দ্বিতীয় বাসর(গল্প) পর্ব-৮
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
আজ নানুর শরীরটা ভালো নেই।সকাল থেকে খক্খক্ কাশী কেশেই যাচ্ছেন।এছাড়া পেট খারাপ,শরীর দূর্বল।বন্ধন আহমেদের বন্ধু ডাঃ মিজান মেডিসিনের ডাক্তার।বেসরকারী হাসপাতালে কাজ করেন।গুলসানেও বসেন তার প্রাইভেট ক্লিনিকে।বিকেলে তিনি দেখে গেছেন নানুকে।প্রেসক্রিপশনে ওষুধ এর নাম লিখে দিলেন।মিতু সৈনিক পাঠিয়ে ওষুধ, ডাব,খেজুর ও আরো কিছু ফল,সু্্যপের প্যাকেট আনায়।তারপর নিজ হাতে স্যুপ বানিয়ে খাওয়ায়,ডাবেরর পানি ওষুধ সব নিজ হাতে দিয়ে সেবা করতে থাকে নানুর।”বুড়ী আজ একেবারেই কাহিল।মুখ দিয়ে বকবকানি নেই বল্লেই চলে।’মিতুর বড্ড মায়া হয়।পায়ে গরম রশুন শর্ষে তেল মালিশ করতে গেলে নানু এবার বারণ করে মিতুকে।কিন্তু মিতু তা শুনবে কেন?এতদিন বন্ধন আর বাবাইকে যে আগলে রেখেছে তাকে দেখা তার দায়িত্ব। মিতু ভাবে এসব।
রাতে বন্ধন সাহেব এলে তাকে নিয়ে খেতে বসে মিতু।বন্ধন সাহেব মিতুকে জিজ্ঞেস করে,
“উপহার কেমন লাগল মিতু?’
মিতু অন্যমনস্ক, উত্তর দেয়,
“কোন উপহার?’
“কেন আজ সকালে না তোমাকে একটা প্যাক দিলাম?খুলে দেখোনি ওতে কি আছে?’
মিতু মৃদু হেসে বল্ল “খুব সুন্দর।’
তারপর থেমে আবার বল্ল,”তামান্না ভাবি ফোন করেছিলেন?’
বন্ধন বল্ল,”তাই নাকি? কি জিজ্ঞেস করল?’
মিতু বল্ল,”তেমন কিছু না,আপনি কখন পৌঁছেছেন আর…? ‘
“আর?’বন্ধনের কৌতুহল।মিতু লাজুক হেসে বল্ল,”আর আপনি যে উপহারটা এনেছেন সেটা কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করেছিল ভাবী।’
বন্ধনও ফের হেসে ফেল্ল।নানু ও বাবাই এর কথা জিজ্ঞেস করলেন।মিতু বল্ল,”নানুর শরীর তো ভাল নেই।এখন খাবার আর ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছেন।আজ আমি থাকবো নানুর ঘরে।’
বন্ধন ফের বল্লেন,”বুয়াকে ফোন করে দাও।সে থাকলেই তো ভাল।’
মিতু জবাব দেয়,”এত রাতে বুয়াকে ডাকি কিভাবে? আমার কোন অসুবিধা নেই আমি আজ থাকবো নানুর সাথে।’
মিতু শোবার জন্য চলে যায়। নানুর পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।নানুর কাশিটা কমে গেছে।ঘুমের ওষুধ দিয়েছে বোধহয়।নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে নানু।”থাক ঘুমাক এতদিনের বকবকানি একটু হলেও কমবে এবার।’ভাবে মিতু।হঠাৎ মিতু কি যেন টের পায়।ওয়াসরুমে যেতে হবে।তার আগে তার বেডরুমে যেতে হবে।
মিতু তার শোবার ঘরে যায়।গিয়ে দেখে গান হোম থিয়েটার চালিয়ে বন্ধন সাহেব গান ছেড়েছেন।
“তোমার মাঝে নামবো আমি তোমার ভেতর ডুব,তোমার মাঝে কাঁটবো সাঁতার ভাসবো আমি খুব….’ডিম লাইটের মৃদু আলোতে গানটা কেমন যেন আবেশ ছড়ায়।মিতুর বুকটা কেমন যেন ঢিপঢিপ জ্বেলে ওঠে।
গানটা মিতুরও অনেক ভালো লাগত একসময়।বন্ধন তার বিছানায় কাত হয়ে কপালে হাত দিয়ে শুনছিলেন গানটা।এর আগেও মিতু তাকে গান শুনতে দেখেছে।বেশীর ভাগ ইংলিশ গান, আধুনিক ক্লাসিকাল গান অথবা রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন তিনি ডিম লাইট জ্বালিয়ে।ডিম লাইটের আলো মিতুর মুখটায় ভাসে।মিতুকে দেখেই বন্ধন হাত সরিয়ে ফেলেন কপাল থেকে।
“এখনো ঘুমোয়ও নি?কি করছো মিতু?’
জবাবে,”একটা জিনিস নিবো।লাইটটা জ্বালাই?’
“হ্যা অবশ্যই।’
মিতু ওয়ার্ডরব থেকে একটা প্যাক বের করে প্রয়োজনমতো তার জিনিস বের করে নিয়ে নেয়।হঠাৎ মিতুর গা হাত পা অবশ হয়ে যায়।বন্ধন পিছন থেকে তাকে জাপটে ধরেছে।মিতুর কাঁধের পাশ থেকে চুল সরিয়ে সেখানে ঠোঁটের উষ্ণতা দিতে থাকে বন্ধন।মিতু সরে যেতে চায় সাথে সাথে।
“কি করেন?’
“কেন মিতু তোমার ভালো লাগে না?’
মিতু কি বলবে ভেবে পায় না।মাথা নীচু করে এদিক সেদিক তাকিয়ে কি যেন ভাবে।স্বভাবমতো আবার সেই আঙুল কঁচকানি।খেয়াল করেন বন্ধন মিতুকে।
“যাও তো মিতু ঐ নাইটিটা পড়ে এসো এখুনী।’কমান্ড স্টাইলে মিতুকে আদেশ দেন তার স্বামী।
মিতু তাতেও বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।বন্ধন এবার নিজেই বাতি জ্বালিয়ে কাবাড থেকে নাইটিটা খুঁজে বের করে মিতুর হাতে দেয়।
“কি হলো যাও?নাকি আমি পড়িয়ে দিবো?’
মিতু এবার যেন সত্যি ভয় পেয়ে গেল বন্ধনের কথা শুনে।
নাইটি পড়ে দাঁড়ায় মিতু বন্ধনের সামনে।বন্ধন সাহেব যেন হতাশ হোন।
“উপরের সার্টটা আবার পড়েছো কেন?ওটা খুলে ফেলো।’
মিতুর সারা গা হাত পা যেন থরথর করে কাঁপছে প্রবলভাবে !
“আচ্ছা এখন কি শীতকাল মিতু?এভাবে কাঁপছো কেন?ঠান্ডা লাগছে তোমার?এসি অফ করে দিব?’
মিতুকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা বন্ধন সাহেবের
“এত কিসের লজ্জা মেয়েটার?’
মনে মনে বেশ অবাক হোন বন্ধন।মিতু কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।মনে মনে কি যেন ভেবে প্রচণ্ড আতংকিত হয়ে পড়ে।ভাবে একটা দৌড় দিয়ে নানুর ঘরে ঢুকবে কিনা।বন্ধনের যেন তর সইছে না।চেহারাও অন্যরকম লাগছে লোকটাকে।কাছে এসে নিজেই মিতুর গা থেকে নাইটির উপরের পার্টটা খুলে ফেলে।মুগ্ধতা ছেয়ে যায় বন্ধনের চোখে মুখে।(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প) পর্ব-৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
“সত্যি যা ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশী সুন্দর লাগছে মিতু তোমাকে।’
মিতু আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বন্ধন ধীর পায়ে এগুচ্ছে মিতুর দিকে।এবার মিতুকে কাছে টেনে নেয়।দুহাতে মিতুর মুখটা ধরে।লজ্জায় লাল হতে থাকে মিতু।চোখ নামিয়ে ফেলে আবার।
“মেয়েরা চোখ বন্ধ করে ফেল্লে বোধহয় আরো বেশী মায়াবী লাগে।’মিতুকেও তাই লাগে বন্ধন ভাবে।
“তাকাও’
আলতো আবেগে, আদুরে গলায় বলে বন্ধন মিতুকে।
ফের বলে,”আচ্ছা আমাকে এত লজ্জা পাচ্ছো কেন মিতু?কে আমি বলো তোমার?’
“আপনি বলেন।’মিতুর উত্তর
“আমি তোমার বিয়ে করা বর না বলো?তোমার সোহাগ?’বলেই মিতুর কপাল স্পর্শ করে সেখান থেকে মিতুর গোলগাল গালে আদর দিতে থাকে বন্ধন।
মিতুর শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায়।তার উষ্ণ বায়ু ছড়িয়ে পড়ে বন্ধনের বুকে।কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুর ভিতরে সে নেই,কিছুই যেন টের পাচ্ছে না মিতু।বন্ধনের রোমশ হাতগুলো সেও ধরে বসে এবার। বুকের ভিতর উথাল পাতাল শিহরণ মিতুর।
মিতুর কাঁপাকাঁপা গোলাপী ঠোঁটগুলো আংগুল দিয়ে ছুঁয়ে ধরে বন্ধন।
“ইশ এত নরম তোমার ঠোঁট?’
মিতু এবার চোখ খোলে।বন্ধনের চোখে চোখ।বন্ধন এইবার লাইটটা অফ করে দেয়।মিতুর ভাসাভাসা চোখগুলো লাল দেখে ভারী ভালো লাগে তার।আরো গভীরে দেখতে চায় তাকে, আলোটা নিভিয়ে দেয়।ফের ডিম লাইটা জ্বালায়।মিতুও দেখে বন্ধনের চোখ গুলোও অদ্ভুত সুন্দর।কিন্তু আগে তো এত ভালো লাগেনি?
“মিতু আমাকে ভালোবাস না তুমি?’
“বাসি।’
“সত্যি?কেন বলোনি তবে এত দিন?’ হঠাৎ শুনে যেন মিতু রেগে যায়।নিজেকে এবার ছাড়িয়ে নেয় বন্ধনের কাছ থেকে অনুযোগের সুরে বলে,
“আপনিই তো বিয়ের আগে কত কথা বল্লেন?কেয়াকেই ভালোবাসেন,আমাকে ভালোবাসতে পারবেন না….. নানু আর বাবাই এর জন্যই এই বিয়েতে রাজী হয়েছেন….’
মিতুর কথা শেষ না হতেই ফের বন্ধন আরো জোরে কাছে টানে।দুহাত দিয়ে মুখ বাড়িয়ে অধর স্পর্শ করে মিতুর।ঠোঁটের সবটুকু স্বাধ যেন নিজের করে নেয় বন্ধন।
কতক্ষণ ধরে বন্ধন এটা করল মিতু যেন বুঝতেই পারেনা।(চলবে)