দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫৩
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
পাঁপিয়ার তান্ডবলীলায় বাসার সবাই সজাগ হয়ে পড়ে।রানু ডুপ্লেক্স ঘরের বিলাশবহুল সিঁড়ির উপরের রেলিং এ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল।বাবাই ও বেশ আতংকিত রানুর পাশে সেও দাঁড়িয়ে।
রানু এবার নানুকে খবর দিতে তার ঘরে ছুটে যায়।
মিতুর উপর পাঁপিয়ার আক্রশ ক্রমশ ভয়াবহ হতে থাকে।
একপর্যায়ে বুয়া দৌড়ে ছুটে গিয়ে মিতালীকে ধরতে আসে।
“ছাড়েন হায় হায় কি করতেসেন আফামনিরে,আফামনি তো অসুস্থ..’
রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় এবার বুয়ার দিকে পাঁপিয়া,
“অসুস্থ? কি হয়েছে তোর আপামনির?’
“জানেন না,আফামনি পোঁয়াতি হইসে? ছাড়েন তারে ঘুইরা পড়বো তো…’
বুয়ার কথায় আরো বেশী ক্রব্ধ পাঁপিয়া,অশ্লীল বাক্যে ফের আক্রমন করে মিতালীকে।
“ও তাহলে এই?আমার বাবুর সাথে তুই শুয়েছিস না? এখন পেটে বাচ্চাও নামিয়ে ফেলেছিস,খুব সুখ করেছিস তোরা?এই শোন তোর আগে তোর পেটের বাচ্চার বাপ আমার সাথে শুতো।একদিন না দুদিন না বিশ বছর ধরে ও আমার কাছে আসতো সেসব কি তুই জানিস?’
“আমি বিশ্বাস করিনা।’মিতুর আত্মবিশ্বাস
“তোর বিশ্বাসে আমার এই পাঁপিয়ার কিছু যায় আসে না।আমার কাছে প্রমান আছে তুই দেখতে চাস?’
“আপনি যত প্রমানই আনুন খোদ কোন ফেরেশতা এসে একথা বল্লেও আমি বিশ্বাস করবো না….।’
“তাই নাকি?এত বিশ্বাস করিস তুই বন্ধনকে এত সুখ পেয়েছিস তুই ওর কাছ থেকে?অবশ্য পাবারই কথা ও তো সুখ দেয়ার মতোই পুরুষ…।’
কথাটা মিতুর কানে বারুদের মতো জ্বলে উঠল।বুঝতে বাকি রইল না পাঁপিয়া একধরনের মানসিক রোগী,যারা দৈহিক সুখ সর্বস্বকে পুঁজি করে যা খুশি তাই করে বেড়াতে পারে।এদেরকে বলা হয় নিম্পোম্যানিয়াক রোগী যার অর্থ হাইপারসেক্সুয়িলিটি ডিসঅর্ডার।মিতু অনেক আগে একটা জার্নালে পড়ে জেনেছিল।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকেও জেনেছিল,এরা যখন বন্য হয়ে ওঠে এরা সমাজ মানে না সংসার এর ধার ধারে না,যেকোন পুরুষ, হোক সে ঘরের কাজের লোক তবু;কোন কিছুর পরোয়া তারা করে না।শারীরিক চাহিদার জন্যে এরা হিংস্র পর্যন্ত হতে পারে বেপরোয়া,ডেমকেয়ার আচরন করে যেমনটি পাঁপিয়া এখন করছে।
মিতু পালটা জবাব দেয় এবার,
“ছিঃ এত নোংরা আপনি?আর শুনুন বন্ধনও সুখী আমাকে পেয়ে,আমিই এখন ওর সব,আমি ছাড়া এই মিতালী ছাড়া ও কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারবে না,হাজার শরীর বিকিয়ে দিলেও না…’
মিতুর সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী তুমুল জবাবে পাঁপিয়ার চক্ষুশূলে পরিণত হয় এবার।
রাগের বশে কথাও আঁটকে আসে পাঁপিয়ার,
“ও আচ্ছা এই ব্যাপার?তোর কচি কস্তুরি শরীরের স্বাদ পেয়ে বন্ধন এখন আমাকে ভুলে গেছে….তাই এখন আর আমার কাছে আসে না…?’
দাঁতে দাঁত ঘষে কর্কশ গলায় ফের চেঁচিয়ে ওঠে পাপিয়া,বুয়াকে সরিয়ে দেয় মিতালীর কাছ থেকে,মিতালীর শরীরটা ধরে প্রবল বেগে ঝাঁকাতে থাকে হায়েনারূপী পাঁপিয়া।
এবার নানু দৌড়ে আসে মিতুকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে সেও ব্যর্থ।
“ঐ পাঁপিয়া তুই আবার আইছোস,ছাড় মিতুরে,বন্ধন জানলে তোরে জানে মাইরা ফেলবো।’
“ঐ বুড়ী তুই কোন কথা বলবি না,যত নষ্টের গোঁড়া তো তুই।বন্ধন বিয়ে করতে চায়নি,তারপরও বাবাই এর টিচারনীরে ওর গলায় ঝুলে দিয়েছিস।’
“আপনি জানলেন কি করে,বাবু আমাকে বিয়ে করতে চায়নি?’ বিস্মিত মিতু।
“নাউ কাম টু দ্যা পয়েন্ট,বিয়ের আগে বন্ধন তোকে বলেনি,যে তোকে ভালোবাসতে পারবে না?’
“হ্যা বলেছে কিন্তু উনি উনার প্রথম স্ত্রী কেয়ার কথা বলেছিলেন।’
“হাহাঃ হাঃ তুই তো আমাকে ডাবলক্রশ করতে চেয়েছিলি বাট বন্ধনই তোকে ডাবলক্রশ করেছে,ধোঁকা দিয়েছে বন্ধন তোকে,বিকজ কেয়ার কথা বলেছে ঠিকই কিন্তু বন্ধনের সাথে রিলেশন ছিল আমার, তার আগের দিন পুরো সময় ধরে তোর বাবু আমার বাহুডোরে ছিল,ওয়াট এ বিউটিফুল টাইম ছিল সেটা,এট দ্যাট টাইম হি অনলি ম্যাড ফর মি নট ফর কেয়া,এন্ড অবিভিয়াসলি নট ফর ইউ…ইউ ব্লাডি ফুল…’
মিতু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না,পাঁপিয়ার অট্টহাসি শুনতে পায় এবার।
“শোন মেয়ে ম্যান আর অলওয়েজ হিপোক্রেট ওকে, দে অলওয়েজ ডিমান্ড ফর সো ম্যানি ওমেন নট ওনলি ফর ওয়ান ওমেন। এক নারীতে কোন পুরুষ কখনো আসক্ত হয় না…।’
কথাগুলো শোনার পর মিতু স্তব্ধ হয়ে রইল,এই মুহুর্ত থেকে মনে হলো তার পায়ের নীচ থেকে বুঝি কেউ মাটি সরিয়ে দিচ্ছে, আর সে পাঁপিয়া।
ফের পাঁপিয়া অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে,
“কেয়া মরেছে তিন বছরেরও বেশী সময় ধরে,তুই কি ভেবেছিস এরকম একটা হ্যান্ডসাম,ডেসিং পুরুষ এতদিন একা থাকবে আর কিছুই ঘটবে না? তখন আমার বাবুটা কত অসহায় একটা সময় পার করছিল,চোখের সামনে আমি তার শেষ হওয়া সহ্য করতে পারিনি।দ্যান হি নিডেড এ সোল্ডার।আমি তাকে সামলেছি,মাতাল হয়ে পড়ে থাকতো বাবু।প্রথম বউ বলে কথা আর এমনিতেও বাবুর মনটা অনেক নরম।কেয়াকে সে সত্যিই ভালোবাসতো।দ্যান আমি তার কাছে ছুটে গেছি,আমার বুকে মাথা দিয়ে সে কেঁদেছে,দ্যান হি গিভ মি কিসেস ইন এভরি সিংগেল পার্ট অফ মাই বডি…।দ্যাট টাইম উয়ি স্পেন্ড এ ওয়ান্ডারফুল মোমেন্ট…. এত সহজে সব ভুলে যাবো?যাকে আমি সামলেছি,তাকে এত সহজে ছেড়ে দিব?’
মিতুর ইচ্ছে হচ্ছিল দুকানে হাত দিয়ে পাঁপিয়ার বিদঘুটে আওয়াজ গুলো থেকে নিজেকে রেহাই দিতে।
“সত্যি এতদিনের রিলেশন তার পাঁপিয়ার সাথে,তাও ফিজিক্যাল? ঐদিন অর্থাৎ বিয়ের আগে বাবু তাকে কেয়াকে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে মিথ্যে কথা বলেছিল?আর বিয়ের পাঁচটা মাস বন্ধন তাকে ছুঁয়েও দেখেনি,তবে কি পাঁপিয়ার কথাই ঠিক?বন্ধন তাকে এইভাবে ধোঁকা দিয়েছে? ‘
মিতুর মাথাটা ঘুরপাক খেতে লাগলো।শরীরটা চরম দূর্বল লাগছে এখন তার। অন্যসময় হলে একমাত্র ভরসার প্রিয় মানুষটাকে “বাবু’ বলে ডেকে উঠতো।এখন আর কাকে ডাকবে,লজ্জা ও ঘৃনায় কেঁপে কেঁপে উঠছে মিতালী।
ঘড়ীর কাঁটা এগারোটার দিকে দেড়টা ঘন্টা এই উটকো ঝামেলাটাকে সহ্য করছে মিতু,বুয়া,নানু পাঁপিয়ার হিংস্রতার কাছে নস্যি মাত্র।
বাবাই ও এবার দৌড়ে এল,
“আনটি অসুস্থ প্লিজ আপনি চলে যান।’
“চুপ কর বেয়াদপ সাহস তো কম না তোর আমাকে চলে যেতে বলিস?’
মিতু বাবাইকে সরে যেতে বলে তৎক্ষণাত।বন্য শিকারী পশুর মতো পাঁপিয়ার আচরন যেকোন সময় থাবা দিয়ে বিরাট ক্ষতি করে ফেলতে পারে অসম্ভব কিছু নয়।
“আহ আপনি ওকে গালাগাল দিচ্ছেন কেন? আর শুনুন আপনার কথা শেষ হলে আমাকে ছাড়ুন,আমার এখন অনেক বিপদ আমাকে যেতে হবে।’
“বেশ ছেড়ে দেব, তবে তুই হার মেনে গেছিস মিতু….।’
“কে বল্ল আপনাকে,আপনি যতই প্রমান এনে সামনে দেখান আমার কথা সে আগেরটাই,খোদ ফেরেশতা সামনে এসে বল্লেও আমি বিশ্বাস করবো না,যে বন্ধন আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।’
পাঁপিয়ার চোখমুখ উল্টে গেল মিতালীর বন্ধনের প্রতি আস্থা দেখে।
ফের শীতল কন্ঠে ঠান্ডা মাথায় মিতু বলে উঠল,
“কিছু পরিস্থিতির কারনে বন্ধন হয়তো মানসিক ভাবে দূর্বল হয়েছিল আর আপনার মতো পুরুষের শরীর খেকো লোভী মহিলা তার উপযুক্ত সদ্বব্যবহার করেছেন।যা ঘটেছে বাবু এখানে পরিস্থিতির শিকার।যে মানুষটা প্রথম স্ত্রীকে ভালোবেসে তার শোকে পাগল হতে পারে,তার দূর্বলতার সুযোগ যে কেউ নিতে পারে। এখানে বাবুর কোন দোষ নেই।আর হ্যা নাউ আমি তার বর্তমান। আপনার এসব ছাঁইপাশ প্রলাপ আমাকে টলাতে পারবেনা।আমি বাবুকে ভালোবাসি,আর আমার বিশ্বাস আমার বাচ্চার বাবাও আমাকে ততটাই ভালোবাসে….।’একটু থেমে মিতু পালটা জবাব দেয় পাঁপিয়াকে,
“আই এম নট ব্লাডি ফুল,দ্যাট ইউ আর ব্লাডি ফুল।যে জিনিস কখনোই আপনার নয়,তাকে হাজার পাবার চেষ্টা করেও আপনি ব্যার্থ,আর আজীবন তাই থাকবেন। কথাগুলো বৃষ্টির গুলির মতো পাঁপিয়ার শরীরে, মুখে কাঁদাজল মাখানোর মতোই মনে হলো।কতটা দৃঢ়তার সাথে কথাগুলো বলে ফেল্ল মিতু।যদিও সে সত্যমিথ্যার অজানা সোঁপানে তরী ভিড়িয়ে রেখেছে।বন্ধন যদি সত্যি তাকে ভালোবাসে তবেই বাঁচবে মিতালী,নাহলে নিশ্চিত মৃত্যু।
হায়েনা এবার তার হিংস্রতার শেষ দেখিয়েই ছাড়লো।এতকিছু বলার পর মিতালীর স্বগৌরবে দৃঢ়চেতা জবাব সে এই মুহূর্তে কল্পনাও করতে পারেনি।
তার হাত থেকে মুক্তি চেয়েছিল মিতু।পাঁপিয়া তাকে তার হাত থেকে মুক্তি দিল ঠিকই,কিন্তু রেহাই দিলনা।এক ঝটকায় ধাক্কা দিলো মিতুকে। শুধু তাই নয়,মিতুর একপাশের পায়ে সজোরে ল্যাং মেরে নীচে ফেলে দিল।বসার রুমের কাঁচের টেবিলটায় জোরে পেটে আঘাত পেল মিতু।সোফায় বাড়ি খেয়ে কপালটাও ফাটল।
আহ্ বলে পেটে হাত দিয়ে, আত্ম চিৎকারে প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠল অসহায় মিতু।ফ্লোরে বিছানো সুদৃশ্য কার্পেটটা রক্তে ভেসে যেত লাগলো তৎক্ষণাত।(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫৪
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
নানু,বুয়া কেউ পেরে উঠতে পারেনি মদখোর উন্মাদ পাঁপিয়ার হিংস্রতার কাছে।মিতু পড়ে যাবার আগে নানু দৌড়ে রুমে চলে যান, বন্ধনকে ফোন করতে।
আর পাঁপিয়া বুয়াকে অর্ডার করে,ঘরে কি খাবার আছে তার জন্যে নিয়ে আসতে।তার নাকি অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
বুয়া ঐ জংলীর কাছে,মিতালীকে ছেড়ে যাবার মতো ভরসা পাচ্ছিলো না।
কিন্তু পাঁপিয়ার রক্তচক্ষু আর অশ্লীল গালাগাল শুনে যেতে বাধ্য হয় বুয়া।
“আমি খাবার আনতেসি,আফনে আফামনিরে ছাইড়া দেন।’
“হ্যা দিচ্ছি তুই যা আগে আমার খাবার নিয়ায়…।’
রানু উপরের সিঁড়িতে তখনও দাঁড়ানো ছিল।কিন্তু পাঁপিয়া মিতুকে ধাক্কা দেয়ার পরপরই দৌড়ে ছুটে আসে।
প্রচণ্ড ব্যাথায় কুঁকড়িয়ে ওঠে মিতালী।
“ও আল্লাহ ‘বলে চিৎকার দিয়ে তার পেটটা ধরে রাখে।
ওদিকে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে,মস্তিষ্কবিকৃতকারী পাঁপিয়া।
“তোর পেটের বাচ্চার বাপ তোকে ভালোবাসে?আমার মুখের ওপর এতবড় কথা,নে এখন বোঝ….’
রানু মিতুকে তার কোলের কাছে নেয় সাথে সাথে, মিতালীর নিচ দিক থেকে অবিরাম রক্তের স্রোতধারা নেমে আসে।
বাবাই ভয়ে আর্তনাদ করে ছুটে যায় নানুর কাছে।
“নানু তাড়াতাড়ি আসো,পাঁপিয়া ডাইনী আমার মাকে ফেলে দিয়েছে…’
মিতুর কানে যায় কথাটা, যে বাবাই এর মুখ থেকে মা ডাক শুনতে চেয়েছিল,কিন্তু তাই বলে এভাবে তো নয়?
রানুও চিৎকার দিতে থাকে,
“হায় আল্লাহ এইটা কি করলেন আপনি?ভাবীজানের এতবড় সর্বনাশ করতে পারলেন?’
পাঁপিয়া এতে ভীষন বাজে রকম গালাগাল দেয় রানুকে,ফের তার এক কথা,
“ঐ তুই কে রে…এত সাহস তোর?তোকেও শেষ করে ফেলবো।’
নানু এবার ছুটে আসে, বুয়া টেবিলে খাবার রেখে সেও দৌড়ে আসে,সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়,একই সাথে আতংকিত মিতালীর কপাল আর শরীর থেকে অবিরাম রক্ত বের হচ্ছে কি করবে তারা কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ রানু রান্না ঘরে গিয়ে একটা ধাঁরালো বড়সড় বটি নিয়ে আসে হাতে করে।
সে এবার চিৎকার করে বলতে থাকে,
“ঐ খাট্টাস মহিলা সাহসের দেখসোস কি? আমি ঝিনাইদহের মাইয়া তোরে ওহন বটি দিয়া কোঁপামু,তুই ভাবীজানের এত বড় ক্ষতি করছোস,বাচ্চাটা খুন করছোস ওহন তোরে খুন করমু…’
রানুর এই আচরনে বুয়াও অবাক হয়ে যায়,সেও এবার সাহস পায়,
“হো রানু তুই ওর ঘাড়ে কোঁপ দে,আমি পিছন থ্যাইকা ধরি ডাইনীটারে…’
বাবাইও একইসাথে ক্ষেপে ওঠে,
“তোমরা আগে কেন এটা করলা না?’
নানু অনেকক্ষন পর বন্ধনকে পায়,
সে ঢাকায় পৌঁছেছে অনেক আগে,এতক্ষন থানা হাজতে দৌড়াদুড়ি করছিল মুহিনকে ছাড়াবার জন্যে।
নানুও এবার অগ্নি চোখে পাঁপিয়ার দিকে তাকায়,
“পাঁপিয়া হারামী এইডা তুই কি করলি,বাবুর বাচ্চাটারে মাইরা ফেললি,আর মিতুর কিসু হইলে বাবু তোরে খুৃন করবো।আইতেসে বাবু,দেক্ তোর কি করে…’
“কি করবে? হ্যাহ্ আই এম এ মেম্বার অফ পার্লামেন্ট, কেউ পাঁপিয়ার কিচ্ছু করতে পারবে না….’
একইসাথে সবার আক্রমনে পাঁপিয়া এবার কিছুটা ভয় পেয়ে যায়,তবুও তার পাগলা কুকুরের মতো আচরনের যেন কমতি নেই,
“এই বটি নামা খবরদার কেউ একদম কাছে আসবি না,আমাকে তোরা চিনিস তোদের সবকটাকে আমি শেষ করে দিতে পারি।’
নানু, মিতালীকে কোলের কাছে নিয়ে বলতে থাকে,
“বুবু বুবু কতা কো বোইন,তোর বাবু আইতেসে একটু সবুর কর।’
মিতু চোখ মুখ উল্টাচ্ছিল এতক্ষন, তবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
বাবাই বাইরে গিয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে গালাগাল দিতে থাকে,তাদের এলিয়ন গাড়ীটা নষ্ট,জিপ গাড়ীটাও নেই কাছে।
বাসায় এম্বুল্যান্স আসে, বন্ধন ফোনে সব শুনে সেই খবর দিয়ে আনায়,
বাসায় এসে দৌড়ে এসে মিতুকে কোলে নিয়ে বুকের কাছে নেয় বন্ধন,প্রায় কেঁদে দেয় মিতুর গোঙানী দেখে,
“বাবু,,, সোনা চোখ খোল দেখো আমি এসে গেছি….’
মিতুর কপালটা হাত দিয়ে ধরে এবার,রক্তে পুরো ভিজে গেছে মিতুর শাড়ী,আর কার্পেট।
পাঁপিয়ার যেন সহ্য হচ্ছিল না এ দৃশ্য
“ইশ কত প্রেম, আমাকে ধোঁকা দিয়ে এখন কঁচি বউ এর জন্যে প্রেম দেখানো হচ্ছে যত্তসব?’
বন্ধন এবার বিস্ফোরিত চোখে তাকায় পাঁপিয়ার দিকে।
চুপচাপ কথাটা বহু কষ্টে হজম করে সে।মিতুকে কোলে নিয়ে বাইরে আসে এবার।সাথে হসপিটাল থেকে এম্বুলেন্স তোলার জন্যে লোকজনগুলোকেও ধরতে দেয় নি তখন বাবু।
এম্বুল্যান্সে মিতুকে ধরাধরি করে ওঠানো হচ্ছিল,
মিতু এসময় খানিকটা জ্ঞান ফিরে পায়,
বন্ধনের গলার আওয়াজ শুনতে পায় সে,
বন্ধন সিকিউরিটি গার্ডের কলার চেপে সজোরে তার মাথায় চাপরাতে থাকে,
“এই বলদের বাচ্চা ?এই মহিলাকে বাসার ভিতর ঢুকতে দিয়েছিস কেন তুই?’
“স্যার,,, স্যার আমার কি দোষ,আমি ঢোকাতে চাই নাই বিশ্বাস করেন স্যার।’
“তাহলে ঢুকলো কি করে বাসার ভেতরে এত কিছু ঘটসে আর তুই কই মরসিলি?’
“স্যার ম্যাডাম বলসেন সে এমপি আমি ঢুকতে না দিলে বলে আমার সর্বনাশ করবো বইলা ডর দেখাইসে স্যার।’
“আর আমার বউ, বাচ্চার যে সর্বনাশ করলো?সেটার কি জবাব দিবি তুই?’
“স্যার এই ম্যাডামরে তো আগেও দেখসি আপনের সাথে,আমি তো ওত কিসু বুঝি নাই স্যার, আমারে মাফ কইরা দেন স্যার….’
কথাটা কানে আসে মিতালীর,ফের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে।
বন্ধন এম্বুলেন্স ছেড়ে দেবার জন্য বলে দেয়।সাথে রানু আর বাবাইও ওঠে।
“স্যার আপনি যাবেন না?’লোকগুলো জানতে চায়।
“আপনারা এগোন,আমি একটা ইম্পোর্টেন্ট কাজ সেড়ে আসছি।’
বন্ধন এবার ধীর পায়ে সোজা তার রুমে আসে।কাবার্ডে তার পার্সোনাল ড্রয়ার থেকে তার লাইসেন্স করা পিপি এইট গানটা বের করে।বহু শখের মাসুদরানা বা জ্যামসবন্ডের ব্যবহার করা খ্যাতনামা হ্যান্ডগান এটা বন্ধনের।বাইরে থেকে বহু কষ্ট করে এটি সরবরাহ করে নিজের কাছে রেখে ছিল মুল্যবান এই গানটা।
এবার সোজা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে পাঁপিয়ার কপালে,বন্ধন ঠেকায় তার পিস্তলটা…..(চলবে)।নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫৫
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
খুন চেপে বসে মাথায় বন্ধনের।
রাগে ফুঁসতে থাকে সে,পাঁপিয়ার কপালে হ্যান্ডগানটা ঠেকিয়ে ট্রিগারটায় কেবল আংগুল ধরে থাকে।
ট্রিগারে চাপ দিলেই শেষ…
“আমার হাতে মরার জন্যে তুই এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছিস ?’
“আই এম নট কাওয়ার্ড যে পালিয়ে যাব?মরলে আমার বাবুর হাতেই মরবো।’
“জাস্ট শাট আপ ওকে আর কত ন্যাকামী করবি তুই?আর লিসেন আই এম নট ইউরস…আর কি বল্লি ইউ আর নট কাওয়ার্ড, তুই তো এম পি তাই না?ম্যাম্বার অফ পার্লামেন্ট… সবখানে তোর এমপি গিরি ফুটাস,এবার পিস্তলের গুলিতে তোকে ফু্ঁটো করবো,তোর এমগিরি ছোটাবো,সিক মেন্টাল ওয়েমেন…’
“সো ওয়াই ইউ আর ওয়েটিং ফোর?দেরী কেন?করো গুলি,,,মারো আমাকে…শুট মি’
নানু ও বুয়া এবার দৌড়ে আসে।বাঁধা দিতে যায় নানু, বন্ধনকে।
“বাবু মাথা ঠান্ডা কর…ওরে মাইরা কি হইবো,তুই মিতুর কাসে যা ভাই।’
“নানু, প্লিজ তোমরা সড়ো আমার সামনে থেকে,আজকে এই ডাইনীর সাথে বোঝাপড়া করেই ছাড়বো…বিশটা বছর সে আমার লাইফটা হ্যাম্পার করে আছে,ওকে আজ যদি শেষ না করি ওর বেশ্যাগিরি কখনো ছুটবে না।’
“ওয়াট?আমি বেশ্যা?হাউ ডেয়ার ইউ বন্ধন..’
ক্ষেপে যায় পাঁপিয়াও বেশ্যা কথাটা শুনে।
“হ্যা তুই বেশ্যা, শরীর খুলে বিকিয়ে বেড়াস,নাহলে তোর মতো মেন্টালের এমপি গিরি কেন থাকে এখনও,তা কি আমি বুঝি না?তোর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ,যেমন ড্রেস আপ তেমনি উশৃংখল,ইউ প্রস…’
“হ্যা আমি প্রস,আমি মেন্টাল সেটার জন্যে আমি একা দায়ী নই,ইউ অলসো ইনভলব ফর দিস সিচুয়েশন।’
“ও রিয়ালি?’
“ইয়েস,অস্বীকার করতে পারো,ইউ ডিডেন্ট লাভ মি?তুমি আমার কাছে আসোনি?আমাদের ভেতর কি কিছুই ছিল না?’
“পাস্ট ইজ পাস্ট ওকে।নাও ইউ আর এ কিলার তোর মতো খুনীর কোন কথাই শুনতে চাই না।’
ফের নানু এগিয়ে আসে,
“পাগলামী করিস না বাবু,ওরে পুলিশে ধরায় দে, সময় নষ্ট করিস না,মিতুর কাসে যা ওহন…’
“নানু তুৃমি ওকে চিনো না,ও তো বাড়ীর দারোয়ানকেই ছাড়ে না,আর পুলিশ,পুলিশের বাপকে ও শরীর দিয়ে কিনে ফেলবে,এত কিছু করেও ওর নোংরা শরীরটায় পঁচন ধরে না।’
“আমার শরীর এখন নোংরা?বাট এ শরীরের জন্যে তুমি পাগল হও নি?অস্বীকার করতে পার ভার্সিটি লাইফ থেকেই আমার প্রতি তোমার দুর্নিবার আকাক্ষা ছিল,ভার্সিটির ক্যাম্পাসে সব চেয়ে হট এন্ড সেক্সি বলে কে আগে আমাকে নোটিশ করেছিল সবার সামনে?আমাকে কাছে পাবার জন্যে রাতে আমার বেডরুমে চলে আসো নি?এসব কি মিথ্যে?’
“এসেছিলাম,আর সেটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল,বাট সেই এইজে সেটা শুধু ইনফেচুয়েশন ছিল,নট লাভ,,তুই তো তখন থেকেই নিজেকে উগ্র করে চলতি,শরীরী অ্যাপিল করে পুরুষদের ট্রাপে ফেলা তোর জন্মগত পাপ।এভাবে তুই জামিলকেও শিকার করেছিলি।তোর মতো শয়তানকে চিনতে পেরে সেও চলে গিয়েছিল।’
“জামিল আমাকে ছাড়েনি,আমি ছেড়েছি ওকে বিকজ অফ ইউ।’
“ও রিয়েলি তুই আমার জন্যে আর কাকে কাকে ছেড়েছিলি?সঠিক পরিসংখ্যান জানিস?তুই নিজেও বলতে পারবি না।’
“হ্যা ছেড়েছি কজ নো ম্যান সেটিসফাইড মি,আই অনলি ফিল হ্যাপিনেস উইথ ইউ…’
“চুপ কর,অসভ্য।’
“না করবো না,আমি কি একাই পেয়েছি,আই অলসো গিভ ইউ সেইম হ্যাপিনেস।কেয়া মারা যাবার পর মনে নেই, ডিডেন্ট ইউ কাম ব্যাক টু মি এগেইন?ওয়ার আই ফরগেট এভরি থিং,বাট ইউ ব্যাক টু মি…. ইউ ফরগেট এভরিথিং বাট আই এম নট।’
পাঁপিয়ার কথায় এবার চুপ হয়ে যায় বন্ধন।(চলবে)