ধূসর রঙের প্রজাপতি পর্ব ১২+১৩+১৪

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_12

পশুর নদীর উপর দিয়ে বোর্ট চলছে তার নিজ গতিতে।
নদীর স্রোত বরাবরের মতোই উথাল। তাই এখানে আসতে হলে ভালো ইঞ্জিনের বোর্ট এ আসা উচিত।
করমজল পর্যটন কেন্দ্রটি সুন্দরবনের পশুর নদীর তীরে অবস্থিত।
বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় 8 কিলোমিটার দূরে 30 হেক্টর জমির উপর পর্যটন কেন্দ্র টি গড়ে তোলা হয়েছে।
মংলা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় পর্যটন কেন্দ্রে পৌছাতে এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগে।
যেহেতু ওরা খুলনার জেলখাটা ঘাট থেকে এসেছে তাই ওদের পৌছাতে এতো বেশি সময় লাগছে।
সাধারন বড় বড় আর রাত্রি যাপনের ট্যুর গুলো জেলখানা ঘাট থেকেই ছাড়া হয়।
কিছুক্ষণের মাঝেই করমজলে এসে বোর্ট থামলো।
ট্যুর নির্দেশক কিছু নির্দেশনা দিয়ে সবাই কে নিয়ে নেমে গেলেন।
অভিনব লম্বা করে দম ফেললো। ঝিল খুব বেশি ই উৎফুল্ল হয়ে আছে।
অভিনব মুচকি হেসে ঝিল কে নিয়ে এগিয়ে গেল। ঝিল অভিনবর দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
মাহেরা নামের মেয়েটি অভিনবর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।
ঝিল সে দিকে না তাকিয়ে পরিবেশ টা উপভোগ করতে লাগলো।
সুন্দরবন ভ্রমনের স্বাদ নিতে চাইলে করমজলে আসা বাহুল্য । প্রকৃতির সোভা বাড়াতে এখানে রয়েছে কুমির হরিন , রেসাস বানর সহ নানা প্রজাতির পশুপাখি।
এছাড়াও নির্মিত রয়েছে কাঠের ট্রেইল , টাওয়ার এবং জেলেদের মাছ ধরার কর্মযজ্ঞ হচ্ছে অতিরিক্ত প্রাপ্তি।
করমজলে বাংলাদেশের একমাত্র কুমিরে প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র অবস্থিত।

করমজলে প্রবেশের জন্য নিদিষ্ট টিকিট মূল্য রয়েছে। সাধারনত ট্যুর কোম্পানির প্যাকেজেই এই সকল টিকিট মূল্য দেওয়া থাকে ।
বাংলাদেশি ও বিদেশী পর্যটক দের জন্য অর্থাৎ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তির করমজল পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ মূল্য যথাক্রমে 20 এবং 300 টাকা।
অবশ্য দশ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকিট মূল্য দশ টাকা।
অভিনব জন্মসূত্রে আমেরিকান আর বাংলাদেশী নাগরিকত্বর সার্টিফিকেট না থাকাতে অভিনব একজন বিদেশী পর্যটক।
অগত্যা অভিনব কে এক্সট্রা টাকা পেমেন্ট করতে হলো।

অনেকেই ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে এসেছে যার জন্য ও এক্সট্রা পেমেন্ট করতে হলো।
পার ক্যামেরা প্রতি বাংলাদেশি দের 200 টাকা এবং বিদেশীদের 300 টাকা।
সকল মূল্যের সাথে 15% ভ্যাট প্রযোজ্য।

শাকীল হাসতে হাসতে বলল
_ অভিনব বাঙালি হয়ে ও তুমি হইলা না বাঙালি। তোমাকে বেশি ই পেমেন্ট দিতে হবে।

অভিনব মুচকি হেসে কপালে স্লাইট করে দেখালো।
যার অর্থ সবই কপাল। অভিনবর এমন কান্ডে ঝিল মুচকি হাসলো ।

সবাই করমজলের ইটের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো।
ঝিল কাঁধের ব্যাগ টা টেনে নিলো। অভিনব হালকা হেসে বলল
_ কোনো সমস্যা হচ্ছে ?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব আশে পাশের কিছু ভিউ তুলতে লাগলো।

সামনে বেশ অনেক গুলো বানর দেখতে পেল। ঝিল ভয় পেয়ে অভিনবর হাত খামচে ধরলো।
ঝিল বরাবর ই বানর কে বেশ ভয় পায়। একবার ওর কাঁধে চরে বসেছিল । এ কথা ভাবতেই ঝিলের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। বার বার শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো।
অনেকে বানর গুলো কে খাবার খাওয়াচ্ছে। অভিনব ঝিলের এক হাত শক্ত করে ধরলো। আশ্বস্ত করে বলল
_ আরে আসুন কিছু বলবে না। সবাই কেমন খাবার খাওয়াচ্ছে। আপনি ও আসুন।

_ নাহ নাহহ আমি যাবো না। আমি শুনেছি বানর কাঁধে চরে চুল খামচে ধরে।
সমস্ত উঁকুন না খেয়ে উঠে না।

_ ঝিল কি সব বলে যাচ্ছেন । আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি কেমন , আসুন আমার সাথে।

ঝিল নাছোড়বান্দা, অভিনব ঝিলের সাথে পেরে না উঠতে পেরে লম্বা করে শ্বাস ফেলল। আশে পাশে তাকিয়ে বলল
_ এখানে শপ কোথায় বলুন তো ?

ঝিল কাঁপা স্বরে উত্তর দিলো ঐ যে আপনার পেছন দিক টায় মুদি দোকান। অভিনব ভ্রু কুঁচকে নিলো। ঝিল প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকালো। অভিনব খানিক টা চিন্তিত হয়ে বলল
_ মুদি ইউ মিন মোদী , আমি তো জানি ওনি ভারতের প্রাইম মিনিস্টার।
ওনার নামের সাথে আবার শপ এড করা আছে ?

_ ধ্যাত সেটা বলি নি ঐ যে দোকান, ঐ টাকে ই মুদি দোকান বলে ।
এতো কিছু জানেন এটা জানেন না।

অভিনব ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো। মেয়েটা বেশ রেগে গেছে। ঝিল কে নিয়ে রুটি কিনে নিয়ে আসলো ।
সবার মতো অভিনব ও বানর কে খাওয়াতে লাগলো।
ঝিলের বেশ মজা লাগলো বিষয় টা। সামনে খাবার দিলেই কেমন খাবলে নিচ্ছে বানর গুলো।
অভিনবর পাশে গিয়ে ঝিল বলল
_ আমি ও খাওয়াবো।

অভিনব নিঃশব্দে হাসলো। ঝিল একটু রুটি নিতেই তিনটে বানর লাফিয়ে উঠলো।
ঝিল রুটি ফেলে চিৎকার করে উঠলো।
ঝিল কে দৌড়াতে দেখে একটা পাজি বানর ঝিলের পেছনে লেগে গেল।
ঝিল চেঁচাতে লাগলো।
_ অভিনব হেল্প প্লিজ হেল্প ।

অভিনব দ্রুত গিয়ে ঝিল কে ধরলো। একটু দূরে রুটি ফেলতেই বানর চলে গেল।

অভিনব হো হো করে হেসে উঠলো। ঝিল ছলছল চোখে তাকালো। সবাই ওর ভয় পাওয়া দেখে হাসছে। অভিনব ঝিলের চোখের পানি দেখে হাসি থামিয়ে দিলো।
পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে ঝিলের চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।
ঝিল পাথরের মতো চেয়ে রইলো। অভিনব প্রশস্ত হাসলো।
_ কাঁদছেন কেন ? সবাই মজা পেয়ে হেসেছে আপনাকে বিদ্রুপ করে নয়। বানর ভয় পেতেই পারেন।
সবাই তো সব কিছু তে ব্রেভ হয় না।

_ কিন্তু অভিনব

_ কোনো কিন্ত নয় চলুন আমার সাথে। ব্রেভ গাল এতো গুলো বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছেন তাতে চোখে পানি নেই। আর আজ এই সামান্য বিষয়ে।

ঝিল লজ্জা পেল। অভিনব সেই ফাঁকে একটা ছবি ক্লিক করে নিলো।
যাহহ ঝিলের অজানা।

আরেকটু হেঁটে আসতেই সবাই দেখতে পেল একটু দূরেই বেশ অনেক গুলো হরিন রাখা আছে। যাদের চারপাশে শিক দিয়ে বাধাই করা দেয়াল।
যার কারনে পর্যটক রা হরিনের আদর করতে পারবে।
ঝিল চকচকে চোখে তাকিয়ে অবিশ্বাসের কন্ঠে বলল
_ অভিনব ঐ গুলো কি হরিন ?

_ হ্যাঁ।

ঝিল লাফিয়ে উঠলো। অতিরিক্ত এক্সাইটমেন্টে অভিনবর হুডির হাতা খামচে ধরলো।
অভিনব এক পলক তাকিয়ে ঝিলের হাত ধরে হাঁটতে লাগলো। মেয়েটার হুস জ্ঞান ঠিক নেই কোথায় না আবার চলে যায় । ঝিল বকবক করেই যাচ্ছে হঠাৎ চোখ পরলো মাহেরার দিকে।
মাহের ওদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। ঝিল গলা ঝেরে নিলো ।
_ আপনাকে মাহেরা পছন্দ করে ?
_ আমাকে বললেন ?
_ হুহহ
_ না তেমন কিছু তো নয়। কিন্তু কেন বলুন তো?
_ না এমনি ।

অভিনব সন্দিহান চোখে তাকালো । ঝিল মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে।
অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে সাইডে তাকালো। মাহেরা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অভিনবর সাথে চোখাচোখি হওয়াতে মৃদু হাসলো। অভিনব ও হাসলো। সেটা দেখে ঝিল একটু ভ্রু কুঁচকে থেকে অভিনবর থেকে বেশ খানিকটা দূরে চলে গেল।
অভিনব ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো।
হরিনের কাছে এসে সবাই নানান পোজে ছবি তুলছে।
ঝিল কে আশে পাশে খুঁজতে লাগলো। কাছে তো নেই।
কোথা থেকে মাহেরা এসে বলল
_ হে অভিনব। তোমাকে তো দেখাই যায় না।

অভিনব মুচকি হাসলো। মাহেরা জ্বিভ কেঁটে বলল
_ সরি তুমি বলে ফেললাম।

_ ইটস ওকে। তুমি করেই বলতে পারেন।

_ থ্যাংকস। তাহলে তুমি ও আমাকে তুমি করে বলো।
আমি তো তোমার থেকে বেশ ছোট।

অভিনব মুচকি হেসে সায় জানালো। মাহেরা বেশ কিছু প্রশ্ন করছে অভিনব সরল হেসে তার উত্তর দিচ্ছে।

_ অভিনব ঝিল কি তোমার গালফেন্ড?
বিকজস তোমরা তো একি কেবিনে থাকছো।

_ নো। সি ইজ মাই জাস্ট ফ্রেন্ড ।
আমাদের দেড় বছর আগে প্রথম দেখা হয়েছিল একটা ভেজালে। তারপর আবার এই ট্রিপে এসে দেখা হলো, আর দুজনেই জ্বালিয়াতির স্বীকার।
আলাদা কেবিন ছিলো না তাই একটা তেই ম্যানেজ করতে হচ্ছে।
ওনাকে একা ফেলে রাখা তো সম্ভব নয়।

মাহেরা হালকা হাসলো। বোধহয় অভিনবর উত্তরে তৃপ্ত সে। অভিনব হরিনের কিছু ফটো ক্লিক করলো।
লোহার পাত গুলোর মধ্যে দিয়ে হাত বাড়াতেই হরিন এসে দাঁড়ালো ।
অভিনব হরিন গুলো কে হাত দিয়ে আদর করতে লাগলো।
হরিন কিংবা কুমির দের খাবার দেওয়া নিষেধ । কারন এতে কেউ ভেজাল মিশিয়ে দিলে পশু গুলোর ক্ষতি হয়ে যাবে ।

মাহেরা আফরা কে ডেকে নিলো। অভিনব কে উদ্দেশ্যে করে বলল
_ আমাদের কিছু ছবি ক্লিক করে দিবে প্লিজ।

অভিনব সবিনয়ে ফটো ক্লিক করতে লাগলো। মাহেরা অভিনবর সাথে দু একটা সেলফি ও নিলো।
ঝিল অন্য দিক দিয়ে হরিনের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
বেশ কিছুক্ষণ কথা ও বলেছে। পশু পাখির সাথে একা একা কথা বলার মতো দারুন এক অভ্যাস রয়েছে তার।
হরিন কিছু না বুঝুক ওহ ওর মতো বকেই যাচ্ছিলো।
এক পর্যায়ে রটের ফাঁক দিয়ে চোখ যেতেই ভ্রু কুঁচকে নিলো।
অভিনবর শরীর ঘেঁষে ছবি তুলছে মাহেরা।
এই মেয়েটার এমন ঢলাঢলি পছন্দ হচ্ছে না ওর।
কেন জানি ভীষন কান্না পাচ্ছে।মাহেরার চুল গুলো ছিড়তে পারলে শান্তি পেত ওহ।

ঝিল এক পা দু পা করে অভিনবর পাশে এসে দাঁড়ালো । মাহেরা লম্বা হেসে বলল
_ হে ঝিল কোথায় ছিলে তুমি ? আমরা সবাই কতো গুলো ফটো তুললাম।

ঝিল ভদ্রতার খাতিরে হেসে বলল
_ আসলে আপু সব জায়গার আবহাওয়া আমার সহ্য হয় না তাই একটু ঐ দিকে গিয়েছিলাম।
কিন্তু তা ও শান্তি মিললো না।

মাহেরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। অভিনব ঝিলের এমন কথা তে ওর দিকে একপলক তাকালো। মাহেরা কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ হোয়াট এভার । চলো সবার একটা সেলফি হয়ে যাক।

_ নাহহ নাহহহ ঠিক আছে।

আফরা এগিয়ে এসে বলল
_ এটা কেমন কথা ঝিল ? চলো সবার একটা স্মৃতি ফ্রেমে বন্দি করে নেওয়া যাক।

_ আপু

_ ঝিল একটা ছবি তুলতেই পারেন। সবাই এতো করে বলছে যখন।

ঝিল অভিনবর দিকে একপলক তাকালো। অভিনবর দৃষ্টি ক্যামেরা তে। সবাই মিলে একটা সেলফি তুলেই নিলো।
ট্রাভেল এজেন্সি থেকে একজন কর্মকর্তা সবাই কে ডেকে পাঠালেন।
সবাই এক সাথে হয়ে কয়েকটি ছবি তুলে নিলো । মাহেরা অভিনবর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো । ঝিল সরে যেতে নিলেই অভিনব হাত চেঁপে ধরলো।
ঝিলের চোখ দুটো কেমন ছলছল করছে। অভিনব কিছুক্ষণ ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ঠিক সেই সময়েই ফটো ক্লিক হলো। সুন্দর এক ফটো ক্লিকে আত্মার সম্পর্ক বন্দি হয়ে গেল।
অথচ দুজনের কেউ ই বিয়ে টাকে মেনে নেয় নি।
ভাগ্যে কখন কি করে দিবে তা কেউ বলতে পারবে না।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_13

করমজলের হিরন পয়েন্টে সবাই আর ও কিছু সময় কাটিয়ে নিলো।
তারপর রওনা হলো পাশে থাকা মাছের জাদুঘরের দিকে। করমজলে ছোট্ট একটা মাছের জাদুঘর ও রয়েছে। যেখান থেকে পশুর নদী টা ও দেখা যায়। সবাই হাঁটতে হাঁটতে মাছের জাদুঘরে এসে পৌছালো।
তেমন আহামরি কিছু না হলে ও বেশ সুন্দর জাদুঘর টা।
একদম ছোট্ট, এখানে বিলুপ্ত প্রায় মাছের কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে ।
অভিনব সেগুলোর কয়েক টা ফটো ক্লিক করে নিলো। ঝিল বাইরে দাঁড়িয়ে আছে দেখে অভিনব ঝিলের কাছে গেল।
ঝিল এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো । অভিনব ব্যাগ প্যাক থেকে পানির বোতল বের করে ঝিলের সামনে ধরলো।
ঝিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো। অভিনব সহজ ভাবেই বলল
_ চোখ মুখ শুকনো লাগছে পানি টা খেয়ে নিন।

ঝিল পানি টা ঢকঢক করে গিলে নিলো। অভিনব ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো।
_ আপনার কি অস্বস্তি হচ্ছে ? কিংবা শরীর খারাপ লাগছে ঝিল ?

_ উহহুহ আম ফুল ওকে ।

_ আর ইউ সিউর ?

_ ইয়াহ।

_ তাহলে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? আরে ভেতরে আসুন

_ আমি

ঝিল কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ঝিলের হাত ধরে একপ্রকার টেনে ই নিয়ে গেল অভিনব ।
ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
সবাই বেশ হাসি মজা করছে। কাঁচের ফ্রেমের নিচে মাছের কঙ্কাল রাখা ।
ঝিল উজ্বল চোখে তাকিয়ে রইলো। কার্টুনে মাছের কঙ্কাল দেখলে ও কখনো বিশ্বাস করতো না ওহহ।
এখানে এসে প্র্যাকটিক্যাল দেখে ঝিলের খুশি দ্বিগুন হয়ে গেল। অভিনব ঝিল কে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে।
ঝিল এটা ওটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। অভিনব মলিন হেসে ভাবলো মেয়ে টা হুটহাট কেমন হয়ে যায়। আবার চট করেই উল্লাসে মেতে উঠে। এর কারন টা অভিনবর অজ্ঞাত ।

_ এই যে মিস্টার কি ভাবছেন এতো ?

ঝিলের কথাতে চমকে তাকালো অভিনব। মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ ভাবছিলাম এই মাছের কঙ্কাল গুলো যদি আপনার মাথায় দেওয়া হয় তো কেমন লাগবে আপনাকে।

ঝিল নাক ফুলিয়ে রাগি চোখে তাকালো। অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ রিলাক্স। এতো হাইপার হবেন না । আপনার রাগ দেখা শেষ আমার , উফফ তখন কি মার টাই না মারলেন।
হাড়ে হাড়ে ব্যাথা রয়ে গেছে।

ঝিল লজ্জা হাসলো। অভিনব একটু ঝুকে বলল
_ দয়া করে আবার হামলা চালাবেন না প্লিজ।

ঝিল মুখ বাঁকিয়ে বলল
_ প্রয়োজন হলো একশ বার মারবো। আর বালিশ দিয়ে কি ব্যাথা লাগে নাকি।

অভিনব হো হো করে হেসে উঠলো । সাথে ঝিল ওহহহ।
সবাই মাছের জাদুঘর টা ঘুরে পাশে থাকা কুমিরের প্রজনন কেন্দ্রে আসলো।
রটের রেলিং এর মধ্যে চারটে ছোট কুমির দেখতে পেল।
ঝিল কুমির দেখে বলল
_ এমা কুমির তো তাহলে আমি এর আগে ও অনেক বার দেখেছি।

_ কোথায় দেখেছেন ?

_ আমাদের নদীতে ইনফেক্ট বিভিন্ন ডোবা টা তে দেখেছি।

অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল
_ আপনাদের নদীতে কুমির আছে ?

_ অবশ্যই। কিন্তু একটা গভীর কনফিউশন হচ্ছে।

_ কি কনফিউশন?

_ আমাদের এলাকাতে কুমির কে গৈরল বলে কেন ?

অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ঝিল ভাবুক হয়ে বিষয় টা ভাবছে। হঠাৎ ই অভিনব গগন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো । ঝিল কোমরে হাত গুঁজে বলল
_ হাসছেন কেন ?

_ হাসার মতো কথা বললেন যে , তো হাসবো না ?

_ আজব। আমি কি এমন হাসার কথা বলেছি ?

_ আরে ঝিল শুনুন আপনি যেটা কে কুমির ভাবছেন সেটা এক প্রকারের সাপ।

ঝিল মৃদু হেসে বলল
_ ওহহ। কিন্তু সেম ই তো লাগে।

অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ বোধহয় এদের পূর্বজন্মের প্রাক্টিক্যাল কোনো সমস্যা আছে।

_ কেমন ?

_ উহুহ বলা যাবে না।

_ প্লিজ বলুন না।

_ আচ্ছা বলছি। আই মিন আমি বলতে চাচ্ছি এদের দেখতে সেম লাগার কারন হতে পারে

_ কি কারন ?

অভিনব হাত দিয়ে ইশারা করে ঝিল কে খানিকটা কাছে আসতে বলল।
ঝিল কাছে আসতেই অভিনব ফিসফিস করে বলল
_ এদের মাঝে নিশ্চয় কোনো ঘাপলা করেছে।
কুমির আর সাপের ফিজিক্যাল রিলেশন ছিলো নিশ্চয়ই। আর তার থেকেই এই বিশেষ সাপ সৃষ্টি হয়েছে।

ঝিল নাক মুখ কুঁচকে বলল
_ হোয়াট ।

অভিনব সিরিয়াস মুখ করে রইলো। ঝিল মুখ দিয়ে একটা শব্দ করে ভাবনাতে মজে গেল। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে নিলো।
কিছুক্ষণ ভেবে ঝিল বলল
_ এটাই তাহলে আসল কারন ?

অভিনব ফিক করে হেসে দিলো। ঝিলের সরু ভ্রু যুগল বেঁকে গেল। অভিনবর হাসি থামার নাম ই নেই।
ঝিল অভিনবর বিষয় টা বুঝতে পেরে রাগি লুকে তাকালো।
তারপর সেখান থেকে চলে গেল। অভিনব হাসি থামিয়ে দৌড়ে ঝিলের কাছে এসে দাঁড়ালো ।
ঝিল কোনো কথাই বলছে না। অভিনব অনুনয়ের স্বরে বলল
_ আম সরি। ঝিল প্লিজ রাগ করবেন না। আমি তো মজা করছিলাম।
আসলেই আপনি এভাবে রিয়েক্ট করবেন বুঝি নি।

ঝিল শুনোন না। অভিনবর কোনো কথার ই পাত্তা দিচ্ছে না ঝিল।
অভিনব সামনে এসে কান ধরে বলল
_ সরি।

অভিনবর চোখের ঘন পাপড়ি গুলো কেমন নড়ছে। ঝিল একটু তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
তারপর ই হো হো করে হেসে উঠলো। অভিনব মুখ গোমড়া করে বলল
_ আপনি আমার সাথে মজা করছিলেন ?
_ অবশ্যই। আপনি করতে পারেন আর আমি বুঝি মজা করতে পারবো না।

অভিনব বোকার মতো চেয়ে রইলো। ঝিল কনুই দিয়ে অভিনবর হাতে ধাক্কা দিয়ে বলল
_ এবার কেমন লাগে হুম?

অভিনব বুকের বা পাশে হাত দিয়ে মজার ছলে বলল
_ হার্টে লাগে।

তারপর দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলো। ঝিল হাসতে হাসতে অভিনবর হুডির হাতা খামচে ধরেছে।
অভিনব ও ঝিলের সাথে লাঘাতার মজা করছে। দুজনের নিজেদের মাঝের দুরুত্বর প্রতি খেয়াল ই নেই।
যে কেউ ই বলবে এরা হ্যাপি কাপল।
অথচ সত্যি টা উল্টো , এদের মাঝে আত্মার বন্ধন হলে ও শারীরিক কোনো বন্ধন নেই।

*

কুমিরের প্রজনন কেন্দ্রের একটু দূরে সবাই পুকুর পারে চলে আসলো।
পুকুর পাশটা রেলিং দিয়ে বাঁধাই করা। এখানে বড় বড় কুমির রয়েছে। একটা কুমির পাড়ে উঠে রয়েছে। রেলিং এর বাইরে থেকে ই সেটা কে ঘিরেই সবাই মজা করছে।
ঝিল লাফিয়ে লাফিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আপনি এতো টা ও খাটো নন যে লাফিয়ে দেখতে হবে।
এমনিতেই দেখতে পারছেন।

_ উহহুহহহ আমি কুমির টাকে জাগানোর চেষ্টা করছি।
দেখুন না কেমন চোখ বন্ধ করে আছে। নড়াচড়া ও করছে না।

অভিনব মৃদু হেসে বলল
_Crocodile পেছনে লাগলে বুঝতেন। কতো ধানে কতো চাল।

_ উহুহহহ আপনার ঘাড়ে উঠে বসে থাকতাম।

_ এহহ তখন কি আমি থাকতাম নাকি ?

অভিনবর কথাতে ঝিল ভেঙ্চি কাটলো। অভিনব ট্রাভেলিং ড্রিক গিলে নিয়ে বলল
_ এই গ স্টাইলের ভেঙ্চি কাটেন কি করে ?

_ গ স্টাইল মানে ?

_ এই যে মুখ বাঁকান কতো সুন্দর করে। আমি তো পারি না।

_ পারবেন ও না । এতে এক্সট্রা টেলেন্ট লাগে।
ডোন্ট ওরি আমার সাথে থাকতে থাকতে শিখে যাবেন।

_ আচ্ছা। আরেক বার ভেঙ্চি কাটুন তো একটু দেখি ।

ঝিল ভ্রু কুঁচকে নিলো। অভিনব মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ না না ভেঙ্চি কাটতে হবে না।

ঝিল ভ্রু যুগল অভিজ্ঞ দের মতো বাকালো। তারপর নিজের অজান্তেই ভেঙ্চি কাটলো।
ঝিল নিজের অজান্তেই ভেঙ্চি কাটলে ও অভিনব ফটো ক্লিক করতে ভুলে নি।

ঝিল কিছুক্ষণ ঐ খানে থেকে বলল
_ চলুন ঐ সাইটের বেঞ্চ গুলো তে গিয়ে বসি।

অভিনব সম্মতি জানালো। মাঠের মতো স্থান টা তে কয়েকটা খড়কুটো দিয়ে ছাতা স্টাইলের ঘর বানানো।
তার সাইটে বেঞ্চ বসানো। সবাই কুমিরের সাথে হৈ হুল্লর করতে লাগলো।
অভিনব আর ঝিল বেঞ্চ এ গিয়ে বসলো।
ঝিল হালকা ক্লান্ত , অভিনব ভ্রু কুঁচকে থেকে ট্রাভেলিং ড্রিঙ্কস এগিয়ে দিলো।

ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে বারন করলো । অভিনব কোনো কথা শুনলো না। ঝিল কে ড্রিঙ্কস টা খাওয়ালো।
এটা একটা মেডিসিন কোম্পানির ড্রিঙ্কস । এটা খেলে ক্লান্তি দূর হয় আর শরীরে বল পাওয়া যায়।
খানিকটা সেলাইন টাইপের ই , তবে এটা লেমন ফ্লেবারের।

ঝিল বোতল টা বাড়িয়ে বলল
_ থ্যাংকস।

প্রতিউত্তরে অভিনব মুচকি হাসলো। ঝিল আর অভিনব পাশাপাশি বসে রইলো। দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ নীরবতা ছেয়ে গেল। ঝিল নীরবতা ভেঙে বলল
_ অভিনব

_হুমম

_আচ্ছা একটা কথা বলি ?

_ হুমম বলুন। এভাবে জিজ্ঞাসা করার কি আছে ?

_ এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।

অভিনব ঝিলের দিকে ফিরে বলল
_ হ্যাঁ বলুন এবার।

ঝিল সঙ্কোচ কাটিয়ে বলল
_ এই যে ঘুরছি আমরা , ট্রাভেলিং এর বিল সহ সব কিছুই তো আপনি পে করছেন।

অভিনব একপলক তাকিয়ে লম্বা করে দম ফেলে বলল
_ এখানেই থেমে জান ঝিল। এটা নিয়ে কথা বললে আমার নিজেকে ছোট মনে হবে।

_ কিন্তু অভিনব

_ উহহু কোনো কথা নয়। ট্যুর এ এমন আহামরি টাকা খরচ হচ্ছে না যার জন্য আপনি আমাকে সেটা বেক করে দিবেন।
আমরা প্রথম থেকে ফ্রেন্ড হয়ে এসেছি না ?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব অধরে হাসি ফুটিয়ে বলল
_ তাহলে আর কোনো কথা হবে না।
এটা নিয়ে আর কিছু বলবেন না ঠিক আছে। তাহলে আমি কিন্তু খুব hurt হবো।
আই থিংক আপনি সেটা চান না। এম আই রাইট ?

ঝিল ঝরা হাসলো। অভিনব লম্বা করে দম নিয়ে বলল _দেখুন সূর্য টাকে কেমন হাসছে।
আর কিছুক্ষনের মাঝেই কুয়াশা এসে জড়িয়ে নিবে।

ঝিল সূর্য টার দিকে তাকালো। অভিনব ও তাকালো। একটু একটু করে কুয়াশা সূর্য কে আড়াল করে যাচ্ছে।
সাথে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। দুপুর যে পেরিয়ে গেছে।
ঝিলের গা শিউরে উঠলো। অভিনব এক হাত ঝিলের কাঁধ বরাবর ছড়িয়ে দিলো।
দুজন ই কুয়াশার মাঝে সূর্যের বিলীন হওয়া উপভোগ করতে লাগলো।
সাথে নিজেদের অজান্তেই সুপ্ত অনুভূতি গুলো গাঢ় হতে লাগলো ।#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_14

সূর্য টা ধীরে ধীরে কুয়াশার মাঝে হাড়াতেই ঝিলের মুখ টা শুকনো হয়ে গেল।
দেখতে বেশ ভালো লাগছিলো। কি সুন্দর জাদুর মতো করে একটু একটু করে আড়াল হয়ে যাচ্ছিলো সূর্য টা। সূর্য গ্রহন হলে যেমনটা লাগে ঠিক তেমন।
অভিনব ঝিলের মাথায় থাকায় ক্যাপ টা খুলে নিলো।
ঝিল নাক মুখ কুঁচকে বলল
_ ক্যাপ টা খুললেন কেন ?

_ ক্যাপ পরলে কেমন যেন লাগে। এমনি তে বেশি সুন্দর লাগে।

ঝিল ঠোঁট বাঁকিয়ে রইলো। অভিনব ঝিলের মাথায় ক্যাপ টা দিয়ে বলল
_ ক্যাপ পরলে ও সুন্দর লাগে , লাইক বিদেশিনী ।

_তাই নাকি ?

অভিনব মাথা কাত করে হুমম বোঝালো। তারপর বলল
_চা খাবেন ?

_ উমমম আচ্ছা।

_ আপনি বসুন আমি চা নিয়ে আসছি।

_ উহহহু আমি ও যাবো আপনার সাথে।

_ আচ্ছা চলুন।

ঝিল আর অভিনব মাঠের একটু পাশে থাকা একটা চায়ের দোকানে চলে আসলো।
চায়ের দোকান টা তেমন পরিষ্কার নয়। তবে চা খাওয়া যেতেই পারে। মাঝ বয়সী লোক টা চায়ের ফ্ল্যাক্স টা টেবিলে রাখছে। সাথে টুকিটাকি কাজ ও করছে। ঝিল হাতে হাত ঘষে বলল
_ ঠান্ডা বেড়ে যাচ্ছে।

_ চা খেলে দেখবেন শরীর মন দুটোই গরম হয়ে যাবে।

ঝিল মাথা কাত করে মুচকি হাসলো। চায়ের দোকনদার অভিনব কে দেখে একটু অবাক হয়েছেন।
তার এখানে প্রায় সময় বিদেশী পর্যটকের দেখা মিলে। তারা সচরাচর চা খায় না। কারন তারা হাইজিন আর লাইফ নিয়ে সচেতন।
ইনটেক ছাড়া কোনো কিছুই মুখে তুলে না।
অভিনব সবিনয়ের স্বরে বলল
_ চাচা দুটো চা হবে ?

লোকটা ভারী অবাক হলো। ফরেনার ছেলের মুখে স্পষ্ট বাংলা ভাষা তিনি ঠিক হজম করতে পারলেন না।

অভিনব আবার একি প্রশ্ন করলো। লোকটা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল
_ হুম হবে।

অভিনব আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো বসার জন্য একটা বেঞ্চ আছে।
তবে বেশ ময়লা। ঝিল বসতে যেতেই অভিনব হাত ধরে ফেললো।
চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো না বসতে। ঝিল ভ্রু কুঁচকে বেঞ্চ টা পর্যবেক্ষন করে দেখলো বালি লেগে আছে।
ঝিল আর বসলো না। লোক টা দোকানের ভেতরে গিয়ে কিছু নিয়ে আসলো।
কাঠের টেবিল টাতে বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা। তিনটে বোতলে লালচে রঙের কিছু দেখে অভিনব বলল
_ চাচা এগুলো কি ?

_ মধু।

অভিনব বোতল গুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে বলল
_ এই মধু গুলোর নাম কি ?

_ এখানে যেগুলো আছে খলিসা কেওরা আর বাইন।

ঝিল উৎকন্ঠা হয়ে বলল
_ সুন্দরবনে কি কি ধরনের মধু হয় ?

_ সাধারনত পাঁচ ধরনের মধু হয়। কেওড়া , গরান , খলিষা , বাইন , গেওয়া ।

অভিনব মধু গুলো ভালো করে দেখতে দেখতে বলল
_ চাচা এই সব মধুর টেস্ট কেমন ? বেশি মিষ্টি কোনটা হয় ?

_ মিষ্টি হয় খলিষা মধু। অন্য গুলো একটু টক হয় , আবার কষ ও হয়।

ঝিল বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ শুনেছি এখন নাকি এখানে ও ভেজাল মধু ও দেওয়া হয়। চাচা আপনার মধু তে ভেজাল নেই তো ?

_ আরে না স্যার। কি যে বলেন ,এই সব খাঁটি মধু।

অভিনব ফোন ঘেটে বলল
_ খলিষা মিষ্টি হয় তাই না ?
_ হুম।
_ এটা দেখতে কেমন ?
_ গাঢ় হয় আর সাদা হয় , আর খেতে ও সুস্বাদু।
_ লালচে হয় না ?
_ নাহহ।

অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ চাচা 250 গ্রাম খাঁটি খলিষা মধু দিন। ঝিল আপনি খাবেন তো ?

ঝিল লাফিয়ে বলল
_ অবশ্যই।

অভিনব মুচকি হেসে একটা বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বলল
_ কতো টাকা কেজি ?

_ এক হাজার টাকা।

অভিনব বিল টা দিয়ে মধু নিয়ে নিলো। সাথে দু কাপ চা ও নিয়ে নিলো। লোকটার হাতের চা বেশ ভালো।
ঝিল চা খেতে খেতে বলল
_ আচ্ছা অভিনব একটা কথা বলুন তো। কুমির তো মানুষ ও খেয়ে ফেলে তাহলে এখানে ওদের কি খাওয়ানো হয় ?

_ আমি তো ঠিক জানি না ঝিল । ওয়েট চাচা কে জিজ্ঞাসা করে দেখি।

অভিনব চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে বলল
_চাচা আপনি এখানে কি শুধু চা বিক্রি করেন ?

_ নাহ আমি কুমির দের পরিচর্যা ও করি।

_ আচ্ছা তার মানে আপনি ই কুমির দের খাবার দেন। চাচা কুমির দের কি খাওয়ানো হয় ?

লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_ বয়লার মুরগি তারপর মাছ , কাঁকড়া ও খাওয়ানো হয়।

ঝিল হা হয়ে তাকিয়ে বলল
_ মানুষের খাবার ওদের কে খাওয়ানো হয় ?

অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ হ্যাঁ। আচ্ছা চাচা কুমিরের বাচ্চা দের কি খাবার দেওয়া হয়।

_ কুমিরের বাচ্চা দের ছোট ছোট চিংড়ি দেওয়া হয়। তারপর বয়লার মুরগির ছোট ছোট টুকরো দেওয়া হয়।

ঝিল ভাবুক হয়ে কিছু ভাবতে লাগলো। তারপর অভিনব কে ফিসফিস করে বলল
_ কুমির কি ডিম পারে ?

_ ঝিল আপনি এটা প্রশ্ন করলেন আমাকে ?

ঝিল মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ আমি আসলে একটু কনফিউশনে ছিলাম।
তারপর একটু থেমে বলল
_ চাচা বুঝেন কি করে যে কুমির ডিম পেরেছে ?

_ একটা নিদিষ্ট সময় থাকে। আমরা সেই টাইম দেখেই লক্ষ্য রাখি।
তারপর ওদের জন্য ঘর করা হয়।

ঝিল অভিনবর হাতে খোঁচা মেরে বলল
_ তারপর ডিম থেকে বাচ্চা হয় কি করে ?

অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল
_ আপনি একটু চুপ করুন ঝিল। এমন কিছু না বলে ফেলেন যাতে লজ্জায় নিজেই কুঁকড়ে যাবেন।

ঝিল মুখ টা গোমড়া করে নিলো। অভিনব ছোট করে বলল
_ সরি।

ঝিল কিছু বলল না আর।
অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আচ্ছা চা খাওয়া তো শেষ এখন যাই চলুন।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। এক পা বের হয়ে ঝিল লাফিয়ে উঠলো।
অভিনব সরু চোখে তাকালো

_ কি হয়েছে ?

_ আমার একটা প্রশ্ন আছে।

অভিনব কিছু বলবে তার আগেই ঝিল বলল
_ চাচা আগে বলুন তো এরা একসাথে কতো গুলো ডিম পারে।

_ এক সাথে প্রায় 50 – 60 টা পারে। তবে সব গুলো থেকে বাচ্চা হয় না।

ঝিলের চোখ চড়কগাছ। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ঝিল কে টেনে নিয়ে এলো।
অভিনব মুখ চেপে হাসতে লাগলো। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে ঝিল। অভিনব হালকা কেশে বলল
_ কিছু বলুন , এভাবে থম মেরে গেলেন কেন ?

_ একটা কথা বলুন তো এদের পেটে এতো গুলো ডিম কি করে থাকে ?

অভিনব হো হো করে হেসে বলল
_ আপনি অনেক বেশি কৌতুহলী । আমি জানতে পারলে বলবো ঠিক আছে ?

ঝিল এক গাল হেসে সম্মতি জানালো।

*

বিকেল প্রায় পাঁচ টা হতে চলেছে। ট্রাভেল এজেন্সির লোকজন সবাই কে করমজলের কাঠের তৈরি ট্রেইল প্রদশর্ন করার জন্য ডাকছে ।
এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে সেটার উপর উঠলে মোটামুটি ভালো একটা ভিউ দেখা যায়।

ঝিল পাপড়ির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। পাপড়ি হচ্ছে শাকীল দের বান্ধবী। ওহহ আর ওর হাসবেন্ড এসেছে। পাপড়ির সাথে ঝিলের বেশ খাতির জমেছে। বয়সের ফারাক অনেক হলে ও দুজনের কথা বলার স্টাইলে মনে হচ্ছে বান্ধবী।
পাপড়ি হাসি থামিয়ে বলল
_ তুমি তো আচ্ছা মেয়ে। এতো বার বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছো ?

ঝিল মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। পাপড়ি ঝিলের হাত ধরে বলল
_ আমরা সবাই মেহেদী পরেছি তোমার হাত খালি কেন ?

_ আসলে আপু তোমরা তো আগে থেকে প্লান করে এসেছো।
আমরা তো

_ উহহ হো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। আচ্ছা যাই হোক আমার কাছে মেহেদী আছে। তুমি রাতে পরে নিও।

ঝিল মুচকি হাসলো। পাপড়ি ঝিলের গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল
_ অভিনব ছেলেটা বেশ ভালো। তোমার সাথে বেশ মানাবে।

ঝিল খানিক টা লজ্জা পেল। পাপড়ি জানে অভিনবর সাথে কি করে পরিচয় হয়েছিলো। তবে বিয়ের বিষয় টা সবার অজ্ঞাত।
পাপড়ির হাসবেন্ড ডাক দিতেই পাপড়ি ঝিল কে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।

অভিনব মাহের এর সাথে কথা বলছে। মাহেরের ড্রোন টা সেট করে দিচ্ছে অভিনব।
ঝিল ওদের কাছ গিয়ে দাঁড়াতেই মাহের লম্বা হেসে বলল
_ হাইই ঝিল।
_ হ্যালো ভাইয়া।

_ ঝিল আপনি একটু ওয়েট করুন। হয়ে গেছে আমার , ড্রোন টা সেট করেই আসছি।

_ আচ্ছা।

ড্রোন টা সেট করে দিয়ে অভিনব ঝিলের কাছে এসে দাঁড়ালো।
ঝিল দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ আজকাল আপনাকে তো দেখাই যাচ্ছে না।
এখন মাহের ভাইয়ার সাথে কথা বলছেন। আবার তার বোনের সাথে সেলফি তুলছেন।

অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ আপনি কি জেলাস হচ্ছেন ?

ঝিল ভ্রু কুঁচকে বলল
_ হোয়াট । জেলাস আর আমি ? হাউ ফানি। শুনুন

অভিনব আমুদের স্বরে বলল
_ হুমম বলুন।

_ অভিনব আপনি আবার আমার সাথে মজা করছেন ?

_ আচ্ছা সরি। এখন বলুন কি বলবেন।

_ আসলে আমি চাইছিলাম যে আপনি ড্রোন টা চালাবেন না।

_ কেন ? সমস্যা কি তাতে?

_ তাহলে তো আমরা ঘুরতেই পারবো না।
আপনি ঐ উড়ন্ত ক্যামেরা হাতেই ব্যস্ত থাকবেন।

কথা টা ঝিল বেশ অসহায় হয়ে বলল। অভিনবর বেশ খারাপ লাগলো। আসলেই এখানে মোটা মুটি সবাই জুটি বেঁধে এসেছে। অভিনব ড্রোন নিয়ে পরে থাকলে ঝিল কি একা ঘুরবে ?

অভিনব লম্বা করে দম ফেলে বলল
_ আচ্ছা ঠিক আছে। আমি না হয় মাহের এর থেকে ফুটেজ কালেক্ট করে নিবো।
আপনি মন খারাপ করবেন না। আমি আপনাকে নিয়ে ঘুরবো ।

ঝিল খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। অভিনব মিষ্টি এক হাসি দিলো।
ঝিল ব্যাগ প্যাক থেকে চকলেট বের করতে লাগলো ।
ব্যাগ প্যাক খুঁজে হতাশ হলো। লঞ্চে চকলেট ফেলে এসেছে ওহহ।
অভিনব হালকা কেশে ঝিলের মনোযোগ নিলো। ঝিল সামনের দিকে তাকাতেই অবাক হলো।
অভিনব সরস হেসে বলল
_ জানতাম আপনি চকলেটের জন্য মুড অফ করে রাখবেন।
কখন না আমাকে মেরেই বসেন। তার জন্য আমি ও চকলেট নিয়ে এসেছি।
সেবার তো চকলেট দেওয়ার সময় পিন ই পুস করে দিয়েছিলেন।
দু মাস অব্দি সেটার দাগ ছিলো। এবার রিক্স নেই তো আর ?

অভিনবর কথা তে ঝিল জ্বিভে কামড় দিলো। সেবার কি ভেবে ছিলো ওহ। আর অভিনবর হাতে আঘাত ও করে ছিলো ।
অভিনব চকলেট টা একটু ভেঙে নিয়ে বলল
_ আমার কাছে একটাই ছিলো। তাই সমান শেয়ারিং ওকে ?

_ ওকে।

ঝিল আর অভিনব চকলেট খেতে খেতে ট্যুর এজেন্সির নির্দেশক দের কাছে চলে আসলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here