ধর্ষিতা বউ ২ পর্ব ৫+৬

#ধর্ষিতা_বউ_২
#রাবেয়া_সুলতানা

#৫,৬

আমেরিকার এয়ারপোর্টে বসে আছে আয়ান! অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশে আসার জন্য।হঠাৎ করেই একটা ছেলে এসে আয়ানের পাশে বসলো।আয়ান পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে ছেলেটা নিজের ব্যাগ ঠিক করে রাখছে।ছেলেটার চেহারায় অনেক মায়া আছে ছেলেটা ব্যাগ রেখেই আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেঁসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে, হাই! আমি ইশফিয়াক চৌধুরী আদর।
আয়ান ও হাত বাড়িয়ে আমি আয়ান চৌধুরী। আবার দুজনেই চুপ করে বসে আছে।খানিকক্ষণ পর আয়ান নিরবতা ভেঙে, তুমি আমার ছোটো তাই তুমিই করেই বলছি, দেখে তো বুজা যাচ্ছে দেশেই যাচ্ছো। আমেরিকায় কি কাজে আসছো?
আদর- it’s ok.আমি ডাক্তার।এইখানেই পড়াশুনা শেষ করেছি। কিন্তু মায়ের আদেশ বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য।

আয়ান-মা কে অনেক ভালোবাসো?
আদর -অনেক অনেক ভালোবাসি! কারণ আমার জীবনে মা আর আপুই সব।আচ্ছা আপনি কেনো আসলেন?
আয়ান -আমি বিজনেসের কাজে আসছি।
আদর -হুম,,আপনাকে আংকেল বলে ডাকতে পারি?

আয়ান – দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,, কেনো পারবেনা! হয়তো তোমার বয়সের আমার একটা ছেলে থাকতো।অবশ্য আমার একটা মেয়ে ছিলো।

আদর -ছিলো মানে? এখন কোথায়?
আয়ান -জানিনা।তবে আমার মেয়ে আশফি আমার মনে সারাক্ষণই বিরাজ করে।।

আদর-আশফি! আমার বড় আপুর নামও আশফি। দেখেছেন আংকেল আপনার সাথে কেমন যেনো মিলে গেলো ।

আয়ান -সব কিছু বিধাতা মিলায়না।যাইহোক, এই নাও আমার ভিজিটিং কার্ড যদি কখনো মনে পড়ে চলে এসো।আজকের মতো আবার দুজনে জমিয়ে আড্ডা দিবো। তোমার সাথে কথা বলে ২৬ বছর পর মনে শান্তি পেলাম।আদর মুচকি হেঁসে আংকেল আপনাকে আমারও খুব ভালো লেগেছে।অবশ্যই দেশে গেলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। আদরের কথা শুনে আয়ানের চোখ গুলো কেমন টলমল করছে,আদরের থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো,আমার পরী আমার জীবন থেকে চলে গেছে ২৬ টা বছর হয়ে গেলো।এই ২৬ বছরে মনে হলো এই ছেলেটাই আমার কাছে অনেক আপন। বাংলাদেশে এসে দুইজন দুই দিকে পা বাড়ালো।আয়ান চললো চৌধুরী বাড়ির দিকে আর আদর চললো তার মায়ের কাছে।

মা! মা! কাকাই আসতে এতো দেরি করছে কেনো বলো তো।কাকা এইবার অনেক দিন পর দেশে আসছে।তুমি দেইখো কাকাই শুধু এইবার আমাকেই ভালোবাসবে।মেয়ের কথা শুনে সুমি খুব বিরক্তিকর ভাবে মেয়ের দিকে তাকিয়ে সকাল থেকে অনেক বকবক করেছিস তোর কাকাইকে নিয়ে এইবার উপরে যা। যখন তোর কাকাই আসবে তোর কাকাই তোকে ডেকে নিবে।সুমির কথা শেষ হতেই আয়ান সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে আমার মা মনিকে বকছো কেনো তুমি?মুনিয়া কাকাই এসে গেছি এখন আর তোমাকে কেউ বকা দিবেনা।মুনিয়া দৌড়ে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাকাই মাকে ভালো করে বকে দাওতো।
আয়ান -আচ্ছা একটু পর দিচ্ছি।করিম (নতুন কাজের লোক)গাড়ি থেকে আমার ব্যাগ গুলো নিয়ে আসো তো।
আবিদ চৌধুরী আর আয়েশা বেগম আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে এসে,,
আবিদ চৌধুরী -কখন এলি? আমি এতোক্ষণ এইখানে বসেই তোর অপেক্ষা করছিলাম।তোর দেরি দেখেই রুমে গেলাম।
আয়ান-এইতো আব্বু কিছুক্ষণ।

সুমি-বাবা! কাকা ভাতিজী এক সাথে হলে আর কারো কথা মনে থাকে?আয়ান আগে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।পরে কথা বলা যাবে।

মুনিয়া- কাকাই মা ঠিক বলেছে আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।
আয়ান নিজের রুমে গিয়ে কোর্ট খুলে দেওয়ালের প্রাপ্তির ছবির দিকে নজর পড়তেই, কেমন আছো তুমি? আমাকে কষ্ট দিয়ে কি তুমি সত্যি ভালো থাকতে পারবে।না আমি অভিশাপ দিচ্ছি না।শুধু বলছি আমার প্রাপ্তিও তো আমায় ভালোবাসতো।আমার প্রাপ্তি তো আমায় ছাড়া ভালো থাকতে পারেনা।আচ্ছা প্রাপ্তি! আমার ভালোবাসায় কি কোনো খাদ ছিলো? কেনো চলে গেলে তুমি আমায় একা রেখে খুব কষ্ট হয় আমার।তোমাকে একটা মিথ্যা বলায় ২৬ টা বছর এর শাস্তি পেতে হবে আমি কল্পনায় করিনি।(আয়ান ছবি তে হাত রেখে)মিস করি তোমায় আর আমার মেয়েকে।আমার মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গেছে তাইনা?

তোর মেয়ে শুধু বড় হয়নি হয়তো বিয়েও হয়েছে।কথাটা শুনে পিছনে ফিরে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান-ভাইয়া কখন এলি?

আকাশ-কিছু ক্ষণ! তুই এখনো ফ্রেশ না হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।

গাড়ি থেকে নেমেই আদর সদর দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে মা! মা! কোথায় তুমি? আদরের মা রুম থেকে বেরিয়ে এসে, কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করতে ছিলাম।তোর দেরি দেখে ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে আসি।আদর তার মাকে জড়িয়ে ধরে। I miss u মা! অনেক অনেক করেছি তোমায়?
আদরের মা আদরের কপালে চুমু দিয়ে পাগল ছেলে।আমি ও আমার ছেলেকে অনেক মিস করেছি।তুই ডাক্তার হয়ে ফিরে এসেছিস এতেই আমার সব অপেক্ষার অবসান হয়েছে।এখন আর কোনো কষ্ট নেই।

আদর -মা! আপু কোথায়? আমি আসবো জেনেও এখনো বাসা এলোনা?

ডাক্তার আদর আপনি ভুল বুজছেন। আদর পিছনে ফিরে নিজের বোন আশফিকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আমার হসপিটালে ইমারজেন্সি রুগি ছিলো তাই না গিয়ে থাকতে পারলাম না। হসপিটালে যেদিন থেকে জয়েন করবি সেদিন থেকে বুজবি দায়িত্ব কাকে বলে।
আশফির কথা শুনে আদর আশফির নাক টেনে দিয়ে, জ্বি ডাক্তার আপু বুজেছি।।

আশফি আদরকে নিয়ে একটু এগিয়ে এসে দেখেছো মা!

মা-হুম দেখেছি।আদর! যার জন্য আজ তুই দুনিয়ায় আলো দেখেছিস তাকে বলবিনা?

আশফি- কি! তুই এখনো দেখা করিসনে? আদরের কান টেনে ধরে চল আমার সাথে।

আদর গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, মিঃ সাবিত সাহেব আসবো?
সাবিত সাহেব -কে? গলাটা কেমন চেনে লাগছে।
আশফি ধাক্কা দিয়ে আদরকে রুমে ঢুকিয়ে, নানা ভাই, আদর আসছে দেখো।সাবিত সাহেব খুব বুড়ো মানুষ তাই চোখে কম দেখেন।চশমা টা খুঁজে নিয়ে চোখে দিতে দিতে আদর এসেছে?কই আমার আদর নানা ভাই। কতো বছর তোকে দেখিনা।তোর মা কে কতো করে বললাম আমার নানা ভাই দেশে থেকেই পড়াশুনা করবে। কিন্তু না তোর মা জেদ ধরেছে তোকে বড় ডাক্তার বানাবে।তাই আমিও আর জোর করলাম না।
আদর সাবিত সাহেবের পাশে বসে আমিও তোমাদের অনেক মিস করেছি এখন চলো মা অপেক্ষা করছে খাবার নিয়ে, চলো এক সাথে খাবো।
আদর আর সাবিত সাহেব ড্রইংরুমে এসে কই তোর মা” প্রাপ্তি! প্রাপ্তি!
প্রাপ্তি এসে এইতো বাবা আমি রান্নাঘরে ছিলাম। খাবার আনতে গেছি।তুমি বসো না! নাতিনাতনিদের সাথে একসাথে বসে খেয়ে নাও।
সাবিত সাহেব বসতে বসতে, প্রাপ্তি মা” আজ তো আদর ডাক্তার হয়ে এসেছে, কথাটা ভেবেছিলাম বলবো না।কিন্তু না বলেও পারছি না।তাই বলছিলাম ওদের বাবা,,,,,, প্রাপ্তি সাবিত সাহেবকে থামিয়ে বাবা আপনি খেয়ে নিন।আর ওদের বাবা নেই।বাবা ছাড়া কি ছেলেমেয়ে মানুষ করা যায় না? হ্যাঁ হয়তো সেই দিন আপনি না থাকলে আমি অজানায় হারিয়ে যেতাম।হয়তো আমার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে না খেয়ে মরতে হতো। শুধু মেয়ে কেনো বলছি! আমার ছেলে যে কিনা আমার গর্ভে দুই মাসের বাচ্ছা। হয়তো সেইদিন জানতাম না আমি আরেক সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।আর সেইদিন যদি বাস স্টেশন থেকে আমাদের না নিয়ে আসতে হয়তো আমরা কোথায় হারিয়ে যেতাম। কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তি কান্নায় ভেঙে পড়লো।আশফি নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে, মা! প্লিজ তুমি কেঁদো না।আমাদের বাবার দরকার নেই। তুমি আমাদের কাছে বাবা মা সব।আদর উঠে এসে হ্যাঁ মা আপু ঠিক বলেছে তুমি আমাদের কাছে সব।আমার লক্ষ্মী মা! প্লিজ কাঁদেনা।

প্রাপ্তি চোখ মুছে তোদের একটা কথা বলা হয়নি। আমাদের কাল এই বাসা ছেড়ে যেতে হচ্ছে।আমার কলেজ থেকে বদলির অর্ডার আসছে।
কেউ আর কিছু বললো না সবাই চুপচাপ খেয়ে নিলো।

প্রাপ্তি -তোরা গিয়ে রেস্ট নে আমি বাবা কে নিয়ে তার রুমে যাচ্ছি।
প্রাপ্তি সাবিত সাহেব কে রুমে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে,আমার কথায় তোমার কষ্ট লেগেছে তাইনা।
সাবিত সাহেব -নারে,,,,মা! কষ্ট লাগে নাই।তবে এই ২৬ বছর তুই অনেক কষ্ট করেছিস।নিজেকে সুশিক্ষিত করে কলেজের শিক্ষক হয়েছিস।ছেলে মেয়ে দুজনকেই ডাক্তার বানিয়েছিস।তোর এই কষ্টের সাক্ষী যে আমি নিজে।

চলবে,,,,,,

#ধর্ষিতা_বউ_২
#রাবেয়া_সুলতানা

#৬

____সাবিত সাহেবকে শুয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসে খাটের কিনারায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো প্রাপ্তি । ভালো লাগছেনা দেখে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। আকাশের তারা গুলো ঝলমল করছে। চারদিকে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। আজ আয়ানের কথা খুব মনে পড়ছে।মনে হচ্ছে আয়ান আমার শিরা উপশিরায় মিশে আছে।হয়তো তানিয়াকে নিয়ে আয়ান সুখেই আছে।আয়ান! আমার কথা কি তোমার মনে পড়েনা?পৃথিবীতে কোনো কিছু থেমে থাকেনি।থেমে গিয়েছিল তোমার আর আমার সম্পর্ক। তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে জীবনের শেষ দিন পযর্ন্ত আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে রাতের আকাশের চাঁদ দেখবো।যখন আকাশ মেঘে ডেকে যাবে চারদিকে পাখিরা কিচিরমিচির ডাকবে তখন তুমি আমার কপালে চুমু দিয়ে বলবে, পরী আই লাভ ইউ। যখন বৃষ্টি হবে ছাদে গিয়ে তুমি আমি একসাথে ভিজবো। হ্যাঁ আরও অনেক কথাই দিয়েছিলে।আমি কিছুই ভুলিনি আয়ান।এখন সব কিছু সময় মতো ঠিকি হয়, শুধু হয়নি তোমার আমার সাথে চাঁদ দেখা,হয়নি কপালে চুমু খেয়ে আই লাভ ইউ বলা,হয়নি দুজনে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। কিন্তু হ্যাঁ সব কিছুর মাঝে একটা কথাই সত্যিই হয়েছে, তুমি আমাকে বলতে প্রাপ্তি আমি তোমাকে সামলানোর জন্য সারাজীবন থাকবোনা। তুমি ঠিকি বলেছো তুমি আমার পাশে নেই আছে শুধু তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতি গুলো। আছে শুধু তোমার অস্তিত্ব। তানিয়ার চিঠিতে লিখা গুলো আমাকে আজও অনেক কষ্ট দেয়।আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি ওই মেয়ের কতো টা কাছে গিয়েছিলে? অবশ্য এখন তো তুমি ওর কাছেই থাকো।সেইদিন রাতে তুমি যদি আমায় থাপ্পড় গুলো না দিয়ে সত্যি কথা গুলো বলতে আমি এক নিমিষেই তোমায় ক্ষমা করে দিতাম।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে আশফি।

প্রাপ্তি -তুই এখনো ঘুমাসনি?

আশফি -তুমিও তো ঘুমাও নি! অবশ্য তোমাকে আমি কখনো দিখিনি শান্তিতে একটা রাত ঘুমিয়েছো।

প্রাপ্তি মেয়ের কথা শুনে মুচকি হাঁসি দিয়ে,যা ঘুমিয়ে পড় সকালে অনেক কাজ।নতুন বাড়ি নতুন একটা জায়গা,নতুন পরিবেশ, বুজিস তো কতো কাজ।

আশফি-তোমার কলেজ থেকেও আর সময় পেলোনা ট্রান্সফার করানোর জন্য। আদরটা আসলো কয়েক দিন থেকে তার পর না যেতে পারতাম।কিন্তু না” আচ্ছা মা! যেখানে যাচ্ছো জায়গাটা কি তুমি আগে থেকে চিনো?কথাটা বলতেই প্রাপ্তি থমকে গেলো।কারণ শহর টা তার আগে থেকেই চেনা।তার সব অস্তিত্ব জুড়ে আছে এই শহর। তার প্রিয় মানুষটাই যে ওই শহরে থাকে।

আশফি -মা! আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।কারণ জানোই তো আমাকে ওইখানে গিয়ে হসপিটালে জয়েন করতে হবে।।

আশফির কথা শুনে মেয়ের মাথায় হাত রেখে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।ওই শরের মানুষ গুলো অনেক ভালো তবে কাছের মানুষ গুলো ভালো না।কথাটা বলেই প্রাপ্তি বারান্দা থেকে চলে এলো।
আশফি মায়ের কথা শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ের কথা তো কিছুই মাথায় ঢুকলো না।মানুষ ভালো কিন্তু কাছের মানুষ গুলো ভালো না। ধ্যাৎ! মা মাঝে মাঝে এমন কথা বলে মাথায় ঢুকেনা।
রাত ২ টা সারাদিনের জার্নি করে আদর বেঘোরে ঘুমাছে।প্রাপ্তি রুমে এসে আদরকে দেখে মুচকি হেঁসে মাথাটা নাড়িয়ে কাছে গিয়ে কাঁথা গাঁয়ে দিয়ে লাইট অফ করে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে রেডি হওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে প্রাপ্তি। নতুন বাড়িতে যাবে আগে আগে পৌঁছানো টা ভালো।ওইখানেই গিয়েও কতো কাজ।বাড়িটা নিজের মনের মতো করে সাজাতে হবে।অবশ্য সাজানোর ব্যাপারে প্রাপ্তির এতো মাথা ব্যাথা নেই।এইসব এখন আশফিই করে।
আদর রেডি হয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে মা! তোমরা গাড়িতে গিয়ে বসো আমি নানা ভাইকে নিয়ে আসছি।
আশফি -থাক তোকে আর কষ্ট করতে হবে না নানা ভাইকে আমি গাড়িতে বসিয়ে এসেছি।সকাল থেকে তো হনুমানের মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলি।এখন আসছে ওনি নানা ভাইকে নিয়ে যেতে।

আদর -দাঁড়া তোকে তাড়াতাড়ি করে এইবাড়ি থেকে বিদায় করতে হবে।না হলে সাতচুন্নির মতো আমার পিছনে পড়ে থাকবি।একটা প্রেম করেই তো বিদায় হতে পারিস তাহলে আমাদের খরচটা বেঁচে যেতো।
প্রাপ্তি কথাটা শুনে কোনো কিছু খেয়াল না করেই,আদর! আমার মেয়ে আয়ান চৌধুরী মেয়ে আর আয়ান চৌধুরী কখনো তার মেয়েকে পালিয়ে যেতে দিতো না।
সে যদি অন্যের মেয়েকে কুড়িয়ে এনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ে দিতে পারে আর নিজের মেয়ে কথা তো বাদই দিলাম।

আদর -আয়ান চৌধুরীর মেয়ে মানে? বাবার নাম তো ইকবাল মাহমুদ! আয়ান চৌধুরী নাম টা আমি কোথায় যেনো শুনেছি।
আদরের কথা শুনে প্রাপ্তি থতমত খেয়ে গম্ভীর গলায়, তুই বুজতে ভুল করেছিস চল এখন তোর নানা ভাই গাড়িতে একা বসে আছে।কথাটা বলেই প্রাপ্তি হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
আশফি দিকে আদর তাকিয়ে, আপু তুই ও কি ভুল শুনেছিস?তবে এই আয়ান চৌধুরী নাম টা খুব চেনা লাগছে তবে মনে করতে পারছিনা।
আশফি -চল তো! তুই বেশি কথা বলিস।

নতুন শহরে প্রাপ্তিদের গাড়ি আসতেই বুকের ভিতরটা কেমন জানি করছে প্রাপ্তির।নিজের কাছের মানুষ গুলো সবাই এই শহরে থাকে।২৬ টা বছর পর আবার এই শহরে। সব কিছুতেই এখন আধুনিকতার ছোঁয়া। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তার আয়ান হারিয়ে গেছে হয়তো। সংসার, ছেলেমেয়েদের নিয়ে হয়তো সুখেই আছে।সেই সংসারে হয়তো আমার কোনো স্থান ছিলোনা। ছেলের কথা তো আয়ান জানেই না।আশফির কথা হয়তো ভুলে গেছে ,কারণ তার নিজের সংসারে আমার মেয়ের কি কোনো স্থান থাকতে পারে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই প্রাপ্তিদের গাড়িয়ে এসে থামলো একটা ব্রিজের উপর।

প্রাপ্তি আদরকে উদ্যেশ্য করে, কি হয়েছে আদর গাড়ি থামালি কেনো।বাড়ি কি এসে গেছে নাকি।আমি তো বাড়ীটা সরাসরি দেখিনি।ড্রাইভার তো চিনে।

আদর -না মা! সামনে এক্সিডেন্ট হয়েছে হয়তো তাই অনেক ভিড়।(আয়ানের গাড়িটাও ব্রিজের উপর প্রান্তে এসে ভিড় দেখে থামলো।)
প্রাপ্তি -ওহ্ তাহলে তো অনেকক্ষণ ওয়েট করতে হবে।

আশফি -আমি গিয়ে দেখি!

আদর -রাস্তার মধ্যেও কি তুই ডাক্তারি শুরু করবি নাকি?

আশফি -আদর! সবসময় ফাজলামো ভালো লাগেনা।এইটা আমার দায়িত্ব।

ভাইবোনের ঝগড়া দেখে প্রাপ্তি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।
আয়ানের কেমন জানি লাগতে শুরু করলো।মনে হচ্ছে তার প্রাপ্তি আশেপাশে কোথাও আছে।আয়ান গাড়ি থেকে নেমে ভিড়ের দিকে আগাতে লাগলো । প্রাপ্তিরও খুব অস্থির লাগছে।কেনো মনে হচ্ছে আয়ান তার পাশেই আছে।হয়তো সারাটা রাস্তায় আয়ানের কথা ভাবতে ভাবতে আসছে তাই?কিন্তু না এই অস্থিরতা অনেক বিশাল। আয়ান হয়তো সত্যিই আমার পাশে আছে এই ভেবে প্রাপ্তিও ভিড়ের মধ্যে এগুতে লাগলো।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here