#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_15
“সুন্দরবনের আসল মজা হচ্ছে বনের গহীনে। বনের গহীনে যেতে হলে অবশ্যই সাহসের প্রয়োজন রয়েছে। বাঘের কিংবা যে কোনো পশু পাখির আক্রমন হতে পারে যে কোনো সময়।
তাই সবাই কে চোখ কান সচেতন রাখতে হয়।
খুলনার প্রধান আকর্ষন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।
আর এটা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তো আমরা এখন যাচ্ছি মাংকি ট্রেইল আর ওয়াচ টাওয়ার ঘুরতে।
সবাই এক সাথে চলাফেরা করবেন। কেউ কারো থেকে বেশি দূরে অবস্থান করবেন না।”
এই টুকু বলেই ট্রাভেল নির্দেশক সবাই কে নিয়ে রওনা হলেন।
ঝিল হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলো মাংকি ট্রেইল টা আবার কি ?
বেশ অনেকক্ষণ ভেবে ও কিছু পেল না ওহহ। অগত্যা অভিনব কে প্রশ্ন করলো। অভিনব বলল
_ মাংকি ট্রেইল হচ্ছে কাঠের তৈরি ব্রিজ। বনের ভেতরে কাঠ দিয়ে ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। মূলত এই ব্রিজের আশে পাশে অনেক মাংকির দেখা মিলবে।
মাংকির কথা শুনতেই ঝিল শুকনো ঢোক গিললো। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। অভিনব আশ্বস্ত করে বলল
_ আপনি আমাকে ধরে ধরে হাঁটুন। একদম ভয় পাবেন না। যদি বেশি ভয় পান তাহলেই কিন্তু মাংকি আপনার ঘাড়ে চরে বসবে।
ঝিলের শরীর ঘিন ঘিন করে উঠলো। হাত পা অঝোরে কাঁপছে । উপায় না পেয়ে অভিনব ঝিলের হাত শক্ত করে ধরলো।
ঝিলের সারা শরীর বেয়ে শিহরন জেগে গেল।
ঝটকা মেরে হাত টা সরিয়ে নিলো। অভিনব হতাশ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলল
_ সরি। আসলে আপনি কাঁপছিলেন তাই।
ঝিল হালকা হেসে ইটস ওকে বলল।
অভিনব আর ঝিল পাশা পাশি হাটতে লাগলো।
সবার আগে দুজন গাইড আর পেছনে দুজন গাইড। অভিনব রা মাঝামাঝি হাঁটছে । ওদের আগে পেছনে বেশ অনেক মানুষ রয়েছে।
একটু হাঁটার পর ই কাঠের ব্রিজ চলে আসলো। ঝিল একটু সাইট করে হাঁটতেই কাঠ গুলো কেমন ঝনঝন শব্দ তুললো।
ঝিল ভয় পেয়ে অভিনবর সাথে লেপ্টে দাঁড়ালো।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ মাঝ বরাবর হাটুন, মাঝে লোহা বসানো আছে।
ঝিল মাঝ বরাবর হাঁটতে লাগলো। ঝিলের পাশে অভিনব হাঁটছে আর নানান গাছের ছবি তুলে যাচ্ছে। প্রায় সব গুলো গাছ ই অচেনা। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাচ্ছে ঝিলের দু চোখ। একটা গাছ ও চিনে বলে ও মনে হচ্ছে না।
কাঠের তৈরি পাটাতন গুলো নিয়মিত মেরামত করা হয়। তবু ও বেশ কিছু জায়গা ঝুঁকি পূর্ন। ঝিল আশে পাশে তাকাতে তাকাতে একটু ভাঙা পাটাতনে পারা দিলো ।
মটমট আওয়াজ তুলতেই ঝিলের আত্মা কেঁপে উঠলো। অভিনব ঝিল কে খিচে ধরে নিলো।
ঝিলের শ্বাস বেড়ে গেছে। অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল
_ মাঝ বরাবর হাঁটতে বলেছি। আর আপনি সাইটে চলে যাচ্ছেন।
ঝিল মাথা নিচু করে রইলো। অভিনব ফোঁস করে দম ফেলে ঝিলের হাত টা আলতো করে ধরে নিলো।
ঝিলের কেমন এক অনুভূতি হচ্ছে। তবে এবার আর ঝিল হাত টা ছাড়ালো না। অভিনব হাত ধরে ধরে ঝিল কে নিয়ে আগাতে লাগলো।
ঝিল বার বার দোয়া পড়ছে যাতে বানরের দেখা না মিলে।
মাংকি ট্রেইলের অর্ধেক টা আসা হলে ও কোনো মাংকির দেখা মিললো না।
ঝিল বেজায় খুশি । মাংকি ট্রেইল হলো মূলত কাঁঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি হাঁটা পথ। এটা দিয়ে শুধু হেঁটেই যাওয়া যায়।
এটা করমজল বন্যপ্রানী আশ্রয়কেন্দ্রের দক্ষিন পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে বনের ভেতরের ওয়াচ টাওয়ার হয়ে ঘুরে দক্ষিন পূর্ব প্রান্তে শেষ।
গাছের ফাঁক দিয়ে হালকা কুয়াশা ভেদ করে আসছে। ঝিল মৃদু হেসে তা উপভোগ করতে লাগলো ।
একটু দূরেই চোখে পরলো দুটো ছেলে বনের ভেতরে থাকা চিপসের প্যাকেট , পানির খালি বোতল কুরিয়ে নিচ্ছে।
অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিলো। আমরা পর্যটক রা দেশের পর্যটন কেন্দ্র গুলো কে এভাবেই নষ্ট করে যাচ্ছি।
এই সব প্লাস্টিক কয়েক শ বছর পর ও মাটির সাথে মিশবে না।
মাটির ক্ষতি করে যাচ্ছি আমরা। অভিনবর কুঁচকানো ভ্রু দেখে ঝিল বলল
_ কি হয়েছে?
_ তেমন কিছু না। তবে দেখুন বনের ভেতরে হাবি জাবি ফেলা। যারা ঘুরতে আসে মূলত তারাই তো এগুলো ফেলে ?
ঝিল ঠোঁট দুটো গোল করে নিয়ে বলল
_ এভাবেই আমরা আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে যাচ্ছি।
অভিনব আর ঝিল আবার হাঁটা লাগালো। সূর্যের হালকা আলো আর কুয়াশা মিলিয়ে পরিবেশ টা কে বেশ মোহনীয় করে রেখেছে।
ওরা ছাড়া ও আর ও বেশ অনেক জন পর্যটক এসেছে।
একটু দূরেই একজন কুমির কে ঢিল ছুঁড়ে যাচ্ছে। অভিনবর ভীষন রাগ হলো। এভাবে ওদের ডিস্টার্ব করা উচিত নয়। অভিনব নিজের রাগ কে সংবরন করতে পারলো না।
লোকটার সামনে গিয়ে বলল
_ এক্সকিউজ মি। আপনি যে কুমির টাকে এভাবে আঘাত করছেন এটা কি ঠিক ? ওহ হয়তো ঘুমিয়ে আছে। এভাবে জাগানো টা আদৌ উচিত নয়। ওরা বিরক্ত হচ্ছে নিশ্চয়ই। আপনার সাথে এমন করলে আপনি নিশ্চয়ই খুশি হতেন না ?
অভিনবর কথা তে লোকটা কিছু টা লজ্জা পেল। সরি বলে স্থান ত্যাগ করলো।
অমিত অভিনবর কাছে এসে বলল
_ কি হয়েছে অভিনব ?
_ আরে ভাই দেখো কুমির টার গায়ে ঢিল ছুঁড়ছিলো।
_ এদের মানসিকতার ঠিক নেই। ধৈর্য বলতে কিছু ই নেই এদের । যাই হোক পিছে পরে যাচ্ছে ফাস্ট আসো।
অভিনব মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। অমিত চলে গেল। অভিনব চোখ খিচে নিজেকে শান্ত করলো।
ঝিল হা হয়ে তাকিয়ে আছে। অভিনব ইশারা করতেই ঝিল মৃদু হাসলো। সাথে অভিনব ও হাসলো ।
_ আপনি প্রকৃতিকে নিয়ে অনেক সচেতন তাই না ?
_ উহহু এটা সবার ই হওয়া উচিত। যারা ভ্রমন করে তাঁদের মাস্ট এই বিষয় টা খেয়াল রাখা উচিত।
ঝিলের রক্তে শীতল বাতাস বয়ে গেল। অভিনবর জীবের প্রতি মায়া দেখে ঝিল অবাক হলো।
কেন জানি ওর নিজেকে গর্বিত বলে মনে হচ্ছে । এর কারন ও জানে না। হয়তো সেই অদৃশ্য মায়াই এর কারন।
যার জন্ম হয়েছিলো দেড় বছর আগে।
ঝিল এতো টাই বিভোর যে আশে পাশে কি হচ্ছে কোনো খেয়াল ই নেই।
অভিনব হাত দিয়ে চুটকি বাজাতেই ঝিল মাথা নিচু করে ফেললো।
অভিনব স্পষ্ট লক্ষ্য করলো ঝিল লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
কিন্তু এর কারন কি ? সময় কম দেখে অভিনব সে দিকে আর পাত্তা দিলো না।
ঝিলের হাত ধরেই হাঁটতে লাগলো।
ঝিল লক্ষ্য করলো একটা গাছের মধ্যে সাইন বোর্ড টানানো। যার মধ্যে লিখা
“কাঁকাড়া”
ঝিল ভাবুক দৃষ্টি তে প্রশ্ন করলো।
_ এই গাছ টার মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য এটার নাম কাঁকড়া ।
এটার মধ্যে কি কাঁকড়া উঠে থাকে নাকি ?
ঝিলের কথাতে অভিনব গগন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো ।
ঝিল কোমরের হাত গুঁজে দাড়িয়ে রইলো।
অভিনব পেট চেপে হাসছে। এই হাসি টা এতোক্ষন বিরক্ত লাগলে ও এখন কেন জানি খুব ভালো লাগছে।
অভিনব মুখ চেপে হাসতে হাসতে বলল
_ লুক। ওটার নিচে কি লিখা।
ঝিল সরু চোখে তাকিয়ে দেখলো তার নিচে ইংরেজিতে লেখা KANKARA. আর ঐ টা কাঁকড়া লিখা নয় কাঁকাড়া লিখা।
ঝিল খানিক টা লজ্জা পেল।
অভিনব ও এই গাছ সম্পর্কে তেমন কিছু বলতে পারলো না।
ঝিল কে নিয়ে আরেকটু আগাতে লাগলো। সামনেই ওয়াচ টাওয়ার দেখতে পেল। কেউ কেউ তো ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ও গেছে।
ঝিল ওয়াচ টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল
_ আমা বোধহয় উঠতে পারবো না আর।
_ আসুন আমার হাত ধরে উঠুন। পারবেন আপনি।
ঝিল ক্লান্ত হয়ে বলল
_ আমি পারবো না। আপানরা জান আমি নিচেই আছি।
_ এটা কেমন কথা ঝিল। আপনার জন্য ই আমি ড্রোন চালালাম না।
আর আপনি ই নাকি উঠবেন না। ঝিল মলিন এক হাসি দিলো।
সিঁড়ি বেয়ে উঠার শক্তি ওর আর নেই। ক্লান্ত হয়ে গেছে ওহ। অভিনব কিছু না ভেবেই ঝিল কে কোলে তুলে নিলো।
আচমকা এমন করাতে ঝিল অবাকের চরম পর্যায়ে। কয়েক সেকেন্ড বাদে বলল
_ আরে করছেন টা কি আপনার কষ্ট হবে।
_ হুসসস। কোনো কথা না , আমার একটু ও কষ্ট হবে না।
_ অভিনব সবাই দেখছে আমাদের ।
অভিনব আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো ওদের দিকে কেউ বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। কেউ বা সরু চোখে। কেউ কেউ সিটি ও বাজাচ্ছে । অভিনব এক গাল হেসে ঝিল কে নিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। অভিনব স্পষ্ট বুঝতে পারলে ও ঝিলের দিকে তাকালো না।
মাহেরার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেছে। ঝিল সেটা দেখতে পেয়ে বেশ খুশি হলো। একটু জেলাস ফিল করানোর জন্য অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরলো।
অভিনব ঝিলের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল
_ লজ্জায় লাল হচ্ছেন কেন ? এর আগে ও আমি আপনাকে কোলে নিয়েছি। ইনফেক্ট সেটা অনেক বেশি সময়ের ছিলো।
ঝিল কিছু বলল না। অভিনবর খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। মসৃন গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো বেশ ভালোই লাগছে।
ইচ্ছে হচ্ছে একটু ছুঁইয়ে দিতে। কিন্তু ঝিল সেটা আর করলো না।
অভিনব উপরে উঠে ঝিল কে নামিয়ে দিলো। ঝিল ড্রেস ঠিক করতে করেত বলল
_ থ্যাংকস।
অভিনব মুচকি হাসলো। মাহের ড্রোন চালাতে চালাতে বলল
_ অভিনব ভাই টাওয়ার টা আরেকটু উঁচু হলে ভালো হতো।
এখান থেকে সম্পূর্ন ভিউ দেখা যাচ্ছে না।
ড্রোন দিয়ে কতো সুন্দর লাগছে। অভিনব একপলক তাকিয়ে সম্মতি জানালো। ঝিল লম্বা করে দম নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।বেশ ভালো লাগছে ওর
এখানে কিছুক্ষণ থেকে সবাই টাওয়ার থেকে একে একে নেমে গেল। এবার আর ঝিল কে কোলে তুলে নিতে হয় নি।
কারন সিঁড়ি বেয়ে নামা সহজ , তবে উঠা কঠিন।
সবাই টাওয়ার থেকে বেরিয়ে হাঁটা লাগালো।
মাংকি ট্রেইলের একে বারে শেষ প্রান্তে এসে সবাই অনেক গুলো মাংকি দেখতে পেল। যাক মাংকি ট্রেইল নাম টা বুঝি এবার স্বার্থক হলো।
যারা কাঠের ব্রিজে উঠে খেলছে। ঝিল ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল। অভিনব মুচকি হেসে ঝিল কে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। এবার আর মাংকি ঝিলের দিকে তেড়ে আসে নি।
ঝিল এক বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।
সন্ধ্যা হতে এখনো কিছু টা সময় থাকাতে সবাই করমজলের কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রের দিকে আসলো।
এখানে সংরক্ষণ করা হচ্ছে বিপন্ন প্রজাতির Northern River Terrapin কচ্ছপ। যাদের বৈজ্ঞানিক নাম ( Batagur baska )
বি : দ্র: বৈজ্ঞানিক নাম বোঝাতে এই নামের উপর একটা চিহ্ন দেওয়া হয়, কিংবা একটু বাকিয়ে লিখতে হয়।
যেটা আমি পারছি না, ক্ষমা সূচক দৃষ্টা তে দেখবেন।
এই কচ্ছপ গুলো বর্তমান বিশ্বে বন্য পরিবেশে শুধু সুন্দরবনেই কদাচিৎ দেখতে পাওয়া যায়।
ঝিল বেশ খুশি হলো। বিরল এক প্রানীর দেখা পাবে যে তাই।
অভিনব জানালো , মূলত এদের লুপ্ত হওয়ার পেছনে আমরা মানুষরাই দায়ি।
পরিবেশের সঠিক সংরক্ষণ না করলে এভাবেই হারিয়ে যাবে হাজারো প্রানী।
ঝিল তপ্ত শ্বাস ফেলল। এটা সত্যি, আমরাই আমাদের পরিবেশ কে নষ্ট করে যাচ্ছি।
সবাই কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে এসে পৌছালো। কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রটি করমজলের মূল বন্যপ্রানী আশ্রয় কেন্দ্র থেকে একটু দূরে পশ্চিম দিকে।
তবে সেখানে গিয়ে সবাই একটু আশাহত হলো।
কারন পুরো জায়গা টা দেয়াল আর দেয়ালের উপর কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা।
তবে দেয়াল নিচু থাকাতে ভেতরের পুকুর গুলো দেখা যায়।
পুকুরের পানিতে কচ্ছপের মাথার উপরের অংশ দেখে কচ্ছপের উপস্থিতি বোঝা যায় এই টুকুই যাহ।
পানিতে থাকায় পুরো কচ্ছপ দেখার সুযোগ মিললো না।
সবাই কচ্ছপ দেখে ফিরে আসলো। মাগরিবের আযান দিয়ে দেওয়াতে সবাই করমজলের মসজিদে নামাজ আদায় করে বোটে ফিরে আসলো।
এখানেই শেষ হলো সবার করমজল যাত্রা। ঝিল এক পলক লম্বা করে শ্বাস নিলো।
অভিনব মুচকি হেসে ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আর এক হাতে জড়িয়ে ঝিল কে প্রটেক্ট করতে লাগলো।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_16_17
সবাই বোর্ট এ করে করমজল থেকে লঞ্চে ফিরে আসলো। অভিনব ঝিল কে ধরে লঞ্চে উঠালো। প্রতিউত্তরে ঝিল চমৎকার হাসলো।
সবাই যে যার কেবিনে ফ্রেস হতে চলে গেল। যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই একটু পর সবাই কে সন্ধ্যা নাস্তা দেওয়া হবে।
ঝিলের পায়ে পায়ে ব্যথা করছে। আজ কে ওহহ অনেক হেঁটেছে।
অভিনব বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে ট্রাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে লাগলো।
ঝিল হেলান দিয়ে বসে আছে। অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল
_ ফ্রেস হয়ে আসুন ঝিল। আপনাকে টায়ার্ড দেখাচ্ছে।
ঝিল ক্লান্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
_ আমি আর উঠতে পারছি না। পায়ে খুব বেশি ব্যথা অনুভব হচ্ছে।
_ আপনি এর আগে এমন ট্যুর করেন নি ?
_ উহহুহ । প্রতি বার ই তো পালায় গিয়ে কোনো রেসট্রন কিংবা রিসোর্ট এ থেকেছি।
আশে পাশে ঘুরেছি , কিন্তু এমন হাঁটা পথে ঘুরি নি। মাথা টা কেমন ঝিম মেরে আছে।
_ খুব বেশি ক্লান্ত লাগছে ঝিল?
_ হুমম।
ঝিল মাথা চেঁপে ধরলো। প্রচন্ড পরিমানে মাথা ব্যথা করছে ওর।
অভিনব ট্রাওয়াল রেখে ফ্যান টা অন করে দিলো। শীতের মাঝে ও ঝিল ঘেমে যাচ্ছে।
অভিনবর বেশ খারাপ লাগলো। ঝিল কাঁধ থেকে ব্যাগ টা ও খুলে নি। অভিনব ধীর হস্তে ব্যাগ টা খুলে নিলো।
কৃতঙ্গতার হাসি ছাড়া মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের করতে পারলো না ঝিল।
অভিনব ঝিলের পাশে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর বলল
_ আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন ঝিল। ঘেমে গেছেন, ড্রেস টা চেঞ্জ করে আসুন ভালো লাগবে।
ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। শরীর হঠাৎ আরাম পাওয়াতে যেন আর ও বেশি ক্লান্ত হয়ে গেছে।
বেড থেকে উঠে এক পা দিতেই হোঁচট খেয়ে পরে যেতে নিলো।
ভাগ্যিস অভিনব ধরে ফেললো। অভিনবর ফর্সা কপালে দুটো সূক্ষ্ম ভাঁজ স্পষ্ট।
ঝিলের বেবি হেয়ার গুলো কপালে লেপ্টে আছে।
অভিনব যা বুঝতে পারলো ঝিলের পায়ের মাংশপেশি তে ব্যথা হয়েছে।
হঠাৎ করে এক্সারসাইজ কিংবা ট্রেকিং করলে পায়ে এমন ব্যথা হয়।
তবে ঝিল যেন একটু বেশি ই নুইয়ে যাচ্ছে।
অভিনব ঝিলের দিকে তাকিয়ে বলল
_ আপনাকে ধরে ওয়াসরুমে দিয়ে আসলে সমস্যা হবে ?
ঝিল মৃদু হেসে মাথা কাত করলো। অভিনব এক হাত ঝিলের কাঁধ ছাড়িয়ে অন্য বাহুতে ধরে নিয়ে আসল।ধীরে হাতে ঝিল কে ওয়াসরুমে দিয়ে আসলো। ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল
_ আপনি কাইন্ডলি আমার ড্রেস টা একটু এনে দিবেন ?
অভিনব বিনা বাক্য ব্যয় করে ঝিলের ড্রেস আর ট্রাওয়াল এনে দিলো।
ঝিল বাথরুমের দরজা লাগিয়ে ফ্রেস হতে লাগলো।
অভিনব লম্বা শ্বাস ফেলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।
ঝিলের পায়ে ব্যথা তাই ওদের খাবার টা কেবিনেই নিয়ে আসবে ওহ।
*
বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজে অভিনব উঠে দাঁড়ালো।
ঝিল কে ধরে নিয়ে বেডে বসালো। ঝিলের এখন বেশ ভালো লাগছে । ফ্রেস হয়ে আসা তে ক্লান্তি টা ও কমে গেছে।
অভিনবর দিকে তাকিয়ে ঝিল বলল
_ থ্যাংকস।
_ কেন ?
_ এই যে আমাকে সাহায্য করার জন্য।
ঝিলের কথা তে দারুন হাসি তে হাসলো অভিনব । ঝিল আড়চোখে সে হাসি দেখতে লাগলো।
অভিনবর চোখের ঘন পাপড়ি গুলো কেমন নড়ছে। ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে একটু ছুঁইয়ে দিতে। কিন্তু সব ইচ্ছে যে পূরন হয় না। তাই ঝিলের ইচ্ছে টা ও এখানেই অন্ত হলো।
অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ সাধারন একটা বিষয়ে ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই ঝিল।
_ ইয়ে না মানে এমনি আর কি।
অভিনব খানিকটা হেসে বলল
_ এবার কারন ছাড়া যতগুলো থ্যাংকস বলেছেন।
দেড় বছর আগে কারন থাকলে ও একবার ও থ্যাংকস জানান নি।
অভিনবর কথা তে ঝিল আমতা আমতা করতে লাগলো। অভিনব সরস হেসে বলল
_ আপনি যখন যাচ্ছিলেন তখন আমার খুব করে মনে হয়েছিলো আপনার মধ্যে কৃতঙ্গতা বোধ নেই।
আপনাকে সাহায্য করার পর ও আপনি কোনো রকম ধন্যবাদ জানান নি।
অভিনবর কথা তে ঝিল লজ্জা পেল। তখন পরিস্থিতি টাই এমন ছিলো যে ধন্যবাদ জানানোর কথা মাথায় আসে নি।
ঝিলের লজ্জার সাথে একটু রাগ ও হলো।
অভিনব ওকে অকৃতঙ্গ ভেবেছে ?
ঝিল অগ্নি চোখে অভিনবর দিকে তাকালো। কিন্তু অভিনবর দৃষ্টি মেঝে তে। ঝিল দমে গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। অভিনব নীরবতা ভেঙে মুচকি হেসে বলল
_ তবে জানেন এবার মনে হচ্ছে পুরোই উল্টো। আপনি অতিরিক্ত কৃতঙ্গতা প্রকাশ করেন। তবে সেটা দেখার সুভাগ্য সব পরিস্থিতিতে মিলে না।
ঝিল খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল
_ সরি। সেই সময় টাই এমন ছিলো যে আমি কিছু বলার কথা ভাবি ই নি।
অভিনব হাসলো। মোহনীয় হাসি তে যেন মুক্তা ঝরে। ঝিল দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। কেমন এক আড়ষ্ঠতা এসে ভর করেছে। অভিনবর হাসি গুলো মাতাল হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আচ্ছা এই মানুষ টার সাথে ওর কি সম্পর্ক ?
ঝিলের বুক ধুকপুক করে উঠলো। চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। কেন জানি অদ্ভুত ভালো লাগা আর খারাপ লাগা কাজ করছে।
এ অনুভূতির নাম জানা নেই ওর। জানতে ও চায় না। এ যন্ত্রণা দায়ক ভালো লাগা অসহনীয়।
যাহ ছাড়া ও যায় না আবার ধরে ও রাখা যায় না।
ঝিলের চোখ দুটো হঠাৎ খুলে গেল। বিস্ময়ে চোখ ধাঁধিয়ে গেছে ওর। কি করছে কি অভিনব।
ঝিল ছিটকে সড়ে গেল। অভিনব সরু চোখে তাকাতেই ঝিল আমতা আমতা করে বলল
_ কি করছেন কি অভিনব ?
অভিনবর সহজ উত্তর
_ পায়ের ব্যথা সাড়ার জন্য একটা স্প্রে এটা। কাল সকালে দেখবেন একটু ও ব্যথা নেই।
ঝিলের শ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। অভিনব ঝিলের দিকে আসতেই ঝিল আরেকটু দূরে সরে গেল।
_ অভিনব আমাকে দিন। পায়ে হাত দিবেন না প্লিজ।
অভিনব কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ সরি আসলে আমি অতো ভাবি নি। আই সয়ার আমি বাজে কোনো
_ অভিনব ।
ঝিলের খানিকটা উঁচু গলার স্বরে অভিনব বোকার মতো চেয়ে রইলো।
ঝিল শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলল
_ আমি ঐ সব বলি নি। আপনি আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন এটা উচিত নয়।
আপনি আমার বড় , এটা ঠিক না।
অভিনব থমথমে চোখে তাকিয়ে বলল
_ এটা কোনো সমস্যা নয় ঝিল।
আপনি এতো কিছু ভাববেন না । পায়ে হাত দিলে কারো সম্মানের ব্যাঘাত ঘটে না।
_ কিন্তু অভিনব
_ উহুহহ কোনো কথা নয়। আসলে এটার ব্যবহার তো আপনি জানেন না।
উল্টো ইউজে হিতে বিপরীত হতে পারে।
_ অভিনব প্লিজ।
_ হুসস। কোনো কথা নয়।
ঝিল দমে গেল। অভিনব ঝিলের জিন্স টা একটু উঁচু করে স্প্রে করে দিলো।
ঠান্ডা এক তরল পায়ে লাগতেই ঝিলের শরীর শিরশির করে উঠলো।
অভিনব হালকা হেসে বলল
_ জ্বলবে না এটা। ডোন্ট ওরি
ঝিল তা ও চোখ বন্ধ করে আছে। অভিনবর হাতের স্পর্শ পায়ে লাগতেই ঝিলের শরীরে হিম শীতল ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে ।
অভিনব স্প্রে দেওয়া কমপ্লিট করে বলল
_ চোখ খুলুন ঝিল।
ঝিল চোখ খুললো। অভিনব প্রশস্ত হেসে বলল
_ কমপ্লিট। এবার নাস্তা টা করে নিন।
ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব খাবার এগিয়ে দিয়ে নিজে ও খেতে লাগলো।
সন্ধ্যার নাস্তা তে ছিলো : চিকেন নুডলস , আর ফ্রুট সাথে আনলিমিটেড চা কফি তো আছেই।
তবে টি ব্যাগের চা দেখে অভিনব সেটা আনে নি।
খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে অভিনব বলল
_ একটু ঘুমিয়ে নিন ঝিল।
_ উহহুহহ ঘুম আসছে না।
অভিনব মুচকি হেসে ঝিলের পাশে বসে রইলো। ফোনের নেটওয়ার্ক নেই , তাই সোসাল মিডিয়া ইউজের কোনো সুযোগ ও নেই।
অভিনব ঝরা হেসে বলল
_ আপনার অস্বস্তি হচ্ছে না আমার সাথে থাকতে ?
_ উহহহুহহ।
_ একটু ও না ?
_ না একটু ও নাহ।
অভিনব লম্বা হেসে বলল
_ নারীর মন কিন্তু বোঝা দায়। তবে এই টুকু বুঝেছি আপনি আমাকে ট্রাস্ট করেন।
_ কি করে বুঝলেন ?
_ সাইকোলজিক্যাল হ্যাক বলে কোনো মেয়ে যদি কোনো ছেলেকে কমপক্ষে 15 সেকেন্ড জড়িয়ে ধরে থাকতে পারে।
তার মানে সে সেই ছেলেটি কে বিশ্বাস করে।
সেই তুলনায় আপনি অনেক সময় আমার কোলে ছিলেন। অতএব আমাকে বিশ্বাস করেন।
ঝিল লাজুক হাসলো। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ আপনি একটু তেই হাঁপিয়ে গেছেন ঝিল।
এভাবে ক্লান্ত হলে কিন্তু ইনজয় করতে পারবেন না।
ঝিল ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল
_ আচ্ছা আপনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন?
আই মিন ফরেন ট্যুর এ ?
ঝিলের এক্সাইটমেন্ট দেখে অভিনব বলল
_ আপনি কোথাও জান নি ফরেন ট্যুর এ ?
_ উহুহহ পাপা রা ভাইয়া রা কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে তাই কখনো যাওয়া হয় নি।
এমনি তে আমাকে আশে পাশে নিয়ে যেত। তবে দূরে যাওয়া হয় নি।
অভিনব ওহহ বলে চোখ দুটো বন্ধ করলো।
_ বললেন না কোথায় কোথায় গিয়েছেন ?
_ অনেক জায়গায় গিয়েছি। ছোট থেকেই আমি ভ্রমনের প্রতি দুর্বল। এডাল্ট এজ হতে তো একা একাই ঘুরেছি।
তার আগে পাপা ওর মম নিয়ে যেতো।
ঝিল শর্ট স্লিপিং ব্যাগ কোলে নিয়ে মনোযোগী হয়ে বসলো।
অভিনব ঝিলের মনোযোগ দেখে হালকা হাসলো। মেয়েটা বড্ড বেশি কৌতুহলী।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#part_17
_ অনেক জায়গা তে গিয়েছি। তবে লাস্ট ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে গিয়েছিলাম স্কটল্যান্ড । মোটামুটি স্কটল্যান্ড এর অনেক কিছু দেখেছি।
আমি তিন বছর আগে স্কটল্যান্ড গিয়েছিলাম।
আর গত তিন বছর এশিয়াতে ট্যুর করেছি। স্কটল্যান্ডের 3 উইক এর সম্পূর্ন সময় টাই আমি ঘুরেছি।
অসাধারন কিছু অনুভূতি পেয়েছি।
আমার সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তর প্রতি একটু ঝোঁক রয়েছে।
আরো দশ বছর আগেই যেতে চেয়েছিলাম স্কটল্যান্ডের শিটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ তে। কিন্তু পাপা তখন বিজি ছিলো খুব। আর যাওয়া হয় নি। তবে তিন বছর আগে আমি একাই গিয়েছিলাম।
মূলত সূর্যোদয় দেখার জন্য ই আমি গিয়েছিলাম তবে অনেক কিছুর স্বাদ পেয়েছি আমি।
ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। এই স্কটল্যান্ড কিংবা শিটল্যান্ডের নাম কখনোই শুনে নি ওহহ।
ঝিলের ভাবুক দৃষ্টি দেখে অভিনব বলল
_ কি ভাবছেন ?
_ ইয়ে না মানে শিটল্যান্ড টা কোথায় ? আমি কখনো নাম ই শুনি নি।
অভিনব মৃদু হাসি দিয়ে বলল
_ এটা ইউ কে তে অর্থাৎ যুক্তরাজ্য তে।
_ ওহহ। আচ্ছা তা কি কি দেখেছেন ?
_ অনেক কিছু ছিলো। অনেক দ্বীপপুঞ্জ আছে, জারলশফ , lerwick , ভাইকিং উৎসব , স্কিলায় , তারপর সুম্বুর বাতিঘর।
অভিনবর কথার কোনো আগা মাথা বুঝলো না ঝিল। মুখ টা গোমড়া করে রইলো। অভিনব ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করে বলল
_ তবে শিটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জর সূর্যোদয় ছিলো অসাধারন।
শিটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে উত্তরের প্রান্ত। দ্বীপপুঞ্জগুলি পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর এবং পূর্বে উত্তর সাগর থেকে পৃথক করেছে। শিটল্যান্ড সূর্যোদয়ের দৃশ্যকে মন্ত্রমুগ্ধ করার জন্য স্বীকৃত এবং ইউরোপে সূর্যোদয়ের সেরা দৃশ্য হিসেবে বিবেচিত।
আমি একাই গিয়েছিলাম , তবে এটার ছবি এখন আমার কাছে নেই।
না হলে দেখাতে পারতাম।
ঝিল মুখ টা গোমড়া করে রইলো। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল
_ কিন্তু অন্য গুলোর ছবি আছে।
মুহুর্তেই ঝিলের চোখ দুটি চকচক করে উঠলো। এক প্রকার ঝাঁপিয়েই অভিনবর কাছে আসলো। অভিনবর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।
ঝিল মৃদু হেসে বলল
_ সরি।
অভিনব এক গাল হেসে ক্যামেরা বের করলো। বিভিন্ন ছবি দেখাতে লাগলো।
ঝিলের চোখ চকচক করে উঠলো। অসাধারন কিছু সৌন্দর্য দেখে ঝিল মুগ্ধ হলো।
এতো টাই উত্তেজিত যে অভিনবর গাঁয়ের সাথে লেপ্টে বসে আছে ওহ।
হাত টা অভিনবর বাহু তে। ঝিল একটা ছবি দেখতে দেখতে বলল
_ এই জায়গার নাম কি অভিনব ? এটা কেমন পাহাড় কেঁটে রাখার মতো দেখাচ্ছে।
_ আরে এটা তো জারলশফ। এটা বেশ পুরনো দর্শনীয় স্থানের একটি।
বলা হয় এটি জারলশফ প্রাগৈতিহাসিক সাইটগুলির মধ্যে দ্বীপপুঞ্জগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টপূর্ব ২,০০০ সাল থেকে এই সাইটটি ছিল এবং 2.500 শতাব্দী পর্যন্ত বাসিন্দারা সেখানে ছিল। এটি আশ্চর্যজনক যে এই জায়গাতে ব্রোঞ্জ যুগের বেশ কয়েকটি ঘর ও রয়েছে যা পুরোপুরি প্রাচীর সংরক্ষণ করেছে। তেমনি, আয়রন যুগের করিডোরগুলির মধ্যে দিয়ে হাঁটা যায় এবং ভাইকিং সভ্যতার অবশেষ উপভোগ করা যায়। এই যে পুরান দুর্গের বাড়িটি সুম্বুর ওল্ড হাউস হিসাবে পরিচিত ।
অসাধারন একটা জায়গা , খুব স্বচ্ছ এটা। তাছাড়া ফরেন কান্ট্রি গুলো পরিষ্কার ই হয়। বিশেষ করে ইউরোপের দেশ গুলো।
ঝিল মুখ বাঁকিয়ে বলল
_ ইসসস কি সুন্দর জায়গা। এবার বাসায় ফিরে পাপার ঘাড়ে চড়ে উঠবো।
কেন আমাকে এখানে নিয়ে যায় নি ?
ঝিলের কথাতে অভিনব ফিক করে হেসে দিলো। ঝিল ভেজা গলাতে বলল
_ আপনি তো ট্যুর করেছেন তাই হাসি পাচ্ছে।
ধ্যাত
_ আহা রাগ করছেন কেন ? আচ্ছা স্কটল্যান্ডে একটা উৎসব হয়। আমি জানুয়ারি তে গিয়েছিলাম তাই উৎসব টা দেখতে পেরেছি।
_ কি উৎসব ?
_ ভাইকিং উৎসব।
_ এটা আবার কি ধরনের উৎসব? আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।
_ ওয়েট আমার কাছে একটা ছবি ছিলো। তাহলেই বুঝতে পারবেন।
অভিনব বেশ ঘেঁটে তারপর একটা ছবি বের করে দেখালো।
ছবি টার দিকে তাকিয়ে ঝিলের মুখ টা হা হয়ে গেল। অভিনব হালকা ধাক্কা মেরে বলল
_ হা করে আছেন কেন ?
ঝিল অবাক কন্ঠে বলল
_ অভিনব এটা কি ধরনের উৎসব ? এতো আগুন কেন এখানে ?
আগুনে মানুষ পুরিয়ে খায় নাকি ?
ঝিলের কথা তে অভিনব তাজ্জব বনে গেল। ঝিল মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ এমনি মজা করছিলাম আমি। আচ্ছা এটা কেমন উৎসব এতো আগুন যে ?
_ এটা ভাইকিং সংস্কৃতির একটি উৎসব। পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ প্রতি বছর এই উৎসব দেখতে শিটল্যান্ড এ আসে।
মূলত তারা ভাইকিং সংস্কৃতির ভক্ত , যাকে বলে ডাই হার্ট ফ্যান।
না হলে এই উৎসবের জন্য এতো টাকা খরচ করে আসতো না।
_ মাই গড। তাহলে তো ফেমাস একটা উৎসব। কিন্তু আমি এইসবের কিছুই জানি না।
কথা টা বলেই ঝিল মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে নিলো। অভিনব হো হো করে হেসে উঠলো।
ঝিল দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ হাসছেন কেন ?
_ আপনি বাচ্চাদের মতো করছেন ঝিল। এমন নয় যে একটা মানুষ পৃথিবীর সব কিছু জানবে।
তবে যতটুকু সম্ভব জানা উচিত। আর আপনি বিডি তে আছেন। বিডি তে থেকে এই সব সম্পর্কে না জানা টাই সাধারন।
এতে মন খারাপ কেন করছেন ?
সুযোগ হলে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন।
যেমন টা আজ আমার থেকে জানতে পারছেন।
অভিনবর কথা তে ঝিল হাসলো। বেশ ভালো লাগছে এখন। সত্যি ই তো একটা মানুষ তো সব বিষয়ে না ও জানতে পারে।
এটা কোনো বিষয় ই নয়।
তবে ঝিলের কৌতুহলী মন অভিনব কে প্রশ্ন ছুঁড়লো এই উৎসব সম্পর্কে বলার জন্য।
অভিনব খানিক টা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ আমি অনেক বেশি জানি না। তবে এই উৎসবের সাধারন কিছু জানি।
_ আরে সেটাই বলুন না। প্লিজ প্লিজ, আমার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।
অভিনব মুচকি হেসে বলা শুরু করলো।
_ আমার জানা মতে এটা জানুয়ারি
মাসের শেষ মঙ্গলবারেই হয়। তবে সিউর বলতে পারছি না।
আমি যখন গিয়েছিলাম সেই ডেট অনুযায়ী মঙ্গল বার ই হয়। যাই হোক এই উৎসব টা আই মিন ভাইকিং ফেস্টিভাল আপ হেলি আ আ, এক উৎসব যা একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হচ্ছে। উৎসবটি পুরো দিন স্থায়ী হয় এবং রাতে অব্যাহত থাকে। প্যারেড, মার্চ এবং গান অনুসরণ করে, যখন প্রত্যেকে ভাইকিং পোশাক উপভোগ করে। এটি এমন একটি উৎসব যেখানে আগুনের উপাসনাও করা হয়,একটি ভাইকিং দীর্ঘকাল দেখা যায় এবং ভোর অবধি উদযাপনগুলি চালিয়ে যাওয়া যায়।
তবে একটা কথা হচ্ছে ভাইকিং দের বর্বর জাতি বলা হয়।
উত্তেজনায় উৎফুল্ল হয়ে যাওয়া মুখ টা গোমড়া করে ফেললো ঝিল।
অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ এটা ইতিহাসে বলা হয়। এখন কার ভাইকিং জাতি যথেষ্ট সভ্য হয়ে গেছে।
আই মিন জলদস্যু রা , কারন আগের মতো প্রাণঘাতী নয় তারা।
অভিনব একটু থেমে কিছু একটা ভেবে বলল
_ ভাইকিং জাতি রা নাকি জলদস্যু ছিলো। মানে টা হলো জলদস্যু দের ই ভাইকিং বলা হয়। যারা অষ্টম শতক থেকে এগারো শতক পর্যন্ত ইউরোপের বিরাট এলাকা জুড়ে লুটতরাজ চালাতো আবার বসতি ও স্থাপন করতো।
কালের গর্ভে তাদের পরিবর্তন হয়েছে। তবে কথায় আছে না পূর্ব পুরুষ রা যা করে তার রেশ একশ পুরুষ অব্দি থেকে যায়।
ঠিক তেমনি ইতিহাসের পাতায় ভাইকিং জাতির বদনাম থেকেই গেছে।
_ মাই গড এরা তো খুব ডেঞ্জারাস ছিলো।
ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ থাক ভাইকিং জাতির কথা বাদ না হলে আপনি আবার ভয় পেয়ে যাবেন।
পরে আবার জ্ঞান হারাবেন।
এই টুকু বলেই অভিনব মুখ চেপে হাসতে লাগলো । ঝিল আশে পাশে তাকিয়ে বালিশ খুঁজতে লাগলো। অভিনব লম্বা হাসি দিয়ে বলল
_ বালিশ কাবাডে রেখে দিয়েছি।
_ অভিনব আপনি
_ রেগে যাচ্ছেন কেন ঝিল। Lerwick শহরের ছবি দেখাই ওয়েট।
এটা কিন্তু অসাধারন একটা জায়গা।
অভিনব ক্যামেরা ঘেঁটে একটা ছবি বের করে বলল
_ এই যে দেখুন।
ঝিল ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি টা দেখে বলল
_ ওয়াও এমন শহর ও হয়। আমার তো কার্টুন মনে হচ্ছে।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ এটাই শিটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী এবং দ্বীপগুলির একটি অবশ্যই দেখার জায়গা। এই রাজধানীটি বন্দরটির চারপাশে জন্মগ্রহণ করেছিল, যা ডাচ হারিং জেলেদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ের পয়েন্ট ছিল। এর প্রধান রাস্তাটি বাণিজ্যিক স্ট্রিট, এমন এক জায়গা যেখানে traditional তিহ্যবাহী পণ্যগুলির দোকান দেখা যায়। এছাড়াও দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানা যাবে তবে এর জন্য শিটল্যান্ড জাদুঘরে যেতে হবে।
আমার কাছে সময় ছিলো না তাই যেতে পারি নি।
আবার গেলে নিশ্চয়ই যাবো আমি।
_ ইসসস আই উইস আমি ও যেতে পারতাম।
অভিনব কিছুক্ষণ ভেবে একটু নরম কন্ঠে বলল
_ যাবেন আমার সাথে ঝিল ?
_ অভিনব ।
_ বন্ধু হয়েই না হয় গেলেন।
ঝিল কাঁচুমাচু করতে লাগলো। অভিনব লম্বা হেসে বলল
_ স্কিলায় আর সুম্বুর বাতির ছবি এসে দেখাচ্ছি।
ঝিল ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কোথায় যাচ্ছেন ?
_ কফি বানাতে।
_ ওহহ।
অভিনব দরজার কাছে এসে আবার ফিরে তাকালো । ঝিল অভিনবর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।
চোখাচোখি হওয়াতে চোখ নামিয়ে নিলো।
অভিনব সময় দেখে বলল
_ কফি খাবেন ?
ঝিল যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মাথা কাত করে সম্মতি জানিয়ে দিলো।
অভিনব এক ফালি হেসে চলে গেল।
ঝিল অভিনবর সেই কথা টা ভাবতে লাগলো।
ঝিল যাবেন আমার সাথে ?
মুহুর্তেই ঝিলের গাল দুটো কমলা বর্ন ধারন করলো।
হঠাৎ লজ্জার হেতু বুঝতে পারলো না ওহ।
দু হাতে মুখ ঢেকে নিলো আবার খুলে ফেললো।
লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। কিহহ আশ্চর্য অভিনবর মুখ টা ভেসে উঠলো।
অভিনবর সেই কথা টা কানে বেজে যাচ্ছে।
যাবেন আমার সাথে ঝিল ?
এক ফালি হাসলো ঝিল। যদি দেড় বছর আগে অভিনবর সাথে ওর দেখা না হতো তাহলে অনেক কিছুই জীবনে মিস করতো ওহহ।
হঠাৎ করেই ওদের বিয়ের কথা মনে হলো। বুক টা ধুকপুক করে উঠলো ঝিলের। এখনো যে অভিনব ওর স্বামী , ওদের তো ডিভোর্স হয় নি।
ঝিলের শিরায় যেন ঠান্ডা তরল নেমে গেল। লজ্জাতে কেমন জমে যাচ্ছে। অভিনবর কথা মনে পরতেই শ্বাস বেড়ে যাচ্ছে।
কি আশ্চর্য এমন কেন হচ্ছে ওর। এই অপরিচিত সুখ অনুভূতির টার নাম কি ?