#দ্বিতীয়_বসন্ত-২৫
Zannatul Eva
আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমোবো। আর আপনি কিন্তু…… কথাটা বলে শেষ করার আগেই মাহির বলল, লাইট অফ করবো না তাইতো?
রুহি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
মাহির বলল, ভয় নেই আমি লাইট বন্ধ করবো না। তুমি ঘুমাও।
আর আপনি?
তোমাকে দেখবো।
কী?
ইয়ে মানে ডায়রিটা নেড়েচেড়ে দেখবো। আর কিভাবে দাদাভাই আর দাদিজানের আলাপ করানো যায় সেটা নিয়েও তো ভাবতে হবে।
রুহি শান্ত গলায় বলল, আমিও ঘুমাবো না৷
কেনো?
আপনি একা একা বোর হবেন। আর আপনার সাথে আমাকেও তো প্ল্যান করতে হবে। আচ্ছা বলুন তো ওনাদের দুজনকে কিভাবে দেখা করাই?
প্রথমত দাদাভাইকে ডায়রির সমস্ত ঘটনা খুলে বলতে হবে। তারপর কোনো ভাবে দুজনের দেখা করাতে পারলেই ব্যাস আর কোনো চিন্তা নেই।
আচ্ছা আমি গিয়ে দেখে আসি ছোট চাচ্চু কী করছে।
রুহি যেতে নিলেই মাহির রুহির হাত ধরে বলল, তাড়িয়ে দেয়ার জন্য এতো তাড়া?
আপনি বুঝতে পারছেন না দাদিজান যদি কোনো ভাবে জানে আপনি এ বাড়িতে এসেছেন তাহলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে। আমাদের এখন কোনো ঝামেলা বাঁধালে চলবে না৷ তারপর সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে।
তাহলে বলছো আমাকে তাড়ানোর কোনো ইচ্ছে নেই তোমার? তুমিও চাও আমি আজকে তোমার কাছে মানে এখানে থাকি। এটাই কী ধরে নিবো তাহলে আমি?
রুহি রাগি স্বরে বলল, আপনি না বড্ড বেশি প্যাঁচালো মানুষ। একটা সাধারণ বিষয়কে ঘুরিয়ে পেচিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। চুপ করে বসে থাকুন সোফায়। আমি একটু বাইরেটা দেখে এসে তারপর দরজা লাগিয়ে দিচ্ছি।
ওকে।
রুহি পা টিপে টিপে রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো, আজমল খান নেই। দরজাও বন্ধ করা।
মনে হয় ছোট চাচ্চু ঘুমোতে চলে গেছে। বাবাহ হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
এরপর রুহি নিজের রুমে ফিরে এলো।
মাহির জিজ্ঞেস করলো, পাহারাদার এখনও লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছে চোর জামাইকে ধরার জন্য?
রুহি নিজের অজান্তেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল, উপায় নেই। আজকের রাতটা আপনাকে এখানেই কাটাতে হবে।
কথাটা বলেই রুহি থমকে দাঁড়ালো।
এ কী! আমি মিথ্যে বললাম কেন? আমার তো এখন মাহিরকে চলে যেতে বলার কথা। এতোক্ষন আমি সেটাই চাইছিলাম। কিন্তু ছোট চাচ্চু না থাকা সত্ত্বেও আমি কেনো বললাম মাহিরকে থাকার কথা! সত্যিটা কেনো বলতে পারলাম না আমি? তবে কী আমি চাই মাহির আমার কাছে থাকুক। কেনো জানিনা আজ হঠাৎ করেই মাহিরের সঙ্গ আমার ভালো লাগছে। কী হয়েছে আমার?
উফফ কী মশা তোমাদের বাড়িতে। তোমার বাবা কী সব মশাদের ইনভাইট করে নিয়ে এসেছেন তার জামাই আসবে বলে?
রুহি ভ্রু নাচিয়ে বলল, হ্যাঁ বাবা তো খুব জানতো তার জামাই লুকিয়ে লুকিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চুরি করতে আসবে।
মাহির হেসে বলল, হাউ ফানি!
দাঁড়ান আমি মশারী টানিয়ে দিচ্ছি। আপনি খাটে ঘুমান আমি সোফায় শুয়ে পরবো।
তোমার কী আমাকে অত্যাচারী স্বামীদের মতো মনে হয়?
মানে?
তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে মশার কামড় খেতে দিয়ে নিজে আরামে মশারীর ভেতরে একা একা শান্তিতে ঘুমোবো? ঘুমোলে দুজন একসাথে ঘুমোবো।
কী বললেন?
না মানে আমি এতোটাও খারাপ নই যতোটা তুমি ভাবো।
দাঁড়ান আমি মশার কয়েল জ্বালাচ্ছি।
রুহি রুমের ভেতরে এদিক ওদিক হাঁটছে। মাহিরের জন্য সে মশার কয়েল জ্বালাচ্ছে। মাহির অদ্ভুত দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলছে, আজকে রুহিকে একদম বউ বউ লাগছে। আমার জন্য রুহি মশার কয়েল জ্বালাচ্ছে। নিজের ভেতরেও একটা হাসবেন্ড হাসবেন্ড ফিল হচ্ছে। ওহ শাটআপ মাহির! নিজের মুখটা বন্ধ রাখ। প্রেমে পড়ে তোর মাথাটা একদম খারাপ হয়ে গেছে। তোর জন্য একটা মশার কয়েল জ্বালিয়েছে বলেই এতো খুশিতে লাফাস না। রুহি তোকে ভালোবাসলে ঠিকই তোর সাথে ফিরে যেতো। এতো শর্ত দিতো না। এরকম হ্যাংলামো করা তোকে মানায় না। তুই মাহির। তোর জন্য কত মেয়েরা পাগল ছিল। আর তুই কি না একটা মেয়ের জন্য রাত বিরাতে চোরের মতো লুকিয়ে আছিস। যাকে দেখলে কলেজের জুনিয়রা রীতিমতো ভয়ে কাঁপতো। প্রেমে পড়লে বোধহয় সব ছেলেদেরই এমন দশা হয়! কী জানি! হয়তো।
মশার কয়েল জ্বালানোর সময় রুহি কয়েলের আগুনে হাতে ছ্যাকা খেলো। রুহি আহহ্ করে উঠতেই সাথে সাথে লোডশেডিং হয়ে গেল। হাত থেকে দিয়াশলাইটাও পরে গেছে।
মাহির সোফা থেকে উঠে রুহির কাছে এসে দাঁড়ালো। মাহিরের পায়ের সাথে লেগে দিয়াশলাইটা খাটের তলায় চলে গেল।
চারদিক অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। রুহি রাগান্বিত স্বরে বলল, লোডশেডিং হওয়ার আর সময় পেলো না!! বিরক্তিকর। আমার ফোনটা কোথায় রেখেছি! অন্ধকারে তো কিছু খুঁজেও পাচ্ছি না।
মাহির বলল, শীট! আমার ফোনের চার্জ শেষ। কিন্তু তোমার হাতে তো দিয়াশলাই ছিল।
দিয়াশলাইটা তো হাত থেকে এখানেই পড়ে গেল। কই খুঁজে পাচ্ছি না তো। অন্ধকারে খুঁজবো কী করে!!
ইতোমধ্যেই একটা তেলাপোকা উড়ে এসে রুহির গায়ে বসতেই রুহি ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
মাহির বলল, কী হয়েছে! চেঁচাচ্ছো কেনো? তোমার চেঁচানোর শব্দে এবার বাড়ি সুদ্ধ সব জেগে চলে আসবে।
একটা মেয়ের গায়ে তেলাপোকা উড়ে এলো আর আপনি তাকে বাঁচাতে পারলেন না!! কেমন পুরুষ আপনি?
তেলাপোকার হাত থেকে বাঁচাবো! ওয়েট ওয়েট মুভিতে দেখেছি তেলাপোকা দেখলেই হিরোইন হিরোকে জড়িয়ে ধরে৷ তারপর সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু তুমি তো সেটা করলে না। উল্টো এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছো। এই জন্যই মা বলে, জীবন সিনেমা নয়। আমার কপালটাই পোড়া। নিজের শ্বশুরবাড়ি এলাম চোরের মতো লুকিয়ে। নিজের বউ ভয় পেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছে। কী সোনায় বাঁধানো কপাল আমার!!
এমন সময়ই কারেন্ট চলে এলো। রুহি একটু লজ্জা পেলো। বলল, আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। সকালে তারাতারি উঠতে হবে। আপনিও ঘুমিয়ে পরুন।
_________________
গভীর রাত। রুহি ঘুমোচ্ছে। মুখের উপর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে। মাহির অপলক দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে বলল, মেয়েদের ঘুমন্ত চেহারায় এতো মায়া কেনো থাকে? বোধহয় পৃথিবীর সমস্ত মায়া রুহির ঘুমন্ত চেহারার উপর উপচে পরছে। কতটা নিষ্পাপ লাগছে রুহিকে।
মাহির আস্তে আস্তে রুহির পাশে গিয়ে বসলো। হাত দিয়ে রুহির মুখের উপর থেকে এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দিলো।
রুহি চোখ বন্ধ করে আছে ঠিকই কিন্তু ঘুমোয়নি। মাহিরকে সে ভালোবাসে কি না জানে না। তবে মাহিরের স্পর্শে তার খারাপ লাগছে না। খারাপ লাগবেই বা কেনো? মাহির তো তারই স্বামী।
রুহি মনে মনে বলল, মাহির তো চাইলেই আমার উপর অধিকার খাটাতে পারতো। কিন্তু ও তো তা করেনি৷
আজকের পর রুহির মাহিরের প্রতি আরও এক ধাপ সম্মান বেড়ে গেলো।
এই মানুষটা কী আমার মতো একটা মেয়েকে ডিজার্ব করে! কী আছে আমার? গা ভর্তি কলঙ্গ।
নিজেকে মাহিরের অযোগ্য মনে করে বলেই রুহি মাহিরকে এড়িয়ে চলে।
_________________
ভোর হয়ে আসছে। মাহির রুহির পাশেই বসে ছিল সারা রাত। রুহির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, খুব শীঘ্রই আমার অপেক্ষার অবসান ঘটবে। কে জানে আজই হয়তো সেই দিন।
রুহিকে ঘুম থেকে তুলতে ইচ্ছে করছে না। একটু পরেই ভোর হয়ে যাবে। তাই অন্ধকার থাকতে থাকতেই মাহির ডায়রিটা নিয়ে বেরিয়ে পরলো
_________________
তালেব আহমেদ নিজের ঘরে বসে জমিজমার কাগজপত্র দেখছিলেন এমন সময় মাহিরের আগমন হলো। মাহির হালকা কেশে ভয়ে ভয়ে বলল, বড় দাদাভাই তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।
তালেব আহমেদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই মাহিরের হাতে সেই ডায়রিটা দেখে অবাক হয়ে গেলেন।
চলবে……