দ্বিতীয় অধ্যায় পর্ব -০৩

#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
#Part_3

অনিন্দা আয়ুশিকে নিয়ে বাসার ভিতরে পা রাখতেই চমকে ওঠে। ঘনকালো অন্ধকারে আচ্ছন্ন বাড়ি। বিদঘুটে অন্ধকার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে তারা।যেখানে নতুন বউ আসবে বলে কারো কোন আয়োজন নেই। মনে হচ্ছে আলো জ্বালানোর রসদ নেই। কেউ মনে করেনি আলোটুকু অন্তত জ্বালানোর প্রয়োজন।

অনিন্দা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে বুঝতে পারছেনা। কেমন একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়ে গিয়েছে সে! আফাক পিছন থেকে এসে সবগুলো লাইটের সুইচ অন করে দেয়।

ঝলমলে বাড়ি তবে ভীষণ অগোছালো। এখানে সেখানে আয়ুশির খেলনা পড়ে আছে। অনেক কাপড়চোপড়ও পড়ে আছে মেঝেতে। আফাক আয়ুশিকে কোলে নিয়ে অনিন্দার দিকে তাকিয়ে,
‘ এমন হুট করে আপনাকে নিয়ে আসবো ভাবিনি। দু’দিন ধরে কাজের আন্টিটা আসেনা। তাই একটু অগোছালো সব। ভিতরে আসুন।

অনিন্দা আফাকের পিছনে পা টিপে টিপে রওনা দেয়। এতো জিনিস নিচে পড়ে আছে, পা আটকে যাচ্ছে বার বার অনিন্দার। মনে হচ্ছে বড়সড় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসও হয়ে ছিলো এখানে। আর এখন পরিদর্শন করতে এসেছে অনিন্দা।

রুমে প্রবেশ করেতেই অনিন্দার মনে হলো তাদের পিছনে পিছনে কেউ আসেনি। এতো লোকজন ছিলো তারা কোথায় গিয়েছে? আর অনিন্দা যতদূর জানে আফাকের মা বেঁচে আছেন তাহলে উনিই বা সামনে আসলো না কেন? আফাকের কি কোন আত্মীয়স্বজন নেই, যে কেউ আসবে! বা ভাই বোন! কেউই তো নেই। বিষয়টা সত্যি অদ্ভুত। কেমন যেন লাগছে একটা অনিন্দার। সে কি জিজ্ঞেস করবে সবাই কোথায়? নাকি চুপ করে অপেক্ষা করবে। ঘুমিয়ে গিয়েছে হয়তো আফাকের মা। এমনটাও হতেই পারে।

আফাক আয়ুশিকে ফ্রেশ করে নিয়ে এসে
‘ আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর না হয় আমি যাবো।

অনিন্দা কথা না বাড়িয়ে হাত মুখ ধুতে চলে যায়। অনিন্দা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আফাক ঘরটা গোছানোর চেষ্টা করছে। আয়ুশিও তার বাবাকে হেল্প করার চেষ্টা করছে। তবে আয়ুশির হাত থেকে বার বার জিনিসগুলো পড়ে যাচ্ছে। দৃশ্যটা সত্যিই বেশ সুন্দর বাবা-মেয়ে কাজ করছে একসাথে। অনিন্দা তোয়ালেটা রেখে

‘আমার হয়ে গিয়েছে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আর আমি পরিষ্কার করছি সব। আপনার করতে হবেনা এসব।

আফাক হাত থেকে জিনিসগুলো রাখতে রাখতে,
‘ না আপনি কেন কাজ করবেন। আপনি নতুন বউ।

অনিন্দা মুচকি হেসে
‘ হ্যাঁ তবে অন্য কারোর নয় আপনারই। কাজেই আপনি কাজ করবেন আর আমি দাঁড়িয়ে তা দেখবো এটা হয়না। এতে মনে হবে আমি ব্যর্থ একজন স্ত্রী, সাথে নিরর্থক মা। আপনি যান আমি দেখছি।

আফাক আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অনিন্দা মুচকি হেসে আয়ুশিকে কোলে তুলে নেয়। তারপর কয়েকটা চুমু দিয়ে বিছানায় খেলনা দিয়ে বসিয়ে দেয়। এই বাচ্চাটার জন্যই সে আজ এইখানে। নাহয় আজকে হয়তো সে এখানে থাকতো না। মা না হওয়া সত্ত্বেও কেমন একটা মাতৃত্বের টান অনুভব করে অনিন্দা। আয়ুশিকে দেখলেই যেন ভালোলাগা কাজ করে তার। মা না হয়েও মা হওয়ার অনুভূতি বেশ। তবে অনিন্দা কি পারবে সত্যিই সত্যিকারের মা হতে? নাকি তার কোন কমতি থেকে যাবে! সবাই কি বলবে সৎমা আর কেমন দেখবে বাচ্চাকে! অনিন্দার ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে এসব ভাবতেই। সে সবকিছু দিয়ে হলেও আয়ুশির মা হবে। কোন ত্রুটি রাখবে না সে।

এই প্রথম স্বামীর বাড়িতে মনে হয় কোন মেয়ে বাসর রাতের বদলে বাড়ির কাজ করছে। সব মেয়েরই স্বপ্ন থাকে এইদিনটা নিয়ে তবে অনিন্দার যেন কোন আশাই ছিলো না। সে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে ফেলে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া খেলনাগুলো একটা জায়গায় জড় করে বাকি কাপড়চোপড় এক কোনায় রেখে দেয়।

আফকাও এতে সাহায্য করেছে অনিন্দাকে, নাহয় আরেকটু বেশি সময় লাগতো। এর মাঝে ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম করে আয়ুশিকে ফিডার বানিয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়ায় অনিন্দা।

সব কাজ শেষ করে বিছানায় গিয়ে বসে অনিন্দা। ক্লান্ত লাগছে তার। আফাকও বিছানার অন্যপাশে গিয়ে বসে।

‘ আমার দ্বিতীয় বিয়ে হলেও আপনার প্রথম। আবার প্রথম রাত আজ, তবু এতো কাজ করলেন অন্য মেয়ে হলে কিন্তু করতো না। অন্য সব মেয়ে কিন্তু বিয়েও করতো না।

অনিন্দা একটু চুপ থেকে
‘ জানি না তবে আয়ুশির মা হতে চাই আমি। ওর মা হয়ে যেহেতু এসেছি ওকে মায়ের অভাব বুঝতে দেবো না, এইটুকু কথা দিতে পারি।
তবে একটা কথা আপনি আমায় স্পষ্ট করে বলেননি আয়ুশির মা কোথায়? উনি কি বেঁচে আছেন? নাকি চলে গিয়েছেন?

অনিন্দা কথাগুলো শুনেই আফাকের মুখ কালো মেঘের মতো মলিন হয়ে যায়৷ চোখগুলো মুহুর্তেই ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। অস্পষ্টভাবে কিছু বলছে যা অনিন্দার কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। আফাক অনিন্দারকে আর কোন জবাব না দিয়ে আয়ুশির এক পাশে শুয়ে

‘ অনেক রাত হয়ে গিয়েছে শুয়ে পড়ুন। আমার সকাল সকাল মিটিং আছে রাত জাগলে উঠতে পারিনা সকালে আমি। আর আমার ঘুম খুব ভারী, ঘুমালে সহজে সজাগ হতে পারিনা। সকালে একটু ডেকে দেবেন। আর রাতে কিছু প্রয়োজন পড়লে কয়েকবার ডাক দেবেন।

অনিন্দা বুঝতে পারছে আফাক বলতে চায় না, আয়ুশির মায়ের ব্যপারে বা কিছু লুকাতে চাইছে! কিন্তু সেটা কি! এভাবে কথা কেন ঘোরায়? সবারই অতীত থাকতে পারে তাই বলে বলবে না কেন? কেন এই অতীত থেকে পালাতে হবে? অনিন্দা প্রশ্ন না বাড়িয়ে আয়ুশির পাশেই ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে৷
দুজনের মাঝখানে ছোট্ট আয়ুশি আরামে ঘুমোচ্ছে। সে এই জটিলতা বোঝেনা। বোঝে না বাস্তবতার নির্মমতা। যেখানে এতো কঠিন সময় চলছে এখন ওর। আফাক চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু পারছেনা। বার বার তন্নি আয়ুশির মায়ের চেহারা ভেসে উঠছে। যেন বার বার এসে বিরক্ত করছে আফাককে।

সকালে সবার আগে ঘুম ভেঙে যায় অনিন্দার। আয়ুশি গতকাল ক্লান্ত ছিলো আর দেরিতে ঘুমিয়েছিলো তাই ওঠেনি এখনো। অনিন্দা গতরাতে সবকিছু ভালো করে দেখতে পারেনি। তাই ফ্রেশ হয়ে বাড়িটা একটু দেখছিলো। সব জায়গায় আয়ুশি আর আফাকের ছবি। কোথাও অন্য কারো ছবি নেই এমন কি আয়ুশির মায়েরও ছবি নেই। অনেকগুলো ফুলের এবং অন্যান্য গাছ আছে বাড়িতে। আফাক হয়তো প্রকৃতি প্রিয় মানুষ। গাছের যত্ন নেয় ভীষণ। অনিন্দা আফাকের মাকে খুঁজছে। কোন একটা রুমে অবশ্যই হবে।

হঠাৎ একটা বৃহৎ রুমের সামনে এসে পা আটকে যায় অনিন্দার ভীষণ পচা সেই গন্ধ। যেন মানুষ পচে গিয়েছে……..

চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here