দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৩৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
মিতু ভীষনভাবে অপ্রস্তুত।হীমেল কেনই বা তাকে পেছনের দিক থেকে আনল মনে মনে বিরক্তির চূড়ান্ত।
অগত্যা বাড়ানো হাতটা ধরতে হলোই তার।তবে নিতান্তই কাঁটা রাস্তাটা পার হবার তাগিদে।
মিতু অজান্তেই পেটে বারবার হাত দিচ্ছিল।সম্ভবত হীমেল সেটা খেয়াল করল।
রিক্সায় খুব সাবধানে উঠে বসলো মিতালী।
“আচ্ছা কই যাবে?তাই তো জানা হলো না?’
“কি জানা হলো না আবার?’মিতুর জিজ্ঞাসা।
“আরে ফুপার বাসায়? না স্বামীর ঘরে?’
স্বামীর ঘরে কথাটা শুনে ভালো লাগে মিতুর।
“আপাততো আব্বুর বাসায় আদাবরে।’
রিক্সাওয়ালাকে লোকেশন বুঝিয়ে দিতে লাগলো হীমেল,বেশ সযতনে।
মিতু যতই হীমেলকে দেখছে ততোই অবাক হতে লাগল,সত্যি অনেক বদলে গেছে হীমেল।বলা যায় যখন নতুন নতুন ভালোবাসা হয়েছিল তাদের ঠিক সেরকম আন্তরিকতা।
কিন্তু তাতে লাভ কোথায়?আজ দুজনার দুটি পথ দুদিকে গেছে বেঁকে।
তাছাড়া মিতুর অন্তর জুড়ে শুধুই বন্ধন।শুধু তাই নয়,তার শরীরে যে এখন বহন করে চলেছে,তাও বন্ধনের ভালোবাসার বীজ।
“যতই এখন এসব দুঃখের কথা বলো না কেন হীমেল,তোমার কথার মায়াজালে মিতালী এখন আর আটকাবেই বা কেন?আর এখন এসব আমাকে বলার অর্থই বা কী?যা হারিয়েছো, হারিয়েছো।রাস্তা মাপো এখন।’
মনে মনে ক্ষোভ প্রকাশ করে মিতু।আর করবেই বা না কেন,তাদের তো বাগদান পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল।সেটাও ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছিল মিতু আর মিতুর পরিবার,হীমেল এর অভদ্র আচরনের কারনে।
“মনে নেই সেই দিন গুলো?’আর এখন হীমেলের এত বিনয়ী, ভালো আচরন সহজে গ্রহনযোগ্য এ কারনেই তা হবার নয় বৈকি।কিছুটা ন্যাকাপনা লাগছে মিতুর কাছে।
“মিতু যদি কিছু মনে না করো একটা অনুরোধ করবো?’
“বলুন।’
রিক্সাটা ধরে দাঁড়ানো হীমেল,তাতে বোঝাচ্ছে যাত্রীর সাথে এখনো কথা শেষ হয়নি।
“তোমার নাম্বারটা যদি দিতে।’
নিরুত্তর মিতু।
“আচ্ছা থাক,দিতে না চাও অসুবিধে নেই।আর একটা কথা। ‘
“কি?’
“আমাকে কেন আপনি করে বলছো জানতে পারি?’
মিতু এবারও মৃূদু হাসে।হীমেলের মুগ্ধতা ফের।
“এমন কাব্য করা মায়া হাসি কি কেবলই তুমিই জানো মিতু?একটু মোটা হয়েছো তবে সেই হৃদয়কাঁপন তোলা হাসি আজও আছে….।’
এবার যেন হীমেল বিড়বিড় করে।
“কি হলো কিছু বলছো না।’
মুখ টিপে হাসি মিতুর।
“আসলে কী বলবো,আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।তাছাড়া এসব কথা এখন বলতে ভালোও লাগছে না….’
রিক্সাওয়ালা একবার বেল চাপাচ্ছে আর একবার ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে, দাঁত বের করে হাসছে।এখানে হাসির মতো কি ঘটনা ঘটল বুঝে উঠতে পারে না মিতু।মাঝে মাঝে অবাকও লাগে রিক্সাচালকদের এহেন আচরন।
“তা কেন ভালো লাগবে,আর্মি অফিসার বড়লোকের বউ এখন তুমি।অথচ এই তুমি আমার ছিলে,কতটা অবুঝ হতে আমার জন্যে আর আজ কত অচেনা….!’
মনে মনে কথোপকথন হীমেলের।
ফের ফোনটা বেজে ওঠে মিতুর।চমকে যায় সে,দুটার উপরে বেজে গেছে।বন্ধন ফোন করলো নাকি।
“হ্যালো।’
“কই আপু তুমি?’ওপাশ থেকে মুহিনের ফোন।
“আসছি রে আমি বাসার কাছে নতুন শপিংমলটায়… ‘
“এখন শপিংমলে কি এই ভরদুপুরে,আমাকে বলবে না একা আসছো তুমি?’
“কাকে আনবো বল? তুই তো বাসায় ছিলি না।’
“দুলাভাই জানে?’
“জানে।’
“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসো আমার খুব ক্ষুধা লাগসে একসাথে খাবো।’
“আসছি ভাই,একটু বোস।’
“আচ্ছা মামা নিয়ে যান ম্যাডামকে খুব সাবধানে নিয়ে যাবেন সুন্দর মতো পৌঁছে দিবেন….’হীমেল নির্দেশ করে রিক্সাচালককে।
যাবার আগ মুহুর্তে হীমলকে কিছু কথা বলে মিতু।
“রূপা আর ছেলেকে বাসায় নিয়ে আসুন হীমেল ভাই।আর জুঁই কোথায় আছে খোঁজ নিন।মামী এতে করে ভালো থাকবেন।’
“জুঁই,রূপা ওরা আমাদের ছাড়া ভালোই আছে মিতালী,ওদেরটা ওরা বুঝবে।’
“দেখুন হীমেল ভাই,সংসারটা তো কম দেখলেন না।তাছাড়া মামীর কথা আপনাদের ভাবতে হবে।এই বয়সে তাকে শুধু শুধু কষ্ট কেন দিচ্ছেন আপনারা?’
“কি বল্লে মিতু আমি কষ্ট দিচ্ছি?’
“হ্যা দিচ্ছেন।জেদ সবসময় ভালো নয়,সেটা বোঝা উচিত।রূপার সাথে আপোষ করে মীমাংসা করে ফেলুন।জুঁই ভুল করেছে কিন্তু তার জন্য মামী কষ্ট পাচ্ছে।মামা নেই।নাতীটাও কাছে নেই।ছেলেটা তো এখানে কোন দোষ করেনি?তাকে বঞ্চিত কেন করছেন?’
“মিতু তুমি জানো না, তাই এভাবে বলতে পারছো।রূপা যা করেছে…..’
“আমার জানার দরকার নাই,এটা এখন আপনাদের পারিবারিক বিষয়।আমার মামীর জন্য খারাপ লাগছে,শুধু শুধু আপনাদের কারনে বেচারা কষ্ট পাচ্ছে।আপনাদের উচিত তার কথা ভাবা।’
“আমি কি খুব ভালো আছি?’
“ছেলে আর তার মাকে নিয়ে আসুন, ভালো থাকবেন….এখন যেতে চাই,অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে।’
হীমেল এবার সরে দাঁড়ায়।রিক্সাভাড়াও দিয়ে দেয় পকেট থেকে।মিতুর তাতে প্রবল আপত্তি।
হীমেল হাঁটা দেয় তার কল্যানপুর বাসার জন্যে।হয়তো সামনে থেকে অন্য রিক্সা নেবে সে।
“কিন্তু তার তো এখন গাড়ী থাকার কথা….?কি হয়ে গেলো মামীর সংসারে। সময় করে মামীকে দেখে আসবো তবে একা নয়,মুহিনকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।’
তবে আরও আশ্চর্য লাগলো, হীমেল মিতুকে অভিনন্দন জানালো।
“কেন?’
“যে কারনে তুমিবারবার পেটে হাত দিচ্ছিলে, বাবুর জামাকাপড় আগ্রহ নিয়ে দেখছিলে….?’
কথার কী শ্রী হীমেলের?
মিতু খুব লজ্জা পেয়ে যায় তাতে।
রিক্সায় বসে অনেক কিছুই মনে এসে যায় মিতুর।
যে রূপার কারনে তাদের সম্পর্কে চিড় ধরেছিল।রূপার বাবার টাকা আর রূপার কথায় যে মানুষটা পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।শুধু তাই নয়,হীমেলের বিসি এস ভাইভার পর নাকি হীমেলকে কত লাখ উৎকোচের টাকা গুনতে হয়েছিল।সেটা নাকি রূপা তার বাবার কাছ থেকে এনেও দিয়েছিল।তার জন্য গোলাম হয়ে যাওয়াটাই তো হীমেলের মতো মানুষদের জন্য স্বাভাবিক।
আর মিতু সেসময় তার কোন কাজে আসতে পারেনি।
মিতুকে এজন্য বলেও ছিল তার ফুপু মানে মিতুর নানার কেনা মিতুর মায়ের নামে সাভারের জমির কিছু অংশ বিক্রি করতে।মা পড়ে সেখানে দুঃস্থ মহিলাদের দিয়ে গবাদি পশু ও হাঁসমুরগীর খামার করতে চেয়ে ছিলেন।
মায়ের এ স্বপ্ন এখন মুহিন বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিচ্ছে।সে জমি মিতু বিক্রি করার কথায় রাজী হবেই বা কী করে?তারপরও মিতুর মায়ের নামে ব্যাংক একাউন্ট ছিল।তা থেকে সে তখন কিছু টাকা দিতে চেয়েছিল তার সাবেক এই ভালোবাসার মানুষটিকে।সেতারা তখন অনেক আপত্তি করেছিল।কিন্তু সরল মিতালী তা শুনবে কেন?ব্যবস্থাও করে ফেলেছিল,হীমেলকে টাকা দিতে।
কিন্তু ততোদিনে মিতু হয়ে গেল হীমেলের গলার কাঁটা।
কী অপমান করে কথা বলা,হীমেল আর রূপার?
“লাগবে না তোমার টাকা,তোমার টাকা তুমি নিয়ে যাও…
‘আরও কতো কি…..
সেতারা পরে বলেছিল, “খুব ভালো হয়েছে মিতালী,আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যে।চিনলি তো এবার হীমেলকে?’
কি একটা অসহনীয় লাঞ্চনা আর অপমানে মিতালী মুষড়ে পড়ে ছিল।কতবার আপনমনেই জানতে চেয়েছিল,কেন হীমেল তার সাথে এমন করলো?
আজ সেসব বিস্মৃতি ছাড়া আর কিছু নয় মিতুর কাছে।
হাফ্ ছেড়ে তৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস নেয় মিতু
“সত্যি তো!আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যে….(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৪০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
“সত্যি ভাবতে অবাক লাগে যে লোক রূপার কথায় উঠত, বসতো,অন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওর টাকার কাছে আজ তাদের বনিবনা হচ্ছে না! কিন্তু হীমেলের সাহস হলো কী করে আমার ফোন নাম্বার চাওয়ার?চাইলোই বা কোন মুখে পুরনো স্মৃতি কি ও সব ভুলে গেছে?সব কিছু কি এতই সোজা ভাবে ও?ইংরেজীতে একটা কথা আছে,
ন্যাচারাল লো অফ রির্টান,অর্থাৎ মানুষ যা করবে প্রকৃতিই তা তাকে ফিরিয়ে দিবে।’
রিক্সায় চেপে এসব কথা ভাবতে থাকে মিতু।
তিন তিনটা বছর কম কষ্ট পায়নি মিতু।বাঙালী মেয়ে একবার বিয়ে ভাঙলে সমাজে মুখ দেখানো কতটা অসহনীয়। যদিও সমাজব্যবস্থা এখন অনেক বদলেছে।কিন্তু সমাজের কিছু মানুষের বাঁকা চোখ আর টিপন্নী কম সহ্য করতে হয়নি মিতালীকে আর তার পরিবারকে।সেসব ভুলে যাওয়া এত সোজা তো নয়?
“নাহ্ এসব এখন আর ভাববো না।এখন আমার সব কিছু বন্ধনকে জুড়ে।কিন্তু কবে আসবে বাবু?আমার যে আর ভালো লাগে না।’
বাবার বাসায় পৌঁছে যায় মিতালী।
মুহিন গ্যাটের সামনেই ছিল। দৌড়ে আসে বোনকে দেখে।
“কি রে কিছু বলবি?’মিতুর জিজ্ঞাসা।
“আপু বাসায় একজন গ্যাস্টকে এনেছি।তোমার সাথে আজ পরিচয় করিয় দিব।’
“কে রে?’
“আগে ভিতরেই চলো না।’
মিতু ভিতরে যায়।দেখে ছোটখাটো পুতুল পুতুল চেহারার একটা মেয়ে হিজাব পড়া।উজ্জ্বল শ্যামলা বরন।
মিতুকে দেখেই হাত বাড়িয়ে সালাম করে।
“আসসালামু আলাইকুম আপু।আপু ভালো আছেন?’
“ওয়ালাইকুম আসসলাম। হুম আলহামদুলিল্লাহ্। কি নাম তোমার?’
“আঁখি।’
আঁখি মুহিনের ক্লাসমেট।ওরা একসাথে সিটি কলেজে পড়েছে।
মুহিন একটু লাজুক ছেলে।এর আগে ছেলেবন্ধুদেরকেই বাসায় এনেছে।মেয়ে বন্ধু আজ প্রথমবার নিয়ে আসলো।
“বাহ্ বেশ সুন্দর নাম তো?কোথায় থাক তুমি?’
“জ্বি আপু মোহাম্মাদপুর লালমাটিয়ায়।’
আখিঁর নামের সাথে চেহারার সার্থকতা আছে বৈকি।
ওর চোখগুলো কেমন মায়া মায়া।
“মুহিন আবার সেই চোখের মায়া পড়েনি তো?’
মনে মনে ভাবে মিতু।
বাসায় আজ মোরগ পোলাও রান্না হয়েছে।মিতুর তো এগুলো খুব পছন্দের খাবার।মুহিন নাকি রহিমা খালাকে বলেছে এসব রাঁধতে।
খাবার টেবিলে অনেক কথাই হলো আখিঁর সাথে।
“বাবা কি করেন?’
“আব্বু শিক্ষা অধিদপ্তরে ছিলেন।’
“ছিলেন?’
“আপু … আব্বু মারা গিয়েছেন দশ বছরের উপরে।’
“ও আচ্ছা খুবই দুঃখিত বোন?’
“না আপু ঠিক আছে।’
“কয় ভাইবোন তোমরা?’
“আমরা তিন বোন, এক ভাই।’
“তুমি কত নাম্বার?’
“আমি সবার বড় আপু।’
“মুহিনের উলটো মানে ও তো সবার ছোট?’হেসে বলে মিতু।
“জ্বী আপু।’আখিঁও হেসে দেয় জবাবে।
“খালাম্মা কি করেন?’
“আম্মু একটি হসপিটালে রিসেপশনিস্ট পদে আছেন,উনি একটু অসুস্থ।’
“কি হয়েছে?’
“এক্সিডেন্টে পা ভেংগে গেছেন।’
“ওফহো্ তাই বুঝি?কবে হলো? এখন কি অবস্থা,সিরিয়াস কিছু নয় তো?’
“এই তো গতসপ্তাহে রিক্সায় ধাক্কা লেগে পড়ে ভীষন ব্যাথা পেয়েছেন।সময়মতো প্লাস্টার করার পর এখন ঠিক আছেন আগের চাইতে।’
“তুৃমি কিছু করছো,তোমাদের ভর্তির কি খবর?’
“বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি আর মুহিন ফরম তুলেছি।এখন দোয়া করেন।মুহিনের সাথে কোচিং করি,আর দুটা টিউশনী মুহিনও যোগার করে দিয়েছে…….’
“বাব্বা ভাই আমার বেশ খেয়াল রাখে দেখছি আঁখির!’
মনে মনে বিড়বিড় করে মিতু।
মুহিন হঠাৎ জিজ্ঞেস করে,
“আপু তোমার কাছে ভাংতি টাকা হবে?আমি আবার দিয়ে দিবো।’
“কি করবি?আর দিতে হবে কেন?খুব বড় হয়ে গেছিস বুঝি?’
“শুনো বোন আমার,তুমি হইলা এখন এ বাড়ীর প্রধান অতিথি। তোমার যাবতীয় খরচ এখন আমাদের বুঝছো?’
বেশ একটা ভাব নিয়ে বলে মুহিন।
আঁখিও কথাটা শুনে বেশ মজা পায়।
“হুম বুঝলাম।’
মিতু তার ব্যাগের ভিতর থেকে পার্সটা বের করে।
খুলতেই বন্ধনের দেয়া সেই এক হাজার নোটটা।আজ কত সখ হয়েছিল টাকাটা আজ কাজে লাগাবে।কিন্তু লাগাতে আর পারলো কই।তারপর ভিতর থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বের করে ভাইকে দেয়।
“আরে এত টাকা কেন? একশো,দুশো টাকা নাই?’
“না খুঁচরা বলতে এটাই ছিল। ‘
“ঠিকই তো আমার বড়লোক দুলাভাই,আমার মিষ্টি আপুটাকে এত কম খুঁচরা টাকা দিবেই বা কেন?’
“হয়েছে হয়েছে কি করবি এই টাকা দিয়ে?’
“স্প্রাইট, ফান্টা কিনবো।ও তুমি তো আবার মিরিন্ডা পছন্দ করো।’
“হুম তোরা যা খাবি কিনে আন আর এত দেরীতে দোকানে যাচ্ছিস এই ভরদুপুরবেলায় দোকান খোলা পাবি?’
“তুমি চিন্তা করো না,তোমার ভাই তো একটা জিনিস জানো না?’মুহিন জিনিয়াসকে জিনিস বলে মজা করে।
আঁখিও বেশ মজা পায় দুই ভাই বোনের কথা শুনে।
মুহিন চলে যাবার পর আঁখি, মিতালীকে কিছু কথা বল্ল।
“আপু একটা কথা।’
“কি বলো?’
“মুহিন অনেক সহজ সরল একটা মানুষ।ও মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করে।’
“কেন কি হয়েছে এ কথা কেন বলছো আঁখি? ‘
“আপু ওর বন্ধুরা প্রায়ই ওর কাছ থেকে টাকা ধার করার নাম করে টাকা চায়।ও বোকার মতো দিয়ে দেয়।প্রায়ই সে এমন করে।কিন্তু তার ঠকবাজ বন্ধুরা পরে সে টাকা আর ফেরত দেয় না।’
“ওমা কি বলছো?’
“ও আপনাকে অনেক মানে।আপনি ওকে বোঝাবেন আপু।’
মিতু আঁখির চিবুকটা ধরে বলে,
“এ দায়িত্বটা তুমি নাও না?’
আঁখি কিছুটা লজ্জা পায় শুনে।
“আপু আমি অনেক বলি কিন্তু ও শুনে না।মুহিন আপনাকে অনেক ভালোবাসে ও আপনার কথা ফেলতেই পারবেনা।’
“তাই বুঝি?তুমি কি করে বুঝলে?’
“আমি ওর বন্ধু আমি বুঝবো না।বিশ্বাস করেন আপু আপনার বিয়ে হয়ে যাবার পর মন খারাপ করে থাকতো,আপনাকে অনেক মিস করে।আর যতবার ওর সাথে দেখা হয়,সারাক্ষন আপনার কথা বলে।’
“হাহাঃ হাঃ আমাদের কিন্তু আর একটা বোন আছে।’
“তা জানি আপু কিন্তু আপনাকে বেশী ভালোবাসে।’
“তাই?কি বলে পাগলটা আমার কথা?’
“খালাম্মা মারা যাবার পর আপনি ওকে বড় করে তুলেছেন।ঐ আপুর তো তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে বাইরে চলে গেছেন আর আপনি মায়ের আদর দিয়ে ওর সবকিছু খেয়াল রাখতেন।চাকরী করেও নাকি ওকে হাত খঁরচা দিতেন।আপনার মতো বোনই হয় না আর একটা কথা ও খুব বলে।’
“কি?’
“আপনি অনেক সুন্দর দেখতে,নায়িকা মৌসুমীর মতো লাগে আপনাকে।’
“কি পাগলটাও এই কথা বলে।’
“ঠিকই তো বলে আপু আপনাকে উনার মতোই কিন্তু দেখতে লাগে।’
“হুম তা লাগতে পারে মৌসুমী ম্যাডামও গোলগাল নাদুসনুদুস আমিও তাই।’
“কি যে বলেন আপু?’
“পাগলটা এত কথা বলে….’
দুজনে নানা কথোপকথনে হাসাহাসি করে।
মুহিন আসে।
“আপু দুলাভাই তোমাকে ফোন দিতে দিতে অস্থির,তুমি ফোন ধরছো না কেন?’
ফোনটা চার্জে দিয়েছিল মিতু।
“তোর বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম তো আর ফোন চার্জে।কেন তোকে ফোন দিয়েছিল।’
“হ্যা বলেছে গাড়ী পাঠাবে আর আমাকে দিয়ে আসতে।’
“আজকে? কখন?কালই তো এলাম।’
“তাজানি না, উনার আর তর সইছে বউকে ছাড়া না তাই আর কি করবে।’কিছুটা মন খারাপ করে ফেলে মুহিন।
মুহিনের কানে হাত দিয়ে মিতু বলে,
“ঐ তোর দুলাভাই কি এখানে?সবসময় বেশী বুঝিস না?’
“এখানে না আবার দেখো তোমাকে সারপ্রাইজও তো দিতে পারে।উনাকে বলো তার শ্বশুরবাড়িতে চলে আসতে….’
মিতু এবার ফোনটা দেখে তিনটার মতো মিসকল।
মিতু কল ব্যাক করে দেখে সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
“এই লোকটার ফোন আসলেও পিকিউলিয়ার। যখন আমাকে ফোন করে তখন পায় না।আর আমি ফোন করলে সুইচড অফ!’
বন্ধনের টেক্সট পায় মিতু।
“জান কি করছো,ইন্সপেকশনের পুরো দায়িত্ব আমার তাই তোমাকে সময় দিতে পারছিনা।বাসায় চলে যাও লক্ষীটি।নানু রানুকে নিয়ে নানুর এক আত্মীয়ের বাসায়।নীবিড় আবার তার কোন বন্ধুর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত।উত্তরায় আছে ওখানেই বোধহয় থাকবে।আর তুমি আজ এসে পড়ো কিছুদিন পর আবার এসো।’
আঁখিকে বিদায় দেয় মিতু।ওকে বেশ ভালই মনে হয় মিতুর কাছে।যাবার বেলায় ওর হাতে পাঁচশত টাকার একটা নোট গুজে দেয়।
“এটা কেন আপু?’
“আমি মুহিনের যেমন বড় বোন তোমারও,আর আজ মা বেঁচে থাকলে এটা হয়তো মায়ই দিতেন।’
খুব খুশি হয় শুনে আঁখি।মুহিন তাকে এগিয়ে দিয়ে আসে।
“আব্বু খেয়েছে খালা?’
“হো খায়াই আবার ঘুম লইসে।’
“আব্বু কি আজকাল বেশী ঘুমাচ্ছেন?’
“বুড়া হয়া গেসে মা তার শরীরটাও বোধহয় ভালা না,আগের মতো ছাত্রও পড়াইতে পারে না।’
“আসে ছাত্র আব্বুর কাছে?’
“হো দুইজন আসে।’
মিতু বাবার ঘরে যায়।গভীর ঘুমে আছেন তিনি।সকালেও যাওয়ার সময় ঘুমাতে দেখেছে,এখন আবার ঘুমাচ্ছেন।মিতু বাবার মুখে কপালে ফের মমতার পরশ বুলায়।
ব্যাগ মোটামুটি গোছানোই মিতুর।দুপুরে খানিকটা শুয়ে বিশ্রাম নেয়।
ফেইসবুকটা অন করে মিতু।হীমেল তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।
প্রোফাইলে যায় একটু কৌতুহলবশত।
তাতে হীমেল স্ট্যাটাস দিয়েছে,
“কেন বুঝিনি কি হারিয়ে আমি পুড়ে পুড়ে যে ছাই’
তাতে ফিলিংস দিয়েছে, হারানো দেখা সেই কবিতাকে।
“এটা তো হাবিব ওয়াদিহের গানের লাইন মনে হচ্ছে।’
“বলদ একটা….'(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান