমিও আমার নার্সদের নিয়ে ওখানেই ছিলাম।তখনই দেখি ও মেয়ে।এমনিতে দেখলে তো ছেলেই মনে হয়।”
শুদ্ধ আর কিছু না বলেই সায়নীকে বিদায় জানিয়ে নিজের চেম্বারে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।হঠাৎ তার কিছু মনে পড়তেই সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে বাড়ি থেকে অনেকগুলো কল এসেছে।কিন্তু তার ফোন সাইলেন্স মুডে থাকায় সে বুঝতে পারেনি।
৭.
শুদ্ধ নিজের বোনকে ফোন দিতেই শ্রদ্ধা ফোন তুলে বললো,
“এই শুদ্ধ,তুই কোথায়?আমরা নাবিহাকে নিয়ে তোর হাসপাতালে আসছি।”
“কেন কি হয়েছে নাবুর?”
“জানিনা,ও নাকি তোকে কি বলবে।ও নাকি ভূত দেখেছে এটা বলেই বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।”
“কোথায় তোমরা এখন?”
“এসে পড়েছি আর কিছুক্ষণ মাত্র।আচ্ছা,এসে কল দিবোনে।”
শুদ্ধ কল কেটে দিতেই তার মাথায় একটা কথাই ঘুরতে লাগলো,
“আমি মেয়ে নই এই বিষয়ে আপনি এত শিওর কীভাবে?শুদ্ধ সাহেব।”
কিছুক্ষণ হলো নাবিহাকে নিয়ে শুদ্ধের হাসপাতালে পৌছেছে তার পরিবারের সবাই।নাবিহার জ্ঞান ফেরা মাত্রই সে তার সামনে শুদ্ধকে দেখেই সে বলতে শুরু করলো,
“শুদ্ধ ভাইয়া?রাই রাই!ও মেয়ে!আর কিছু বলার আগেই নাবিহা জ্ঞান হারালো কিন্তু তার ফোনটা সে শুদ্ধের হাতে ধরিয়ে দিলো।”
শুদ্ধ নাবিহার ফোনটা হাতে নিয়ে ওকে ইমারজেন্সিতে পাঠিয়ে বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলো।এরপর কি ভেবে শুদ্ধ নাবিহার ফোন ওপেন করতেই ওর সামনে রাইয়ের একাউন্ট এসে পড়লো।
“রাই রোসালাইন!”
আরআর কোম্পানির চেয়ারম্যান সিইও এন্ড মেইন শেয়ারহোল্ডার।একটু নিচে স্ক্রল করতেই সে দেখলো রাইয়ের বেশ কিছু ছবি আছে।কিন্তু সবগুলোতেই রাইকে ছেলেদের মত লাগছে।শুধু একটা ছবিতে রাইকে একটা ছেলের হাত ধরে হাসতে দেখা যাচ্ছে।পোষ্টটা বেশ কয়েকমাস আগের।কিন্তু ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাই ছেলেটার সাথে অনেক হ্যাপি।ছেলেটার আইডি খুজতে শুদ্ধের বেশি কষ্ট করতে হলোনা।সে খুব সহজেই আরাভ আয়মান নামের একটা আইডি খুজে পেল।আর ওখানে প্রবেশ করতেই শুদ্ধের অন্তরআত্মা শুকিয়ে গেল।
“নাতাশা এই ছেলের সাথে?”
নাতাশা শুদ্ধের হবু বউ।শুদ্ধের অনেক করে বলার পরও তার মানে এই ছেলের জন্যই এখন বিয়ে করতে রাজি হয়নি নাতাশা?আর এসব জেনেও রাই কাল রাতে তাকে কিছুই বললোনা।রাই চাচ্ছেটা কি?
এদিকে রাই বাসায় পৌছে ফাইজার রুম থেকে নিজের ফোন উদ্ধার করলো।ফোনের গ্যালারি ওপেন করতেই রাই চিৎকার করে উঠলো।
“ইউ পাজ্জো(পাগল)?ফাইজা!এগুলো কি?”
ফাইজা রাইয়ের চিৎকার শুনে ধরা পড়ে যাওয়া চোরের মত বললো,
“সরি,রাই।আসলে আমি সবসময়ই কারো ফোন হাতের কাছে পেলেই তার ফোনে আমার ছবি তুলি।এরপর ডিলেটও করে দেই।কিন্তু তুমি তো আমার টুইন তাই ডিলেট করিনি।হিহিহি!”
রাই ফাইজাকে কিছু বললোনা।সে শুদ্ধের দেওয়া নাম্বারটায় কল দিলো।অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসায় শুদ্ধ রাই ভেবেই কলটা রিসিভ করলো।
“সরি,আমি বিদায় না জানিয়েই চলে এসেছিলাম।আসলে..”
“রাই?”
“হুম!”
“দেখা করতে পারবে?”
“আজই না আমাদের দেখা হলো!শুদ্ধ সাহেব।”
“খুব আর্জেন্ট!”
“নাতাশার ব্যাপার নিয়ে?”
“তুমি সব জানতে রাই?”
“বিয়ে করবেন?”
“কি!কাকে?”
“আমাকে।”
“কিহ!”
“আপনিই চিন্তা করুন!ডাক্তার সাহেব।সাবিহাকে বিয়ে করবেন নাকি আমাকে?কন্ট্রাক্ট ম্যারিজ হবে,চিল।
আমি আপনাকে কিছু ছবি দিচ্ছি।মন পরিবর্তন হলে আমাকে জানাবেন।”কথাটা শেষ করেই রাই কল কেটে দিলো।
শুদ্ধ বুঝতে পারছেনা তার কি করা উচিত।ঠিক তখনি টুংটাং শব্দ করে কিছু মেসেজ আসলো শুদ্ধের হোয়াটসঅ্যাপে।ছবিগুলোতে নাতাশা আর আরাভ ইন্টিমেট হয়ে আছে।শুদ্ধ কাঁদতে চেয়েও পারলোনা।তার আজ নিজেকে অনুভূতি শূন্য লাগছে।সাত বছরের সম্পর্কের প্রতিদান এভাবে দিবে নাতাশা এটা শুদ্ধ আশা করেনি।শুদ্ধ বুঝতে পারেনা এত কিছু দেখেও রাই কীভাবে সহ্য করেছে এসব কে জানে?
শুদ্ধের মাথা ব্ল্যাঙ্ক হয়ে আছে ।তার মাথার রিফ্রেশমেন্টের জন্য এখন তার কফি খাওয়া দরকার।কফির কথাই ভাবতে ভাবতে শুদ্ধ উদ্ভ্রান্তের মত ক্যাফেটেরিয়ার দিকে হাটতে শুরু করলো।
চলবে,