ধূসর রঙের প্রজাপতি পর্ব ২+৩

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_2

ভোরের তীক্ষ্ম আলো চিক চিক করছে। সূর্য যেন হেসে খেলে উঠেছে, না হলে সকাল ছয় টা বাজতেই এমন রোদ উজ্জ্বল হওয়ার কথা না।
জানালার গ্রিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে ঝিল। ভোরের দিকেই চোখ টা লেগেছে ওর। অভিনব একটা চেয়ারে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।
দরজায় একবার খট খট আওয়াজ হতেই অভিনবর ঘুম ভেঙে গেল । ওর ঘুম খুব আলগা , একজন ভ্রমন প্রেমি হলে যা হয় আর কি।
অভিনব ঝিলের দিকে এক পলক তাকিয়ে আরমোড়া ভেঙে দরজা খুলে দিলো।
ভদ্র মহিলা প্রশস্ত হেসে বললেন
_ নাস্তা খাইতো আছো বাবা।

অভিনব মাথা ঝাঁকালো। কিন্তু ঝিল কে ডাকবে নাকি ডাকবে না সেটা নিয়ে বিপাকে পরেছে। যে হারে চমকে উঠে মনে হয় গায়ে আঘাত ই করে দিবে। কোর্ট টা চেয়ার থেকে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো।
ঝিলের থেকে খানিক টা দূরত্ব রেখেই ডাকতে লাগল
_ মিস ঝিল, সকাল হয়ে গেছে উঠে পরুন।

আর ও কয়েকবার ডাকার পর ও ঝিল উঠলো না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ওহ। উপায় না পেয়ে অভিনব ঝিলের বাহু তে ধাক্কা দিলো।
ঝিল পিট পিট করে তাকাতে তাকাতে বলল
_ ভাইয়া পাপা কতোবার বলেছি আমি ঘুমালে তোমরা কেউ আমাকে ডাকবে না।

অভিনবর সড়ু চোখ টা কুঁচকে গেল। নিজের মস্তিষ্ক কে ঠান্ডা করে আবার ডাকল
_ মিস ঝিল আমি অভিনব।

অভিনব কথাটা ঝিলের কানে পৌছাতেই ধুরমুরিয়ে উঠলো ঝিল।
ভয়ার্ত কন্ঠের সাথে স্পষ্ট রাগ নিয়ে বলল
_ আপনি , আপনি আমার কাছে আসছেন কেন ?
আমি কিন্তু নিজেকে শেষ করে দিবো।

ঝিলের কথাতে অভিনব বোকা বনে গেল। কি বলছে কি মেয়েটা ?
ঝিল নিজেকে ঠিক করতে ব্যস্ত। অভিনব ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলল
_ আপনি প্লিজ ভয় পাবেন না। সকাল হয়ে গেছে তাই ডেকে তুললাম।
আন্টি নাস্তা করার জন্য ডাকছেন। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসুন , আমাদের বেরোতে হবে।

ঝিল কোনো কথা বলল না। তবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল যা অভিনব স্পষ্ট দেখতে পেল। মাথা নিচু করে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।
বাসায় গিয়ে আজ তুলকালাম করবে।
ওর বিয়ের ভুত টা সবার মাথা থেকে বের করেই ছাড়বে হুহ।

*

নাস্তা খেয়ে সবাই কে বিদায় জানিয়ে বের হচ্ছিলো অভিনব আর ঝিল।
ভদ্র মহিলা এগিয়ে এসে অভিনব আর ঝিল কে দোয়া করলেন।
ঝিল আলতো হেসে কৃতঙ্গতা জানালো।
ভদ্র লোক ওদের কিছু টা এগিয়ে দিয়ে গেলেন।
সরু মাটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ওরা। পাখির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ঝিলের মন টা মুহূর্তেই ভালো হয়ে গেল।
বরাবর ই প্রকৃতির প্রতি ঝোক বেশি ওর। কিছুদূর হেটে আসতেই একটা চায়ের দোকান দেখতে পেল।
অভিনব গলা ঝেরে বলল
_ চা খাবেন ?

ঝিল ফুরফুরে মেজাজে মাথা ঝাঁকালো । একটা বেঞ্চে তে বসলো ওরা , দোকান দার দুটো চা দিয়ে গেলেন।
মাটির খোড়ায় চুমুক দিতেই শরীরে অদ্ভুত ভাবে শিহরন জেগে উঠলো।
গরমের মাঝে ও চা টা এতো ভালো লাগবে তা ভাবতে পারে নি অভিনব। কুমিল্লা নাকি রসমালাই এর জন্য বিখ্যাত। এর আগে দু বার বিডি তে আসলে ও কুমিল্লার রসমালাই খাওয়া হয় নি। কিন্তু এবার খাবে বলে ঠিক করলো।
এক হাতে চায়ের খোঁড়া আর অন্য হাতে ফোন নিয়ে ব্যস্ত অভিনব।
চা খেতে খেতে আড়চোখে তাকাচ্ছে ঝিল। কিছুটা রোদ্দুর এসে অভিনবর মুখে পরেছে যার দরুন মুখ টা চিক চিক করছে।
ঝিল চোখ সরিয়ে নিলো। অভিনব নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছে ।

দোকান দার বেশ অনেকক্ষণ ধরেই পর্যবেক্ষন করছিলো অভিনব কে।
বিদেশী দের মতো দেখতে বলেই হয়তো।
অভিনবর চোখে মুখে বিরক্তির ছাঁপ দেখেই দোকান দার প্রশ্ন ছুঁড়লো
_ স্যার কিছু খুঁজতেছেন মনে ওয় ?

অভিনব ফোনে দৃষ্টি রেখেই বলল
_ নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। কাল রাত থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।

দোকানার স্মিত হেসে বললেন
_ পাইবেন কেমনে দুদিন আগের বৃষ্টি তে ট্রাওয়ার এর সমস্যা হইছে।
ট্রাওয়ার অফিসে খবর পাঠাইছে কিন্তু কোনো কাম ই ওয় না।

অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বিডি তে এখনো এই রকম সমস্যা আছে ভাবতে পারে নি ওহহ।
চা খেয়ে বিল দিয়ে পাশে তাকাতেই অবাক হলো ।
ঝিল তো তার পাশেই ছিলো কিন্তু এখন নেই।

অভিনব দ্রুত উঠে গিয়ে চারপাশে চোখ বুলালো। কিন্তু ঝিল কে দেখতে পেল না।
চিৎকার করে ডাকতে লাগলো
_ মিস ঝিল কোথায় আপনি ?

ঝিলের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো ছবি ও নেই যে আশে পাশের কাউকে দেখাবে।
অভিনব চার পাশে পাগলের মতো খুজতে লাগলো। বরাবর ই ওহ ওর রেসপনসিবিলিটি খুব সুন্দর করে কমপ্লিট করে।
মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায় ভাবতেই অভিনবর মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পাশেই নদী, অভিনব নদীর ধার ধরে চিৎকার করতে লাগলো।
কিছুদূর যেতেই চোখ দুটো শান্ত হয়ে গেল।কিন্তু মুহুর্তেই প্রচন্ড রাগ হলো ওর। একটা ঝোপের কাছে দাঁড়িয়ে কি যেন করছে ঝিল। ব্যস্ত পায়ে হেঁটে ঝিল কে এক ধমক দিয়ে বলল
_ আপনার কোনো ধারনা আছে ?
কোনো জ্ঞান ই নেই দেখছি। আমাকে না বলেই এখানে চলে এসেছেন। ইউ নো আমার মাথায় কতো রকমের চিন্তা হচ্ছিলো।

ঝিলের মুখ টা ছোট হয়ে গেল। সামান্য রাগ নিয়ে বলল
_ আপনার কোনো ধারনা আছে আপনি আমার কতো বড় ক্ষতি করে দিলেন।

অভিনব ভ্যবলার মতো তাকিয়ে রইলো। কাল রাত থেকে সাহায্য করে যাচ্ছে ওহহ আর এই মেয়ে বলে কি ?
কোমরে হাত গুঁজে দিয়ে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল
_ আমি আপনার কি ক্ষতি করলাম ?

ঝিল নাক টেনে বলল
_ আপনার জন্য প্রজাপতি টা চলে গেছে। এমন ভাবে ধমক দিয়েছেন যে ওহহ চলে গেল।
সেই কখন থেকে ফলো করে আসলাম আর আপনি কি না

ঝিল কে থামিয়ে দিয়ে অভিনব বলল
_ ওয়েট ওয়েট তার মানে আপনি একটা প্রজাপতির পেছনে পেছনে এখানে চলে এসেছেন ?
মাই গড , আপনার দেখছি কোনো ম্যানার্স ই নেই।

ঝিল মুখ টা বাঁকিয়ে নিলো। অভিনব লম্বা দম ফেলে বলল
_ কাম উইথ মি। এমনিতেই অনেক টা লেট করিয়েছিন।

ঝিল বির বির করতে করতে অভিনবর সাথে গেল।
অভিনব সামান্য চিন্তায় পরে গেল। কাল রাতে গাড়ি টা ফেলেই চলে এসেছে । কে জানে গাড়ি টা আছে নাকি নেই।
তপ্ত শ্বাস ফেলল, ফোন টা ও এখন কাজে আসবে না।

কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে বড় সড়কে চলে এসেছে ওরা। নদীর ধার থেকে এখন অব্দি একটা কথা ও বলে নি কেউ। অভিনব প্রকৃতি প্রেমি হওয়াতে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। আর ঝিল একটা চকলেট খাচ্ছে। গাড়ির কাছে আসতেই দেখলো মানুষের লম্বা ভীর লেগে গেছে।
অভিনব একটু উঁচু গলাতে বলল
_ আপনারা একটু সাইট হোন প্লিজ। এটা আমার গাড়ি , কাল কে একটা বিপদে পরে গাড়ি এখানে রেখেই গ্রামে চলে গিয়েছিলাম।

অভিনবের কন্ঠে সবাই এক যোগে তাকালো। গ্রামের কয়েক জন ও আছে বোধহয় । তারা কানাঘুষো করতে লাগলো এরাই বোধহয় যাদের কাল সবাই ধরে বিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ কটু উক্তি ও করলো।
অভিনব সরু চোখে তাকালো। এদের মানসিকতার প্রশংসা না করে থাকা যায় না। মানুষ মানুষকে সাহায্য ও করতে পারবে নাহ।
কেউ কেউ বাজে নজরে ঝিলের দিকে তাকাচ্ছে। ঝিল চকলেট খেতে ব্যস্ত , অভিনবর চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠলো।আজ কাল যুগে এসে ও মানুষ খারাপ দৃষ্টি ছাড়ছে না , হয়তো কোনো দিন ও ছাড়বে না।
ঝিলের হাত টা শক্ত করে ধরলো অভিনব।
ঝিলের হাতে থাকা চকলেট টা পরে গেল।বিরক্তি তে ভরে উঠলো ওর মুখ। ঝিল কে এক প্রকার টেনেই গাড়ি তে বসালো ওহহ।
গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত দিয়ে ধোঁয়া উঠিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল অভিনব।
অভিনবর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ঝিল।
অভিনবর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। বাজে মানুষ গুলোর বাজে দৃষ্টি ঝিল কে অবলোকন করছিলো।
আর এই মেয়েটা নাকি বাচ্চা দের মতো চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত।

কড়া কন্ঠে ঝিল বলল
_ আমাকে টাচ করতে বারন করেছিলাম নাহ ?
টাচ করলেন কেন আমায় ?
আমার চকলেট টা ও ফেলে দিলেন। একটা মাত্র ই চকলেট ছিলো আমার।

অভিনবর কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ঝিল রেগে গেল।
ক্রোধ মেশানো কন্ঠে গরগর করে বলল
_ সাহায্য করেছেন বলে এমন নয় মাথা কিনে নিয়েছেন। আপনি আমার চকলেট টা ফেলে দিলেন আবার প্রজাপতি টাকে উরিয়ে দিলেন।
কতো সুন্দর ধূসর রঙের প্রজাপতি ছিলো। এই যে আপনার ধূসর শার্টের থেকে ও অনেক সুন্দর।

অভিনব বিরক্ত হতে লাগলো। মেয়েটা প্রচুর কথা বলছে। কাল রাতে তো একটা রা ও ফুটছিলো নাহহ।

ঝিল বকবক করে অভিযোগ করেই যাচ্ছে। অভিনব হঠাৎ করেই ব্রেক কষলো। হঠাৎ এতো জোরে ব্রেক কষাতে ঝুকে গিয়ে পরলো ঝিল । একটুর জন্য মাথায় লাগে নি।
অভিনব গাড়ি থেকে নেমে গেল। ঝিল ভ্রু কুঁচকে নিলো, আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো নির্জন ফাঁকা রাস্তা। ঝিল ফাঁকা ঢোক গিলল , অভিনব সম্পর্কে নানা ভাবনা ফুটে উঠলো।
ব্যাগ থেকে একটা সেফটি পিন বের করে রাখলো। কাছে আসতে চাইলেই পেটে ঢুকিয়ে পালাবে।

এক মিনিট পরে অভিনব আসলো। গাড়ির দরজা খুলে সামনে হাত বাড়াতেই অভিনবর হাতে ঝিল সুচ ফুটিয়ে দিলো।
অভিনব ব্যাথা পেয়ে হালকা আহহ করে উঠলো।
ঝিল গাড়ি থেকে নেমে পালাতে লাগলো। অভিনব হাত চেপে ধরে ঝিলের পেছনে দৌড়াতে লাগল। অভিনব কে দৌড়াতে দেখে ঝিলের আত্মা কেঁপে উঠলো।
মুহূর্তেই ঝিল কে ধরে ফেলল অভিনব।
ঝিল নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। সেফটি পিন টা ও নেই সাথে , এখন কি হবে ?

ঝিল কে টানতে টানতে গাড়ির কাছে এনে ছেড়ে দিলো অভিনব।
চোখে মুখে অসম্ভব রাগ ফুটে উঠেছে। ঝিলের হাত টা জোরে চেপে ধরাতে লাল হয়ে গেছে। অভিনব ধমকে বলল
_ স্টুপিট গাল এভাবে দৌড়াচ্ছিলেন কেন ?
আর আমার হাতে পিন পুস ই বা করলেন কেন ?

ঝিল একটু দূরে সরে বলল
_ দেখুন আপনি আমার সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করতে চাইলে আমি রাস্তার ধার থেকে লাফিয়ে মরে যাবো।

অভিনব নাক মুখ কুঁচকে বলল
_ হোয়াট ?
আপনার মাথা ঠিক আছে ? আপনি এখনো আমাকে অবিশ্বাস করছেন।
হোয়াট আ জোঁক । আমি আপনাকে বাঁচালাম আর সেই আপনি ই।

তাচ্ছিল্য হাসলো অভিনব। ঝিল সামান্য ভরকে গিয়ে বলল
_ আপনি ই তো তখন আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছিলেন।

অভিনব মুখ গোমড়া করে বলল
_ আপনি না দেখেই একটা বাজে কাজ করে ফেললেন।

ঝিল প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো। অভিনব কোর্টের পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করে বলল
_ এটা দেওয়ার জন্য ই আপনার দিকে হাত বাড়িয়েছিলাম।

ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
_ এটা কিহ ?
_ চকলেট।
_ চকলেট।
_ হুমম আপনি যেভাবে আমাকে চকলেট নিয়ে অভিযোগ করছিলেন।
তাই আমার গাড়ির ডিকি খুলে চকলেট নিয়ে আসলাম।
আমার কাছে কয়েকটা চকলেট ছিলো। মূলত বিডির বাচ্চাদের জন্য ই নিয়ে এসেছিলাম। আর ভাগ্য ক্রমে আমার সাথেই একজন বাচ্চা পেয়ে গেলাম। নিননন আপনার চকলেট।

শেষের কথা গুলো অভিনব রসিকতার ছলেই বলল। ঝিল লজ্জা পেয়ে গেল , অনুনয়ের স্বরে বলল
_ সরি।

_ ফরমালিটিস করতে হবে না। যা হবার তা হয়েই গেছে , এখন চকলেট টা নিয়ে তাড়াতাড়ি, গাড়ি তে আসুন।

ঝিল মাথা নিচু করে চলকেট টা নিলো। তারপর গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দিতেই সা সা করে বাতাস এসে এলোমেলো করে দিলো ঝিলের চুল।
অভিনব এক পলক তাকিয়ে হাসলো। না বালিকা মেয়ে হলে ও বাচ্চা নয় ঝিল। তবে চকলেটের প্রতি ঝোক দেখে মনে হয় ছয় বছরের কোনো বাচ্চা।

চকলেটের বক্স টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে ঝিল। চকলেট টা বেশ দামী , তবে এই চকলেট টা কখনো খাই নি ওহ।
ওর বাবা কাকা রা বিভিন্ন দেশ থেকে চকলেট এনে দেয় ওকে কিন্তু এটা কখনো এনে দেয় নি।
এই নিয়ে ও মনে মনে অভিযোগ কষলো ওহহ। বাসায় গিয়ে সবাই কে অভিযোগ করবে কেন এই রকম চকলেট ওকে এনে দেয় নি।

বেশ কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে চকলেট বক্স টা খুললো ওহ ।
চকলেট টা দেখেই চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল। এতো এতো সেপের চকলেট খেয়েছে ওহহ কিন্ত রোজ সেপের চকলেট কখনোই খায় নি।

আনমনেই অভিনব কে প্রশ্ন করে ফেলল
_ এই চকলেট টা খুব রেয়ার নাহহ ?

অভিনব স্টিয়ারিং এ হাত রেখেই বলল
_ হুমম , তবে এটা খুব ভালো ওহ , আর লো ফ্যাট এটাতে।
মাঝে মাঝে আমি ও খেতাম তবে আজকাল খাওয়া হচ্ছে না।

অভিনবের উত্তরে আর কিছু বলল না ঝিল । চকলেট টার এক কোনা মুখে দিতেই সাড়া শরীরে শির শির করে উঠলো। ঠান্ডা ঠান্ডা একটা লেয়ার ভেতরে । চকলেট টা খেতে অসাধারণ লাগছে।
একশ পঞ্চাশ গ্রামের চকলেট টা নিমেষেই শেষ করে দিলো ওহহহ।
অভিনব সে দিকে তাকালো ওহ না। ওর দায়িত্ব এখন মেয়েটা কে সেফলি পৌছে দেওয়া।

কুমিল্লা সদরে এসে গাড়ি থামালো অভিনব। ঝিল বাইরের দিকে তাকিয়ে উপভোগ করছে সব।
ব্রেক কষাতে ঘুরে তাকালো , অভিনব হালকাভাবে বলল
_ গাড়িতে থাকুন আপনি, আমি এই স্টোর থেকেই রসমালাই নিয়ে আসছি।
এখানের রসমালাই নাকি বিখ্যাত।

ঝিল হালকা হেসে সম্মতি জানালো। কাল রাতে যখন বাস থেকে নেমে দৌড়াচ্ছিল তখন ভেবেছিল ওর ক্ষতি হয়ে যাবে।
কিন্তু সৃষ্টিকর্তার রহমতে বেঁচে গেছে ওহহ। এবার থেকে সব ধরনের সেফটি শিখে রাখবে ওহহ।
বছরে কতো বার বাসা থেকে পালাতে হবে কে জানে।
এর আগে ও তিন বার পালিয়েছে। তপ্ত শ্বাস ফেলল ওহহহ , কথায় আছে অতিরিক্ত ভালোবাসা ঠিক না।
ঝিল হারে হারে টের পাচ্ছে পরিবারের অতিরিক্ত ভালোবাসা।
এবার যদি মাস খানেকের মাঝে কেউ বিয়ের কথা বলে তো ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখবে হুহহ।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_3 ( সম্পূর্ণ নতুন পার্ট )

আপনার পুরো নাম টা জানা হলো না মিস ঝিল।
সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই বলল অভিনব। ঝিল লম্বা শ্বাস ফেলে বলল
_ অহনা মির্জা ঝিল।

_ ওহহহ । কোন ক্লাসে পড়ছেন ?

_ এইস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি।

অভিনব আর কিছু বলল না। গুগল ম্যাপে লোকেশন দেখে নিলো। এখন ওরা গুলশানে আছে। মির্জাপুর যেতে আর ও বেশ অনেক ক্ষণ সময় লাগবে।
যে পরিমান জ্যাম লেগেছে, না জানি কতো সময় লাগে ।

ঝিল ঘামছে, রোদ পরেছে প্রচুর তার উপর জ্যামে আছে। এসি টা অফ করা, ঝিল মুখ ফুটে কিছু বলতে ও পারছে না।
অভিনব বার বার ঘড়ি দেখছে। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ গরম লাগছে বলতেই পারতেন ?

ঝিল আমতা আমতা করতে লাগলো। অভিনব কিছু না বলে এসি অন করে দিলো। মূহুর্তেই পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল। লম্বা করে শ্বাস নিলো ঝিল।

গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। বড় বড় দালান পেরিয়ে খানিকটা গাছপালা দেখা যাচ্ছে। এই তো মির্জাপুর , ঝিল যেন প্রান ফিরে পেল। নিজ জন্মস্থান টাকে এতো সুন্দর লাগছে কেন ?
হয়তো এতো বড় বিপদ থেকে বেঁচে ফিরেছে তাই। প্রশস্ত হাসলো ঝিল, অভিনব গলা ঝেরে বলল
_ কোন দিকে যাবো ?

_ সোজা গিয়ে ডান দিকের সরু রাস্তার পাশে নামালেই হবে।

অভিনব গাড়ি ঘুরিয়ে সে দিকে নিয়ে গেল। সরু রাস্তা বরাবর বিশাল বড় সাদা রঙের বাড়ি দেখা যাচ্ছে।
অভিনব সরু রাস্তা বরাবর গাড়ি থামালো। ঝিল প্রশস্ত হেসে বলল
_ আমার বাড়ি এসে গেছে।

ঝিল গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল।
অভিনব বোকা বনে গেল। মেয়েটা একটু ধন্যবাদ ও বলল না। এতো টা অকৃতজ্ঞতা আশা করে নি ওহহ।
হালকা হাসলো অভিনব , সরু রাস্তা টা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে ঝিল।
চারিদিকে লাগানো রেনট্রি , তাল গাছ , ইউক্যালিপ্টাস আর সুপুরি গাছ।
দেখে খুব ভালো লাগলো ওর। ঝিল গেট দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই অভিনব গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো।

সে তার রেসপনসিবিলিটি সঠিক ভাবে পালন করতে পেরেছে এটাই যা।
দুজনে দুদিকে ছুটে চলছে , বাড়ছে দুরুত্ব। অথচ দুজনের মাঝে যে পবিত্র বিয়ে নামক বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে তা কারোর ই মনে রইলো না।
আচ্ছা ওদের কি আর কখনো দেখা হবে ? নাকি কয়েক ঘন্টার সম্পর্কের এখানেই ইতি টানা হবে ?
ভাগ্য বড় বিচিত্র এক ঝটকায় পুরো জীবন ই বদলে দেয়।

*

ঝিল ডিবাইন এ পা উঠিয়ে বসে আছে। আর তার ই দু পাশে বসে আছে ওর বাবা , আর দুই কাকা।
আর সামনে দাড়িয়ে আছে ওর পাঁচ ভাই।

সবাই ঝিলের দিকে ঝুঁকে আছে। মেয়েটা কোনো কথাই বলছে না শুধু রাগে ফুঁসছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ঝিল ঠোঁট টা গোল করে বলল
_ তোমরা যদি আগামী এক মাসের মধ্যে বিয়ের নাম টা ও নাও আমি কিন্তু সত্যি সত্যি বাসা থেকে চলে যাবো।

ঝিলের বাবা জাফর মির্জা গলা ঝেরে ভীত কন্ঠে বলল
_ মামুনি আর আমরা মানে আগামী একমাসের মধ্যে আমরা কেউ বিয়ের কথা বলব না।
কিন্তু তুমি এভাবে পালিয়ে যাও যে যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।

ঝিল নাক ফুলিয়ে বসে রইলো। ঝিলের বড় কাকা গলা খাকাড়ি দিয়ে বললেন
_ সবাই সর তোরা আমি আমার মামুনির সাথে কথা বলবো।

ঝিল অন্য দিক মুখ ফিরিয়ে রইলো। ইকবাল মির্জা মুখ টা গোমড়া করে নিলেন।

মনিরুল মির্জা সামান্য সাহস নিয়ে বললেন
_ সরো তোমরা আমার মামুনি আমার সাথে কথা বলবে।

সঙ্গে সঙ্গে ঝিল চেঁচিয়ে বলল
_ মেঝো পাপা আমি তোমার সাথে ও কথা বলবো না।

তিন ভাই ই চুপ হয়ে গেলেন। মেয়ের রাগ বেড়ে কলাগাছ হয়ে গেছে। এখন তার ভাইয়া রাই পারবে তাকে সামলাতে।
ওনারা বুঝে গেছেন মেয়ে ওনাদের সাথে কথা বলবে না।

তাই অতি সন্তর্পণে চলে গেলেন। পাঁচ ভাই বোনের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। বোনের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছে। বোন দের সাথে ছোট দুই ভাইয়ের বেশ খাতির। বড় তিন ভাইয়ার সাথে এভারেজ, হয়তো বয়সের ফারাকের জন্য।
বড় তিন ভাই এগিয়ে আসতেই ঝিল রাগি চোখে তাকালো।
সঙ্গে সঙ্গে তিন ভাই চলে গেলো।
ছোট দুই ভাই তাকিয়ে আছে , রোহন গলা ঝেরে বলল
_ রহিম চাচা রহিম চাচা এক গ্লাস ঠান্ডা বাদামের সরবত নিয়ে আসো , আমার বনুর জন্য।

রহিম চাচা দ্রুত বাদামের সরবত বানাতে গেলেন। ঝিল বাঁকা চোখে তাকিয়ে থেকে বুকে হাত গুঁজে দিলো।

আহনাফ লম্বা করে শ্বাস নিলো। রোহনের দিকে একপলক তাকিয়ে হাঁক ছাড়লো
_ রাহেলা চাচি , কোথায় তুমি আমার বনুর জন্য কড়া ঝাল দিয়ে লেবুর আঁচার বানিয়ে আনো তো। আর লেবু টা যেন কাঁচা হয় আমার বনু কিন্তু পাঁকা লেবু একদম ই সহ্য করতে পারে না।

ঝিলের কোনো মতিভ্রম হলো না। ভাইয়াদের আহ্লাদে গদগদ সে , এই দুই ভাইয়ের মতো অভিনেতা ও দেখি নি। কি করে যে ওকে মানিয়ে নেয়।

রহিম চাচা আর রাহেলা চাচি খাবার হাতে রেডি। দু ভাই সরবত আর লেবুর আঁচার নিয়ে বোনের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসলো।
এসি অন থাকলে ও দুজন দু হাতে মর্ডান হাত পাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ঝিল ঝাঁঝ গলাতে বলল
_ কি চাই ?

রোহন _ কিছু চাই না বনু ম্যাম , শুধু আপনার পদধুলি পেলেই হবে।

আহনাফের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে সরু চোখে তাকালো ঝিল। আহনাফ বোকা বোকা করে বলল
_ আমি তো আপনার একমাত্র পেয়াদা বনু ম্যাম। আপনি বললেই কল্লা হাজির।

ঝিল নাক ফুলিয়ে বলল
_ আপনাদের উত্তরে আমি প্রসন্ন প্রজাগন। আপনাদের অনুরোধ গ্রহন করা হলো তার ই সাথে সমস্ত শাস্তি বাতিল ঘোষনা করা হলো।

রোহন আর আহনাফ লাফিয়ে উঠলো। ডিবাইনের দু পাশে বসে ঝিল কে জড়িয়ে ধরলো। ঝিল হো হো করে হেসে বলল
_ অভিনেতা রা কি এখনো অভিনয় করে যাচ্ছে?

রোহন আর আহনাফ মোহনীয় হেসে বলল
_ আপনার সামনে অভিনয় করি কি করে ?
অভিনয় করলে তো আছিই আমরা আর আমাদের কল্লা।
আপনার দরবারে না হয় কল্লা খানা বারিয়ে দিবো।
ঝিল হো হো করে হাসলো।
তারপর ঝিল গলা ঝেরে বলল
_ আপাতত ক্ষমা করেছি, এখন দুজন আমার দাবি গুলো লিস্ট করে নিন।

সঙ্গে সঙ্গে ঝিলের তিন ভাই আর কাকারা হাজির হলো।
মেয়ের রাগ কমেছে এখন। ঝিল বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ আপনাদের সবার শাস্তি ও বাতিল ঘোষনা করলাম ।

ঝিলের কথাতে সবাই এক যোগে হেসে উঠলো। বাড়ির এক মাত্র কন্যা ঝিল , সব থেকে আদুরে যাকে বলে। আর তাই সবার ইচ্ছা মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে বাড়িতেই রাখা। তার জন্য ই কয়েক দিন পর পর বিয়ে ঠিক করে।
আর ঝিল বিয়ে করবে না দেখে পালিয়ে যায়। অবশ্য পালিয়ে যাওয়া তে কেউ রাগ করে না উল্টো ঝিল বাসায় ফিরে সবার নাকের ডগায় ছুড়ি ঘোরায়।
ঝিলের গায়ে কেউ ফুলের টোকা ও দেয় নি কখনো ।
ঝিলের বাবা রা তিন ভাই কোনো বোন নেই। মির্জা বংশের নাম ডাক পুরো মির্জাপুর জুড়ে।
ঝিলের বড় কাকা ইকবাল মির্জা তারপর মেঝো কাকা মনিরুল মির্জা আর ওর বাবা সব থেকে ছোট জাফর মির্জা।
ইকবাল মির্জার তিন ছেলে মাহিন , সজল আর আহনাফ।
মাহিন আর সজল পড়াশোনা কমপ্লিট করে পারিবারিক বিজনেস দেখছে।
আর আহনাফ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।
মনিরুল মির্জার দুই ছেলে রাফাত আর রোহন রাফাত ও পড়াশোনা শেষ করে পারিবারিক বিজনেস দেখছে আর রোহন মাস্টার্স পড়ছে।
রোহন আর আহনাফ সম বয়সী দুজনের মাঝে বেশ ভালো বন্ধুত্ব।
সবার চোখের মনি হলো ঝিল। ঝিলের নিজের কোনো ভাই না থাকলে ও এরা সবাই ওর ভাই।
এ পরিবারে কেউ কাউকে আলাদা করে দেখে না।

ঝিলের যখন দু বছর তখনি ওর মা আর কাকি রা কার এক্সিডেন এ স্পর্ট ডেড হয়।
কারো মুখ ই ঝিলের মনে নেই। ঝিলের পৃথিবীতে শুধু ওর ভাই রা আর পাপা রা।
কখনো অভাব রাখে নি কিছুর।এতো এতো ভালোবাসা দিয়ে রেখেছেন।
আ বড় তিন ভাইয়ের পঁচিশ বছর পেরিয়ে গেলে ও কেউ বিয়ে করবে না এখন।
কারন বউ যদি তাদের বোনের দিকে আঙুল তুলে । তাই এমন বউ আনবে যারা ঝিল কে খুব ভালোবাসবে।
যদি ও সবার গার্লফ্রেন্ড আছে তবে তারা পরীক্ষা দিয়ে উপযুক্ত হলেই বিয়ে করে আনবে।
বোন কে নিয়ে নো কমপ্রোমাইছ।

*
সাত দিন পর
_আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। সবাই এতো পরিমানে রেগে আছে যে কি আর বলবো।
হ্যাঁ মম আমি গিয়েছিলাম , মামা রা আমাকে খানিক টা মেনে নিলে ও তোমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখালো না।
ভাবছি আবার বছর খানেক পর আসবো। তবে দেখে যা বুঝলাম , সবাই আমার প্রতি উপর দিয়ে রাগ দেখালে ও ভেতরে ভেতরে আমাকে দেখে বেশ খুশি হয়েছেন ।

বলতে বলতে দীর্ঘশ্বাস ফেলল অভিনব। মা বাবার সাথে মামাদের সম্পর্কের মিতালি গড়ার জন্যই বিডি তে এসেছে ওহ।
কিন্তু হলো না , অন্য দিকে ইহরিমা সরকার কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন।
ভালোবেসে চলে গিয়েছিলেন সবাই কে ছেড়ে। অভিনবর বাবা ধর্মে মুসলিম হলে ও আমেরিকান।
অভিনবর মামারা আমেরিকান ছেলের সাথে বিয়ে
দিবেন না বোনের ।
তাই বাধ্য হয়ে ভালোবাসার মানুষ টার হাত বেছে নেন ওনি।
মূলত অঠারো শতক থেকে অভিনবর পূর্বপুরুষরা আমেরিকা তে আছেন।
আর এভাবেই জন্মসূত্রে সবাই আমেরিকান হয়ে গেছেন। তবে ঐ যে বলে শেখরের টান , বাঙালিয়ানা তো রয়েই গিয়েছে।
আর তার জন্যেই অভিনবর চেহারাতে আমেরিকানদের একটা ছাঁপ আছে।
হাজার হোক ওহহ তো জন্মসূত্রে আমেরিকান ই।

অভিনব তার দীর্ঘ পল্লব বুজে বলল
_ ডোন্ট ওরি মম। একদিন না একদিন মামারা মেনে নেবেই তোমাদের।
আমাকে কিন্তু মেনে নিয়েছেন, হয়তো তোমাদের প্রতি এখনো অভিমান কাটাতে পারেন নি।

ইহরিমা সরকার ডুকরে কাঁদছেন। ভাইদের দেখা হয় নি কতো বছর হলো। একটা ভুলের জন্য এতো অভিমান করে থাকবে?
আচ্ছা সেদিন যদি ওনি ভালোবাসার মানুষ টার হাত ধরে না আসতেন তাহলে অন্য পুরুষের সাথে ওনি কি সুখী হতেন ?

অভিনবর ভেতর থেকে একের পর এক দীর্ঘশ্বাস বের হচ্ছে। মায়ের কান্না আটকানোর জন্য পাপার সাহায্য ই নিতে হবে।

অভিনব ফোন রেখে দিলো। বাবার নাম্বার ডায়াল করে কল দিলো।
সঙ্গে সঙ্গে ফোন রিসিপ হলো।

অভিনব সরস হেসে বলল
_ হাউ আর ইউ পাপা ?

_ আম গুড মাই সান। তুমি ঠিক আছো ইয়াং ম্যান ?

_ ইয়েস পাপা। বাট মমের জন্য কিছু করতে পারলাম না।
তাই খুব খারাপ লাগছে আমার।

ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অহেদ সরকার যা স্পষ্ট শুনতে পেল অভিনব।
অহেদ সরকার তপ্ত কন্ঠে আশ্বস্ত করে বললেন
_ ডোন্ট ওরি মাই বয়। আই উইল বি ম্যানেজ। ইউ নো দ্যাট ইউর মম টু মাচ লাভ মি ।

ঝরা হাসলো অভিনব। তারপর একটু গম্ভীর কন্ঠে বলল
_ এন্ড ইউ অলসো নো দ্যাট মাই মম লাভস মি মোর দ্যান ইউ।

হো হো করে হাসলেন অহেদ সরকার। তৃপ্তির কন্ঠে বললেন
_ আই নো দ্যাট মাই বয়। উই আর টু মাচ লাভ ইউ। টেক কেয়ার মাই সান।

_ লাভ ইউ পাপা, টেক কেয়ার অলসো।

অভিনব ফোন রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
দুদিন বাদেই ইউ এস এর ফ্লাইট। চলে যাবে বি ডি ছেড়ে , আপাতত কাজ স্থগিত। বছর খানেক পর না হয় আবার আসবে মান অভিমানের পাল্লা ভাঙতে।
গাজীপুর থেকে রওনা হলো অভিনব। উত্তরা যাওয়ার পূর্বে একটা লেকে যাচ্ছে ওহহ।
গ্রামীন পরিবেশ টা আরেকটু না হয় উপভোগ করা যাক।
লেকের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে আসলো অভিনব । বুক ভরে শ্বাস নিয়ে পকেটে হাত গুঁজে লেকের পার ধরে হাঁটতে লাগলো।
সন্ধ্যা প্রায় ছুঁই ছুঁই, ধূসর রঙা আকাশ টায় মেঘ করেছে বোধহয় বৃষ্টি হবে।
কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আসছিলো অভিনব । হঠাৎ করে এক ধূসর রঙের প্রজাপতি এসে ওর নাকের ডগায় বসলো।
অভিনব চমকালো , ধরতে গেলেই পাখা মেলে উড়ে গেল প্রজাপতি টা।
প্রজাপতি টা যেন ওকে টানছে, বলছে যাস না চলে।
তোর আপন কেউ যে আছে এখানে, তাকে ফেলেই চলে যাবি ?
অভিনব হাসলো , ফেলে রেখে গেল তার কয়েক ঘন্টার বিয়ে করা বউ কে।
ধূসর রঙের প্রজাপতি টা ব্যর্থ হলো, অভিনব তার গাড়ির ধোঁয়া উঠিয়ে চলে গেল।
পরে রইলো শুধু ধূসর রঙের প্রজাপতি টা , অভিনবর গাড়ি ধূসর রঙের মাঝে হারাতেই প্রজাপতি টা মিলিয়ে গেল ঐ ধূসর আকাশে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here