ধূসর রঙের প্রজাপতি পর্ব ২৪+২৫+২৬

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_24

লঞ্চে এসেছে বেশ অনেকক্ষণ। সবাই সাওয়ার নিতে গেলে ও ঝিল এখনো যায় নি। রেলিং ধরে এক দৃষ্টি তে চেয়ে আছে। আজ কে মনটা বেশ ফুরফুরে । বোর্টে বলা অভিনবর কথা গুলো এখনো কানে বেজে চলেছে। আচ্ছা ঝিলের মতো কি অভিনবর মনে ও অনুভূতি কাজ করছে ?
নাম না জানা অনুভূতি টা কি একটু একটু করে গাঢ় হচ্ছে ?
নাকি অভিনব শুধু ই তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে । আদৌ কি অভিনবর ছোট ছোট কেয়াল গুলো কে কোনো নাম দেওয়া যায় ? নাকি বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব বোধ ধরা যায়। ঝিলের উত্তর মিললো না। তবু ও মনের গহীনে ঠান্ডা হীম শীতল বাতাস বয়ে চলেছে। মেঘ ছাপিয়ে যেমন রঙধনু উঠে ঠিক তেমনি এক অনুভূতি।
ঝিল জানে না কেন তার এতো সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে। প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। খোলা আকাশে ধূসর রঙের প্রজাপতি হয়ে হারাতে চাইছে। আচ্ছা ওহ হারালে অভিনব কি ওকে খুঁজবে ?
নাকি মাহেরার সাথে তলপি তপলা গুটিয়ে সংসার করবে। ঝিল আনমনেই হেসে উঠলো। অভিনব তাকে ধরে বলেছিলো সে অন্য কাউকে স্পর্শ করবে না। অদ্ভুত ভালো লাগায় সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ চমকে গেল। কেন যেন অভিনবর জন্য দু এক লাইন প্রেম বাক্য গাইতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা ওহ কি গাইবে দু এক লাইন ?
মতিষ্কের সাথে কিছু টা স্নায়ুযুদ্ধ করে নিজেকে ধাতস্থ করলো দু এক লাইন গাইবে।
কিন্তু কারো পদশব্দ শুনে হৃদয় বাকানো অনুভূতি গুলো ঠুস করে ভেঙে গেল। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
_ কে ?

_ আমি অভিনব।

_ ওহহ। হঠাৎ এখানে চলে আসলেন যে ?

_ কেন আসতে পারি না ?

ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে বলতে উহহু আসতে পারেন না। এই যে আপনি আমার হৃদয় বাঁকানো অনুভূতি গুলো ফিকে করে দিলেন। মনের কোনে জমিয়ে রাখা সুখ টুকু কেড়ে নিলেন। এর জন্য আপনাকে কঠিন তম শাস্তি দেওয়া হবে। সে শাস্তি টা হলো , ঝিলের মন শাস্তি টা খুঁজে পেল না। ফোঁস করে ভারী নিশ্বাস ফেলে বলল
_ না মানে অবশ্য ই আসতে পারেন।

_ আচ্ছা সে যাই হোক। আজ কি প্ল্যান করেছেন ?

_ আমি তো কোনো প্ল্যান করি নি।

_ তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফাঁকা হাওয়া গিলছেন কেন ? পেটে কি ক্ষিদে নেই নাকি ?

_ আসলেই তো আমার তো বেশ ক্ষিদে পেয়েছে।

অভিনব বোকার মতো চেয়ে রইলো। এই মেয়ের ক্ষিদে পেয়েছে তা ওর ই খেয়াল নেই। কি ভয়ঙ্কর বিষয়। অতি শোকে পাগল হয়ে গেল নাকি ? কিন্তু শোক টা কিসের ?
অভিনবর ভাবনা তে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে ঝিল চলে গেল ।
কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলল
_ অভিনব আমি সাওয়ার নিতে যাচ্ছি। আমাকে রেখে যাবেন না প্লিজ। ক্ষিদে পেলে পেটে বালিশ চেপে রাখুন।

ঝিলের শেষ কথাটা অভিনবর কানের পাশ দিয়ে গেল। ক্ষিদে পেলে মানুষ সর্বোচ্চ খেতে পারে। তাই বলে পেটে বালিশ ধরে রাখা যায় ?

*

ঝিল সাওয়ার নিয়ে এসে চুল ঝারা দিতেই সমস্ত চুলের পানি গিয়ে পরলো অভিনবর মুখে।
অভিনব বেডে আধসোয়া হয়ে ফোন স্ক্রল করছিলো। ঝিল এতো বড় অন্যায় করে ও চুল মুছে যাচ্ছে। অভিনবর হাত থেকে ফোন টা পরে গেল। এক দৃষ্টি তে ঝিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। সদ্য সাওয়ার নেওয়া ঝিলের চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পরছে। ঘাড়ের এক অংশ তে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। অভিনবর খুব হিংসে হলো। পানি কনা গুলো কেন ঝিলের গায়ে লেপ্টে আছে ?
এটা মহা অন্যায়। কারন ঝিলের গায়ে লেপ্টে থাকার অধিকার এই পানি কনার নেই। অভিনবর চোখ গেল ঝিলের কোমল অধরের দিকে। সদ্য ভেজা গোলাপের পাপড়ির মতো লাগছে। অভিনবর চিত্ত কেঁপে উঠলো। ভেতর থেকে টান অনুভব করছে। অধিকার বোধ টা খুব করে টানছে। অভিনব লম্বা দম ফেলে বের হতে নিলো। কিন্তু ঝিলের কন্ঠ যেন মাদকতা ছড়িয়ে দিলো।
_ এই যে শুনুন।

ঠিক যেন সদ্য বিবাহিতা নারী তাঁর স্বামী কে ডাকছে। বুকের ভেতর ধিম ধিম আওয়াজ হতে লাগলো। সব কিছু ছাপিয়ে অভিনব এক অন্যায় করে ফেললো। ঝিলের কাছে এসে এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে কোমল ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে দিলো। ঝিলের কি হলো তা বলা দায়। ঝিল খামচে ধরলো অভিনব শার্ট। চোখ দুটো আবেশে বন্ধ করে নিলো। অভিনব ও যেন নিজের মাঝে নেই। ঝিল কে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটের দিকে আগালো। হঠাৎ অভিনবর মাথায় আসলো সে কি করতে যাচ্ছে। ঝিল কে ছেড়ে দিয়ে বড় বড় পায়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে অভিনব। একি অন্যায় করে ফেললো ওহ। ঝিল ওকে বিশ্বাস করেছে। আর ওহ কি না , অভিনব আর ভাবতে পারছে না। অজানা আশংকা তে বুক টা ভারী হয়ে আসলো। কেউ যেন একের পর এক পাথর চেপে ধরেছে। অভিনবর চোখ দুটো লাল হয়ে গেল। ভীষন রাগ হতে লাগলো। এখনি ঝিলের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে বড় কোনো ঝড় বয়ে যাবে।

ঝিলের ভারী নিশ্বাসের শব্দ কেমন যেন নিস্তব্ধতার সুর তুলে যাচ্ছে। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। একটু আগের ঘটনা টা মনে হতেই ঝিল লজ্জা পেয়ে গেল।
কিন্তু লজ্জা কেন পাচ্ছে ওহ ? ওর তো উচিত ক্রুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে অভিনব কে ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু কেন এমন অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে হিম শীতল করা অনুভূতি। ঝিলের ভাবনার সুতো কাটলো কেবিনের দরজায় খটখট আওয়াজে। ঝিল পেছন ঘুরে তাকিয়ে আবার সামনে ঘুরে রইলো।
অভিনব এসেছে , ঝিল লজ্জা তে নিচু হয়ে রইলো। ওর এই লজ্জা মাখা মুখ কিছুতেই অভিনব কে দেখানো যাবে না।
না হলে সর্বনাশা অনুভূতি গুলো অভিনব ধরে ফেলবে।

_ ঝিল।

অভিনবর আকুতি ভরা ডাক। ঝিলের পিলে চমকে উঠলো। এ ডাক কেন কাছে ডাকছে ?
এ কেমন মাতাল করা অনুভূতি। যার শব্দে হৃদপিন্ড বুক চিরে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে।

অভিনব আবার ডাকলো। বেড শিট খামচে ধরলো ঝিল। অভিনব কোমল হাতে ঝিলের হাত স্পর্শ করলো। ঝিলের যেন সম্মোহন জেগে উঠলো। অভিনবর দিকে নেশাক্ত দৃষ্টি তে তাকালো। তবে অভিনবর দৃষ্টি তখন মেঝে তে।
_ আম স্যরি। আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি । আমি জানি না তখন আমার কি হয়েছিলো। আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না তখন।

_ অভিনব।

অভিনব মাথা উঁচু করে তাকালো। অভিনবর দৃষ্টি দেখে ঝিলের চোখ বিচলিত হয়ে পরলো। এ কোন অভিনব কে দেখছে ঝিল ?
সুন্দর মুখ খানি কেমন লাল হয়ে আছে। চোখে অনুতাপের গাঢ় ছাপ। বিষাক্ত নীল বেদনা যেন ভর করেছে। ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে অভিনব কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু ঝিল তা করলো না। এক গাঢ় অনুভূতি নিয়ে বলল
_ আপনি এমন বিচলিত কেন ? আমি বিষয় টা বুঝতে পেরেছি। আপনি স্বাভাবিক হোন। দয়া করে এমন করে তাকাবেন না । আমার খারাপ লাগে।

ঝিল আর কিছু বলতে পারলো না। কেবিন থেকে বের হতে হতে বলল
_ ক্ষিদে পেয়েছে অভিনব দয়া করে আসুন। না হলে আপনাকে রেখেই গ্রোগাসে গিলে নিবো। তখন আমাকে দোষ দিলে হবে না কিন্তু।

অভিনব কোনো উত্তর দিলো। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে স্মিত হাসলো। মেয়েটা তাকে পাগল করে দিবে। বুকের ভেতর পাথর টা যেন সরে গেল। বিষাক্ত নীল বেদনা নিমেষেই উধাও। ক্যামেরা থেকে ঝিলের দারুন একটা ছবি বের করলো।
ঘুমন্ত ঝিলের বাচ্চা দের মতো ঠোঁট উল্টানো মায়া ভরা মুখ।
ঝরা হাসলো অভিনব। মেয়েটাকে আগলে রাখতে চায় ওহ। খুব করে চায় বিচ্ছেদের নীল ছায়া কাঁটিয়ে দিতে।

*

” অতিরক্ত খাওয়া হয়ে গেছে অভিনব। এখন মনে হচ্ছে আমি উঠতেই পারবো না”

_ অনেক বেশি খেয়েছেন এটা কি সত্যি ?

_ অবশ্যই অনেক বেশি খেয়েছি খিচুড়ি, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ ভাঁজা, ফাইস্যা মাছ, রাশিয়ান সালাত আর তারপর আবার কোল্ড ড্রিঙ্কস।
ওহহ হো ডিমের কারি ও তো খেয়েছি।

_ বেশি বকছেন। প্রতি টা আইটেম নিয়েছন কতোটুকু করে তার খেয়াল আছে ?
হ্যাঁ তুলনা মূলক ভাবে আজ খেয়েছেন বেশি। তাই বলে এতো টা ও খাওয়া হয় নি যার জন্য হাঁটতে পারবেন না। চলুন, রোদ বেড়েছে কেবিনে যাবো।

_ একটু পরে যাই ?

_ উহুহহহ। হাঁটা চলা করলে খাবার হজম হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চলুন , তাছাড়া আজ কে আবার আস্ত খাসির বারবিকিউ হবে । পেট পুরে খেতে হবে না ?

_ আমার মনে হয় না খেতে পারবো।

_ কানের নিচে খাবেন। চলুন তাড়াতাড়ি, টাকা গুলো দিচ্ছি কি খাবার না খাওয়ার জন্য ?

_ তো খেতে না পারলে কি করবো ? আমি তো আর আপনার মতো খাদক না যে এক বেলায় তিন বেলার খাবার খেয়ে আবার খেতে বসবো।

_ প্রচন্ড কথা বলছেন আপনি। আসবেন নাকি কোলে করে নিয়ে যাবো।

ঝিল চকচকে চোখে তাকিয়ে বলল
_ তাহলে তো কোনো কথা ই নেই। নিন কোলে তুলে নিয়ে যান। আসলেই হাত পা ব্যথা হয়ে আছে।

অভিনব দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। মেয়েটা এতো অলস যা ধারনার বাইরে। অভিনব চরম এক বুদ্ধি বের করলো।

_ ওহহ হো ঝিল আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম মাহেরা আর আফরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা কি ভাববে বলুন তো ?
ইসস একদম ই মনে নেই।

অভিনব কপালে হাত দিতে দিতে চলে গেল। ঝিল হা হয়ে বসে রইলো। ব্যপার টা কি হলো ?
অভিনব কি সত্যি ই মাহেরার সাথে ঢলাঢলি করতে যাবে। হায় হায় কপাল পুরলো তাহলে। ঝিল কোনো মতে চেয়ার থেকে উঠে ভো দৌড় দিলো।
অভিনব বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ এভাবে হাফাচ্ছেন কেন ?

_ না মানে রোদ বেড়ে গেছে তো তাই।

অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। ঝিল বির বির করতে করতে হাঁটা লাগালো।

অভিনব, মাহের , শাকীল আর অমিত কে নিয়ে কিচেনে চলে আসলো। সেইফ এর সাথে কথা বলে সমস্ত মসলা পাতি নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো। আসলে বারবিকিউ টা ওরা সবাই মিলে করতে চায়। এতে করে ভ্রমনের আলাদা এক স্বাদ পাওয়া যাবে। সুন্দরবনে আস্ত খাসির বারবিকিউ ভাবা যায় ?
অভিনব মৃদু হাসলো। কারন ঝিল তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। অভিনব কে দেখে বোঝার উপায় নেই সে আমেরিকান। তার কাজে কর্মে তাকে ভেতো বাঙালি বলা যায়। গ্রামের সবাই এক সঙ্গে হয়ে পিকনিক খেললে যেমন মজা হয় । ঠিক তেমনি আমেজে ভরপুর লঞ্চ টা। সবাই হৈ হুল্লরে মেতে উঠেছে।মাহেরা তো গালে হাত দিয়ে শুধু অভিনব কেই দেখে যাচ্ছে। ফর্সা মুখ টা দেখেই তার মায়া হলো। কেমন লাল হয়ে আছে। ইসস সে যদি শাড়ি পরে থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই আঁচল দিয়ে অভিনবর মুখ টা মুছে দিতো।
আফরা মাহেরার হাত ঝাকাচ্ছে বার বার। কিন্তু মাহেরার তো সে দিকে ধ্যান ই নেই।
_ হ্যাঁ রে আফরা । একটা মানুষ কি করে এতো সুন্দর হয় ?

_ তুই পাগল হয়ে গেছিস ? অভিনব ভাইয়ার সাথে ঝিলের নিশ্চয়ই কোনো সম্পর্ক আছে।

_ চুপ ফাজিল মেয়ে। অভিনব কে দেখেছিস ঝিলের সাথে ঢলাঢলি করতে? ওরা শুধুই বন্ধু ।

_ তুই দেখিস নি ঝিলের কতোটা কেয়ার করে ওহ ?

_ দেখ আফরা আমি অত শত বুঝি না। অভিনব একজন আমেরিকান । ওহ নিশ্চয়ই ঝিলের মতো কাউকে পছন্দ করবে না ?

_ মাহেরা ঝিল বিদেশী দের মতো স্মার্ট নয় ঠিক ই তবে এটা ওহ সত্য ওহ কিন্তু ক্ষেত নয়।

মাহেরা উঠে দাঁড়ালো। গলায় সামান্য কাঠিন্য এনে বলল
_ তুই কি বলতে চাস আমি ঝিলের থেকে কম সুন্দরী ?

আফরা ফোঁস করে দম ফেললো। এটা সত্যি যে ঝিলের থেকে মাহেরা বেশি সুন্দরী। তাই বলে ঝিল ও কোনো ফেলনা সুন্দরী নয়। আর ভালোবাসার ক্ষেত্রে আদৌ কি সৌন্দর্য মূল্য পায় ?

_ আমি মানছি যে তুই ঝিলের থেকে অধিক সুন্দরী । তবে

_ তুই তোর কথাতেই পরে থাক । অভিনব নিশ্চয় ই আমাকে পছন্দ করবে। দেখিস নি কেমন হেসে হেসে কথা বলে। আর আমি ও আট বছর আমেরিকা তে ছিলাম। একটু হলেও বুঝি এইসব।

_ কিন্তু

_ স্টপ তুই এটাই বলবি তো ওরা এক কেবিনে আছে ? আমার তাতে যায় আসে না। আজকাল লিভিং তো ফ্যাশন হয়ে গেছে। তাছাড়া ঝিল যে ধাচের মেয়ে ওহ এইসব লিভিং করবে না।
আমি ড্যাম সিউর ওদের মাঝে তেমন কোনো রিলেশন নেই।

আফরা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। মাহেরা আফরার মাথায় গাট্টা মেরে বলল
_ আরে গাঁধা , লঞ্চে বসে কেউ সর্বোচ্চ ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খাবে।
তুই অনেক বেশি ভাবিস। আমার সুন্দর মন টাকে মুহূর্তেই বিষিয়ে দিলো।
ধ্যাত

মাহেরা চলে গেল। আফরা ও নিজেকে দু চারটে গালি মেরে স্থান ত্যাগ করলো।

অভিনব নাইফের বেশ ভালো ব্যবহার পারে। খাসির উপরের অংশ টাকে বেশ সুন্দর করে কাঁটলো । যাতে করে মসলা ভেতরে প্রবেশ করে। ঝিল অবাক হয়ে একটা প্রশ্ন করলো।
_ আপনি এটা ও পারেন ?

_ কেন ? নাইফ ইউস করতে বুঝি শুধু আপনি ই পারেন ?

_ তাহ নয় তবে

_ চিন্তা মুক্ত থাকুন। আমি শুধু মাত্র ট্যুরে ই কাজ করি। বাসাতে এক গ্লাস পানি ঢেলে ও খাই না।

অভিনবর কথাটা ঝিল বুঝলো না। মাদুরে পা দুটো মেলে দিয়ে বসলো। অভিনব মাহেরের দিকে এগিয়ে গেল। বেচারা মসলা নিয়ে বেশ ঝামেলা তে পরেছে। অমিত শ্বাস ফেলে বলল
_ আমি মিক্স করছি। তোরা শুধু পরিমাপ করে মসলা দে।

মাহের মেকি হাসি দিয়ে অভিনবর দিকে তাকালো। অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ অনিয়ন পেস্ট , গার্লিক পেস্ট , জিনজার পেস্ট , জিরা পাউডার , ধনিয়া পাউডার দিয়ে একটু মিক্স করো।

অমিত অভিনবর কথা মতো সব দিয়ে একটা চামচ দিয়ে মিক্স করলো। কিন্তু চামচ দিয়ে ঠিক ঠাক মিক্স হচ্ছে না। এ দিকে এই সবে হাত ডুবালে জ্বালা করবে।অভিনব পকেট থেকে গ্লাভস বের করে দিলো। অমিত গ্লাভস হাতে দিয়ে মিক্সড করলো।

_ আচ্ছা এবার চিলি ফ্লেক্স দাও। আর হলুদ গুড়ো দাও।

অমিত মসলা মাখাতে লাগলো। অভিনব সরিষার তেল দিয়ে দিলো। তারপর লেবুর রস , তন্দুরি মসলা , টক দই , সস , গরম মসলা , লবন দিয়ে মিক্সড করতে বললো।

অমিত সমস্ত মসলা খুব ভালো করে মিক্সড করলো। তারপর আস্ত খাসির উপর সুন্দর করে মাখিয়ে দিলো।

তারপর দুটো খাসি নিয়ে গেল কিচেনে। এটা কটকা তে নিয়ে বারবি কিউ করা হবে।
ঝিল মৃদু হেসে অভিনবর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। অভিনব গলায় রসিকতা এনে বলল
_ আপনাকে রান্না শিখতে হবে ঝিল।

_ কেন ?

_ না হলে শশুর বাড়ি যাবেন কি রে ?

ঝিল চোখ পিট পিট করে তাকালো। অভিনব এক গাল হেসে ঝিলের দিকে তাকালো। ঝিলের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল
_ আপনি খুব বাজে ঝিল। বরের একদম সেবা করেন না।
মানছি আমাদের বিয়ে টা এক্সিডেন। কিন্তু এখন অব্দি তো আপনি আমার ই বউ।

ঝিল শুকনো ঢোক গিলে নিলো। অভিনব কি বোঝাতে চাইছে তাকে ?
অভিনব খানিক টা ঝুঁকে নিয়ে বলল
_ আপনি যা ভাবছেন তা বোঝাতে চাচ্ছি না আমি।
আপনি যে জেলাস ফিল করেন সেটাই বলতে চাচ্ছি।
তবে জেলাস ফিল পর্যন্ত ই থেমে আছেন নাকি অন্য কিছু ওহ ?

ঝিল উত্তর দিলো না। দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। অভিনব মৃদু হেসে দু এক লাইন গানের সুর আওরালো। মানসিক শান্তি থাকলে জীবনে অন্য কিছুর প্রয়োজন হয় না।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_25

জেলে পল্লির ছোট ছোট ঘর গুলো দেখতে খানিকটা রূপকথার মতোই মনে হচ্ছে। ছনের ঘরের পাশে গুটি কয়েক মানুষ দাঁড়ানো। আবার কেউ বা নদীতে গোসলে নেমেছে। ঝিলের খুব ইচ্ছে হচ্ছে নদীতে গোসল করার। তবে সে সাঁতার জানে না। খুব মন খারাপ হলো। অভিনব ফটোগ্রাফি করতে ব্যস্ত। ঝিলের রাগ হচ্ছে খুব। ছেলেটার হাতে জোরে চিমটি কেঁটে দিলো। হঠাৎ আক্রমণে অভিনব আহ করে আর্তনাদ করে উঠলো। চিমটি কাঁটা স্থানে হাত বুলিয়ে বলল
_ কি হয়েছে ?

_ সাঁতার কাটবো ।

_ আপনি তো সাঁতার জানেন না।

_ তো তার জন্য আমি পানি তে নামবো না ?

_ আচ্ছা লাইফ জ্যাকেট পরে নামবেন । বাট এই বেবি পিংক রঙের জামা পরে নামা যাবে না।

_ কেন ? বেবি পিংক রঙ টা আবার কি করলো ? আপনাকে তো কামড় দিতে যায় নি। তাহলে সমস্যা কি ?

_ বেবি পিংক পরে পানি তে নামলে গাঁয়ে লেপ্টে থাকবে। আপনি নিশ্চয়ই

অভিনব কে থামিয়ে দিলো ঝিল । এটার কথা মাথাতেই ছিলো না। শুকনো ঢোক গিলে বলল
_ ব্লাক ড্রেস পরে নামবো।

_ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমার পাশাপাশি থাকতে হবে। একদম কোথাও যাওয়া যাবে না।

_ আচ্ছা।

লঞ্চ থামিয়ে দেওয়া হলো। সবাই বোর্টে উঠে বসলো। এবার বোর্ট যাবে কটকা অফিস পাড়। কটকা অফিস পাড় কে কেওড়া রাজ্য ও বলা হয়। কারন এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমানে কেওড়া গাছ।
তাছাড়া হরিনের বাহার তো রয়েছেই। ধারনা করা হয় সুন্দর বনে এক থেকে দেড় লাখ হরিন রয়েছে। বাঘের দেখা না মিললে ও হরিনের পাল দেখে মুগ্ধ হতেই হবে।
পূর্ব সুন্দরবনে শরনখোলা রেঞ্জের কটকা বন্য প্রানীর অভয়ারণ্য খুব কাছ থেকে হরিন দেখা যায়। ভাটার সময় সেখানে দলে দলে হরিন , বন্য শুকুর আর বানর খাবারের খোজে নামে। কটকার টাইগার টিলার প্যারা বনে দেখা যায় হরিনের মেলা।
বোর্ট যখন কোকিল মনি খাল দিয়ে যাচ্ছিলো তখনি দেখা মিললো হরিনের।
খালের পাড়ে খাবার খাচ্ছিলো হরিনগুলো।
পর্যটক দের আনা গোনা পর্যবেক্ষন করছিলো উৎসুক দৃষ্টি তে। সবাই একটু চেঁচামেচি করে উঠলো। গাইড সবাই কে চুপ হতে বললেন। কারন এতে করে পশু পাখি রা ভয় পেয়ে যায়।
আর স্থান ত্যাগ করে। ফলে তাদের দেখা মিলে না আর।

বোর্ট আরেকটু এগোতেই ঝিলের চোখে পরলো কোকিলমনি জঙ্গলের পাড়ে। একটা হরিন পানি খাচ্ছিলো। আর তার থেকে একটু দূরে রোদ্রস্নানে তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে তার চিরশত্রু লোনা পানির কুমির।

ঝিল এক হাতে অভিনব কে খামচে ধরলো। অভিনব ঝিলের দৃষ্টি অনুসরণ করলো। হরিন আর কুমির কে দেখেই বুকের ভেতর চিন চিন ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। হাতের কাছে কিছু নেই ওহ যে হরিন টাকে সরাবে।
ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। যেন চোখ ফেটে এখনি নোনা জল বের হয়ে যাবে। হরিনের মায়া বি মুখ খানা দেখেই কষ্ট হচ্ছে। ঝিল খুব করে চাইছে হরিন টা বেঁচে যাক।

কুমির টা হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠলো। ঝিল চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলো। আতঙ্কে যায় যায় অবস্থা । এ দৃশ্য সে দেখতে পারবে না। অভিনব আলতো হাতে ঝিলের মুখ টা উঁচু করলো। মুহুর্তেই ঝিলের মন ভালো হয়ে গেল । কারন হরিন টা বেঁচে আছে।

হরিনের শিং এ বসে ছিলো এক ধূসর রঙের প্রজাপতি । সে হরিনের নাকে বসতেই হরিন টা লাফিয়ে উঠে। আর তাই কুমির টা হরিন টাকে ধরতে পারে না। অভিনব মৃদু ছন্দে হাসলো। তার জীবনের বেশ কিছু ঘটনা তে এই ধূসর রঙের প্রজাপতি উল্খেযোগ্য । আচ্ছা এই ধূসর রঙের প্রজাপতি টা কি আল্লাহর পাঠানো কোনো বার্তা প্রেরক ?
অভিনব আনমনেই হাসলো। সৃষ্টি কর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করে ঝিলের হাত টা শক্ত করে ধরলো।
প্রতি মুহুর্তে ই চাইছে যেন এই হাত টাকে না ছাড়তে হয়। যে সম্পর্ক টা একটা এক্সিডেন ছিলো। সেটা যেন পরিপূর্ন পায়। ঝিলের সে দিকে খেয়াল নেই। সে লাফাতে ব্যস্ত।

নদীর পাড়ের ঘাস বনে বসে আছে প্রজাপতি। নানান রঙের প্রজাপতি । তবে সমস্ত রঙ কে ছাপিয়ে ধূসর রঙের প্রজাপতি টাই কেন যেন আকর্ষন করছে। রংধনুর মতো প্রজাপতি গুলো যেন তার কাছে ফিকে। আশ্চর্য এক অনুভূতি। সবাই মৃদু স্বরে তালে তাল মিনিয়ে গান শুরু করলো।
তাতে ও এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব হচ্ছে। তবে ইঞ্জিনের শব্দ টা কানে এসে লাগছে। যা এক বাজে অনুভূতি । ঝিল তপ্ত শ্বাস ফেললো। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা কাঠের পুলের মতো দেখতে পেল। বোর্ট টা কাঠের পুলের কাছেই দাঁড় করানো হলো। এটাই অফিস পাড়।
নদীর স্রোত বেশি থাকায় নামতে বেশ সমস্যা হলো। সবাই কে ধরে ধরে নামাতে হলো।
মাহেরা আবার অভিনবর গলায় ঝুলে পরলো। অভিনব মৃদু হেসে মাহেরার হাত ধরে নামিয়ে দিলো।
একে একে সবাই বোর্ট থেকে নেমে গেল।
তবে ঝিলের প্রচন্ড রাগ হলো।
সে একাই নামবে বলে ঠিক করলো।
অভিনব তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে ঝিল কে লক্ষ্য করছিলো। অন্য বোর্টের একটা লোক ঝিলের দিকে হাত বাড়ালো।
ঝিল তো মহা খুশি সে ওহ হাত বাড়িয়ে দিলো।
তবে অভিনব তার রাগি দৃষ্টি রেখে শক্ত করে ঝিলের হাত ধরে নিলো । ঝিল ছুটোছুটি করার চেষ্টা করছিলো। অভিনব ঝিল কে এক হাতে জড়িয়ে বোর্ট থেকে নামলো।
যার জন্য ঝিলের হাতের বেশ কতো গুলো ঘুসি ও খেতে হলো।
তবে ঝিল তো জানে না তার ছোট্ট হাতে ঘুসি অভিনবর কাছে পিঁপড়ার কামড়।

গাইড সহ এজেন্সির লোক কাগজ পত্র নিয়ে ঠিক করলেন।
আসলে প্রতি টা স্পর্ট এই কাগজ পত্র দেখিয়ে অনুমতি নিতে হয়।
সবাই নিদের্শনা পেয়ে হাঁটা লাগালো।

কটকা তে টেলিটকের একটা নেটওয়ার্ক আছে। তাই এখানে 4 জি সার্ভিস পাওয়া যায়। সবার বেশ মন খারাপ হলো। কারন সবার ফোন রিতি মতো মৃত। কেউ ভুলেও ফোন টা বের করলো না। কারন নেটওয়ার্ট নেই। সবাই ক্যামেরা দিয়েই ছবি তুলছে।
এখানে ও কাঠের ট্রেইল রয়েছে। পুরো সুন্দরবন জুড়েই এই রখম কাঠের ট্রেইল তৈরি করা হয়েছে।
কারন সুন্দর বনের বেশি অংশ ই পানি তে ডুবে থাকে। আর পর্যটক রা কাঁদায় মাখা মাখি করতে নিশ্চয় ই সুন্দরবনে আসবে না। তাই এই কাঠের পুল , যার মধ্যে দিয়ে পুরো বন ঘোরা যায়।
অভিনব আর ঝিল পাশা পাশি হাঁটছে । এখানে ও পাখির কিচির মিচির শোনা যাচ্ছে। ঝিলের মনে হলো রাতের পরিবেশ টা আর ও সুন্দর। কারন বনের গহীনে গা ছমছম ভাব। অদ্ভুত শিহরন , সব কিছু মিলিয়ে ভুতুরে অনুভূতি । ঝিল শিউরে উঠলো । অভিনবর দিকে মাথা উঁচু করে তাকালো। এই ছেলের দিকে তাকাতে হলে মাথা উঁচু করতে হয়। ছয় ফিট হওয়ার কী দরকার ছিলো ?
ঝিল তার ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে হাঁটতে লাগলো। মাথার উপরে বড় বড় গাছের সাড়ি। কিছুদূরে দুটো বানর দেখতে পেল। ঝিল ভয়ে চুপসে গেল। গায়ের লোমকূপ পর্যন্ত শিউরে উঠেছে। স্তব্ধ হয়ে অভিনবর পেছনে দাঁড়ালো । আদুরে সুরে বলল
_ আমি আর যাবো না।

_ কেন ?

_ বানর।

_ মাংকি দেখে এতো ভয় পান কেন ? যত ভয় পাবেন ওরা তো ভয় দেখাবে। প্লিজ সাহসী হন। সাধারন বানর দেখে এতো ভয় ইসসস লোকে কি বলবে বলুন তো ?

_ যে যাই বলুক। আমার কিছুই যায় আসে না । আপাতত আমি আর যাচ্ছি না।

_ ওকে না হলে এখানেই পা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন।

ঝিল তব্ধা খেয়ে গেল। অভিনব লম্বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে। এমন কেন ওনি ?

_ এই যে দাঁড়ান আমার জন্য। আমি কি এখানে একা থাকবো নাকি ? আপনি কিন্তু বলেছেন আমাকে সেইফলি ঘুরিয়ে নিবেন। এখন কথার খেলাপ করছেন কেন ?
আমার যদি কিছু হয়ে যায়।

ঝিলের কথা অভিনবর কানে পৌছাতেই অভিনবর পা থমকে গেল। পেছন ঘুরে খানিকটা ছুটে এলো ঝিলের কাছে। ঝিল কে একটা কথা ও বলতে দিলো না। ঝিলের এক বাহু ধরে জড়িয়ে নিলো। ঝিল যেন আকাশ থেকে পরলো। অভিনব রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল
_ একদম কোনো কথা নয়। আপনি বড্ড বেশি বকছেন। আমার থেকে একটু ও দূরে যাবেন না। আসুন , আমার জ্যাকেট ধরে হাঁটুন ।

ঝিল লক্ষী মেয়ের মতো তাই করলো। রোবটের মতো হাঁটতে লাগলো । ছেলেটা হঠাৎ করে আতঙ্কিত হয়ে পরলো কেন ?
অভিনব ছোট শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো । ভেজা পাপড়ি মেলে বলল
_ আম স্যরি ঝিল । আসলে আপনি তখন এমন কথা বললেন যে আমি রেগে গিয়েছিলাম।
দেখুন আমি আপনার দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। আপনার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। প্লিজ ওমন কথা বলবেন না আর।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো । অভিনব দায়িত্ব বোধের কথা টা বললে ও ঝিলের মন ফুরফুরে হয়ে গেল। অভিনবর চোখ বলছে সে ঝিলের প্রতি কেয়ারিং। ঝিলের কিছু হওয়ার কথা কল্পনা ও করতে পারে না।
অভিনব বানর গুলো দেখে ঝিল কে আরেকটু কাছে টেনে নিলো । খুব সুন্দর ভাবে ওরা বানর দের অতিক্রম করে ফেললো।
বালুর বিশাল স্থানে কতো গুলো হরিন দেখা যাচ্ছে। অভিনব ঝিল কে নিয়ে সেখানে গেল। হরিন নাকি কেওড়া পাতা খেতে পছন্দ করে। আর আশে পাশে প্রচুর কেওড়া গাছ। অভিনব তার লম্বা হাত দিয়ে কেওড়া পাতা পারার চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। অবশেষে বালুর বিছানা তে পরে থাকা পাতা গুলো কুড়িয়ে নিলো । ঝিলের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ঝিল কেওড়া পাতা নিলে ও হরিনের কাছা কাছি যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। অভিনব ফোঁস করে দম ফেললো। ঝিলের হাত ধরে হরিনের দিকে এগিয়ে দিলো । হরিন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। অভিনব মৃদু হেসে মুখ দিয়ে চ এর মতো শব্দ করলো । হরিন টা একটু দূর থেকেই পাতা গুলো মুখে নিলো।
ঝিল লাফিয়ে উঠলো। মায়া হরিনের পাশে ছবি তুলতে পারলে বেশ হতো।
ঝিলের ভাবনার অগ্রসর হওয়ার আগেই অভিনব একটা হরিনের বাচ্চা ধরে নিয়ে আসলো । বুকে জড়িয়ে নিলো। ঝিল তো পুরো অবাক। অমিত কে ডেকে বললো ছবি তুলতে। ঝিল সাহস করে অভিনবর পাশে বসলো । অভিনব মৃদু হেসে ঝিলের কোলে হরিনের বাচ্চা টা এগিয়ে দিলো। ঝিলের বেশ কাতুকুতু লাগলে ও বাচ্চা হরিনের মায়া বি মুখ দেখে নুইয়ে পরলো। নরম শরীরে হাত বুলাতে লাগলো। হরিন টা ও ঝিলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে শুকতে লাগলো। অভিনব ফিক করে হেসে দিলো। ঝিলের গাঁয়ের অদ্ভুত এক ঘ্রান যা অভিনব কে মাতাল করে দেয়। কিন্তু এখন সেটা বাচ্চা হরিন কে ও টেনে নিলো। প্রথমে অভিনব ভেবেছিলো কোনো বিশেষ পারফিউম এর ঘ্রান। কিন্তু সেটা হয় নি। ঝিলের সুশ্রী শরীরের নেশাক্ত ঘ্রান ছিলো সেটা । নাকি অভিবর কাছেই সেই মাদকতা ঘ্রান টা চলে আসে।

আনমনেই হেসে উঠলো। অমিত কে ইশারা করে বললো ঝিলের সাথে তার কিছু ছবি তুলে দিতে। অমিত চোখ মেরে সম্মতি জানালো । অভিনব ঝিলের পাশে বসলো। আর অমিত অগোচরে দুজনের দারুন কিছু ছবি তুলে ফেললো।

একজন এজেন্সির লোক সবাই কে এক সাথে জড়ো করালো। কারন জামতলা সি বিচে খাসি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আস্ত খাসির বারবিকিউ করতে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগবে। যেহেতু সবাই জামতলা বিচে গোসল করবে তাই বিভিন্ন নির্দেশ ও দিলেন।
ঝিল ভাবলেশ হীন ভাবে কিছু ভাবছিলো । অভিনব ঝিল কে ধাক্কা মেরে বলল
_ ভালো করে আপনার মাথায় ঢুকিয়ে নিন। না হলে বিপদ , পরে দেখবো সবাই আছে আপনি ই নেই।

_ এই যে শুনুন । সবাই থাকবে সাথে আমি ও থাকবো। আপনার ইচ্ছে হলে আপনি মাহেরা আপির গলায় ঝুলে পরুন। বিশ্বাস করুন গলায় ঝুলিয়ে পুরো সুন্দরবন ঘুরাবে আপনাকে ।

ঝিলের কথাতে অভিনব বড় সড় ঝটকা খেল । মাহেরা কে নিয়ে খোঁটা ও দিচ্ছে এখন। আর কতো কি দেখতে হবে কে জানে। অভিনব চুপ হয়ে গেল। কথা বাড়ালে এই মেয়ে কানার পোঁকা বের করে দিবে।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_26

কটকা অফিস পাড় ঘোরা শেষ। সময় 2’38 মিনিট। যেহেতু এখন সন্ধ্যা খুব তাড়াতাড়ি হয় আর আস্ত খাসির বারবিকিউর ব্যবস্থা রয়েছে তাই আজকের শেষ গন্তব্য জামতলা সি বিচ। প্রতি টা স্পর্ট ঘোরার থেকে জামতলা সি বিচে যাওয়ার এক্সাইটমেন্ট বেশি। কারন এখানে নেমে গোসল করা যাবে। কনকন শীতের সাথে হিমশীতল পানি তার উপর গরম গরম আস্ত খাসির বারবিকিউ। সকলের উৎসাহ বলে দিচ্ছে এই ট্যুর টা কতো টা ইনজয়েবল হয়েছে এবং হতে চলেছে।
জায়গা গুলো যত টুকু না সুন্দর তার থেকে ফিলিংস গুলো অনেক বেশি সুন্দর। সবাই চেনা জানা তাই আনন্দ বেড়ে গেছে কয়েক গুন। না হলে এতো টা মজা হতো না। তাই সবার উচিত চেনা জানা অনেক মানুষ কে নিয়ে আসা। এতে করে সেফটি প্লাস ইনজয় দুটোই হবে আকাশ সমান। ঝিল গুটি কয়েক পাতা ছিঁড়ে হাঁটা লাগালো। অভিনব ঝিলের এই আচারনে খানিকটা আশাহত হলো। সাধারনত এই সব পাতাতে থাকে বিষাক্ত পোকামাকড় কিংবা তাদের লালা। যা থেকে এলার্জি কিংবা অন্য কোনো রোগ হতে পারে। এমনকি মৃত্যু ও ঘটতে পারে।
তাছাড়া সুন্দরবনে এমন গাছের পাতা রয়েছে যাতে সাপ থাকবে আপনি চিনতে ও পারবেন না।
এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। তাই সবাই কে সাবধানে চলা ফেরা করতে হবে ।

কারন অনেক সাপের রঙ আর গাছের পাতার রঙ এক। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে ঝিলের সাথে হাঁটতে লাগলো।
ঝিল আকাশের দিকে বার কয়েক তাকাচ্ছে। কুয়াশা কেঁটে গিয়েছিলো তবে কিছু ক্ষণের মাঝেই আবার কুয়াশা এসে ধরা দিবে।
ঝিল তাড়াতাড়ি পা চালালো। বনের ভেতর দিয়ে সবাই হেঁটে চলেছে। নিস্তব্ধ পরিবেশে গুটি কয়েক পাখির ডাক। গা ছমছম করে উঠলো।
বনের ভেতরে বাঘের আতঙ্ক রয়েছে। তাই প্রতি টা ট্যুর এজেন্সির সাথে থাকে অশ্রধারী গাইড। মূলত তারা সরকারি কর্মকর্তা । সরকারে কড়া নির্দেশেই সুন্দরবন ঘোরা হয়। এমন না যে চাইলেই যখন ইচ্ছে যাওয়া যাবে।
পল্টন থেকে প্রায় 2 3 কিলোমিটার রাস্তার পর জামতলা সৈকত। হেঁটে যেতে মোটামুটি 40 50 মিনিট এর মতো সময় লাগবে।
বনের ভেতরে চিকন সরু মাটির রাস্তা। মনে হয় বহু দিন ধরে মানুষের পদতলে পরে রাস্তা তৈরি হয়েছে। কেমন সাদা শুষ্ক হয়ে দড়ির মতো আঁকার ধারন করেছে। তার ই মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সবাই। আশে পাশে যতদূর চোখ যায় শুধু গাছ আর গাছ। সবি ই অচেনা গাছ। তার মাঝে রয়েছে সুন্দরী , কেওড়া , গেওয়া। সুন্দরী কাঠের কাঠ নাকি খুব ভালো হয়। কিন্তু ঝিল কখনো সুন্দরী কাঠ দেখে নি।
দেখবেই বা কি করে ? ঢাকার অলি গলি তে তো এইসব গাছ পালা নেই। আছে শুধু ধুলোবালি , বড় বড় যানবহন , সাড়ি সাড়ি দালানের ছড়াছড়ি সাথে কোলাহল পূর্ন সমাজ। ভাবতেই গা শির শির করে উঠে। এখানে কতো শান্তি , মনে হচ্ছে নিশ্বাসের শব্দ গুলো ও গোনা যাবে।
হাজারো নিরবতা ভেঙে অভিনব বলল
_ এতো নিশ্চুপ কেন ?

_ উপভোগ করছি খুব।

_ কিই উপভোগ করছেন ?

_ এই যে শান্ত পরিবেশ সাথে নিশ্বাসের শব্দ । কি দারুন না ?

অভিনব নিরব হাসলো। সদ্য প্রেমে পরা যুবতী ঝিল। হাজারো বিচিত্র অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক। তবে ওর ওহ একি রখম অনুভূতি হচ্ছে যাহ মোটে ও কাম্য নয়। সাধারন হিসেবে প্রেমের সঠিক বয়স সে পেরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সেই হিসেবের তোয়াক্কা না করে অভিনব দারুন এক অনুভূতি তে বিভোর হয়ে পরেছে। অর্থাৎ প্রেমের কোনো বয়স হয় না আর না সময়।
শুধু মাত্র একটা আবেগ প্রবন মনের প্রয়োজন। যে মন কাঙ্খিত ব্যক্তি টি দেখার জন্য লাফাতে থাকে। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার মতো শব্দ করে। মনে হয় এই বুঝি হৃদপিন্ড টা বুক চিরে বের হয়ে যাবে।
অভিনব স্বল্প পরিমানে ঠোঁট প্রশস্ত করলো। ঝিলের দৃষ্টি এখনো চরকির মতো ঘুরছে।
বাঘের দেখা পাওয়ার জন্য মন টা বড্ড তৃষ্ণার্ত। তবে বাঘের দেখা কি মিলবে?
কি জানি মিলবে কি না। তবে যে সময় টুকু উপভোগ করছে সেটাই বা কম কিসের ?

জামতলা সি বিচের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া গেল তখনি যখন চোখে পরলো জাম গাছ।
কিছু দূর পর পর জাম গাছ রয়েছে। টাইগার টিলায় নাকি বাঘের পায়ের ছাপ রয়েছে। তবে সবাই ঠিক করেছে যাওয়ার সময় টাইগার টিলায় যাবে। দূর থেকে পানির টেউ খেলার মতো চিক চিক বালি কনা দেখেই সবাই চিৎকার করে উঠলো। এই তো বহুল কাঙ্খিত জামতলা সি বিচ। সবাই হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো। ঝিল সবার সাথে তালে তাল মেলাতেই অভিনব খপ করে হাত ধরে নিলো।
_ কি হলো ?

_ বলেছি না সারাক্ষণ আমার সাথে থাকবেন। একা একা দৌড়াচ্ছেন কেন ?

_ সবাই তো চলে গেল।

_ আমরা ও তো যাচ্ছি। এমন করলে কিন্তু পানি তে নামতে দিবো না ঝিল।

ঝিল ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেল। অভিনব নিশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাঁটা লাগালো।
সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। জামতলা সি বিচ সত্যি অসাধারন। পুরো বিচে রয়েছে ঢেউ এর আস্তরন। দেখে মনে হচ্ছে কেউ নিজ হাতে ডিজাইন করে রেখেছে।
অভিনব ঝিলের থেকে একটু আলাদা হয়ে কিছু দৃশ্য ক্যাপচার করে নিলো। জাম তলা সি বিচ টা এখন অব্দি বেস্ট। প্রকৃতির রূপের পরিপূর্ণতা রয়েছে। ঢেউ গুলো চোখে পরার মতো যদি ও ছোট ছোট ঢেউ তবে খুব সুন্দর। এখন জোয়ার তাই কেউ পানি তে নামছে না। ভাটা পরলেই হুমরি খেয়ে নেমে যাবে।
পুরো সৈকত টি নির্জন আর পরিচ্ছন্ন। থেকে থেকে রয়েছে কাঁকড়া দের শিল্প কর্ম। অভিনবর এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে সুন্দরবন কে সন্দরবন ছাড়া ও কাঁকড়া বন বলে ডাকা যাবে।
কারন নদীর পার ঘেঁষে প্রতি টা স্থানে কাঁকড়ার শিল্পকর্ম রয়েছে।
অবশ্য সুন্দরবনের নামের পেছনে বিশাল ইতিহাস রয়েছে। অভিনব কিছু কিছু পড়েছিলো। তবে আবছা আবছা মনে আসছে।

ঝিল হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছের শিকড়ে গিয়ে বসলো। জোয়ারের ঢেউয়ের আঁচড়ে শিকড় বেরিয়ে এসেছে।
বসার জন্য দারুন এক স্থান। প্রায় সময় সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়ের আক্রমনে পরে। তখন গাছ উল্টিয়ে পরে যায়। যা বিপদ জনক আর ভয়ঙ্কর ও বটে।
ঝিল সে দৃশ্য মনে করতে চাইছে না। কারন এখন আবহাওয়া বেশ ভালো।
জামতলা সৈকতের শেষ প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে কচিখালি তে।

মাহেরা সুযোগ পেয়ে অভিনবর কাছে চলে এসেছে। ঠোঁটের কোনে ঝরা হাসি। নিজে কে হাত দিয়ে পরিপাটি করে নিলো। অভিনবর কাছে নিজেকে বেস্ট দেখাতে হবে তো ।
না হলে যে অভিনব তার হবে না। আফরা কে ফেলেই মাহেরা হাঁটা লাগালো। আফরা বেচারি থম মেরে গেল।
বেচারার বয়েফ্রন্ড নিশ্চয়ই শোকে পাগল হয়ে গেছে। আহা দুদিন ধরে যোগাযোগ নেই। আফরা শোক পালন করে ঘুরতে লাগলো।

_ হায় অভিনব ।

_ হায়।

_ কি করছো ?

_ সবাই যা করছে।

_ তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তবে স্পেশাল কি করছো ?

_ স্পেশাল তো অনেক কিছু ই আছে। তবে সেটা সিক্রেট বলা যাবে না।

মাহেরা স্মিত হাসলো। অভিনব গাঁয়ের সাথে গা ঘেষে দাঁড়ালো।

_ অভিনব তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ ?

অভিনব সি বিচের ছবি ক্লিক করতে করতে বলল
_ বর্ননা দিলে মেয়ে খুঁজে দিবে নাকি ?

_ আরে বলো ই না। হতে ও তো পারে আমি মেয়ে খুঁজে দিলাম।

_ তাতে ও লাভ নেই কোনো। কারন আমি ম্যারিড।

_ মজা করছো তাই না?

অভিনব মৃদু হাসলো। সত্যি বললে ও আজকাল তা বিশ্বাস যোগ্য হয় না। ভেতর দীর্ঘশ্বাস গুলো বের হতে দিলো না।
মাহেরা বেশ কিছু ক্ষণ অভিনবর গাঁয়ের সাথে লেপ্টে থাকলো। তবে সুবিধা করতে পারছে না। কারন অভিনব কৌশলে দূরে সরে যাচ্ছে।প্রায় বিশ মিনিট পর আশাহত হয়ে আফরার কাছেই ফিরে গেল মাহেরা।

অমিত সুযোগ পেয়েঅভিনবর পাশে দাঁড়ালো। মাহেরা যে অভিনবর সাথে প্রায় লেপ্টে যাচ্ছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। কি জানি এই মেয়ের কি হবে। জীবনে ক্রাশের তো অভাব নেই।
অমিত মাহের আর শাকীল তিন জনেই সুন্দরবন নিয়ে একটা ব্লগ করছে।
তাঁদের ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য এটাই ফাস্ট ব্লগ হতে চলেছে।
ব্লগে যদি থাকে অভিনবর মতো বাংলা বিদেশীর ছোঁয়া তাহলে তো কথা নেই। হু হু করে বাতাসের গতিতে ভিউস আর সাবক্রাইবার বেড়ে যাবে ।
কথায় আছে না রাতা রাতি ভাইরাল খানিকটা তেমনি।
অভিনব মৃদু হেসে রসিকতা করে বলল
_ আমাকে ভিডিও তে রাখছো যে পরে দেখবে সব মেয়েরা বাংলা আমেরিকান অর্থাৎ আমার পেছনেই লেগে থাকবে। তখন কি করবে ?

_ সমস্যা নাই ভাই। আমরা তো মিঙ্গেল ই তাই ছ্যাঁকা খাওয়ার কোনো চান্স ই নাই।

অভিনব মৃদু হাসলো। বয়সে এরা তর থেকে বছর খানেক এর ছোট হলে ও ব্যবহার বন্ধুদের মতোই।
অভিনব ঠিক করলো এদের কে নিয়ে একটা মুভি বানাবে।
তবে সেটা ইংলিশ মুভি হবে। যার এক মাত্র ভিলেন হবে মাহেরা।
আর ঝিল হবে মুভির এক মাত্র রাজকুমারী। যাকে পাওয়ার জন্য অভিনব ছটফট করবে। সবার সাথে যুদ্ধ করবে।
শাকীল এর কন্ঠে ধ্যান ফিরলো অভিনবর।

_ অভিনব এই দিকে আসো দেখা যাচ্ছে না তোমায়।

_ আসছি ।

_ মাহের অভিনবর সুন্দর করে কয়েকটা ফুটেজ নে।
ভিডিও এর ক্যাপশন দিবো অভিনবর নামে আর ভিডিও তে থাকবো আমরা।
পাবলিক ঢপ খেয়ে আমাদের গালাগাল দেবে আর আমরা দেবদাশ হয়ে বসে থাকবো। সাথে রাতা রাতি ভাইরাল হয়ে যাবো বাটপার নামে।

অমিতের কথায় সবাই হো হো করে হেসে দিলো। মাহের সত্যি সত্যি অভিনবর ফুটেজ তুলে নিলো। তবে সেটা ভিডিওর মাঝেই এড করবে।
শুরুতেই পাবলিকের বকা খাওয়ার শখ নেই। প্রায় পনের মিনট পর এদের ফুটেজ নেওয়া শেষ হলো।
অভিনব যেন প্রান ফিরে পেল। তাকে দিয়ে সত্যি মুভি হবে না। এই সব প্লান বাদ। সামান্য ফুটেজ তুলতেই যাহ তাহ অবস্থা।

মাহেরা আবারো অভিনবর কাছাকাছি আসতে লাগলো।
অভিনব বাঁকা হেসে হাঁটা লাগালো। এই মেয়ের থেকে দূরে থাকাই ভালো।
কখন কোন ভেজাল হয়ে যাবে কে জানে।

জামতলা সৈকত এর স্বকীয়তার একটি হলো কালো বালির চিকচিক্য।
অদূরে ফার্নের ঝোপ ও রয়েছে । অভিনব ধীরে ধীরে ঝিলের কাছাকাছি এসে পরেছে। ঝিল বালি তে আঁকিবুকি করছে। অভিনব পা টিপে টিপে ঝিলের কাছে আসলো। কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ঝিল ঘুরে তাকালো। দ্রুত হাত দিয়ে আঁকি বুকি আড়াল করলো।
অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কারন সে যা দেখার তা দেখে নিয়েছে। তবু ও গলা ঝেরে অভিনয় করে বলল
_ কি লুকাচ্ছেন দেখি তো ?

ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে ঝিল শুকনো ঢোক গিলে নিলো। নাহ এই মানষটার কাছে কিছুতেই ধরা পরা যাবে না।
নাহ হলে প্রান টা এখানেই থেমে যাবে।
_ দেখি কি লুকাচ্ছেন।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অর্থাৎ সে কিছু লুকাচ্ছে না। অভিনব নাছোড়বান্দা ঝিল কে আজ ছাড়বে না সে।

অভিনবর শক্তির সাথে পেরে উঠলো না ঝিল। ঝিল কে টেনে উঠালো। লজ্জায় রঙধনুর রঙে রঙিন হচ্ছে ঝিল। শেষ মেষ এভাবে ধরা পরে যাবে ?
অভিনব মৃদু হাসলো। ঝিল মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে।
ঝিল লাভ সেপ এর মাঝে অভিনব আর তার নামলিখেছে। নতুন প্রেমে পরলে যাহ হয় আর কি।
ঝিল কে আর ও লজ্জা দিতে অভিনব বলল
_ মিস ঝিল একটা কথা বলুন তো এখানে কে আমাদের নাম লিখে গেল। তা ও আবার লাভ সেপের মাঝে ?

ঝিল ঠিক করে নিয়েছে আজ চোখ খুলবেই না। অভিনব মৃদু হেসে ঝিলের কানের কাছে ফিস ফিস করে বলল
_ মিসেস ভালোবাসো আমায় ?

** আজ আম্মু শপিং এ গিয়েছিলো । সারাদিন ফোন হাতে পাই নি। আমার সমস্ত কিছু আম্মুর ফোনেই তাছাড়া আমাকে নতুন করে প্রাক্টিক্যাল খাতা তৈরি করতে হচ্ছে। যদি ও তিন বিষয়ের প্রাক্টিক্যাল । তবে সাইন্স এর প্রাক্টিক্যাল নিশ্চয়ই খুব সহজ নয়।
প্রচন্ড চাপ কাল আবার স্কুল খুলে যাচ্ছে । গল্প অনিয়মিত হয়ে যাবে হয়তো। কারন আমার পেজ এ আরেকটি গল্প কান্টিনিউ করতে হচ্ছে। আমার দিক টা বোঝার চেষ্টা করবেন। দুটো গল্প এস এস সি পরীক্ষার্থী হিসেবে নিয়মিত লিখা কষ্ট সাধ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here