দ্বিতীয় বাসর পর্ব ৫৬+৫৭+৫৮

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫৬
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

কিছুক্ষণ চুপ করে,কি যেন ভেবে নেয় বন্ধন।
ফের তার এক হাতের কনুই মাথায় ঠেকিয়ে আর্তনাদের সুরে বলে সে,
“হ্যা আজ আমার একটা ভুলের কারনে মিতুর আজ এই অবস্থা।’
“স্বীকার করছো তাহলে?’গর্বিত যেন পাঁপিয়া এবার।
ফের পালটা জবাব দেয়,
“ভুল তুমি ভার্সিটি লাইফ থেকে করে এসেছো বলতে চাইছো,তাহলে পরে কেন আবার করলে? ওয়াই?নাও আনসার?ডু ইউ ওয়ান্টস টু সে সেইম রোঙ ইউ হেভ ডান আনকনডিশন্যালি, এগেইন এন্ড এগেইন,,, তোমার মতো মানুষ একই ভুল বারবার করবে,ইনটেনশনালি তোমার কোন রেসপনসিবলই ছিল না?এখন পুরো দোষটাই আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছো কোন অজুহাতে?
মিতুর কাছে মহাপুরুষ সাজতে চাইছো?’
“ওকে দোষ যদি আমারই ছিল,মিতুকে আঘাত করলি কেন,ওর শরীরে আমার বাচ্চাটার ক্ষতি করলি?বোঝাপড়া আমার সাথেই করতি? তুই আমার সহজ সরল মিতুকে একা পেয়ে কেন ওর উপর চড়াও হলি,কোন সাহসে তাকে নীচে ফেলে দিলি,,,,ওর কি অপরাধ ছিল?’
পাঁপিয়ার প্রচণ্ড জ্বালা ধরে যায় বন্ধনের মিতালীর প্রতি উতলা হওয়া দেখে।
ফের হিংস্র হয়ে এবার বন্ধনের উপর চড়াও হয়,
দুহাত দিয়ে বন্ধনের কলার খামছে ধরে,
“এত দরদ মিতুর জন্যে?ভার্সিটি লাইফে আমার পেছনে ঘুরে যখন আমি পাত্তা দিলাম না,কেয়ার কাছে চলে গিয়েছিলি,আমি পরে কতবার কনফেস করে তোর কাছে আসতে চাইলাম,তুই ঐ কেয়ার জন্যেও আমাকে সেইম কথা বলেছিলি, আমাকে লিভ করলি,তারপর দেখ্ কেয়াও তোর ভাগ্যে জোটেনি,ফের আবার আমার কাছে এলি,আমাকে কাছে পেয়ে আমার বুকে,আমার শরীরে তুই দিনের পর দিন শান্তি ফিরে পেয়েছিলি,তোর মনে নেই?রাস্তায় টালমাটাল হয়ে পিকআপ এর নীচে পড়তে গিয়েছিলি,এই আমি পাঁপিয়া তোকে বাঁচিয়েছিলাম,আমার ঘরে,আমার বাহুতে ঠাঁই দিয়েছিলাম….।’
হঠাৎ খেয়াল করে বন্ধন সদর দরজার পাশ ঘিরে বসার রুমের কাছে পারুল দাঁড়িয়ে আছে।
“দুলাভাই এসব কি হচ্ছে এখানে?ফ্লোর ভরা এত রক্ত….!
আপনি যান নাই মিতু আপুর কাছে?’
হঠাৎ যেন সম্বিত ফিরে পায় বন্ধন,সজোরে কষে পাঁপিয়ার দু গালে সটাং করে চড় বসিয়ে দেয় ওর পুরু মেকআপ করা গালে,
চড়ের আঘাতে পাঁপিয়াও নীচে পড়ে যায়,
আবারও খুন চড়ে যায় বন্ধনের মাথায়,
এবার একহাতে পাঁপিয়ার চুলের মুঠি চেপে ধরে বলে,
“সেদিন তুই আমাকে বাঁচাস নি,বাঁচিয়ে ছিল তোর এক্স হাসবেন্ড ওকে,জামিল সব ভুলে তোর সাথে আবার নিউ লাইফ স্টার্ট করতে চেয়েছিল,তন্নির কথা ভেবে,আর আমি এ বিষয়টা নিষ্পত্তি করতে তোর দারস্থ হয়েছিলাম,তোর নোংরা শরীরের প্রতি নয়,ঐটার প্রতি লালসা কেবল তোর ছিল পাঁপিয়া।এর তুই সে সুযোগ কোনবারই ছেড়ে দিস নি,নিজের মেয়েটার কথা পর্যন্ত ভাবিস নি।আমি জামিলের ব্যাপারে কথা বলতে তোর বাসায় গিয়েছিলাম ঠিকই বাট তুই আমি আসবো জেনে
আমাকে তোর রেষ্ট হাউজে নিয়ে গিয়েছিলি।কেয়ার ক্যান্সার হয়েছিল শুনে তুই কেয়ার জন্যে, বাবাই এর জন্যে সহানুভূতি দেখালি।ঐ সময় আমার মন অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল,সেটার মক্ষম সুযোগ তুই নিয়েছিস।দিনের পর দিন স্লো পয়জনের মতো তোর মিষ্টি কথার ছলনায় আমাকে বশ করে রাখতি।ঐ সময় আমি ড্রিংকসে আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম।সেটাতে তোর সুযোগ আরো বেড়ে গেল।মদের নেশায় আমাকে চুড় করে রাখতি,আর আমি কখনোই তোকে ভোগ করতামম না, সেটা তুই আমাকে করতি,,,,’
ফের ট্রিগারে হাত দেয় বন্ধন,নানু, পারুল দুজনেই ছুটে আসে,
দুজনকেই সরে যেতে বলে চিৎকার দিতে থাকে বন্ধন,চুলির মুঠিটা চেপে নিচের দিকে নির্দেশ করে পাঁপিয়াকে,
“দেখ,দেখ আমার মিতুর শরীর থেকে কত খানি রক্ত তুই ঝরিয়েছিস,আল্লাহই জানে আমার বউ,বাচ্চা এখনও বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে,এই রক্তগুলি তো আমার বাচ্চারও তোকে আজ আমি শেষ করেই ফেলবো,ইউ ব্লাডি বিচ….'(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫৭
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

“বাবু,,এই বাবু?’
“বলো জান’
“কি করেন?মুখ ফিরিয়ে আছেন কেন ওভাবে?আমার উপর রাগ করেছেন?’
“না সোনা?’
“আচ্ছা শুনেন আমার ফোনটা ধরেননি কেন?টেক্সটও তো পাঠাননি?’
“আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম।’
“কি নিয়ে ব্যস্ত?আচ্ছা ছোটবাবু কই?’
বন্ধন এর দীর্ঘশ্বাস এর শ্লেষপূর্ণ বাতাস যেন ভেসে ওঠে,
“কি হলো?কই আমার সোনামনিটা? ওকে দেখেননি?’
“আমি এখন তোমার সোনামনি নিয়েই ব্যস্ত মিতু..’
“তাই বুঝি?’
হঠাৎ মিতালীর ফোনটা বেজে ওঠে,
ওপাশ থেকে মুহিন কথা বলে ওঠে,
“আপু কেমন আছো তুমি?’
“আমি ভালো আছি রে,,,তুই কেমন আছিস?এই শোন তুই এখন কই?ছাড়া পেয়েছিস? ‘
“আমি তো কবেই ছাড়া পেয়েছি আপু।’
“এই মুহিন এবার থেকে সাবধানে চলবি,কারো সাথে লাগতে যাবি না,তোকে নিয়ে আমার বড় চিন্তা…’
“আমার কথা ছাড়ো আপু,নিজের কথা ভাবো,নিজেকে সামলাও..’
“হাহাঃ হাঃ কি বলিস,আমার আবার কি হয়েছে?আচ্ছা শোন আব্বু কেমন আছে?’
ঠিক যেন বন্ধনের মতো করেই মুহিন দীর্ঘশ্বাসটা টানলো।
“কি হয়েছে ওদের দুজনের? এমন করে কেনই বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে?’মনে মনে জিজ্ঞাসা মিতালীর।
“কি হলো চুপ করে আছিস কেন মুহিন?কথা বল?আব্বুর এখন কি অবস্থা?’
ফোনটা ছেড়ে দেয় মুহিন,কোন কথা না বলে।
মিতু কিছুই বুঝতে পারছে না,কোথাও যেন তার মনে হতে লাগলো কান্নার আওয়াজ ভাসছে,দূর থেকে আবছা আবছা,হঠাৎ মিতু দেখতে পেল তাদের আদাবরের বাবার বাসায় ভীড় করে আছে মিতুর আত্মীয় স্বজন।
চাচা,চাচী,কানন ভাই,ভাবী সবাই কাঁদছে,রশিদ চাচা,রহিমা খালা সব কাঁদছে। কিন্তু কেন?
হীমেলকেও দেখা গেল।
মিতুকে দেখেই থমকে দাঁড়ালো।বিরক্তি ধরে গেল মিতালীর।
মৌভাবীর ছেলে হয়েছে,কি গোলটুস পুলটুস বাচ্চাটা!
সেও যেন অবাক বিস্ময়ে ভাবীর কোলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,তার মা কাঁদছে দেখে সেও কাঁদছে।
একই সাথে পারুল,সেতারা।
“সেকি সেতারা আপু কোত্থেকে এলো?মালোয়শিয়া থেকে এলোই বা কবে?’
হঠাৎ মিতু দেখতে পায় বাড়ীর উঠোন টায় বড় বড় বরফের চাই।
আকাশে মেঘ করেছে,চারপাশটা কেমন যেন অাঁধারে বিষন্ন।কিন্তু কেন? এই ডিসেম্বর মাসে এই অসময়ে বৃষ্টি?
“বাংলাদেশের আবহাওয়ার যে কি হচ্ছে?’
এই মাসটায় মিতালীর জন্মদিন।ছোটবাবু,আর বাবাইকে নিয়ে মিতু কেক কাঁটবে আর বাচ্চাগুলোর মুখে কেক মাখাবে… আর বাবু দেখবে অবাক হয়ে,তার মিতুটা এখনও এসব করে মজা পায়… আর কাছে এসে মিতুকে বাহুডোরে বলবে,
“আমার বাচ্চা বউ একটা।’
“ইশ এটা শুনতে যে কত ভালো লাগে আমার!’
আবারও ভেসে ওঠে আবছা আবছা দৃশ্য
মিতু দেখলো মুহিনের কপালে রুমাল বাঁধা,তার এককাঁধে খাটিয়ার একপাশ,অন্যপাশটা ধরে আছে কানন ভাই,পেছনে হীমেলও আছে,আর দুলাভাই,সেতারা আপুর স্বামী।কলেমা পড়ছে সবাই…
“আশশাদু আল্লা ইলাহা ইল্লালাহু,ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’
বুকটা প্রচণ্ড জোরে মোচড় দিলো মিতুর,খাটিয়ায় কে শুয়ে আছে,কার লাশ বহন করে চলছে এরা?
তবে কি….?
ভয়েতে কুঁকড়ে ওঠে মিতু,দপাদপ লাফাতে থাকে ওর বুকটা,বন্ধনকে পেছন থেকে জাপটে ধরে।
কিন্তু বন্ধনও সরে যেতে তাকে, মিতুকে ছেড়ে।
মিতু এবার সামনে এসে দাঁড়ায়।কিন্তু একি?
বন্ধনের কোল জুড়ে সাদা কাফনে প্যাঁচানো ছোট দেহাকৃতির অবয়ব।
এবার মিতুর সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়।কপালে সেই বিন্দু বিন্দু ঘাম।
“বাবু আপনার কোলে এটা কার দেহ?’
“মিতু আমাকে ছাড়ো, আমার যেতে হবে….।’
“না কোথাও যেতে পারবেন না আপনি?বলুন কি এটা?আর আমার ছোটবাবু কোথায় বলুন?’
“আহ্ মিতু! এখনো বুঝতে পারছো না,কি এটা? কেন অবুঝের মতো করছো,ছাড়ো,আমার এখন অনেক কাজ…’
বন্ধনকে ধরে রাখার মতো শক্তি পায় না মিতু।ওর পেটটায় হাত দেয় ফের,
“আমার সোনামনি,আমার বাচ্চা, কই রে তুই?মামনীর কোলে আয়?তোর আব্বুটা কেন এমন করছে বল তো?কখনও এমন করে নি…?’
অকস্মাত অট্টহাসির আঁওয়াজ শুনতে পায় মিতু,যা সে আগেও শুনেছে।
পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে কি বিদঘুটে রকম হাসিতে ফেঁটে পড়ছে পাঁপিয়া।
পাগলের মতো মিতুকে বলতে থাকে,
“দেখ মিতু,তুই আমার কাছ থেকে বাবুকে কেড়ে নিয়েছিস,আমিও তোর ছোটবাবুকে…’
“কি আমার ছোটবাবুকে?এই খবরদার একদম বাজে কথা বলবেন না,বাবু জানতে পেলে আপনাকে ও ছেড়ে দেবে না… সাবধান।’
“হাহাঃ হা তুই কি আসলেই বোকা না বোকা সেজে থাকিস।এই শোন পাঁপিয়ার জিনিসে যে হাত দেয় তার ভাগ্যে সেরকমই হয়,যা এখন তোর ভাগ্যে হয়েছে,বাবু নিয়ে সেদিন অনেক বড়াই করেছিলি না তুই,দেখ্ তোর বাবু,ছোটবাবু কোনটাই তোর কাছে নেই।সব হারিয়ে ফেলেছিস তুই….।’
ফের অট্টহাসি পাঁপিয়ার।মিতু আর সহ্য করতে পারে না।কানে হাত দিয়ে রাখে ও।ওর মাথাটা ঘুরছে,ভীষনভাবে ঘুরছে।আঁধার হয়ে আসছে ওর সবকিছু।তবে কি সে মরতে চলেছে।তাই যদি হয়,একবারও কি ছোটবাবু,বাবুর মুখটা দেখতে পারবে না?
“বাবু….কই আপনি?দোহাই লাগে আর চুপ করে থাকবেন না,আমাদের ছোটবাবু,সোনামনি কই?ও কি মরে গেছে?দোহাই লাগে ওর মুখটা আমাকে একটু দেখান….।’
প্রায় বারো ঘন্টা পর মিতুর জ্ঞান ফেরে।মাঝে হসপিটালে আসার পর প্রায় সাথে সাথে বাবু, বাবু বলে জেগে উঠে,ফের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
এর ভেতরে ঘটে যায় বেশ কিছু…।
ঢাকা সি এম এইচে এনে,ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে মিতুকে রাখা হয়।এর ভেতরে মিতুর আত্মীয় স্বজন যে কাউকে ঢুকতে দেয়া নিষেধ।
আই সি ইউ এর বাইরে অপেক্ষারত,পারুল,রানু, নানু, মিতুর চাচী,মৌভাবী আর তার বাচ্চা।
মিতুর শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝরেছে।নেগেটিভ রক্ত সহজে পাওয়া যায় না।কিন্তু রানুর ব্লাডগ্রুপের সাথে কি করে যেন মিলে গেল।রানু রক্ত দেয় মিতুকে।কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।আর মাত্র এক ব্যাগ রক্ত পাওয়া গিয়েছে।
বন্ধন পাগলের মতো রক্ত খুঁজতে নেমে পড়ে।কিন্তু কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
ডাক্তারের ভাষায়, বাচ্চাটা নেই মিতুর শরীরে।মিতু প্রচন্ড জোরে পেটে আঘাত পেয়েছিল।প্রায় সাড়ে তিন মাসের ভ্রন। তিন মাসের ভেতরেই জান চলে আসে বাচ্চার শরীরে।বাচ্চাটা এভাবে পড়েও যেতো না,কিন্তু মিতু অনেকবেশী মানসিক চাপে ছিল।এটাতেও এফেকটেড হয়েছে মা,বাচ্চা প্রবলভাবে।মিতুর শরীর অনেকবেশী আনকনশাস।ডাক্তারদের চিন্তা এখন মিতুকে নিয়ে,যে সে ঝুঁকিমুক্ত নয়।ভ্রুন বের হয়ে যাবার পরও ভেতরটা ভালো করে ওয়াশ করতে হবে।না হলে পঁচন ধরে যেতে পারে।যত দ্রুত সম্ভব সেটা করে ফেলতে হবে।কিন্তু মিতুর শরীরের যে কন্ডিশন,সেটা করার মতো অবস্থা এই মুহুর্তে নেই।এবং তা ঝুঁকিপূর্ন এই মুহুর্তে। রক্ত ও এখনও পাওয়া যাচ্ছে না,যে কোন সময় বড় কোন বিপদ ঘটে যেতে পারে।
বন্ধন গাড়ীটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে,অন্য যে হসপিটাল গুলো আছে তাতে ফোনের পর ফোন দেয় সে,স্বশরীরে গিয়ে যেভাবেই হোক রক্ত যোগাড় করতে হবে তাকে।
“মিতুকে বাঁচতে হবে,আল্লাহ দয়া করো,,,কিন্তু নানুর জন্যে ঐ ডায়নী আজ আমার হাত থেকে বেঁচে গেছে।নইলে ওকে আমি গুলিতে ঝাঁঝড়া করে দিতাম আর মিতুরও যদি কিছু হয় ওরে পাঁতাল ফুড়ে বের করে আনবো জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো ডাইনীটাকে….।
‘গাড়ীর স্টিয়ারিং এ হাত ঘুরিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে বন্ধন।বাচ্চাটা পড়ে গেছে,তার শ্বশুর মারা গেছে,কক্সবাজার থেকে এসেই মুহিনকে ছাড়ানোর জন্যে সকাল থেকে দৌড়াদুড়ি করে তাকে ছাড়িয়েছে।মিতুর এ অবস্থা।
কোনদিক দিয়ে আজ বিপদ বন্ধনের পিছু ছাড়ছে না।তার শরীর, মন ও প্রবলভাবে বিপর্যস্ত।দুইভাইয়ের কোন ভাই ও এখন সাথে নেই তার।গাড়ী চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হলেও অসম্ভব কিছু ঘটবে না।(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫৮
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

“পাঁপিয়াকে পুলিশে দেয়া উচিত ছিল।’
ঢাকা সি এম এইচের আই,সি ইউ এর বাইরের কেবিনে বসে ভাবছে পারুল।
“অবশ্য দিলেই কি যে ডেনজেরাস মহিলা!নীবিড় বলেছিল,আজ তো নিজের চোখেই দেখলাম?’
খুব অস্থির করছে তার মনটা।বন্ধন দুলাভাই বারবার করে বলে গেছে মিতুর দিকে খেয়াল রাখতে।ওর জ্ঞান ফিরলেই বন্ধনকে ফোন করতে।মনে মনে বিড়বিড় করে পারুল।
“সেই সকাল থেকে বেচারা দুলাভাই পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে।মিতু আপুর বড় চাচার ফোন পাওয়া মাত্রই সেই কক্সবাজার থেকে ছুটে এসেছে।একটা সেকেন্ডও সময় নষ্ট করেনি।মুহিনকে হাজত থেকে ছুটিয়েছে,তার উপর ফুপার মৃত্যু।এখন মিতু আপুর রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ও নেগেটিভ রক্ত।খুবই রেয়ার রক্ত।কখন পাওয়া যাবে রক্ত কে জানে?আল্লাহ রহম করো…।’
এই রক্তের গ্রুপ ইউনিভার্সেল ডোনার। অর্থাৎ এই ব্লাডগ্রুপ সর্বদাতা।রক্ত সবাইকে দিতে পারবে কিন্তু নিতে পারবে না।
“আজ পাপী পাঁপিয়ার কারনেই মিতু আপুর এ অবস্থা।বাচ্চাটা নেই, মিতু আপু কিভাবে সহ্য করবে…?’
বসে বসে সেই স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে বারবার পারুলের মনে,
বন্ধন পাঁপিয়ার ছোট ছোট গর্তের দাগ ভরা,মেকাপপূর্ন গালে সজোরে চড়ের আঘাত করেছিল।তারপর দ্বিতীয়বারের মতো তার পিস্তল ঠেঁকিয়ে ছিল ওর কপালে।
নানু ও পারুল দৌড়ে ঠেঁকায় বন্ধনকে।
“দুলাভাই কি করছেন?ওকে মারলে আপনি বিপদে পড়ে যাবেন।’পারুলের আশংকা।
“না পারুল,ওকে আজ আমি শেষ করবোই করবো,ও আমার বাচ্চাকে খুন করেছে,আমার বউ এর গায়ে হাত দিয়েছে,আর এটা লাইসেন্স করা পিস্তল।ওর মতো খুনী ডায়নীকে মারলে কিছুই হবে না।’
নানু,পারুল,বুয়া প্রায় সবাই বন্ধনকে আটকাতে থাকে,ফের নানু বলে,
“ওর বাপে মন্ত্রী,ওয় এমপি,তুই ওগো লগে পারবি না ভাই,ওরে ওহন ছাইড়া দে,মিতুর কাসে যা…। ‘
“হ্যা দুলাভাই,উনাকে এখন ছেড়ে দেন, পরে যা করার করেন, মাথা ঠান্ডা করেন,মিতু আপুর কাছে যান জলদি।’
প্রচণ্ড রাগে হাপাতে থাকে বন্ধন,
“হ্যা ওর বাপ মন্ত্রী,ভার্সিটি লাইফ থেকে দেখেছি, এই পাওয়ারের তকমা গায়ে লাগিয়ে বেপরোয়া জীবন যাপন করতো।যখন আমি তাকে বিয়ে করতে চাইলাম, সে এই পাওয়ার ফুটানি দেখাতে লাগলো,তার কেরিয়ার গড়তে হবে,বিয়ে করে মা হবার মতো সময় তার নাই এসব আমাকে বলতো।তারপর কেয়া আমার জীবনে আসার পর ওর জ্ঞান হলো ও কি হারিয়েছে।বারবার ভিখারীর মতো এসেছে, আর আমি ভিখিরীর মতোই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি।আমাকে এও বলে অভিশাপ দিতো, আমি,কেয়া কখনো সুখী হবো না।জানি না আল্লাহ এই অভিশাপ,ওর মতো ডাইনীর অভিশাপও কবুল করেছেন কিনা।কিন্তু আমি ভয়ে থাকতাম।তাই কেয়াকে হারিয়ে আমি নতুন কাউকে আমার লাইফে আসতে দেইনি।মিতু যেদিন থেকে বাবাইকে পড়াতে আসতো,বাবাই আর নানু তুমি মিতুর কথা আমাকে বলতে।কিন্তু কখনো মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকাই নি পর্যন্ত।মানুষ এত ভালো কেমন করে হয়?মা মরা আমার ছেলেটাকে তখন থেকেই সে মায়ের মতো ভালোবাসতো।নানুর কথা শুনে কেমন করে যেন আমার অন্তরটায় মিতুর জন্যে আলাদা একটা জায়গা তৈরী হতে লাগলো ।যেদিন নানু তুমি আমাকে মিতুর ছবি দেখালে,সেদিন থেকেই আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমারই অজান্তে।তাই ভয় হলো,কারন অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়।হলোও তাই এই ডায়নী যে আমার কাঁধে ভর করেছিল,মিতুর ভালোবাসায়, আদর সোহাগে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম?’
“এত ভালোবাসা ঐ দুটাকার মেয়ের জন্যে তাহলে বিয়ের আগে আমার সাথে কি করেছিলি,ঐ আদর সোহাগ তো আমার সাথেও হয়েছিলো,এখন কচি মাংসের নরম স্বাদ পেয়ে আমাকে আর ভালো লাগে না তোর?’আবারো হিংসার আগুনে ফুঁসতে থাকে পাঁপিয়া
“খবরদার? কে দুটাকার মেয়ে?ঐটা তো তুই?তুই ওর পায়ের নখেরও উপযুক্ত না,আর হ্যা মিতুকে বিয়ের আগে তোকে ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে গিয়েছিলাম, মিতুর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে নানু ও বাবাই এর জন্যে আমি যদি তখন বলতাম,যে আমি মিতালীর প্রেমে পড়ে গেছি,তাহলে তখন থেকেই তুই ওর ক্ষতি করার ধান্ধা করতি।এতটাই বেলেল্লাপনা ছিল তোর,শেষবারের মতো তুই আমার কাছে শরীর খুলে দিয়েছিলি।বাট কোনভাবেই নিজেকে আমার কাছে সমর্পন করেও যখন সাকসেস হোস নি তখন থেকেই তোর জ্বালা ধরে গিয়েছিল।আর শোন শরীর দিয়ে কখনো ভালোবাসা হয় না,যদি হতো পাঁচ মাস আমি মিতুর থেকে দূরে থাকতে পারতাম না।’
“কিন্তু দুলাভাই তাই বলে পাঁচমাস আপনি আপুর থেকে দূরে ছিলেন?মিতু আপুর মনের খবর কি একবারও জানার চেষ্টা করেননি?’পারুলের জিজ্ঞাসা।
“মিতুকে প্রথম দেখেই বুঝেছি,ও সংসারী মেয়ে,আমাকে যে ওর ভালো লাগতো,তাও বুঝতাম,কিন্তু নিজের ভালোবাসাকে জিন্দা দাফন করেছি,তারও উপযুক্ত কারন ছিল।ও যখনই আমার আশপাশ দিয়ে হাঁঠতো,আমার হৃদয়টা কাঁপতো,আমার মনে হতো ওকে ছুঁলেই আমি ওকে হারাবো,সার্বক্ষণিক ওকে হারানোর ভয় আমাকে কু্ঁড়ে কুঁড়ে খেতো।’
“বাহ্ খুব ভালো তোর এই প্রেম কাহিনী বন্ধ কর,আমাকে তুই মারতে চেয়েছিলি না মার আমাকে,এত কথা জানতে চাই না আমি ওকে…’
“জানতে হবে,তুই মরার আগে জেনে যা, আমি শুধু মিতুর এটা শুনে মর তুই।’
আবারও হ্যান্ডগান নিয়ে বন্ধনের প্রস্তুতি।তবে নানু এবার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“তুমি কেন সামনে আসলা?’
“কেন আসুম না?কেয়া মরার পর চোখের সামনে দেখসি তুই শেষ হয়া যাইতেসিলি ওহন মিতুর কিসু হইলে তোরে আমি আর কত সামলামু কো?এর চেয়ে আমারে মার আগে?’
“নানু তুমি আবার এসব কি বলছো,তুমি চাও আমি ওকে এভাবে ছেড়ে দেই।’
“ওর বাপে মন্ত্রী তোরেও তো ছাড়বো না?
“কিসের মন্ত্রী?আগে ছিল এখন তো নাই।আর ওর বাপ জানে না ওর মেয়ে একটা বেশ্যা, মেয়েকে আটকে রাখতে পারেনি,ওমন মেয়ের পরিণতি দেখুক ওর বাপ!’
“হইবো সব হইবো,ওর বিচার আল্লায় করবো,ওহন তুই মিতুর কাসে যা,মাইয়াটা কেমন আসে কে জানে?’
“হ্যা দুলাভাই দোহাই লাগে এখন মিতু আপুর কাছে যান।আমিও যাবো চলেন।’
হঠাৎ পারুলের মোবাইলে ফোন আসে।সজাগ হয় পারুল,তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল,মিতু আর বন্ধনের কথা ভেবে।
“হ্যালো পারু আপু?মিতু আপুর কি অবস্থা?রক্ত যোগাড় হয়েছে?জ্ঞান ফিরেছে আপুর?’
“না মুহিন?ঐ যে রানু মেয়েটা আপুকে এক ব্যাগ রক্ত দিতে পেরেছে।তাছাড়া আর কোন রক্ত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।তোদের কি অবস্থা ভাই?’
“আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে দু ব্যাগ রক্ত যোগাড় করতে পেরেছি।’
“আলহামদুলিল্লাহ নিয়ে আয় তাহলে।’
“হ্যা আসছি,কিন্তু সেটার সেম্পল নিবে,কি সব টেষ্ট করতে করতে মনে হয় আরও সময় যাবে,আর ডাক্তার বলে পাঁচ, ছয় ব্যাগ রক্ত যোগাড় করে রাখতে।কি যে করি?এই রক্ত পাওয়া তো খুবই কঠিন।’
” ঠিক আছে যা আছে তাই নিয়ে আয় জলদি,আমি ফেইসবুকে জরুরী ভিত্তিতে স্ট্যাটাস দিয়ে দিচ্ছি আর দুলাভাই কই জানিস?’
“দুলাভাইও খুঁজছে,ঢাকার বাইরে থেকে তার কোন ভাই নাকি আসছে রক্ত দিতে।’
“কখন আসছেন?তোরা আগে তাড়াতাড়ি আয়।’
“হ্যা আসছি,আপুর জ্ঞান ফেরেনি আমার কিছু ভালো লাগছে না পারু আপু?’মুহিন পারুলকে পারু বলে ডাকে।
“আল্লাহকে ডাক ভাই,এত ভেঙে পড়িস না,আর দুলাভাই এর সাথে কে আছে উনার কাছাকাছি থাক,সাহস পাবি,সেও তো একা।’
“আমরা বিছিন্ন হয়ে আছি আপু।আর দুলাভাই এরও শরীরটা ভালো না,আব্বুকে দাফন করার পর দেখলাম মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল।বেচারা এখন একা দৌড়াচ্ছে।’
“কি বলিস?কে আছে এখন দুলাভাই এর কাছে?’
“কেউ ছিল না,সে একাই দৌড়াচ্ছে,আপুুদের সৈনিক ড্রাইভারও নেই,আর কানন ভাই আমার সাথে,আমরা অনেক দূরে ছিলাম তার থেকে, এখন তো হাসপাতালেই চলে আসবো।তাই হীমেল ভাইকে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
“হীমেল ভাইকে?’কিছুটা চমকে ওঠে পারুল।
“হ্যা কেন?কোন সমস্যা?’
“না কিছুনা….।’ফের উৎকন্ঠা পারুলের।(চলবে)অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here