ধূসর প্রেমের অনুভূতি পর্ব -৩৬

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_৩৬
.
.
ফারহা বাড়িতে ফিরে ড্রাইভার কে দিয়ে গাড়ি ওয়াশ করতে পাঠিয়ে দেয়৷ ফারহা চায় না মেঘ কোন ভাবে কোন ক্লু খুজে পাক৷ তাই সব প্রুফ মিটিয়ে দিতে চায়ছে৷

বাড়িতে প্রবেশ করে তনুকে ড্রইংরুমে দেখে ফারহা সেখানে দাড়িয়ে যায়৷ তনু তার ফোন দেখায় এতোটাই ব্যস্ত যে ফারহা তার পাশ দিয়ে উপরে চলে গেল সেটা টের পেল না৷ ফারহা ধীরে ধীরে নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগলো৷ তখনি হঠাৎ পেছন থেকে কারো গলা শুনে থমকে যায় ফারহা ৷ ফারহা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তনু ক্রুর হাসি দিয়ে ফারহার দিকে এগিয়ে আসছে৷

ফারহার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠতে দেখে তনুর পুরো শরীরে যেন আগুন জ্বলে উঠলো৷

” কোথায় গিয়ে ছিলে ফারু? সকাল থেকে তোকে বা আদিল রাফি কাউকে খুজে পেলাম না৷”

” হৃদয় দিয়ে খুজলে ঠিকি আমাকে খুজে পেতি তনু৷ যাই হোক বের হবার সময় তোকে কেন কোথাও খুজে পেলাম না তনু? কোথায় গিয়েছিলে?”

ফারহার প্রশ্ন শুনে তনুর মুখের ভাব ভঙ্গি কিছুটা বদলে গেল৷ তনু এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলতে লাগলো,” আসলে পুরো দিন এই বাড়িতে থাকতে থাকতে খুব বোর লাগছিলো তাই ভাবলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি৷ ”

” জানু এই সময়টা আমাদের জন্য কতটা রিস্কি সেটা তুই আমি দু’জনে জানি৷ কিং ফায়ার আর তার দুই চামচা হ্যারি লিও পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে? যে কোন সময় আমাদের উপর এট্যাক হতে পারে৷”

ফারহার কথা গুলো দাঁতে দাঁত চেপে শুনে আলতো করে হেসে বলে,” হুম তুই ঠিক বলেছিস৷ আমাকে আরো সর্তক হওয়া উচিত ছিলো৷ এনিওয়েস এর পর থেকে সর্তক থাকবো৷ কিন্তু তুই তো বললি না, তুই এতোটা সময় কোথায় ছিলিস?”

ফারহা তার দাঁত গুলো বের করে তনুর দিকে তাকিয়ে বলে,” উফফ জানু আজ লং ড্রাইভে গিয়ে ছিলাম৷ তোর মতো আমারও না বাড়িতে ভিষণ বোর লাগছিলো৷ তাই ভাবলাম একটু লং ড্রাইভে বেরিয়ে আসি৷ ”

তনু ফারহাকে মনে মনে দু’তিনটে গালি দিয়ে বলল,” আমার গল্প আমাকে শুনালো ফাজিল মাইয়া৷ ”

তনুকে চুপ থাকতে দেখে ফারহা বলতে লাগলো,” জানু কোথায় হারিয়ে গেলি? দেখ তোর সব প্রশ্নের উওর এতিমধ্যে আমি দিয়ে দিয়েছি নাও আমি আমার রুমে যাচ্ছি ৷ আর শোন নিচে সারভেন্ট বলেদিস আমার জন্য কফি পাঠিয়ে দিতে৷ হাত দুটো টন টন করছে৷ ”

বলতে বলতে ফারহা নিজের রুমে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ এদিকে তনু পারে না ফারহাকে চিবিয়ে খেতে৷ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে নিচে ড্রইংরুমে গিয়ে সারভেন্টকে ফারহার জন্য কফি বানিয়ে তার রুমে পাঠিয়ে দিতে বলে তনু নিজের রুমে চলে গেল৷

(৬৬)

” স্যার এখন কি করবো?”
আসলামের কথার প্রত্ত্যুতরে মেঘ তার হাত দিয়ে কপাল ঘষে বলল,” এই বিষয়টা এখানে শেষ আসলাম৷ এই বিষয়টা যেন তৃতীয় কোন ব্যক্তি না জানতে পারে আসলাম৷”

” ওকে স্যার৷ এই ব্যাপারটা এখানে ক্লোজ তারেক স্যার এই বিষয়ে বিন্দু মাত্র জানতে পারবে না৷ ”

” গুড৷ এখন আমাদের দ্রুত ফিরতে হবে তার পূর্বে গাড়ির টায়ারের চিন্হ গুলো মুছে ফেলতে হবে৷”

” স্যার আপনি গাড়ি নিয়ে বড় রাস্তায় উঠে যান৷ আমি প্রমান গুলো মিটিয়ে আসছি৷”

আসলামের কথা মতো মেঘ গাড়ি নিয়ে বড় রাস্তায় উঠে যায়৷

_____________

ছাঁদের কানির্শে দারিয়ে গুনগুন করে গান গাইছিলো ফারিহা৷ অর্নিল ফারিহার পেছনে দারিয়ে গান শুনছিলো৷ হঠাৎ করে ফারিহা গান বন্ধ করে হু হু করে কেঁদে ওঠে৷ ফারিহার এহং কান্ডে অর্নিল হতভম্ব হয়ে ফারিহার কাছে গিয়ে ফারিহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,” ফারিহা তোমার কি হয়েছে কাঁদছো কেন? আমি কোন অপরাধ করেছি? বলো আমাকে?”

ফারিহা কাঁদতে কাঁদতে অর্নিলকে কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো না বরং দৌড়ে চলে গেল৷

অর্নিল কিছু না বুঝতে পেরে ফারিহার পেছন পেছন ছুটে গেল৷

______________

” ফারহা শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে দিয়ে ভিজে চুল মুছতে মুছতে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর হাসছে৷ ফারহা মনে মনে পরবর্তী প্লান করে নিলো৷ এদিকে মেঘ নিঃশব্দে রুমে ঢুকে ফারহার পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরে ফারহার কানের লতিতে চুমু দিয়ে বলে,” ভালোবাসি ফারুপাখি ৷ ”

মেঘের মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনে ফারহা মিষ্টি করে হেসে মেঘের দিকে ফিরে মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,” তো মিস্টার পুরো দিন পর এখন বলা হচ্ছে ভালোবাসি? তোমার ভালোবাসা আজ এক্সেপ্টেড নয়৷ ” বলে গাল ফুলালো ফারহা৷ মেঘ ফারহার ফুলানো গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বলে , ” আমার রাজ্যের রাজরানী বুঝি আমার উপর অভিমান করেছে? ” ফারহার কপালে কয়েকটা চুল কানের পিঠে গুজে দিয়ে ফারহাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে তোয়ালে দিয়ে ফারহার ভেজা চুল গুলো মুছতে লাগলো৷

ফারহা মেঘের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,” মেঘরাজ কিং ফায়ার আর তার চামচাদের খুজে পেয়েছো?”

মেঘ ফারহার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে ফিরে হেসে ফেলে৷ মেঘের এই হাসি ফারহার চোখ এরায়নি৷ ফারহা খুব ভালো করে জানে মেঘ সবটাই বুঝতে পেরেছে৷ মেঘ হাসি থামিয়ে ফারহাকে বলে,” জানো ফারুপাখি আজ একটা কান্ড ঘটেছে৷ একটা লোককে কেউ বা কারা লোকটিকে উল্টো ঝুলিয়ে মানুষ খেকো মাছের খাদ্য বানিয়েছে৷ ”

” এমা তাই নাকি?” ফারহা গালে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার মতো এমন ভাব করলো যেন আজ প্রথমবার ফারহা এরকম ভয়ংকর মৃত্যুর কথা শুনলো৷ মেঘ ফারহাকে কখনো কখনো বুঝতে পারে না৷ ফারহা আসল রুপ কোনটা? ফারহা মেঘের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,” মেঘরাজ ফ্রেস হয়ে এসো আমি সারভেন্টকে বলছি লাঞ্চ রেডি করতে৷ ” কথাটা বলে ফারহা বসা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়৷

ফারহা তনুর রুমের সামনে থেকে যেতে নিলে ফারহা তনুর রুম থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ শুনতে পায়৷ ফারহা ওখানে দারিয়ে পরে৷ এদিকে তনু রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে রুমের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে লাগলো৷ একটার পর একটা প্লান ফ্লপ হয়ে যাচ্ছে তনুর; কিছুতেই তার প্লান সাকসেসফুল হচ্ছে না বরং আরো সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে৷

তনু ফ্লাওয়ার ভাজটা ড্রেসিং টেবিলের উপর ছুড়ে এক প্রকার চিৎকার করে বলে উঠলো, ” ছাড়বো না আমি কাউকে ছাড়বো না৷ আমার পথে কাঁটা হয়ে যে আসবে তাকে আমি শেষ করে দিবো৷ ”

তনুর কথা গুলো ফারহার কান অব্দি পৌছাতে বেশি সময় লাগলো না৷ ফারহা কথা গুলো শুনে ক্রুর হেসে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,” আরুকে শেষ করার মত ক্ষমতা জেসিকার এখনো তৈরি হয়নি তনু ৷ তবে আমি জেসিকাকে একটা সুযোগ অবশ্যই আমি দিবো তবে সুযোগ একটাই পাবে জেসিকা৷ তবে সেই সুযোগ যদি জেসিকা একবার হারিয়ে ফেলে তাহলে আই সোয়ার জেসিকা তোকে তোর প্রাণটা আমার হাতে দিতে হবে৷ আজরাইল হয়ে তোর সামনে আমি দাড়াবো ৷ সেদিন তুই নিজেকে বাঁচাতে পারলে বাঁচিয়ে নিস৷ ” কথাটা বলে ফারহা নিচে কিচেনে চলে গেল৷

(৬৭)

হ্যারি লিও এর জ্ঞান ফেরার পর থেকে নার্স তিনজন তাদের রুম থেকেবের হতে দিচ্ছে না৷ যতবার রুম থেকে বের হতে চাইছে ঠিক ততোবার নার্সরা বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে হ্যারি লিওয়ের সামনে; এক প্রকার বিরক্ত হয়ে হ্যারি নার্সদের বলতে লাগলো,” হাউ ডেয়ার ইউ ৷ তোমাদের সাহস দেখে আমি রেইলি সারপ্রাইজড্ ৷”

একজন নার্স চোখ জোড়া ফ্লোরে নিবন্ধ করে বলল,” স্যরি স্যার, আপনাদের এই রুমের বাইরে যাওয়ার কোন অনুমতি নেই৷ ম্যাম আমাদের স্ট্রিটলি বারণ করে দিয়েছে ৷ আপনাদের রুমের বাইরে বের হতে দিতে৷ ”

” ওয়াট! জেসিকা?”

” ইয়েস স্যার৷”

” আমরা আমাদের বস কিং ফায়ারের কাছে যেতে চাই৷ তিনি পাশের রুমে আছে৷”

” স্যরি স্যার আমরা আপনাদের বাইরে যেতে দিতে পারবো না৷ আপনারা বরং ম্যাম আশা অব্দি অপেক্ষা করুন৷”

নার্সের কথা শুনে হ্যারির মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে গেল৷ সেন্টার টেবিলের উপর থেকে কাঁচের জগটা তুলে নিয়ে নার্সের মাথা আঘাত করে বসলো হ্যারি৷ নার্স মেয়েটি মুহূর্তে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো৷ সাদা টাইলসের ফ্লোর রক্তে ভেষে যাচ্ছে৷ এটা দেখে বাকি দু’জন নার্স ভয়ে পিছিয়ে যায়৷ হ্যারি বা লিওকে বাধা দেওয়ার মতো সাহস তাদের দু’জনের মধ্যে অবশিষ্ট নেই বললে চলে৷

হ্যারি বাকি দু’জন নার্সের দিকে তাকিয়ে ঘাড় বাঁকা করে বলে,” টুয়েন্টি মিনিসের মধ্যে পুরো রুম আমার ক্লিন চাই ৷ ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”

নার্স দু’জন ভয়ে ভয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়৷ হ্যারি লিও দুজনে এক সাথে বের হয়ে কিং ফায়ারের রুমে গিয়ে দেখে পুরো রুম ফাঁকা৷ ওয়াশরুম বা পুরো ফ্লাটে কোথাও কিং ফায়ারকে খুজে পেল না হারি লিও৷ হ্যারির চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ৷ টেরোরিস্টের সকল পাওয়ার কিং ফায়ারের হাতে , কিং ফায়ার যতোক্ষণ না নিজের মুখে নিজের সকল পাওয়ার হ্যারির উপর না দিচ্ছে ততোক্ষণ হ্যারি কোন ভাবে কিং ফায়ারের জায়গা নিতে পারবে না৷ লিওয়ের মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা৷ কিং ফায়ার হঠাৎ এভাবে উধাও কি করে হতে পারে? হয় কেউ তাকে কিডন্যাপ করেছে নাহলে জেসিকা কিং ফায়ারকে কোথাও সরিয়ে দিয়েছে৷ কথাটা লিও হ্যারিকে জানাতে নিলে হ্যারি বলে ওঠে,” লিও কিং ফায়ারকে জেসিকা সরিয়েছে আ’ম ড্যাম শিওর ৷”

” আমরা এখন কি করবো হ্যারি? এই ফ্লাট থেকে বের হবার তো কোন অপশন দেখছি না? তাহলে বের হবো কি করে?”

হ্যারি কিছু একটা ভেবে ঠোঁটের কোণে পৌশাচিক হাসি ফুটে ওঠে৷ হ্যারি লিওয়ের দিকে বলল,” উপায় একটা আছে লিও৷”

” কি সেই উপায়?”

” আমার সাথে এসো৷” হ্যারির পেছন পেছন লিও তাদের রুমে গেল৷ সেখানে নার্স দু’জন খুব দ্রুত ব্লাড ক্লিন করছে৷ হ্যারি লিওয়ের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিতে লিও বুঝতে হ্যারির এই হাসির কারণ বুঝতে পেরে সেও হাসি দিলো৷

____________

” রোজা তার মম মেঘ ফারহার মম ড্যাড অর্নিল ফারিহা তনু সবাই এক সাথে ডাইনিংয়ে বসে লাঞ্চ করছে৷ তনু আর ফারিহার মুখ থম থমে হয়ে আছে৷ ফারিহা খাবার না খেয়ে নাড়াচাড়া করছে৷ এদিকে তনুও সেম কাজ করছে৷ ফারহা সবটাই খেয়াল করছে কিন্তু কিচ্ছু বলছে না৷ অন্যদিকে রোজার দু’চোখ যেন কাউকে খুজে যাচ্ছে৷ বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে৷ মেঘ বিষয়টা খেয়াল করে বলে,” রোজা খেতে কোন অসুবিধা হচ্ছে? ”

মেঘের হঠাৎ এমন প্রশ্নে রোজা থতমত খেয়ে বলতে লাগলো,” না ভাইয়া৷ আসলে…. ধ্যাত মেঘ ভাইয়ার চোখে পড়ে গেলাম৷ কেন যে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি! সেটা নিজেও জানি না৷ ”

মেঘকে কথা বলতে বলতে রোজা চুপ হয়ে মনে মনে কথা গুলো বলতে লাগলো৷ হঠাৎ মেঘের কথায় রোজা তার ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে কিছু বলতে যাবে তখনি তনুর ফোনটা বেজে ওঠে৷ তনু সবার দিকে তাকিয়ে ফোনের স্কিনে তাকাতে কপাল কুচকে কল রিসিভ করে কানে ধরতে ৷ ফোন কলে ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে তনুর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
.
.
.

#চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here