দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৪৩
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
মিতু চোখদুটোয় কাজল টানলো।সাজসজ্জার ভিতরে কাজল আর টিপ না দিলে যেন তার কাছে কোন সাজই মনে হয় না।
তারপর শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে বেবী পিংক লিপষ্টিক লাগায় মিতালী যত্ন করে।
এবার ড্রেসিং টেবিলের প্যাকেটটার দিকে হাত বাড়ায় মিতু।বন্ধন কি জানি নিয়ে এসেছে।ওকে খুলে তারপর মাখতে বল্ল।
প্যাকেটে হাত দিয়েই বুঝে ফেলে মিতু,তার স্বামী তার জন্য বডি স্প্রে ও পারফিউম এনেছে।
বডি স্প্রে টা লন্ডন রোজ আর পারফিউম এর নাম ক্লোয়ি(chloe)।
“খুব দামী পারফিউম বোধ হয়?’
বাবু তখন বলছিল,তার বন্ধুকে দিয়ে বাইরে থেকে আনিয়েছে।
ঘরে ঢুকলো এবার বন্ধন,মিতুর চোখের দিকে তাকালো সে।
“চোখের কোটরে কাজলখানি দিয়ে ভরাট করলে মেয়েদের বুঝি আরও বেশী সুন্দর লাগে?’
তারপর মিতুর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এটা কি লিপষ্টিক লাগিয়েছো?তোমাকে না বল্লাম লাল টুকটুক লিপষ্টিক লাগাবা?’
“কখন বল্লেন?আর এটা খারাপ কি?শাড়ীর সাথে ম্যাচিং করে না লাগিয়েছি?’
এবার বউ এর দুকাঁধের উপর হাত রেখে বলে,
“এত ম্যাচিং কার জন্য করবা?তোমাকে আমি চুমু খাবো,ম্যাচিং দিয়া কি করবা হ্যা? ‘
ফের বলে বন্ধন,
“তোর লাল টুকটুক অধরে
মাখবো অনেক আদরে…’
“হুম ঐ পর্যন্তই আদর করতে পারবেন।’লাজুক হাসে মিতালী।
পুরোই যেন চমকে যায়, কথাটা শুনে।
“ঐ পর্যন্ত মানে?’
“মানে বুঝেন না?আমি এখন একা না….’
“ও বুঝছি,ছোটবাবুর পারমিশন লাগবে তাই তো?’
বন্ধন এবার মিতালীর ফরসা পেটে মুখ লাগিয়ে বলে,
“শুনো ছোটবাবু,আমি এখন তোমার মামনীকে মন ভরে আদর করবো,কাজেই তুমি এবার লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পড়ো তো….. ‘
“ছিঃ ছিঃ কি বলেন?বাবুকে এসব বলে নাকি?ও কি ভাববে?’
“ছিঃ ছিঃ কি বলেন….’বলে ভেংচি কাটে বন্ধন।
“তোমার সমস্যা কি মিতু?এত ছিঃ ছিঃ করো কেন?তুমি জানো তোমাকে আদর করলে আমার মেয়েই অনেক খুশী হবে,বলবে আমার আব্বু মামনীকে কত্ত ভালোবাসে…. আর তুমি খালি ছিঃ ছিঃ করো?’
“আপনি জানলেন কি করে আপনার মেয়ে আছে এখন?’
“জানি।বাপ জো হু…’
মিতুর গালদুটো টিপে দিতে দিতে বলে,
“তোমার মতো গোলটুস পুলটুস মেয়ে হবে আমার?’
“না আপনার মতো হবে,আপনার চোখ দুটোর মতো সুন্দর দুটা চোখ হবে বাবুর।’
মিতু গভীর আবেগে বন্ধনের চোখ দুটোর দিকে ফের মুগ্ধ নয়নে তাকায়।
“মানুষের চোখ কি করে এত সুন্দর হয়,তাও আবার পুরুষ মানুষের চোখ?বাবু যদি সুরমা লাগাতো চোখে ইশ যা লাগতো না?’
মনে মনে আওরায় মিতু।
“এই কি বলো?আমার মতো বুড়া মানুষের চোখে তুমি কি পাইলা মিতু?’মিতুর নাকটা চিপি দিয়ে ধরে বিস্ময় জানায় বন্ধন।
এ কথাটা শুনলে পুরোই রেগে যায় মিতু,
“দেখেন আমার স্বামীকে যদি ফের বুড়া বলসেন তো…?’
বন্ধনের বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দেয় ফের।
“সত্যি বাবু?আমাকে এত ভালো লাগে তোমার?’
মিতালী তার বাবুর গালে হাত দিয়ে ধরে আলতো ছোঁয়ায় বলে,
“কেন লাগবে না?আপনি জানেন,আপনি কত সুপুরুষ? আর আপনার চোখ দেখেই তো আমি ডুবেছি কতবার…’
বন্ধনের বাহুতে ঢলে পড়ে মিতু পরম মমতায়।
“তাই জান?আর কি ভালো লাগে আমার,তোমার কাছে?’
মিতু এবার কিছুটা বন্য আঁচরন করে,
বন্ধনের রোমশ বুকটা আঁচড়ে বলে,
“এইটা?এত সুন্দর কেন আপনার এই বুক,আমি যে বার বার মরে যাই আপনার বুকে….’
“উফহ্ সোনা আর বলো না,এসো এখন মন ভরে তোমাকে আদর করবো…..’
হঠাৎ বাঁধা দেয় মিতু,
“শুনেন মন ভরে এখন কিছু করা যাবে না, বলেছি তো,ছয় মাস অপেক্ষা করেন….’
“ছয়মাস মানে?আমার সাথে কি মশকরা করতেসো মিতু?আমি মিশন ফাঁকি দিয়ে আসছি,আর ছয়মাস পর বস্তার সাথে কি করবো হ্যা? ফাইজলামি কথাবার্তা বলবা না।’ এবার যেন খানিকটা রেগে যায় বন্ধন।
“ফাইজলামি হবে কেন?আমি কি একা বলেন?এখন কিভাবে সোহাগ করবেন? ‘
“ঐ তোমার দুদিন পরপর কি সমস্যা হয়?প্রথমদিন যখন আদর দিতে চাইসি,বল্লা পাঁচদিন পর,এখন বলতেসো ছয় মাস পর!নিজের আপন স্বামীর সাথে কি ইঁদুর,বিড়াল খেলতেসো?’
“আচ্ছা বাবা এমনি আদর করেন,আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমায় থাকেন তাহলেই তো হয়?’
“আদর তো আদরই আবার এমনি আদর কি?বউরে খালি কোলে নিয়া ঘুমানোর জন্য এতদূর আসি নাই?আর আজ বাসা খালি,মওকা পে চওকা না নিয়ে কি এমনি চলে যাবো?’
“তাহলে কি করবেন?’
“পা থেকে মাথা পর্যন্ত সোহাগ করবো….’
“না না কি বলেন,বাবুর ক্ষতি হয়ে যাবে…।’
মিতু যেন সহসাই ভড়কে যায় এবার, বন্ধনের ভাবভংগী দেখে।
পাগলা ঘোড়ার মতো হয়ে গেছে বন্ধন।মিতুকে প্রচন্ড জোরে জাপটে ধরে এবার।
চোখ নামিয়ে থরথর কাঁপে মিতালী।কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।
মিতুর কম্পন আর লাজুকতায় স্তম্ভিত বন্ধন।
মিতুর মুখখানা দুহাত দিয়ে ধরে ফের নিজের মুখের সামনে এনে বলে বন্ধন,
“আমার আদর ছাড়া তুমি থাকতে পারো মিতালী?’
“না।’
“তাহলে এমন করছো কেন হুম?’
“ইচ্ছে করে কি করছি?আপনি এত অবুঝ হচ্ছেন কেন?বাবুর কথা ভাববেন না?’
“আর আমার কথা?তুমি জানো না এখন আমার কি অবস্থা?’
“না ধৈর্য্য ধরেন।এমনি দুজন দুজনকে ধরে ঘুমায় থাকি আসেন।’
বন্ধনের ফের মেজাজ খারাপ হয়,
“ঐ তোমারে এখন পোয়াতি হইতে কে বলসে?’
“এটা কি আমার দোষ?’সরল জিজ্ঞাসা মিতুর।
হঠাৎ ফোনটা বের করে বন্ধুর নাম্বার খোঁজে বন্ধন।
“কি হলো কাকে ফোন দেন?’মিতুর কৌতুহল।
“ডাক্তার বন্ধুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি দাঁড়াও?’
মিতু পুরোদস্তুর অবাক বনে যায়, বন্ধনের অধৈর্য্য দেখে,
“হায় আল্লাহ আপনি এত রাতে ডাক্তার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করবেন আমাকে আদর করতে পারবেন কি না?’
“হুম বিপদে এখন বন্ধুই ভরসা…বেশী কথা বলো না তো?’
মিতু হতবুদ্ধি হয়ে যায় তার স্বামীর কান্ড কারখানা দেখে।
সত্যি সত্যি ডাক্তার বন্ধুর নাম্বারের ডায়াল করতে থাকে বন্ধন….. (চলবে)অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)
দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৪৪
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
বন্ধন তার বন্ধু মিজানকে ফোন করলো।
“কি রে বন্ধু এত রাতে?’ওপাশ থেকে মিজানের জিজ্ঞাসা
“ঐ রাত কয়টা বাজে? বারোটাও এখনো বাজে নাই?’
“কি বলবি বল,ভাবী কেমন আছে?’
“তোর ভাবীর ব্যাপারেই ফোন করেছি।’
“কি হয়েছে?’
মিতু এবার বন্ধনের মুখে আংগুল দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বারন করতে থাকে।
“না মানে দোস্ত…’আমতা আমতা করে বন্ধন।
“কি বল?ভাবী খেতে পারছেনা?শাহানার কাছে না গিয়েছিল?’
“তা গিয়েছিল…’
“তো কি সমস্যা? ‘
“না এমনি।’
“এমনি মানে?ঐ ব্যাটা রাত বারোটায় ফোন করে এখন বলতেসো এমনি?’ জিভ কাটে মিজান।
“কেন তোরা কি প্রাইভেট বিজনেসে বিজি আসো বন্ধু?আমি কি বিরক্ত করলাম?’বন্ধনও পাল্টা জিভ কাটে।
“ধূর শালা এই বুড়া বয়সে আবার প্রাইভেট বিজনেস কি?ঐটা তে তুমি এক্সপার্ট।’
“এক্সপার্ট হইতে গিয়াই তো ধরাটা খাইলাম দোস্ত।’
বন্ধনের বাহানা।
“আবার কি ধরা খাইলা বন্ধু?’মিজানের কৌতুহল।
মিতু ফের বন্ধন এর মুখটা হাত দিয়ে ধরে।লজ্জায় মরে যাচ্ছে মিতালী এত রাতে স্বামীর বেলাজ কথাবার্তায়।
“তুমি বুজতেসো না কি বলতে চাইতেসি?’
মিতু এবার চোখ বন্ধ করে ফেলে,
“কি জিজ্ঞেস করছে লোকটা?মাথাটা গেসে পুরাই।’
লজ্জায় অস্থির মিতালী।
মিজান কি জানি ভাবলো ফের বল্ল,
“বন্ধু তোমার কিন্তু এগারো,বারো বছর বয়সের পোলাও আসে?সব কি ভুইল্যা গেসো নাকি মনে করায় দিমু….’
মিজানেরও পাকনামি হাসি।
বন্ধন মিতুর লাজলজ্জায় রক্তিম হওয়া দেখে আর কথা বাড়ায় না।
“ঠিক আসে বন্ধু ঘুমাও।এমনি ফোন দিসিলাম…আল্লাহহাফেজ।’
“আল্লাহপাক আপনার লাজ লজ্জা বলতে কি কিসু দেয় নাই?’সলজ্জায় মিতালী।
“না দেয় নাই,আমি এরকমই বুঝছো।’বলে ধেয়ে আসে মিতুর দিকে বন্ধন।
এরপর পেছন থেকে জাপটে ধরে মিতুর কাঁধের পাশ থেকে চুল সরিয়ে পরম আদরে উষ্ণতা বুলায় বন্ধন।
মিতুর ভীষন ভালো লাগে বন্ধনের আলতো আলতো এই নরম ছোঁয়া।
দুজনার নিঃশ্বাস, প্রশ্বাস আবারো বেড়ে যায়।
বন্ধন এবার মিতুর মুখের কাছে মুখ এনে বলে,
“এতই যখন আমার আদর তোমার ভালো লাগে, তাহলে আবার না করো কেন হুম?’
“কই না করলাম?’লাজুক লতা মিতু।
“ঐ যে আমাকে আরো গভীরে যেতে না করো?’
“হুম…বলেছি তো?আমি এত কিছু জানি না….’
“আমি জানি…সব শিখিয়ে দিবো সোনা,আসো বুকে আসো… ‘
বন্ধন ফের লাইটা অফ করে দিয়ে ডিম লাইটা জ্বালায়।
ডিম লাইটের আলোয় মিতালীকে আগের চেয়ে অনেক বেশী লাস্যময়ী লাগে।
মুগ্ধ আবেশে তাকিয়ে থাকে বন্ধন মিতুর মায়া ভরা মুখটার দিকে।
আর বন্ধনের মুগ্ধতায় মিতুর কাছে মনে হয়,
“এই পাগলভরা চাহনী দেখার জন্যেই পুরো জীবনটা এমনি পার করে দিতে পারবো।কেন এভাবে তাকান?আমার মতো সাধারন মেয়ের মাঝে কি পেলেন আপনি?’
মিতুও বিমুগ্ধ বন্ধনের ভালোবাসায়।
“দেখেন বাইরে কি সুন্দর চাঁদ?’
বন্ধনকে চমকে দিয়ে ফের বলে মিতু, জানালাটার দিকে ইশারা করে।
“চাঁদ তো আমার ঘরেই…।’
“আসেন না বারান্দায় যাই,চাঁদ দেখি….’
“উহুহ…’
মিতু বন্ধনের হাতটা ধরে জোর করে বারান্দায় নিয়ে যায়।
বন্ধন খেয়াল করলো বারান্দার টোবে বেশ কিছু ফুল গাছ।
তার ভিতর পাথরকুচি,নয়নতারা,পাম ট্রি,কিছু পাতাবাহার,অর্কিড,বনসাই আবার গোলাপ গাছও আছে।তাতে ফুলও ফুটেছে থোকা থোকা।
মিতুর প্রিয় গন্ধরাঁজও আছে সেখান থেকে মিষ্টি অদ্ভুত একটা সুঘ্রান ভালোবাসার পরিবেশকে যেন আরো মাতিয়ে দিচ্ছে!
বন্ধন বেশ অবাক হয়,এতদিনে কাজের চাপে খেয়ালও করেনি যে মেয়েটা টবে এই গাছগুলো লাগিয়ে কি সুন্দর সাজিয়েছে!
“এগুলি কবে লাগালে মিতু?সত্যি তোমার তুলনা হয় না!’
মুগ্ধ বিস্ময় বন্ধনের।
“কবেই তো লাগিয়েছি?আপনি যখন আমাকে সময় দিতেন না এরাই আমাকে সময় দিতো।’
ফের অনুরাগ মিতুর।
“আহারে আমার বাবুটা….’ বলে মিতুর কপালে চুমু খায় বাবু।
“দাঁড়াও একটা কাজ করছি এখন।’
“কি?’
মিতুকে চমকে দিয়ে গোলাপ গাছটা থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে বন্ধন।তারপর হাঁটু গেরে বসে প্রপোজ করার স্টাইলে মিতুকে বলে,
“জান ডু ইউ লাভ মি….’
একদিকে বাইরে চান্নি পশর রাত অন্যদিকে বন্ধনের এত ব্যাকুলতা! মিতুর যেন সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগে,
তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা তাকে স্বপ্নের মতো করে প্রপোজ করছে।যদিও বন্ধন তাকে আদর সোহাগ করেছে,কিন্তু এভাবে প্রেমিকের মতো আচরন আজ তো আবার নতুন করে চমকে দিচ্ছে মিতুকে….(চলবে)