“দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প),পর্ব-১১১
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
আজ খুব ভোরে ওঠে মিতালী মিতু।
ভোরবেলা উঠেই প্রতিদিনকার মতো ফজরের নামাজটা আদায় করে নেয়।যদিও মাঝখানে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে অনিয়মিত ছিলো।
প্রার্থনায় ক্রন্দনরত মিতালী,
আজ মে মাসের দশ তারিখ, তার জীবনে বিশেষ একটা দিন।এই দিনে সে বউ হয়ে ছিল।অথচ সেদিন সে কেবলই একটা পুতুল বউ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
বাসর ঘরে নানা রকম বাহারী আর ঘ্রানে ভরা ফুলগুলোও যেন হতাশ হয়েছিল মিতুর একাকিনী আর নির্বিকার বধুবেশ দেখে।
সেদিনের মতো আজও সে একা,হয়তো বাকিজীবন তার এভাবেই নির্বিকার থেকে যাবে কারো অবহেলায়?
নামাজ শেষ করে মিতুর ইচ্ছে হয় ছাদটা থেকে ঘুরে আসতে।
বেশ বড়সড় তাদের আদাবরের বাসার ছাদটায় উঠে আসে,পেটটায় হাত রাখে মিতালী,
“সোনামনি আমার ঘুম ভাঙে নি?দেখো আকাশটা কি সুন্দর!আহা কি শীতল ঝিরিঝিরি হাওয়া… তুমি যখন আসবে তখন তোমাকে নিয়ে এমন তরতাজা বাতাস গায়ে মাখাবো কেমন…?’
বাসাটার চারপাশে নানারকম গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা,নীচে নানারকম ফুল গাছও আছে ।
খোলামেলা চারপাশটায়, সবুজ গাছের সহায়তায় যেন আরো বেশী অক্সিজেন সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ বাতাসে ভরে যায়…।
হঠাৎ আকাশে কোথা থেকে মেঘ জমা হয়,গুরিগুরি বৃষ্টি নামে,
তার খানিকটা গায়ে মাখায় মিতু।
রহিমা খালা তাড়াতাড়ি উপরে আসে,
“আহা খালা তুমি কেন এই শরীরে ছাদে আইসো কওতো?’
মিতুকে নিয়ে নিচে নামে,গামছা এগিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি।
মিতু মাথাটা ভালো করে মোছে এবার,বৃষ্টিতে ভিজে এত সহজে তার ঠান্ডা লাগার অভ্যেস নেই।কিন্তু বন্ধনের তো পুরো উল্টো।
সামান্য বৃষ্টিতে ভিজলেই লোকটা কাহিল হয়ে যায় ঠান্ডা আর সর্দি,মাথাব্যথায়।
আবারও পেটটায় হাত রাখে,
মিতুর এবার চিন্তা ছোটবাবুর আবার ঠান্ডা লাগবে নাতো ওর বাবার মতো?
বিছানার দিকে খেয়াল করে মিতু।
একটা শাড়ীর প্যাকেট দিয়েছিল গতরাতে পারুল।
পারুলের কাছে জানতে চাইলে ও বলে,
“এটা তোমার জন্য মিতু আপু?’
“কি এটা?’
“বাসায় গিয়েই খুলে দেখো…?’হেসে জবাব দেয় পারুল।
শাড়ীর প্যাকেটটা খোলে এবার,
পুরোই চমকে যায় প্যাকেটটা খোলার পর,
“এই শাড়ী?কোথায় দেখেছিলাম শাড়ীটা?’
একটু মনে করার চেষ্টা করে মিতু,
ফের মনে পড়ে অনেক আগে নীবিড় বাংলাদেশে আসার পর শপিং করতে গিয়েছিল নীবিড়,বন্ধন,বাবাই আর মিতু।
শপিংমলে বেশীরভাগ নীবিড়ের জন্যেই কেনাকাটা ছিল ঐদিন।হঠাৎ শাড়ীর দোকানের সামনে পুতুলের গায়ে শাড়ীটা বারবার দেখছিলো মিতালী,হাতেও ছু্ঁয়েছিল।
কিন্তু দাম দেখে আর কিছু বলেনি।
বন্ধনের সাথে তখনও তেমন কথা হতো না মিতুর,শুধু হু হা,কখন খাবেন,ঘুমাবেন ব্যাস এতটুকুতেই চলছিল তার সদ্য বিবাহিত জীবন।
“কিন্তু এই শাড়ীর কথা পারুল জানলো কি করে?’
লালচে মেরুনের মধ্যে জমিন ও আঁচলে খুব সুন্দর নকশার কাজ, তাতে ছোটছোট অসংখ্য বাহারী পু্ঁথি ও চুমকী তবে তা বেখাপ্পা লাগার মতো নয়,বিয়ের শাড়ীর মতোই অনেকটা।তবে মিতুর বিয়ের শাড়ী ছিল লাল বেনারসী কাতান শাড়ী।
পারুলকে ফোন করে মিতু জানতে চায় এ শাড়ীর কথা সে জানলো কি করে,
পারুল জানায় সে তার বাসায় আসছে,তারপর সব বলবে।
বাইরে জোরেশোরেই বৃষ্টি নেমেছে।শ্রাবণ বৈশাখী চলছে যেন আকাশও জোরে জোরে গর্জে ফেটে পড়ছে।
পারুল জামানের জীপ গাড়ীতেই মিতুর বাসায় আসে।
মিতু আবারও জিজ্ঞেস করতেই পারুল তাকে জলদি তৈরী হতে বলে বের হবে তারা।
” কোথায় যাবো এই বৃষ্টিতে?আর তুই আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?’
“সব জানাবো বলেছি তো?বৃষ্টি সমস্যা নেই মিতু আপু,আমার সাথে গাড়ী আছে,আমাদের সময় নষ্ট করা যাবেনা এখন?’
“আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা?কই যাবো কিসের সময় নষ্টব হবে?’
“আহা মিতু আপু তুমি অনেক বেশী প্রশ্ন করো,জামানের অফিসিয়াল পার্টি আজকে ওখানে যাবো বুঝেছো? ‘
“কখন?’
“রাতে?’
“তাহলে এখন কই যাবো?’
“পার্লারে…’
“পার্লারে?’
“হুম বড়সড় পার্টি অনেক বড় বড় মানুষ আসে আর্মিদের এসব পার্টিতে তুমি তো জানোই, গেট আপের একটা ব্যাপার আছেনা?’
“তাই বলে পার্লারে যেতে হবে কেন পারুল?’
মিতুর বকবক শুনে ঘাম ছুটে যায় পারুলের।কোনরকম বুঝিয়ে তৈরী হতে পাঠায় ফের।
পারুলের মোবাইলে টেক্সট আসলে উত্তর করে সে,
“বউ তো না পুলিশ অফিসার এতো প্রশ্ন করছে,আর আমি কিভাবে সামলাচ্ছি তা আমি জানি….।জীবনেও এতো মিথ্যা বলি নাই আজ যা বলেছি।’
ফের উত্তর আসে
“ধন্যবাদ শালী।’
ধানমন্ডির ড্রিমস কর্নার পার্লারেই যায় ওরা।
মিতুর খুব পছন্দের পার্লার।
পারুলের হাতে সেই শাড়ীর প্যাকেট।পার্লারারদের বুঝিয়ে দেয় মিতুকে কিভাবে সাজাতে হবে।
পারুলের কথা শুনে মিতালীর সন্দেহ হয় এবার।ওর আর বুঝতে বাকী রইলো না যে তাকে কেন পার্লারে আনা হয়েছে।
মুহিনকে ফোন করে ফুল আনতে বলে পারুল।
মিতু এবার রেগে যায়, সিট থেকে উঠে যেতেই পারুল ওর হাতে মোবাইলটা দেয়,
মোবাইল কানে নিতেই প্রিয় সেই আওয়াজ,
“মামনী… ‘
ছেলের কন্ঠ শুনেই থমকে যায় মিতু।
বাবাই এর কন্ঠ এতদিন পর শোনার পর মিতু নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেনা।
শিশুর মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে মিতালী মিতু।
“কোথায় ছিলি রে বাবা আমাকে রেখে?কি করে পারলি আমাকে ছেড়ে থাকতে বাবাই?’
“মামনী তুমি তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ?সব বলবো প্লিজ তুমি আর রাগ করে থেকোনা?'(চলবে)