দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ পর্ব ২৬+২৭

#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৬

কিনারা অজ্ঞান হবার পর ডাক্তারকে কল করা হলে।ডাক্তার এসে কিনারাকে একটা ইনজেকশন দেয়।ইনজেকশন দেওয়ার পর কিনারা এখন একটু স্বাভাবিক হয়ে ঘুমাচ্ছে।

ডাক্তার সাদিতকে ডেকে নিয়ে বলে —- মিস্টার চৌধুরী আপনার স্ত্রীর কি আগে থেকে শ্বাসকষ্ট ছিলো নাকি।আপনার স্ত্রীর শ্বাস কষ্টের কারণ টা বলতে পারবেন।তাহলে আমার প্রেসক্রিপশন করতে সুবিধা হবে। সাদিত মাথা নেড়ে না বলল।ও জানে না ঠিক কিনারার শ্বাস কষ্ট আছে কিনা।

আপনার স্ত্রী কি অস্বস্তি,,ভয় বা কোনো রকম দুঃচিন্তা মধ্যে ছিলো।এটা রুদ্ধশ্বাস থেকেও শ্বাস কষ্ট হতে পারে।যদি প্রয়োজনের থেকে শ্বাস নেওয়া কম হয়,তার জন্য রক্তে কার্বনডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে শ্বাস কষ্ট হয়।যার ফলে অজ্ঞানও হতে পারে।আপনার স্ত্রীর চোখ ভিষণ লাল হয়ে ছিলো,উনি কি কোনো কারণে ভয়ে ছিলেন।এখন আপনার স্ত্রীকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে,এখন আর ভয়ের কারণ নেই, কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উনার শ্বাস কষ্টের কারণ টা বের করার জন্য,যে পরিক্ষা গুলো লেখে দিচ্ছি এগুলো দ্রুত করে ফেলবেন।আর আপনি চিন্তা করবেন না মিসেস চৌধুরী ঠিক হয়ে যাবে।আগে উনার শ্বাস কষ্টের কারণ টা বের করুন আর নিয়মমাফিক চললে শ্বাস কষ্ট কম দেখা দিবে।

ডাক্তার চলে যাওয়ার পর সাদিত কিনারার পাশে শুয়ে এক দৃষ্টিতে কিনারার ক্লান্ত মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদিতের খুব খারাপ লাগছে কিনারার এমন ফ্যাকাশে মলিন মুখ দেখে।আজ একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। কিন্তু সাদিত বুঝতে পারেনা, কিনারার হঠাৎত করে এমন শ্বাস কষ্ট উঠে যাবে।কিন্তু কিনারা ওর সামনে আসলে ও নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে।চাইলেও যে সাদিত নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা।এসব ভাবছে আর কিনারার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কিনারার পাশেয় ঘুমিয়ে যায়।

★★★★★★★

কিনারার ঘুমের মধ্যে হঠাৎত মনে হলো,,দুটো উষ্ণ ঠোঁট ওর কপাল স্পর্শ করলো।কিনারা চোখ দুটো খুলে পিটপিট করে তাকালো।কিনারা অনুভব করলো।ওর মাথাটা হালকা ধরে আছে।তবে ঘুমটা বেশ হয়েছে।চারপাশে তাকাতেই দেখলো দুটো সুন্দর চোখ স্থীর চোখে তাকিয়ে আছে।স্থীর সেই চাহনি যেনো হাজার বছরের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।

সাদিত কিনারার কপালে হাত দিয়ে ছোঁয়ে দিতেই কিনারা ভয়ে কিছুটা সরে গেলো।হ্যাঁ ঠিক আছে কিনারা সাদিতকে ভালোবাসে,কিন্তু সাদিতের কন্ট্রোললেস আচরণকে কিনারা এখন খুব ভয় পায়।
কিনারার ছোট্ট থেকেই অল্প দমেই শ্বাস কষ্ট উঠে যায়।কিনারার তখনকার বাথরুমের কথা মনে হতেই সারা গায়ে কাঁটা দিলো।কি করে পারলো সাদিত তখন ওর সাথে ওমন করতে,সাদিত নাকি আমাকে ভালোবাসে।যে ভালোবাসে সে তার ভালোবাসার মানুষের বলা না বলা কথা গুলো অল্পতেই বুঝে যায়,কিন্তু আমি যখন নিশ্বাস নিতে না পেয়ে বাথরুমে বাঁচার ছটফট করছিলাম তখন ও আমাকে না বুঝে আবার আমার শরীর নিয়ে মেতে উঠতে কি করে পারলো। সাদিত যখন ওকে এগ্রেসিভ ভাবে কিস করছিলো,কিনারার তখন এমন অবস্থা হয়েছিলো,যেনো দম না পেয়ে মৃত্যুকে ও সামনে থেকে দেখছে।সাদিতকে ভালোবাসলেও ঠিক এই মুহুর্তে কিনারার একটা চাপা অভিমান আর রাগ কাজ করচ্ছে। কিনারার সাদিতের এমন আচরণ সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতো মনে হচ্ছে না,এখন সাদিতকে দেখলেই কেমন কিনারার সাইকো মনে হয়।

আবার সাদিত কিনারাকে ধরতে গেলে কিনারার কি যেনো হয়ে গেলো। চট করে মাথায় আগুন ধরার মতো অনুভূত হলো।সে এখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে আজ সাদিতকে খুব কঠিন গলায় কথা বলবে।

ডোন্ট টার্চ মি।আপনি আমাকে আর ধরবেন না।আপনার এসব পাগলামি এখন আমাকে রীতিমতো ভয় পাইয়ে দেই।আমি আপনাকে ভয় পাই।যখন ইচ্ছে তখন,,হাগ,, কিস,শারিরীক সম্পর্কে মত্ত থাকতে হবে।শরীর টাই কি সব।যখন তখন আপনার এই লাভ টর্চার আমি আর বহন করতে পারছি না।প্রত্যেক জিনিসের একটা লিমিট আছে মিস্টার চৌধুরী।হ্যাঁ আপনি আমার কাছে আসবেন, আপনার আসার অধিকার আছে,কিন্তু আপনি কাছে আসার পর ভালোবাসা নামে যে পাগলামি গুলো করেন না আমি আর ট্রলারেট করতে পারছিনা। আমি হাঁপিয়ে গেছি এসবে।আমি জাষ্ট নিতে পারছি না আপনার এইসব কিছু।একটা বর্বর জানুয়ারের মতো ঝাঁপিয়ে পরেন যখন ইচ্ছে হয় তখন।একবার ও আমার মত অমতের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন, চাননি।আপনার ইচ্ছে টাই সব।কখনো জানতে চেয়েছেন আমি কি চাই।আমাকে আপনারার যখন ইচ্ছে হয় আপনি জোর করেন।কেন বলতে বলতেই কিনারা কেঁদে দিলো।

সাদিত কিনারার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে।এই মুহূর্তে ওর ঠিক কি বলা উচিত ও বুঝতে পারছে না।তার চেয়েও বড় কথা কিনারা তার সম্পর্কে এই সব ধারণা পোষণ করে রেখেছে।কিনারা তাকে কি বর্বর জানুয়ার ভাবে।সত্যিই কি আমি এরকম।সাদিত নির্বাক হয়ে গেছে।কষ্ট হচ্ছে এখন তার।খুব কষ্ট হচ্ছে যা অসহনীয়।সাদিত হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে রইলো।নিজেকে ধাতস্ত করে নিলো সাদিত।তারপর ঠান্ডা বরফ গলায় বললো —

আমি তোমার সাথে কি এমন করেছি হ্যাঁ। যার জন্য তোমার মনে আমার সম্পর্কে এরকম ধারণা হয়েছে।।আমি তোমার সামনে নিজেকে এভাবে তুলে ধরি কারণ তুমি যেনো একটু হলেও বুঝো আমি তোমাকে ভালোবাসি।

কিনারা চুপ করে আছে।

সাদিত আবার বলে উঠলো।তোমার প্রতি মুহুর্তের এমন নিস্তব্ধতা আমাকে যে কুরে কুরে খাচ্ছে।কষ্ট আর বিরক্তি মাখা মুখে সাদিত বলে উঠলো।

রিয়্যেলি আমার নিস্তব্ধতা আপনাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।কিনারা হালকা হেসে বললো।

কিনারার এই প্রত্যাশিত হাসিতে সাদিতের বিরক্তি বোধ টা বেড়ে গেলো।

মানে কি বলতে চাও তুমি সেটা পরিষ্কার করে বলো না।

আপনি এমনভাবে আপনাকে আমার সামনে তুলে ধরেন আমি নেগেটিভ ভাবতে বাধ্য হয়।কথা গুলো থেমে থেমে কিনারা বলছে।

সাদিত বুঝতে না পেয়ে প্রশ্নোত্তর মুখে তাকিয়ে রইলো।আরে চুপ করে আছো কেন পরিষ্কার করে বলো কি বুঝাতে চাচ্ছো।

কিনারা এবার আস্তে ধীরে উঠে বসলো।তারপর সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল– আমার সামান্য চুপ করে থাকাকে আপনি সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু আপনি যে সব সময় আমাকে ভালোবাসার দোহায় দিয়ে আমার সারা শরীর সাতরাচ্ছেন। সেটা সহ্য করা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না তাই না।।আমার যে কষ্ট হয় এটা আপনি সেটা বুঝতেই চাননি।ভালোবাসা মানেই কি শুধু শরীরের চাহিদা। কখনও কি আমার শরীর ছাড়া অন্যকিছুতে আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।তা করেননি।সবসময় জোর খাটিয়েই এসেছেন।আমার মনে আপনার জন্য যতটা না ভালোবাসার ফিলিংস জন্ম নেয় তার থেকে বেশি আপনি আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দেন।

কিনারার কথা শুনে এবার সাদিতের রাগ উঠে গেলো।ওর সারা শরীরে যেনো জ্বালা ধরে গেলো।ওর পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো এবার।সাদিত কিনারার সামনে এসে মুখটা হালকা চেপে ধরে বলল ——তোমার সাহস হয় কি করে,আমাকে এসব বলার।আর তোমার মনে সত্যিই কি এটাই ধারণা, যে আমি তোমার শরীরের জন্য এসব করছি।এতোকিছুর পরও কি করে পারো কি করে পারো এসব বলতে।কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ফেলল সাদিত।

সাদিত কিনারাকে এভাবে চেপে ধরায়,,,,কিনারা ব্যথা পেয়েও তা প্রকাশ না করে বলল—– সে প্রশ্নটা নিজেকে করেন না,উত্তর পেয়ে যাবেন।কথাগুলো কিনারা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো।

সাদিত মাথা নাড়িয়ে বলল— না আমি তোমার কাছে জানতে চাইছি।আমাকে বলো তোমার কি সত্যিই মনে হয়।আমি তোমাকে ব্যবহার করতে চাইছি।কখনো কি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখোনি,,,,কখনো কি বুঝতে পারোনি,আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা।এতোগুলো দিন আমার সাথে থাকার পর ও তোমার এ ধরনের ধারণা কি করে হয় আমার সম্পর্কে।কথা গুলো সাদিত কিনারার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল।

কিনারা সাদিতের চোখের দিকে আর তাকিয়ে থাকতে না পেয়ে ,সাদিতের চোখের থেকে নিজের চোখ টা নামিয়ে নিয়ে, মাথা নিচু করে রইলো।

সাদিত আবার কিনারার থুতনিটা ধরে,আবার মাথাটা উচু করে, কিনারার চোখে চোখ রাখলো।রেখে সাদিত বলল—- কেন পারছোনা কিনারা আমার চোখে চোখ রাখতে।ভয় করছে তোমার।সত্যিটা বলো।

কিনারা কান্না করছে,ওর চোখ বেড়ে পানি পড়ছে।ও আসলে সাদিতকে এসব মন থেকে বলতে চায়নি।হঠাৎই একটা চাপা অভিমান আর রাগ থেকে সাদিতকে এসব বলে ওর নিজেরও কষ্ট হচ্ছে।কেন এমন করেন আপনি। আমাকে ভালোবেসে কেন কাছে আসেননা।কেন আপনি জোর করে সবসময় আপনার পুরুষত্ব তুলে ধরেন।

কিনারাকে চুপ থাকতে দেখে। সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরলো।।

কিনারা এবার সত্যিই অবাক না হয়ে পারলো না।কিনারা মনে মনে আবার ভাবলো।সাদিত আমি আপনার সম্পর্কে এমন কোনো ধারণা আমি আমার মনে আনতে চায়না,কিন্তু আপনি আমাকে বাধ্য কেন করেন।সবসময় আমাকে কেন এটা বুঝান যে ভালোবাসা বলতে শরীরটা চাই।কিনারা দুহাতে সাদিতকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।

কিন্তু সাদিত কিনারাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল — উম্মহুম তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর যতক্ষন না দিবে আমি তোমাকে এভাবেই ধরে থাকবো।

প্লিজ সাদিত এভাবে জোর করে কাছে আসা বন্ধ করেন।
বলে কিনারা যত চেষ্টা করছে সাদিত কে সরিয়ে দিতে,কিন্তু সাদিত ওকে তত জোরে চেপে ধরে।

সাদিত কিনারাকে জড়িয়ে ধরে বলল —-কিনারা ভালোবাসি তোামাকে।কেন বুঝতে পারছোনা তুমি।আমি তোমার শরীরকে না তোমাকে চাই।

কিনারা সাদিতকে বলল ও আচ্ছা তাই নাকি।বলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।

সাদিত এবার নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেয়ে কিনারার ঠোঁট কামড়ে দিলো।

কিনারা আহহ্ বলে ঠোঁটে হাত দেয়,কিনারার নরম ঠোঁট দুটো কেটে রক্ত ঝড়ছিলো , সাদিতের দিকে তাকিয়ে বলল– একটু আগেই না আপনি বার বার জানতে চেয়েছিলেন।কেন আমি আপনাকে ওই কথা গুলো বলেছি।তখন আমার মনে হচ্ছিলো কোথাও একটা ভুল করছি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না কথাটা কিছু হলেও সত্য।আপনি আসলেই জানোয়ারের চেয়েও জঘন্য বলে কাঁদতে কাঁদতে হাত দিয়ে নিজের ঠোঁটের রক্তটা মুছে ফেলল কিনারা।

সাদিত কিনারার সামনে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
#দ্যা_বিউটি_অফ_লাভ
#লেখিকাঃরাকিবা_ইসলাম_আশা
#পর্বঃ২৭

রাত এগারোটা……
কিনারা চোখ বন্ধ করে,আধশোয়া হয়ে বিছানায় বালিশে হেলান শোয়ে ছিলো।সাদিত সেই সন্ধ্যায় বেরিয়ে গেছে আর ফেরার কোনো নাম নেই। কিনারা কয়েকবার সাদিতের ফোনে কল করেছে বাট সুইচ অফ।কিনারার মনে কু ডাকছে।প্রচুর টেনশন হচ্ছে।সাদিত কি রাগের মাথায় কিছু করে বসলো,এখনো কেন বাড়ি ফিরছেনা।যদি কিছু করে ফেলে,তাহলে তো কিনারা নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা।এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কিনারা ওভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই চোখটা মাত্রই লেগে এসেছিলো।এরি মধ্যে গলার আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো কিনারা।

আমি তোমাকে ব্যবহার করছি।আমি শুধু তোমার শরীরটাই চিনি।কথাগুলো খুব শান্ত গলায় সাদিত বলে উঠলো।।

সাদিতের এই অতন্ত্য শান্ত গলার স্বর শুনে—- কিনারা বিষমিত হয়ে উঠে বসলো।সাদিতের হঠাৎত এ অত্যন্তিক শান্ত রুপ সাথে হিমশীতল স্বর কিনারার মনে রীতিমতো ভয়ের সৃষ্টি হলো।কিনারার মনে বিপদের ঘন্টা বাজতে শুরু করলো।কিনারা দেখলো সাদিত ওর ডান হাতটা পিছনে লুকিয়ে রেখেছে।তার উপর সাদিতের গলার আওয়াজে মনে হচ্ছে ও নেশা করেছে।কিনারার মনের ভয় আরো দৃঢ় হতে শুরু করলো।কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত মারাত্মক কিছু করতে চলেছে।

সাদিত কিনারার দিকে এগিয়ে আসতেই পড়ে যেতে নিলেই আবার নিজেকে সামলে নেই।

কিনারা উঠে গিয়ে সাদিতকে ধরতে চায়,কিন্তু সাদিত কিনারাকে এক হাত দিয়ে আটকিয়ে আবার বলে উঠলো —– আমি তোমাকে ব্যবহার করি তাইনা।

কিনারা সাদিতের সামনে দাঁড়াতেই সাদিতের কথা বলার সময় নেশার ঝাঁঝালো বাজে গন্ধ কিনারার নাকে এসে তাল দিলো।কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত নিজের হুসে নেই। এই মুহুর্তে যেকোনো কিছু করে ফেলতে পারে।তাই একহাত দিয়ে সাদিতকে ধরার চেষ্টা করে বলল—- নানাআআ — আপনি কেন আমাকে ব্যবহার করতে যাবেন।আমি তখন ভুল বলেছি।আমার আসলে ওসব বলা উচিত হয়নি তখন। কিনারা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে উঠলো।

আমি সবসময় তোমার শরীর নিয়েই মেতে থাকি।তোমাকে ভালোবাসি না।

কিনারা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো —- নাআআ আসলে আমার বুঝার ভুল।

আমি বর্বর জানোয়ার,ও সরি আমি তো, জানোয়ারের চেয়েও জঘন্য তাইতো।

কিনারা সাদিতের এমন শান্ত কথায় ভয় পাচ্ছে,সাদিত যদি উল্টা-পাল্টা কিছু করে বসে।তাই কিনারা বলল সাদিত আমার ভুল হয়ে গেছে। আপনি শান্ত হন প্লিজ।আমি আসলে বুঝতে পারিনি আপনাকে।শান্ত হন প্লিজ,আমি ক্ষমা চাইছি।বলে হাত জোর করলো।

ক্ষমাআআ—–বলে হালকা হেসে আবার বলল,ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। কিন্তু দেখো সেই ক্ষমা চাওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই।

কিনারা বললল প্লিজ চুপ করুন।আমি আপনাকে তখন রেগে ওসব বলেছি।

ইউ নো কিনারা,,,আমি জানোয়ারের চেয়েও জঘন্য। আমি তোমার লাইফে সব চেয়ে বড়ো কালপিড হয়ে দাঁড়িয়েছি।আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করছি।সাদিত হিমশীতল গলায় বলল।

কিনারা কান্না পাচ্ছে খুব, আসলে রেগে এতোগুলা কথা না শুনালেও পারতো।কিন্তু ওগুলো তো কিনারা ইচ্ছে করে বলেনি রাগের মাথায় চলে এসেছিলো৷ কথাগুলো।সাদিত যা শুরু করেছিলো তাই কিনারা ভেবেছিলো সাদিতকে একটু কড়া গলায় কথা শুনাবে কিন্তু তা যে এতোটূ কঠোর হয়ে যাবে কিনারা ভাবতে পারেনি।আসলে সিচুয়েশনটাই ওমন হয়ে গেছিলো।কিনারা কান্না মিশ্রিত গলায়৷ বলল—- না সাদিত, কখনোই না।

হ্যাঁ কিনারা হ্যাঁ। আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করছি।আরে আমার মতো জানোয়ারের তো বেঁচে থাকারই কোনো অধিকার নেই।আর দেখো আমি কিনা দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছি।আমার তো মরে যাওয়া উচিত কথা টা রাগে ক্ষোভে চিৎকার দিয়ে বলল সাদিত।

সাদিতের শান্তগলা থেকে হঠাৎত এমন জোরে চিৎকারে কিনারা কেঁপে উঠলো।

নিস্তব্ধত রাতে এই চিৎকারটা যেনো চারপাশে প্রতিক্রিয়া হতে শুরু করলো।

সাদিত কথাগুলো বলে পিছন থেকে হাতটা বের করে একটা রিভলবার নিজের মাথায় ঠেকালো।

কিনারা সাদিতের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আতংকে উঠলো।কিনারা এতোক্ষন এরকম কিছুরই আশঙ্কা করেছিলো।সাদিতের ওমন শান্ত রুপ দেখে।কিনারা তখন রাগের মাথায় যায়ই বলুক না কেন।সাদিতকে তো ভালোবাসে।চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষকে এই অবস্থা দেখলে যে কারোরই ভয়ে গলা শুকিয়ে যাবে।কিনারা ঢুক গিলে। জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে বলল—-আপনার পায়ে পড়ছি।প্লিজ এমন পাগলামি করবেননা।প্লিজ সাদিত প্লিজ।আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ রিভলবারটা ফেলে দিন প্লিজ। কিনারা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কাঁদতে শুরু করলো।।তারপর কাঁদতে কাঁদতে হাত জোর৷ করে সাদিতের পায়ের কাছে বসে পড়লো।হাত জোর করে সাদিতকে রিভলবার টা ফেলে দিতে কিন্তু তাতে কোনো ফল হলো না। কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত ওর কোনো কথায় শুনবে না।কিনারা সাদিতের পায়ের কাছে মেঝেতে বসেই দেখতে পেলো।সাদিত ওর আঙুল দিয়ে রিভলভারের ট্রিগারটা চাঁপতে যাচ্ছে। তা দেখে কিনারার হার্টবিট তীব্র গতিতে বাড়তে শুরু করলো।সারা শরীরের রক্ত এলোপাতাড়ি প্রবাহ করতে শুরু করলো।কিনারার মাথার ভিতরটা ভোঁ ভোঁ করে উঠলো।সাদিতের আঙুল ট্রিগার স্পর্শ করে ফেলেছে।কিনারা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে উঠে দাঁড়িয়ে সাদিতের হাত থেকে রিভলবার টা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।

তারপর সাদিতকে একটা সপাটে চর দিলো,চর দিয়ে সাদিতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।পাগল হয়ে গেছেন আপনি কি করতে চাচ্ছিলেন।আর একটু হলে তো —

ছাড়ো কিনারা,ছাড়ো আমাকে।

কিনারা কাঁদতে কাঁদতে সাদিতের বুকে নাক ঘষে মাথা নাড়ালো।না আমি ছাড়বোনা।ছাড়বোনা আপনাকে।ছাড়বো না।বলতে বলতে হেঁচকি উঠে গেলো কিনারার।

দেখেছো আমি আবার তোমাকে কাঁদালাম।আমি বেঁচে থাকলে তোমার জীবনে শুধু কষ্ট আর কষ্টই।কখনো তোমাকে আমি সুখে রাখতে পারবোনা।

প্লিজ চুপ করুন।চুপ করুন

সাদিত কিনারাকে দুহাতে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করালো,তারা আঙুল দিয়ে কিনারার চোখ মুছে দিয়ে বলল —-আচ্ছা ঠিক আছে, এইযে আমি চুপ।ঠিক আছে তবুও তুমি কান্না করোনা প্লিজ।তোমাকে কান্না করতে দেখলে এখানে ব্যথা করে, মনে হয় ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে,বুকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে সাদিত বলল।সাদিত দাঁড়াতে পারছিলো না হেলেদুলে পড়ছিলো,তবুও নিজের ব্যালেন্সটা কোনমতো আটকিয়ে কিনারাকে আবার বলল আচ্ছা শুনো তুমি আজ থেকে মুক্তি কেমন।তোমাকে আমি আর কোনো রকম জোর জবরদস্তি করবো না।ঠিক আছে কিন্তু কিনারা তোমাকে আমাকে একটা কথা দিতে হবে হ্যাঁ —প্লিজ কখনো আমার কাছ থেকে দূরে যাবেনা—- প্লিজ। বিশ্বাস করো প্রমিজ গলায় হাত দিয়ে বলল—— আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবোনা।সবসময় তুমি যা বলবে তাই, সব কিছু তোমার মর্জি মতো হবে।আমি শুধু তোমাকে সবসময় আমার সামনে দেখতে চাই।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবে কথা দাও —— কথা দাও —— কথা দাও—কথা গুলো পাগলের মতো ঢুলছিলো আর বলছিলো।

কিনারা কিছু বলার আগেই সাদিত পাশে খাটের উপর পড়ে গেলো।

সাদিতের পড়ে যাওয়া দেখে কিনারা ভয় পেয়ে যায়।ও তাড়াহুড়ো করে সাদিতের পাশে বসে।সাদিতকে ডাকতে থাকে।কিন্তু ততক্ষণে সাদিত ওর নিজের হুসে নেই।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।আর একটু পরপর ঠোঁট নাড়িয়ে কি জানি বিরবির করছে।কিন্তু তা কিনারার কান অব্দি পৌঁছালোনা।কিনারা বুঝতে পারলো সাদিত ঘুমিয়ে গেছে।

কিনারা উঠে রিভলবারটা লুকিয়ে রাখলো।কিন্তু তবুও কিনারার ভয় করছে।সাদিত একটু নড়াচড়া করলেই কিনারা সর্তক হয়ে উঠছে।

কিনারা সাদিতের পাশে আবার বসলো।।।কিনারা দেখলো সাদিত হোয়াইট কালারের একটা শার্ট পড়ে আছে।উপরের বাটন গুলা অর্ধেক খোলা,সাদিতের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।কিছু চুল কপালে লেপ্টে আছে।কিনারা ডানহাত দিয়ে সাদিতের কপালে আসা৷ চুল গুলো ঠিক করে দিলো।সাদিতের ঘুমন্ত মুখে কষ্টের ছাপগুলো স্পষ্ট বুঝা গেলো।চোখের গড়িয়ে যাওয়া পানি গুলো শুকিয়ে দাগ হয়ে আছে।

কিনারা সাদিতের মুখের দিকে তাকাতেই কষ্ট হলো।এই কি সেই সাদিত চৌধুরী।যে কিনারা এতো মেয়ের ক্রাশ।যার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল।সে কিনা একটু আগে আমার জন্য নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছিলো, আর একটু হলে তো,, কথাটা ভাবতেই কিনারার বুকে মুচড় দিয়ে উঠলো।না না—— একটা মানুষ কতটা কষ্ট পেলে মরতে চাই।এসব ভাবতেই কিনারার নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে। সাদিত ওর এসব ব্যবহারে ওকে ক্ষমা করবে তো, নাকি ওকে—– নাআ— কিনারা ঠিক করলো কাল সাদিতকের কাছে ক্ষমা চাইবে,এতে সাদিত যা ইচ্ছে তাই ভাবুক।ভালোবাসার মানুষের কাছে হাজার ক্ষমা চাইলেও মানুষ ছোট হয়না। এসব ভাবতে ভাবতে কিনারা আস্তে করে সাদিতের মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলো।মাথাটা কোলে রাখতেই,,, সাদিত ঘুমের ঘোরে ডান কাত হয়ে কিনারার পেটে মুখ গুঁজে দিলো।মুখ গুঁজে দিতেই কিনারা একটু শিহরিত হলো সাদিতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আর এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিচ্ছিলো।কিনারার মাথায় হাজার রকম কথা আর চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো।

★★★★পরেরদিন সাকালে ★★★★

কিনারা সারা রাত সজাগ ছিলো।কারণ ওর ভয় করছিলো।যদি ও ঘুমিয়ে যায় আর সাদিত আবার উল্টা-পাল্টা কাজ করে বসে।তাই কিনারা ঘুমায়নি। হঠাৎই সাদিত চোখ মেলে তাকালো— —–সাদিতের ঘুম ভেঙে গিয়েছে।সাদিত চোখ খুলে কিনারার দিকে তাকালো।

সাদিতের চোখের দৃষ্টিতে গভীর কষ্ট,যা কিনারার বুকে তীরের মতো বিঁধতে থাকলো।

সাদিত খেয়াল করলো ও কিনারার কোলের উপর শুয়ে আছে।তারপর সাদিত আরও খেয়াল করলো ও খাটের মাঝ বরাবর শুয়ে আছে,তাহলে কিনারা ঘুমায়নি কি।তার মানে কিনারা কাল সারারাত ঘুমায়নি।সাদিত উঠে বসলো,উঠে বসতেই মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব করলো।কাল রাতে রুমে কিভাবে আসলো তা মনে করতেই মাথায় চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো।সাদিত পরমুহূর্তেই সে ভাবনা বাদ দিলো।

সাদিতকে উঠতে দেখে কিনারা জিজ্ঞাসা করলো——তোমার ঘুম হলো।

সাদিত কিনারার সে উত্তর না দিয়ে বিস্ময়সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেসা করলো—-তুমি সারারাত ঘুমোয়নি।

কিনারা কোনো উত্তর না দিয়ে সাদিতের দিকে তাকিয়ে রইলো—–কিনারা সাদিতের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কিনারার ইচ্ছে হলো সাদিতকে একবার জড়িয়ে ধরতে।কিনারা উঠে গিয়ে সাদিতকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কিন্তু সাদিত আর কোনো কথা না বলে কিনারাকে ছাড়িয়ে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

তখন কিনারার মন বলে উঠলো—- ওর সত্যিই যেনো অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।তা না হলে এতোদিন ও সাদিতকে এতোবার দূরে ঠেলে দিয়েছে,কিন্তু সাদিত ততবার ওর কাছে ফিরে এসেছে।কিন্তু আজ যখন কিনারা ওর কাছে আসতে চাইলো,তখন সাদিত নিজেই ওর দূরে সরে গেলো।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here