ধর্ষিতা বউ ২ পর্ব ৩+৪

#ধর্ষিতা_বউ_২
#রাবেয়া_সুলতানা

#৩,৪

___প্রাপ্তি রান্নাঘরে ঢুকতেই সুমি মুচকি হেঁসে বললো,কিরে আজ পরীর জন্মদিন আর তুই ঘুম থেকে উঠতে এতো লেট করলি? দুজনে কি সারারাত চোর পাহারা দিছিস নাকি?সুমি কথাটা বলতেই ঝিনুক আর রেশী অট্র হাঁসিতে লুটিয়ে পড়ছে।
প্রাপ্তি কথা না বাড়িয়ে, ভাবী! মিনু আপুকে ফোন করেছো? আশফির জন্মদিন জেনেও একটা ফোন দিলো না।
ঝিনুক -ঠিক বলছো। মিনু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর থেকে সবাইকে কেমন জানি ভুলে গেছে।অবশ্য রাহাত মাঝে মাঝে নিহাদের কাছে ফোন দেয়।

সুমি -মিনু দুইদিন আগে আমায় ফোন করেছিলো।বেশ ভালোই আছে।বার বার আশফির কথা জিজ্ঞেস করছিলো।

আয়েশা বেগম এসে দেখে সবাই রান্নাঘরে কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে।
কি ব্যাপার সবাইকে নাশতা দিবে কখন? আজ তো কেউ অফিসে যাবেনা তাই সবাই আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু তোমরা ওদের সকালের নাশতা না দিয়েই কথার ঝুড়ি খুলে বসেছো।

সুমি-এইতো মা! হয়ে গেছে।আসলে মিনুর কথা উঠলো তাই বলছিলাম।
সবাই নাশতা করতে বসেছে।সুমি আশফিকে কোলে নিয়ে, প্রাপ্তি! সবাইকে কফি ঢেলে দে।
প্রাপ্তি সবাইকে দিয়ে আয়ানকে দিতে যাবে তখনি আয়ান চোখ রাংগিয়ে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে কফিটা নিজেই ঢেলে নিলো।সকালে তুমি আমার সাথে যা করছো এইটার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।শুধু আশফির জন্মদিনের পার্টিটা মিটে যাক তারপর তোমাকে বুজাবো আয়ান কি জিনিস। আয়ান কথা গুলো ভাবছে আর প্রাপ্তির দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। প্রাপ্তি ভালো করেই জানে আয়ান কেনো তার হাতের কফিটা খেলো না।সকাল বেলা যখন আয়ান প্রাপ্তিকে ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিতে ছেয়েছিল প্রাপ্তি তখন ধাক্কা দিয়ে আয়ানকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল।।
আয়ান নাশতা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। প্রাপ্তি আয়ানকে রুমে যেতে দেখে, কি ব্যাপার ও সবাইকে রেখে রুমে চলে গেলো কেনো?না আমাকে দেখতে হবে ও রুমে গিয়ে কি করছে।প্রাপ্তি রুমে এসে দেখে আয়ান রুমে নেই ফোনটা খাটের উপর রেখে ওয়াশ রুমে গেছে।প্রাপ্তি ফোন হাতে নিয়ে সরি আয়ান আমি কখনো ভাবিনি তোমার ফোন আমায় এইভাবে লুকিয়ে দেখতে হবে । তবে আমি এর শেষ দেখতে চাই।এতো কিছু জেনেও কেনো জানি তোমার উপর বিশ্বাস হারাতে ইচ্ছে করে না।আমাকে জানতেই হবে এই তানিয়া কে।ফোন টা খুলে দেখে অনেক গুলা মিসড কল আর এসএমএস।ফাস্ট এসএমএস এ লেখা ছিলো,

“আয়ান তুমি তোমার বউয়ের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাচ্ছো।কিন্তু আমি সারাটা রাত শুধু তোমার কথায় ভেবে কাটাচ্ছি। ”

প্রাপ্তি ভাবছে সব গুলো এসএমএস পড়লে হয়তো আমি ঠিক থাকতে পারবোনা।আচ্ছা লাস্ট এসএমএস টা দেখি,সেই এসএমএস এ লেখা,
“আয়ান আমি তোমার অপেক্ষায় বসে আছি, তাড়াতাড়ি এসো।”

প্রাপ্তি ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিয়ে, ধুম করে বসে পড়লো খাটে।সুখের সময়টা হয়তো মানুষের জীবনে বেশি দিন টিকে না।আজ কি সেই জায়গায় আমিও এসে দাঁড়িয়েছি।আমি কি পারবো আমার আয়ান কে অন্যের হাতে তুলে দিতে?এর আগেতো আমার মরণ ভালো।কেনো করলে আমার সাথে এইরকম। আমাকে ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে এখন আমায় ভালোবাসার কাংগাল বানাতে ছাইছো।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তি হু হু করে কাঁদতে লাগলো।
আয়ানকে ওয়াশ রুম থেকে বেরতে দেখে প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।আয়ানও কিছু না বলে রেডি হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরতে যাওয়ার সময় প্রাপ্তি হাত ধরে ফেললো। আয়ান পিছনে ফিরে দেখে প্রাপ্তি নিচের দিকে তাকিয়ে তার হাত টেনে ধরে আছে।

আয়ান -কিছু বলবে?

প্রাপ্তি -কোথায় যাচ্ছো?

আয়ান -তুমি জানোনা? প্রতিদিন সকাল বেলা আমি কোথায় যাই?
আমি অফিসে যাচ্ছি কিছু বলার থাকলে বলো?
আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে, এই কোন আয়ানকে আমি দেখছি।কতো সুন্দর করে গুছিয়ে মিথ্যা গুলো বলে ফেললো?
একটা বার ভাবলেনা প্রাপ্তি যে তোমার মিথ্যা সহ্য করতে পারেনা।

আয়ান -কিছু বললে বলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ।

প্রাপ্তি -আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে? তোমার সব শক্তি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরো যেনো কেউ তোমার কাছ থেকে আমাকে আলাদা না করতে পারে।

আয়ান- সকালে ন্যাকামি দেখিয়ে এখন কি প্রমাণ করতে চাও।কথাটা শুনে প্রাপ্তি চোখ বন্ধ করে হাত ছেড়ে দিয়ে, যাও তুমি!আর আটকাবো না।যার সাথেই ঘুরতে যাও সাবধানে যেও।সন্ধ্যার আগে ফিরে এসো আজকের দিনে আমি কোনো ঝামেলা চাইনা।

প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ানের মুখে কেমন একটা ভয়ের চাপ দেখা যাচ্ছে। আমতা আমতা করে কোনো কারণে তুমি আমায় ভুল বুজছো?
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা দেখে, প্রাপ্তির কাছে এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে,সরি লক্ষ্মী। তোমার যতো কষ্ট জমা হয়েছে আমার উপর আমি ফিরে এসে সব দূর করে দিবো।
আয়ান চলে গেলো। প্রাপ্তি তাকিয়ে আছে আয়ানের যাওয়ার পথের দিকে।

তোমার আসতে এতো দেরি হলো কেনো? আমি কখন থেকে তোমার জন্য বসে আছি আয়ান।ভেবেছিলাম আজ সারাদিন তোমার সাথে ঘুরবো বেড়াবো তা না এসেছো লেট করে এখন মুখ গোমড়া করে বসে আছো।
তানিয়ার কথা গুলো আয়ানের খুব বিরক্তিকর লাগছে।তানিয়া হচ্ছে আয়ানের কলেজের ফ্রেন্ড। অবশ্য ফ্রেন্ডের ছেয়ে বেশি কিছু তানিয়া ভাবে।তানিয়া আয়ানকে ভালোবাসে সে কলেজের সময় থেকেই।কিন্তু আয়ান কখনো বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবিনি।তানিয়ার বিয়েও হয়ে গিয়েছিলো। তখন থেকে তানিয়া তার হ্যাজবেন্ডের সাথে দেশের বাহিরে থাকতো।কিছুদিন আগে তানিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার বলেছে তানিয়ার ক্যান্সার, বেশি দিন বাঁচবেনা।সেটা শুনেই তানিয়া দেশে চলে আসে তার পরিবারের কাছে। কিন্তু আয়ানকে সে এখনো ভুলতে পারিনি।তাই দেশে এসে আয়ানকে ফোন দেয় দেখা করার জন্য।আয়ানও সব শুনে কাল অফিস থেকেই তানিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।দেখা করার শেষে তানিয়া কখন যে তার পকেটে ওই চিঠিটা দিয়েছিল আয়ান নিজেই জানেনা।
তানিয়া -জানো আয়ান তোমাকে যখন দেখি মনে কেমন জানি শান্তি শান্তি লাগে। আচ্ছা কাল যে তোমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম পড়েছো?
আয়ান অবাক হয়ে, কিসের চিঠি?

তানিয়া- কাল তোমাকে না জানিয়ে আমার কিছু অনুভূতির কথা লিখেছিলাম ওই চিঠিতে।পড়ে ছিলে?
আয়ানের বুজতে আর বাকি রইলোনা কাল থেকে প্রাপ্তি ওই চিঠি পেয়েই আমার সাথে এইরকম করছে।তানিয়া আমি আসছি!

তানিয়া-কোথায় যাচ্ছো । এইমাত্র আসলে আর এখুনি চলে যাবে।

আয়ান – হ্যাঁ আমাকে যেতেই হবে।আমার প্রাপ্তি যে আমায় ভুল বুজেছে।আয়ান তানিয়াকে আর কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।

ওই ভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? রেশীর কথা শুনে অভ্র চমকে উঠলো। বলো কি দেখছিলে?

অভ্র -আমার বউটাকে দেখছিলাম।

রেশী -আমাকে তো সারাদিনই দেখো নতুন করে দেখার কি আছে।

অভ্র -তুমি যে আনরোমান্টিক সেটা আমি জানি।তাই বলে মুখে ফুটিয়ে জাগান দিতে হবে না।তোমার ভাই আর ভাবীকে দেখে তো কিছু শিখতে পারো।প্রাপ্তি আয়ানকে কতো ভালোবাসে।আর তুমি! তাকালেও কেনো তাকিয়ে আছি তার কৈফিয়ত ও তোমাকে দিতে হবে।অভ্রর কথা গুলো শুনে রেশী নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলতে লাগলো,আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি হয়তো আমি ভালো করে বুজাতে পারি না।

প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! কোথায় তুমি?
অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে আয়ানের গলা না? প্রাপ্তিকে এইভাবে ডাকছে কেনো?
রেশী -চলো তো দেখি কি হয়েছে?

ঝিনুক আয়ানকে দেখে, কিরে কি হয়েছে? তুই এইভাবে ঘামছিস কেনো? মনে হচ্ছে কোথাও কি অঘটন ঘটিয়ে এসেছি।

আয়ান-তার থেকেও বড় কিছু হয়ে গেছে আপু।প্রাপ্তি কই?

ঝিনুক -ও তো আশফিকে নিয়ে রুমে গেলো দেখলাম।।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে দৌড়ে রুমের দিকে গেলো।তাড়াহুড়ায় সিঁড়ি বেয়ে উঠাতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে এক গ্লাস পানি এনে আয়ানের সামনে ধরলো। আয়ান পানি খেয়ে প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে আয়ানের পাশে বসালো। প্রাপ্তিও চুপচাপ বসে পড়লো। প্রাপ্তি! আমি জানি কেনো তুমি আমার সাথে এইরকম করছো।প্রাপ্তি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকায়,,,,,,,কথাটা শেষ না করতেই আয়ানের ফোন বাজতে শুরু করলো।
ধ্যাৎ! এখন আবার কে ফোন দিলো? ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখে তানিয়ার নাম্বার। প্রাপ্তি আড় চোখে নাম্বারটা দেখে মনে হচ্ছে তার বুকের ভেতর হাতুড়ি পিটা শুরু করলো। তবুও আয়ানকে কিছু না বলে আয়ানের কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি গুলো লুকানোর চেষ্টা করছে।
আয়ান ফোন রিসিভ করে, ওপাশ থেকে কথা গুলো শুনে, আমি এখুনি আসছি।ফোন আবার পকেটে রেখে,প্রাপ্তি আমি সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। আব্বু, ভাইয়া এরা সবাই পার্টির সব সামলে নিবে।
আয়ান চলে গেলো, প্রাপ্তি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে, চোখের পানি মুছে নিচে এলো।
সুমি – প্রাপ্তি! আজকাল আয়ানের কি হয়েছে? এখন আবার দেখলাম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো?

প্রাপ্তি -ও আসলে জিজ্ঞেস করে নিও।আমাকে বলে যায়নি।
আবিদ চৌধুরী সন্ধ্যা থেকে বার বার আয়ানের কথা জিজ্ঞেস করছিলো। এর ফাঁকে আসিফ আর নীরা এসেছে দেখে, আয়ানের কথা ভুলে গেছে।ওদের সাথে কথায় মগ্ন হয়ে আছে।প্রাপ্তি আশফিকে রেডি করে এনে আকাশের কোলে দিয়ে নিজে রেডি হতে গেলো।সবাই আশফিকে নিয়ে মেতে আছে। প্রাপ্তি রেডি হচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে আজ আমি এতটা সুন্দর করে সাজবো যেন আয়ান চোখ না ফেরাতে পারে।ওই মেয়ে কি আমার থেকেও বেশি সুন্দর যার কারণে আয়ান তার কাছে বার বার ছুটে যায়।প্রাপ্তি নীল রঙের শাড়ি পরেছে,চোখে গাড় কাজল,ঠোঁটে হালকা রঙের একটু খানি ছোঁয়া।সবমিলিয়ে এক অপরুপ সুন্দর লাগছে প্রাপ্তিকে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান ও শুরু হয়ে গেলো কিন্তু আয়ানের কোনো খবর নেই।অনেকক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করেছে,ফোন দিয়েছে শেষমেষ আবিদ চৌধুরীর কথায় অনুষ্ঠান শুরু করলো। সবকিছু হাঁসিখুশি ভাবেই শেষ করলো প্রাপ্তি। যেনো তার কিছুই হয়নি।আয়ানকে দেওয়া কথা সে রেখেছে। পরিস্থিতি যেমনই হোকনা কেনো তাল মিলিয়ে সে চলবে।

চলবে,,,,,,
#ধর্ষিতা_বউ_২
#রাবেয়া_সুলতানা

#৪

___আয়ান হসপিটালের ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করছে আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।রাত ১২.২০,প্রাপ্তি হয়তো আমার অপেক্ষায় বসে আছে।বিকেল থেকে ফোনেরও চার্জ নেই। হয়তো সবাই মিলে আমাকে বকাঝকাও করেছে।কথা গুলো ভাবছে আর হাত দিয়ে মুখটাকে মুছে নিচ্ছে।হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে তানিয়ার মা।
আয়ান-আন্টি! কিছু বলবেন?

তানিয়ার মা- আয়ান! তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। তোমাকে ফোন দিয়ে বলার পর তুমি যদি না আসতে তাহলে হয়তো আমার মেয়েটার খারাপ কিছু হয়ে যেতো।।

আয়ান -আন্টি আমি ওর বন্ধু আর বন্ধু হিসেবে আমি এইটুকু করতেই পারি।আর সময় মতো তানিয়াকে আপনি হসপিটালে নিয়ে এসে আপনি ভালোই করেছেন।

তানিয়ার মা- হ্যাঁ সকালে তোমার সাথে দেখা করে বাসায় ফিরে মেয়েটার যে কি হলো,, বলেই তানিয়ার মা হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো।।
আয়ান -প্লিজ আন্টি ভেঙে পড়বেন না।আমি আপনাদের পাশে সবমসময় আছি।
তানিয়ার মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো, জানি বাবা।তবে তুমি এখন বাসায় যাও। তোমার পরিবারের সবাই হয়তো তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে আন্টি কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন।

আসিফ আর নীরাকে বিদায় দিয়ে প্রাপ্তি আশফিকে এনে ঘুম পাড়ালো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে খাট থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে আয়ান রুমে ঢুকছে,আয়ানকে দেখে প্রাপ্তি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। আয়ান প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে এসে আমার পরীটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।আমি জানি পার্টিতে সবার চোখ আমার পরীর দিকে ছিলো। প্রাপ্তির রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে,আয়ান নরম স্বরে বললো, সরি! আসলে পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমি,,,,,, আয়ানকে বলার সুযোগ না দিয়ে প্রাপ্তি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ানের ঠোঁটে সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিলো। আয়ানও প্রাপ্তির ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলোনা। প্রাপ্তির ভালোবাসায় আস্তে আস্তে নিজেকে হারাতে লাগলো।
রাত ৩.০০ টায় আয়ানকে রেখে প্রাপ্তি ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।আয়ান পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে, তুমি ফ্রেশ হয়ে এলে যে? চলোনা তোমায় আরেকটু,,,, প্রাপ্তি আয়ানের মুখে আঙুল দিয়ে, আমার থেকে কি ওই মেয়েটা তোমায় ভালোবাসা বেশি দেয়? যার কারণে বার বার ওই মেয়ের কাছে ছুটে যাও।আমার শরীর তোমার কাছে ভালো লাগেনা তাইনা?ওই মেয়েটার ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে রাঙিয়ে আমার কাছে আসো তাইনা।এখন বলো তো সারারাত তোমাকে যে ভালোবাসা দিলাম ওই মেয়েটার থেকে কম পড়ছে? আর কতো ভালোবাসা দিলে তুমি ওই মেয়ের কাছে যাবেনা?
আয়ান কথা গুলো শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রাপ্তির গালে থাপ্পড় দিয়ে, একদম চুপ!
কি বলছো আবল তাবল এই গুলো? মাথা ঠিক আছে তোমার?
বাড়ির সবাই শুনলে কি বলবে?
প্রাপ্তি চেঁচিয়ে, লজ্জা করছে তোমার? যখন ওই মেয়েটার কাছে যাও তখন লজ্জা লাগেনা?
তখন একবারো মনে হয়না বাড়ির কথা।আরে আমার কথা না হয় বাদেই দিলাম তোমার তো একটা মেয়ে আছে ওর কথা তো ভাবতে পারতে?

আয়ান করুন গলায় বলতে লাগলো, প্রাপ্তি প্লিজ, আমার কথা ঠান্ডা মাথায় একবার শুনো,আমি তোমাকে সব বুজিয়ে বলছি।

প্রাপ্তি -থাপ্পড় দিয়ে বুজাতে আসছো। কি বুজাবে তুমি? সব মিথ্যে? হ্যাঁ আমি অন্ধের মতোই তোমাকে বিশ্বাস করেছি।কিন্তু তুমি আমার সেই বিশ্বাসের কি মূল্য দিয়েছো।তোমার থেকে তো সায়মন ও ভালো ছিলো।অপকর্মের কথা গুলো নিজের মুখে স্বীকার করে নিয়েছিলো। সায়মনের কথা শুনে আয়ানের মনে হচ্ছে তার শরীরের সব রক্ত তার মাথায় উঠে গেছে,প্রাপ্তিকে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে, কি ভেবেছো! তোমাকে ভালোবাসি বলে এইনা তোমার দেওয়া মিথ্যা অভিযোগ গুলো মাথা পেতে নিবো।
প্রাপ্তি গালে হাত দিয়ে বাহঃ বাহঃ মিঃ আয়ান আপানাকে আর আমার মিথ্যা অভিযোগ সহ্য করতে হবেনা।কথাটা বলে আশফিকে কোলে নিয়ে আমি এখুনি এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি।আপনার সুখের মাঝে আমি কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াবো না।থাকেন আপনি আপনার লুকানো ভালোবাসা নিয়ে।আমি চলে যাচ্ছি আর লুকাতে হবেনা আপনাকে।
প্রাপ্তি হঠাৎ এমন কথা বলবে আয়ান প্রস্তুত ছিলো না,বিস্ময় ভরা দুটো চোখ নিয়ে, মানে? কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে তুমি।কথাটা বলে আয়ান প্রাপ্তির এদিকে এগুতেই, একদম আমার দিকে এগুবে না বলে আশফিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আয়ান পিছন পিছন প্রাপ্তিকে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে এলো।আয়ানের এইভাবে ডাকাডাকি শুনে সবাই বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
আবিদ চৌধুরী অবাক হয়ে, আয়ান কখন এসেছিস? আর এতো রাতে তোদের কি হয়েছে?
আয়ান আবিদ চৌধুরীর কাছে গিয়ে, আব্বু প্রাপ্তিকে আটকাও” প্লিজ আব্বু প্রাপ্তিকে যেতে দিও না।

আবিদ চৌধুরী -আমি তো কিছু বুজতেছিনা। প্রাপ্তি! কি হয়েছে তোমাদের?
প্রাপ্তি -বাবা যাই হয়ে যাকনা কেনো আপনি আমাকে আটকাতে পারেন না।তবে কি হয়েছে সেটাও আমার কাছ থেকে কেউ জানতে চাইও না।কারণ সবার কোনো প্রশ্নের উত্তর আমি দিবোনা।
প্রাপ্তির কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ান এগিয়ে যেতেই, তুমি যদি আমার আর আমার মেয়েকে আটকানো বা ছোঁয়ার চেষ্টা করো তাহলে আমাদের মরা মুখ দেখবে।প্রাপ্তি কথা শুনে আয়ান নিস্তব্ধ হয়ে হাটু ভেঙে বসে পড়লো। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউ কিছু বুজতেছেনা।সুমি এগিয়ে কাছে যেতেই প্রাপ্তি মাথা ইশারা করলো আর এগোতে না।চার দিকে ফজরের আজান দিচ্ছে সেইসময় প্রাপ্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো । প্রাপ্তি চলে গেছে ঠিকি আয়ানের সব কিছু হারিয়ে গেছে।আকাশ আর অভ্র এসে আয়ানকে ধরতেই আয়ান ইশারা দিয়ে দেখাচ্ছে প্রাপ্তিকে আটকানোর জন্য।
পুরো টা বাড়ি যেনো থমথমে হয়ে আছে হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো।আয়ান চোখ মুখ মুছে উঠে আসিফকে ফোন দিলো।ভাইয়া! আপনি কোথায়?
আয়ানের কান্না জড়িত কন্ঠ শুনে আসিফ বিস্মিত হয়ে আয়ান কি হয়েছে সব কিছু ঠিক আছে?

আয়ান -কিচ্ছু ঠিক নেই।প্রাপ্তি আমাকে ভুল বুজে বাড়ি থেকে চলে গেছে।আপনাদের বাড়ি গেলে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন!

আশফিকে নিয়ে বাস স্টেশনে বসে আছে প্রাপ্তি। কোথায় যাবে কি করবে সে জানেনা। বাপের বাড়িও যাবেনা। সেইখানে আয়ান গিয়ে ঠিকিই পৌঁছাবে। আমার জন্য কেনো লুকিয়ে লুকিয়ে ওই মেয়ের সাথে দেখা করবে। এর ছেয়ে ভালো ওকে সম্মান দিয়েই ঘরে নিয়ে আসুক।আমি হয়তো ভালোবাসা পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারি নাই। তাই অন্য মেয়ের ভালোবাসায় নিজেকে পরিপূর্ণ করতে চাইছে।
সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রাপ্তির খোঁজ এখনো কেউ পায়নি।আয়ান আসিফকে জড়িয়ে ধরে, ভাইয়া আমি কি এতোই খারাপ? নাকি আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো?
আসিফ আয়ানকে ছাড়িয়ে কাঁধে হাত দিয়ে, আয়ান আমি জানিনা তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে তবে এইটা জানি তুমি কখনো কোনো অন্যায় করতে পারোনা।আমার বোনটার যে হঠাৎ কি হলো আমিও বুজতেছিনা।এখন কোথায় গেছে কি করছে?

সুমি-আমি তো ভেবেছিলাম রাগ করে যখন বেরিয়ে গেছে হয়তো তোমাদের বাড়ি যাবে।কিন্তু এখন তো দেখছি ভয়ংকর রূপে দাঁড়িয়েছে।

চলবে,,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here