দ্বিতীয় বাসর পর্ব ৮২+৮৩+৮৪

“দ্বিতীয় বাসর'(গল্প),পর্ব-৮২
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

পারুল আর জামানের বাগদান বেশীদিন নেই।
বিয়ের শপিং বলতে কেবল পারুলের গহনার অর্ডার দেয়া হয়েছে।
ছোট মামা বড় ব্যবসায়ী, বিরাট অবস্থা তাদের একটা মাত্র মেয়ের বিয়েতে কোন কার্পণ্য করবেন না।
এদিকে ছোট মামীর হাই প্রেশার লেগেই থাকে, সম্প্রতি হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে।
তিনি কলকাতায় চলে যান চিকিৎসা করাতে,সেখানে তার বোন আছে।ছোট মামাও যান সাথে।পারুল তাদের সাথে যেতে চেয়েছিল, ছোট মামীই নিজে থেকে মানা করে দিলেন।
মিতালীর সাথে কয়েকমাস আগে তিনি খুব বাজে ব্যবহার করেছিলেন।তারপর থেকে পারুলও তার মায়ের সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।খুব প্রয়োজন ছাড়া কথাও বলে না।তাছাড়া নীবিড় যে পারুলকে ঠকিয়েছে সেটা পড়ে বিশ্বাস করতে বাধ্য হোন মামী।
যদিও মিতু, নীবিড়ের লেখা চিঠির বিষয়ে কিছু জানায়নি। কিন্তু পারুল মিতুর ধানমন্ডির বাসায় তার বোনের স্বামীর বাড়ীতে, জানতে পারে যে মিতুর পায়ের সোনার নূপুরটা নীবিড় এতদিন নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল গোপনে।সেটা বুয়া দেখে ফেলেছিল একদিন নীবিড় তার পকেট থেকে বের করে তাকিয়ে দেখছিল আর বিড়বিড় করে কি যেন বলেছিল।
পরে তো নীবিড় কানাডায় যাবার বেলায় ফেরত দিল চিঠি সমেত।
মেয়ের এই কথায়,নীবিড়ের প্রতি পারুলের চরম বিরক্তি, এসব বিষয় তো আর অবিশ্বাস করা যায় না?
তাছাড়া মিতু ছোট মামীর কথায় আরও বেশী উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল যেভাবে হোক পারুলের একটা গতি করতে।পরে সেতারার সাথে, মিতু ক্যাপ্টেন জামানের সাথে পারুলের বিয়ে দেয়া যায় কিভাবে এসব নিয়ে আলোচনা করে।
সেতারা প্রথমে ছোট মামীর উপর প্রচণ্ড রেগে যায়।
তবু নিজেকে যতটা সম্ভব সংবরণ করে কারন পারুল তাদেরকে অনেক ভালোবাসে।
ছোটমামাও যখন ক্যাপ্টেন জামানকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়, সেতারার কাছে ফোন করে তখন সেতারা প্রায় কেঁদে ফেলে।বলে,
“মামা,পারুলকে কি আমরা কোনোদিন আলাদা চোখে দেখেছি?কোনোদিন ওকে মামাতো বোন জেনেছি? এই আমি সেতারা, বড় বোন হয়ে মিতালী আর মুহিনকে যতখানি আদর করেছি তাদের মায়ের মতোন, পারুলকেও তার কোন অংশে কম করিনি।আর মিতু?সেতারাকে তার চেয়ে বেশী আদর করেছে,আম্মা মারা যাবার পর যখন আমার বিয়ে হয়ে যায় তারপর মুহিনকে সে যেমন কোলে পিঠে করে সন্তানের মতো দেখে এসেছে,মামী অসুস্থ হবার পর থেকে ঠিক একইভাবে পারুলকে কোলে পিঠে করে বড় করে তুলেছে,,,মামা আপনিই বলেন একটা মা বাবা মরা এতীম মেয়ে যার দুদিন আগে বাচ্চা খোয়া গেল তাকে মামী কি করে যা মুখে আসে তাই বলতে পারে?তারপরও আমার বোনের মনে কোন ক্ষোভ নেই,মামা সে নিজে জামানের সাথে কথা বলেছে পারুলের ব্যাপারে,,,,আর মামী,,,?’
ছোট মামাও সেদিনও তেমন কিছু বলতে পারলেন না।শুধু বল্লেন,
“মা সেতারা তোরা তো সবই জানিস,তোদের মামী একটু অন্যরকম কিন্তু দেখ,পারুলটা একদম তোদের মতোন।মেয়েটা তোদের ছাড়া চলতেই পারে না,,এখনও এসব বলবি?সব ভুলে যা মা তোদের ছোট মামীর হয়ে আমাকে মাফ করে দে,,,।’
সেতারা আর কথা বাড়ায় না শুধু চাপা একটা আর্তনাদ ওর অন্তর জুড়ে।
“পারুলের তো ঠিকই মহা ধুমধামে বিয়ে হয়ে যাবে সবার পছন্দের পাত্র ক্যাপ্টেন জামানের সাথে, যে বিয়ের ঘটকালী মিতালী নিজে করছে,,,কিন্তু মিতুটার কি হবে?বন্ধন কি হারিয়ে গেল তবে,,,?’

বিয়ে ঠিক হবার পূর্ব মুহুর্তে পারুল একদিন মিতুর সামনে আমতা আমতা করছিল।তখন মিতুর বাবা মারা যাবার দু’মাসের পরের ঘটনা।মিতুর ডিপ্রেশন এর ওষুধ চলছে তখনও, তবে সে খেয়াল করলো পারুল ফোনে কার সাথে যেন কথা বলে,হাসাহাসি,টেক্সট চালাচালি ওর কেমন যেন সন্দেহ হতে লাগলো।
“নীবিড় নয় তো?’একটা উদ্বেগ তার মামাতো বোনকে নিয়ে।
ফের একদিন মিতু, পারুলের ল্যাপটপে খেয়াল করে দেখে আর্মি স্যুট, বুট আর ক্যাপ সহ গেটাপ নিয়ে দাঁড়ানো কোন সুপুরুষ এর ছবি।
মিতালীর তখনও স্মৃতি ভ্রমও প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝে যায় এতো ক্যাপ্টেন জামান?যার সাথে নীলগিরিতে সুন্দর সময় কেঁটেছিল মিতুর।
“কি মজা করেই না কথা বলে জামান? কিন্তু পারুলের ল্যাপটপে ও কি করছে?’
পারুলকে জিজ্ঞেস করার পর সব খুলে বলে পারুল।
ওর একটা ছোট ব্যাগ আর ডায়েরি রেখে গিয়েছিল হসপিটালে।যখন সে মিতুকে রক্ত দিতে এসেছিল।
ডায়েরিতে মিতুর সেই ছবিগুলোও দেখায় পারুল বোনকে।
মিতুর চোখে জল যেন টলমল করতে থাকে,পুরোনো স্মৃতিতে হাহাকার করে ওঠে মিতুর অন্তরটা।
ডায়েরিতে জামানের কিছু লেখাও পড়ে আর হাসে মিতালী।
সে এতে মোটেও সময় নষ্ট করে না।জামানকে দ্রুত খবর দিয়ে ঢাকায় আসতে বলে।
যেদিন কথা হয় ক্যাপ্টেন জামান ছুটিতেই ছিল,ঢাকায় এসে আদাবরে মিতালীর বাসায় আসে।
মিতুর সাথে জামানের সংক্ষিপ্ত কথাই হয়,তবে সবই কাজের কথা।মিতু বলে ফের,
“দেখো জামান, পারুল শুধু আমার মামাতো বোন নয়,ও আমার বড় আদরের বোন,ছোটবেলা থেকেই ও বেশীরভাগ আমাদের কাছ থেকেই বড় হয়ে এসেছে।তাছাড়া তুমি তো জানতে চেয়েছো আমার কোনো ছোট বোন আছে কিনা,যে কিনা আমার মতো হাসতে পারে।ওর হাসিও কিন্তু অনেক সুন্দর!’
জামান বিস্মিত কথাটায় তবে পরে বুঝতে পারে
“এরা দুবোন মিলে আমার ডায়েরিটা পড়েছে তাহলে?সেড়েছে মিতালী ভাবীকে নিয়ে কি লিখেছিলাম তো মনে নেই,,,ভাবী আবার কিছু মনে করেনি তো?’
জামান কি যেন ভেবে তার শার্টের হাতায় আটকানো সুন্দর বোতামের মতো জিনিসটা ধরে নাড়াচাড়া করলো।সেটি আর কিছু নয় ছেলেদের শার্টের হাতায় ব্যবহার করা হয় সুদৃশ্য কাফলিন।
ক্রিষ্টালের দামী পাথরের তারকায়িত, কাফলিনটা জ্বলজ্বল করছিল জামানের হাতা দুটোতে।
“বাহ্ বেশ সুন্দর তো তোমার কাফলিন জোড়া?বাইরের বুঝি?’
” হুম ভাবী বাইরের আর যে দিয়েছেন তিনিও অনেক সুন্দর মানুষ ভাবী,,?’
“তাই বুঝি?কে?’
“বন্ধন স্যার,,,’
“কি বল্লে জামান?বাবু বাইরে আছে?কোথায় আছে,,,?প্লিজ আমাকে বলো তার ঠিকানাটা দাও,,!’
মিতু কাঁদো কাঁদো আর প্রবল অস্থিরতায় বন্ধনের জন্যে ব্যাকুল হয়ে পড়ে।
জামান নিরাশ ভঙ্গীতে জানায়,
“ভাবী এটা যদি আমি জানতাম এতোদিনে তাহলে তাকে খুঁজে এনে আপনার কাছে হাজির করতাম।ভাইয়া এটা আমাকে দিয়েছিল গতবছর যখন সিংগাপুরে গিয়েছিল।’
গতবছর সিংগাপুর ট্রিপে গিয়েছিল বন্ধন মনে পড়ে যায় মিতালীর আর এও মনে পড়ে তার, সিংগাপুর থেকে তার বন্ধন বাবু তার জন্যে কি এনেছিল।খুব সুন্দর একটা অফ ওয়াইট কালারের নাইটি,যেটার ছিল দুটা পার্ট।
ক্যাপ্টেন জামান এর সাথে কথা সাড়ার পর মিতু তার কাপড়ের ড্র‍্যয়ার থেকে বের করে সেই ঝলমলে নাইটিটা। এটার কথা তো সে ভুলেই গিয়েছিল।অসুস্থ হয়ে তার বাবার বাড়ীতে থাকার পর ওর কিছু জামা কাপড় সেতারা আর পারুল যেয়ে নিয়ে এসেছিল ধানমন্ডি থেকে ওর স্বামীর ঘর থেকে।
স্বামীর ঘর আছে,নাইটিটাও আছে সেই আগের মতোই কিন্তু কই ওর স্বামী?আজ দেড় মাস ধরে তার স্বামী বন্ধনের কোন খোঁজ নেই।
মিতু নাইটিটা ওর গালে, নাকে নিয়ে মাখামাখি করে আপন মনে,ওর মাঝে যে তার বন্ধন বাবুর ভালোবাসার সেই ছোঁয়া, সেই ঘ্রান লেগে আছে?তা কেবলই খুঁজতে চায় অসহায় মিতু।

পারুলের বাগদান বেশ সুন্দর আর পরিপাটি ভাবে সম্পন্ন হয়ে যায়।ছোট মামা মামীরা কলকাতা থেকে ফেরত আসেন বিয়ের কিছু কেনাকাটাও করেন তবে সামান্য।
সেদিন কেন জানি মিতালীর বুকটা ভীষন অস্থির করছে।কি যেন তাকে জানান দিচ্ছে বারবার সে নিজেও বুঝতে পারে না।কি সেটা আনমনা উদাসীনই যেন মিতু।
বাগদানের অনুষ্ঠান পারুল গোলাপী আর বেগুনী শেডের কাতান শাড়ী পড়েছে।গলায় কানে,জরোয়া গহনা। ধানমন্ডিতে তাদের পছন্দের পার্লার ড্রিমস থেকে সেজেছে সে আর মিতু।সেতারা অবশ্য স্থানীয় ভালো আর একটা পার্লারে গিয়েছিল।
বাগদান অনুষ্ঠানে আসা দুটি পরিবারও বেশ খুশী।সবার চোখে মুখে স্বস্তির প্রশান্তি।
আগত অতিথিদের আনা ফুলে ফুলে ছেঁয়ে গেছে চারিপাশ।সেতারা মিতালীকে বল্ল ফুল গুলো নিয়ে তাদের বাবা মায়ের রুমে রাখতে।
মিতু তার প্রিয় আব্বু আম্মুর ঘরে যায় ফুল গুলো নিয়ে।বাবার ঘরের আয়নাতে চোখ পড়ে মিতুকে ভীষন সুন্দর লাগছে বাবুর প্রিয় গোলাপী কাতান শাড়ীতে।তবে ওর শাড়ীর রঙটা আর একটু গাঢ়,মেজেন্টা রঙ।
সাথে মোটা, গাঢ়, সুদৃশ্য নীল রঙা পাড় অপরূপ মানিয়েছে তাকে।
“আচ্ছা বাবু ম্যাজেন্টা রঙটায় আমায় কেমন দেখাচ্ছে? আয়নাতে তো আপনার মিতালীকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে! কিন্তু এই সুন্দরের কি লাভ,,,আপনি ছাড়া?’
হঠাৎ মিতুর বিড়বিড় প্রলাপ শেষ না হতেই একটা ভারী ভীষন সুন্দর পুরুষালি কন্ঠ বলে উঠলো,
“অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে তোমায় সোনা,,,তুমি তো আমার সোনামনি বউ যা পড়বা তুমি তাতেই তুমি ডানাকাটা পরী,, ‘
কথাটা শুনে প্রাণ ফিরে আসে মিতুরর।
“বাবু,,,, ! ‘বলে লাফিয়ে ওঠার আগেই ঘরের আলো নিভে যায়।
মিতালীকে পেছন ফিরে জাপটে ধরে আছে দুটো সুঠাম,রোমশ কোনো সুপুরুষের হাত! মিতুর ঘাড় থেকে শুরু করে গলায়,বুকে, বাহুতে,কাঁপাকাঁপা ঠোঁট জড়ায় চলে একের পর এক উষ্ণতায় ভরা কড়া চুম্বনের ঝড়!
(চলবে)নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)

“দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প),পর্ব-৮৩
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

কি অদ্ভুত ভালোলাগায় মিতালী নিজেকে হারায়।হারায় তার মাঝে যাকে সে অন্তরের অন্তস্থলে রেখেছে।
বুকের মাজারে,হৃদয়ের মনিকোঠায়।
যদিও মিতু তখন পর্যন্ত নিশ্চিত না যে কে তাকে জড়িয়ে আছে,,আর ছড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাকে ভালোবাসার সুস্নিগ্ধ মাতাল পরশ একের পর এক!
কিন্তু মিতু এতটাই বিভ্রান্ত নয়, যে তার হৃদয়ের বাগানের মালী,যার ভালোবাসার ছোঁয়ায় মিতালী মিতুর হৃদয়বন্দর বিমোহিত,কুসুমিত তার কাননের ফুল,,, আর তার সেই কাক্ষিত প্রাণ ভ্রমরার স্পর্শটি কেমন, কেমন তার কঠিন অবয়ব এর সেই ঘ্রান; সেটি সে বুঝবে না,তাতো নয়?
মিতু এবার সামনে ফিরে লুটিয়ে পড়ে তার প্রাণনাথের বুকে।
এ যে সেই বুক যে বুকে কত রাত সে শিশুর মতো ঘুমিয়েছে,কখনো দুষ্টুমীতে মেতেছে,কখনোবা তার উষ্ণতম ঠোঁটের ছোয়ায় আন্দোলিত করেছে তার প্রিয় মানুষটিকে।
সে আর কেউ নয় মিতুর এখন সবচাইতে প্রিয় মানুষ,প্রাণের মানুষ।
বন্ধন বাবু,মিতালীর স্বামী।
“বাবু ‘ বলে ফের যেন অবুঝ হয়ে ওঠে মিতু।
দীর্ঘ তিনটি মাস যার থেকে দূরে ছিল,আজ তাকে পেয়ে অনেকবেশী আবেগে তরলায়িত মিতু।
আর বাতি নিভে দেয়ার পর তো মিতালীর বুঝতে বাকি ছিল না যে এটি কার কাজ।
সাধারণত ছেলেরা বাতি জ্বালিয়ে তার প্রেয়সীকে ভালোবাসার মধু দিতে উদগ্রীব।যদিও মিতু এটি তার বান্ধবী নিশা,বা ভাবীদের কাছ থেকেও জেনেছিল।
তবে তার বন্ধন বাবু এক্ষেত্রে একটু আলাদা।
বন্ধন মিতুকে যতবার তার আদরে বিভোর করতে চেয়েছে ততোবার বাতি নিভিয়ে দিয়ে তাতে মজেছে ।
তবে আদরের শুরুতে ডিম লাইটটা জ্বালিয়ে তার খুব প্রিয় মিতুর মুখখানা দেখে নিত সে।
সবসময় বাচ্চা বাচ্চা একটা আল্লাদি ভাব,নিষ্পাপ অবুঝ শিশুর মতো কথা, চালচলন,কান্না অথবা হাসির মাঝে মিতুকে আবিষ্কার করেছে বন্ধন একটু একটু করে।
দুজন দুজনার ভালোবাসার স্রোতে হারাতে চায় বেশ কিছুক্ষন সময়।পাঁজরে পাঁজর চেপে মিশিয়ে ফেলে তাতে।
মিতু বন্ধনের মুখ খানায় আলতো হাতের স্পর্শ দেয়।
পাশের ঘরটা থেকে মৃদু আলো আসছিল, আর সে আলোতে বন্ধনকে দেখে ভীষন মায়া হয় তার।
পুরো মুখ জুড়ে দাঁড়ি।আর মাথাটা মনে হলো কামানো,মাথায় ক্যাপ পড়া।
কেমন যেন রুগ্ন আর কালো লাগছিল তার বন্ধন বাবুকে।
“একি হয়েছে আপনার! শুকিয়ে এমন কাঁঠ হয়ে আছেন কেন?কোথায় ছিলেন আপনি?আপনি জানেন না, আপনাকে ছাড়া আপনার মিতালীর কেমন লাগে?কত খুঁজেছি আপনাকে জানেন আপনি?’
আবারও সেই অবুঝ জিজ্ঞাসা মিতালীর।
বন্ধন যেন এবার প্রায় কেঁদে ফেলে।
“সব বলবো সোনা,,,একটু শান্ত হও,আর আমাকে একটু পানি খাওয়াও মিতু,গলাটা শুকিয়ে কাঁঠ হয়ে আছে।’
মিতু তাড়াতাড়ি করে পানি আনতে চলে যায়।
তার বন্ধন বাবুর একেবারে ঠান্ডা পানি খাওয়ার অভ্যেস।তবে মিতুকে কাছে পাওয়ার পর তার কড়া শাসনে থাকে, একেবারে ঠান্ডা পানি খাওয়া চলবেনা বন্ধনের।
মিতু ঠান্ডা পানি মিশিয়ে সাথে করে পানির জগ আর গ্লাস নিয়ে আসলো ঘরটায়।
তাদের বাবার বাসায় আদাবরে,ক্যাপ্টেন জামান আর পারুলের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে।
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা তখন।সবাই চলে গেছে বলতে গেলে।সেতারা আর মুহিনও এগিয়ে দিতে গেছে জামানের বাড়ীর লোকেদের।
মিতুর আব্বুর বাসা বলতে গেলে খালিই ছিল সেসময়।রহিমা খালা আর রশিদ চাচা সম্ভবত নীচে তাদের ঘরে।
মিতু বন্ধনের কাছে যায়। বন্ধন তার আব্বুর বিছানায় মাথায়, মুখে দুহাত চেপে বসে।না জানি রাজ্যের ক্লান্তি তার সারা শরীর জুড়ে।
স্বামীর কাঁধে এক হাত দিয়ে অন্যহাতে করে পানির গ্লাসটা দেয়।
বন্ধন ঢকঢক করে গিলতে থাকে পানি।
“আস্তে বাবু আস্তে খান গলায় ঠেকবে তো?’
“আরো পানি দাও মিতু, একগ্লাসে ভরে নি,,,’
মিতু সাথে সাথেই আরেক গ্লাস ঠান্ডা পানি দেয় তার বাবুকে।
বাবু পানি খেতে থাকে আর মিতু পরম মমতায় তার শাড়ীর আঁচল দিয়ে বন্ধনের কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুঁছে নেয়।
পানি খাবার পরপরই বেশ প্রশান্তি বন্ধনের।শরীর ছেড়ে দিয়েছে তার।মিতুর কাঁধে মাথা দিয়ে বন্ধন বলে আমি ঘুমাবো মিতু আমার শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে।মিতু শুধায়,
“ঘুমাবেন তো,,,আগে একটু কিছু খেয়ে নেন?আমি খাবার আনছি,এনে এখুনি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি,,,’ বলেই উঠে যেতে নেয় মিতু তার মানুষটার জন্যে খাবার আনতে।
প্রায় সাথে সাথে বন্ধন মিতুর হাতটা টান দিয়ে, জাপটে ধরে কাছে টানে।
বিছানায় নিয়ে মিতুর বুকটায় মাথা দেয় এবার।
“পরে খাবো আগে আমাকে তোমার বুকের মধ্যে রাখো মিতু,আমার যে ভীষন কষ্ট!’
“কিসের কষ্ট বাবু?আপনার সব কষ্ট আমাকে দিয়ে দেন,,,প্লিজ এমন করবেন না,একটু শান্ত হোন,,!’
মিতু খেয়াল করলো তার বন্ধন এর চোখ দুটো নিভু নিভু হয়ে আসছে।অনেক বেশী ক্লান্ত সে,সেই সাথে খুব দূর্বলও দেখাচ্ছে বন্ধনকে।মিতুর মনে হলো বন্ধন বেশ অসুস্থ, তা না হলে এত ঘামাচ্ছে কেন?
ওর আব্বুর ঘরটায় এসি নেই,কিন্তু যথেষ্ট ঠাণ্ডা এবং আরামদায়ক।
মাথার ওপরে ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে।
মিতু দুহাত দিয়ে বন্ধনকে জড়িয়ে আছে, ওর মাথাটা তার বুকে, উষ্ণকোমল বাহুডোরে।

মিতুর ভীষন ইচ্ছে হচ্ছিল রান্নাঘর থেকে খাবার এনে নিজের হাতে বন্ধনকে খাইয়ে দিবে।
কিন্তু বন্ধন সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে মিতুর বাহুডোরে।
মিতুর বুকটা হাহাকার করে ওঠে,এতদিন পর মানুষটাকে পেল কিন্তু কেমন হয়ে আছে তার মানুষটা?
“কতদিন বন্ধন ঠিকমতো খায়নি,ঘুমায়নি কে জানে,,,?কোথায় কোথায় ধুকে ধুকে পড়েছিল?বল্লেন তার বুকে কষ্ট?কিসের কষ্ট?’
মিতুর নানা চিন্তা এবার বন্ধনকে নিয়ে।
এবার সরে গিয়ে মিতু খুব যত্ন করে বন্ধনকে তার আব্বুর বিছানায় শুইয়ে দেয়।
জুতো আর মুজো জোড়া খুলে ওর পাদুটো টেনে বিছানার ওপর তোলে।
শার্টের উপরে কয়েকটা বোতাম খুলে দেয় ভেতর বাতাস ঢোকানোর জন্যে।ঘরের আলোটা আর জ্বালায় না মিতু।
এবার নিজে বন্ধনের মাথার কাছে বসে পরম যত্নে মাথা বুলিয়ে দেয়।মাথা বুলানোর সময় অবাক মিতু,বন্ধনের মাথাটা কামানো তাতে কয়েকটা চুল গজিয়েছে।
“বন্ধন চুল ফেলে দিয়েছে কেন?উনার ট্রেনিং ছিল নাকি?’
এতদিন পরে মানুষটাকে পেয়ে যতখানি খুশি মিতালী,ঠিক ততোখানি উদ্বিগ্ন,
“কি হলো আমার বাবুর?কেনই বা একথা বল্লেন,,,?’
ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, ভগ্ন চিত্তে বন্ধনও যেন শিথিল হতে চায় এবার।নিতে চায় প্রশান্তিময় বিশ্রাম বহুদিন পর।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে হারিয়ে যায় স্বপ্নে এবার।(চলবে))
নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)
“দ্বিতীয় বাসর'(গল্প),পর্ব-৮৪
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে দুচোখে ঘুম ছাপিয়ে অতলে হারায় বন্ধন।ঘুমের ঘোরে হারিয়ে যায় সেই দিনটিতে।
যখন সে ভীনদেশের মাটিতে, ইউরোপ এর একটি প্রসিদ্ধ শহরে।
বাকিংহাম প্যালেস থেকে খানিকটা দূরে অপেক্ষমান বন্ধন স্থির চিত্তে অবলোকন করে, তার জীবনের প্রথম প্রেম বা ভুল প্রায় দৌড়ে আসছিল এগিয়ে, অনেক খুশিতে।
দৌড়ে এসে যাকে জাপটে ধরল,সে আর কেউ নয় তার মেয়ে তন্নী।
তন্নী স্কুলের গন্ডি ছাড়িয়েছে সবে।ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছে তন্নী।বেশ বড়সড় হয়েছে সে,মায়ের মতোই সুন্দরী তবে মনটা একেবারে তার ভালো মানুষ বাবার মতো।
বাবা জামিলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর দুচোখ ভরে দেখছিল বাকিংহাম প্রাসাদের ঝলমলে নিদর্শন,স্থাপত্যকলা আর আভিজাত্যে ভরা সৌন্দর্য্যকে।
এরপর বেরিয়ে মেয়ের আবদার মোতাবেক তাকে একপাশে দাঁড় করিয়ে রেখে আইসক্রীম আনতে ছুটে যায়।
আইসক্রীম তাদের অদূরে আশেপাশেই ছিল।
বন্ধন তাদের সাথে, তবে বাবা মেয়েকে একসাথে করে কিছুটা আলাদা সে নিজেই থাকে তাদের থেকে ইচ্ছে করেই।
এই একাকিত্বের ভেতর তার এখন সবচাইতে প্রিয় দুজন মানুষ মিতালী আর বাবাই এর স্মৃতিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেয়েছে বন্ধন।
তার হাতে মিতালীর ডায়রিটা তখন বন্ধনকে আরো বেশী অনুভূতিপ্রবণ করে তুল্ল মিতালীর জন্যে।

খানিকটা নুইয়ে দুহাত দিয়ে তন্নীকে জাপটে ধরেই আবেগে আপ্লুত সিস্টার প্রিসিলা ওরফে পাঁপিয়া।
“তন্নী মাই বেবী,মাই সুইটহার্ট….কেমন আছিস মা? ‘
তন্নী কেমন যেন পাথরের মুর্তি হয়ে গেছে ততোদিনে,তার ভেতর আবেগ অনুভূতির যেন কোনরূপ চিহ্নই নেই।
তাতে বরং প্রচণ্ড ঘৃনা আর অসহনীয় যন্ত্রনা।
যে যন্ত্রনার আগুনে সে পুড়ছে অনেকদিন ধরেই।
প্রচণ্ড ক্ষোভে মাকে দূরে ঠেলে দিলো এক ঝটকায়।
হাতটা বাড়িয়ে বাঁধা দেয়ার মতো করে বল্ল,
“প্লিজ স্টপ ইট…প্লিজ কিপ এওয়ে ফ্রম মি…’
“ওয়াই বেবী?আই এম ইউর মাম?ওয়াই ইউ বিহেইভ লাইক দিস টু মি? ‘পাঁপিয়ার অস্থিরতা।
“ইউ আর মাই মাম?আর ইউ শিওর?’
“ইয়েস অফকোর্স মাই বেবী?’
“নো…ইউর নেইম এন্ড আইডেন্টিটি হ্যাজ বিন চেইঞ্জড হিয়ার নাও ইউ আর এ ক্যাথলিক সিস্টার প্রিসিলা, ইউ আর নট মাই মাম!’তন্নীর ক্ষোভ।
“প্লিজ বেবী,আই নো ইউ আর এংগ্রি অন মি,লেট উই টক টু ইনসাইড এনাদার প্লেস?উইথ হুম ইউ কাম হিয়ার মাই বেবী?’
“মাই অনলি পেরেনটস, উইথ মাই ফাদার,এন্ড প্লিজ ডোন্ট সে দ্যা লাই,আই এম নট ইউর বেবী আগেইন,,,’
পাঁপিয়ার বুকটা ফেটে যেতে থাকে তার নিজের মেয়ের মুখ থেকে এমন কড়া কড়া কথা শুনে।তারপরও আঁকুতি জানায় সে,
“প্লিজ তন্নী,,,প্লিজ ডোন্ট সে লাইক দিস,আই নো আই এম এন অফেন্ডার বাট আই এম ইউর মাম,,,’
“ডোন্ট ইউ থিংক ওয়াট ইউ হ্যাভ অলরেডি ডান?ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া ওয়াট ডিড ইউ ডু ইট ইন বাংলাদেশ?ইউ কিলড এন ইন্নোসেন্ট বেবী,হু ওয়াজ ওয়েটিং ফর কামিং ইন দিস বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড টু হিস অর হার লাভিং পেরেনটস?’
“তন্নী?আই এম সরি,,,,আই এম ভেরী ভেরী সরি ফর দিস,আই রিয়্যালি ডিডেনট ওয়ানটস টু ডু,,,,?’
“ও রিয়ালি?সো কাইন্ড অফ ইউ!
লিসন সিস্টার প্রিসিলা, ইউ হ্যাভ ডান দিস বিকজ ওয়াটএভার ইউ আর লাইক দিস!
এন্ড ইউর সরি উইল নেভার ব্যাক দ্যা বেবী কাম এগেইন! সো ইউ আর দ্যা কালপ্রিট কিলার,
এন্ড অ্যা কিলার ইজ মাই মাম? নেভার, এভার,,,, জাস্ট রিমেম্বার এন্ড লিভ মি এলোন,,,,!’ (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here