দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ পর্ব ২৮+২৯

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৮

কিনারা শুয়ে শুয়ে ভাবছে,সাদিতের মনে যে কষ্টটা দিয়েছে তা দূর করার জন্য ওকে যা যা করতে হবে তাই করবে।সাদিতকে আর কষ্ট দিয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করতে চায়না।এমন সময় হুট করে একটা আওয়াজে কিনারা ধরফরিয়ে উঠে বসে।

সাদিত বাথরুম থেকে বেরিয়েছে।একটা তোয়াল জড়ানো।ভিজে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।সারা শরীরে এখনো অল্প ভিজে আছে।সাদিত এমনি অনেক সুদর্শন।ওর এমন আকর্ষনীয় বডির জন্য সব মেয়েরা পাগল।আজ এই আধ ভিজে সাদিতকে দেখে কিনারার মনে যেনো আগুন জ্বলে উঠলো।সাদিত বাথরুম থেকে বেরিয়ে কার্বাডের কাছে গেলো।

কিনারাও গেলো পিছন পিছন।সাদিত পিছন ঘুরে কিনারাকে ভ্রুরু কুঁচকে জিজ্ঞেসা করলো-

হোয়াট?

কিনারা মাথা নেড়ে কিছু না বুঝালো।

সাদিত আবার কাজে মনোযোগী হয়ে কার্বাডে কাপড় বের করতে শুরু করলো।

কিনারা এবার সাদিতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

সাদিত কিনারাকে ছাড়িয়ে বলল রেডি হও।

কিনারা বলল কেন।আমরা কোথাও কি যাচ্ছি নাকি।

সাদিত ড্রেস হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল হুম।

কোথায় যাচ্ছি আমরা।

উফফ এত্ত কথা না বলে আগে রেডি হও তো।

কিনারা একটা ডার্ক গ্রীন কালারের শাড়ি পড়ে,গোল্ডের হালকা কিছু গহনা পড়ে,চোখে কাজল আর ঠোঁটে ডার্ক পিংক লিপস্টিক পড়ে সাদিতের সামনে এসে দাঁড়ালো।

কিন্তু সাদিত কিনারার দিকে একবারও না তাকিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে,আর ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই কিনারাকে বলছে রেডি তুমি।

কিনারা ছোট্ট করে একটা হুম বলল।

কিনারা সাদিতের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু সাদিত একবারও ওর দিকে তাকালো না।কিনারা ভেবেছিলো এতো সুন্দর করে সেজেছে, সাদিত পাগল হয়ে যাবে,কিন্তু সে কিনা একবারও তাকানোর প্রয়োজন অব্দি মনে করলো না, কিনারা অধৈর্য্য হয়ে সাদিতের গা ঘেঁষে বসে পড়লো।এমন ভাবে চেপে বসলো সাদিতের হাত থেকে ল্যাপটপটা একটুর জন্য পড়লোনা।

সাদিত ভ্রুরু কুঁচকে কিনারাকে ধমক দিতে যাবে,তখনি খেয়াল করলো কিনারা খুব সুন্দর করে সেজেছে,সাদিতের রাগ নিমিষেই চলে গেলো সাদিত তো পুরাই হা হয়ে গেলো।সাদিতের ইচ্ছে করছে কিনারার গালে একটা চুমু দিতে।সাদিত সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখটা বন্ধ করে ইচ্ছেটাকে ধামাচাপা দিয়ে ভারী একটা নিশ্বাস ফেলে,কিনারার দিকে রাগী লুকে তাকালো——–

আমরা কি বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি।

বিয়ে বাড়ি,আজ কারোর বিয়ে নাকি সাদিত,আপনি তো আমাকে আগে বলেননি।

বলিনি যেহেতু তাহলে এমন বিয়ে বাড়ির মতো সাজ দিয়েছে কেন।

যাহ বাবা কই বিয়ে বাড়ির মতো সাজলাম। জাষ্ট একটু কাজল আর লিপস্টিকই তো দিয়েছি।

সাদিত ছোট্ট করে একটা ঢুক গিলে বলল—ওই একি এতো সাজার কি আছে,আমরা ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছি,বিয়ে খায়তে না।যে এমন সাজতে হবে।

সাদিতের এমন কথায় কিনারার মন খারাপ হলো।একটু সেজেছি না হয় তার জন্য বারবার এভাবে বলার কি আছে, আমি তো উনার জন্যই সেজেছি,ওভাবে না বলে একটু প্রসংশা করা যেতো তো নাকি তা না উল্টো কিভাবে বললেন।

কিনারা বলল ডক্টর দেখাতে কেন,আপনার শরীর খারাপ।

না আমার শরীর খারাপ হবে কেন , আমি কি তোমার মতো দুর্বল নাকি একটু কিস এর লোড সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হবো।

আমি মুটেও দুর্বল না।আপনিই তো কাল–কিনারা চুপ হয়ে গেলো আর কিছু বললো না,কারণ এসব নিয়ে আর মন খারাপ করতে চায়না,,যাই করুক না কোন সারাটা জীবন এই মানুষটার সাথেই কাটাতে চাই সে।তারপর চুপচাপ সাদিতের সাথে বেরিয়ে গেলো।

ডক্টর কিনারাকে চারটা টেস্ট দিয়েছিলো,ওগুলার রিপোর্ট কাল এসে নিয়ো যেতে বলেছে।আর এতো সময়ের মধ্যে সাদিত প্রয়োজন ছাড়া কিনারার সাথে কথা বলেনি,কিনারা কিছু বললে শুধু তার টুকটাক উত্তর দিতো।কিনারা আগ বাড়িয়ে সাদিতের সাথে নরমাল হতে চাচ্ছে কিন্তু সাদিত বরাবরই ওঁকে আর ওর কথাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।বলতে গেলে পুরো পুরি ইগ্নোর করছে।

সাদিতের এমন নিশ্চুপ হয়ে থাকায় কিনারার ভিতরটা যেনো জ্বলে যাচ্ছে,,, আর কাল রাতের জন্য খুব আফসোস করছে।তো কি আমাকেও তো সুযোগ দিতে হবে নাকি সবকিছু ঠিক করার৷ জন্য।একটা চান্স কি আমার পাওনা নয়।অবশ্য এটা আমি ডিজার্ভ করি।কালকের ঘটনার পর উনার সম্পুর্ন অধিকার আছে আমাকে ইগ্নোর করার।আমি চাই আবার সব আগের মতো হয়ে যাক।সাদিতের এই ব্যবহারের সাথে আমি পরিচিত না।আসলে রোজকার করা ব্যবহারে আমি কখন যে অভ্যস্ত হয়ে গেছি নিজেও বুঝিনি।আগে জ্বালাতন করতেন বলে বিরক্ত হতাম আর জ্বালাতন করেন না জন্য বিরক্ত।কি অদ্ভুত তাই না।এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরে এলো।

সাদিত গাড়ি থেকে নেমে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে এসে দাঁড়ালো,কিনারা নেমেছে কিনা সেদিকে খেয়ালই করেনি।অথচ আগের মতো হলে হইতো দুষ্টুমি করে কোলে করে নামিয়ে আনতো কিংবা জ্বালাতো। দাঁড়িয়ে হাতে রিমোটটা নিয়ে এসিটা অন করে দিলো —–সাদিত শার্টের একটা বাটন খুলতে খুলতে বলছে উফফ আজ কাল যা গরম পড়েছে।

কিনারা বেড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে সাদিতের সামনে ধরলো,এটা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।

সাদিতের তৃষ্ণা পেলেও কিনারার হাত থেকে নিলো না, বলল রাখো পরে খাচ্ছি, আগে শার্টটা খুলি।

কিনারা গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে সাদিতের গা থেকে শার্টটা খুলে দিতে যাবে,তখনি সাদিত ভ্রুরু কুঁচকে কিনারার দিকে তাকালো।তাকিয়ে বলল—- কি করছো তুমি।

আপনার তো গরম লাগছে,এতো রোদের মধ্যে বাইরে থেকে আসলেন অনেক টার্য়াড আপনি তাই একটু আপনাকে হেল্প করছি।

লাগবে না আমার হেল্প, ভালো লাগছে না,সরো তুমি আমার হাত আছে আমি খুলতে পারবো।সরো প্লিজ।

আরে আমি আপনাকে হেল্প করবো এতে ভালো না লাগার কি আছে,স্ত্রী স্বামীকে হেল্প করলে সওয়াব হবে।আর আপনি বলছেন ভালো লাগছেনা।

হুম বুঝলাম সওয়াব হবে, এখন সরো খুলতে দাও।

উম্ম আমি খুলে দিলে সমস্যা কোথায়।

শুঁড়-শুঁড়ি লাগে।

উম হয়েছে,হাত সরান তো।

সাদিতের শার্টের বাটন গুলো খুলে দিতে দিতে বলল—- সাদিত আই এম স্যরি।কাল রাতের জন্য জন্য। আসলে–

সাদিত কিনারাকে থামিয়ে বলল —- ঠিক আছে।সত্যিই তো দেখো আমার মধ্যে মন বলতে কিছুই নেই,শুধু শরীরটাই আছে।তাই তো তোমাকে ব্যবহার করে জ্বালা মেটাচ্ছি।সাদিত তিক্ততার সাথে কিনারাকে কথাগুলো বলল।

কিনারা করুন ভাবে বলল— আই এম সো সো সো সো স্যরি সাদিত।আমি জানি আমার প্রত্যেকটা কথা আপনাকে খুব কষ্ট দিয়েছে।আমি আমার দোষটা বুঝতে পারছি।সে জন্যই তো ক্ষমা চাচ্ছি।কিনারা কষ্ট মেশানো স্বরে বলল।

ইউ নো হোয়াট কিনারা— কখনো কখনো আমরা এমন কিছু বলে ফেলি যা ক্ষমার অযোগ্য হয়।সাদিত যেনো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো। ক্ষনিকের জন্য ভুলে গেলেও মন থেকে সেই কটু কথায় যে দাগ কাটে সেটা মুছে যায় না।

প্লিজ সাদিত একবার তো ক্ষমা করে দিন।কিনারা এবার কেঁদেই বলে ফেললো।

সাদিত খুব রুক্ষভাবে বলল নাহ।

কিনারা শার্টটা খুলে হাতে নিয়ে নিচু হয়ে চোখের পানি ফেলতে শুরু করলো।

পরক্ষনেই সাদিতের মনটা নরম হয়ে গেলো,সাদিতের মনে হলো এক্ষনি কিনারাকে জড়িয়ে ধরে ওর চোখের পানিগুলো মুছে দিতে, চোখের পাতায়. টুপ করে চুমু খেতে আর বলতে যে কেঁদো না কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়।তোমার মতো মেঘবতীদের কাঁদা মানায় না কিন্তু সাদিতের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো।সাদিত ভাবলো এতো সহজে তোমাকে কাছে টেনে নিবোনা।আমিও দেখতে চাই আমার জন্য তুমিকি করতে পারো।সাদিত আরো রাগ করার অভিনয় করে বলল।হয়েছে তোমার শার্ট খোলা।যদি হয়ে থাকে তাহলে চলে যাও আমার সামনে থেকে।

কিনারা হেঁচকি তুলতে তুলতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ওর চোখের পানি আর আটকাচ্ছে না।অঝোরে পড়তেই আছে।

কিনারাকে এমন চুপচাপ কেঁদে চলে যেতে দেখে সাদিতের মনের মধ্যে কষ্ট হতে লাগলো।আজ কঠোরতা টা একটু বেশিই দেখিয়ে ফেলেছি।তবুও এটা ভেবে ভালো লাগলো,কিনারা ওকে বুঝতে পেরেছে।নিজে থেকে ওর কাছে এসেছে,ক্ষমা চেয়েছে।

★★★★★★★

বিকালে আকাশটা হঠাৎই খারাপ করেছে,বৃষ্টি নামবে নামবে প্রায়,কিছুক্ষন পর ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি নামা শুরুও করলো।কিনারা বারান্দায় গিয়ে দেখে আসলো ভালোয় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে,কিনারার মনটা খারাপ কিন্তু বৃষ্টি দেখে কিনারার মনটা ভালো হয়ে গেলো,বৃষ্টির এমন ঝুমঝুমিয়ে পড়া দেখে ওর ইচ্ছে হচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজার।কিনারা কখনো বৃষ্টিতে গোসল করিনি,ওর ভিজা বারণ কিন্তু আজ কেন জানি ভিষণ ইচ্ছে করছে। সাদিতকে না বলে ভিজতেও ইচ্ছে করছে না।

সাদিত ল্যাপটপে কাজ করতে ব্যস্ত,কিনারা সাদিতের সামনে গিয়ে দেখে সাদিত কাজে ডুবে আছে।কিনারা সরাসরি সাদিতের সামনে গিয়ে ওর কোলে বসে সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে চলেন না আমরা বৃষ্টিতে ভিজি।

সাদিত ভ্রুরু কুঁচকে কিনারার দিকে তাকিয়ে বলল৷ পাগল নাকি, এমনি তোমার প্রবলেম,এখন যদি বৃষ্টিতে ভিজো পরে যদি আবার শ্বাস কষ্ট উঠে যায় তা আমি চাইনা।কাল আগে রিপোর্টটা দেক তারপর বুঝা যাবে বাকিটা।এখন উঠো আমার কাজ আছে।

কিনারা সাদিতের গলা আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।

সাদিতের ভালো লাগলেও একটু মজা নেওয়ার জন্য বলল—আশ্চার্য এমন চিপকে ধরে আছো কেন,আশেপাশে কি জায়গা নেই, আমার কোলেই বসতে হবে, এমনিতেই যা গরম।

না সরবো না, আর এই যে মিস্টার শুনুন,,,,আপনাকে শুধু জড়িয়ে ধরা কেন আরো অনেক কিছু করার রাইট আমার আছে।

সাদিত কিনারাকে জোর করে উঠিয়ে খাটে বসিয়ে বলল,,,আমাকে মেইলটা সেন্ড করতে দাও।

সাদিত এভাবে কিনারাকে উঠিয়ে দেওয়াই কিনারার মন খারাপ হলো,,, ও চুপচাপ খাটে এক কোণায় বসে রইলো।

সাদিত মিনিট দশেক পর পিছনে তাকালো দেখলো কিনারা রুমে নেই,সাদিত ভাবলো কিনারা আবার ওকে না বলে ভিজতে চলে গেলো না তো।সাদিত ল্যাপটপ টা বিছানায় রেখে নিচে গেলো,দেখলো রিতা কিচেনে কাজ করছে,সাদিত রিতার কাছে গিয়ে বলল তোর ভাবিকে দেখেছিস।

হুম ভাইজান ভাবি একটু আগে এসে বলল আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে,কিন্তু আমি তো একটু আগেই গোসল করে রান্না করতে এলাম।তাই না করলাম। কিন্তু ভাবি তো একা একা ছাদের দিকে চলে গেলো।

সাদিতের রাগ হলো এতোবার না করার পরও বৃষ্টিতে ভিজতে চলে গেলো।সাদিত রেগে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।

সাদিত ছাদে গিয়ে দেখলো—- কিনারা ছাদের মাঝ বরাবর দুহাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে।

সাদিত ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জোরে ডাক দিলো,কিনারা ভিতরে আসো,তোমাকে ভিজতে না করেছিনা,তবুও কেন এসেছো,একটা কথা বললে কি কানে যায়না।

উম্ম না, পাঁচ মিনিটও হয়নি বৃষ্টিতে নেমেছি,আর একটু ভিজবো,ভালোয় লাগছে।

সাদিত এবার রেগে বলল ভালোয় ভালোয় বলছি,ভিতরে আসো,আমি গেলে কিন্তু তুলে নিয়ে আসবো।

আপনি আমার কাছে আসবেন না তো, আমাকে ভিজতে দিন বলে দুহাত মেলে ঘুরতে লাগলো।আর জোরে জোরে বলতে লাগলো আমি এখন রোমান্টিক মুডে আছি,বৃষ্টির প্রত্যেকটা ফোঁটা আমি উপভোগ করছি,এখন আপনি যদি আমার কাছে আসেন আমি কিন্তু আপনার সাথে উল্টা-পাল্টা কিছু করে বসবো।আমি বেহায়া হতে চাচ্ছি না কিন্তু আপনি আসলে এমনি বেহায়া হয়ে যেতে ইচ্ছে করবে চাইলেও আটকে রাখতে পারবো না নিজেকে।
#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৯

সাদিত কিনারার কোনো কথা না শুনে কিনারার কাছে গেলো,কিনারা দুহাত মেলে ঘুরছিলো সাদিত কিনারার হাত ধরে থামিয়ে দিলো।সাদিত কিনারাকে থামিয়ে হাত ধরে টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে যেতে নিলেই কিনারা ওর জেদকে অনড় রাখতে সাদিতের থেকে হাতটা সরিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওঁকে।

কিনারা সাদিতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল আপনাকে বলেছিলাম না সাদিত আমার কাছে না আসতে।এখন যদি আমি আপনার সাথে কিছু করে বসি।তখন কিন্তু বাধা দিতে পারবেন না।কিনারা কথা গুলো বলছিলো আর পা উঁচু করে সাদিতের কানের লতিতে নিজের অধর যুগল ছুঁয়ে দিচ্ছিলো বার বার।

সাদিত চপ্রথমে জড়িয়ে না ধরলেও এখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,সাদিতও শক্ত করে কিনারাকে জড়িয়ে ধরলো।অবশেষে সাদিতও বৃষ্টির কাছে হার মেনে গেলো। সাদিত কিনারাকে বলল আমরা এখন ভিতরে যায়,তারপর না হয় আমাকে যত ইচ্ছে জড়িয়ে ধরো,এখন এভাবে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে।পরে তোমার প্রবলেম হবে।ফিসফিস করে নেশালো কন্ঠে বললো।

সাদিতের ঘন নিশ্বাসের সাথে ফিসফিসালো কন্ঠে যেনো কিনারা আরও পাগল হয়ে যাচ্ছে।কিনারা সাদিতকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল—না যাবো না, হোক না আমার প্রবলেম তাতে আপনার কি,আমি তো খারাপ,তাই তো আপনি আমাকে ক্ষমা করেননি।তাই আমি আমার মনের কষ্ট গুলো বৃষ্টির সাথে শেয়ার করছিলাম।সরি সাদিত আমাকে ক্ষমা করে দিন না।আমি কখনো আর আপনাকে ওভাবে কিছু বলবো না, আপনাকে কষ্ট দিবো না।একবার আমাকে সুযোগ দিন আপনাকে ভালোবাসার।প্লিজ সাদিত,প্লিজ। আমি যে ভুল গুলো করেছি একটা সুযোগ কি আমাকে দিবেননা।আমার ভুল গুলো শুধরানোর।কি করবো বলেন হাত জোর করবো নাকি পায়ে পড়বো।কিনারা ঘন পল্লভ ফেলে সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো ওর মুখ টা আরও কিছুটা এগিয়ে নিয়ে গেলো।কিনারার যেনো সাদিতের চোখের মাঝে অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে।

সাদিত ও যে তার প্রেয়সীর এই চাহনি উপেক্ষা করতে পারছে না।যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না কিনারার বলা কথা গুলো।কিন্তু ওর চোখ যে মিথ্যা বলছে না।আজ কিনারার চোখে তাকে পাওয়ার তৃষ্ণা দেখতে পাচ্ছে।তাকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা যেটার জন্য তার মধ্যে কাতরতা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছে সাদিত।

কিনারার যেনো বিলম্ব সইছেই না।ইচ্ছে করছে এখনি সাদিতের ঠোঁট জোড়া কে নিজের ওষ্ঠ্য দিয়ে ঢেকে দিতে।কিনারা আস্তে আস্তে সাদিতের চোখ এক হাতে ঢেকে দিয়ে নিজের ওষ্ঠ্যে সাদিতের ওষ্ঠ্যে মিলিয়ে দিলো।শুষে নিতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো সাদিতের ঠোঁটে বৃষ্টির পানি।এই যে ধরেছে মিনিট পাঁচেক হয়ে গেছে কিন্তু কিনারার সাদিতকে ছাড়ার নাম নেই।

এবার সাদিত কিনারাকে ছাড়িয়ে দিলো নিজ দায়িত্বে।যদিও কিনারা ছাড়তে চাইছিলো না কিন্তু সাদিত কিনারার কথা ভেবেই ওঁকে ওর থেকে ছাড়িয়ে দিলো।কি করছো কিনারা। তোমার তো শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।আর এসব কি বলছো টা কি তুমি পাগল হয়ে গেলে নাকি।ভারী নিঃশ্বাসের সাথে বললো সাদিত।

কিনারা কোনো কথা না শুনে আবার ও নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু সাদিতের বাধা পেয়ে থেমে গেলো।আজ যেনো কিনারা লজ্জার মাথা খেয়ে বেহায়া বেশি করে, বেশি করেই বেহায়া হতে ইচ্ছে করছে আর সে করছেও তাই।

তাহলে বলুননা আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন।কি হলো বলুন।বলুন।আর না বললে আমি কিন্তু আবারও সেইম কাজ করবো।

হ্যাঁ বাবা ক্ষমা করেছি তো।সাদিত বুঝতে পারলো,কিনারা শুনবে না ওর কথা,তাই সাদিত কিনারাকে কোলে তুলে নিলো।কোলে তুলে বলল—ঠিক আছে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিতে পারি,কিন্তু তোমাকে আমায় কথা দিতে হবে।কখনো আমার ভালোবাসাকে অবিশ্বাস করতে পারবেনা আর আমাকে কখনো ভুল বুঝবেনা।তুমি আমার লাইফে এমন একটা অংশ হয়ে গেছে যে,তোমাকে কখনো যদি হারিয়ে ফেলি,তাহলে আমি মরেই যাবো।কিনারা তুমি তো আমার নিজের।একান্তই নিজের,,নিজের মানুষ হয়েও যদি না বুঝো তাহলে আমি কোথায় যাবো বলো,কি করলে বুঝবে বলো কতটা ভালোবাসি তোমায় , অনেক ভালোবাসি তোমায়।আই লাভ ইউ সো মাচ।

কিনারাও সাদিতের কথা শেষ না হতেই বলল আই লাভ ইউ টু সাদিত।অনেক অনেক ভালোবাসি আপনাকে,কিন্তু আমি তা কখনো প্রকাশ করতে পারিনা শুধু।আমি আর আমার আল্লাহ জানে কতটা ভালোবাসি আপনাকে।প্রতিটা সেকেন্ড আপনাকে ফিল করি।আপনি যখন আমাকে একটু জন্য ইগনোর করা শুরু করেছিলেন তখন আমার নিশ্বাস- প্রশ্বাস গুলো বিষাক্ত হয়ে উঠেছিলো।একের পর এক কথাগুলো কিনারা বলে যাচ্ছে। আকাশের বৃষ্টির সাথে কিনারার চোখের পানি মিশে যাচ্ছে।কাঁদতে কাঁদতে কিনারা সাদিতের গলা জড়িয়ে ধরলো। প্রেমময় এই চোখের পানি গুলো বড্ড বেশি প্রশান্তি লাগছে।সাদিত বুঝতে পারলো কিনারা আরো বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়ছে।তাই কিনারার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে বলে হিসস অনেক কেঁদেছো আর না।আমার মায়াময়ীর চোখের পানি মানায় না।বলে ছাদ থেকে ভিতরে চলে আসলো।কিনারা ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়ার পর সাদিত চলে গেলো ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

সাদিত এরি মধ্যে রিতাকে বলে দিয়েছিলো কড়া করে মশলা চা বানিয়ে দিতে,যেনো কিনারার ঠান্ডা না লাগে।সাদিত বের হতেই রিতা চা রুমে রেখে গেলো,সাদিত দেখলো পুরো রুমে কিনারা নেই।বারান্দায় গিয়ে দেখলো বারান্দার দোলনায় চুপচাপ পা তুলে বসে আছে। সাদিত চায়ের একটা কাফ কিনারাকে দিয়ে,চেয়ার টেনে কিনারার মুখোমুখি সামনে বসলো।কিছুক্ষনের জন্য দুজনেই স্তব্ধ। কারোর মুখে কোনো কথা নেই,দুজনেই চুপচাপ চা খেতে ব্যস্ত।নিস্তব্ধতা কাটিয়ে সাদিত বলে উঠলো আই এম সো সরি কিনারা।

কিনারা চায়ের কাফ রেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,কিসের জন্য।

সাদিত বলল প্রায় একটা দিন তোমাকে ইগনোর করার জন্য।তোমাকে কাঁদানোর জন্য।

আরে আপনি কেন সরি বলছেন।আসলে আমি যা ব্যবহার করেছি আপনার সাথে এইকটু ইগনোর আমি ডিজার্ভ করি।আপনার কোনো দোষ নেই সব দোষ তো আমার,আমি যদি অতগুলো কথা না শুনাতাম তাহলে তো আপনি ওমন করতেন না।মলিন হেসে বলল কিনারা।

এরকম ভাবে বলোনা কিনারা আমি জানি আমি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম কাল তোমার সাথে।কিন্তু আমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসি না,তোমাকে ভালোবাসি তাই তো শুধু তোমার কাছেই যেতে ইচ্ছে করে।

কিনারা সাদিতের ঠোঁটে আঙুল রাখলো—– হিস আজকে এইমুহূর্তের পর থেকে ভুলেও আমরা এসব নিয়ে আর কিছু বলবো না। এসব কথা বলে কেউই মন খারাপ করতে চায়না।যদি কখনো শুনি তাহলে কিন্তু আমি আপনাকে আচ্ছা করে বকে দিবো বলে দিলাম।

সাদিত মুচকি হেসে বলল ঠিক আছে।

কিনারা সাদিতের ঠোঁটের উপর থেকে আঙুল সরিয়ে পুনরায় সাদিতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে দিয়ে সাদিতের কোলের উপর বসে পড়লো।তারপর সাদিতের সারা গলায় চুমু খেতে লাগলো।আবার সাদিতের ঠোঁটের দিকে ঝুঁকে যেতেই -_——-(যা কিছু হোক এরা দুজন প্রেম করতে ভুলবে না🥴)

সাদিত কিনারা কপালে চুমু খেয়ে বলল—- হয়েছে আজ আর নই।সাদিত নিজের সব ইচ্ছেটাকে কন্ট্রোল করে কিনারাকে বলে উঠলো।

কিনারা ভ্রুরু কুঁচকে বলল কেন।

আজ কোনো কিছু হবেনা।আজ শুধু আমরা গল্প করবো।বলে সাদিত নিজেকে জাগতে দিলোনা।কিনারাকে দূরে সরিয়ে দিলো কারণ সাদিত কিনারার ভুলটা ভাঙানোর জন্য।কিনারাকে এইটুকু বুঝানোর জন্য যে,আমি তোমার শরীরটাকে চাইনা, তোমার ভালোবাসা চাই,।যেখানে কোনো ভুল বুঝাবুঝি থাকবে না।
থাকবে শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা।সাদিত কিনারাকে ঘুরিয়ে কোলে বসালো,সাদিত নিজের ডানহাত টা কিনারার কাঁধের উপর দিয়ে কিনারার বুকের উপর রাখলো,তারপর কিনারার বাম কানের কাছে ঠোঁট টা এনে বলল,,,আমি শুধু তোমার পাগল, আমি তোমার সাথে সারাটি জীবন এভাবেই কাটাতে চায়,আর কখনো আমার প্রতি তোমার কোনো অভিযোগ আসতে দিবোনা।কিনারা চোখ বন্ধ করে, সাদিতের এই ফিসফিস কথা গুলো ফিল করছিলো,কথাগুলোর মাঝে কেমন অদ্ভুত এক শিহরণ ছিলো,যা কিনারার শিরদাঁড়া বেড়ে সারা শরীরে শিহরিত হলো,কিনারা ঘোরের মাঝে চলে গেলো।

তারপর কিনারাকে আবার নিজের দিকে ঘুরালো,কিনারা আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলল।কিনারার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলোনা।সাদিত ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কিনারার চোখে চোখ রাখলো।কিনারার চোখে মায়াবী নেশার কষ্ট সাদিতকে অবশ করে দিলো।সাদিত নিজের ডান হাত কিনারার গলায় রেখে বলল, আজ ঠোঁট দিয়ে৷ ঠোঁট কে নয়।আজ মন দিয়ে মনকে চিনতে চায়।কে তুমি আর কে আমি।

কিনারা নিজের ঠোঁটটা হালকা করে নাড়িয়ে বলল—- সাদিত আমি তো আপনাকে আগেই চিনে গেছি।

সাদিত কিনারার চোখের চোখ রেখেই আবদ্ধ হয়ে বলল—নো কিনারা নো।যতটা তুমি ভাবো তার থেকে বেশি ভালোবাসি আমি তোমাকে।

কিনারা সাদিতকে জড়িয়ে ধরে বলল তা আমি জানি সাদিত।

সাদিত তারপর বলল চলো আমার সাথে

কিনারা প্রশ্ন করলো কোথায়।

চলো গেলেই বুঝতে পারবে।

সাদিত কিনারার হাতটা ধরে রাস্তায় নেমে পড়লো।আজ রাতে আমরা বৃষ্টি ভিজা রাস্তায় হাঁটবো।

ওরা হাঁটতে হাঁটতে একটা চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ালো।সাদিত চায়ের দোকানের লোকটাকে বলল চা হবে।

মহিলা হেসে বলল হুম আছে।

সাদিত বলল আপনি দুকাপ চা দিন,সাদিতের কথা শেষ না হতেই কিনারা বলল না চাচা আপনি এককাপ চা দিন আমরা শেয়ার করে খাবো।

লোকটি কিনারার কথা শুনে হেসে৷ বলল ঠিক আছে মা।লোকটি মাটির একটা কাপে চা দিলো।বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা
চারপাশে মাটি ভেজা গন্ধ সাথে ধোঁয়া উঠানো গরম চা।কিনারা এক চুমুক দিয়ে বলে উঠলো আহহহ্।

সাদিত তো কিনারাকে দেখতে ব্যস্ত, এমন সময় সাদিত বলে উঠলো—কি হলো খাচ্ছেন না কেন।

সাদিত দেখলো কিনারা ওই চায়ের কাপটা হাত বাড়িয়ে ধরে আছে।

আবার কিনারা বলে উঠলো কি হলো ঠান্ডা হয়ে যাবে খেয়ে নিন।

সাদিত কিনারার হাত থেকে কাপটা নিয়ে কিনারা যেখানে ঠোঁটের স্পর্শ করে খেয়েছে সেখানে ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দিলো।সাদিত আয়েশ করে আরেক চুমুক দিতেই কিনারা সাদিতের হাত থেকে চায়ের কাপটা কেঁড়ে নিলো।আপনাকে পুরোটা খেতে বলেছি আমাকেও খেতে দিন।

এদিকে দোকানের লোকটা হা হয়ে ওদের কান্ড দেখছিলো।আর মুচকি মুচকি হাসছিলো।সাদিত লোকটাকে টাকা দিতেই লোকটি বলল — বাবা তোমারা বিয়ে করেছো,

সাদিত মুচকি হেসে বলল — জি চাচা দোয়া করবেন আমাদের জন্য।

লোকটি হেসে হেসে বলল হুম বাবা,আর তোমারা চিরকাল তোমাদের সম্পর্কটা এমন থাকে, সারাজীবন এমনি হাসি খুশি থেকো।কেউ কখনো আবার পাল্টে যেওনা।

সাদিত আর কিনারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে,সাদিত মুচকি হেসে কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিনারা ইশারা দিয়ে বারণ করে দিলো।তারপর লোকটার কাছ থেকে বিদায় নিলো।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here