দ্বিতীয় অধ্যায় পর্ব -০২

#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
#Part_2

নিয়তির এক খন্ড অভিশাপ এসে যেন পড়েছে অনিন্দার উপর। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে চিন্তাধারা। নিকটতম কাছের মানুষদের দ্বিমুখী আচরণ অভাবনীয় হলেও সত্যি। অনিন্দা বাদে সবাই জানতো, যে পাত্র দেখতে আসবে অনিন্দাকে সে আগেও বিয়ে করেছে। বিবাহিত সে। কিন্তু কেউ অনিন্দাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। রুমের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে আফাক। বিছানায় বসে ভাবনায় বিভোর অনিন্দা।

আফাকের দৃষ্টির অগোচর হচ্ছে না অনিন্দার কপালের চিন্তার ভাজ। বড় বড় চোখের পাপড়ি একবারের জন্যও পড়ছে না তার । খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছে সে। আফাক গলা ঝেড়ে

‘ আপনিই পাত্রী আমি জানতাম না। আমাদের আজকেই দেখা হয়ে গিয়েছে এক্সিডেন্টলি। আসলে এই বিয়েটা আমি আমার মেয়ের জন্যই করছি বলতে পারেন করতে হচ্ছে।

অনিন্দা মাথাটা অল্প ঘুরিয়ে, অল্প তাচ্ছিল্য হেসে
‘ পাত্রী রাজী হলে তবেই বিয়েটা হবে৷

আফাক কাশি দিয়ে
‘ তা অবশ্য ঠিক। আসলে আজকে ওর চতুর্থ জন্মদিবস ছিলো। ওকে জন্মদিনে গিফট হিসেবে নতুন মা দেবো বলেছিলাম। আসলে নতুন মা চাই আয়ু-ই বলেছিলো, অবশ্য এটা ওর বুদ্ধি নয়। ওর দাদিমা সেটা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওকে অনেক বুঝালাম যে নতুন মা তোমায় ভালোবাসবে না, পচা হবে কিন্তু শুনলো না। কে বুঝাবে বলেন! এইটুকু মেয়ে বুঝবেই বা কি! সৎ মা কেমন হয় তা তো আর আয়ু জানে না।

অনিন্দার ভেতরে মনে হয় কিছু একটা নড়েচড়ে উঠেছে। সত্যিই তো সৎমা কি আপন মায়ের মতো ভালোবাসবে ওইটুকু একটা মেয়েকে? অনিন্দা যদি নতুন মা হয় তবে কি করবে সে? সৎ মায়ের মতোই আচরণ করবে? আর আফাকের কথাও যেন কেমন আয়ুশির সাথে ভীষণ কর্কশ।

অনিন্দা চিন্তার ঘোর কাটিয়ে
‘ ওর আম্মু কোথায়? মানে কি হয়েছে উনার?

অনিন্দার প্রশ্নের জন্য যেন প্রস্তুত ছিলো না আফাক। তাই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আফাক। ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় চোখের দৃষ্টি। নিজেকে যথাসম্ভব ঠিক রেখে তাকায় আকাশের দিকে যেন সব প্রশ্নের উত্তর সেখানে লুকানো। আফাক তাকালেই তার উত্তর সে পেয়ে যাবে।

অনিন্দা আফাকের দিকে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে
‘ কি হয়েছে উনার? উনি কোথায়ই বা এখন?

আফাক আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে
‘ রুক্ষ মরুভূমিতে ঘাস হয়না। যেমন নরক স্বর্গোদ্যান হয়না।

অনিন্দা আফাকের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। তার প্রশ্ন তো এতো কঠিন ছিলোনা। সোজা কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে উনি। অনিন্দা উঠে দাঁড়াতেই আফাক এক লাফে অনিন্দার সামনে চলে আসে। যেন অনিন্দাকে কাঁচাই লবন,তেল, মসলা ছাড়া খেয়ে ফেলবে। অনিন্দা রীতিমত ভয় পাচ্ছে। কি এমন বলে দিল সে।

আফাক অনিন্দার অনেকটা কাছে এসে
‘ আয়ুর মা নেই। আপনি চাইলেই মা হতে পারেন। আয়ুর জন্য একজন ভালো মা চাই। আমি জানি আপনি এই বিয়েতে হ্যা-ই বলবেন। আসি।

অনিন্দা অবাকের তুঙ্গে উঠে যায় আফাকের কথা শুনে। এই বিয়েতে অনিন্দা হ্যা বলবে উনি ভাবলো কিভাবে? দ্বিতীয় বিয়ে তবু হতেই পারতো যদি এমন ব্যবহার না করতো। কিন্তু এরপরও এই বিয়ে অন্তত সম্ভব নয়।

হঠাৎ আয়ুশি অনিন্দাকে মাম্মাম মাম্মাম বলে ডেকে দৌড়ে রুমের ভিতরে আসে৷ ওর পিছনে অনিন্দার মা রুমানা বেগমও ছুটে এসে

‘ মেয়েটাকে আটকিয়ে রাখতে পারিনা তোর কাছে আসবে বলে কান্না করছিলো।

আয়ুশি অনিন্দাকে জড়িয়ে ধরতেই কেঁপে উঠে অনিন্দা। কেমন যেন একটা অনুভব হচ্ছে তার। এই বাচ্চার মা হতে পারতো সে তাই! নাকি অন্য কিছু! কেমন যেন একটা মায়া কাজ করছে ভিতরে।

অনিন্দা নিচু হয়ে বসতেই আয়ুশি অনিন্দার গালে ছোট্ট করে একটা চুমু দেয়। তারপর হাসি দিয়ে
‘ তুমি আমাল নতুন মাম্মাম হবে। কি মজা। তুমি আর আমি আর আমাল পাপ্পা একসাথে থাকবো। তুমি আমায় আদল করবে তো মাম্মাম? পাপ্পা বলে আমাল নতুন মা নাকি আমায় আদল করবে না।

অনিন্দার চোখে পানি চলে এসেছে আয়ুশির কথা শুনে। আচ্ছা আয়ুশির নতুন মা যেই-ই হোক ওকে আদর করবে তো নিজের মেয়ের মতো? কেমন একটা টান অনুভব হচ্ছে আয়ুশির জন্য। যেন আয়ুশি তার নিজেরই মেয়ে। যাকে অন্য একটা মায়ের কাছে যেতে দিবে।

অনিন্দার মা রুমানা বেগম অনিন্দার মাথায় হায় দিয়ে
‘ আমি এই মেয়েটার জন্য এই পাত্র পক্ষকে না করতে পারিনি রে মা। আমি জানি তুই আমার সাথে রাগ করবি কিন্তু এই বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে দেখ যদি কোন বাজে মেয়েকে আফাক বিয়ে করে এই মেয়েটার কি হবে? চাইলেই বাচ্চাটাকে ভালো ভাবে মানুষ করতে পারবি তুই। মা সবাই হতে পারেনা রে মা। জন্ম দিলেই মা হওয়ায় যায়না। মা হওয়ার জন্য মায়ের মতো মা হতে হয়, নাড়ির টান অনুভব করতে হয়। মা হওয়া খুব কঠিন। আমি তোকে অনেক ভালো ভাবে মানুষ করেছি আমি জানি তুই কারো প্রতি অবিচার করবি না। এই বাচ্চাটাকে তুই চাইলে একটা ভালো মা দিতে পারিস। আফাকও অনেক ভালো ছেলে। তোকে ভালো রাখবে ও। সবাই নিজের জন্য বাঁচেনা
অন্যকে ভালো রাখার জন্য হলেও বাঁচে।

অনিন্দা আয়ুশির মুখের দিকে তাকিয়ে আয়ুশির কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার তাকায় রুমানা বেগমের দিকে। উনি কি বুঝাতে চাইছে অনিন্দা তা খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছে, তাই বাহানা না করে,
‘ বাবা কি বলে?

রুমানা বেগম আয়ুশিকে ধরে
‘ তুই যা বলবি তা-ই।

আয়ুশিকে নিয়ে অনিন্দার মা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই অনিন্দা বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কি করা উচিত তার? কি করলে ভালো হবে? আয়ুশির জন্য মন খারাপ হচ্ছে তার। কিন্তু তাই বলে একটা বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করবে সে? অনিন্দারও তো কিছু স্বপ্ন ছিলো। সেগুলোর কি হবে? আর আফাক কেই যেন কেমন মনে হয় অনিন্দার। অবশ্য এই দু’বারের দেখায়ই তাকে বিচার করা ঠিক নয়।

কিছুক্ষণ পর অনিন্দা রুম থেকে বের হয়। সবাই বসে আছে অনিন্দার মতের জন্য। আফাকের সম্পর্কে সব খোঁজ খবর অনিন্দার মা আর মামা নাকি নিয়ে রেখেছে। তাই অনিন্দা রাজি হলেই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করবে।

অনিন্দা আয়ুশির দিকে তাকিয়ে
‘ আমি এই বিয়েতে রাজি মা।

অনিন্দার মামা অনিন্দার কথা শুনে শব্দ করে
‘ আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাও।

গভীর আলোচনার পর অনিন্দার বিয়ে আজকেই ঠিক করে সবাই মিলে। তাদের যেন তাড়া সইছে না পারলে এখনি অনিন্দাকে নিয়ে যাবে। অনিন্দাও কাউকে কিছু বলছে না। চুপচাপ আড়াল থেকে সব শুনছে সে। আজকে বিয়ে হয়ে গেলে আজকেই নিয়ে যাবে অনিন্দাকে অনুষ্ঠান দুদিন পর করবে দরকার হলে। বা অনিন্দাকে দু’দিন পর উঠিয়ে নিয়ে যাবে।

বিয়ের কাজ সম্পুর্ণ হবার পর অনিন্দা বললো সে চলে যাবে ওদের সাথে। বিয়ে যেহেতু হয়েই গিয়েছে, পরে গেলেই কি আর এখন গেলেই বা কি! অনিন্দার কথায় সম্মতি জানালো আফাক। কিন্তু রুমানা বেগম চেয়েছিলো অনিন্দাকে অনুষ্ঠান করে বিদায় দিতে। কিন্তু অনিন্দার কথায় আর কিছু বলেনি তিনি। অনিন্দার কান্না পাচ্ছে একে তো সব কিছু এতো জলদি হয়ে গিয়েছে। আবার কোথায় থেকে কি হয়েছে এখনো সেটাই বুঝতে পারছে না সে। কেমন একটা ঘোরের মাঝে যেন আটকে গিয়েছে মনে হচ্ছে, যার জন্য তার বোধ শক্তি লোপ পেয়েছে। কিন্তু কান্না পাচ্ছে বেশ এক মাত্র বড় বোন তার বিয়েতে আসেনি। অনিন্দার বাবাও রেগে আছে। সব কিছু অচেনা লাগছে যেন। সব অনুভুতিই অচেনা।

অনিন্দা ধীর পায়ে হেটে চলেছে তার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের দিকে। কত স্বপ্ন দেখেছে সে এই দিনটার। কিন্তু আজ সে দিন কোন রকম বার্তা ছাড়ায় এসে উপস্থিত হলো।

অনিন্দা আয়ুশিকে নিয়ে বাসার ভিতরে পা রাখতেই চমকে উঠে…

চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here