দ্বিতীয় ফাগুন পর্ব -১৯+২০

#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_১৯
#লেখিকা_Esrat_Ety

“ভাইয়া আপনার সাথে আমার কথা ছিলো।”
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা। সাদাফ হেসে বলে,”এসো, ভেতরে এসে বসো।”
রোদেলা ভেতরে ঢুকে সোফাতে বসে। অফিস থেকে সোজাসুজি এখানে এসেছে সে। সাদাফ রোদেলার মুখোমুখি সোফাতে বসে রোদেলাকে বলে,”আমারো তোমার সাথে কথা ছিলো। তোমাকে খবর পাঠাতে চেয়েছিলাম।”
রোদেলা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়,”আমার সাথে? কি কথা?”

_বলবো। আগে তুমি বলো তুমি কি বলতে চাও।

কোনো রকম ভনিতা না করে রোদেলা সরাসরি বলে দেয়,”ভাইয়া আমরা তিনদিনের মধ্যে আপনার ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলাম। এমাসের এডভান্স দিয়ে দিয়েছি যদিও, আপনার চিন্তা করার দরকার নেই। টাকা ফেরত দিতে হবে না। আমরা শুধু চাচ্ছি চলে যেতে।

সাদাফ রোদেলার দিকে তাকিয়ে থাকে। রোদেলা হেসে বলে,”এটাই বলতে এসেছি। উঠি তাহলে?”
উঠতে গিয়েও রোদেলা বসে পরে,সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি কিছু বলতে চেয়েছিলেন ভাইয়া। বলুন।”

সাদাফ একটা ম্লান হাসি দিয়ে বলে,”আমি বলতে চেয়েছি,আমি তোমার আপুকে বিয়ে করতে চাই রোদেলা।”

রোদেলা অবাক চোখে সাদাফের দিকে তাকিয়ে থাকে। সাদাফ বলতে থাকে,”যা বুঝলাম। তোমাদের ফ্যামিলিতে তুমিই অভিভাবক। তাই প্রস্তাবটা তোমার কাছেই রাখলাম।”

রোদেলা বিড়বিড় করে বলে,”মজা করছেন নাকি?”
_এটা মজা করার মতো কোনো বিষয় রোদেলা?

রোদেলা দুমিনিট চুপ করে থাকে। সাদাফ রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে। নীরবতা ভেঙে রোদেলা বলে,”আপুকে কেনো বিয়ে করতে চাইছেন?”
_তোমার আপুকে ভালো লেগেছে আমার।

রোদেলা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,”ভুল কথা। আপুকে আপনার ভালো লাগেনি। আপনি আসলে আপুর মধ্যে কিছু সুবিধা দেখতে পেয়েছেন। আপু সহজ সরল। মাদার তেরেসার মতো মন আপুর। আপনার বাচ্চা দুটিকে ভালো রাখবে। আর সবথেকে বড় কথা হচ্ছে আপুর কখনো বাচ্চা হবে না সেটা আপনার কাছে খুব বড় একটা সুবিধা। ভবিষ্যতে আপুর বাচ্চা হলে আপনার বাচ্চা দুটো অবহেলিত হবে ,আর যদি সেটা না হয় তাহলে তো লাভই। এসব ক্যালকুলেট করেই আপনি ঠিক করেছেন আপুকে বিয়ে করবেন। কিন্তু আমার আপুকে তো এরকম ক্যালকুলেট করা সম্পর্কে আমি জড়াতে দেবো না। আপুকে যে গ্রহণ করবে তাকে মন থেকে গ্রহণ করতে হবে, সুবিধা দেখে নয়।”

কথা গুলো বলে রোদেলা থামে। সাদাফ মৃদু স্বরে বলে,”এটা তো তোমার দৃষ্টিভঙ্গি রোদেলা। তোমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যেটা মনে হচ্ছে সেটা তো সত্যি নাও হতে পারে।”

_ওকে মানলাম। আপুকে বিয়ে করার পেছনে যে আপনার কোনো স্বার্থ নেই তার পক্ষে যুক্তি দেখান।
সাদাফ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে, তারপর বলে,”তোমার আপুকে বিয়ে করতে চাচ্ছি কারন,
নাম্বার এক: আমার ছেলে মেয়ে দুটো তোমার আপুকে ভীষণ পছন্দ করে ফেলেছে। এটা তোমার চোখে আমার স্বার্থ হতে পারে কিন্তু তা নয় রোদেলা,এটা অন্যকিছু।
নাম্বার দুই: তোমার আপুর চোখে আমার ছেলে মেয়ে দুটোর জন্য অগাধ মমতা দেখতে পেয়েছি আমি।
এটাকেও তুমি “আমার স্বার্থ” ভাবতে পারো। কিন্তু তা নয়। সত্যিই তা নয়।
তিন নাম্বার কারন: দেখলাম তোমার মাদার তেরেসা আপু অনেক কেয়ারিং। আর দীর্ঘদিন আমার কেউ কেয়ার করে না। হঠাৎ মন চাইলো কেউ একটু কেয়ার করুক আমার।
এটাও আমার স্বার্থ ভাবতে পারো। কিন্তু তা নয়। সত্যিই নয়।

তোমার আপুকে বিয়ে করতে চাওয়ায় চার নাম্বার ও শেষ কারনটি হচ্ছে,”তোমার আপু খুব দুঃখী মানুষ। আমিও একজন দুঃখী মানুষ।একজন দুঃখী মানুষ আরেকজন দুঃখী মানুষের দুঃখ খুব ভালো করে বুঝতে পারবে।”

এই পর্যন্ত বলে সাদাফ থামে। তারপর বলে,”জানি এইসব নড়বড়ে যুক্তি। কিন্তু কথাগুলো সত্যি। হ্যা আমি তোমার আপুর মধ্যে সিরাত,সুহার মায়ের যোগ্যতা দেখেছি,আমার সঙ্গিনী হবার যোগ্যতা দেখেছি। তবে রোদেলা আমি ক্যালকুলেট করে দেখিনি সবকিছু। হঠাৎ করে মন বললো এই একাকী জীবনে কাউকে দরকার। দেখলাম মেঘলার মতো কেউ হবে না। এই আর কি।
রোদেলা চুপচাপ সাদাফের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদাফ রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,”কি? চুপ করে আছো কেনো? ভাইভা নেওয়া হয়ে গিয়েছে? দেখো আমি নেতা মানুষ,সোজাসাপ্টা কথা বলি, শুনতেও পছন্দ করি। বলো, আমি কি পাশ?”

রোদেলা কয়েক মুহূর্ত পরে হেসে ফেলে,মুখে হাসি নিয়েই বলে,”পাশ ভাইয়া।”
***
বোনকে দেখে মেঘলা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,”সিরাত সুহা পুরো রুমটা এলোমেলো করে দিয়ে গিয়েছে। তুই প্লিজ রাগ করিস না। আমি এক্ষুনি গুছিয়ে দিচ্ছি। প্রতিদিন তো করে না ওরা এমন।”

রোদেলা কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে টেবিলে রেখে মেঘলাকে দেখে। মেঘলা বিছানার চাদর ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে দিচ্ছে।
রোদেলা পেছনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,”এই আপু। বিয়ে করবি?”

মেঘলা মাথা ঘুরিয়ে হা করে বোনের দিকে তাকায়। রোদেলার মুখ হাসিহাসি। সে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আবার বলে,”সুহা আর সিরাতের বাবাকে বিয়ে করবি? তাহলে ওরা প্রতিদিন অগোছালো করলে তুই প্রতিদিন গোছাতে পারবি সব।”

মেঘলা চমকে ওঠে। কয়েক মুহূর্ত বোনের দিকে তাকিয়ে মেজাজ দেখিয়ে বলে,”এটা কোন ধরনের ফাজলামি রোদেলা?”

রোদেলা হাসে। বোনের হাত দুটো মুঠি করে ধরে বলে,”ফাজলামি না। সাদাফ ভাইয়া প্রস্তাব দিয়েছে। তোকে সে বিয়ে করতে চায়।”

মেঘলা হতভম্ব হয়ে রোদেলার দিকে তাকায়,কন্ঠে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,”ছিঃ ছিঃ এসব কোন ধরনের কথা। তুই বকা দিয়ে দিসনি?”
_বকবো কেনো?
রোদেলা হাসতে হাসতে বলে। তারপর বলে,”বল তুই রাজি কি না। তাহলে ওনাকে জানিয়ে দেবো।”

_অসম্ভব রোদেলা।
_কেনো? সমস্যা কি?
_সমস্যা কি মানে। সে প্রস্তাব দিলেই আমাকে রাজি হতে হবে নাকি! আশ্চর্য!
_আচ্ছা ঠিকাছে, তাহলে কালকেই এই ফ্ল্যাট আমরা ছেড়ে দেবো, এখানে আর থাকবো না।

মেঘলা অবাক হয়ে বলে,”কেনো?”
_তোকে আর সাদাফ ভাইকে নিয়ে লোকজন কেচ্ছাকাহিনী রটিয়ে বেড়াচ্ছে। বিয়ে না হলে লোকজন আরো বলতে থাকবে। তার চেয়ে এখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো।
মেঘলা মিনমিন করে বলে,”সুহা সিরাতকে আর দেখতে পাবো না…..”
_কেনো? সুহা সিরাত তোর কে হয় যে ওদের দেখতে হবে আজীবন?
মেঘলা চুপ করে থাকে। রোদেলা বোনের কাঁধে হাত রেখে নিচুস্বরে বলে,”তোর একটা সংসারের খুব সাধ ছিলো তাইনা? সাদাফ ভাইয়ের একটা সুন্দর সংসার আছে কিন্তু সংসারটা বহুদিন হয় অগোছালো হয়ে পরে আছে। তুই একটু গুছিয়ে দিবি না হয়।”

মেঘলা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। রোদেলা বোনের গালে হাত রেখে বলে,”সমস্যা কি? সাদাফ ভাইকে পছন্দ না? সাদাফ ভাই কুচকুচে কালো সেজন্য? নিজে একটু সুন্দরী হয়েছিস আর অহংকারে মাটিতে পা পরছে না তাইনা?
মেঘলা চোখ গরম করে রোদেলার দিকে তাকায় কথাটি শুনে। রোদেলা হাসতে হাসতে বলে ,”তাহলে সমস্যা কি? লোকটার বাচ্চা দুটোকে ভালোবাসিস। লোকটাকে অপছন্দ কেনো?”

মেঘলা মিনমিন করে জবাব দেয়,”উনি কেমন গুন্ডা প্রকৃতির লোক।”

রোদেলা উচ্চশব্দে হেসে ফেলে। মেঘলা চুপ করে আছে। হাসি থামিয়ে রোদেলা বোনের গাল দুটো আগলে ধরে, মৃদু স্বরে বলে,”একজন পুলিশের সাথে তো সংসার করে দেখলি। এবার না হয় একটা গুন্ডার সাথে সংসার করে দেখবি।”

***
রুহুল আমিনকে খুবই আনন্দিত দেখাচ্ছে। মেয়ের বিয়ে নিয়ে যতটা না আনন্দিত সে তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হচ্ছে সালমান সাদাফের মতো একজন লোক তার জামাই হবে এটা ভেবে।

রোদেলার সাথে সাদাফের কথা হয়েছে। ঠিক করেছে আজ মাগরিব বাদ কাজী ডেকে বিয়ে পড়ানো হবে। ঘরোয়া ভাবে হবে সবকিছু। সালমান সাদাফ এপার্টমেন্টের প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটে গিয়ে জানিয়ে দিয়ে এসেছে সেই কথা। সরাসরি না বললেও সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে মেঘলাকে নিয়ে আর কোনো অপমান জনক কথা নয়।
সাদাফের বোন সেতু এসেছে তার স্বামীকে নিয়ে। সকাল থেকে তারা মেঘলার জন্য শপিং করতে ব্যস্ত। যতোই ঘরোয়া ভাবে হোক,ভাইয়ের বৌয়ের জন্য কোনো আয়োজন বাদ রাখা চলবে না।

রুহুল আমিন ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে রোদেলার ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রোদেলা বিছানায় নতুন চাদর বিছিয়ে দিচ্ছিলো। বাবাকে দেখে বলে,”কিছু বলবে?”
_ও বাড়ির লোকদের তো জানানো উচিত রোদেলা। বৃষ্টি তার বোনের বিয়েতে আসবে না? যত যাই হোক,আদিল তো আমার জামাই? না জানালে যদি বৃষ্টিকে কথা শোনায়?

রোদেলা বিছানার বালিশ দুটো ঠিক করতে করতে বলে,”তুমি আমাকে এতোটা অসামাজিক ভাবো তা তো জানতাম না। আফতাব আংকেলকে কাল রাতেই ফোন করে বলেছি আমি। তারা আসবে বিকেলে। ”
_তাশরিফ ছেলেটাকে ফোন করেছিস আলাদা করে?
রোদেলা অবাক হয়ে বলে,”ওনাকে আলাদা করে ফোন করে বলার কি আছে?”
_ও বৃষ্টির ভাসুর। কতটা সম্মান করে বৃষ্টি ওকে। ওকে আলাদা করে বলবি না?
রোদেলা বাবার দিকে না তাকিয়ে বলে,”তোমার সব কিছুতে বাড়াবাড়ি। আচ্ছা তোমার ফোন আছে না? তুমি করতে পারো না এসব?”
রুহুল আমিন হেসে ফেলে,”তাই তো! আসলে তোর ওপর এতোটা নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছি যে কি বলবো……তোর বিয়ে হলে যে কি হবে আল্লাহ জানে!”
রোদেলা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,”বিয়েই করবো না। চিন্তা করো না তুমি।”

***

“সে কি তুমি শাড়ি পরেছো কেনো!”
বৃষ্টিকে দেখে চেঁচিয়ে বলে তাহমিনা। বৃষ্টি ঘাবড়ে যায়। সবাই তাহমিনার দিকে তাকায়। বৃষ্টি নিচু স্বরে বলে,”কেনো মা? আপুর বিয়েতে যাচ্ছি,শাড়ি পরবো না?”
_পাগল হয়েছো? একে তো শাড়ি পরার অভ্যাস নেই তার ওপর এই অবস্থায় শাড়ি পরে দৌড়াদৌড়ি,নাচানাচি করে অসুস্থ হয়ে পরবে। আর পা দেখি তো…….
তাহমিনা বৃষ্টির পায়ের দিকে তাকায়। পুনরায় চেঁচিয়ে বলে,”ওমা,তুমি হাই হিল পরেছো কেন? হায় আল্লাহ এই মেয়েকে বুঝ দাও। এই অবস্থায় এসব পরতে নেই জানো না?”
বৃষ্টি মুখ কালো করে ফেলে। আদিল বলে,”মা ওর অসুবিধে না হলেই তো হলো।”
তাহমিনা আদিলকে ঝাড়ি মেরে বলে,”তুই চুপ থাক। এসব পরে হাটবে, তারপর একটা অঘটন ঘটলে তখন কি হবে? মা হওয়া এতো সহজ নাকি। আরো কত কত যে স্যাক্রিফাইস করতে হবে দেখতে থাকো। যাও, স্লিপার পরে আসো। যাও।”
বৃষ্টি মুখ কালো করে ঘরে যায়। তাশরিফ বিরক্তি নিয়ে বলে,”মা ভালো কথাও এভাবে ওকে ধমকে বলো। ওর মন খারাপ হয় না বুঝি? বেচারী মায়ের আদর পায়নি কখনো‌।”
_তুই চুপ থাক। আমার ছেলের বৌকে আমি বকবো,ভালোবাসবো যা খুশি করবো। তুই কে কথা বলার?

তাশরিফ কিছু বলে না। মনে মনে বলে,”যত খুশি বৃষ্টির উপরেই চেঁচিয়ে নাও। তোমার বড় ছেলের বৌ আসলে তুমি,আমি দুজনেই সারাদিন মিউমিউ করতে থাকবো মা‌।”
***

আয়েশা সিদ্দিকার কাছে বসার ঘরে সবাইকে শরবত দেওয়ার কথা বলে রোদেলা মেঘলার ঘরে যায়। মেঘলার ঘরে বৃষ্টি আর সেতু মিলে মেঘলাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। মেঘলা রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,”এভাবে সাজাতে নিষেধ কর ওদের। বাড়াবাড়ি লাগছে।”

রোদেলা হাসে,”কিচ্ছু বাড়াবাড়ি লাগছে না। একটু গয়না পরে থাকা কোনো সাজের মধ্যে পরে না।”

সেতু মেঘলার কানে দুল পরিয়ে দিতে দিতে বলে,”এগুলো ভাইয়া সকালে গিয়ে নিয়ে এসেছে তোমার জন্য। সিমিন ভাবীর গয়না সব মায়ের কাছে আছে। ভাইয়া ওগুলো তোমাকে দিতে দেয়নি। বলেছে একজনের জিনিস অন্যজনকে কেনো দেবো? নতুন মানুষ, নতুন গয়না। ‌”

মেঘলা কিছু বলে না। লোকটার সাথে এই দুদিনে একবারো কথা হয়নি মেঘলার। দেখাই হয়নি তাদের। যা কথা বলার রোদেলা বলেছে। দুদিন আগেও যে লোকটা পরপুরুষ ছিলো আজ সন্ধ্যা থেকে সে স্বামী হয়ে যাবে! কি অদ্ভুত নিয়তির খেলা।

রোদেলা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”কদিনেই তো মোটা হয়ে গিয়েছিস। শাশুড়ি অনেক খাতির যত্ন করে বুঝি?”

বৃষ্টি লজ্জা পাওয়া মুখ নিয়ে বলে,”হ্যা। মা তো সারাদিন এটা ওটা নিয়ে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে।”

রোদেলা বলে,”দাঁড়িয়ে তো থাকবেই। তুই তাকে নাতী নাতনি দিবি যে, দুনিয়ায় কেউই স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না বুঝলি! ”

মেঘলা চোখ গরম করে রোদেলাকে বলে,”তুই কখনো কোনোকিছু সহজ ভাবে দেখবি না তাইনা? ওর মন খারাপ করে দিস না। বসার ঘরে যা। আজ আদিল প্রথম এসেছে শশুর বাড়ীতে,গিয়ে দেখ ওর কিছু লাগবে কিনা।”

_ওটাকে দেখলেই তো আমার চড়াতে ইচ্ছা করে আপু।
রোদেলা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে। বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে মেজো আপুর দিকে তাকায়।
রোদেলা বলে,”এভাবে তাকিয়ে থাকার কিছু নেই, সত্যি কথাই বললাম।”
কথাটি বলে রোদেলা চলে যায়। বৃষ্টি মেঘলার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকায়। মেঘলা ওকে শান্তনা দিয়ে বলে,”মন খারাপ করিস না। জানিসই তো,ও একটা পাগল।”

বসার ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে রোদেলা। আদিল সিমেন্ট আপুকে দেখতে পেয়েই গুটিয়ে নেয় নিজেকে। বিরস মুখে বসে থাকে কোনার একটা সোফায়। তাশরিফ ফোন টিপছিলো,রোদেলার অস্তিত্ব টের পেয়ে মাথা তুলে তাকায়। রোদেলা বলে,”আংকেল আন্টি আসেনি কেনো?”

_বাবার হঠাৎ একটু বরিশাল যেতে হয়েছে আর মা আসেনি কারন বাবা আসেনি।

রোদেলা আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি এভাবে সবসময় চোরের মতো হাবভাব কেনো করো? তোমাকে দেখলেই মনে হয় কিছু একটা চুরি করে এসেছো।”
আদিল কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। তাশরিফ বলে ওঠে,”ও আপনাকে ভয় পায়। তাই মুখটা এমন করে রাখে। কথায় কথায় আমার ভাইকে অপমান করবেন না।”

রোদেলা কিছু বলে না তাশরিফের কথার জবাবে। আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে,”শরবত খেয়েছো?”
আদিল মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয়। রোদেলা বলে,”নতুন জামাই, এখানে এভাবে বসে থাকতে হবে না। আমার সাথে এসো, বৃষ্টির রুমে গিয়ে বিশ্রাম করবে।”
আদিল বাধ্য ছেলের মতো উঠে দাঁড়ায়।

তাশরিফ মনে মনে বলে,”আর নিজের হবু জামাইকে এভাবে বসিয়ে রাখার মানে কি? আমারো রুম চাই।”

মাগরিবের নামাজের পরে কাজী বিয়ে পড়ানোর জন্য বসলেন। মেঘলাকে এনে সাদাফের পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো। সাদাফ আজ শুধু একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরে আছে। উপরে মুজিব কোট নেই। সিরাত আর সুহা মেঘলা আর সাদাফের মাঝখানে গিয়ে বসে আছে। তারা দাদীর থেকে শুনেছে আজ আন্টি আর বাবার বিয়ে হবে। কিন্তু সবাই এখানে আন্টি আর বাবাকে পড়াশোনা করাতে বসিয়েছে কেনো? আন্টি আর বাবাকে দিয়ে কিসব লেখাচ্ছে একটা লোক। কাজী কে দেখে তারা ভাবছে একজন টিচার।

সেতু দুষ্টুমি করে মেঘলাকে বলে,”ভাবী তোমার বাপের বাড়ী থেকে শশুর বাড়ী যেতে কোনো গাড়ি ভাড়া লাগবে না,দেখেছো! ভাইয়া আর তোমার অনেক টাকা বেঁচে গেলো।”

কাজী বিয়ে পড়াতে শুরু করে। রোদেলা মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাশরিফ মাথা ঘুরিয়ে রোদেলার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,”পৃথিবীর সবাই বিয়ে করে নিচ্ছে। শুধু আপনি আর আমি ছাড়া।”

কবুল বলে সালমান সাদাফকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে মেঘলা। তার জীবনের নতুন একটা অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। শরীরটা একটু একটু কাঁপছে। রোদেলা বোনকে ধরে বলে,”চল তোকে রুমে নিয়ে যাই। বিশ্রাম নিবি।”

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই জাহানারা মেঘলাকে সাদাফের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে তাড়া দেয়। সবাই বসার ঘরে কথা বলছে।
রোদেলার রুমে মেঘলা চুপচাপ বসে আছে। আয়েশা সিদ্দিকা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে তাকে। তিনি এই মেয়েটার জন্য অনেক অনেক দোয়া করছে,এই মেয়েটা যেন অনেক সুখী হয়,স্বামী সোহাগী হয়।

কিছুক্ষণ পরে রোদেলা, বৃষ্টি আর সেতু ভেতরে ঢোকে। রোদেলা বলে,”আপু ওঠ। তোর বাড়িতে যাবি না? তোর সংসারে?”

মেঘলা রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলার মুখ হাসিহাসি। মেঘলা ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামে। দুই পা সামনে দিয়ে থেমে যায়। পেছনে ঘুরে আয়েশা সিদ্দিকাকে দেখে। আয়েশা সিদ্দিকা তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলা মৃদু স্বরে বলে ওঠে,”আন্টি আমাকে শিখিয়ে দেবেন কিভাবে অনেক ভালো সৎ মা হওয়া যায়? আমিও আপনার মতো অনেক ভালো সৎমা হতে চাই।”

আয়েশা সিদ্দিকা দৌড়ে এসে মেঘলাকে জরিয়ে ধরে। কেঁদে কেঁদে মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”দেবো।”

***
মেঘলা চলে যাওয়ার পরে সবাই কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। রোদেলার মুখ বিষন্নতায় ছেয়ে আছে। তাশরিফ রোদেলাকে একপলক দেখে পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে নিয়ে আদিলকে বলে,”এতো রাতে বৃষ্টিকে নিয়ে জার্নি করা ঠিক হবে না। তুই আর বৃষ্টি বরং কাল সকালে চলে আসিস। আমি উঠছি।”

রুহুল আমিন তাশরিফকে বাঁধা দিয়ে বলে,”এতো রাতে তোমাকেও ছাড়ছি না বাবা। তুমিও আজ রাতটা থাকবে।”

তাশরিফ হেসে বলে,”না আংকেল। তা হয়না।”

রোদেলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রুহুল আমিন শেষমেশ জোরাজুরি করে তাশরিফকে রেখে দেয়।

রোদেলা বৃষ্টিকে গিয়ে বলে,”তুই আর তোর স্বামী তোর রুমে থাক। আপু আর আমার রুমে তোর ভাসুরকে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ওনাকে দেখিয়ে দে ঘর।”

বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে,”আমার রুম মানে? আমার জন্য এখানেও আলাদা রুম আছে আপু?”

_হ্যা আছে। তোর সবকিছু গুছিয়ে রাখা। জামাই নিয়ে প্রথম আসবি তাই মেঘলা আপু গুছিয়ে দিয়ে গিয়েছে তোর জন্য।

_আর তুমি কোথায় থাকবে আপু?

_আমি তিনতলায় যাচ্ছি। সেতু আপুর স্বামী রাতে চলে গিয়েছে। আমি সেতু আপুর কাছে গিয়ে থাকবো।

***

“পৃথিবীতে আমিই বোধ হয় একমাত্র পুরুষ যার বিয়ের আগে হবু বৌয়ের রুমে ঘুমানোর সৌভাগ্য হয়েছে।”

বিড়বিড় করে কথাটি বলে রোদেলার বিছানায় ধপ করে বসে পরে তাশরিফ। ঘড়ির কাঁটা এখন সাড়ে বারোটার ঘরে আছে। তার ঘুম আসছে না। কিছুক্ষণ পায়চারি করে, কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। এভাবেই কেটেছে ঘন্টা খানেক। মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু। আর দেরী না করে রোদেলাকে প্রস্তাব দিয়ে ফেলবে নাকি সে? রোদেলাকে সে প্রচন্ড ভয় পায়,যদি তাশরিফকে ফিরিয়ে দেয়! কিন্তু এভাবে আর কতদিন ভয়ে ভয়ে কাটাবে সে। একদিন যদি হুট করে রোদেলা আমিন বিয়ে করে নেয় তাহলে তাশরিফ হাসানের তো দেবদাস হয়ে যেতে হবে!

মাথা ঘুরিয়ে রোদেলার রুমটা দেখতে থাকে তাশরিফ‌। হঠাৎ করে রোদেলার স্টাডি টেবিলের দিকে চোখ যায় তাশরিফের। টেবিলের উপরে হুমায়ূন আহমেদ এবং সিডনি শেলডনের কিছু উপন্যাস সাড়ি করে সাজিয়ে রাখা। এসব নিশ্চয়ই ওই রোদেলা আমিন পড়েন না। উপন্যাস আর রোদেলা আমিন! অবিশ্বাস্য ব্যাপার। গল্প উপন্যাস পড়া মেয়েরা কখনো হিটলারের ফিমেল ভার্সন হয় না। তারা নমনীয় হয়।তাশরিফ ঠিক করেছে বিয়ের পরে টানা তিনমাস প্রতিদিন রাতে রোদেলাকে দিয়ে একটা করে উপন্যাস পড়াবে সে। হিটলারের মতো স্বভাব চরিত্র পাল্টে মহাত্মা গান্ধীর মতো বানিয়ে ফেলবে একেবারে।

হাত বাড়িয়ে তাশরিফ বই গুলোর ভেতর থেকে সিডনি শেলডনের “রেজ অব এ্যাঞ্জেলস” বইটা তোলে। হঠাৎ তাশরিফের দৃষ্টি একটা ডায়েরীর উপর গিয়ে নিবদ্ধ হয়। কৌতুহলী হয়ে ডায়েরীতে হাত দেয় তাশরিফ। ডায়েরীর উপরে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা “এটা রোদেলা আমিনের ডায়েরী। এই ডায়েরীতে হাত দেওয়া যাবে না।”
তাশরিফ হেসে ফেলে। কি সুন্দর কথা! উনি ডায়েরীর উপর এসব লিখে রাখবেন আর সবাই এটা দেখে ভয় পেয়ে গিয়ে হাত দেবে না ডায়েরীতে !
যতখানি বুদ্ধিমতি মেয়ে মনে হয়, রোদেলা আমিন তা নয়,মাথার স্ক্রু সামান্য ঢিলা।

তাশরিফ বিড়বিড় করে বলে,”এই যে দিলাম হাত। এখন কি করবেন রোদেলা আমিন?”
হাত দিয়ে ডায়েরীর পাতা ওল্টায় তাশরিফ। তাশরিফকে খুবই উত্তেজিত দেখাচ্ছে, খুব নিষিদ্ধ একটা কাজ করতে যাচ্ছে সে এখন । অন্যের ব্যক্তিগত ডায়েরী পড়া অপরাধ। কিন্তু তাশরিফ এই অপরাধ টা করতে পেরে আনন্দিত। এই ডায়েরী যার তার ডায়েরী নয়,রোদেলা আমিনের ডায়েরী,তার পেঁচা মুখীর ডায়েরী…।

চলমান….#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_২০
#লেখিকা_Esrat_Ety

“আজ জাহিনের সাথে আমার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে।‌ বিচ্ছেদের কারণ খুব সাধারণ, ইন্টারেস্টিং কিছু না। কারন হলো আমি একটা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। আমার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। আমার মা আমার বাবাকে রেখে নিজের খালাতো ভাইয়ের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো বলে আমারো চরিত্রে সমস্যা থাকার ১০০% সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো অবশ্য জাহিনের কথা না,তার মায়ের কথা। তিনি আমাকে জাহিনের অযোগ্য ঘোষণা করে দিয়েছে। আমি তার মতামতের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তার দুধের খোকাকে টাটা বাই বাই করে দিয়ে এসেছি। বাবাকে সব বলেছি। বাবা ভাবছে আমার মন খারাপ। কিন্তু না,কথাটা মিথ্যা। সত্যি কথা হচ্ছে আমার মন শুধু খারাপ না। আমার মন ভয়ংকর খারাপ। কান্না পাচ্ছে ভীষণ। কিন্তু কাঁদা যাবে না। রোদেলা আমিন কখনোই কোনো মায়ের “সন্টু মন্টু” আঁচল ধরা ছেলের জন্য কাঁদবে না। জাহিন তুমি জাহান্নামে যাও। রোদেলা আমিন তোমার জন্য কাঁদবে না ।

_রোদেলা আমিন
_ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে।”

ডায়েরীর এই পৃষ্ঠায় এতটুকুই লেখা। তাশরিফ ডায়েরীর পাতা ওল্টায়। পরের পাতায় আরো কিছু লেখা।

“আজ অফিসে একজন ভদ্রলোকের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। ভদ্রলোকের নাম তাশরিফ হাসান। ফরসা, সুন্দর,গালে একটা কাটা দাগ আছে ক্রিমিনালদের মতো।”

এটুকু পড়ে তাশরিফ নিজের গালে হাত দেয়। হাত বুলিয়ে কাটা দাগ টা ছোঁয়। তারপর আবার পড়তে শুরু করে।

“লোকটা আমার সিনিয়র। মনে হচ্ছে রাজা রামমোহন রায়ের বংশোধর। খুবই পরোপকারী। আমাকে সাহায্য করতে এসে বিনিময়ে আমার কাছে অপমানিত হয়ে গিয়েছে। নিশ্চয়ই আমাকে খুব অসভ্য এবং অভদ্র একটি মেয়ে ভেবেছে। তার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু কি বলে ক্ষমা চাইবো? তাকে গিয়ে এটা বলবো? যে শুনুন গতকাল না আমার প্রেমিকের সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে তাই আমার মন ভালো ছিলো না। আর সেজন্য আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করে ফেলেছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন!”

তাশরিফ এতটুকু পড়ে মুচকি হাসে। বিড়বিড় করে বলে,”এ তো আস্ত নাটক বাজ একটা মেয়ে। দেখলে তো মনেই হয়না!”

আরো কিছু পাতা পড়তে থাকে তাশরিফ। একটা পাতায় এসে সে থেমে যায়,
“সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে করবো না। বিয়ে করবো না,করবো না,করবো না,বিয়ে করবো না।”

তাশরিফ হাসতে থাকে লেখাটি পড়ে। হাসতে হাসতে আরো কিছু পাতা সে ওল্টাতে থাকে। হাবিজাবি অনেক কথা লিখে রেখেছে তার পেঁচা মুখী। ডায়েরী বন্ধ করে ফেলে সে। আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে একবার দেখে সে। কাটা দাগের জন্য আসলেই কি তাকে ক্রিমিনালের মতো লাগে? সে যাই হোক,পেঁচা মুখীর ডায়েরীতে তার নিজের নামটা দেখে খুবই আনন্দিত লাগছে। এই আনন্দে একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে খুব। এই রুমে বসে সিগারেট ধরালে ওই পেঁচা মুখী নির্ঘাত কাল বুঝে যাবে,তার চেয়ে ছাদে গিয়ে খেয়ে আসা যাক!

***
“ওরা ঘুমিয়েছে?”

মেঘলা সুহার মাথার বালিশটা ঠিক করে দিতে দিতে নিচু স্বরে জবাব দেয়,”হু।”

সাদাফ লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,”আজ আমাদের বিয়ের প্রথম রাত আর আজই ঝামেলা হতে হলো। কি একটা অবস্থা বলো তো মেঘলা!”

মেঘলা সাদাফের মুখে তুমি সম্বোধন শুনে খানিকটা চমকায়। পর মুহূর্তেই মনে পরে তাদের তো বিয়ে হয়েছে,বৌকে তো তুমি করেই বলবে।
মেঘলা বলে,”নিচে কি ঝামেলা হয়েছে?”

সাদাফ হাত থেকে ঘড়িটা খুলে রাখে,বলে,”কিছু না। একটা বিচার করে দিয়ে এলাম। বৌয়ের গায়ে কারনে অকারণে হাত তোলে। দিয়েছি নাক ভেঙে। ইহ জনমে আর বৌয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস পাবে না।”
মেঘলা চমকে ওঠে,বলে,”নাক ভেঙেছেন মানে?”
সাদাফ হাসে,বলে,”ও কিছু না। আচ্ছা তুমি এক কাজ করো তো মেঘলা। দুই কাপ কড়া লাল চা বানিয়ে নিয়ে বারান্দায় এসো,সাথে একটু লেবু চিপে দিও।”

মেঘলা উঠে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে বলে,”আমি তো চা খাই না। এক কাপ নিয়ে আসবো?”

_না দুই কাপই আনবে। কারন আমি কথা বলে বলে তোমার মাথা ধরিয়ে দেবো। চা খেলে ভালো লাগবে তোমার।

সাদাফ কথাটি বলে বারান্দায় চলে যায় । মেঘলা কয়েক সেকেন্ড মানুষটাকে দেখে রান্নাঘরে চলে যায়।

চা বানিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় মেঘলা। সাদাফ তার দিকে না তাকিয়ে বলে,”বসো।”

মেঘলা সাদাফের পাশে বসে তার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। সাদাফ একপলক মেঘলার দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
“চা টা ভীষণ ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ।”

মেঘলা মুচকি হাসে। সাদাফ বলে,”তুমি আমার ব্যপারে কিছু জানতে চাইলে বলো।”

মেঘলা অস্ফুট স্বরে বলে,”সুহা সিরাতের মায়ের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল?”
সাদাফ কয়েক মুহূর্ত মেঘলার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”আমি বলেছি আমার ব্যপারে জানতে চাও কি না। যাই হোক,বলছি,
সিমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে।”

মেঘলা চুপ করে থাকে। সাদাফ চা শেষ করে বলে,”তুমি কি জানো আমার তোমার পাশে বসে থাকতে খুবই নার্ভাস লাগছে?”

মেঘলা কিছু বলে না,মাথা তুলে তাকায় শুধু। সাদাফ বলে,”আমি এর আগে এতো ফর্সা মেয়েকে এতটা কাছ থেকে দেখিনি। সিমিনের গায়ের রঙও আমার মতোই ছিলো। তোমার গায়ের এই ফর্সা রঙ আমার চোখে বিঁধে যেতে চাইছে।”
সাদাফ মেঘলাকে অবাক করে দিয়ে মেঘলার গালে একটা আঙ্গুল ছোঁয়ায়। বলে,”আঙ্গুল টা তোমার গালে রাখতেই তোমার গাল কেমন লাল হয়ে গিয়েছে দেখো।”

মেঘলার খুব হাসি পাচ্ছে লোকটার এমন পাগলাটে আচরণ দেখে। এতটা গুরুগম্ভীর একজন মানুষের ভীতরে এতো বাচ্চামো থাকতে পারে তা দেখে বোঝার উপায় নেই।

সাদাফ মেঘলার একটা হাত ধরে। মেঘলা কিছুটা কেঁপে ওঠে, পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা চাবির গোছা বের করে মেঘলার হাতের তালুতে রেখে হাতটা মুঠি করে দিতে দিতে বলে,”চাবির সাথে সাথে এই সংসারের দায়িত্ব,সুহা সিরাতের দায়িত্ব,আমার মায়ের ওষুধের দায়িত্ব,দেয়ালের প্রতিটা ইটের দায়িত্ব,রান্নাঘরে চায়ের পাতার কৌটার দায়িত্ব, মাসিক বাজারের হিসাবের দায়িত্ব, আমার ওয়ালেটের খুচরা টাকার দায়িত্ব, লন্ড্রিতে দেওয়া আমার জামাকাপড়ের দায়িত্ব, এই আস্ত আমিটার দায়িত্ব আমি তোমার মুঠোয় তুলে দিলাম। যথাযথ ভাবে পালন করতে পারবে না?”

মেঘলা নিশ্চুপ হয়ে আছে। এতো সুন্দর করে কথা কিভাবে বলে এই লোকটা! জনগনকে পটাতে পটাতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে বোধ হয়।
মেঘলা অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়,”চেষ্টা করবো।”

***
বিছানায় এপাশ ওপাশ করে উঠে বসে রোদেলা। তার ঘুম আসছে না। সে কখনোই নিজের বিছানা ছেড়ে অন্য কারো বিছানায় ঘুমোতেই পারেনা। তার ওপর সেতু আপুর নাক ডাকার স্বভাব। রোদেলা অবাক হয়,এর সাথে এর হাজবেন্ড ঘুমায় কিভাবে! নাক ডাকার শব্দে পুরো রুম আলোড়িত হয়ে গিয়েছে।

রোদেলা বিছানা থেকে নামে। জানালার কাছে গিয়ে তার মন ভালো হয়ে যায়। আজ রাতের চাঁদটা এতো চমৎকার ! জানালা দিয়ে সৌন্দর্য পুরোটা উপভোগ করা যাচ্ছে না! এই সৌন্দর্য খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়। ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ হেটে আসবে সে? কিন্তু কেউ দেখে ফেললে তাকে পাগল ভাববে যে। দুমিনিট রোদেলা চিন্তা করে। তারপর বিড়বিড় করে বলে,”ভাবলে ভাবুক! রোদেলা থোরাই কাউকে পরোয়া করে!”

ধীরে ধীরে পা ফেলে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে থাকে রোদেলা। ছাদের দরজার কাছে আসতেই তীব্র সিগারেটের গন্ধ তার নাকে যায়। রোদেলা নাক চোখ কুঁচকে ফেলে। সিগারেটের গন্ধ আসছে কোথা থেকে! অদ্ভুত।
ছাদে পা ফেলে মাথা ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখতে থাকে সে। একটু দূরেই একটা আবছায়া দেখে চমকে ওঠে সে। কিছুটা ভীত হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”কে ওখানে!”

অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে প্রিয় নারী কন্ঠটি শুনতে পেয়ে তাশরিফও কিছুটা চমকে ওঠে। তার হাতে জ্বলন্ত একটা সিগারেট। মাথা ঘুরিয়ে সে দেখে রোদেলা আমিন তার কিছুটা পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
তাশরিফ অবাক হলেও রোদেলার ভীত মুখ দেখে বলে,”ভয় পাবেন না‌। আমি তাশরিফ হাসান।”
রোদেলা কাঁপা কন্ঠেই বলে,”আপনি এখানে কি করছেন!”

_আরেহ আপনি তো ভীষণ ভয় পেয়েছেন দেখছি। আমি কোনো জ্বীন ভুত নই। এই দেখুন,আমার হাতে সিগারেট। জ্বীন সিগারেট খায় না।

রোদেলা একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”আপনাকে জ্বীন ভেবেছি কে বললো? সবসময় সস্তা ধরনের রসিকতা করতেই হবে?”

তাশরিফ হাসে। বলে,”এগুলো খুবই দামী ধরনের রসিকতা। যার তার সাথে আমি করি না। আপনি কৃপণ তাই আপনার কাছে সস্তা রসিকতা মনে হয়।”

রোদেলা চুপচাপ মাথা ঘুরিয়ে চলে যেতে নিলে তাশরিফ পেছন থেকে ডাকে,”আপনি এসেছিলেন কেনো এতো রাতে এখানে?”

রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। বলে,”যে কারনেই আসিনা কেনো আপনার জানতে হবে না,আপনি সিগারেট ফুঁকুন।”

কথাটি বলেই রোদেলা হনহন করে হেঁটে চলে যায়। তাশরিফ দাঁড়িয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলে ” কি চাবুকরে বাবা!”

***

তাশরিফের ঘোর কাটছে না। এটা কি তার ভ্রম না সত্যি? রোদেলা আমিন এভাবে হঠাৎ করে তাদের বাড়িতে এসেছে! তাও এই ছুটির দিনে, দুপুর বেলায়। এরকম হুট করে তো পেঁচা মুখী কখনো আসেনি। রোদেলা তাশরিফকে বলে,
“আপনি যদি দরজা থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে আমি ভেতরে আসতে পারি।”

তাশরিফ সরে দাঁড়ায়। রোদেলা বলে,”সকালে ফোনে কথা বলতে গিয়ে টের পেলাম বৃষ্টি হাপাচ্ছে। ওকে দেখতে এলাম। কোথায় ও?”

_হ্যা খানিকটা অসুস্থ হয়ে পরেছিল। ডক্টর ডেকেছিলো আদিল, চেক আপ করে দিয়ে গিয়েছে।

রোদেলা হেটে বৃষ্টির রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়। দরজায় টোকা দিয়ে বলে,”আসতে পারি?”

ওপাশ থেকে ধরা গলায় বৃষ্টি জবাব দেয়,”এসো আপু।”

রোদেলা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। বৃষ্টি শুয়ে আছে। তার মাথার কাছে বসে আছে তাহমিনা। তিনি রোদেলাকে পছন্দ না করলেও শুকনো হাসি হাসে। রোদেলা সালাম দিলে সালামের উত্তর দেয়।

রোদেলা বৃষ্টির কাছে যায়,”কদিন ধরে এই অবস্থা? বলিসনি কেনো? বাবা,আপু সবাই শুনে টেনশন করছে খুব।”
_আপু তেমন কিছুই না। তুমি টেনশন করো না। আমি ঠিক আছি।

_তা তো দেখতেই পাচ্ছি কেমন ঠিক আছিস।
তাহমিনা বিরক্ত হয়। এই মেয়েটা সবসময় কাট কাট কথা বলে। খুব সুক্ষ্ম ভাবে খোঁচা দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে যেন তারা বৃষ্টির খেয়াল রাখতে গাফিলতি করছে।

বৃষ্টি রোদেলাকে বলে,”তুমি আমাকে একটু রামেন করে খাওয়াবে আপু? আমার তোমার হাতের রামেন খেতে ইচ্ছে করছে খুব।”

রোদেলা বোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। কতদিন পরে ছোট্টো সেই বৃষ্টি তার কাছে আবদার করছে। তাকে তো এই আবদার রাখতেই হবে।

তাশরিফ রান্নাঘরের কাছে এসে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”মা একটু চা পাওয়া যাবে?……”
তারপর রান্নাঘরে রোদেলাকে দেখে থমকে যায়। শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে রান্নাঘরে কিছু একটা নাড়াচাড়া করছে সে, হাতে খুন্তি। অপলক দৃষ্টিতে তাশরিফ কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। তাশরিফের কাছে মনে হচ্ছে তার সামনে যে দৃশ্যটি সে দেখছে তাতে পৃথিবীর সমস্ত মুগ্ধতা লুকিয়ে আছে। রোদেলা আমিনকে পুরোদস্তুর একজন গৃহিণী লাগছে। তাশরিফের মুগ্ধতার রেশ কাটছে না।

রোদেলা কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায়। তাশরিফ মুগ্ধতার ঘোর থেকে বের হয়ে বলে,”মা কোথায়? আমি ভেবেছি মা রান্নাঘরে। চা চাইতে এসেছিলাম।”

রোদেলা চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে বলে,”আপনার মা বৃষ্টির কাছে।‌ চা আমি বানিয়ে দিলে হবে?”

তাশরিফ যেন আনন্দে নেচে ওঠে। এ তো মেঘ না চাইতেই জল! হঠাৎ করে পেঁচা মুখী এতো ভদ্র হয়ে গেলো কিভাবে! সব থেকে বড় কথা কয় মিনিটের জন্য এই ভদ্রতা! ঠিকই তো কিছুক্ষণ পরে তাশরিফের সাথে কিচকিচ করে কথা বলবে!

তাশরিফ আনন্দ মাটি চাপা দিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”যদি আপনার সমস্যা না হয় তো….”
_দিচ্ছি।
রোদেলা এক শব্দে উত্তর দিয়ে আরেকটি চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে দেয়।

চা বানিয়ে তাশরিফের হাতে চায়ের কাপ দিতেই তাশরিফ প্রস্বস্ত একটা হাসি দিয়ে বলে,”ধন্যবাদ।”

তাহমিনা বৃষ্টির রুম থেকে বেরিয়ে এই দৃশ্য দেখে কিছুটা থমকে যায়। দৃশ্যটি খুবই স্বাভাবিক। রোদেলা তার ছেলেকে চা দিচ্ছে। তার ছেলে রোদেলাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। কিন্তু এই স্বাভাবিক ব্যাপারটি তাহমিনার কাছে অস্বাভাবিক ঠেকে। তার ছেলের চোখে মুখে এতো আনন্দের ছটা কেনো! তাহমিনা খেয়াল করেছে, রোদেলাকে দেখলেই তাশরিফ কেমন যেনো অন্যরকম হয়ে যায়। লাজুক ভঙ্গিতে হাসে। এসব তো সুবিধার লক্ষন না। তাহমিনা সব বুঝতে পারে। বুড়ো তো বাতাসে হয়নি সে। কিছুটা ভ্রু কুঁচকে ফেলে সে। রোদেলা রান্নাঘরে চলে গিয়েছে। তাশরিফ চায়ে চুমুক দিয়ে রোদেলাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। আর তাহমিনা দেখছে ছেলের চোখে ওই রোদেলা নামের মেয়েটির জন্য মুগ্ধতা।

***
চায়ের কাপটা সাদাফের পাশে রেখে মেঘলা শুকনো জামাকাপড় গুলো হাতে নেয় গুছিয়ে রাখবে বলে। সাদাফ একটা নিউজপেপার পড়ছিলো। নিউজপেপার থেকে চোখ না সরিয়েই মেঘলাকে বলে,”তুমি কি জানো নীল শাড়িতে তোমাকে অপরাজিতা ফুলের মতো লাগছে? আজ থেকে সব নীল রঙের শাড়ি কিনবে। সবসময় নীল রঙের শাড়ি পরে থাকবে।”
মেঘলা চমকে তাকায় সাদাফের দিকে। লোকটা তো নিউজপেপার থেকে মুখ সরালোই না,তার শাড়ির রং লক্ষ্য করলো কিভাবে!

অবশ্য সাদাফের এই অভ্যাস সম্পর্কে মেঘলা অবগত হয়ে গিয়েছে। আড়চোখে মেঘলাকে লক্ষ্য করে খুব। মেঘলা কখনো কখনো টের পায়। সাদাফ নিউজপেপার পাশে সরিয়ে রেখে মেঘলার একটা হাত ধরে মেঘলাকে টেনে তার পাশে বসিয়ে দেয়। এখনো জড়তা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি মেঘলা। তাই সাদাফের হুটহাট ছোঁয়ায় তাকে চমকাতে হয় রোজ। কিন্তু একটা ব্যাপার তার অদ্ভুত ভালো লাগে। সাদাফের ধৈর্যশীলতা তাকে মুগ্ধ করেছে। স্বামী স্ত্রী হয়েছে বলে কখনো মেঘলার সাথে জোর জবরদস্তি করে না লোকটা। কখনো মলিনতা নিয়ে সে ছোয়না মেঘলাকে। মাইনুলের মতো মেঘলাকে কেবল নিজের কৃতদাসীর চোখে দেখে না। স্বামী স্ত্রীর কাছাকাছি আসার সময়টাতে কখনোই মেঘলার মনের উপর জোর দেয়না সে। সে আগে সম্মানের সাথে জানতে চায় মেঘলা তার ভালোবাসা পেতে ইচ্ছুক কি না। অন্তরঙ্গ মুহূর্তে মাইনুলের মতো কখনোই তার দৃষ্টি শুধু মেঘলার শরীরে নিবদ্ধ রাখে না। মেঘলার চোখে চোখ রাখে। কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে স্ত্রী হিসেবে সম্মানিত করে সবসময় ‌।
চুপচাপ বসে আছে মেঘলা। সাদাফ মেঘলার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,”সিরাত আর সুহার মায়ের কি মন খারাপ?”

মেঘলার চোখ ভিজে ওঠে। লোকটা যখনি তাকে আদুরে কন্ঠে এই নামে ডাকে মেঘলার মন ভরে যায়। বুকের মধ্যে কেমন শান্তি অনুভূত হয়।
মাথা ঝাঁকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”না তো। মন খারাপ কেনো থাকবে?”
_তাহলে মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেনো?

মেঘলা মাথা নিচু করেই বলে,”ভুল ভাবছেন। আমার মন খারাপ নেই।”
_সুহা সিরাত ঘুমিয়েছে?
_দাদীর কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়েছে।
_আজ বৃষ্টি পেয়ে ঘুমাচ্ছে। নয়তো ওদের বিকেলে ঘুম পাড়ানো কার সাধ্যি!

মেঘলা মুচকি হাসে,”যতটা বলেন,আমার ছেলে মেয়ে দুটো অতটা দুষ্টু নয়। অনেকটা লক্ষী!”
_হু,শুধু মাঝে মাঝে মাথার তার ছিঁড়ে যায় তোমার ছেলে মেয়ের।

মেঘলা হাসছে। সাদাফ মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে,”চা টা তো ঠান্ডা হয়ে গেলো। যাও আরো দুকাপ চা বানিয়ে নিয়ে এসো। খেতে খেতে গল্প করবো।”

মেঘলা চা বানিয়ে ঘরে ঢোকে,তার দুহাতে দুই কাপ চা ‌‌। সাদাফ বলে,”দরজার সিটকিনি টা লাগিয়ে দিয়ে এসো।”
মেঘলা বলে,”কেনো?”
_কিছু গল্প দরজা বন্ধ করে করতে হয় তাই।

***
তাহমিনা ছেলের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাশরিফকে একটু বাজিয়ে দেখা দরকার। মনটা কেমন অশান্ত হয়ে আছে তার। তার ধারণা যদি সত্যি হয় তাহলে সে মানতেই পারবেনা কিছুতে এসব।

তাশরিফ কিছু পেপার্স দেখছিলো। মাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,”কি মা? এতো রাতে?”

তাহমিনা হাসতে হাসতে বলে,”তোর সাথে কথা বলতে এলাম।”

তাশরিফ হেসে বলে,”আবার কোনো পাত্রীর ছবি নিয়ে এসেছো নাকি? তাহলে মা দরজা থেকেই ফেরত যাও। ভেতরে ঢুকবে না প্লিজ।”

তাহমিনা শুকনো মুখ করে ভেতরে ঢোকে। তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শুরু করে,”তোর বাবা বরিশাল থেকে একটা সম্মন্ধ নিয়ে এসেছে। তোর বাদল চাচার বড় ছেলে আছে না? তার জন্য একজন উচ্চশিক্ষিতা মেয়ে লাগবে।‌ আমি আর তোর বাবা মিলে ঠিক করেছি বৃষ্টির বাবার কাছে রোদেলার জন্য প্রস্তাব টা রাখবো।”

তাশরিফ মায়ের দিকে তাকায়। তার হাতের কাগজটা পরে যায়। তাহমিনা ছেলেকে দেখতে থাকে। তার যা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে বলে,”ভালো হবে তাই না। কি বলিস?”

তাশরিফ চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে,”না।”

_না মানে ? মেয়েটার বয়স বেড়ে যাচ্ছে দেখেছিস?
_তাতে হয়েছে টা কি?
তাহমিনা কপাল কুঁচকে বলে,”তুই এতো বাধ সাধছিস কেনো? তোর সমস্যা কোথায়?”

তাশরিফ একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে,”কারন আমি রোদেলা আমিনকে পছন্দ করি। রোদেলা আমিনকে আমি বিয়ে করতে চাই মা!”

চলমান….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here