দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -২৯

#দ্বিতীয়_বসন্ত-২৯
Zannatul Eva

কী হয়েছে তোমার রুহি! হঠাৎ করে এমন কী হলো যার জন্য এখন আমাদের দুজনকে ডিভোর্স দিয়ে সারা জীবনের জন্য আলাদা হয়ে যেতে হবে? আমাকে বলো তোমাকে কে কী বলেছে। তুমি শুধু একবার বলো আই প্রমিজ ইউ রুহি আমি তোমাকে তুলে নিয়ে আসবো। তুমি আমাকে খুব ভালো করেই চেনো।

চিনি বলেই ডিভোর্স দিতে চাইছি। আপনিও তাই করবেন। আর কোনোদিনও আমাকে ফোন করবেন না।

একথা বলেই রুহি ফোন কেটে দিলো। তারপর ডিভোর্স পেপারেও সাইন করে দিলো।

ওদিকে মাহিরের জন্যও পাত্রী ঠিক করেছেন তালেব আহমেদ। মাহির ডিসিশন নিয়েছে সে এবার ঢাকায় ফিরবে। এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে চায় না সে। যার জন্য থাকবে সেই তো তার জীবনে থাকতে চাইছে না। তাহলে শুধু শুধু এখানে থেকে কী লাভ!

ঢাকায় যাওয়ার জন্য জামাকাপড় গোছাচ্ছিলো মাহির৷ এমন সময় তালেব এবং এসে বললেন, কোথায় যাচ্ছো?

ঢাকায় ফিরছি।

আমি তোমার জন্য পাত্রী দেখেছি। আগামীকাল তোমার বিয়ে। এখন তোমার কোথাও যাওয়া হবে না। ব্যাগপত্র রেখে দাও। ও হ্যাঁ ভালো কথা, রুহি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে৷ এবার তুমিও সাইন করো।

মাহির প্রচন্ড রাগি গলায় বলল, আমি সাইন করবো না। আর বিয়ে! কে বিয়ে করবে কালকে? আমি তো এখানেই থাকছি না।

চুপ করো বেয়াদ!! প্রচন্ড জোরে চেচিয়ে উঠলেন তালেব আহমেদ। এরপর বুকে হাত দিয়ে বিছানায় বসে পরলেন। বললেন, এ বয়সে আমাকে আর কষ্ট দিস না। আমি তোর ভালোই চাই। যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি। তুই একবার পাত্রীর মুখটা দেখ কী সুন্দর! এই দেখ আমার কাছে ফটো আছে। ঘটক সাহেব এসে দিয়ে গেল আমাকে। দেখ দেখ কী সুন্দর মুখখানা।

মাহির মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। একবারের জন্যও পাত্রীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখলো না।

তালেব আহমেদ বললেন, এখন দেখছিস না কিন্তু বিয়ের পর থেকে সারাজীবন শুধু বউয়ের মুখের দিকেই হা করে তাকিয়ে থাকবি এই আমি বলে দিলাম। আমার কথা মিলিয়ে নিস।

মাহির মোবাইলটা হাতে নিয়ে রুহিকে অনেকবার ফোন করার চেষ্টা করলো। কিন্তু রুহির ফোনটা সুইচড অফ বলছে।

তালেব আহমেদ বললেন, ফোন তুলবে না। ফোন করে লাভ নেই। শুনলাম তার দাদিজান নাকি তার বিয়ে ঠিক করেছে। দেখো কত সহজে তোমাকে ভুলে গেল। ও ঠিকই ওর দাদিজানের কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল। তাহলে তুমি কেনো তোমার দাদাভাইর কথায় বিয়ে করতে পারছো না!!

মাহির রেগেমেগে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিলো। সাইন করে দিয়েই হুরমুর করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

রুহিদের বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। এক্ষুনি সবাই মিলে বিয়ের শপিং করতে বেরোবে। দাদিজানও সঙ্গে যাবেন।

তালেব আহমেদও বাড়ির সবাইকে নিয়ে মাহিরের বিয়ের শপিং করতে গেলেন। কাকতালীয় ভাবে একই শপিং মলে রুহি এবং মাহিরের দেখা হয়ে গেল।

রুহি হাসি হাসি মুখ করে কেনাকাটা করছে দেখে মাহির খুব কষ্ট পেলো।

তালেব আহমেদ মাহিরকে ফিসফিসিয়ে বললেন, দেখো দেখো কী সুন্দর খুশি মনে নিজের বিয়ের কেনাকাটা করছে। আর তুমি কেমন বাংলার পাঁচের মতন মুখ করে রেখেছো। আরে ও যদি এতো সহজে তোমাকে ভুলে যেতে পারে তাহলে তুমি পারবে না কেনো!! দাদুর নাতি দাদুকে দেখে এখনও শক্ত হওয়া শিখলো না! চল হাস হাস৷ নিজের জামাকাপড় গুলো পছন্দ করে কিনে নে। আর তোর বউয়ের বেনারসিটা তুই পছন্দ করবি৷ তাও আবার ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে। দেখবে আর জ্বলবে লুচির মতন জমবে।

মকবুল মিয়া পাশ থেকে বলল, মালিক ওইডা জমবে হইবো না। ওইডা ফুলবে হইবো। লুচি তো ফুলে। জমে না।

অহ! আমি ভুল বলেছি নাকি!! ওই হলো আর কী। বুড়ো বয়সে কিছু মনে থাকে না আজকাল।

মাহির রুহিকে দেখিয়ে দেখিয়ে বউয়ের বেনারসি পছন্দ করতে শুরু করলো। রুহিও কম যায় না। মাহিরকে দেখিয়ে দেখিয়ে হেসে হেসে সবার সাথে আনন্দ করতে করতেই সব কেনাকাটা শেষ করলো।

মাহির এক পর্যায় প্রচন্ড মন খারাপ করে ফেলল। মনে মনে বলল, তুমি কেনো আমার সাথে এমন করলে রুহি? আমি অন্য কারো সাথে ভালো থাকবো না। তাহলে তুমি কী করে এতো সহজে সবটা মেনে নিচ্ছো?

কেনাকাটা শেষ করে সবাই যার যার বাড়িতে ফিরে এলো।

রাতে মাহির শেষ বারের মতন রুহিকে ফোন করলো। এবার রুহি ঠিক ফোন ধরলো। ধরেই বলল, কে বলছেন?

এতো সহজে নাম্বারটা ভুলে গেলে?

রুহি ভারী গলায় বলল, কে? কার নাম্বার? চিনতে পারছি না।

মাহির মলিন স্বরে বলল, জীবন থেকেই যে আমাকে ডিলিট করে দিতে পেরেছে তার কাছে একটা নাম্বার আর এমন কী!

ও আপনি। স্বাভাবিকভাবেই বলল রুহি।

মাহির বলল, কংগ্রাচুলেশনস।

কেনো?

নতুন জীবন শুরু করার জন্য।

হুম। আপনাকেও কংগ্রাচুলেশনস। ভালো থাকবেন নতুন মানুষের সাথে। আচ্ছা শুনুন, আমি এখন হাতে মেহেদি পরছি। হাতে বরের নাম লিখবে তাই ডাকাডাকি করছে। এখন কথা বলতে পারবো না।

মাহির তৎক্ষনাৎ ফোন কেটে দিলো।

রাত পেরোলেই রুহির বিয়ে। রুহি অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে। আমিই বা কী করে জীবন কাটাবো অন্য একটা মানুষের সাথে! রুহি এভাবে আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আর আমি কিচ্ছু করতে পারছি না। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি গিয়ে রুহিকে তুলে নিয়ে আসি৷ কিন্তু রুহিই তো চায় না আমার কাছে ফিরে আসতে। তাহলে কার জন্য ভাবছি! কেনোই বা ভাবছি? সবটা তো শেষ হয়েই যাবে কাল।

সারারাতে মাহির একটুও ঘুমোতে পারলো না। এসব ভাবতেই ভাবতেই সকাল হয়ে গেল।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here