দ্বিতীয় বাসর পর্ব ৭৯+৮০+৮১

“দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প),পর্ব-৭৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

জার্নাল থেকে পাওয়া রানীর লেখা সেই ডায়রীতে ফিরে যায় বন্ধন,
উইন্ডসর ক্যাসেল থেকে রানী আর প্রিন্স অ্যালবার্ট (রানীর স্বামী) বাকিংহাম প্রাসাদে ফিরছিলেন।
এরপর প্রাসাদের বাইরে এসে রানী তখন গভীর মনোযোগ দিয়ে ডায়রী লিখতে বসে যান ঠিক মিতুর মতো করেই।
প্রিন্স দ্বারকানাথ ও রানীর সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি ছিল এরকম,
তখন ছিল জুন মাস।উইন্ডসর ক্যাসেল এ চমৎকার প্রাতরাশ শেষ করে মাত্র তেইশ বছর বয়সী রানী ভিক্টোরিয়া অপেক্ষা করছিলেন এক বিশেষ দর্শনার্থীর।
তাছাড়া ভারতীয় সামাজ্র্য থেকে আসা মানুষজনদের সাথে আলাপ পরিচয়ে রানীর ছিল বিশেষ আগ্রহ।

এরপর এল সাক্ষাতের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এগারোটা বাজার খানিকপরে মহারানীর অধস্থন এক রাজকর্মচারী লেফটেন্যান্ট ফিটজেরান্ড তার সামনে এনে হাজির করালেন সেই “ভিজিটর’কে।
তিনি আর কেউ নন।প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, যিনি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের(দার্শনিক ও ব্রাক্ষ্র সমাজসেবক) পিতা।এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ অর্থাৎ দাদা।
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, যিনি লম্বা,সুদর্শন,সবিনয়ী।
তৎকালীন ইউরোপীয় বনিকদের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তা।
একজন সমাজসংস্কারক, ব্রাক্ষ্র ধর্ম প্রচারক এবং সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
যখন তিনি ব্রিটেনে অবস্থান করেন তখন তার সমকালীনরা তাকে প্রিন্স নামে অভিহিত করেন।এভাবেই তিনি প্রিন্স নামে পরিচিতি লাভ করেন।
রানীর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র ক’দিন পূর্বে ইংল্যান্ড এর ডোভার বন্দরে এসে পৌঁছান তার নিজের জাহাজে চেপে।
জাহাজের নাম “দি ইন্ডিয়া’।যা ১৮৪২ সালের ৯ জানুয়ারি কলকাতা থেকে ছেঁড়েছিল আর তার ঠিক ছ’মাস পরে অর্থাৎ ৯ জুন দ্বারকানাথ পৌঁছান এই ইংল্যান্ডে।

রানী তখন বসেছিলেন সেই ঘরটায়,যেখানে ইংল্যান্ড সফরে আসা; নানা দেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, বনিক অথবা দর্শনার্থীসহ বহু অতিথিদের সাথে সাক্ষাতে দর্শন দিতেন মহারানী।
ঘরের দেয়ালে ঝুলছিল তখন বড় সব ইংরেজ রাজাদের ছবি।”উইলিয়াম দ্যা কংকারার ‘থেকে শুরু করে রাজা তৃতীয় জর্জ হয়ে রানী শার্লট অবধি।
প্রিন্স দ্বারকানাথ যখন রানীর সামনে এলেন তখন তার মাথার ওপর ঝুলছিল সুদৃশ্য, লম্বা ও বিরাট ক্রিস্টালের রাজকীয় ঝাড়বাতি।
অনিন্দ্য সুন্দরী,যুবতী রানী তার চেয়ারে বসেছিলেন তখন বেশ ভাব-গাম্ভীর্যতার সাথে আয়েশি আমেজে।
বন্ধন বারবার মহারাণী ভিক্টোরিয়ার স্থলে কল্পনা করতে থাকলো মিতালী মিতুকে।
আবারো হারিয়ে যায় বন্ধন সুশোভিত রাজকীয় ইতিহাসে।

প্রিন্স দ্বারকানাথ এবার মুগ্ধচিত্তে, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তার মাথাটা নুইয়ে প্রথামাফিক রাণীর মোলায়েম হাতে চুম্বন করলেন।আর এই দৃশ্যে বন্ধন নিজেকে অনুধাবন করতে থাকে।
এই সাক্ষাতের পর রাণী তার জার্নালে(যা তার ব্যক্তিগত ডায়রি) একটি ছবি এঁকেছিলেন।ঠিক মিতালী যেভাবে আঁকতে জানে,কল্পনায় ডুবে রয় বন্ধন।
ছবিটি আর কারো নয়, প্রিন্স দ্বারকানাথের স্কেচ।
তাতে লেখা, “Tagore Zaminder'(টাগোর জামিনদার)
রানী তার ডায়রিতে অপূর্ব ভাষা মাধুর্যে বর্ননা করেছিলেন অনেকটা এভাবে,
“প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, ভারতের বর্তমানে নামীদামী বনিক বলে বেশ সুপরিচিত। যার পরনে ছিল তার দেশের জাতীয় পোশাক,সোনালী ও লাল সুঁতোয় কাজ করা সুদৃশ্য পাজামা।অপূর্ব শাল।’
ঠিক এইরূপেই রানী স্কেচটি এঁকেছিলেন।
আঁকা সেই ছবিটিতে প্রিন্স দ্বারকানাথের মাথার ওপর সুদৃশ্য টোপরখানা বা পাগড়ীও যেন জ্বলজ্বল করছিল।
৪৮ বছর বয়সী দ্বারকানাথ কেমন করে যেন সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন ইংরেজ “লেডী ‘দের কাছেও।
বহু ডিউকের সাথে ওঠাবসা থেকে শুরু করে ডাচেসরাও তার অনুরক্ত হয়ে ওঠে।
শিল্প,সংগীত ও সাহিত্যেও সমান পারদর্শী এই দ্বারকানাথ বাবু এভাবেই মুগ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন; তৎকালীন রূপে, গুনে সবার থেকে কিছুটা ভিন্ন মহারাণী ভিকটোরিয়ার কাছে।
তাই সাক্ষাতের মিষ্টি মধুর আলাপনের পর মহারাণীর সাথে প্রিন্স দ্বারকানাথের বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন বেশ সুবিদিত ছিল।কারন পরের টানা চার বছর অটুট ছিল সেই বন্ধুত্ব এমনকি ১৮৪৬ সালের ১ আগষ্ট পর্যন্ত অর্থাৎ দ্বারকানাথের অকাল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

এসবই বন্ধন একটি ব্রিটিশ জার্নালে, ইংলিশ ম্যাগাজিনে পড়ে জেনেছিল।এখানে এসে বাকিংহাম প্রাসাদ যখন পরিদর্শন করছিল বন্ধন তখন জার্নালে লেখা ঐ কথাগুলো ঘুরপাক করছিল।
“বাবাই,মিতুকে যদি এখানে নিয়া আসা যেত,,,,?’ ফের দীর্ঘশ্বাস বন্ধনের।
টেমস নদীর ধার ঘেষে একপাশে দাঁড়িয়ে কতশত ভাবনায় বিমুগ্ধতা তার।
এবার তার লেপটোপের ব্যাগ থেকে একটা জিনিস বের করে।
লাল আর নীল শেডের সুন্দর কভারের ডায়রিটা খোলে এবার।
একটি বিশেষ কাজে এবং তার জীবনে প্রথম ভালোবাসার সাথে সাক্ষাতের পূর্বে বন্ধন কিছু সময়ের জন্যে সময় কাঁটাতে চায় তার সেই মানুষটির ভাবনার সাথে।
মিতুর সুন্দর ঝকঝকে হাতে গুটি কয়েক লেখায় ফের মনোনিবেশ করে বন্ধন।
ডায়রিতে লেখা প্রতিটি শব্দের আবেগের সাথে নিজেকে হারায় বন্ধন আবার,,,,
“আজ সেপ্টেম্বর এর তিন তারিখ।বন্ধন বাবু প্রথম বারের মতো আমায় স্পর্শ করলেন।অথচ আমার বিয়ে হয়েছে মে মাসের দশ তারিখে।হিসেব করলে টানা পাঁচমাস পর তিনি আমাকে ভালোবাসার আদর মাখা সোহাগে ভরিয়ে দিতে চাইলেন,,,,,
যদিও পাঁচমাস পর আমাকে তার ভালোবাসার সোহাগে পাগল করতে চাইলেন,,,,আচ্ছা এটাকেই কি বাসর বলে?অথচ যে বাসর নিয়ে প্রতিটা যৌবনা নারীর কত স্বপ্ন, কত বাসনা থাকে! এটাই কি আমার প্রথম বাসর ছিল?যে বাসরে কোন ফুল ছিল না, আমার বিয়ের রাতের মতো ছিল না কোন সাজানো ফুলশয্যা।
যে বাসরে আমিই ছিলাম সুগন্ধী মাতাল কোন ফুল,আর বন্ধন বাবু আমার প্রান ভ্রমরা। উফহ্ কি ছিল সেই পরশ!?আমি যে কিছুতেই ভুলতে পারি না,পারি না একটা মুহূর্ত সেই মধুর উষ্ণতা থেকে নিজেকে আড়াল করতে।আমার সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগছে,যদিও আমি কিশোরী তো নই?তবে আমার অন্তরটা এত বেশী ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে গেছে সাতাশ বছরের জীবনে আমার আচার আচরন যেন অবিকল কোন কিশোরীর মতোই,,,,কিন্তু কেন?কেন এই ভালোলাগা?
বন্ধনবাবুর প্রতিটা আদর,ছোঁয়া সম্পূর্ণ অন্যরকম।
যদিও তিনি আমার চেয়ে অনেক বড় সিনিয়র এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে বলেই কি তিনি এতটা ক্রেজি ছিলেন আমাকে পেয়ে।নাকি আমাকে প্রথমবারের মতো কাছে পেয়ে বলিষ্ঠ কোন আবেগী অার অবুঝ যুবকের মতো এমন বন্য হয়ে উঠেছিলেন।
আমাকে উনার অধরে জড়িয়ে কতক্ষন বা কতবার যে উষ্ণতার শীতল পরশ দিলেন আমি নিজেও তা জানি না।
শুধু জানি আমি আর নিজের ভেতর নেই।মিতালী রহমান মিতু এখন অনন্ত যৌবনা কোন পুরুষের মজবুত বাহুবন্ধনে আর তীব্র আদরে নতুন করে আমার জন্ম হয়েছে।
বন্ধন বাবু আমার সারা বাহুতে দাঁতে দাঁত বসিয়ে কামড় পর্যন্ত দিচ্ছিলেন।আমার চোখে পানি চলে এল তৎক্ষনাত কিন্তু ভালো লাগায় না ব্যাথায় তা আমি জানি না,,,,,।
তবে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছিল অন্য।বস্তুত তার ইচ্ছার কাছে আমরা সবাই নিরুপায়। বন্ধনও তাই।
আমার শরীর খারাপ হয়ে গেল।পিরিয়ডের শুরু আর আজকেই উনি আমার ভেতর ডুবে যেতে চাইলেন।
তাই আমি বারবার বাধা দিচ্ছিলাম কিন্তু উনি পুরো অবুঝের মতো করছিলেন,তাই বাধ্য হয়েই তাকে বল্লাম।
আজ আমার শরীর ভালো নেই,কিন্তু কোনমতে তিনি এব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিলেন না,,,,,
হাহাঃ হাঃ,,,,আহা! কি অবস্থা হয়েছিল বন্ধন বাবুর চেহারার তা ছিল দেখার মতোই,,,,,,!’
“ও এই ব্যাপার আমার কষ্ট আর হাহাকার দেখে খুব মজা লাগছিল না তোমার,,,,আর লাগবেই না কেন আমিও তো তোমাকে কষ্টে রেখেছিলাম না জানি তা কতখানি?তবে তা অজান্তে মিতু,,,,,যদি তা জানতে?’
বিড়বিড় করে বন্ধন এবার পরের পাতায় যায়।
“গতরাতে আমি অনেকক্ষন তার রোমশ বাহুবন্ধনে ছিলাম যদিও, তবে মধুর সময়গুলোর বিস্তৃতি কেন এত অল্প? আমার ভেতর একদিকে চাপা ভয় অন্যদিকে তার ভালোবাসার বিভোরে উত্তাল উন্মাদনা কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।নানু অসুস্থ বলে দ্রুত তার কাছ পালাতে চাইলাম।কিন্তু তাতেও বন্ধন বাবু নাছোড়বান্দা।অগত্যা দ্রুত পালালাম নানুর পাশে আমার থাকার দরকার এ কথা বলে,তাতে তিনি পুরোই মন খারাপ করে বসলেন।কি যে মায়া হলো,,,,,,কিন্তু কিছু করার নেই বাবু,,,এতদিন পরে বুঝলেন আমাকে আপনার ভালোবাসার দরকার?এতদিনে কেন নয়?বলেন এবার,,,,?
তাই আমাদের দুজনার প্রাণের বাসর অসম্পূর্নই রয়ে গেল আজো!
তারপর নানুর রুমে অনেক কষ্টে পালিয়ে এলাম নিজেকে ছারিয়ে, আর ওদিকে বন্ধন বাবু তো পুরোই বন্য হয়ে হতাশ চিত্তে একা বসে।
আমার রাতে এরপর আর ঘুম আসছিল না,কি করে আসবে? আমি সেই মাহেন্দ্রক্ষণে নিজেকে আবারও হারালাম আমার কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছিল।যে ভালোলাগা আমার জীবনে এর আগে কখনো হয় নি,হবেও না জানি একমাত্র আমার অন্তর যে স্পর্শ করেছে তাকে ছাড়া,,,,,
কিন্তু হায় ভাবনায় ডুবন্ত আমি হঠাৎ দেখি আমার পায়ে নূপুর নাই।
আমার মায়ের সোনার নুপূর, নানী গড়িয়ে দিয়েছিল,,,,কই গেল বুঝলামনা,আদর করার সময় কি খুলে গেলো? আমাদের ঘরটায় বিছানায়,কাবার্ডের নীচে সারা ঘরে খুঁজলাম।কোত্থাও নাই,,,,,,
খুঁজলাম নানুর রুমটায় বুয়াকেও বল্লাম সেও খুঁজে পায়নি।
মনটা বড় বেশী খারাপ কি আর বলবো,আসলে এমনই হয় আমার কপালে সব সুখ একসাথে নেই।
আল্লাহ এবারও বুঝি আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন,,,ভীষন কান্না পাচ্ছে এখন আমার,,,,। ‘

“আহা বাবু তোমার প্রিয় নূপুরটা হারিয়ে গিয়েছিল? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,,,,আচ্ছা এখানে ভালো কোথায় গোল্ডের জুয়েলারি পাওয়া যাবে?আজই খোঁজ নিতে হবে,,,?’
টেমস নদীর তীরে দাঁড়িয়ে,এখন ভাবনা যত বন্ধনের।(চলবে)

নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)
“দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প),পর্ব-৮০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

মুহিন আজ সকালে কোর্টে গিয়েছিল হাজিরা দিতে।
যদিও ছিনতাই করার মিথ্যে অভিযোগে ফেঁসে যাওয়ার পর, তার আর্মি অফিসার দুলাভাই এর একনিষ্ঠ সহযোগিতায় মামলাটির নিস্পত্তি হয়ে গিয়েছিল।
তবে আদালতে আরও কিছুদিন হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল তাকে।
মন খারাপ করে বাসায় আসার পর বড় বোন সেতারা তাকে জিজ্ঞেস করে,
“কি রে মুখ ভার কেন তোর?আবার কোনো সমস্যা হয়নি তো?’
“না আল্লাহর রহমতে আমার আর কোন সমস্যা নাই আপু,তুমি তো ছিলে না দুলাভাই আমার জন্যে যা করার করে দিয়ে গেছে।’
“তা হলে এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?’
“আসলে বন্ধন দুলাভাই এর কথা খুব বেশী মনে পড়ছে।’
“হুম,,,কি করবি বল,আমিও তো ফেঁসে গেছি তোদের জন্যে আমি এখানে আঁটকে গেছি,মালয়েসিয়া ব্যাক করার উপায় দেখছি না,,আর মিতুটার শরীরের যা অবস্থা,কোথায় গেল এখন তোদের প্রিয় বন্ধন? ‘
“আপু আজ কোর্টে কাকে দেখেছি জানো?’
“কাকে?’
“হীমেল ভাইয়াকে,,,সাথে মামী।’
“হীমেলকে? কি বলিস?ও কি করেছে আবার?’
জিজ্ঞাসিত দৃষ্টি সেতারার।
“কিছু করেনি তবে মনে হয় করতে যাচ্ছে আর যা কিছু করছে তা মিতু আপুকে পাবার জন্যে?’
“মানে?কি বলছিস এসব?মাথা ঠিক আছে তো?’
পুরোই চমকে যায় ভাইয়ের একথা শুনে।
“শুনো তাহলে,হীমেল ভাই সম্ভবত তার বউ এর সাথে ডির্ভোস করিয়ে ফেলছে,তার জন্যে তোরজোড় করে উকিলদের কাছে দৌড়াচ্ছে,,,আর আজ আমাকে দেখেই বল্ল সব ঠিক হয়ে যাবে,সামনে সব সুখের দিন মামীকে নিয়ে নাকি বাসায় আসবে কি সব গুরুত্বপূর্ন আলাপ আছে। ‘
সেতারা শুনে প্রচন্ড ক্ষেপে যায়,
“ওর সাহস দেখে আমি সত্যি অবাক হচ্ছি মুহিন আর তুই এত গাধা কেন?এরকম চিট বাটপার কি কথা বলতে চায় তুই বুঝিস নাই?ওর এখন এতই মিতুর জন্যে দরদ তুই দুইটা কথা শুনিয়ে দিবি না?’
“আরে আপু আমি কিভাবে কথা শোনাবো,মামীও সাথে ছিল তিনিও একই কথা বলছিল?’
“কি বলছিল?এদের মাথা দেখি পুরাই খারাপ হয়ে গেছে,,আমাদের বোন কি এত সস্তা হ্যা? আর মিতুর স্বামী এখনও আছে ওরা মিতুকে নিয়ে এসব ভাবার সাহস পায় কি করে?আগে আমার বোনের সাথে ঐ বেয়াদপটা যা করেছে তার জন্যে কিচ্ছু বলি নাই,এইবার মিতুকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কোন ফন্দি আঁটলে ওর হাড় গোড় আমি এক করে তবে মালয়েশিয়া ব্যাক করবো।’
“আপু আমি তো এই ভয়টাই পাচ্ছি।দুলাভাই এর কোনো হদিস নাই,হীমেল ভাই এর হাবভাব সুবিধার না,সুযোগ পেলেই আপুর আগে পিছে ঘুরছে।এতদিন তো বুঝি নাই তবে আজ বুঝলাম।হীমেল ভাই রূপা ভাবীকে কেন ছাড়তে চাইছে?কিন্তু আপু তুমিই বলো মিতু আপুকে পাওয়ার জন্যে কেন আবার এমন করছে?আমার তো তাদের মতলব মোটেও সুবিধার লাগছে না!’
“কি বলবো আমিও তো বুঝতে পারছি না, মানুষ আজকাল সব কিছুতে ফায়দা খোঁজে,আচ্ছা ওর না একটা ছেলে আছে?ছেলেটা তাহলে কার সাথে থাকবে?’
“এতকিছু জানি না সেতারা আপু।আমার উকিলের এক বন্ধু উকিলকে বলতে শুনেছিলাম তার বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে।আমাকেও এও বল্ল আপনার ঐ ভাই তো একটা চাষা নিজের ছেলের জন্যেও নাকি কোনো দরদ নাই। ছেলে মার কাছেই থাকবে এটা আইনের নিয়ম আর হীমেল ভাই বলে কিনা, থাক বড়লোকের ছেলে বড়লোকের কাছেই থাক,আমার কাছে থেকে আর কি হবে?’
সেতারা ভাষা হারিয়ে ফেলে মুহিনের কথা শুনে।
মিতুও এলো মাত্র স্কুল থেকে ক্লান্ত,রুগ্ন আর বিমর্ষ।
তবুও মুখটা যতটা সম্ভব হাসিমাখা করে বলে,
“কোন বড়োলোকের কথা হচ্ছে শুনি?বেশ গুরুর্ত্বপূর্ন আলোচনা চলছে বুঝি তোমাদের?’
সেতারার ভীষন মায়া হয় একটা মাত্র আদরের বোনের জন্যে,,,,ওর কাছে মনে হতে থাকে ওর মাথাটা আর কাজ করছে না,বন্ধনকে এই মু্হুর্তে কতখানি প্রয়োজন সেটা অনুভব করছে এখন অসহায় ভাই বোন গুলো।

রাজকীয় ও সুদৃশ্য, সুবিশাল বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে খানিকটা দূরে অপেক্ষায় রত বন্ধন।স্থির চিত্তে নীরব আবেগে সে অপেক্ষমান তার প্রথম প্রেমিকার জন্যে।যদিও অপেক্ষা একটু অন্যরকম।
তবে এ অপেক্ষার জন্যে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।
যদিও বন্ধন ভীষন অবাক হয় একটা কথা জেনে পাঁপিয়া নাকি এ প্রাসাদ পরিদর্শনের জন্যে এসেছে একটি দেশের প্রতিনিধি হয়ে।ঐসময় টা ইংল্যান্ডের রানীদের নানান সময়ে বিভিন্ন পোশাক ও রাজকীয় গহনাসহ বিভিন্ন দেশের উপহার সামগ্রীর প্রদর্শনীর অায়োজন করা হয়েছিল।পাঁপিয়া এ প্রদর্শনী পরিদর্শন এর সুযোগ পেয়ে যায় তার নামও বদলে ফেলেছে এখানে এসে প্রিসিলা সিস্টার আর সে ভারতবর্ষের প্রতিনিধি রূপে এসেছে এখানে।এসেছে ভারতীয় পাদ্রিদের সাথে দলভুক্ত হয়ে সেবিকার সাজে।
“একটা খুনী কি করে এতবড় সুযোগ পেয়ে গেলো? আর কি করে নির্দ্বিধায় এখানে প্রতিনিধি সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে?ওর মুখোশটা যদি খুলে দেই তবে,,,,? কেমন হবে প্রিসিলা ওরফে পাঁপিয়া ডার্লিং?’
তবে তার চেয়ে অন্য চমক অপেক্ষা করছিল তাদের জন্যে।
পরিদর্শনের পর প্রিসিলা যখন বের হলো তখন প্রাসাদের অদূরে তার চোখ আঁটকে গেল।
কিছুক্ষণ নির্বাক নয়নে তাকিয়ে দৌড়ে এলো যাকে দেখেছিল তাকে। তারপর জাপটে বুকে জড়িয়ে নিল প্রিসিলা সিস্টার ওরফে পাঁপিয়া নামক চল্লিশোর্ধ্ব রমনী তৎক্ষণাত।
আর অস্ফুটস্বরে তার নামটি ডেকে উঠলো ভীষন খুশিতে।(চলবে)
নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)
“দ্বিতীয় বাসর'(গল্প)পর্ব-৮১
হাসিনা সাঈদ মুক্তো

পারুলের বিয়ের কেনাকাটা চলছে বেশ জোরেশোরে।
মিতু বেশ উপভোগ করে এসব বিষয়।
তবে ক্যাপ্টেন জামানের পরিবার বিয়ের অনুষ্ঠান ঈদের পর করাতে চায়।সেই মোতাবেক পারুলের বাগদান অনুষ্ঠান করিয়ে ফেলবে এর ভিতর।
পারুল যেখানেই কেনাকাটা করতে যাচ্ছে তার প্রিয় ফুপাতো দুই বোন সেতারা আর মিতুকে ছাড়া তার চলছেই না।
সেতারা অবশ্য বলে দিয়েছে গহনা দেখার সময়ই যাবে তাছাড়া বাদবাকি কেনাকাটা মিতু আর মুহিনকে নিয়ে করতে।বিয়ের অনেক কাজ।
ছোট মামী প্রায়ই অসুস্থ থাকেন,কাজেই ছোট মামারও ভরসা এখন এই অনাথ তিন ভাইবোন এর উপর।
তাছাড়া পারুলের তো তারা ছাড়া নিজের আপন আর কোন ভাইবোনও নেই।
মিতালী অবশ্য খুব খুশী,জামানকে সে আগেই পছন্দ করে রেখেছে তার আদরের মামাতো বোনের জন্যে।
যদিও ছোটমামী প্রথমদিকে মোটেও রাজী ছিলেন না।
নীবিড়কে সে এত বেশী পছন্দ করে ফেলেছিল পারুলের জন্যে, নীবিড় চলে যাবার পর রাগে অন্ধ হয়ে ছোট মামী মিতুকে যা মুখে আসে তাই বলে ফেলেছিল।
মিতুর বাবা মারা গেছেন তখন একমাসও হয়নি,শরীর প্রচণ্ড খারাপ ছিল মিতালীর।সেতারা আবার এর ভিতর তার শ্বশুড়বাড়ী পাবনায় চলে গিয়েছিল কদিনের জন্যে।
বাসায় রহিমা খালাকে বলা ছিল মিতুর দিকে খেয়াল রাখতে।আর পারুল তো এরপর ওদের সাথেই থাকা শুরু করে দিয়েছিল।
ছোট মামী এর ভিতর প্রেশার হাই হয়ে বাথরুমে পড়েছিল।যদিও তাকে দেখভাল করার জন্যে সার্বক্ষণিক মামা আয়ারও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।তাও মামীর গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা থেকে আনিয়ে দিয়েছিলেন ছোটমামা নিজে গিয়ে।
পারুলও তার মায়ের অনেক সেবা করে,তবে মাঝখানে ছোটমামী অনেকটাই সুস্থ তারপর নীবিড় যখন চলে যায় ছোটমামীও তাদের সাথে রাগ করে কুমিল্লায় তার বাপের বাড়ী গিয়ে ওঠে।
এটা নিয়ে সংসারে বেশ একটা অশান্তিও হয়।
পরে পারুল ও ছোটমামা শিশুর মতো আচরণকারী মামীকে বোঝাতে তৎপর হয়।

এর ভেতর পারুলের সেমিষ্টার চলছে।মামী অর্থাৎ তার মা যখন বাথরুমে পড়ে গিয়েছিল পারুল বাধ্য হয়ে মায়ের বাসায় ঝিগাতলায় আসে।
কিন্তু মিতালীও তখন প্রচুর রকম অসুস্থ,সেতারা তার শ্বশুরবাড়ী পাবনায়,তার দুলাভাই সেই যে মিতুর জন্মদিনে এসে না বলে চলে গেল আর কোনো খবর নেই।
পারুল তখন মিতালীকে তার সাথে তার বাসায়ও নিতে চাইলো কিন্তু সেতারা ছোটমামীর আচরনের কারনেই পারুলকে না করে দেয় ফোনে।
একদিন মিতালীর প্রচণ্ড পেট ব্যাথা।
মিতালীর এসময় স্বাভাবিক জ্ঞানও ছিল না যে কিসের ব্যাথা।কারন ততোদিনে সে ডাক্তারের ভাষায় সাইকোসোমাটিক প্যাশেন্ট।
ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক সকাল বিকেল ডিপ্রেশন ও ঘুমের জন্যে এত এত ওষুধ গিলছে।
মুখে প্রচণ্ড জড়তা।মুহিন চলে গেছে ক্লাস করতে আর রহিমা খালা ছাদে কাপড় শুকোতে দিচ্ছে।
মিতুর তখন প্রচণ্ড রকম স্মৃতিভ্রম।
পেটের ব্যাথার কারন সে ভেবেছিল সেটা তার ডেলিভারী পেইন।বাট সেটা গেস্ট্রিকের ব্যাথা ছিল।
ব্যাথায় ছটফট মিতালী আহ্ উহ্ করে কাঁদছিল, সামনে কাউকে না দেখে আরও ঘাবড়ে গেল।
তার মোবাইল সেটটাও তার কাছে নেই ততোদিনে।বন্ধনের সাথে রাগ করে ফেলে দিয়েছে না ভেঙে ফেলেছে কিচ্ছু মনে নেই তার।
পেটে হাত দিয়ে যখন ঘরে কাউকে পেলনা মিতালী ঘরের ল্যান্ডফোনটায় ফোন দিতে থাকে।
কোনও নাম্বারই তখন তার মনে আসছিল না শুধু একটা নাম্বার ছাড়া।
পারুলের বাসায় ফোনটা বেজে উঠতেই ওপাশ থেকে ভারী একটা কন্ঠে কেউ বলে উঠল,
“হ্যালো?’
“হ্যাহ্যালো বাবু কইই ওকে তাড়াতাড়ি দাওও তো,,?’কথা জড়িয়ে আগোছালো ভাবে কোনরকম বলে উঠল মিতু।
ছোটমামীর মেজাজ গেল চড়ে,মিতুর কথা পাগলের প্রলাপ মনে করে ঠাস করে রেখে দিলো।
আবারও ফোন করে বসলো মিতালী।পারুলের বাসার ফোন নাম্বার সে তার বাবুর বাসা মনে করছিল তখন অবুঝ মিতু।
কারো কন্ঠ চেনার মতো মানসিক ভারসাম্য ও ছিল না তার।
ফের রিসিভারটা হাতে নিয়ে, ওপাশের কাউকে রানু ভেবে ধমকের সুরে বল্ল,
“দেখো ররানু আমার শরীরর কিন্তু খুববই খারাপ এখুনি তোমমার বন্ধন ভাইকে খবরর দাওও বলো আমারর কথা আরর এভাবে বেয়াদবের মতো ফোনন কেন কাঁটলে?’
মামী যেন মিতালীর একথাটা সহ্যই করতে পারলো না,রাগে আগুন হয়ে মিতুকে পাল্টা ঘা দিয়ে জবাব দিল ফোনে।
“কি? কি বল্লি তুই?আমি বেয়াদব?এই অসভ্য মেয়ে কাকে কি বলছিস তুই জানিস?শোন এসব ন্যাকামী বন্ধ কর,আমি মোটেও রানু না ঠিক আছে?নিজের স্বামীকে ধরে রাখতে পারিস না আবার মেয়েকেও আমার কাছ থেকে দূরে রাখিস,,,,এত করে নীবিড়কে জামাই করতে চাইলাম আর তুই কি করলি মিতু?এত হিংসা তোর মনে? অথচ আমার সোজাসরল মেয়েটা কি না করেছে তোর জন্যে,,,,?’
ছোটমামী রাগে গজগজ করতে করতে মিতুকে বলতেই লাগলো যেন বহুদিনের পুরনো শোধবোধ সুদে আসলে আদায় করে নিতে চাইল মিতুর কাছ থেকে।
মিতুর জ্ঞান কিছুটা আসার পর বল্ল,
“মামী কিকিই বলছেনন এসব আপনিই? আমি হিংসা করবো পারুরুলকে আমি?’
“হ্যা তুই!তুই, সেতারা সবাই,,,,তোরা সব আসলে এক,,,’
ব্যাথায় মুষড়ে মিতু বলতে লাগলো,
“আল্লাহরর দোহাই মামী চুপ কররেন,আমার লেবারপেইনন উঠেছে,ঘরে এখন কেউ নাইই পারুলকে একটু দেনন মামী,,,আমার খুব কষ্ট হচ্ছেহ,,’
মামী কিছু না বুঝেই ফের চেঁচাতে লাগলো,
“কি বলছিস কি মিতু?তোর পেটের বাচ্চা তো কবেই পড়ে গেছে লেবারপেইন হবে কি করে?আর ওসব অভিনয় ছাড় অনেক হয়েছে,,এসব করে স্বামীর মন তো পেয়েছিলি কিন্তু দেখ সেও তোর নাটক দেখে অসহ্য হয়ে চলে গেছে,মিথ্যা আর হিংসামী বেশিদিন টিকে না নিজের দিকে দেখ এবার, ভালোমানুষী সেজে থাকার কি শাস্তি,,,,,’
মিতু আর কি বলবে বুঝতে পারলো না,সেও ফোনটা খট্ করে রেখে দিলো।
পেটের ব্যাথাটাও এবার আর টের পেলোনা,কি করে পাবে?যে আঘাত সে এখন বুকটায় পেল,,,,।
দুচোখ ছাপিয়ে অশ্রু নদী বন্যা বইতে লাগলো তার।
মামীর প্রতিটা কথায় তার অন্তরে বিষাক্ত তীরের মতো বিঁধে যেতে লাগলো একের পর এক।
তার আঘাতে হৃদয়টা ছিঁড়ে ক্ষতবিক্ষত আর কি প্রবল সেই রক্তক্ষরন!
ছোটমামী আগে থেকেই তাদের পছন্দ করতো না, তাই বলে এত ঘৃনা মামীর মনে সে কল্পনাও করেনি।
বোকার মতো মনে হলো মিতুর নিজেকে,তার ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পেটটায় হাত দিল,মনে করার চেষ্টা করলো,আসলেই কি তার পেটে বাচ্চাটা নেই?তা কি করে সম্ভব?তার বাবু তো কদিন আগেও তার পেট ছুঁয়ে কত কথা বল্ল,কত স্বপ্ন ছিল তাদের এ সন্তানকে ঘিরে?সবই কি মিথ্যা?
“আআমি মিমিথ্যাবাদী?আমি অভিনয়য় করি?বাবু আপনিনি বলে দেনন আপনি কি জানেনন না, আপপনার মিতু কেকমন?আরর আপনিন কেনন আমাকে ছেড়ের চলে গেছেনন?দেখেনন আপনারর মিতালীকে দুনিয়ারর মানুষ কিভাবে মিথ্যা অপপবাদ দিচ্ছে,,,, কইই আপনি বাবু?সত্যি ককি আপনিই আমার কাররনে অসহ্য হয়ে চলে গেগেছেন,,,,?’

পৃথিবীতে মানুষ যাই করুক না কেন তার একটা ভালো বা খারাপ ফল থাকবেই।তার ওপর নির্ভর করবে যে সে আসলে কতটা ভালো কাজ করেছে অথবা কতখানি মন্দের।
পারুলদের ল্যান্ডফোনে যখন ছোটমামী কথা বলছিল, পারুল তখন মাত্র তার সেমিস্টার শেষ করে রুমে ঢুকেছিল।তার রুমের ফোনের সাথে বসার ঘরের লাইনটি সংযোজিত।ফোন করার উদ্দেশ্য যখন রিসিভারটা হাতে নিল,তার মায়ের গলা শুনেই আকাশ থেকে পড়লো পারুল।পুরো কথা কথা শোনার জন্যে চুপ করে ছিল সে।তার অসুস্থ বোনকে শেষের তীক্ষ্ণ কথাগুলো যখন তার মা বলছিল পুরো হতভম্বব হয়ে শুনছিল।কিছু এজন্যেই বলতে পারেনি কারন তার ভীষন লজ্জা হচ্ছিলো আর মিতুও বেশী ইমোশনাল হয়ে যেতে পারে, এমনি প্রচণ্ড দূর্বল তখন মিতু।
পারুল আর একটা সেকেন্ডও ঘরে থাকতে চায়না।
তার রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমে ঢোকে সোজা,
“মা তুমি কি বল্লা এগুলা মিতু আপুকে?’
আমেনা বেগম যেন আরো বেশী হতচকিত হয়ে গেল মেয়ের কথায়।
“কি?কি বলেছি আমি আবার?এর মধ্যে ঐ শয়তানটা তোকে কানপড়াও দিয়ে দিয়েছে?অথচ কি নাটকই না করলো এতক্ষন ফোনে?’
“কাকে তুমি শয়তান বলছো মা?মিতু আপু অসুস্থ তুমি জানো না সে কথা?আর ফুপা যে মারা গেছেন ক’দিন হয়েছে,,,এর ভেতর যে বাচ্চা হারিয়েছে তাকে বলছো সে অভিনয় করছে?তুমি জানো না মিতু আপু সাইকোলজিক্যালি কতটা সিক কেন এসব বল্লা তাকে?’
“তুই চুপ কর,বলেছি বেশ করেছি?যা সত্যি তাই তো বলেছি,,,ওর এত কিসের দেমাগ?যে নীবিড়কে পাঠিয়ে দিল?এখন ভঙ ধরে ভালো মানুষী সাজছে তোকেও আমার থেকে সরিয়ে রেখেছে,,,,সবই ওর পাঁপের ফল এখন বুঝুক মায়ের বুক থেকে সন্তানকে দূরে রাখলে আর মিথ্যা কথা বল্লে কেমন লাগে?’
“ছিঃ মা ছিঃ তুমি আজকে যা বল্লা মিতু আপুকে নিয়ে এরপর আর আর ভুলেও বলোনা,মিতু আপু,সেতারা আপু কোনোদিনও আমাকে তোমার কাছ থেকে সরানোর চেষ্টাও করেনি,সেটা তো করেছো তুমি,বরং তুমি আব্বুকে ফুপুর কাছ থেকে দূরে রাখতে।যে ফুপু তার ভাইকে ছেলের মতো ভালোবাসতো,হঠাৎ করে আব্বুর টাকা পয়সা হতে লাগলো আর বদলে যেতে লাগলে তুমি আর আব্বু।আমি হওয়ার পর তোমাদেরও আল্লাহ আর সন্তান দেননি।মিতু আপুরা তাহলে কেন আমাকে তোমাদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখবে?বরং তোমার আর আব্বুর শুকরিয়া হওয়া উচিত যে তারা আমাকে তাদের নিজেদের ভাইবোনের মতো আমাকে ভালোবেসেছে,তুমি যে অসুস্থ থাকতে ফুপু কি আমাকে তার সন্তানের মতো দেখেননি যখন আব্বু আমাকে তাদের কাছের রেখে আসতেন?আর এক নীবিড় ভাইকে কেন বারবার টেনে আনো?এখানে মিতু আপু তার ভাবী আর আমার বড় বোন সে যা করেছে তার বোনের ভাল হবে জেনেই করেছে।তুমি নীবিড় ভাইকে কতটুকু চিনো মা?নীবিড় ভাই যা করেছে তার থেকে তোমার মেয়েকে বাঁচিয়ে দিয়েছে এটা মনে রেখো।আর হ্যা নীবিড় ভাই কখনোই তোমার মেয়েকে পছন্দ করতো না,সে নিজেই চলে গেছে কানাডায় এখানে আপুর কোনো হাতই ছিলনা আর যদি থাকতো সেটা তার অধিকার আছে,তোমার এখানে এত কথা বলার কি আছে?’
“হ্যা তাতো বলবিই তোরা সবকটা মিতুর চ্যালা হয়েছিস সব অধিকার ঐ মিতুরই আছে আর আমি মা আমার তো কোনো অধিকারই নাই,,,,?’
“তোমার অধিকার তুমি তো দেখিয়ে দিলা মা,মিতু আপুকেকে আজ যা যা বল্লা একটু ভাবসো ওর শরীরটা কত খারাপ আর ওর সময়টাও কত ভয়াবহ?আর এভাবে একটা এতীম মেয়েকেও বদদোয়া কিভাবে দিলা?’
“ও বদদোয়ার মতো কাজ করেছে বলবোনা তো কি করবো?’
“ব্যাস আমি আর মিতু আপুর নামে আর একটা বাজে কথাও শুনতে চাই না,তোমার এই আচরনের কারনেই ফুপুও কষ্ট পেতো চোখের পানি ফেলতো কাউকে বিনাকারনে বদদোয়া দাও মা,তাহলে তোমার কেন আর কোন ছেলেপুলে হলো না বলো? তুমিও তো পীর ফকিরের কাছে কম যাও নি,,,, ? আর বন্ধন দুলাভাই চলে গেছে বলে এত কথা শোনালে,,, আব্বুও তো চলে গিয়েছিল যখন তুমি অসুস্থ ছিলে? মেয়ে হয়ে কি করে পারো মা এতটা স্বার্থপর হয়ে কথা গুলো বলতে?’
মেয়ের মুখ থেকে এমন আক্রমনাত্মক কথা শুনে মিতালীর ছোটমামী আমেনা বেগমও চুপ করে রইলো।
তার কেবলই মনে হতে লাগলো, তার মেয়ে আর তার মেয়ে নেই এখন,সে প্রকৃতই তার মেয়েকে হারাতে বসেছে।
পারুলও আর দেরী করেনি,আয়াকে মায়ের ঠিকমতো যত্ন নেয়ার কথা বলে।
“আসছি,,, ‘বলে সেও বেরিয়ে যায়,উদ্বিগ্ন মনে।
তার বোনের কোনো বিপদ হলো কিনা ভেবে ছুটে যায় সে তৎক্ষণাত।(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here