ধূসর প্রেমের অনুভূতি পর্ব -০৭

#ধূসর_প্রেমের_অনুভূতি
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব_০৭
.
.
.
মেঘ আর তার টিম উপস্থিত হয়, ফারহার গাড়ি এরিয়া থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর পর, মেঘ তার টিম নিয়ে হোটেলে রেড করতে জানতে পারে টেরোরিস্ট তাদের আসার পূর্বে বেড়িয়ে গেছে৷ এটা শুনতেই রাগে মেঘের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়৷ হাতের মুঠোয় থেকে শিকার বেড়িয়ে গেছে এটা কিছুতেই মেঘ মানতে পারছে না৷

ফারহা গাড়ি ড্রাইব করে জনবহুল জায়গায় গাড়ি থামাতে লোক গুলো গাড়ি থেকে নেমে ফারহার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ভীরের ভিতর হাড়িয়ে যায়৷ ফারহা সময় নষ্ট না করে ফারিহাকে মেসেজ করে জানিয়ে দেয়৷

ফারিহা ফারহার মেসেজ দেখে ক্লাস করাতে মন দেয় ৷

১৬.

“শীট পালিয়েছে টেরোরিস্ট গুলো৷ আসলাম রুম গুলো ভালো করে সার্চ করো দেখো কিছু খুজে পাও কিনা?”

” ওকে স্যার, স্যার এই হোটেলের সি সি ক্যামেরা গুলো চেক করলে হয়তো আমরা ওই টেরোরিস্টদের ফেসটা আইডিন্টিফাই করতে পারবো৷”

” গুড আইডিয়া আসলাম ৷ তুমি বাকিদের নিয়ে রুম গুলো ভালো করে চেক করো ৷ আর আমি রিসেপশন থেকে আসছি৷”

মেঘ দ্রুত হোটেল রুম থেকে বেড়িয়ে রিসেপশনে গিয়ে হোটেল ম্যানেজারকে ফুটেজ দেখাতে বললে তিনি স্টাফকে বলতে স্টাফ মেঘকে পুরো দিনের ফুটেজ দেখায়৷ মেঘ ক্লিয়ারলি দেখতে পাচ্ছে একটা মেয়ে মুখে মাক্স চোখে ব্লাক সানগ্লাস পড়া মাথায় ওড়না জড়িয়ে কালো মাক্স পড়া লোক গুলোকে খুব সেইফলি হোটেল থেকে বের করে নিয়ে গেল৷

মেঘ মেয়েটির ফেস ক্লিয়ারলি না দেখতে পেলেও মেয়েটিকে কেন যেন মেঘের প্রচন্ড চেনা চেনা লাগছিলো৷ মেঘ অনেক ভেবেও মেয়েটিকে আইডিন্টিফাই করতে না পেরে মেঘ ওই দিনের ফুটেজটার কপি নিয়ে নেয় নিজের ফোনে ৷ আসলাম রুম থেকে বেড়িয়ে এসে জানায় রুমে কোন ক্লু পায়নি৷ মেঘ তার টিম নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি অপজিটের কলেজটার গেটে লাগানো সি সি ক্যামেরা দেখতে পায় মেঘ ৷ কলেজে যেহেতু ক্লাস চলছে তাই মেঘ তার পুরো টিমকে নিয়ে ভিতরে না নিয়ে শুধু আসলামকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়৷ মেঘ প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলে গেটের বাইরের ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি তার কম্পিউটারে আজকের ফুটেজের রেকর্ড মেঘকে দেখতে দেয়৷

মেঘ সময় নিয়ে ফুটেজ টা দেখতে দেখতে অপারেশন এর দশমিনিট আগের ফুটেজ দেখে মেঘের চোখ দুটো আটকে গেল৷
.
.
.
ফারহা বাড়িতে এসে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে প্যাকেটটার ভিতরে কি থাকা একটা ম্যাপ আর পাওয়ারফুল বোম ৷ প্রত্যেকটা টাইম সিস্টেম ৷ ফারহার রাগে পুরো শরীর জ্বলছে৷ ফারহা এলভার্টকে বলার পরও যখন এলর্ভাট তার নিজের কথা মতো টাইম বোম গুলো পাঠালো ৷ ফারহা চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে লাগলো৷

ফারহা নিজের মনে মনে ভেবে নেয় সে এবার কিং ফায়ার এর সাথে কথা বলবে৷ এভাবে হুটহাট কোন কাজ যে ফারহা করবে না এটা কিং ফায়ার খুব ভালো করে জানে তবুও এই কাজটার কোন বিশেষ কারণ ফারহা খুজে পাচ্ছে না৷

!
!
!

মেঘ তার কেভিনে বসে আছে৷ তার সামনে টেবিলে পড়ে আছে দুটো ফাইল একটাতে ফারহা আর ফারিহার পুরো ডিটেইলস আর অন্যটায় গত তিন মাসে বাংলাদেশে আশা কয়েকজন টেরোরিস্টের নাম আর কিছু ডিটেইলস ৷

” স্যার এখন কি করবেন? বড় ম্যাম যে এই টেরোরিস্টদের সাথে জড়িত সেটা তো আপনি ফুটেজটা দেখে বুঝতে পেরেছেন৷ কিন্তু ওনার মতো এমন সুন্দরী শিক্ষিত মেয়ে কি করে টেরোরিস্ট হতে পারে!”

” আসলাম টেরোরিস্টদের প্রধান দুজন আরু আর মারু যে এদেশে আছে সেটা নিশ্চয়ই জানো? নিজেদের আসল নাম লুকিয়ে আরু মারু নামে তার টিম লিড করছে৷ তবে এটা প্রচন্ড ধুরন্ধর ৷ এরা দুজন যেমন আগ্নিয় অস্রু চালাতে দক্ষ ঠিক তেমনি প্রচন্ড বুদ্ধিমতি এরা, এদের কে অন্যান্য দেশের পুলিশ খুজছে গত ছয় বছর ধরে কিন্তু কোন ভাবে ধরতে পারছে না৷ আর আজ তারা আমাদের দেশে লুকিয়ে আছে ৷ ”

” কিন্তু স্যার ওই ভিডিওতে যে বড় ম্যাম এর পোশাকের সাথে হোটেলে ওই টেরোরিস্টদের সাহায্য যে মেয়েটা করেছে তার ড্রেসও সেম এটা কি করে সম্ভব হলো?”

মেঘ তার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আসলামকে বলে উঠলো ,” সম্ভব হলো কারণ টেরোরিস্টদের সাহায্য যে মেয়েটি করেছে সে তোমার বড় ম্যাম ৷ ”

মেঘের কথাটা আসলামের কর্ণপাত হতে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল৷ আসলাম তোতলাতে তোতলাতে মেঘকে বলে উঠলো ,” স্যা,, স্যার আ,, আপনি স,,, সত্যি বলছেন? বড় ম্যাম একজন টেরোরিস্ট! ” আসলাম কথা গুলো বলে চুপ হয়ে যায় ৷ মেঘ চোখ মেলে ফারহা ফারিহার ফাইলটা আসলামের দিকে এগিয়ে দেয়৷ আসলাম ফাইলটা হাতে নিয়ে একটার পর একটা পাতা উলটে ডিটেইলস পড়ে আসলামের চোখ দুটো ছ্যানাবড়া হয়ে গেল৷

” স্যার আপনি ম্যামদের ফাইলটা পেলেন কি করে?”

মেঘ আসলামের কথা শুনে ক্রুর হাসলো৷ আসলাম তার স্যার এর এই ক্রুর হাসি দেখে কিছু একটা আন্দাজ করে নিলো৷

মেঘ ফাইল গুলো ড্রয়ারে লক করে রেখে , আসলামের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো,” আসলাম খেলা তো এবার শুরু হবে৷ আমি জানি আমার ফারুপাখি ভিষণ ইন্টিলিজেন্ট আর আমার শালী সাহেবাও কম যায় না তবে এবার তারা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে আমার সোনার বাংলায় এসে এ দেশের ক্ষতি করার চেষ্টা করে৷ ”

” তাহলে এখন কি করবেন?”

” খেলবো আসলাম ৷ ফারুপাখিকে আমার করে নিবো আর শালী সাহেবাকে…..”

” ছোট ম্যাডামকে কি করবেন? স্যার আপনি নিশ্চয়ই এবার ভয়ঙ্কর কিছু ভাবছেন তাই না? কিন্তু স্যার বাঘিনীকে কি করে আপনি বশ করবেন? উনি যদি জানতে পারে আপনি সবটা জেনে গেছেন তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছেন?”

” কি হবে কি হবেনা! সেটা পরে দেখা যাবে ৷ এখন আমার উদ্দেশ্য দেশকে রক্ষা করা ৷ তার জন্য যদি আমাকে আমার প্রিয়জনের রক্তে হাত রাঙাতে হয় আমি রাঙাবো৷ ”

১৭.

ভর সন্ধ্যেবেলায় ফারহা ফারিহা দু’জনে বাগানে বসে আছে৷ ফারহা ফারিহা দুবোনের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ৷ মেঘ যখন তার আসলামকে নিয়ে কলেজে ঢুকে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে তখন ফারিহা আড়াল থেকে সবটা শুনে এবং দেখে নেয়৷

ফারহা দাঁত কটমট করে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,” মেঘ সবটা জেনে গেছে ফারিহা ৷ ”

” তুই মুখে মাক্স পরে ছিলি না আপু? তাহলে কি করে চিনবে তোকে মেঘ?”

ফারিহার এমন ব্রেইনলেস কথা শুনে ফারহা ঠাস করে ফারিহার গালে থাপ্পড় মেরে বলে ,” ইডিয়েট হোটেলের সি সি ক্যামেরার ফুটেজ আর কলেজের গেটের ক্যামেরার ফুটেজ এই দুটো ফুটেজ দেখলে মেঘ বুঝতে পারবে ওটা আর কেউ নয় আমি ফারহা ৷”

ফারিহা গালে হাত দিয়ে রক্তিম চোখে ফারহার দিকে তাকিয়ে বলে , ” আমি মেঘকে খুন করে ফেলবো ফারহা ৷ যাস্ট খুন করে ফেলবো৷ ওর জন্য তুই আমার গায় হাত তুলেছিস ৷ ওকে আমি ছাড়বো,,,,,, ” বাকিটা উচ্চারন করার পূর্বে ফারহা ফারিহার গলা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,” মেঘকে খুন করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল নাহলে ওই মেঘ তোকে শেষ করে দিবে ফারিহা৷ আর একটা কথা মেঘকে পাওয়ার আশা ঝেড়ে ফেল কারণ এতে তোরই মঙ্গল ৷ ”

ফারহার কথা শেষ হতেই ফারিহা কৌশলে ফারহাকে তার উপর থেকে ফেলে ফারহার গলা চেপে ধরে বলে,” ছোট বেলা থেকে তোর কথা শুনে আসছি আমি কিন্তু এবার আমি তোর এই কথা শুনবো না ফারহা৷ কারণ হলো মেঘ! মেঘকে যদি আমি না পাই তাহলে যাস্ট মেরে দিবো৷ আর তুই ভুলেও মেঘকে নিজের করার চিন্তা করিস না ফারহা কারণ কিং ফায়ার তোকে ভালোবাসে ৷ কিং ফায়ার যদি কোন ভাবে জানতে পারে তুই মেঘকে ভালোবাসিস তাহলে কিং ফায়ার তোকে আমাকে আর মম ড্যাড কাউকে ছাড়বে না৷ মেরে দিবে যাস্ট মেরে দিবে৷ ”

ফারহা ফারিহার গলায় আঙ্গুল দিয়ে আঘাত করতে ফারিহা ফারহাকে ছেড়ে দেয় তখনি ফারহা ফারিহার হাত দুটো মুচরে ধরে বলে,” কিং ফায়ারকে তো আমি বুঝে নিবো তবে তোকে যখন বলেছি মেঘকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিতে তখন আশা করিস না ৷ মেঘ কখনো তোর হবে না ফারিহা কারণ মেঘের হৃদস্পন্দনে শুধু তার ফারুপাখির নাম জব করে৷ আর একটা কথা নেক্সট টাইম আমার কথা না শুনলে তোর জন্য ভয়ংকর শাস্তি অপেক্ষা করবে ৷ ”

ডাইনিং টেবিলে থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে ফারহা ফারিহা ৷ ফারিহার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ এখনো স্পষ্ট ৷ ফায়েজ খান আর আইরিন খান দুজনে তাদের মেয়েদের ভাব মূর্তি খেয়াল করছে ৷ ফারহা বা ফারিহা কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না সন্ধ্যায় বাগান থেকে ফেরার পর থেকে দুজনে নিজেদের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ছিলো৷

রাত দু’টোয় ফারহা ফারিহার রুমে এসে দেখে ফারিহা আজও নেশা করছে৷ ফারহা ফারিহাকে কিছু না বলে ফারিহার পাশে বসে নেশা করার সামগ্রীতে হাত দিতে ফারিহা ফোলা ফোলা রক্তিম চোখে ফারহার দিকে তাকিয়ে জলন্ত সিগারেট টা নিয়ে ফারহার বুকে চেপে ধরে…….
.
.
.
#চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here