দ্বিতীয় বাসর পর্ব ৭৬+৭৭+৭৮

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৭৬
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

ভীনদেশের মাটিতে পা রেখেছে বন্ধন বাবু।প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে তার পুরো অন্তর জুড়ে।
প্রথম প্রেমের দহনজ্বালা নাকি অনেক বেশী,
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় সব,সেটা বন্ধন বুঝে নিল নিজের জীবন দিয়ে।
“কিন্তু সেটা কোন কাঁচা বয়সের পীরিতি বলার উপযুক্ত তো নয়?তবে কেন এমন হলো?’ কেবলই জিজ্ঞাসা বন্ধনের।
আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে তার বয়স যখন মাত্র তেইশ কি চব্বিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া টগবগে যুবক বন্ধন।
কতশত মেয়ের ঘুম হারাম করা সেই যুবক একসময় পাঁপিয়া নামের একটি অতি আধুনিক মেয়ের স্বপ্নের রাজকুমারে পরিণত হয়।সুচতুর পাঁপিয়াও তাকে তার প্রেমের মায়াজালে জড়াতে পেরেছিল তার অপরিসীম ছলনা আর লালসার জোরে।
তবু সব ভুলে বন্ধন যোজন দূরে সরে গিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি।পাঁপিয়া তার জীবনে বিভিন্ন সময়ে ঘোর অমাবস্যার অমানিশা হয়ে এসেছে।
বন্ধন আজও তা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।
কেয়া যদিও চুপচাপ ভালো স্বভাবের একটা মেয়ে ছিল।
যদিও সে মিতালীর মতো এত নরম মনের আবেগপ্রবন মেয়ে ছিল না।সেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়তো তাদের সাথে।
চমৎকার গানের গলা ছিল আর ডিবেটিং এ অসাধারন তার্কিক বা বাকযোদ্ধা।
তাই ব্যক্তিত্ব ও মেধা পাঁপিয়া বা বন্ধনের তুলনায় কম ছিল না।তাছাড়া থিয়েটার এর একনিষ্ঠ কর্মী বা নাট্যঅভিনেত্রী এবং সুন্দরী।
পাঁপিয়ার আচরনে একরকম বিরক্ত বন্ধন একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং এসোসিয়েশনে কোন এক তর্কে জড়িয়ে যায় কেয়ার সাথে।
কেয়ার ব্যক্তিত্বে কেমন করে যেন মুগ্ধ হয়ে পড়ে।
ঐসময় পাঁপিয়ার সাথে মন রেষারেষি আর অন্যদিকে যৌবনের তাড়না,কেয়ার মতো মেধাবী ও সুন্দরীর প্রেমে না পড়ার কোন কারন ছিল না।
কেয়া স্ট্রেইটফরোয়ার্ড, সোজাসাপ্টা মেয়ে বন্ধনের সাথে পাঁপিয়ার সম্পর্ক ও বিচ্ছেদ মোটামুটি সবই জেনে গিয়েছিল।শর্ত ওর একটাই ছিল, পাঁপিয়ার সাথে সবরকম সম্পর্কচ্ছেদ করে আসতে হবে।পারিবারিক ভাবে তাকে বিয়ে করে বন্ধনের ঘরে তুলতে হবে।তাছাড়া তারও সময় কম ছিল,বাইরে থেকে হাইয়ার স্টাডিস করার প্রবল ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল তাছাড়া থিয়েটার নিয়ে তার আরও কিছু বাসনা ছিল।
বন্ধনের এতে কোন আপত্তি ছিল না।ততোদিনে বন্ধন এম আই এস টি তে চলে আসে তার স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়তে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে।
সে হিসেবে কেয়ার সাথেও পরিচয় প্রায় সেরকম, প্রায় পাঁচ বছর প্রেম বিবাহিত জীবন মাত্র এগারো বছর।
আর তিন বছর পূর্বে তো সে মারাই গেল।
কেয়ার সাথে মিতালীর যেমন অমিল ছিল, তেমনি মিলও খুঁজে পায় বন্ধন।
দুজনেরই গানের গলা চমৎকার।তাছাড়া মিতালী মিতু ছোটবেলা থেকে ডায়রী লিখে,কবিতাও লিখেছে কিছু,জানে আবৃত্তি।মিতু আর্টিস্ট বা আঁকিয়েও বটে,ওর আঁকা ছবিগুলি বেশ সুন্দর।
মুহিন ও সেতারা দেখিয়েছে সেগুলো ওদের বাসায়।
কেয়ার সাথে আবার অমিল ছিল যেটায়,সেটা হলো কেয়া স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড এবং অনেকটাই বাস্তববাদী।
মিতু ততোতাই লাজুক,আবেগপরায়ণ এবং রোমান্টিক।
বাচ্চাদের মতো আল্লাদিপনা,চোখে মুখে দুষ্টু দুষ্টু মিষ্টি আহবান, আর পাগল করা জাদুকরী কথা।তবে তা পাঁপিয়ার মতো মন ভোলানো ছিল না,কারন মিতালী যা বলতো তা তার ভাগ্যকে সঁপে দিয়ে।
তার চোখে মুখে কোন ছলনা ছিল না,ছিল অফুরন্ত ভালোবাসার নিঃসীম সমুদ্র।সে সমুদ্র কতখানি গভীর আর তাতে সাঁতরানো,ফের ডুবে যাওয়া যে কতখানি আনন্দের তা কেবল তার জীবনে একটা মানুষই জেনেছে।সে হল মিতুর অন্তরের মানুষ, তার প্রাণনাথ বন্ধন বাবু।

এসব শুধু ভেবেই চলেছে বন্ধন গত কয়েকটা দিন ধরে।বিশেষ করে মিতুর সাথে দুর্ঘটনার পর, বন্ধনের জীবনে সব ওলটপালট হওয়ার পর।
পাঁপিয়ার পালিয়ে যাওয়া সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি।
জামিল একসময় দারস্থ হয়েছিল,পাঁপিয়ার সাথে তার সংসার বাঁচানোর শেষ চেষ্টা একমাত্র মেয়ে তন্নীর কথা ভেবে।
বন্ধনের উদ্দেশ্যও সেটাই ছিল। কিন্তু ভাগ্য এবারও তার সহায় ছিল না কিংবা নিজের একাকিত্ব দূর্বিসহ জীবনে ভাগ্য বিড়ম্বনায় চরম ভুল করে বসে বন্ধন।
যার খেসারত দিতে হলো নিরপরাধ মিতু ও অনাগত নিস্পাপ শিশুটিকে।
তাই বন্ধনের এবার উদ্দেশ্য এখন একটাই পাঁপিয়ার সাথে তার শেষ বোঝাপড়া সে করবেই।দুনিয়ার যে প্রান্তে থাকুক না কেন যে পাঁপিয়া একদিন বন্ধনকে চরমভাবে অভিশাপ দিয়েছিল সে অভিশাপ এবার নিজ হাতে খতম করবে।

তবে একাজে খুব বেশী মেহনত করতে হয়নি বন্ধন বাবুকে।জামিল এবার নিজ থেকে সহায়তা করলো বন্ধু ও সহপাঠী বন্ধনকে।
দুবন্ধু ও জামিলের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে পাড়ি জমালো এবার,সূদুর ব্রিটিশ রাজ্যে; ইংল্যান্ডে অবস্থিত লন্ডন নগরীতে।(চলবে)

নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here