দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -৩০ ও শেষ

#দ্বিতীয়_বসন্ত-৩০(শেষ অংশ)
Zannatul Eva

বিয়ে বাড়ির আমেজে সবাই মেতে উঠেছে। সবার মনে কত আনন্দ। শুধু মাহির ছাড়া সবার মুখেই প্রাণোচ্ছল হাসি। মাহির ভাবলো এখনি তাকে পালাতে হবে। যে করেই হোক আজ ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। রুহি ছাড়া অন্য কারো সাথে সংসার করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই এখন যার যার মতন ব্যস্ত। এই সুযোগেই পালাতে হবে।

সবটা প্ল্যান করে নিলো মাহির। পেছনের দরজা দিয়ে ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে সবার নজর এড়িয়ে পালিয়ে গেল।

নিজের বিয়ের সাজ নিজেই কমপ্লিট করলো রুহি। পার্লারের ভারী মেকআপ লুক তার একমদই পছন্দ নয়। নিজে যতটুকু পেরেছে সেজেছে। রুম্পাও হেল্প করেছে। তবে পার্লারে যারা করা মেকআপ করে বউ সাজে তাদের থেকে কোনো অংশে কম সুন্দর লাগছে না রুহিকে। সাদামাটা একটা বউয়ের সাজ কিন্তু দেখলে কেউই চোখ ফেরাতে পারবে না৷ লিপস্টিকটা লাগিয়ে নিয়ে পুরো সাজটা কমপ্লিট করে রুম্পাকে বলল, দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে?

তবে সামনে ফিরে যাকে দেখলো এই সময় তাকে দেখার জন্য রুহি একদমই প্রস্তুত ছিল না।

মাহির! তুমি এখানে? এখন! কিভাবে আসলে তুমি?

রুহির মাথার মধ্যে প্রথমে একটা চক্কর দিলো মাহিরকে দেখার পর। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, তুমি এখানে কী করছো? তোমার না আজ বিয়ে?

চুপ! একদম চুপ!! কোনো কথা না৷ সোজা আমার সাথে চলো।

কোথায় যাবো? কী হচ্ছে টা কী এসব!!

আমি এখন তোমাকে নিয়ে পালাবো। এখান থেকে সোজা ঢাকায় যাবো আমরা। তারপর সেখানে গিয়ে আমাদের বিয়ে হবে।

বিয়ে হবে মানে? কয়বার বিয়ে হবে আমাদের? ইয়ে মানে আমরা তো ডিভোর্সি।

আমি আমার বউকে যতবার ইচ্ছে বিয়ে করবো। তোমার কোনো সমস্যা আছে?

কিন্তু আমার কথাটা তো শোনে………

পুরো কথা বলার আগেই মাহির রুহির মুখের সামনে স্পে করতেই রুহি সেন্সলেস হয়ে গেল।

মাহির রুহির কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, সরি।

ওদিকে সারা বাড়ি খুঁজেও মাহিরকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই টেনশনে পরে গেল। গেলো কোথায় ছেলেটা!!

তালেব আহমেদ বললেন, ওকে খুঁজে লাভ নেই। ও চলে গেছে।

সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোথায় গেছে?

পালিয়েছে। আমি নিশ্চিত ও ব্যাটা ঢাকায় পালিয়েছে।

রহিদের বাড়িতেও হুলুস্থুল পরে গেলো। কোথায় পাওয়া যাচ্ছে না রুহিকে। একমাত্র রুম্পাই জানে রুহি কোথায় আছে। কিন্তু দাদিজানের ভয়ে এ কথা বলার মতো সাহস তার নেই যে সেই রুহিকে নিয়ে মাহিরকে পালাতে সাহায্য করেছে। কিন্তু সবাইকে চিন্তা করতে দেখে রুম্পার ভীষণ খারাপ লাগছে।

তালেব আহমেদ মাহিরকে ফোন করেই চলছে। একাধারে কয়েকবার ফোন করার পরও মাহির ফোন তুললো না।

ওদিকে সায়েদা তালেব আহমেদকে ফোন করে বললেন, রুহিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তালেব আহমেদও অবাক হয়ে বললেন, এতো ভেবে আর লাভ নেই। মাহিরই রুহিকে নিয়ে পালিয়েছে।

সায়েদা চমকে উঠে বলল, কী!! মাহির রুহিরে নিয়া পালাইছে? আপনি কেমনে জানলেন?

তালেব আহমেদ ফোন কেটে দিয়ে বললেন, হ্যাঁ রে তামজিদ! তোর ছেলে শেষ পর্যন্ত নিজের বউকে নিয়েই পালিয়ে গেল!! মানে ওকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে তো এখন আমরাই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।

মাহিরের বাবা তামজিদ আহমেদ বললেন, এখন তাহলে কী করবেন চাচাজান?
____________________

রুহির জ্ঞান ফিরতেই চমকে উঠে ঝাঁঝালো গলায় মাহিরকে বলল, আমরা কোথায়!!

আমরা এখন ঢাকায় আছি।

ঢাকায়!

হুম।

তোমার কী মাথায় কিছু নেই নাকি! নিজের বিয়ের দিন নিজেরই বউকে নিয়ে কেউ পালায়!!

মাহির প্রচন্ড অবাক হয়ে বলল, মানে কী?

মানে হচ্ছে সবাই মিলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলো। মানে আমার বিয়েটা তোমার সাথেই হচ্ছে। দাদাভাই আর দাদিজান মিলে এই প্ল্যান করেছিলো। সবটা তুমি ভেস্তে দিলে। এখন সবাই কী ভাববে! ছিঃ…….

মাহির মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, তার মানে সবাই মিলে আমাকে বোকা বানাচ্ছিলো! আর আমি বুঝতেও পারলাম না!!

শুধুই কি বলি আমি, সারাদিন সিগারেট খাওয়া আর মারপিট করা ছাড়া কিছুই জানেনা। এখন আবার নিজের বিয়ে করা বউকে নিয়েই পালাচ্ছে।

বিয়ে করা বউ! আমাদের না ডিভোর্স হয়ে গেল?

ঘোড়ার ডিম হয়েছে। এমন মাথা মোটা বর জুটেছে আমার কপালে। ডিভোর্স কেনো হবে! ওইটা ডিভোর্স পেপার ছিল না। মানে কাগজে সই করার আগে তো অন্তত মানুষ একটাবার চোখ বুলিয়ে নেয় নাকি? সত্যি তুমি আসলেই একটা হাঁদারাম…….

মাহির ভীতু স্বরে বলল, এখন কী হবে?

ইতোমধ্যেই মাহিরের ফোন বেজে উঠলো।

দাদাভাই ফোন করেছে।

রুহি বলল, ফোনটা ধরো তাড়াতাড়ি।

ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে তালেব আহমেদ বললেন, হতচ্ছাড়া শেষ পর্যন্ত নিজের বউকে নিয়েই পালিয়ে গেলি! আরে তোর জন্য কত বড় সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছিলাম। সবটা ভেস্তে দিলি। এখন কি তুই নাতবউকে নিয়ে ফিরে আসবি নাকি আমরা আসবো তোদের কাছে?

রুহি পাশ থেকে বলল, বলো যে ওনাদের আসতে হবে না। আমরাই যাবো।

মাহির বলল, আমরা ফিরে আসছি। সরি বড় দাদাভাই। ভুল হয়ে গেছে।

ঠিক আছে ঠিক আছে। নাতবউকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।

আচ্ছা তুমি এতো বোকা!! দেখে তো বোঝার উপায় নেই সেটা।

কী করবো বলো! তুমি, তোমরা সবাই মিলে আমাকে বোকা বানালোর জন্য এতো আয়োজন করছিলে তাই আমিও একটু বোকা বনে গেলাম।

আচ্ছা সত্যিই যদি আমার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যেতো?

হতে দিলে না হতো। তোমাকে পালাতে দিলে না পালাবে! দেখলে না কিভাবে তোমাকে তুলে নিয়ে এলাম। এখনও বলবে আমি বোকা?

উমমম বেশি না একটু বোকা।
বলেই রুহি ফিক করে হেসে ফেললো।

আর কখনও আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেলে কি………

রুহি মাহিরের আঙুল আঙুল রেখে বলল, না না আমি আর পালাচ্ছি না। এই হাত ধরলাম। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আর ছাড়ছি না।
_________________

অতঃপর গ্রামে ফিরে মাহির আর রুহির ধুমধাম করে বিয়ে হলো। তবে এখনও আরেকটা কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে।

রুহি বলল, আরও একটা বিয়ে দিতে হবে।

সবাই অবাক হয়ে বলল, কাদের বিয়ে হবে আবার?

রুহি আর মাহির একসাথে বলে উঠলো, দাদাভাই আর দাদিজানের বিয়ে।

তালেব আহমেদ এবং সায়েদা বেগম চমকে গেলেন।

মাহির বলল, শুধু তোমরাই সারপ্রাইজ দেবে ভেবেছো?

এক সাথে দুটো বিয়ে সম্পন্ন হলো। তালেব আহমেদ এবং সায়েদার জীবনেও দ্বিতীয় বারের মতো বসন্ত এলো।
_________________

বিয়ের পর সুখে শান্তিতে দিন কাটতে লাগলো রুহি এবং মাহিরের। দুজনেই গ্র্যাজুয়েন কমপ্লিট করে যার যার মতো কাজ শুরু করলো। মাহির তার বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছে আর সাথে চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে। রুহি মাহিরের অনুপ্রেরণায় নতুন একটা সংস্থা গড়ে তুলেছে। যেখানে ধর্ষিত মেয়েদেরকে মেডিটেশন করানো হয়। তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে এনে নতুন করে আলোর পথ দেখানো হয়৷ তাদেরকে ডিপ্রেশন থেকে ফিরিয়ে এনে নতুন ভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগায় রুহি। রুহির সাথে আরও অনেক মেয়ে কাজ করে এখানে। যারা একটা সময় ধর্ষনের পর মৃত্যুকে বেছে নিতে চেয়েছিলো। তারাও এখন এমন আরও অনেক ধর্ষিত মেয়েদের অনুপ্রেরণা। তবে এর সাথে সাথে রুহি ধর্ষনের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ায়। মেয়েরা যাতে নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হয়। সে বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ দেয় রুহি।

রুহির স্বপ্ন একদিন পৃথিবী থেকে ধর্ষন শব্দটা উঠে যাবে। প্রতিটা মেয়ে নিরাপদে বাঁচতে পারবে প্রান ভরে। সেদিন হয়তো রুহির সমস্ত কষ্ট সার্থক হবে।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here