ধূসর রঙের প্রজাপতি পর্ব ১৮+১৯+২০

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_18

কফি হাতে ফিরে এলো অভিনব। কেবিনে ঢুকে দেখলো ঝিল আনমনেই বসে আছে। আশে পাশে কি হচ্ছে তাতে কোনো ধ্যান ই নেই। ঝিলের মনোযোগ পেতে খ্যাক করে কাশলো। ঝিল ঘুরে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করলো। অভিনব ও মৃদু হাসলো। ঝিলের হাতে কফি দিতেই ঝিল দারুন অনুভূতি নিয়ে চুমুক দিলো। লা জাওয়াব , সত্যি ই অভিনব খুব ভালো কফি বানায়।
ঝিল পা টা নাড়িয়ে দেখলো ব্যথা টা কমে গেছে। অভিনবর দিকে তাকিয়ে কৃতঙ্গতার হাসি দিলো।
তবে অভিনবর মনোযোগ কফি কাঁপে। ঝিলের মনে পরলো অভিনব বলেছিলো রাতে ছাঁদে নিয়ে আসবে। ঝিল চকচকে চোখে তাকালো। কিন্তু অভিনব এখনো কফি কাঁপে মুখ গুঁজে আছে। ঝিলের মুখ টা একটু খানি হয়ে গেল।

_ অভিনব।
_ হুহহ
_ একটা কথা বলার ছিলো।
_ হ্যাঁ বলুন। এতো ফরমালিটি করছেন কেন ?
_ না মানে
_ নির্দ্বিধায় বলুন। আমি বাঘ নই যে আমাকে এভাবে ভয় পাবেন।

ঝিল অপ্রশস্ত হাসলো। কাঠ হয়ে যাওয়া ঠোঁট দুটো জ্বিভের আগা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো। অভিনব আড়চোখে দেখলো ঝিল কেমন কাঁচুমাচু করছে।
যার দরুন ঝিলের মুখ টা একটু খানি হয়ে আছে।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ বলুন সমস্যা নেই।

_ ইয়ে না মানে আপনি বলেছিলেন রাতে লঞ্চের ছাঁদে নিয়ে যাবেন।

অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেললো। ঝিলের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল
_ কিন্তু আপনার পায়ে তো ব্যথা।

ঝিল বোকা বোকা হেসে বলল
_ আরে না। ব্যথা আপনার স্প্রে তে পালিয়ে গেছে। প্লিজ প্লিজ

অভিনব খানিকটা ভেবে নিলো। ঘড়িতে টাইম দেখে নিয়ে বলল
_ আচ্ছা চলুন। তবে আধ ঘন্টা পর ডিনার করতে হবে।

_ ওকে।

ঝিল অভিনবর সাথে হাঁটা লাগালো। ঝিলের দিকে তাকিয়ে অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ঝিল অবাক হয়ে তাকালো।

_ কি হলো থেমে গেলেন কেন ? প্লিজ প্লিজ আমরা যাই একটু খানি ই তো থাকবো প্লিজ।

অভিনব কোনো কথা না বলে কাবাড থেকে একটা চাঁদর বের করে ঝিলের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।

_ কিইই ?
_ চাদর টা গায়ে জড়িয়ে নিন।
_ আরে লাগবে না।
_ বেশি কথা বলছেন আপনি। না হলে কিন্তু ছাঁদে নিয়ে যাবো না।

ঝিল মাথা কাত করে চাদর টা নিয়ে নিলো। ভালো করে গায়ে জড়িয়ে অভিনবর সাথে হাঁটা লাগালো।

*

ছাঁদে কেউ ই নেই। সবাই যে যার মতো ক্লান্ত তাই কেবিনে রেস্ট নিচ্ছে। অভিনব আর ঝিল রেলিং ধরে পাশা পাশি দাড়িয়ে আছে। হালকা বাতাসে ঝিলের বেবি হেয়ার গুলো উড়ছে। ঝিলের লম্বা চুল থেকে কয়েক গাছি চুল এসে অভিনবর গাঁয়ে বারি খাচ্ছে। ঝিল লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে হাতে কফি কাপ টা।
দুজনের মনেই অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে । এক অদ্ভুত অনুভূতি আর শিহরনে ছেয়ে যাচ্ছে সর্বাঙ্গ।
অন্যমনস্ক ঝিলের হাত টা অভিনবর হাতে লাগতেই ঝিল শিউরে উঠলো।
অভিনবর দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল
_ সরি।

অভিনব কোনো উত্তর করলো না। ঝিল ভারী এক নিশ্বাস ফেলল। অভিনব ক্যামেরা ঘাঁটতে ঘাঁটতে কিছু ছবি বের করলো।
ঝিলের দিকে ক্যামেরা বারিয়ে দিলো।
_ দেখুন আর বলুন তো এগুলো কোথায়।

ঝিল ভ্রু নাচিয়ে হাসলো। ক্যামেরা নিয়ে একের পর এক ছবি দেখতে লাগলো। বিস্ময়ে চোখ ধাঁধিয়ে গেছে ওর।
অভিনব লক্ষ্য করলো ঝিল খুশি তে আপ্লুত হয়ে পরেছে। অভিনব ক্ষীন হাসলো। মেয়েটা অল্পতেই কেমন সুখ খুঁজে নেয়।

_ কোথায় এটা বলতে পারেন ?

_ এটা কি ইউরোপের কোনো দেশে ? ওয়াও এতো সুন্দর ? আমার তো মনে হচ্ছে ছবি তেই ঢুকে যাই।

অভিনব মিষ্টি হাসলো তারপর বলল
_ যাবেন আপনি ?

ঝিল মৃদু হাসলো। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আপনি ইচ্ছে হলেই যেতে পারেন।

ঝিল অবিশ্বাসের চোখে তাকালো। অভিনব আকাশের দিকে তাকালো। চাঁদ টা কুয়াশার মাঝে ডুবে গেছে।

_ অভিনব
_ হুম
_ কিছু বলছেন না যে ?
_ আপনি যাবেন এখানে ?
_ অভিনব এটা
_ সম্ভব , আপনি চাইলেই সম্ভব। জানেন এটা কোথায় ?

ঝিল মাথা কাত করে বোঝালো সে জানে না। অভিনব মৃদু হাসলো । কুয়াশা ভরা বাতাসের মাঝে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল
_ বাংলাদেশ এটা বাংলাদেশেই।

ঝিলের ছোট ছোট চোখ গুলো বড় হয়ে গেল। অভিনব ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল
_ হ্যাঁ এটা আপনার দেশের ই একটা স্থান। ফরেন ট্যুরে যেতে হবে না আপনাকে। আপনি এখানে স্বাচ্ছন্দ ভাবে যেতে পারেন।

_ অভিনব।

_ হুমম

_ আপনি আমার সাথে মজা করছেন ?

_ উহহুহ একটু ও না। আমি একটু ও মজা করছি না। দেখাচ্ছি আপনাকে

অভিনব ঝিলের থেকে ক্যামেরা নিয়ে একটা ছবি বের করলো। ঝিল বিস্ময় নিয়ে অভিনবর দিকে তাকিয়ে রইলো।
অভিনব বুক ভরা শ্বাস নিয়ে ঝিল কে বলল
_ এই যে দেখুন এটা টাঙ্গুয়ার হাওর। আপনার ই দেশের অপরূপ সৌন্দর্য ভরা এক স্থান।

_ সত্যি বলছেন আপনি?

কথা টা ঝিল বিস্ময় নিয়েই বলল। অভিনব ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটিয়ে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো। ঝিলের চোখ চকচক করে উঠলো।

_ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা বাংলাদেশেই আছে ? ওয়াও। এটা বাংলাদেশের কোথায় ?

_ সুনামগঞ্জ।

_ ওয়াও। তাহলে তো যাওয়া যেতেই পারে ?

_ আপনি চাইলে এখনি যেতে পারেন। তবে এর আসল সম্পূর্ন সৌন্দর্য তো ফুটে উঠে বর্ষা কালে।
এখন তো ফেব্রুয়ারি মাস।

ঝিল মুখ টা ছোট করে নিলো। আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছে ওর মন। প্রকৃতির প্রতি গভীর টান অনুভব করছে।
চোখ দুটো ছলছল করছে। অভিনবর ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে একটু জড়িয়ে ধরে বলতে আমি আপনাকে নিয়ে যাবো।
কিন্তু নিজের ইচ্ছের প্রশ্রয় দিলো না অভিনব। দীর্ঘশ্বাসে ভরে উঠলো চারপাশ। ঝিল ছলছল নয়নে ছবি টা দেখে যাচ্ছে। কি সুন্দর সৃষ্টি , হঠাৎ ই অভিনবর মাথায় এক ভাবনা চড়াও হলো।
কেন পারবে না যেতে ? নিশ্চয়ই পারবে ? এই যে ঝিল তো আজ ওর সাথেই ঘুরে যাচ্ছে। তাহলে সমস্যা কোথায়।
অভিনব উৎকন্ঠা হয়ে বলল
_ ঝিল

অন্যমনস্কা ঝিল অভিনবর ডাক শুনতে পেল না।অভিনব আবার ডাক দিলো। ঝিল ক্যামেরাতেই চোখ রেখে ছোট্ট করে উচ্চারন করলো
_ হুমম
_ আমি নিয়ে যাবো আপনাকে।
_ সত্যি ?
_ হ্যাঁ তবে এখন নয়। আমরা পূর্ন তিথি তেই যাবো।
_ মানে ?
_ বর্ষাকালে।
_ কিন্তু আপনি কি করে যাবেন ? আপনি তো আমেরিকা তে ফিরে যাবেন।

মুহূর্তেই অভিনবর মুখ টা ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল। ঝিল মৃদু হেসে বলল
_ সমস্যা নেই আপনি বলেছেন আমি তাতেই খুশি।

_ ঝিল ।

_ হুমম

_ যদি আমি আমেরিকা থেকে ফিরে এসে নিয়ে যাই । যাবেন আমার সাথে ?

বিস্ময়কর পরিস্থিতিতে হতবাক ঝিল। দ্বিধা নিয়ে বলে ফেলল
_ যাবো আমি ।

এই একটি কথা যেন মুহূর্তেই অভিনবর বুকে বৃষ্টি নামিয়ে দিলো। অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে গেল অভিনবর হৃদয়।
অধর কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল
_ তাহলে যাবো আমরা। তবে তার জন্য আপনাকে সুইম শিখতে হবে ।

ঝিল হাসলো। হ্যাঁ সত্যি ওহ যাবে অভিনবর সাথে আর সুইম ও শিখবে। টাঙ্গুয়ার হাওরের গাঁ ভেজাবে অভিনবর হাতে হাত রেখে।
অনেক টা পথ চলবে অভিনবর পাশা পাশি হয়ে।
এক সাথে পারি দিবে ভালোবাসার সমুদ্রে। হ্যাঁ যাবে হারিয়ে অভিনবর ভালোবাসাতে।

অভিনবর ডাকে ঝিল চমকে তাকালো।
_ চলুন ডিনারের জন্য সবাই এসে পরেছে

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। ঝিলের চিত্ত এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছে। একি ভাবনাতে মজে ছিলো ওহ।
অভিনবর ভালোবাসাতে ডুবে যাবে। এই অপ্রস্তুত ভাবনার কারন কি ?
ওহ কি অভিনবর প্রতি নুইয়ে যাচ্ছে ?
এটা কি হচ্ছে ওর ? হৃদস্পন্দন গুলো এতো বেড়ে যাচ্ছে কেন ?

_ চমকাচ্ছে কেন ঝিল ? আপনার চোখ মুখ এমন অপ্রস্তুত লাগছে কেন ?

ঝিল সামান্য হাসার চেষ্টা করলো। অভিনব ধীর হস্তে ঝিলের হাত টা ধরলো। চমকে তাকালো ঝিল, অভিনবর ঠোঁটের কোনে লেগে আছে এক চিলতে হাসি।
যেই হাসি তে বিনা দ্বিধায় ঝিল হারাতে রাজি সহস্র জনম।

*

রাতের খাবারে ছিলো এগ ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই , চিংড়ী , মিক্সিং ভেজিটেবল, রূপচাঁদা ফ্রাই।
সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস আর ফ্রুটস।

অভিনবর পাশে বসে আছে মাহের , অমিত আর শাকীল। অভিনব আলোচনা করছে কাল যখন জামতলা সৈকত অর্থাৎ কটকা সি বিচ যাবে তখনি আস্ত খাসি বারবি কিউ করা হবে।
যেহেতু বিচে পর্যাপ্ত পরিমান জায়গা আছে। তাই সবাই সেখানেই বার বি কিউ করবে বলে ঠিক করলো।

পাপড়ির ঘাড়ে মাথা রেখে আছে ঝিল। তার পাশেই বসে আছে অমিতের গার্লফ্রেন্ড অনিতা।
অনিতা মেয়েটা দেখতে শুনতে বেশ ভালো। কিছু দিন হয়েছে পড়া শোনা কমপ্লিট করেছে। এই ট্রিপের পর ই ওদের বিয়ে।
পাপড়ি হাসতে হাসতে ঝিল কে বলল
_ আমাদের মাঝের সব থেকে পিচ্ছি সদস্য হলো ঝিল।

_ হ্যাঁ। আমরা যখন ট্রিপে বের হই , তখন ভেবেছিলাম আফরাই সব থেকে ছোট অথচ দেখো আরেক জন পিচ্ছি পেয়ে গেলাম।

অনিতার কথায় ঝিল মৃদু হাসলো। তারপর প্রশ্ন করলো
_ আফরা আপি আর মাহেরা আপি কি সেম ব্যাচ ?

_ উহুহহ মাহেরা এক ব্যাচ সিনিয়র।

_ ওহহ তাহলে তো মাহেরা আপি আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র আর আফরা আপি এক ব্যাচ।

_ হুমমম তুমি সেকেন্ড ইয়ারে না ?

_ হ্যাঁ।

অনিতা মৃদু হাসলো। অমিত ওদের সামনে এসে বসলো।
অনিতার সাথে নানা খুনসুটি তে মেতে উঠেছে ওহহ।
তা দেখে পাপড়ি আর ঝিল হেসে কুটিকুটি।
কিছুক্ষণ পর পাপড়ির হাসবেন্ড আসলো। পাপড়ি প্রশস্ত হেসে বলল
_ আমি যাই। তোমরা গসিপ করো। না হলে আমার ওনি রেগে যাবেন।

পাপড়ি কে অমিত বেস্ট অফ লাক জানালো। পাপড়ি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে অনিতা কে ইশারা করলো।
মুহূর্তেই অমিত লাল টুকটুকে হয়ে গেল। তা দেখে ঝিলের গগন কাঁপিয়ে হাসি। এতো হাসা হাসির শ্বব্দে অভিনব ঘুরে তাকালো। ঝিলের মোহনীয় হাসিতে আটকে গেল ওহহ।
ঘোর ভাঙ্গলো মাহের এর ডাকে। মাহের হাই ফাইফ করে বলল
_ তাহলে রইলো কথা। দুটো আস্ত খাসি বার বি কিউ হচ্ছে। আমি chef এর সাথে কথা বলে আসি।

_ আচ্ছা যাও।

মাহের শাকীল কে নিয়ে কিচেনে গেল কথা বলতে। আস্ত বারবিকিউ করার জন্য যা যা লাগবে তা এখনি গুছিয়ে নিবে।
কারন কাল খুব ভোরে উঠে কটকা ঘুরবে ওরা।

অভিনব আকাশে চাঁদ খুঁজতে লাগলো। নাহহ কুয়াশা টা চাঁদ কে আড়াল করে রেখেছে।
তাই চোখ ফিরিয়ে নিলো। পেছন ঘুরে তাকালো । সামনে ঝিল কে দেখেই বুক ধুকপুক করে উঠলো।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_19

আকাশের কুয়াশা গুলো একটু একটু করে মাটিতে নেমে আসছে। জঙ্গলের মাঝে আর লঞ্চের মাঝে দুরুত্ব বেশ খানিকটা।
অদূর পর্যন্ত শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। পরিবেশ ভারী হয়ে গেছে। সবাই অনেক আগেই ঘুমোতে চলে গেছে।
তবে আশে পাশে আরো অনেক গুলো লঞ্চ কটকাতেই নাইট হোল্ড করছে।
অভিনবর কাঁধে মাথা রেখে শুইয়ে আছে ঝিল। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুজনে গল্প করছিলো। তার ই মাঝে ঘুমিয়ে যায় ঝিল। ছাঁদের রেলিং এ ভর করে উঠার চেষ্টা করলো অভিনব।
কিন্তু এতে মেয়েটা বেশ বিরক্ত হচ্ছে। ঘুমের চোখে বার বার নাক কুঁচকাচ্ছে। অভিনব ছোট করে দুবার ডাক ও দিলো। কিন্তু ঝিল উঠার বদলে অভিনবর বুকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
অভিনব খানিকটা চমকে উঠলো। ঝিলের গরম নিশ্বাস অভিনবর বুকে এসে বারি খাচ্ছে। এতে যেন অভিনবর শ্বাস থমকে যাচ্ছে। তবে দারুন এক অনুভূতি ও হচ্ছে। শীতের কারনে গুটিশুটি মেরে আছে ঝিল। অভিনব মৃদু হেসে ঝিলের দিকে তাকালো। শুভ্র উজ্জ্বল মুখ টা একটু শুষ্ক লাগছে। তবে ঠোঁট উল্টিয়ে ঘুমানোর বিষয় টা ঝিলের মাঝে বাচ্চা বাচ্চা ভাব প্রকাশ করছে।
অভিনব হাসলো , পরক্ষনেই কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে নিলো।
মেয়েটার বেবি হেয়ার গুলো বার বার চোখের কাছে চলে আসছে।
বিরক্তি তে ভরে উঠছে ঝিলের মুখ। অভিনব ধীর হস্তে চুল গুলো গুছিয়ে দিলো। ব্যাস এবার আর সমস্যা হবে না। ঝিল কে ডাকার ইচ্ছে হলো না আর। মেয়েটার সদ্য ঘুম যেন অভিনবর বুকে আলো হয়ে ঝরছে।
অভিনব ঝরা হেসে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।
এমন ভাবে তুললো যেন ঝিলের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
ঘুমের ঘরেই ঝিল অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরলো।
অভিনবর অধর কোনে ক্ষীন হাসি ফুঁটে উঠলো।
ঝিল কে নিয়ে কেবিনে চলে আসলো। বেডে শুইয়ে দিলো ঠিক ই কিন্তু ঝিল অভিনবর গলা জড়িয়ে ই আছে।
অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। বেশ অনেক ক্ষণ সময় নিয়ে ঝিলের হাত টা ছাড়ালো।
ঝিল উবু হয়ে শুইয়ে রইলো। অভিনব বেশ ভাবনায় পরে গেল ঝিলের পাশে শুবে কি না।
দ্বিধাহীন মন নিয়ে শুতে গিয়ে ও উঠে পরলো। ঝিল ঘুমিয়ে আছে , ওর অনুমতি যদি ও আছে তবু ও শোয়া টা উচিত নয়।
অভিনব ঝিলের পাশে বসে রইলো। কাল যেহেতু কটকার জামতলা সি বিচে ঘুরবে তাই কটকা সম্পর্কে কিছু যেনে নিলে ভালো হয়।
তাই নেট ট্রাই করলো , একটু খানি ও নেটওয়ার্ক নেই।
অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে রইলো। ব্যাগ প্যাক থেকে একটা ইংলিশ বই বের করে পরতে লাগলো।
” The art of travel ”

এই বইয়ের একটি অংশে বলা হয়েছে

“ভ্রমণের একটি শিল্প আছে।
ডি বোটন ব্যাখ্যা করেছেন, এমন কিছু যা আমাদের সুখের সাথে আমাদের চিন্তা করার চেয়ে বেশি জটিল। তার বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করার জন্য, তিনি লেখক, কবি এবং চিন্তাবিদদের সাথে আত্মার অবস্থাকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সমান্তরাল করেন কারণ তিনি নিজেই এর শিল্পে নিযুক্ত হন।”

অভিনব লাইন গুলো পড়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো। একজন ভ্রমন প্রেমি হিসেবে অভিনবর কাছে প্রকৃতি মানেই শান্তি।
আর ওর ভালো থাকার বিষয়ের একটা হচ্ছে ভ্রমন।
যার কারনে ওহ ছুটে চলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে।

*

ভোর 5 টা বাজতেই চোখ পিট পিট করে তাকালো ঝিল। লম্বা হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে নিলো। পাশে অভিনব কে বসে বসে ঘুমাতে দেখে খানিক টা চমকে গেল।
অভিনব কে ডাকার আগেই ফোনের এলাম বেজে উঠলো।
অভিনব হালকা চোখে তাকাতেই দেখলো ঝিল উঠে গেছে।
ঝিল কে দেখে লম্বা এক হাসি দিয়ে বলল
_ গুড মর্নিং।
_ গুড মর্নিং। আপনি বসে বসে ঘুমিয়েছেন কেন ?

_ না মানে আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন আমি যদি পাশে শুইয়ে পরতাম।
আই মিন আপনার

অভিনব কে তুতলাতে দেখে ঝিলের খারাপ লাগলো।
অভিনব ওর কথা ভেবে সারা রাত বসে বসে ঘুমালো।
অভিনবর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
অভিনব ঘড়িতে টাইম দেখে বলল
_ 5 টা বেজে গেছে আমাদের সাড়ে পাঁচ টায় বের হতে হবে।

ঝিল মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। অভিনব ফ্রেস হতে বাথরুমে চলে গেল।
ঝিল মুখ টা ছোট করে রইলো। ইসস ওর জন্য অভিনব এতো টা সাফার করলো ?
পরক্ষণেই মনে পরলো কাল রাতে তো ওরা ছাঁদে বসে বসে গল্প করছিলো।
তাহলে কেবিনে কি করে আসলো ?
ঝিলের ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। অভিনব ফ্রেস হয়ে এসে বলল
_ ঝিল তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসুন।

ঝিলের কানে সে কথা পৌছালো না। ঝিল গভীর ভাবনাতে মগ্ন। অভিনব ঝিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঝিলের দৃষ্টি মেঝে তে।
অভিনব গলা কেশে পরিষ্কার করে নিলো। ঝিলের বাহু তে হালকা করে ধাক্কা মেরে বলল
_ ঝিল কি ভাবছেন ?

ঝিল চমকে তাকালো । অভিনব কে দেখে অপ্রস্তুত হাসলো। অভিনব ভ্রু নাচিয়ে বলল
_ কি ভাবছিলেন ?

_ নাহহ কিছু না।

_ আচ্ছা দ্রুত ফ্রেস হয়ে আসুন।

ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেল। অভিনব দ্রুত রেডি হয়ে লাগলো।
ঝিল বাথরুম থেকে বেরিয়ে ট্রাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
_ অভিনব একটা কথা জিঙেস করার ছিলো ।
_ হুমম বলুন।

_ না মানে আমরা তো ছাঁদে ছিলাম। তাহলে এখানে

অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে নিলো। ঝিল মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। অভিনব ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল
_ আমি ই নিয়ে এসেছি। আপনাকে দু বার ডেকে ও ছিলাম।আপনি ঘুমের মাঝেই বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন।
তাই কোলে করেই নিয়ে এসেছি।

_ ওহহ। আচ্ছা আরেক টা কথা বলবো ?

_ হুমম বলুন।

_ আপনি আমার পাশেই ঘুমাতে পারেন। আমার কোনো সমস্যা নেই।

অভিনব মিষ্টি এক হাসি দিয়ে নিলো। ঝিল বোকার মতো চেয়ে রইলো। অভিনব কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বলল
_ আমি পাশে ঘুমালে ও কোনো সমস্যা যে নেই এটা আমি জানি।

ঝিল একটু সন্দিহান চোখে তাকালো। অভিনব সরস হেসে বলল
_ আফটার অল কাগজে কলমে কিংবা ধর্ম মতে আপনি এখনো আমার স্ত্রী।

কথা টা অভিনব রসিকতার ছলেই বললো।
তবে অভিনবর মুখে স্ত্রী কথা টা শোনা মাত্র ঝিলের চিত্ত কেঁপে উঠলো।
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। ঠোঁট দুটো যেন ফেঁটে রক্ত ঝরে যাবে।
জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে নিলো ঝিল।
ঝিলের এমন করুন অবস্থা দেখে অভিনব হাসলো।
কেবিন থেকে বের হতে হতে বলল
_ ঝিল তাড়াতাড়ি আসুন।

ঝিলের কোনো মতিভ্রম হলো না। ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। অভিনব ঝিলের কাছে এসে দাঁড়ালো।
তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ ডোন্ট ওরি আমি অধিকার ফলাবো না। আর ট্যুর শেষে আপনাকে মুক্ত করে দিবো।

ঝিল খানিকটা চমকে তাকালো। অভিনব মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল
_ আই মিন ডিভোর্স টা দিয়ে দিবো।
যাতে আপনি ইনসিকিউর ফিল না করেন। ডোন্ট ওরি আমাকে এখন বিশ্বাস করতে পারেন।

ঝিল থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো। অভিনব ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে প্রস্থান করলো।

*

পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেল । তবু ও ঝিলের কোনো মতিভ্রম হলো না। অভিনবর কথাটা এখনো কানে বেজে যাচ্ছে।
অভিনব ট্যুর শেষে ওকে মুক্ত করে দিবে।
এটাই কি স্বাভাবিক নয় ?
তবে ওর কেন এতো কষ্ট হচ্ছে ?
বুকের ভেতর টা কেন এতো জ্বলছে? ওহ তো এটাই চায়।
যে বিয়ে টা ওদের ভাগ্যের পরিহাসে হয়েছে।
যে বিয়েটা ওরা কেউ ই মেনে নেয় নি সেটার জন্য এতো কেন কষ্ট হচ্ছে ওর ?
চোখ দুটো জ্বলছে , কান্না গুলো গলায় দলা পাকিয়ে আছে।
ভেতর থেকে বের ও হচ্ছে না । আর না শান্তি দিচ্ছে।
অভিনবর মুখ টা মনে হতেই ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে সব ভেঙে ফেলতে।
কেন কেন ডিভোর্স এর কথা বলে গেল অভিনব ?
ঝিলের মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না ওর।
বেডে থম করে বসে পরলো। অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো।
চুল গুলো খামচে ধরলো। চোখ বুঝে ডুব দিলো অতীতের স্মৃতি গুলোতে
ওদের বিয়ে , অভিনব কে ভয় পাওয়া। সব কিছু ভাবতেই ঝিলের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
এই দেড় বছরে কেন মনে পরলো না অভিনব কে ?
তবে কি দুদিনেই মায়ায় পরে গেছে ওহহ ?
এর উত্তর ওর কাছে নেই। খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে অতীতে ফিরে গিয়ে সেই সময় টা কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে।
তবে সে উপায় যে নেই । সময় আর নদীর স্রোত প্রবহমান।
যা চলে তো যায় , তবে আর ফিরে পাওয়া যায় না।

_ ঝিল এভাবে বসে আছেন কেন? শরীর খারাপ লাগছে ?

ঝিলের কানে অভিনবর ডাক পৌছাতেই ঝিল থতমত খেয়ে গেল।
নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলল
_ না এমনি আর কি।

_ সময় নেই প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন নাস্তা করতে হবে তো ?

ঝিল মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। দ্রুত চুল ঠিক করে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে নিলো।
অভিনব সরু চোখে তাকিয়ে আছে দেখে ঝিল কাঁচুমাচু করতে লাগলো।
অভিনব কোনো কথা না বলে ঝিলের কাছে এসে কয়েকটা বেবি হেয়ার বের করে নিয়ে কানের কাছে গুঁজে দিলো।
অভিনবর হাতের কোমল স্পর্শ পেতেই ঝিল কেঁপে উঠলো।
আবেশে চোখ বুজে নিলো। অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে গেল পুরো শরীর।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ নাও পারফেক্ট। আপনার কোনো মেকআপের প্রয়োজন নেই।
এমনি তেই মিষ্টি লাগছে।

অভিনবর কথাতে ঝিলের লজ্জা লাগলো। ঝিল খানিকটা তুতলিয়ে বলল
_ চলুন।

অভিনব ঝরা হেসে সম্মতি জানালো ।

হ্যাপি জার্নি
কাল আমরা জামতলা সি বিচ ঘুরবো ইনশআল্লাহ 😍
কমেন্টে সুন্দরবনের সন্ধ্যার কিংবা ভোরের একটা ছবি দিয়ে দিবো ।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_20

কনকনে শীতের মাঝে লঞ্চের ছাঁদে বসে আছে সবাই। উদ্দেশ্যে নাস্তা করা । তার আগে সবাই চা কফি খাচ্ছে। অভিনব তার স্পেশাল হাতের কফি বানিয়ে এনেছে। তাতে সুখময় চুমুক দিচ্ছে ঝিল। সূর্য এখনো উঠে নি। চার পাশে কুয়াশা আর কুয়াশা ।
অভিনব এক পাশে দাঁড়িয়ে ঝিলের অম্রিতর মতো স্বাদ নেওয়া কফি কাঁপের চুমুক দেওয়া ক্লিক করে নিলো ।
বেশ ভালো হাত সাফাই করতে পারে অভিনব ।
এই যে এতো গুলো ছবি তুলেছে ঝিলের, তার কিছুই জানে না ঝিল।
অভিনব আপন মনেই হাসতে লাগলো। সবাই কে নাস্তার টেবেলে বসানো হলো। আজকে সকালে আইটেম হচ্ছে ভাত। যা দেখে ঝিল নাক কুঁচকালো। অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ ভাতের সাথে কিন্তু হরেক রকমের ভর্তা থাকছে।

মুহুর্তেই ঝিলের চোখ চকচক করে উঠলো। একেই বোধহয় বলে বাঙালি। বাঙালি হচ্ছে ভর্তার পাগল। অভিনব এর আগে এসে বাঙালি রেসট্রন এ ভর্তার আইটেম খেয়েছিল। তারপর থেকে ওর ও প্রিয় হয়ে উঠেছে।
সবাই কে নাস্তা দেওয়া হলো। ভাতের সাথে আছে অনেক রকমের ভর্তা ।
আলুর ভর্তা , বেগুন ভর্তা , চিংড়ী ভর্তা , বাদামের ভর্তা , কাঁকড়া ভাজি আর ডিমের ঝুরি।
বেগুনের ভর্তা ঝিলের পছন্দ নয়। তাই ওহ সেটা খেল না।
অভিনব বেশ তৃপ্তি করে খেল। তবে সকাল হওয়াতে ঝিল তেমন একটা খেতে পারলো না। সকাল সাড়ে ছয় টা বেজে গেছে। শাকীল এসে অভিনবর পাশে বসলো। ঝিল হালকা হেসে স্থান ত্যাগ করলো। এই সব ছেলেদের আড্ডা তে থেকে লাভ নেই ওর। কোন প্রশ্নে ফেঁসে যাবে কে জানে ।

শাকীলের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো অভিনব। শাকীল জানালো কটকা আর জামতলা সি বিচ দুপুরে যাওয়া হবে। মাঝে আর ও কিছু স্থানে নামানো হবে।
অভিনব কিছুক্ষণ ভেবে বলল
_ তাহলে তো আমরা করমজলেই নাইট হোল্ড করতে পারতাম।

শাকীল ও মাথা ঝেকে সম্মতি জানালো। হয়তো কটকার কাছাকাছি নাইট হোল্ড করা টা বেশি সেফ ছিলো।
অভিনব আর কথা বাড়ালো না। ঝিল মেয়েলি আড্ডা তে মজে রয়েছে। তারা কিছু একটা খেলছে। অভিনবর বেশ আগ্রহ হলো।
কিন্তু চার পাঁচ টা মেয়ের সামনে একা একা থাকা টা লজ্জা জনক তাই আর সে দিকে আগালো না।
ঝিল কে ইশারা করে বলল ওহহ ছাঁদে যাচ্ছে। ঝিল প্রতিউত্তরে মুচকি হাসলো। সূর্যটা একটু একটু করে দৃশ্যমান হচ্ছে। খুব মনোরম পরিশেষ । খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে সবাই নিচে চলে গেছে।
আর তাই ছাঁদের দিক টা একদম শুনশান। অভিনবর বেশ ভালো লাগলো। প্রান ভরে শ্বাস নিলো।
মনে হচ্ছে এই গাছ পালা ওর চেনা। তবে দূর দূরান্ত থেকে গাছ গুলো চেনা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে শুধুই সবুজের সমারোহ। আকাশের দিকে তাকাতেই এক চিলতে হাসি ফুটলো। কুয়াশা গুলো শিশির হয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে যাচ্ছে। তার ছিটে ফোঁটা অভিনব নিজের মধ্যে ও অনুভব করলো। ইসস বৃষ্টি হলে নেহাত ই মন্দ হতো না।
তবে ফ্রেবুয়ারি মাসে বৃষ্টির দেখা মেলা ভার।
মাথার উপর দিয়ে গাংঙচিল উড়ে যাচ্ছে। সুন্দরবনের নদী গুলো হলো মিঠা পানি আর নোনা পানির মিলনস্থল।
বঙ্গোপসাগরের সাথে হওয়ার দরুন এই রকম অবস্থা ।

সুন্দরবনের স্বাদুপানি জলাভূমির বনাঞ্চল বাংলাদেশের ক্রান্তীয় আদ্র-সপুষ্পক বনের অন্তর্গত। এধরনের বন নোনাপানিযুক্ত জলাভূমির উদাহরণ। স্বাদুপানির জীবমন্ডলের পানি সামান্য নোনা এবং বর্ষাকালে এই লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস পায়, বিশেষ করে যখন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানির কারণে নোনাজল দূর হয় এবং পলিমাটির পুরু আস্তরণ জমা হয়। আর তারপর ধীরে ধীরে গঠিত হয় চর।
কিছুদিন আগে এক চর গড়ে উঠেছে। যে চরের নাম বঙ্গবন্ধু চর। ছাঁদে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো অভিনব।
মাহেরা কে দেখে এক ফালি হাসলো অভিনব। মাহেরা উজ্জ্বল মুখ টা প্রশস্ত করলো। যেন বিশ্ব জয় করে নিয়েছে। অভিনবর পাশে এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। অভিনব কোনো কথা বলল না। মাহেরা নিরবতা ভেঙে বলল
_ এখানে কি করছো ?

_ এমনি সকাল টা কে অনুভব করতে আসলাম । তুমি ?

_ বাহহ খুব ভালো তো। আমি তো তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসলাম।

_ আচ্ছা। কিছু দরকার ছিলো ?

_ উহুহম। এমনি আসলাম তোমার সাথে কথা বলতে।

অভিনব ঝরা হাসলো। মাহেরার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। মাহেরা জানালো তার বাবা একজন পলিটিশিয়ান। আর মা কলেজের প্রফেসর।

অভিনব এক ফালি হেসে বলল
_ আমি ও লেকচারার ছিলাম। বাট পড়ানো টা বেশ মুশকিল মনে হয়েছে।

_ আচ্ছা। মেয়েরা বুঝি লেকচার দেওয়ার সময় তাকিয়ে থাকতো।

_ খানিকটা তেমনি।

দুজনেই এক সঙ্গে হেসে উঠলো। মাহেরা হাসতে হাসতে অভিনবর গাঁয়ে এসে পরছে। অভিনব সে দিকে লক্ষ্য করে একটু সরে দাঁড়ালো। কিন্তু মাহেরা আবার কাছে চলে আসছে।
অভিনবর অস্বস্তি হতে লাগলো। তবে মাহেরা বেশ আনন্দ সহিত কথা বলে যাচ্ছে।
অভিনব সরাসরি বারন ও করতে পারছে না। পেছন থেকে কিছু পরার আওয়াজে অভিনব পেছন ঘুরে তাকালো।
ঝিল চালাকি করতে পারলো না। অভিনব স্পষ্ট ঝিলের কুর্তি দেখতে পেল। মাহেরা বক বক করেই যাচ্ছে। অভিনব এক পর্যায়ে বলল
_ আচ্ছা চলো নিচে যাই , দেখি সব কিছু কতদূর।

মাহেরা কিছু একটা ভেবে বলল
_ আচ্ছা চলো।

নিচে নামার সময় অভিনব ,অভিনয় করে বলল
_ ওহহ হো ক্যামেরা টা রেখে এসেছি। তুমি যাও আমি নিয়ে আসছি।

মাহেরা মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। অভিনব দরজার আড়াল থেকে টেনে বের করলো ঝিল কে।
ঝিলের চোখ দুটো টলমল করছে। অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ঝিল যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো।
অভিনব না বোঝার ভান করে বলল
_ এখানে কি করছেন ?

ঝিল থতমত খেয়ে গেল। অভিনব আবার প্রশ্ন ছুঁড়লো। ঝিল চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো। লম্বা করে দম ফেলে বলল
_ এমনি।

অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ ওহহ।

অভিনব ঝিল কে ছেড়ে দিয়ে নিচে নামতে লাগলো। ঝিল ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো। দু ফোঁটা অশ্রু ও গড়িয়ে পরলো। হঠাৎ হেচকা টানে ঝিল চমকে উঠলো। অভিনব ঝিলের দু বাহু ধরে দরজার কাছে চেপে ধরলো।
ঝিল ভয়ার্ত চোখে তাকালো। অভিনব এক দৃষ্টি তে ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ঝিলের চোখের পাপড়ি গুলো নড়ছে। অভিনব লম্বা করে হেসে ঝিল কে ছেড়ে দিলো।
ঝিল নিজেকে ঠিক করতে লাগলো। অভিনব রুমাল বের করে ঝিলের চোখের পানি মুছে দিলো। ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
অভিনব শান্ত স্বরে বলল
_ জেলাস হচ্ছেন ?

ঝিল শুকনো ঢোক গিলে নিলো। অভিনব আর প্রশ্ন না করে বলল
_ হাসবেন্ড কে অন্য কারো সাথে দেখলে যে কেউ ই জেলাস হয়।

_ অভিনব।

_ ভুল কিছু বলেছি ?

_ আপনি এসব

_ আপনি প্রেমে পরে যাচ্ছেন ঝিল। গভীর প্রেমে পরে যাচ্ছেন।

অভিনব এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না । ঝিলের বুকের ভেতর ধীম ধীম শব্দ হচ্ছে। অভিনব কি বলে গেল ?
সত্যি কি ওহ প্রেমে পরে গেছে ?
যে সম্পর্ক টা সম্মতি ছাড়াই তৈরি হয়েছিল। সে সম্পর্ক টা কে গ্রহন করতে চাচ্ছে ওহ ?
অভিনবর কথা মনে হতেই ঝিলের চিত্ত কেঁপে উঠলো।
এ কি হচ্ছে ওর ? সত্যি কি ওহ জেলাস ফিল করছিলো?

*

তারপর আর অভিনবর সাথে ঝিলের কথা হয় নি। তবে লঞ্চ থেকে বোর্ট এ নামার সময় কোথা থেকে যেন অভিনব এসে হাজির। অভিনব কে এতো টাই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে যে মনে হচ্ছে কিছুই হয় নি। ঝিল ফাঁকা ঢোক গিলে অভিনবর হাতে হাত বাড়িয়ে দিলো।
অভিনব যত্ন সহকারে ঝিল কে বোর্টে নামিয়ে নিলো। একি ভাবে আগলে রইলো। এমন ভাবে এক হাতে জড়িয়ে ছে যে কোনো মাছি ও গলতে পারবে না।
প্রথমে ঝিলের অস্বস্তি হতে লাগলে ও পরে বেশ ভালোই লাগলো। বোর্টের মধ্যেই ঝিল স্বাভাবিক হয়ে গেল।
বোর্ট এর একদম কর্নারে অভিনব দাঁড়িয়ে রইলো। তা দেখে ঝিলের কি রাগ। আসলে অভিনব এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছে যে একটু হেরফের হলেই সোজা পানিতে।
অভিনব ঝিল কে আশ্বস্ত করে বলল
_ এই কর্নারে অনেক মজা। আপনি ভয় পাবেন না। পরে যাবো না আমি।

কিন্তু ঝিল মানতে নারাজ। সে অভিনব কে নামিয়েই ছাড়লো। কিছু মুহূর্ত পর আবার অভিনব কর্নারে দাঁড়ালো।
ঝিল রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো। অভিনব মেকি হাসি দিয়ে নেমে পরলো। ঝিলের দিকে ফিরে বলল
_ আপনি কর্নারে দাঁড়িয়ে দেখুন অনেক মজা।

_ না বাবা আমার দরকার নেই ঐ সব। পরে ট্যুর এ এসে প্রান টা না চলে যায়।

_ আরে দারান ই না।

_ উহহুহ

_ ঝিল দাঁড়াতে ই হবে।

অভিনব ঝিল কে এক প্রকার টেনে দাঁড় করালো। ঝিল কাঁপতে লাগলো। অভিনব রাগি ফেস করে বলল
_ আমার উপর বিশ্বাস আছে না ?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব হেসে ঝিলের দু বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ঝিল কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো দু বাহু ধীরে ধীরে মেলে দিতে।
ঝিল ধীরে ধীরে মেলে দিলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা শ্বাস নিলো।
পিউর অক্সিজেন স্বরনালি তে পৌছাতেই যেন অদ্ভুত শান্তি অনুভব হলো।
ঝিল ওহহ হো বলে চিৎকার করে উঠলো। এতো সুন্দর অনুভূতি, ওহ ভাবতে ওহ পারে নি।
অভিনবর দিকে তাকিয়ে কৃতঙ্গতার হাসি হাসলো। অভিনব এক সময়ে ঝিল কে নামিয়ে দিল।
ঝিল আবার বায়না করলো। কিন্তু অভিনব শুনলো না।
কারন ঝিল বেশি উৎসাহিত হয়ে পরেছে। নিজের প্রতি ব্যালেঞ্জ নেই এখন।

কিছুক্ষণ পর বোর্ট টা একটা চরের কাছে এসে থামানো হলো। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আফরা পরে গেল।
তা দেখে সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। মাহেরা হাসতে হাসতে আফরা কে উঠালো।
আসলে এরা এইরকম জঙ্গলে ও কেন যে হিল পরে আসে।

ঝিল কিছু না বলে নামতে লাগলো। কারন ওহ সু পরেছে। তবু ও অভিনব ওকে সাহায্য করলো।
চারদিকে বালু আর বালু , চর টাকে ও বিচের মতোই লাগছে। একটু দূরে ঘন জঙ্গল ।
আফরা বেচারি জুতো হাতে হাঁটতে লাগলো। কারন বালিতে পা ডেবে যাচ্ছে।
ঝিল মিটমিট করে হাসছে। অভিনব নির্দেশক এর কাছ থেকে জানতে পারলো এটা নাকি ডিমের চর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here