দ্বিতীয় অধ্যায় পর্ব -০৪

#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha
#Part_4

হঠাৎ একটা বৃহৎ রুমের সামনে এসে পা আটকে যায় অনিন্দার, ভীষণ পচা গন্ধ। যেন মানুষ পচে গিয়েছে কোথাও। কিন্তু গন্ধটা ঠিক কোথায় থেকে আসছে বুঝতে পারছে না সে। তবে অনেক বেশি লাগছে। গন্ধে বমি চলে আসবে এমন অবস্থা। অনিন্দা নিজের কাপড়ের এক কোনা মুখে আর নাকে ঠেসে ধরে। তারপর আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কোথায় থেকে গন্ধ আসছে! কিন্তু কোথাও কিছু নেই। গন্ধের উৎস না পেয়ে অনিন্দা ভাবছে, তাহলে গন্ধ কোথায় থেকে আসছে?

অনিন্দার চোখ রুমের দরজার দিকে যায় ভেতর থেকে কোন গন্ধ আসছে না তো? কিছুই তো রাতে দেখেনি সে। অনিন্দা একটু একটু করে দরজার কাছে যাচ্ছে ভয় নিয়ে। খুলবে কিনা দরজা বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অনিন্দা দরজা খুলতে যাবে তখনি পিছন থেকে আফাক এসে অনিন্দার কাঁধে হাত রেখে

‘ অনিন্দা

অনিন্দা চমকে যায় আফাক হঠাৎ করে তার কাঁধে হাত রেখে ডেকে ওঠায় । অনিন্দা বুকে থুথু দেবে এমন সময় আফাক

‘ আয়ু উঠে গিয়েছে আপনি ওকে একটু ফ্রেশ করে দেবেন? আমার একটু তাড়া আছে আজকে।

অনিন্দা থতমত চেহারা নিয়ে
‘ জ জ্বী। আমি এখনি যাচ্ছি।

আফাক অনিন্দার চলে যাওয়া পথে চিন্তাযুক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনিন্দা এখনি জেনে যেতো। বিশাল বড় কিছুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে আফাক। আফাক দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকায় ওই রুমের দিকে তারপর গম্ভীরমুখে চলে যায় রুমে।

আয়ুশিকে ফ্রেশ করে দিয়ে অনিন্দা নাস্তা বানানোর জন্য রান্না ঘরে যায়৷ কাল রাতে রান্নাঘরও পরিষ্কার করেছে সে। তার নিজের হাতেই সবকিছু সাজিয়ে রেখেছে তাই কোথায় কি রাখা জানে অনিন্দা।

আফাককে চা করে দিয়ে অনিন্দা রুটি আর আলু পোস্ত করেছে সাথে তিনটে ডিম ভেজে নিয়েছে। খাবার টেবিলে রেখে সে আফাককে ডেকে , আয়ুশিকে চেয়ারে বসিয়ে খাওয়াতে শুরু করে। আফাক এসে বসতেই অনিন্দা খাবার দিতে নিলেই আফাক হাত বাড়িয়ে,

‘ আমি নিতে পারবো আপনি আয়ুকে খাওয়ান। আর আপনাদের বাড়ি থেকে সম্ভবত আপনার মা-বাবা আসবে আমাদের নিতে আপনি আয়ুকে নিয়ে চলে যাবেন। আমি অফিস থেকে আপনাদের ওখানে চলে যাবো। অফিসে অনেক কাজের চাপ এখন৷

অনিন্দা আফাকের কথায় মাথা নাড়িয়ে কেবল সায় দিচ্ছে কিছু না বলে৷ মনে হচ্ছে অনিন্দা কিছু নিয়ে ভাবছে৷ অনিন্দা কাঠের পুতুলের ন্যায় এমন মাথা ঝাকাচ্ছে দেখে আফাক এক টুকরো রুটি মুখে পুরে দিয়ে আন্দাজ করেই

‘ আপনি কিছু বলবেন?

অনিন্দা এবারো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়। আফাক খাবারে মনোযোগ দিয়ে
‘ হুম বলুন।

আসলে আমি আসার পর থেকেই লক্ষ্য করছি এই বাড়িতে আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই? বিয়ে বা পাত্রী দেখার উপলক্ষেও কেউ আসেনি? আর আপনার…..

অনিন্দা তার পুরো কথা বলার আগেই বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে,

আফাক অনিন্দার দিকে তাকিয়ে
‘ আমি দেখছি।

দরজার ওপারে কে বুঝার চেষ্টা করছে অনিন্দা। আফাক কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে। আফাক ভিতরে আসতে নিলেই তার পিছনে পিছনে অর্ধবয়ষ্ক একজন মহিলা ভিতরে আসতে শুরু করে। আফাক অনিন্দার সামনে এসে দাঁড়িয়ে

‘ উনি মরিয়ম আন্টি। তোমায় সহযোগিতা করবে। দু’দিন ছুটিতে ছিলো।

অনিন্দা লক্ষ্য করলো তিনি বাসার চারপাশে চোখ বুলাচ্ছেন। যেন আজকেই বাসায় প্রথম এসেছেন আর সবকিছু পরখ করে দেখছেন।
হয়তো সবকিছু গোছানো দেখে একটু অবাক হয়েছেন তিনি। যেমন অনিন্দা অবাক হয়েছিলো অগোছালো দেখে। কিন্তু অনিন্দার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে মহিলাটা, যা খুবই রহস্যময় লাগছে অনিন্দার। সাথে কিছুটা ভয়ও লাগছে কেন যেন।

অনিন্দা ভাবনাগ্রস্ত হয়েই
‘ কেমন আছেন?

মহিলাটি হেসে
‘ জ্বী ভালো আছি। মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। আফাক বাবার পছন্দ আছে।

এদের কথার মাঝে কয়েকজন লোক এসে ঢুকলো বাসায়৷ মেইন ডোর খোলা থাকায় সরাসরি এসে গিয়েছেন ওরা। একটা লম্বা চওড়া ফর্সা ছেলে হঠাৎ করে এসে আফাককে জড়িয়ে ধরে
‘ কেমন আছিস ভাই?

আফাকের মুখ কেমন মলিন হয়ে গিয়েছে লক্ষ্য করলো অনিন্দা। কিন্তু মুহুর্তেই কেন এমন হয়েছে তা অজানা। আফাক জোর করে মুখে হাসির রেখা টেনে
‘ ভালো আছি।

এর মাঝেই আফাক তার মাকে দেখে ওনাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে
‘ কেমন আছো আম্মু? আব্বু আসেনি?

আফাকের মা হালিমা সাজ্জাদের চোখে তৃপ্তির পানি। যেন তার আজ অনেক দিনের চাওয়া পূরণ হয়েছে। ছেলের মুখে হাত বুলিয়ে
‘ এখন হয়তো ভালো থাকবো। তোর বউ এসেছে, এখন কি ভালো না থেকে পারবো!

আয়ুশি তার দাদিমাকে পেয়ে খাবার রেখে দৌড়ে তার কাছে ছুটে যায় দাদিমা দাদিমা বলে। হালিমা সাজ্জাদ আয়ুশিকে নিয়ে চোখের পানি মুছে অনেকগুলো চুমু দেয়।

অনিন্দা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের মিলনমেলা দেখছিলো। তার বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে ওরা আফাকের পরিবার। তাই চুপ করে ওদের দেখছে একপাশে দাঁড়িয়ে। হালিমা আক্তার অনিন্দার কাছে এসে তার গাল ছুঁয়ে

‘ মাশাআল্লাহ। আমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে এতোদিনে৷

হালিমা সাজ্জাদ তার গলা থেকে চেইন খুলে পড়িয়ে দেয় অনিন্দাকে। অনিন্দা শুধু নিরব হয়ে মুখে হাসির রেখে টেনে যাচ্ছে। কিন্তু কেন যেন অনেক হিসেব মিলাতে পারছে না সে।

হালিমা সাজ্জাদ আবার অনিন্দার মাথায় হাত দিয়ে
‘ মা তুমি আমার ছেলে আর নাতনিকে দেখে রেখো।

সেই লম্বা চওড়া ফর্সা ছেলেটা এগিয়ে এসে অনিন্দার দিকে হাত বাড়িয়ে
‘ হাই ভাবী৷

অনিন্দা কি করবে বুঝতে না পেরে সামাজিকতা রক্ষার্থে তার হাতও বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
‘ হাই।

আফাক কেন যেন অনিন্দার দিকে কেমনভাবে তাকালো। যেন এখনি অনিন্দার হাত সরিয়ে নেবে ওর ভাইয়ের হাত থেকে। চোখে রাগ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। অনিন্দা বুঝতে পারলো বিষয়টা আফাকের ভালো লাগেনি। তাই চটজলদি তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে
‘ আপনারা সবাই বসুন আমি নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসছি।

হালিমা সাজ্জাদ অনিন্দাকে ধরে
‘ কিছু করতে হবে না মা এখন।

অনিন্দা আফাকের মায়ের দু’হাত ধরে মুচকি হেসে
‘ শুধু রুটি বানাবো। তিনজনের জন্য রুটি বানিয়েছিলাম। তরকারি আছে রুটি বানালেই হবে।

অনিন্দা রান্না ঘরে যেতেই মরিয়ম আন্টিও রান্না ঘরে যায়৷ অনিন্দা ওনাকে দেখে
‘ আমি বানিয়ে নিতে পারবো আন্টি। আপনার হেল্প লাগলে আমি ডাকবো।

উনি মনে হয় অনিন্দার কথা বুঝতে পারেনি কেমন করে যেন দেখছে অনিন্দাকে। মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ভীতি ওনার। অনিন্দা বিষয়টা অবজ্ঞা করার চেষ্টা করে আবারো বললো
‘ আন্টি আপনার কিছু করতে হবে না এখন। আপনি একটু আয়ুশিকে দেখুন।

উনি না গিয়ে অনিন্দার একটু কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অনিন্দা কাজ রেখে থমকে দাঁড়ায়। উনার দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে
‘ কিছু বলবেন?

উনি নিস্তেজ হয়ে কাচুমাচু করে
‘ হ্যাঁ মা। তুমি ওই আফাক বাবার ভাইয়ের থেকে দূরে দূরে থেকো। নয়তো পরে সমস্যা হতে পারে। আর আফাক বাবাও একটু সন্দেহপ্রবণ মানুষ যার জন্য আগের ব

মরিয়ম আর কিছু বলার আগেই আফাক…….

চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দেরি হবার জন্য দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here