দ্বিতীয় বাসর (গল্প),পর্ব-৯৭
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
“আমার অনেক কষ্ট মিতু….আমাকে একটু শান্তি দাও?’
” কিসের কষ্ট আপনার?আর কোথায় আপনি….?আমায় ছেড়ে কোথায় পড়ে আছেন?কি করে শান্তি দেব আপনাকে?’
ঘুমের ঘোরে কেঁদে ওঠে মিতু।
ধরফর করে ওঠে ফের।পাশ ফিরে দেখে নানু ঘুমিয়ে আছে।
তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে ঢকঢক করে পানি খায় সে।
ভীষন অস্থির লাগছে তার।
গতকাল তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
“কিন্তু কি করে? সেটা কিছুতেই তার মাথায় আসছে না।
স্ট্রাইপটা কোনো ভুল তথ্য দিলো না তো?নাকি কোনো ডিফেক্ট ছিল?আচ্ছা আরেকবার পরীক্ষা করাবো?’
আবারও মনে মনে বিড়বিড় করে মিতালী একমনে।
“পিরিয়ড না হওয়ার দু সপ্তাহ পর কনফার্ম রেজাল্ট পাওয়া যায়।
কিন্তু তাও অনেক দেরী?আমি এখন কি করবো?এখানে থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবো?কিন্তু গেলেও তো সবাই জেনে যাবে?আমি এর কি জবাব দিব?’
মিতু প্রচন্ডরকম ঘাবড়ে যায়।
কঠিন স্নায়ুচাপ আর নিতে পারে না সে।
ফজরের নামাজে বসে ক্রন্দনসুরে প্রার্থনা নিবেদন করে প্রভুর কাছে।
নানীও উঠে নামাজ আদায় করেন।অবাক চোখে দেখেন মিতুকে।
নামাজ শেষ করে মিতালী ঘরের বাইরে আসে উঠোনে।
চারিপাশে ছোটবড় নানান গাছগাছালি, পাখির মিষ্টি মধুর কলতান আর ঝিরিঝিরি মৃদুমন্দ হাওয়া।
প্রকৃতির অবিরাম বিশুদ্ধতায় আর একাত্মতায় নিজেকে হারাতে চায় মিতালী মিতু চোখ দুটো বন্ধ করে।
হঠাৎ মিতুর সব যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে,সেই স্মৃতি সেদিনের সেই রাতে…!
কি যেনো ভেবে বুক ভরে লম্বা একটা শ্বাস নেয়, ফের পেটে তার নরম হাতটা চলে যায় অজান্তে।
মিতুর গায়ে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেন নানু।
“কি হইসে বোইন কো তো?বাবু সোনার জন্যে পরাণ পুরে বুজি মিতু….?’
মিতু ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে ওঠে ফের,
“নানু তোমার বাবু সোনা বড় পাষাণ…আমার সর্বনাশ করে কোথায় চলে গেছে আর কি আসবে না সে….!’
“কি কইতেছোস মিতু?বানু আবার তোর কি সর্বনাশ করলো?’
মিতু চুপটি করে আবারও ফিরে যায় সেই ভাবনায়।
পারুল আর জামানের বাগদান হয়ে গেছে একমাসের বেশী সময় ধরে।সেদিন ছিল মার্চের ছাব্বিশ তারিখ
আর আজ মে মাসের প্রথম দিন।
অথচ এই মে মাস মিতুর জীবনে অন্য সব মাসের চাইতে আলাদা বিশেষ সময়।
ঐ দিন রাতে কি ঘটেছিল মিতু বারবার মনে করার চেষ্টা করে।বন্ধন হঠাৎ করে তার কাছে এসেছিল।সোহাগমাখা চুম্বনে ভরিয়ে দিয়েছিল তাকে।তারপর খুব তেষ্টা পেল বন্ধনের, ক্লান্ত বন্ধন বাবু ঘুমিয়ে পড়েছিল মিতুর বুকে মাথা দিয়ে।
(চলবে)
“নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান অনেকে আমার গল্পের শহর চ্যানেল থেকে গল্প পড়ে না বিষয়টা আমাকে খুব কস্ট দেয় তাই গল্পের শহর থেকে নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেলের ।community আর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)
দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প) পর্ব-৯৮
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
বাবু সেদিন অনেক ক্লান্ত ছিল।
মিতুর ভীষন মায়া হলো, তার বাবুকে এতদিন পর কাছে পেয়ে তার মাথাটা নিজের কোলে রেখে তাতে মমতার ছোঁয়া বুলিয়ে দিল।
খুব আফসোস হচ্ছিল মিতালীর যে এতদিন পর মানুষটা তার কাছে এলো এমন রুগ্ন, ক্লান্তিকর আর মলিন অথচ তাকে একটটু কিছু খাইয়ে দিতে পারেনি।
মাথাটা বুলিয়ে দিতে দিতে মিতুরও দুচোখ ছাপিয়ে কখন যে ঘুম চলে আসল…. সেও তার স্বামীর বুকে পরম আবেশে ঘুমাতে চাইলো।
ঘুমে বিভোর চারচোখে দুজনার কত শত স্বপ্ন আঁকিবুকি করছিল।
মিতু, বন্ধন যেন টেরই পেল না একে অপরের কি মধুর স্বপ্ন ছিল সেদিন?
হঠাৎ মিতু শুনতে পায় বাবু বলছে তাকে,
“আমার অনেক কষ্ট মিতু….. আমার কষ্ট দূর করে দাও না জান? আমাকে একটু শান্তি দাও…’
তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে মিতু ঠিক মতো ঠাহর করতে পারেনি সেদিন, বাবু তাকে সোহাগ করতে চাইছে…।
একে তো সকাল বিকাল ঘুমের ওষুধ চলে মিতুর তার উপর সবকিছু হঠাৎ করে ভুলে যাওয়া আজকাল তার নতুন ব্যামো।
ঘুমের ওষুধের প্রতিক্রিয়া এসব।
মিতু সব পরে বুঝতে পারে।
মিতুকে বিয়ের পাঁচ মাস পর বন্ধন বাবু প্রথম যখন তাকে ভালোবাসার ছোঁয়ায় সিক্ত করেছে তারপর ওর কিছু জিনিস মিতু টের পায়।
অদ্ভুত স্বভাবের লোকটা তাকে মাঝরাতে অথবা ফজরের নামাজের পর সোহাগ করতে চাইতো।
তবে কখনোই মিতুর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা জোর করে নয়।
মিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর মুখটার কাছে মুখ এনে শিশুর মতো মিতালীর কাছে অনুমতি চাইতো ঠিক এইভাবে।
“বাবু ঘুমিয়ে গেছো?’
ঘুম কাতুরে মিতু শুধু হু হা করতো।
প্রথম প্রথম বুঝতো না মিতু যে বন্ধন বাবু কেন এমন করছে।পরে এভাবে কাছে এলেই মিতু ঠিক বুঝে যেত।
তার চাইতে ১৪/১৫ বছর বয়সের মানুষটা তার স্বামী তাকে নীরবে সোহাগ করার জন্যে একেবারে শিশুর মতো করতো,মিতু তাতে ভীষন অবাক হয়ে যেতো।
মাঝরাতে বন্ধনের উত্তাল ভালোবাসার ঢেউ জাগলে মিতালীও তাতে শিহরিত হতো।
বন্ধনের একের পর এক তুমুল আদর সোহাগে মিতালীর অন্তরটাও কেমন দুলে উঠতো।
বরাবরই চাপা স্বভাবের মিতু হুটহাঠ করে সব বুঝে গিয়ে কিচ্ছুটি যেন বলতে পারতো না তৎক্ষনাত।বরং বন্ধন তাকে বুঝিয়ে দিতো তার অন্তরের জমিনে কেবলই ঝড় উঠেছে মিতুকে তা দমিয়ে দিতে হবে,থামিয়ে দিতে হবে।
মিতু সেই আবেশে চোখ দুটো নিভিয়ে শুধু তার স্বামীর কথায় হু হা বলে সম্মতি দিতো।
তাছাড়া এত রাতে আর কি বা করার থাকতে পারে একটা মেয়ের?সেতো কোনো পাপ করছে না?তার বিয়ে করা স্বামী তাকে ভালোবাসতে চাইছে সেটা রাতের শুরু হোক কিংবা মাঝরাত। তাতে কিবা এলোগেলো?
তাছাড়া বাঁধা দিলে বন্ধন কি করে তাতে মানতো?
কি করে আঁটকানো যেতো বন্য খাঁচার পাখিকে?
আর বন্ধন সেতো তেজসম্পন্ন কঠিন পুরুষ তার আচরন শুরুটায় শিশুর মতো হলেও বনের বাঘের মতোই তীব্র।
মিতুর গোলগাল মুখখানায় আস্তে আস্তে, পরম তৃপ্তিতে, চুমু খেতে খেতে আদর শুরু করতো।
ঘুম কাতুরে মিতু হঠাৎ করেই জেগে উঠত।
বন্ধন আস্তে আস্তে তার গায়ের জামাটা খুলে ওর রোমশ বুকটাতে মিতুকে জাপটে ধরতো।তারপর ওর ভারী কন্ঠটা মিলিয়ে গিয়ে শিশুসুলভ কন্ঠে মিতালীকে আকুতি জানায়।
ওর গালটায় হাত ছুঁয়ে মিতালীর চোখের দিকে তাকিয়ে সুধায় বাবু,
“কি সোনামণি একটু আদর দেই?নাকি ঘুমাবা….?’
“ঘুমাবো আপনার বুকে….।’
“ঠিক আছে ঘুমাও তাহলে।’
মিতু কিছুক্ষন চুপ করে ফের বলতো,
“আমাকে আদর করবেন না?’
ছটফট করে ওঠে যেন মিতু বন্ধনের কথায়।
“তুমিই তো বল্লা আমার বুকে ঘুমাবা?’
এবার যেন রেগে যায় মিতু,
“তাহলে আমাকে জাগালেন কেন এতো রাতে?যান আমার আপনার বুক লাগবেনা আমি আমার জায়গাতেই শোবো…!’আল্লাদিপনা মিতালীর।
“আহা বাবু এমন করেনা তোমার জায়গা তো এইখানে, আমার বুকে আসো কাছে আসো….. ‘
বলে ফের সোহাগে বুকে জড়িয়ে নিতো বন্ধন মিতুকে।
মিতালীকে সোহাগের প্রতিটি চুম্বনে বন্ধন টের পেয়ে যায় ওর বুকের প্রতিটি কম্পন, ভালোবাসার তীব্র ছোঁয়ায় আন্দোলিত হওয়া প্রতিটা স্পন্দন,উথালপাথাল করা মিতুর হৃদয়ে খাঁচায় বন্দী পাখীর সেকি ছটফটানি!
মিতুর নিঃশ্বাস এর গভীরতা ধীরে ধীরে বেড়ে যায়, সেই সাথে বেড়ে যায় বন্ধনের ভালোবাসার সুতীব্র ছোঁয়া।
বন্ধন মিতুর মুখটাতে খেয়াল করে মুখের বর্ন যেন রক্তিম হয়ে গেছে পুরোই!
আদর সোহাগের তীব্রতায় বুঝি গায়ের রঙও বদলায় ওমন? ডিম লাইটের মৃদু আলোয় বন্ধন তার আদরের মানুষটাকে দেখে ভীষন অবাক হয়।
বন্ধন মিতুর চোখদুটো হাত দিয়ে ছুঁয়ে খুলে দেখতে চায়,জানতে চায় যেন কি চলছে ওর অন্তরে?
“কি বাবু? আমার দিকে তাকাও?তাকিয়ে দেখো না সোনা….?’
মিতু আবছা আবছা করে তাকায় কোনমতে। ভালোবাসার গভীরতায় এতখানি বুঁদ হয়ে আছে মিতালী।চোখগুলো ওর যেমন লাল তেমনি কত যে আবেদন তাতে?বন্ধনের ভীষন ভালো তা দেখতে।
“ইশ মিতু! কি যে সুন্দর লাগে তোমাকে এভাবে?বলো না জান কে তোমাকে ভালোবাসছে….?’
“আমার বাবু….আমার ভালোবাসা।’
“সত্যি মিতু?সত্যি আমি তোমার ভালোবাসা?’
“হুম।’
“আর?আর কি আমি তোমার?’
“আমার পৃথিবী,আমার স্বামী…. আমার সন্তানের বাবা।’
মিতুর অসুখের পর হঠাৎ করেই ভুলে যায় যে সে তার অনাগত সন্তানকে হারিয়েছে।
বন্ধন এর বুবুকের ভেতরটা যেন কেমন করে ওঠে। ফের একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কি যেন ভাবে সে।
মিতালীকে একের পর এক আদরমাখা ছোঁয়ায় মনে মনে আওরায় বন্ধন,
“সব হবে সোনা,একটু ধৈর্য্য ধর…..।’
বেশ একটা সময় ধরে আদর করার পর তা শেষ হলে মিতালীর বুকে ঘুমিয়ে যেতে চায় তার সোহাগ।
মিতুর ঐসময় খুব ইচ্ছে করে তার স্বামীর মুখখানায় একটা চুমু খেতে।
ফের নিজে ঘুরে এসে বন্ধনের মুখের কাছে ওর গালে আলতো চুমু খায় মিতু আর অবাক চোখে তাকায়।
কি স্বস্তিতেই না ঘুমিয়ে গেছে তার বাবু!
তারপর আরও কিছুক্ষন সময় পার হবার পর মিতালী ওর আব্বুর বাসার ডাইনিংরুমে কার যেন পায়ের আঁওয়াজ পায়।
বন্ধনের বাহুডোর থেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা ছেড়ে নামে মিতালী।
গায়ের কাপড় এলোমেলো ওর।বুকের কাপড় সড়ানো,ব্লাউজের বোতামগুলো খোলা।
দেখে একটু অবাক হয়েছিল মিতু।
অথচ সেদিনও মিতু ঠাহর করতে পারেনি কি ঘটেছিল। প্রায় একটা ঘন্টা সে তার স্বামীর বাহুবন্ধনে,আদরমাখা সোহাগে ডুবে ছিল।যা বন্ধন বাবু বিয়ের পাঁচ মাস পর এভাবেই হঠাৎ করে সোহাগ করতো, মাঝরাতে তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী মিতালী মিতুকে।
অথচ কি অবাক কান্ড এরকম একটা ঘটনা মিতু একদম ভুলে বসে আছে!
“আচ্ছা বাবু আপনি ভুলে যান নি তো?আমার কি হবে তাহলে…..?’
ভীষনরকম শংকিত মিতু অসহায়ভাবে চেয়ে রয় আকাশটায়…
কি হবে এখন, কে জানে?
(চলবে)”দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প),পর্ব-৯৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
সকালের নাস্তাটা কোনমতে সাড়ে মিতু।
হাসের মাংস আর পোলাও মিতুর ভীষন পছন্দ।
মাজেদা খালা আর রানুই রান্না বান্না করে এখন এ বাড়ীতে।
মাজেদা খালা বন্ধন বাবুর গ্রামের বাড়ীর কেয়ারটেকার শরীফ মিঞা এর স্ত্রী।সম্পর্কে বন্ধনের দুসম্পর্কের আত্মীয়।
শরীফ মিঞা ওদের এখানকার বাড়ীঘর ও ক্ষেতখামার দেখাশোনা করেন।স্ত্রী ও এক মেয়ে ঝিনাইদহে থাকে।স্ত্রীকে মাঝে মাঝে নিয়ে আসেন এখানে।আর এক ছেলে তাদের ঢাকায় থাকে।পড়াশোনা ও পার্ট টাইম চাকরী করে।
ছেলের নাম সিহাব, এখানে এসে মুহিনের সাথে পরিচয় এবং বেশ ঘনিষ্ঠ হয় দুজন।
সকালের নাস্তা খুব অল্প খায় মিতু।ওর মনে হচ্ছে আবারও বমী হবে।তাছাড়া আবারও সেই আগের মতো অস্থিরতা,শরীর ও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
এখন পর্যন্ত কাউকে জানাতে পারেনি মিতু,যে সে আবারও মা হতে চলেছে।
সেতারার সাথে দুতিনবারের অধিক কথা হয়েছে।
বলতে গিয়েও বলতে পারেনি।
তাছাড়া তাকে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার দেখাতে হবে।
ওর ডিপ্রেশানের ওষুধ আর ঘুমের ওষুধ এই অবস্থায় খাওয়া যাবে কি যাবে না কিছুই জানে না মিতু।
এতটা অসহায় সে এর আগে কখনো হয়নি।
দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতায় বাড়ীর উঠোনের কিনারা ধরে ফের বমী শুরু করে মিতালী।
মাজেদা খালা দৌড়ে এসে ধরে মিতুকে।
নানুর পেরেশানির শেষ নেই।
“ও মাজেদা, শরীফরে তাড়াতাড়ি ডাক,ওরে ডাক্তার আনতে কো?’
রানু এসে পাখাটা ছেড়ে দেয় মিতুর দিকে।
মিতুর মাথায়, হাতে পায়ে তেল মালিশ করে দিতে বলে নানু।
রানু বলে,
“নানু পীর বাবার কাসে ভাবীরে নিলে কেমন হয়?’
“পীর বাবা কি আসে এইখানে?সে না আরব দেশে গেসে?’
“আসছে তো পাশের বাড়ীর ময়না খালার বাসায় কাইল আসছিলো। পোলাডার কি জর ছিল। বাবা হের কপাল ধরল আর জর কইমা গেলো! মুখে কিছুই দিতে পারে নাই এই কয়দিন আর আইজ শুনি ঠাইসা খাওন খাইতেসে!’
“কি কোস রানু?বাবা আসছে আর আমারে একটু কবি না?মাইয়াটা আসার পর থন অসুখ হইয়া পইড়া আসে,বাবার কাসে নিলে ওর বমী,শরীর খারাপ এতদিন থাকে?কামডা কি করলি তুই?’
নানুর ক্ষোভ ধরে যায় রানুর ওপর।
মাজেদা খালায় তাতে সায় দেয়।
মিতুকে পীর বাবা সুলেমান সাদিকের কাছে নেয়া হবে।
তবে মিতুর এখন ডাক্তার দেখানো অনেক বেশী দরকার সেটা এখানে সে কাকে বোঝাবো,বুঝতে পারে না অসহায় মিতু।
অতঃপর মুহিন গিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসে।
মিতুর পালস দেখেই বুঝে যান। খুশির সংবাদটা দেন ডাক্তার সবাইকে।
রানু,মাজেদা খালা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
মিতু মুখে হাত রেখে কেঁদে ফেলে এবার,
নানু বল্ল,
“আলহামদুলিল্লাহ শুক্কুর….আমিও তো তাই কই…তুই কানতেছিস ক্যান রে মিতু?ঘরে আবার ছোট বাবু আসতেসে এইটাতো খুশির সংবাদ! ‘
“কি করে খুশীর?তোমার বাবুসোনা আমাদের আবারো বিপদে ফেলে লাপাত্তা হয়ে আছে?সে নিজেও জানেনা যে সে বাবা হতে চলেছে!’
“কস কি মিতু?বাবু তোর কাসে আসে নাই এর মইধ্যে?’
মিতু কি বলবে ভেবে পায় না।
খেয়াল করে দেখে আশেপাশের সবাই ফ্যালফ্যাল করে তার পানে চেয়ে আছে।
সবচাইতে বেশী যেন অবাক হয়েছে মুহিন।
আকাশ থেকে পড়ে গেছে সে বোনের একথা শুনে….
(চলবে)”দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প),পর্ব-১০০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
নানু মিতালীকে নিয়ে যায় সেখানকার স্থানীয় পীর বাবা সুলেমান সাদিকের কাছে।
মিতু সালাম নিবেদন করে।
পীর সাহেবের বাসা সেরকম বিশাল।আলিশান একটা ব্যাপার আছে।
নানা অঞ্চল থেকে প্রতিদিন অসংখ্য তার ভক্ত ও মুরিদ আসে।
তাদের কারো হাতে খালি বোতল অথবা পানিভর্তি বোতল এছাড়াও সরিষার তেলের বোতল।কালো সুতো ইত্যাদি পীরবাবার কাছ থেকে দোয়া পরিয়ে নেবার জন্যে।
এছাড়া কেউ আবার হাস মুরগী,ঝাপি ভরা সবজি,পোলাওর চাউল,পিঠা,জামাকাপড় ইত্যাদি প্রত্যেকেই কিছুনা কিছু উপহার হাদিয়া হিসেবে পীর বাবা ও তার পরিবারের জন্যে আনে এসকল ভক্ত মুরিদগন।
মিতু ভীষন তাজ্জব হয় মুরিদগনের এমন শ্রদ্ধা ও খেদমত দেখে পীর বাবাকে ঘিরে।
তারা রীতিমতো পীরসাহেবের পায়ে চুমু খায়,কখনো গালে, কপালে এমনকি মুখে।
যা সে আগে কখনো দেখেনি।
তবে পীর সাহেবকে মিতুর মন্দ লাগেনি।
পীর বাবাকে তার একটু গম্ভীর স্বভাবের মনে হয়।কারন কিছু ভক্তদের তিনি অতি আবেগময় হবার জন্যে নিষেধ করেন।
হাতের আঙুলে বড় বড় পাথরের আংটি। একটি সম্ভবত আকিক সুলেমানি পাথরের আংটি।
ঠিক এরকম একটা আংটি মিতালী তার বন্ধন বাবুকে দিয়েছিল।গতবছর এই আংটি তার বড়চাচা এনে দিয়েছিল সৌদি থেকে তার বাবার জন্যে।
মিতুর বাবা ফজলুল রহমান সেটি পড়তেন না।তার বড় আদরের কন্যা মিতুকে দিয়ে দিয়েছিলেন।সেসব স্মৃতি ভেসে ওঠে ফের মিতালীর মনে।
মিতুর সমস্যার কথা একান্তে জানতে চান পীর বাবা সুলেমান সাদিক।
কথা বলতে গিয়ে মিতুর গলাটা প্রায় ধরে আসে।
যদিও সে এক আল্লাহতায়ালা ছাড়া কারো পথ ধরতে রাজী নয়।পীর বাবার প্রসঙ্গ মিতুর কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তবু নানুর আবদার রক্ষায় তার এখানে আসা।
মিতু মুখ ফুটে বলে ফের।
“দেখুন হুজুর আপনি বোধহয় শুনেছেন বন্ধন বাবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না….আমি এ ব্যাপারটা নিয়ে বড় বিচলিত।’
“বিচলিত হবারই কথা ?আর আপনি আমাকে হুজুর বলবেন না ভাবী?’
মিতু একটু অবাক হয় পীরের মুখে ভাবী ডাকটা শুনে।
“জ্বী আপনি কি রাগ করলেন?কি বলবো তাহলে?’
“দাদা বা বড় ভাই ডাকতে পারেন।জানেন তো আমি কিন্তু নানুর আত্মীয়।সম্পর্কে আমিও তার নাতি ফাতেমা বেগম আমার নানু।’
“ও আচ্ছা।’
“বলুন ভাবী?’
“আসলে কি বলবো ভাই,বন্ধন কেন এমন করছেন কিছুই বুঝতে পারছি না।কেন তিনি বারবার আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন?কোথায় আছেন কোনো খোঁজ জানি না তার….’
“ভাবী,শেষ কবে বন্ধনভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে মনে আছে?’
“জ্বী।গতমাসের সাতাশ তারিখ রাতে।’
“তারপর?’
“ঐদিন উনি হঠাৎ করেই এসেছিলেন আমার কাছে।শুধু বল্লেন উনার অনেক কষ্ট।আর খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তাকে।’
“কি কষ্ট?’
“সেটা যদি আমি জানতে পারতাম?তাছাড়া ঐদিন তেমন কোনো কথা হয়নি তার সাথে।উনি এসেই প্রায় সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েন।’
“ভাবী কিছু মনে করবেন না একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?’
মিতুর কিছুটা ভাবনা পীরসাহেব এখন কি জানতে চাইবে তার কাছে।
“বলেন?’
“ভাইয়ের সাথে একত্রে ছিলেন কি?মানে তার সাথে কিছু ঘটেছিল সেদিন রাতে?’
মিতু মাথা নীচু করে জবাব দেয়,
“জ্বী…।’
“আপনি ভাইয়ের মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখেননি?’
“কি পরিবর্তন?’
“একটু ভাবুন।তার শারীরিক, মানসিক কোনো পরিবর্তন…..?’
মিতু একটু ভেবে ফের জবাব দেয়,
“হ্যা দেখেছি তো!অনেক পরিবর্তন।তার মাথার চুল গুলো কামানো,শুকিয়ে কালো হয়ে গেছেন আর বেশ অসুস্থ।’
“তারমানে আপনি অনেক কিছুই জানেন না,যা দেখছি…।’
মিতুর বুকটা লাফিয়ে ওঠে এবার,
“কি? কি জানিনা আমি?কি হয়েছে আমার বাবুর পীর বাবা? প্লিজ আমাকে বলেন,বাবুকে আমার কাছে এনে দেন….দোহাই লাগে আমাকে আর দুশ্চিন্তায় রাখবেন না….!’
“আহা ভাবী….এত উতলা হবেন না এভাবে।শুনুন ভাই মক্কা নগরীতে গিয়েছিল, ওমরাহ্ করতে।সেটা শুধু মাত্র আপনার জন্যে।’
“তারপর?’
“সত্যি আপনি অনেক ভাগ্যবতী একজন,যাকে একটা মানুষ এতোটা ভালোবাসতে পারে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না…..।’
মিতালী কিছুক্ষন চুপ করে কথা শুনে যায় পীরবাবা সুলেমান সাদিকের।
“ভাবী, ভাই পবিত্র কাবা শরীফ ধরে আপনার জন্যে শুধু কেঁদেছে।আর…..!’
“আর?’
“আপনার আর তার সন্তানের চিন্তায় চিন্তায় তিনি মানসিক ভাবে বেশ অসুস্থ। আপনি তো জানেন না ওমরাহ্ পালন করতে গিয়ে কয়েকবার মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। বন্ধন সাহেবের ধারনা উনি আবার সব হারিয়ে ফেলছেন,সন্তানের শোকে একেবারে মুষড়ে পড়েছেন….. আল্লাহতায়ালার কি অশেষ রহমত আপনার কোল জুড়ে আবারও সন্তান আসছে।ভাবী বন্ধন সাহেব কোনো কারনে আপনার উপর অভিমান করে আছেন,
তাকে আপনারই ফেরাতে হবে।যা করার আপনাকে করতে হবে….এখানে আমার বা অার কারো কিছু করার নেই…..’
মিতু পুরোই স্তব্ধ হয়ে যায় শুনে,
“যে মানুষটা আমার জন্যে সুদূর মক্কায় পবিত্র স্থানে গেলেন, এতোকিছু করলেন!আর আমিই কিছু জানলাম না?কিন্তু আমার উপর কিসের অভিমান?কি করেছি আমি?’
হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে মিতালী,
“ইয়া আল্লাহ আমার আর কতো পরীক্ষা নিবা?এইবার আমাকে দয়া করো?
আপনার পায়ে পড়ি বন্ধন আপনি ফিরে আসেন….আমার উপর রাগ আপনার?কাছে এসে শাস্তি দেন,প্লিজ আর ওমন করবেন না…. ফিরে আসেন…..?’
(চলবে)