#ধর্ষিতা_বউ_২
#রাবেয়া_সুলতানা
#৭,৮
___আদরের সাথে আশফি বকবক করতে করতে চোখ পড়লো প্রাপ্তির দিকে।আদর সামনে তাকা মা কোথায় দেখ! আদর তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে প্রাপ্তিকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিলো,মা!কোথায় যাচ্ছো তুমি ? দেখছো না ওইখানে অনেক ভিড়। চলো গাড়িতে বসবে। প্রাপ্তিকে গাড়িতে বসিয়ে, আপু মা কে দরে রাখ।
আয়ান এগিয়ে এসেও আবার দাঁড়িয়ে পড়ে ভাবছে না প্রাপ্তি এইখানে কেনো আসবে হয়তো এইটা আমার মনের ভুল।আয়ান আবার পিছিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসলো।মানুষের ভিড় আস্তে আস্তে কমতে থাকে।প্রাপ্তিদের গাড়ি আয়ানের পাশ দিয়ে চললো তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে এসে পৌঁছে সবাই এক এক করে গাড়ি থেকে নেমে,
আশফি -ওয়াও! বাড়িটা তো অনেক সুন্দর।
আদর আশফির মাথায় টোকা দিয়ে, ওয়াও বাড়িটা কতো সুন্দর এইসব ন্যাকামি রাখ।তোদের মেয়েদের একটাই অভ্যাস কোনো কিছু দেখলেই ন্যাকামি।
আশফি-মা দেখেছো তোমার ছেলে
সবসময়,,,,,,, তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি অন্যমনস্ক হয়ে বাড়ির ভিতর ঢুকছে।মনে হচ্ছে এই বাড়িটা প্রাপ্তির অনেক চেনা।আদর পিছনদিক থেকে এসে, মা! তুমি কি আগে কখনো এই বাড়িতে এসেছো?
প্রাপ্তি -হুম? না,কিন্তু কেনো জানি মনে হচ্ছে এই বাড়িটা আমার অনেক চেনা।সবকিছু মনে হচ্ছে আমার মতো করে সাজানো। ঠিক যেমনটি আমি চাইতাম। আচ্ছা যাইহোক, তোর নানা ভাইকে নিয়ে আয়।
আদর- এক কাজ করলে কেমন হয়! এই বাড়িটা কে বিক্রি করেছে সেটা জানলে কেমন হয়?
আশফি -তুই এইসব কিভাবে জানবি?
আদর-আরে বোকা যিনি আমাদের ব্যাগ গুলো উপরে নিয়ে গেলেন ইনি হচ্ছেন এই বাড়ির পুরনো কাজের লোক।এবং উনি এই বাড়ির দেখা শুনা করেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে উনার সাথে কথা বলেছি।তোর মতো না যে সারাদিন সাজা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবো।
প্রাপ্তি -ওহঃ আদর ও তোর বড় বোন।সারাক্ষণ ওর পিছনে না লাগলে তোর হয়না। তোদের মতো থাকতে আমার ভাই আমাকে চোখের মনি করে রাখতো।
আদর-আমাদের মামা ও আছে? আপু জানিস এই জায়গা টা মনে হয় আমাদের জন্য শুভ। কেনো জানিস?এই জায়গার নাম নেওয়ার পর থেকেই মা তার পুরোনো স্মৃতি গুলো একটু একটু করে মনে করছে।
প্রাপ্তি – তোরা এখন বড় হয়েছিস। তোদের আস্তে আস্তে অনেক কিছু জানার প্রয়োজন আছে।
বাশার কে উপর থেকে নামতে দেখে(আদর যার কথা বলে ছিলো)
আশফি -সব কিছু ঠিকঠাক মতো আছে তো?
বাশার -জ্বী আপা মনি সব কিছু ঠিকঠাক করেই রেখে আসলাম।
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে বাশারের দিকে তাকিয়ে আচ্ছা এই বাড়িটা আগে কার ছিলো দেখে তো মনে হচ্ছে উনারা এই বাড়িতে থাকতেন না।
বাশার মন খারাপ করে, জ্বী খালাম্মা এই বাড়িতে কেউ থাকতো না।মাঝে মাঝে একজন এসে থাকতো।ওনাকে আমি মামা বলে ডাকতাম।আর মামার মুখ থেকেই শুনেছিলাম মামা ওনার স্ত্রীর জন্যই এই বাড়ি বানিয়েছিলেন মামীকে উপহার দেওয়ার জইন্য।কিন্তু ওনার স্ত্রী ফিরে এলোনা বাড়িও দেওয়া হলোনা।কিছু দিন আগে কোনো একটা কারনে তিনি বাড়িটা বিক্রি করে দেন।আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম যদি মামী ফিরে আসে তখন? মামা কইলো মামী নাকি আর কখনোই ফিরা আইবো না।
কথা গুলো শুনে প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে সাবিত সাহেব কে নিয়ে চলে গেলেন রুমে।
আশফি -দেখেছিস আদর লোকটা মনে হয় ওনার স্ত্রী কে খুব ভালোবাসতেন।আচ্ছা বাশার! ওনার স্ত্রী কোথায় থাকেন?
বাশার- কোনো কারণে ওনার স্ত্রী ভুল বুজে চলে গেছেন। আচ্ছা আপা মনি আপনারা কি খাবেন বলেন।আমি এখুনি নিয়ে আসছি।
আদর-আজ তোমার পছন্দের মতো কিছু নিয়ে আসো।(কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে)আমরা তো জানিনা তোমার মতো মজার একটা মানুষ এইখানে আছে।তাহলে আসার সময় কিছু নিয়ে আসতাম।এখন এই টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের কিছু কিনে নিও।
বাশার খুশি হয়ে খাবার রেডি করতে বেরিয়ে গেলো।প্রাপ্তি এসে দেখে ভাইবোন এখনো দাঁড়িয়ে আছে।।
প্রাপ্তি -কিরে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।কে কোন রুমে থাকবি দেখে নে।প্রাপ্তি কথাটা বলেই উপরে চলে গেলো।
রাত ১০. ০০ টায় প্রাপ্তি সবাইকে খেতে ডাকলো।বাশার প্রাপ্তির সাথে হেল্প করছে।বাশারের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে প্লেট ঠিক করতে করতে প্রাপ্তি বললো,বাশার দুপুরে যে স্যারের কথা বলছিলে,ওই স্যার কি করেন?
বাশার-অনেক বড় ব্যবসা শুনেছি।এক ডাকে সবাই চিনেন।
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে, নাম কি উনার?
বাশার নাম বলার আগেই আশফি আর আদর উপর থেকে নামতে নামতে,
আদর -মা! এই বাড়িটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আশফি চেয়ারে বসতে বসতে, মা!আমার এক কলিং ফোন করেছে।
এইখানে আসার সময় একটা হসপিটালের সাথে কথা বলেছিলাম ওই হসপিটালে কাল থেকেই যেতে হবে।আদর! তুই আরও কয়েক দিন রেস্ট নে তারপর না হয় হসপিটালে জয়েন করিস।
প্রাপ্তি -আদর! আশফি কথাটা খারাপ বলেনি।কাল থেকে আমারও কলেজে যেতে হবে।তুই একা একা বাড়িতে বসে না থেকে শহরটা কে ভালো করে ঘুরে দেখ।
আদর মাথা নাড়িয়ে মায়ের কথায় সায় দিল।
সকাল থেকে সুমি নাস্তা বানাচ্ছে সবার জন্য। আয়ান ড্রইংরুমে বসে পেপার পড়ছে।মুনিয়া তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। মুনিয়াকে তাড়াহুড়ো করতে দেখে আয়ান পেপার থেকে মুখ সরিয়ে, কিরে তোর এতো তাড়া কিসের? কোথাও যাচ্ছিস নাকি?
মুনিয়া আয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে কাকাই আর বলোনা কলেজে আজ নতুন ম্যাডাম আসছে।আর উনি নাকি খুব রাগী।
আয়ান মুনিয়ার কথা শুনে হাঁসি দিয়ে, যার যত রাগ তার মনটাই অনেক সুন্দর।
মুনিয়া-একটু ভেবে,তা ঠিক বলেছো।আচ্ছা তাহলে আমি আসি।(চেঁচিয়ে সুমিকে বললো)মা! আমি আসছি।
সুমি রান্নাঘর থেকে এসে, এই মুনিয়া আসছি মানে? নাশতা করে যা?
মুনিয়া দরজা দিয়ে বেরুতে বেরুতে, মা! বাহিরে খেয়ে নিবো।
আয়ান মুনিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে, আচ্ছা ভাবী! আমার আশফিও আজ কতো বড় হয়ে গেছে তাই না?
সুমি-সেটা আর বলতে,,,প্রাপ্তি চলে যাওয়ার অনেক বছর পর মুনিয়া দুনিয়াতে এসেছে।আর আশফির তো এখন বিয়ে হওয়ার কথা।ওদের কথা ভেবে আর কি লাভ।প্রাপ্তি হয়তো তার সংসার অন্য কারো সাথে ঠিকি গুছিয়ে নিয়েছে।
আয়ান দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আমি আমার পরীকে খুব ভালো করেই চিনি।আমি ছাড়া অন্য কারো হতে পারে না আমার পরী।
আকাশ আয়েশা বেগমকে ধরে ধরে এনে আয়ানের সাথে বসিয়েছে।নিজের ছেলের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কতো করে তোকে বললাম বিয়েটা কর।কিন্তু না তুই প্রাপ্তি আশায় এখনো বিয়ে না করে আছিস।
আয়ান পেপার হাত থেকে রেখে দিয়ে, অন্য একটা মেয়েকে এই বাড়িতে এনে কি লাভ হতো,কারণ আয়ানের কাছ থেকে কখনোই ভালোবাসা পেতো না।আয়ানের যা কিছু ছিলো সব তার পরীকেই দিয়ে দিয়েছে। অন্য মেয়ে আসলে তাকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছুই নেই।
আয়েশা বেগম- তুই কেমন ছেলেরে বাবা! যে মেয়ে তোর ভালোবাসাই বুজলোনা আজও তুই তাকেই ভালোবাসিস।সেইদিন তোদের কি হয়েছিলো কেউ এখনো জানতে পারলোনা।
আকাশ-থাকনা মা! রোজ রোজ ওকে এইগুলো বলে লাভ কি?ওর অপেক্ষার একদিন অবসানও হতে পারে।
প্রাপ্তির নতুন কলেজের আজ ফাস্ট দিন।ক্লাস পড়েছে তাও মুনিয়াদের ক্লাসে।ক্লাসে ঢুকতেই সবাই সালাম দিলো।প্রাপ্তি সালামের আনসার নিয়ে, আজ তোমাদের সাথে আমার ফাস্ট ক্লাস। তাই আগে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নি। আমি মিফতাহুল জান্নাত। তোমাদের ম্যাথ টিচার।
মুনিয়া প্রাপ্তি ক্লাসে আসার পর থেকেই হা করে তাকিয়ে আছে।মুনিয়াকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টি (মুনিয়ার ফ্রেন্ড) এই মুনিয়া তুই যে ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছিস মনে হচ্ছে তোর বয় ফ্রেন্ড আসছে। এইভাবে হা করে কি দেখছিস?
মুনিয়া-ফোটো কপি!
বৃষ্টি -মানে?
মুনিয়া থুতনির নিচ থেকে হাত সরিয়ে, আমার কাকাইয়ের রুমে উনার মতো দেখতে একজনের ছবি দেওয়ালে ঝুলানো আছে, মানে! ওইটা আমার কাকীর ছবি অনেক পুরোনো। অবশ্য ম্যাডামের বয়সের সাথে ওই ছবির কোনো মিল নেই।
মনে হচ্ছে ওইটা ম্যাডামের যৌবন কালের ছবি।
প্রাপ্তির মুনিয়ার দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেঁসে, দাঁড়াও! কথা বলছিলে কেনো?
মুনিয়া- ইয়ে মানে!।
প্রাপ্তি -ঠিক আছে বসো! আমার ক্লাসে কেউ কথা বলবে না।
প্রাপ্তি ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে গেলো।
ম্যাম! ম্যাম! কারো ডাক শুনে প্রাপ্তি পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে ক্লাসের সেই মেয়েটা।
মুনিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে প্রাপ্তির সামনে এসে দাঁড়ালো।
প্রাপ্তি তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে,মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী, চেহারায় অদ্ভুত এক মায়া।
মেয়েটা একটু খানি দম নিয়ে, ম্যাম আমি মুনিয়া! আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
প্রাপ্তি -অবশ্যই করতে পারো।
মুনিয়া-আপনার সাথে আমার আগে কখনো দেখা হয়েছে?
মুনিয়ার এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে প্রাপ্তি না হেঁসে পারলো না।
কেনো তোমার এমন মনে হয় ?
মুনিয়া ছবির কথাটা বলবে কিনা বুজতে পারছেনা।না! আপনাকে মনে হচ্ছে আমি আগে কোথাও দেখেছি।
প্রাপ্তি -দেখো মুনিয়া! পৃথিবীতে আমার মতো দেখতে আরও অনেক জন আছে।হয়তো তুমি কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছো।তোমার আর কিছু বলার আছে?
আদর কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, প্রাপ্তিকে নিতে এসেছে সে।প্রাপ্তি ক্লাস শেষ করে আদর কে দেখে, দায়িত্ব শীল ছেলে।
কখন এসেছিস?
আদর -অনেকক্ষণ! প্রাপ্তিকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসতে গাড়ির দরজা খুলতেই আরেকটা গাড়ি এসে পাশে দাঁড়ালো।আদর একবার গাড়িটার দিকে তাকিয়ে নিজের গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে দেখে মুনিয়া আস্তে আস্তে বের হচ্ছে।
মুনিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে,আমার মা মনির কি মন খারাপ? নতুন ম্যাডামকে ভালোলাগেনি?
মুনিয়া কোনো কথা না বলেই গাড়িতে এসে বসলো।
আয়ান ও কথা না বাড়িয়ে মুনিয়াকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
চলবে,,,,,,,
#ধর্ষিতা_বউ_২
#রাবেয়া_সুলতানা
#৮
___মুনিয়া বাসায় এসে সোজা আয়ানের রুমে গিয়ে প্রাপ্তির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। ম্যাম কি সত্যি বলেছেন? কাকীর সাথে উনাকে আমি গুলিয়ে ফেলেছি।কিন্তু এতটা মিল কি করে হতে পারে। আয়ান রুমে এসে মুনিয়াকে প্রাপ্তির ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে,মুনিয়া! এই সময় এইখানে?
মুনিয়া -কাকাই! কাকীর আর কোনো ছবি আছে তোমার কাছে?
সুমি মুনিয়াকে তার রুমে খুঁজে না পেয়ে আয়ানের রুমে এসে দেখে, কিরে এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তোকে নিয়ে আমি আর পারিনা।
মুনিয়া -কাকা আমি তোমার সাথে পরে এসে কথা বলছি।
মুনিয়া কলেজে আসতেই প্রাপ্তির একটা ছবি নিয়ে আসলো কিন্তু প্রাপ্তিকে দেখানোর সাহস পাচ্ছেনা। ক্লাস শেষ করেই মুনিয়া আগে বেরিয়ে পড়লো।আদর গাড়ি থামিয়ে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই মুনিয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে,
আদর -এই মেয়ে চোখে দেখতে পাওনা? হাঁটো কি ভাবে?
মুনিয়া-সরি! আসলে আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই।আপনার লাগেনিতো?
আদর -না তেমন লাগেনি।
প্রাপ্তি এসে, কি হয়েছে?
আদর -না মা! কিছু হয়নি। তুমি চলো।
মুনিয়া অবাক হয়ে ম্যাম আপনার মা?
আদর -হ্যাঁ আমার মা! আমার শ্রেষ্ঠ মা!
মুনিয়া কিছু না বলে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে এগুতে লাগলো।কাকাই আজ আসতে পারবে না আমাকে নিজেই বাড়ি ফিরতে হবে।কিন্তু কাল থেকে আমি যা ভেবে আসছিলাম তার সাথে তো আমার ভাবনার কোনো মিলই নেই।আমি ভেবে ছিলাম আমরা হয়তো কাকীকে পেয়ে গেছি।কাকাইকে সারপ্রাইজ দিবো ম্যামকে সামনে দাঁড় করিয়ে। কিন্তু এখন দেখছি ম্যাম আমার কাকী নয়, কারণ আমার কোনো ভাই নেই।ছিলো শুধু আশফি আপু।আর কাকী তো আশফি আপুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।ম্যাম সত্যিই বলেছিলো, কাকীর সাথে আমি ম্যাম কে গুলিয়ে ফেলেছি।
আজ সকাল থেকেই আবিদ চৌধুরীর শরীরটা ভালো না।আয়ান নিজের রুমে বসে অফিসের ফাইল গুলো দেখছে, সুমি হঠাৎই এসে আয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে, আয়ান তাড়াতাড়ি নিচে আসো বাবার শরীর খুব খারাপ। তোমার ভাইয়া ওইখানেই আছে।।
আয়ান হাতের কাজ রেখে, কখন থেকে? তোমরা তো আমাকে কিছু বলোনি।কথা গুলো সুমিকে বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।
হসপিটালের করিডোরে সবাই বসে অপেক্ষা করছে।আবিদ চৌধুরীকে একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছেন।ডাক্তার যাওয়ার সময় বলে গেছে নতুন ম্যাডাম এসে দেখে যাবেন।
সন্ধ্যায় আশফি এসে আবিদ চৌধুরীর কেবিনে গিয়ে ভালো করে দেখে রিপোর্ট সব গুলোই চেক করে
মোটামুটি ভালোই। আবিদ চৌধুরীর মাথায় হাত রেখে কেমন লাগছে আপনার কাছে?আর এই বয়সে আপনার কিসের চিন্তা বলুন তো?
আবিদ চৌধুরী -সেটা তো তোমাকে বুজাতে পারবোনা।
আশফি – সিস্টার উনাকে মেডিসিন গুলো ঠিক মতো দিয়ে দিও।আমি আসছি।
আশফি কেবিন থেকে বেরিয়ে মনে মনে ভাবছে কাল মায়ের জন্মদিন রাত ১২.০০ টার আগেই বাসায় গিয়ে পৌঁছাতে হবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কারো গাঁয়ের ধাক্কা খেয়ে,, সরি
আয়ান -না মা মনি! সরি তো আমার বলা উচিৎ। আমি তাড়াহুড়ায় তোমাকে দেখতে পাইনি।
আশফি কিছু বলতে যাবে এর আগে আদর এসে, আপু তুই এইখানে সারা হসপিটাল তোকে খুঁজেছি। আয়ান পিছনে ফিরে আদরকে দেখে অবাক হয় আরে আদর তুমি এইখানে? অবশ্য তুমি তো ডাক্তার হসপিটালে থাকারই কথা।
আদর -আংকেল! আপনি এইখানে?
আয়ান -আমার বাবাকে নিয়ে এসেছি।
আদর -আংকেল এই হচ্ছে আমার বড় বোন আশফি যার কথা আপনাকে বলেছিলাম।
আশফি -আদর উনাকে তুই আগে থেকে চিনিস?
আদর -আপু উনার সাথে আমার এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিলো আসার সময়।উনার মেয়ের নাম ও আশফি।
আশফি-ও আচ্ছা।তুই এখন হসপিটালে কি করছিস?
আদর -ভুলে গেছিস কাল মায়ের জন্মদিন। আর তুই এখনো হসপিটাল আছিস তাই নিতে আসলাম।
জন্মদিনের কথা শুনে আয়ানের মন খারাপ হয়ে গেলো।কারণ আজ তার পরীর ও জন্মদিন। প্রতি বছর এইদিনে সে একা একাই কাটায়।
আশফি -আংকেল আপনি কি কিছু ভাবছেন?
আয়ান-(ভাবনা থেকে ফিরে এসে)না কিছু না! তুমিই মনে হয় বাবা কে দেখেছো? এখন কেমন আছে উনি।
আশফি- অনেকটাই সুস্থ।ইচ্ছা করলে কালকেই বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন।আর হ্যাঁ উনার বিশেষ যত্ন নিবেন।
আদর আশফির কথা শেষ হতেই, আংকেল কাল আপনি আমার মায়ের জন্মদিনে আসুন না।আমার মা আপনাকে দেখলে খুশি হবেন।
আয়ান-না আদর! অন্য একসময় যাবো।
আশফি -আংকেল চলুন না। আসলে আমরা এইখানে কাউকেই চিনিনা।আদর যখন আপনাকে আগে থেকেই চিনে তাহলে তো আর অসুবিধা নেই।
আশফির কথা শুনে তোমরা এইখানে নতুন নাকি?
আদর -জ্বি আংকেল।এখন কি! যাবেন তো?
আয়ান -এইখানে কোথায় এসেছো তোমরা?
আশফি বাড়ির ঠিকানা বলতেই আয়ান অবাক হয়ে, আরে ওই বাড়িটা তো আমার ছিলো।
আশফিও বিস্মিত হয়ে তার মানে বাশার আপনার কথা বলেছিলো?
আপনার ওয়াইফ,,,,আদর আশফিকে থামিয়ে, তাহলে তো আংকেল ভালোই হলো। কাল যেনো আমরা আপনাকে আমাদের বাসায় দেখি।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে, আচ্ছা চেষ্টা করবো।
আশফি -তাহলে আংকেল আমরা আসি!আর আপনার বাবার দিকে খেয়াল রাখবেন।
সাবিত সাহেবকে খাইয়ে প্রাপ্তি শুয়ে দিয়ে বাবা কালকের দিন তোমার মনে নেই তাই না?
সাবিত সাহেব -কেনোরে মা! কালকের দিন,,,, ওহঃ আমি তো ভুলেই গেছি।কাল তো তোর জন্মদিন।আমি ভুলেই গেছি।আমার নাতিনাতনিরা কাল যে ওদের মায়ের জন্মদিন তারা কি ভুলে গেছে?..
রাত ১২.০০ টা আশফি আর আদর একটা কেক নিয়ে এসে happy birthday to you আমাদের লক্ষ্মী মা।
প্রাপ্তি আর সাবিত সাহেব অবাক হয়ে,
সাবিত সাহেব -তোরা ভুলিসনি?
আদর-না নানা ভাই! মায়ের জন্মদিন আমরা ভুলতে পারি?
চলো মা! কেক কাটো।
ছেলেমেয়ের কান্ড দেখে চোখ দিয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। ২৬ বছর পর আবার এই শহরে তার জন্মদিন পালন করছে তার ছেলেমেয়েরা। আয়ানের হয়তো মনেই নেই আজকের দিনের কথা।তার পরীর জন্মদিনে সবসময় সেই সারপ্রাইজ দিতো।
মা! তুমি এতো কি ভাবছো?তাড়াতাড়ি কেক কাটো।আশফির কথা শুনে ভাবনা থেকে ফিরে এসে আমার ছেলেমেয়ে সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছে।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, হ্যাঁ প্রাপ্তি। সবচেয়ে বড় কথা হলো তোর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে ।
আশফি -তুমি থাকতে আমার আর বিয়ের দরকার আছে?
আদর -আচ্ছা ঠিক আছে মা এইবার তুমি কেকটা কাটো।
প্রাপ্তি কেক কেটে সবাইকে এক এক করে খাইয়ে দিলো।
আদর কেক খেতে খেতে,মা! কাল আমাদের বাসায় একজন গেস্ট আসবে।আসলে এইখানে আসার আগে উনার সাথে আমার পরিচয় হয়।আজ আবার আপুর হসপিটালে দেখা হয়েছে।তাই আপু সহ উনাকে কাল আসার জন্য ইনভাইট করে আসলাম।
প্রাপ্তি -ভালো করেছিস।এখন যা রাত অনেক হয়েছে।বাবা তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি।
সকাল সকাল উঠে প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেলো।বারান্দায় আসলে তার মন ভালো হয়ে যায়।বাড়িটা যে বিক্রি করেছে সেই লোকটার পছন্দ আছে।বারান্দায় বিভিন্ন রকমের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে।প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে, লোকটার সাথে আমার অনেকটাই মিল আছে ।আশফি এককাপ কফি নিয়ে প্রাপ্তির রুমে এসে প্রাপ্তিকে না দেখে বারান্দা গিয়ে, জানতাম তুমি এইখানেই আছো।এই নাও তোমার কফি।
প্রাপ্তি কফি হাতে নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতেই,
আশফি-আমি এইখানে কেনো এসেছি জানো?
প্রাপ্তি মুচকি হেঁসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে, কেনো?
আশফি -আজ তুমি কলেজে যাবে না।আজকের এই বিশেষ দিনটি আমরা একসাথে থাকতে চাই।
প্রাপ্তি -ওকে মহারানী।
আশফি আর আদর বাড়িটাকে সুন্দর করে সাজিয়েছে।মায়ের জন্মদিন বলে কথা।এই শহরের কাউকে তেমন চিনেনা।এসেছে মাত্র কয়েকদিন হলো ব্যস্ততায় কারো সাথে তেমন পরিচয় হয়ে উঠেনি।
বাশার এসে দেখে প্রাপ্তি নিজেই সব রান্না করেছে।সন্ধ্যা হয়ে এলো, সাবিত সাহেব বাশার কে দিয়ে প্রাপ্তিকে নিজে রুমে ডেকে পাঠালেন।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেবের রুমে যাবার জন্য পা বাড়াতেই,মা! আগে তুমি রেডি হয়ে আসো তারপর নানা ভাইয়া ঘরে যাবে।আদর আবার ওই আংকেল কে এগিয়ে আনতে গেছে।আদর এসে যদি দেখে তুমি রেডি হওনি তাহলে তোমার খবর আছে।
প্রাপ্তি আশফিকে আর কিছু না বলে রেডি হয়ে সাবিত সাহেবের রুমে গেলো।
প্রাপ্তিকে দেখে সাবিত সাহেব বসে, আয় মা! আমার পাশে বস!
আজ তোর জন্মদিনে আমার দিবার মতো তেমন কিছু নেই।তবে একটা জিনিস আছে, কথাটা বলে বালিশের নিচ থেকে কিছু কাগজ পত্র বের করে, এই নে!
প্রাপ্তি কাগজ গুলো হাতে নিয়ে বাবা এই গুলো তো জায়গার দলিল।
সাবিত সাহেব -হুম,আমার যা কিছু আছে আজ থেকে সব তোর।আমার তো কেউ নেই এইগুলো দিয়ে আমি কি করবো।কিন্তু আমার মেয়ের জন্মদিনে এইগুলা আমার মেয়েকে আমি উপহার দিলাম।
প্রাপ্তি কান্না জড়িত কন্ঠে, বাবা আমার এইসব কিছুই চাইনা।এই অভাগী কে তুমি তোমার নিজের মেয়ে বলে সমজে স্বীকৃতি দিয়েছিলে এইটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার।
বাশার রুমে দরজায় দাঁড়িয়ে, খালাম্মা ভাইজান আর ওই মামা এসে ড্রইংরুমে বসে আছে, আপনাকে ভাইজান ডাকতেছে।
প্রাপ্তি -বাশার তুমি যাও আমি আসছি।
আয়ান ড্রইংরুমে বসে আছে,সব কিছু দেখে একটু অবাক হলো।বাড়িটা সে যে ভাবে সাজিয়েছে সেইভাবেই আছে।শুধু দেওয়ালের ছবি গুলো এরাই লাগিয়েছে, আয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে একটা ছবির দিকে চোখ পড়লো,এই সে কাকে দেখছে আশফি আর আদরের সাথে আমার প্রাপ্তি, আয়ান সোফা থেকে উঠে আস্তে আস্তে ছবির দিকে এগুতে লাগলো।এইদিকে প্রাপ্তি শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুচতে মুচতে ড্রইংরুমে এসে আয়ানের সাথে ধাক্কা খেয়েই আয়ানের বুকের সাথে মিশে গেলো।
চলবে,,,,,,,