#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_33
এলামের শব্দে ঘুম ভাঙে অভিনবর। চোখ পিট পিট করে তাকাতেই বুকে ভারী কিছু অনুভব হয়। প্রথম দিকে ভ্রু কুঁচকে গেলে ও বুকের দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে। মেয়েটা লেপ্টে ঘুমিয়ে আছে। কিহ সুন্দর ই না লাগছে। প্রিয় মানুষ বলেই কি এমন সুন্দর লাগছে?
অভিনবর উত্তর মিললো না। ডান হাতে মেয়েটার চুলে বিলি কেঁটে দিলো। চুল গুলো সামান্য আঠালো হয়ে গেছে। তিন ধরে শ্যাম্পু করা হয় না। সাথে লঞ্চের পানি। সব মিলিয়ে চুলের অবস্থা নাজেহাল।
অভিনবর ভাবনার সুতো ছিঁড়ে দ্বিতীয় বার এলাম বেজে উঠলে। অভিনব হাত দিয়ে এলাম টা অফ করে দিলো।
তারপর ই ঝিলের চুলে শুষ্ক ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। মেয়ে টার কোনো খেয়াল ই নেই।
ধীর কন্ঠে মেয়েটাকে ডাকলো অভিনব। কিন্তু ঝিল উঠার বদলে আরো বেশি আঁকড়ে ধরলো।
চিন্তা মুক্ত ঘুম দিয়েছে ঝিল। অভিনব মৃদু হাসলো। ঝিলের কপালের বেবি হেয়ার গুলো সরিয়ে দিলো।
মেয়েটার নাকের পাশে হালকা তেল জমেছে। কম্বিনেশন স্কিন হওয়াতে স্কিনের তেমন প্রবলেম হয় না।
কিন্তু তৈলাক্ত ত্বক হলে এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে পারতো না ঝিল।
কারন ঝিল স্কিনের জন্য তেমন কোনো কিছুই ইউস করে না। যা তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে করা যাবে না। তাঁদের এক্সট্রা স্কিন কেয়ার করতে হয়। না হলে স্কিনে ব্রন সহ নানান সমস্যা দেখা দেয়।
যাহ কারো কাছেই কাম্য নয়। আসলেই স্কিন কেয়ারের প্রয়োজন রয়েছে।
অভিনব অতি যত্নে নাকের সাইডের তেল টুকু মুছে দিলো।
অভিনবর স্পর্শ পেয়ে ঝিল নড়ে চড়ে উঠলো। ঠান্ডা হাত টা ঝিলের গলায় ছোঁয়াতেই ধরমড়িয়ে উঠলো ঝিল ।
অভিনব যেন বোকা বনে গেল ।
ঝিল নিজেকে ঠিক করতে করতে বলল
_ আমি এখানে আর আপনি আমার পাশে কি করে ?
অভিনব অবাকের শীর্ষে। মেয়েটা হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছে ?
ঝিল এখনো প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। অভিনব বিরক্তি ঠেলে বলল
_ ঝিল কাল রাতে তুমি আমার সাথেই ঘুমিয়েছো ভুলে গেলে ।
কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো ঝিল। কালকের সমস্ত কিছু মাথায় আসতেই লজ্জা পেল।
একদম ই ভুলে গিয়েছিলো সব টা। ইসস কি লজ্জার বিষয়।
আরেক টু হলে তু দু চারটে থাপ্পর মেরে দিতো অভিনব কে।
ভাগ্যিস এমন টা করে নি। অভিনব ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ কি হয়েছে ?
_ না মানে আমি আসলে
ঝিলের আমতা আমতা দেখে অভিনবর চিন্তা হলো। ঝিল কি কোনো ভাবে ওদের সম্পর্ক কে আগাতে চায় না ?
ছেলেটার উৎসুক দৃষ্টি বলে দিচ্ছে মনের ভেতর তাণ্ডব চলছে। মন আকাশে গুঁড়ি বৃষ্টির বদলে ঝড় উঠে গেছে।
বিচ্ছেদের নীল ব্যাথা রা কেমন জেকে বসেছে। ধরা গলায় অভিনব বলল
_ কি হলো ঝিল ?
ঝিল আবারো আমতা আমতা করতে লাগলো। অভিনব কৌতুহলী মন নিজেকে দমাতে ব্যর্থ হলো।
কষ্টের সুর বাজিয়ে অভিনব বলল
_ তুমি কি কোনো ভাবে আমাদের সম্পর্ক টা আগাতে চাচ্ছো না ?
অভিনবর কথায় ঝিলের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আগে তো ঝিল এক লাইন বেশি বুঝতো। কিন্তু তাঁর সাথে থাকতে থাকতে অভিনবর গাঁয়ে ও সেই হাওয়া লেগেছে।
কি সর্বনাশ হলো। ঝিলের উত্তর না পেয়ে অভিনবর বুকে ভাঙচুর হয়ে গেল। ঠোঁট দুটো কাঁপছে । কেমন বিষাক্ত যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে। হায়রে ভালোবাসা ।
মিনিট পাঁচেক এভাবেই কেঁটে গেল। ঝিল নিজেকে শান্ত করে নিয়েছে। অভিনবর হাতে স্পর্শ করে বলল
_ আমি আসলে এক মুহূর্তের জন্য সব ভুলে গিয়েছিলাম । এই যে কালকে আমাদের মাঝে সব ঠিক হয়ে গেল। আমাদের প্রেম নিবেদন সব টা। আগের ঝিল হয়ে গিয়েছিলাম।
আমি সেটাই বলতে চাচ্ছিলাম । আর তুমি কি ভাবলে এসব।
ঝিলের কথা বুঝতে অভিনবর বেগ পেতে হলো। কিন্তু যখন কথা টা মাথায় ঢুকে গেল । ঠিক তখনি পেট চেপে হাসতে লাগলো। এতো টাই হাসতে লাগলো যে বিছানায় শুইয়ে পরলো।
হাসি যেন থামছেই না। ঝিল সেই হাসি টা উপভোগ করলো না। বরং প্রচন্ড রেগে গেল। বালিশ উঠিয়ে অভিনব কে মারতে লাগলো।
তবু ও ছেলেটার হাসি থামছে না। ঝিল হার মেনে গেল । অভিনবর দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই ওয়াসরুমের দিকে আগালো।
*
অভিনব দের আজকের প্রথম স্পট হাড়বাড়িয়া ।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। খুলনা থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং মংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে এই কেন্দ্রের অবস্থান।
হাড়বাড়িয়ার আশে পাশে ও বাঘ দেখার সম্ভবনা রয়েছে।
তবে খুব ই কম সম্ভাবনা । কিন্তু বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাবে স্পষ্ট ।
সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া টহল ফাঁড়ির পাশেই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। এর সামনের খালটি কুমিরের অভয়ারণ্য। প্রায়ই লোনা পানির কুমির দেখা যায় এই খালের চরে। তবে কুমির দেখার ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে রোদ পোহাতে কুমিরগুলো খালের চরে শুয়ে থাকে।
হাড়বাড়িয়ায় সুন্দরনের বিরল মায়া হরিণেরও দেখা মেলে। এখানকার ছোট ছোট খালগুলোতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙাসহ নানান জাতের পাখি। হাড়বাড়িয়ার খালে পৃথিবীর বিপন্ন মাস্ক ফিনফুট বা কালোমুখ প্যারা পাখিও দেখা যায়।
হাড়বাড়িয়া খালের পাড়ে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের সোনালি নামফলক। একটু সামনে এগুলেই বন কার্যালয়। এরপরে ছোট খালের উপরে ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমশ বেড়েছে। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে সামান্য সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের মাঝে গোলপাতার ছাউনি সমেত একটি বিশ্রামাগার।
ঘরটির চারপাশে বসার জন্য বেঞ্চ পাতা। পুকুরের পাড় থেকে কাঠের তৈরি সেতু গিয়ে ঠেকেছে ঘরটিতে। বন বিভাগের অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭-৯৮ সালে বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্মরণে খনন করা হয় এই পুকুর।
পুকুরের দুই পাশ থেকে সামনে চলে গেছে ইট বিছানো পথ। অল্প দূরত্বের দুটি পথই শেষ হয়েছে কাঠের তৈরি হাঁটাপথে। যে কোনো একদিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলে অন্যপ্রান্তে এসে শেষ হবে এই পথ। তবে হাতের ডান দিকের ইট বিছানো পথের শেষে রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি জঙ্গল পর্যবেক্ষণ বুরুজ। কাঠের তৈরি এই বুরুজের ওপর থেকে জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
তবে সম্প্রতি ভ্রমণে গেলে দেখা যায় এই টাওয়ারের ভগ্নদশা। উপরে ওঠাই বিপজ্জনক মনে হয়। এখানকার পুরো ট্রেইলটি এক কিলোমিটারের বেশি।
হাড়বাড়িয়ার জায়গাটিতে বাঘের আনাগোনা বেশি। প্রায়ই বাঘের পায়ের তাজা ছাপ দেখা যায়। এছাড়া চিত্রা হরিণ ছাড়াও অন্যান্য বন্য প্রাণীও এখানে দেখা মিলবে।
অভিনব রিসার্চ করে এই টুকুই কালেক্ট করেছিলো। যত টুকু জেনেছে এতে সুন্দর জায়গা টা।
ঝিল মাত্র ই ফ্রেস হয়ে এসেছে।
বইয়ের মধ্যে অভিনবর মনোযোগ দেখে ঝিল বলল
_ সারাক্ষণ এতো কি পড়ো বলো তো ? প্রফেসর ও বুঝি বই হাতে বসে থাকে।
অভিনব একটু হাসলো। একটা ইংলিশ বই পড়ছিলো সে। সময় পেলেই ইংলিশ বই নিয়ে বসে পড়ে। এর প্রতি আলাদা এক টান রয়েছে ছেলেটার।
_ আমি ফ্রেস হয়ে আসছি । ক্ষিদে পেলে চা বা কফি নিয়ে খেতে থাকো।
_ উহুহহ তুমি বানিয়ে দিবে।
_ আচ্ছা তাহলে অপেক্ষা করো ।
ঝিল মাথা দুলিয়ে বসে পরলো। কেবিনে একটা দেয়াল টিভি ও রয়েছে। ঝিল ভ্রু কুঁচকে নিলো। আগে খেয়াল করে নি। বোধহয় পর্দা দিয়ে ঢাকা ছিলো।
ঝিল বেশ খুশি ই হলো। ঢিভি অন করলো। কিন্তু ঢিভি অন হলো না। মেয়েটার হাস্য উজ্জল মুখ টা চুপসে গেল। অভিনব ট্রাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে বলল
_ এখানে ডিস পাবে কি করে ? এটা পেন ড্রাইভ দিয়ে চালাতে পারবো বোধহয় ।
আমার কাছে পেন ড্রাইভ এ কিছু ইংলিশ মুভি নেওয়া আছে। রাতে সময় পেলে ওপেন করে দিবো নে।
ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব গাঁয়ে জ্যাকেট জড়িয়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে পরলো।
ঝিল একটু থেমে থেকে পিছু ডাক দিলো। অভিনব ঘুরে তাকালো।
_ আমি ও যাবো। আজ আমি ও কফি বানাবো। মানে তোমাকে সাহায্য করবো।
অভিনব এক ফালি স্বচ্ছ হাসিতে সম্মতি জানালো।
*
সকাল ছয়টা প্রায়। হাড়বাড়িয়া যাবে আটটার দিকে।
তাই নাস্তার টাইম সেট করা হয়েছে সাত টায়। প্রায় সবাই ঘুমিয়ে আছে। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে এই বিশ্রাম টুকুই যেন বড় প্রাপ্তি। অভিনব দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
ঘুম ভালো তবে অতিরক্তি ঘুম একদম ই ভালো নয়। এতে শরীর তাঁর কর্ম ক্ষমতা হাড়িয়ে ফেলে। তাই সবার উচিত সঠিক ঘুম। অভিনব বেশ সুন্দর করে পানি গরম করে কফি বসিয়ে দিলো। ঝিল অতি মনোযোগে চেয়ে আছে। ঝিলের মনোযোগে ছেলেটা প্রশস্ত হাসলো। এই ছোট ছোট ভালোবাসা গুলো প্রচন্ড পরিমানে শান্তি দেয়।
কফি বানানো শেষে অভিনব ঝিলের দিকে কফি কাপ এগিয়ে দিলো। মুখে দিয়েই প্রশান্তির শ্বাস নিলো ঝিল। অভিনবর বাহু তে মাথা রেখে বলল
_ তুমি সব দিক থেকেই পারফেক্ট।
_ তাই ?
_ হু আর আমি সব দিক থেকে ই কাঁচা।
দারুন এক মাতাল করা হাসি দিয়ে অভিনব বলল
_ থাক না দু একটা গুন অপূর্ন। এতে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে ? সব কিছু পারফেক্ট হওয়া জরুরি নয়।
_ যদি হয় ?
_ আমি আছি না ? আমাদের মাঝে সব ঠিক হয়ে গেছে। এর মানে আমরা একে অপরের শক্তি।
যদি কেউ কখনো হার মেনে নেই তাহলেই ডুবে যাবো।
মাঝ পথে ছেড়ে চলে যাবে না তো ঝিল ?
_ অভিনব।
_ ছেড়ে যেও না ঝিল। আমি তোমায় নিয়ে অনেক টা পথ এগিয়ে গেছি।অনেক আশা জমিয়েছি। প্লিজ ছেড়ে যেও না।
ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো। অভিনব এমন কেন বলছে ?
_ তুমি ই তো বলেছিলে বর্তমান কে সুন্দর করতে। তাহলে এখন কেন ভবিষ্যত টেনে চলছো।
আমরা কখনো আলাদা হবো না অভিনব। কখনোই না।
অভিনব ঝিল কে জড়িয়ে ধরলো। অভিনবর সংস্পর্শে মেয়েটা কেঁপে উঠলো। পাখির বাচ্চার মতো অভিনবর বুকে লেপ্টে গেল।
মুহর্ত টা হয়ে রইলো প্রেম ময়। পাশে ধোঁয়া উঠা কফি। ঝিল হাসলো। একটা সময় সে এমনি স্বপ্ন দেখতো।
এক কাফ কফির সাথে প্রিয় মানুষের আলিঙ্গন।
সব কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আদৌ কি সবই সত্যি ?
*
নাস্তার টেবিলে বসে সবাই খাচ্ছে। তবে মাহেরা মন ভীষন খারাপ। অভিনবর সাথে ঝিলের সখ্যতা যেন বেড়েই চলেছে। এবার খুব ভয় হচ্ছে। অভিনব কি ঝিলের প্রেমে পরে গেল ?
মাহেরা ঠিক করে নিলো অভিনব কে আজ ই মনের কথা বলবে।
আফরা ইশারা করে বলল নাস্তা করতে। কিন্তু মাহেরার মনোযোগ অভিনব আর ঝিলের দিকে। ছেলেটার প্রতি একটু বেশিই ঝুঁকে পরেছে। এর আগে রিলেশন করেছে তখন তো এমন মনে হয় নি।
অভিনবর প্রতি অতিরিক্ত ভালো লাগা মেয়েটার হৃদয়ে ছোঁপ ফেলে দিলো। আফরার দিকে তাকিয়ে একটু করুন করে হাসলো।
_ হে অভিনব তোমরা লেট কেন করলে ? এক সাথে খাওয়া হলো না আজ।
_ উমম অমিত আজ আমরা একটু লেট করলে ও তোমরা একটু বেশি ই ফাস্ট নাস্তা করেছো।
রোজ তো টেনে তুলতে হয়।
অমিত হালকা হেসে চেয়ার টেনে বসলো। ঝিলের উদ্দেশ্যে বলল
_ অভিনব , ঝিল তোমার শুধু বন্ধু থেকে আরেক টু কাছের বন্ধু হলে খুব ভালো হবে।
ঝিল মাথা নিচু করে নিলো। অভিনব বিফের সাথে লুচির টুকরো মুখে দিয়ে বলল
_ আই থিংক । বাট ঝিল তো বুঝতেই পারছে না। ভেবেছিলাম প্রপোজ করবো। এখন মনে হচ্ছে ক্যানসেল করতে হবে।
অভিনবর কথাতে স্পষ্ট রসিকতা । ঝিল চোখ বন্ধ করে নিলো। সবাই যখন ওদের বিষয়ে জানতে পারবে তখন কি খুব লজ্জা লাগবে ?
অভিনবর কথা তে অমিত মুচকি হাসলো। ঝিলের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বলল
_ তোমাদের জুটি টা বেশ সুন্দর। একদম সুখী কাপল ।
বিয়ে তে ইনভাইট করো কিন্তু।
অভিনব ঝরা হেসে অমিতের সাথে হাত মেলালো। ঝিল অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। কোনো মতে বলল
_ ভাইয়া ভাবি কে রেখেই চলে এসছেন। আচ্ছা আমি বরং ভাবির কাছেই যাই। আপনার গল্প করুন।
ঝিলের পালিয়ে বাঁচা দেখে অমিত হাসলো। অভিনবর সাথে বেশ আমোদ করেই বসলো।
অভিনব আর ঝিল সাধারন বন্ধু যে নয় এটা খুব ভালো করেই জানে ওহহ।
অমিত মন থেকে একটা ইচ্ছা প্রকাশ করলো। ঝিল আর অভিনব যেন একে অপরের ই হয়।
দুজনের ভালোবাসার ছিটে ফোঁটা সবাই নিজ চোখে দেখেছে। এটা শুধু বন্ধুত্বের হলে ও অমিত চায় ওদের সম্পর্ক টা যেন গাঢ় হয়।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_34
নাস্তা শেষে সবাই কেবিনে চলে আসলো। একটু পর ই বোর্ট এ উঠানো হবে। গন্তব্য হাড়বাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। এটা যাওয়ার জন্য বোর্ট এ করে হাড়বাড়িয়া খাল পাড় করতে হবে। অভিনব দ্রুত গোঁজ গাজ করছে। তা দেখে ঝিল বেশ বিরক্ত হচ্ছে। সব কিছু তেই এতো তাড়া হুড়ো করার কি প্রয়োজন?
_ তাড়াতাড়ি করো ঝিল । একটু পর ই সবাই বোর্ট এ নেমে যাবে। আজকে আমরা মাঝে বসবো ।
_ কেন ?
_ তুমি দেখেছো কর্নারে রিক্স থাকে। যদি পরে যাও তো সমস্যা হবে।
_ কিছু হবে না। আমি কর্নারেই থাকবো।
_ ঝিল।
_ প্লিজ এমন করো না। আমি মাঝে বসে ইনজয় করতে পারবো না। সবাই কথা বলবে আর আমার মনোযোগ নষ্ট হবে।
অভিনব ভেবে দেখলো ঝিলের কথা ঠিক। মাঝে বসলে সবার কথায় ফেঁসে যেতে হয়। এতো গুলো মানুষ এক সাথে যাচ্ছে কথা তো হবেই।
অভিনব কথা বাড়ালো না। ঝিলের আলসেমি দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। প্রথম ট্যুর হওয়ার কারনে আলসেমি টা স্বাভাবিক। অভিনব মৃদু হেসে ঝিলের ব্যাগ গোছাতে লাগলো।
মেয়েটা একদম নেতিয়ে গেছে। অভিনব ঠিক করে নিলো এখান থেকে গিয়ে ঝিল কে নিয়ে এক টা দিন লম্বা রেস্ট নিবে।
অভিনব যখন অর্ধেক টা ব্যাগ গোছালো ঝিল তখন পেছন ঘুরে তাকালো।
অভিনব কে দেখে মৃদু হাসলো। এতো কেয়ার দেখে ঝিলের মনে শীতল হাওয়া বইতে লাগলো।
অভিনবর জ্যাকেট এর হাতা টেনে বলল
_ কাল আমি তোমার ব্যাগ গুছিয়ে দিবো।
অভিনব হালকা হাসলো। ব্যাগ গোছানো শেষে ঝিলের চুল গুলো গুছিয়ে দিতে দিতে বলল
_ বউ এর দায়িত্ব পালন করতে চাচ্ছো ?
_ আসলে
_ সমস্যা নেই ঝিল। এমন নয় যে আমার পরিপাটি সংসারী বউ চাই।
আমার তোমাতেই চলবে। একটু একটু করে তোমাকে গুছিয়ে নিবো।
ঝিল মাথা টা ঝাঁকিয়ে হাসলো। ইসস কাজ শেখা টা সত্যি ই খুব প্রয়োজন। অভিনব তো সব পারে।
হয়তো আল্লাহ ওদের একে অপরকে দিয়েই পরিপূর্ন করবেন।
_ চলো যাওয়া যাক।
_ হুমম।
অভিনব কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাঁটা লাগালো। ঝিল ও হাটছিলো। হঠাৎ অভিনব পেছন ফিরে তাকালো। ঝিল কে মাথা থেকে পা অব্দি দেখে নিয়ে হালকা হাসলো।
কুর্তি কলার টা মুরিয়ে বলল
_ নাও পারফেক্ট। একটা চশমা হলে বউ বউ লাগতো।
_ অভিনব !
অভিনব ঠোঁট চেপে হাসলো। ঝিলের নাক টিপে দিয়ে বলল
_ এখন পিচ্ছি বউ লাগছে।
ঝিল লজ্জা হাসলো। অভিনব সময় দেখে আবার হাঁটা লাগালো।
সবাই একে একে বোর্ট এ উঠে গেল। ঝিল আর অভিনব সাধারন আচারনেই আছে। কোনো বিশেষ কোনো পরিবর্তন নেই।
ওদের মাঝের দুরুত্ব আগের মতোই তবে মনের দূরত্ব শূন্য তে নেমে এসেছে। থেকে থেকে পানি উঠিয়ে অভিনবর মুখে ছিটিয়ে দিচ্ছে। অভিনব কখনো রাগ করছে তো কখনো হাসছে। অভিনবর এমন আচারনে ঝিলের দুষ্টুমি দ্বিগুন বেড়ে যাচ্ছে।
মাহেরা বিষয় টা আড়চোখে খেয়াল করেছে। মনের অন্তকর্নে জেলাসি নামক এক অনুভূতি হচ্ছে।
প্রিয় মানুষ কে অন্য কারো সাথে দেখা কারোই কাম্য নয়। মেয়েটা নিজেকে সামলে নিয়ে হাসি ফুটালো। আজ ই অভিনব কে মনের সমস্ত অনুভূতি জানিয়ে দিবে।
_ মাহের ভাই ।
_ হুম বল ।
_ ভাবী কে একটু কাছে আসতে বলো না।
_ কেন ?
_ একটু দরকার আছে প্লিজ।
_ আচ্ছা।
মাহের তার স্ত্রী কে মাহেরার পাশে বসিয়ে দিলো।
_ কি হয়েছে মাহেরা ? তোমার শরীর খারাপ?
_ না ভাবি। একটা কথা বলার ছিলো।
_ হ্যাঁ বলো।
_ না কি ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।
_ আরে বলো না।
মাহেরা হাঁস ফাঁস করতে লাগলো। আফরা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মাহেরা কে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করে বলতে বলল।
মাহেরা হাত কচলাতে কচলাতে বলল
_ আমি অভিনব কে পছন্দ করি।
_ তুমি সিউর ?
_ হ্যাঁ ভাবি ।
চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগলো। মুখের হাসি টুকু উবে গেছে তাঁর । মাহেরার হাতে হাত রেখে বলল
_ আমার মনে হয় তোমার পিছিয়ে যাওয়া উচিত।
অভিনব ভাইয়ার সাথে ঝিলের সম্পর্ক টা আমার কাছে বন্ধুত্বর থেকে বেশি ই মনে হচ্ছে।
_ কিন্তু ভাবি যদি এমন টা না হয়ে থাকে।
_ সেটা ও ঠিক। আচ্ছা তোমার ভাই কে বলি কেমন ?
মাহেরা প্রথমে সম্মতি জানিয়ে আবার নাকোচ করে দিলো। আফরার কাঁধে মাথা রেখে বলল
_ ভাইয়া জানলে রাগ করতে পারে। আমি বরং আজ অভিনব কে জানাই।
_ উমম ঠিক আছে। তবে মাহেরা, বোন টি আমার বেশি আশা বুনো না।
কষ্ট পেলে তোমার ই খারাপ লাগবে।
মাহেরা মলিন হাসলো। আফরা আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মাহেরা কে আগেই বুঝিয়েছিল । কিন্তু মাহেরার ভাষ্য মতে ঝিল যে ধাঁচের মেয়ে তাঁতে অভিনবর ইন্টারেস্ট থাকবে না।
তাঁর উপর অভিনব তাঁকে পানি থেকে তুলেছিলো। এতে বেশ কনফিডেন্স পাচ্ছে ।
সব কিছু মিলিয়ে অভিনব তাকে পছন্দ করবে নিশ্চয়ই।
*
হাড়বাড়িয়া খাল দিয়ে হাড়বাড়িয়া তে এসে থামলো বোর্ট। সামনেই লাল সবুজ রেলিং দিয়ে স্টিলের ব্রিজ বানানো। সবাই নামার আগে ব্রিফিন দেওয়া হলো।
” আমরা বর্তমানে হাড়বাড়িয়া তে উপস্থিত রয়েছি। এখানে ভয়ের তেমন কারন নেই। কিছু নিয়ম রয়েছে সেগুলো মেনে চললেই হবে। তবু ও সাবধান। ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র টা আপনারা আলাদা করেই ঘুরতে পারবেন। এতে সবার দলবদ্ধ হতে হবে না। তবে যে যেখানেই থাকুন না কেন। যে কোনো সমস্যা হলে সোজা ঘাট এ চলে আসবেন। কারন আমাদের গন্তব্য এখান থেকেই শুরু হয়েছে আর আমরা সবাই কে নিয়েই এখান থেকেই ফিরে যাবো ”
ট্রাভেল এজেন্সির ব্রিফিন দেওয়া শেষে সবাই একে একে বোর্ট থেকে নেমে ব্রিজ দিয়ে হাঁটা লাগালো। ব্রিজ টা বেশি লম্বা নয় আর চওড়া কয়েক ফিট মাত্র।
ঝিল লম্বা করে শ্বাস নিয়ে হাঁটা লাগালো। একটু দূর গিয়ে পেছনে হুরমুরিয়ে চলে আসলো।
অভিনব পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগালো। অভিনবর জ্যাকেট খামচে ধরে বলল
_ বানর।
_ একাই তো যাচ্ছিলে। যাও এবার , খুব শখ হয়েছিলো তাই না ?
ঝিল মুখ টা বাঁকিয়ে নিলো। অভিনব সামান্য নিচু হয়ে বলল
_ মুখ বাঁকানো টা কি রোজকার অভ্যাস ?
_ অভিভনববব
_ ঝিললল
_ ধ্যাত।
অভিনব একটু হাসলো। ঝিলের বাহু ধরে আগলে হাঁটা লাগালো। কিছু মানুষ এখান থেকেই বানরের সাথে মজা করা শুরু করে দিয়েছি।
অভিনব ফোঁস করে দম ফেললো। এরা শোধরাবার নয়।
শীত কাল হলে ও পাড়ের দিক টা কাঁদায় মাখো মাখো। বানর গুলো তাতেই লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে।
পর্যটক রা কিছু ছবি বন্দি করছে। বানর গুলো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। রোজ হাজারো মানুষ কে দেখে তাঁরা। তাই অতো টা ও অবাক হচ্ছে না।
সামনে আগাতেই বিশাল বড় আকারের পিলার দেখতে পেল।
যেটাতে লেখা হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র । ঝিল এই প্রথম ছবি তুলতে আগ্রহ দেখালো।
অভিনব হাত দিয়ে কেয়া বাত স্টাইল করে বলল
_ সাজেক 0 কিলোমিটার পিলার এর মূল্য টা আজ বুঝলাম। শেষ মেশ ঝিল ও পিলারের সাথে প্রেম করে নিলো।
_মোটে ও না। আমি এমনিতেই ছবি তুলতে চাচ্ছি। তুমি তো লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ছবি তুলেছে। ফাজিল কোথাকার।
_ আর তুমি ?
_ আমি ?
_ হ্যাঁ । তুমি কি করেছো ? তুমি ও তো লুকিয়ে আমার ছবি তুলেছো।
_ মোটে ও না। আমি কখন ছবি তুললাম।
_ আচ্ছা ফোনে কার ছবি সেট করে রেখোছো হুম?
ঝিল দাঁত দিয়ে জ্বিভ কাটলো। অভিনব এক ফালি হেসে ঝিলের ছবি তুলে নিলো। সবাই যে যার মতো ই হেঁটে চলেছে। যেহেতু এটা আবাসিক এলাকার মতো তাই কারো সমস্যা হওয়ার কথা না।
তবু ও গার্ড রা যথেষ্ট নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন।
বেশ কিছু পর্যটক অভিনবর দিকে তাকিয়ে আছে। একজন তো অভিনবর সামনে এসে বললো ছবি তুলবে।
অভিনব সায় জানালো । সম্পূর্ন বিদেশী না হয়ে ও বিদেশী দের মতো ট্রিট পাচ্ছে সে।
অভিনব আনমনেই হেসে উঠলো। ঝিল অভিনবর বাহু খামচে ধরে অভিনব কে হাত দিয়ে ইশারা করে একটু নিচু হতে বললো।
অভিনব নিচু হতেই ঝিল ফিসফিস করে বলল
_ কোনো মেয়ে ছবি তুলতে চাইলে নাকোচ করে দিবে। কেমন ?
_ আচ্ছা। বলবো আমার বউ ছবি তুলতে বারন করেছে।
_ ধ্যাত । কি সব বলো ? বলবে যে তোমার আম্মু বলেছে মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে।
ঝিলের কথা শুনে অভিনব কোনো রিয়্যাকশন করতে পারলো না। হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝতে পারছে না।
_ কি বলেছি মনে থাকবে তো ?
_ যদি বলে তোমার সাথে লেপ্টে থাকি কেন ?
ঝিল নাক ফুলিয়ে নিলো। বিজ্ঞদের মতো গলা ঝেরে বলল
_ বলবে আমি তোমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ।
ঝিলের উত্তরে অভিনব প্রসন্ন হলো। মেয়েটার হাত টা শক্ত করে বুকে চেপে ধরে উচ্চারন করলো।
_ একান্ত ব্যাক্তিগত মানুষ।
ঝিল তাঁর ঝকঝকে তকতকে দাঁত গুলো বের করে হাসলো। অভিনবর সাথে আবার হাঁটা লাগালো। কিছু দূর যেতেই চোখে পরলো বন বিভাগের কার্যালয় । তাছাড়া ও রেস্ট হাউস রয়েছে। রেস্ট হাউজ থাকার জন্য অবশ্য ই পেমেন্ট করতে হয়।
ঘর গুলো অনেক টা পাহাড়ি ধাঁচের মতো। পিলার দিয়ে খানিকটা উঁচু করে বানানো হয়েছে। যাতে করে বন্যার সময় পানি উঠলে ও ঘর গুলো ডুবে না যায়। কিছু মানুষ সিঁড়ি তে বসে ছবি তুলছে। হলুদ রঙের সজ্জিত ঘর টাকে বেশ মোহনীয় ই লাগছে।
ঝিল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। ঝিলের খুব ইচ্ছে হলো পাহাড়ে যেতে। আচ্ছা ওহ কি অভিনব কে বলবে ?
এক আড়ষ্ঠতা থেকে আর বলা হলো না। ঝিল অভিনবর আঙুলের ভাঁজে আঙুল দিয়ে হাঁটা লাগালো।
কিছুদূর যেতে বাঁশের তৈরি এক ঘর দেখতে পেল।
এখানে নাকি খাঁটি মধু পাওয়া যায়। ঘরের কোনে এক টা বানর দেখেই ঝিল জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো । অভিনব এক হাতে ঝিল কে আগলে রাখলো। মেয়েটা বানর দেখলেই কেমন চুপসে যায়।
অভিনব ঝিল কে আশস্ত করে হাঁটা লাগালো। সামনেই একটা সাঁকো । দেখে স্টিলের ই মনে হচ্ছে। তবে সাঁকো তে উঠে বুঝতে পারলো এটা কাঠের তৈরি। আর খানিকটা নড়বড়ে ওহ।
অভিনব ঝিলের দিকে তাকিয়ে বলল
_ একা আসতে পারবে ?
ঝিল মাথা দুলিয়ে বলল
_ নাহহ
অভিনব ফোঁস করে দম ফেললো। ঝিল কে কোলে করে পুরো সুন্দরবন ঘোরাতে পারলে বোধহয় মেয়েটা খুশি হতো।
_ আচ্ছা আমাকে ধরে ধরে আসো।
ঝিল ভদ্র মেয়ের মতো মাথা ঝাঁকালো। অভিনব কে একটা ফ্লাইং চুমু দিতে গিয়ে আবার লজ্জায় গুটিয়ে গেল। শেষ মেশ চুমু টা বনের মাঝেই চাঁপা পরে গেল।ঝিল বোকার মতো হাসলো।
হাড়বাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে গোল পাতার গাছ রয়েছে । মূলত পুরো সুন্দরবনেই গোলপাতার গাছ রয়েছে। গোল পাতার সাহায্যে তৈরি করা আছে বিভিন্ন ঘর।
সবাই বেশ কিছুক্ষণ হাঁটতে লাগলো। সামনে আবার কাঠের তৈরি ট্রেইল। তবে এবার আশে পাশে বেশ বড় বড় গাছ। ঝিলের শরীর ঝাঁকনি দিয়ে উঠলো। ভুতুরে অনুভূতি হচ্ছে। সবাই যে যার মতে হেঁটে চলছে। ওরা দুজন একটু পিছিয়ে গেছে।
ধরা গলায় ঝিল বলল
_ অভিনব।
_ হুমম।
_ ভয় হচ্ছে খুব।
অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ঝিলের চোখ মুখ বলছে সে ভয় পাচ্ছে খুব। অভিনব চট জলদি এক ফন্দি এটে ফেললো।
আশে পাশে এক বার চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর ঝিল কে হঠাৎ করেই শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
অভিনবর এমন আচারনের জন্য প্রস্তুত ছিলো না ওহ। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
অভিনবর শরীর থেকে মিষ্টি এক স্মেল আসছে। নিশ্চয়ই কোনো কড়া পারফিউম মেখেছে।
ঝিল কে ছেড়ে দিতেই ঝিল মাথা নিচু করে ফেললো। অভিনব মুখ চেঁপে হাসতে লাগলো ।
এখন বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটা মাথা নিচু করে হাঁটবে । লজ্জায় ভয়ের কথাই ভুলে গেছে।
অভিনব নিজের আচারনে নিজেকে বাহবা দিতে লাগলো। ঝিলের সান্নিধ্যে পেয়ে মাথা টা একটু বেশি ই কাজ করছে।
কাঠের ট্রেইল পেরিয়ে কিছু দূর হাঁটতেই চোখে পরলো পদ্ম পুকুর। ঝিল লাফিয়ে উঠলো। যেন কখনো পদ্ম ফুল দেখে নি। অভিনব বোকার মতো চেয়ে আছে। মেয়েটা তাকে অবাক করে বারং বার। শহুরে গ্রাম্য এলাকায় থেকে ও ঝিলের এমন আচারন কেন ?
ঝিলের ফ্যামিলি কি এতো টাই বন্দি করে রাখতো ওকে ?
নাহ তা কি করে সম্ভব ? যে মেয়ে এতো বার বিয়ের আসর থেকে পালায় সে মোটে ও কোনো বন্দি শালায় ছিলো না।
অভিনবর ভাবনায় ছেদ পরলো ঝিলের ডাকে।
_ অভিনব।
ঝিলের দিকে তাকালো। মেয়েটা তাঁর থেকে বেশ খানিকটা দূরে চলে গিয়েছি। পাগল পুরো।
_ তাড়াতাড়ি আসো। আমি এই পদ্মফুল নিবো।
অভিনব ঠোঁট দুটো প্রসারিত করলো।
তার ভাবনা গুলো আবার ঝিলের মাঝে চলে আসলো। আচ্ছা ঝিল কে যদি পদ্মফুল দিয়ে সাজানো হয় তো কেমন লাগবে ?
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_35
ঝিলের দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে অভিনব। মেয়েটা কে আজকাল একটু বেশি ই সুন্দর লাগে। প্রথম যখন দেখেছিলো তখন মনে হয়েছিলো টিনেজার বাচ্চা একটা মেয়ে। যে সব সময় ভয়ে গুটিয়ে থাকে। কিন্তু এখন তো পুরোই অন্য রখম লাগে।
এর কারন কি হতে পারে ?
অভিনবর উত্তর মিললো না। ঝিলের ঝাঁঝানো ডাকে চমকে তাকালো। মেয়েটা কখন যে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো বুঝতেই পারে নি।
বা হাতে মাথা চুলকিয়ে অভিনব বলল
_ স্যরি। আমি আসলে খেয়াল করি নি।
_ উফফ হয়েছে ফরমালিটিস ? প্লিজ আসো না। দেখো পুকুর টা বেশ বড়। আমার তো নামতেই ইচ্ছে করছে।
অভিনব হালকা হাসলো। পুকুরের উপর দিয়ে কাঠের ব্রিজ করা হয়েছে। যার শেষ মাথায় ছাউনির মতো করে ঘর।
পুকুরের পাশেই একটা ঘাটলা দেখতে পেল। এখান থেকে একটু নামলেই পদ্মফুল নেওয়া যাবে।
_ কি হলো ?
_ না কিছু না। চল এবার।
_ হুমম
ঝিল অভিনব কে ফেলেই ছুটতে লাগলো। যেন মুক্ত চড়ুই পাখি। গাঁয়ের লেমন কালার কুর্তি তে ঝিল কে প্রকৃতির সব থেকে সুন্দর তম ফুল মনে হচ্ছে। সবাই কে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বনের ভেতরে হালকা রঙের জামা পরতে। কারন এতে করে পশুর আক্রমনাত্মক দৃষ্টি কম পরবে। যদি ও বেশির ভাগ পর্যটক ই মানে নি।
অভিনব ফোঁস করে শ্বাস ফেলে হাঁটা লাগালো। ঝিল ততক্ষণে কাঠের ব্রিজের শেষ প্রান্তে চলে গেছে। উড়না মেলে দিয়ে গোল গোল করে ঘুরছে।
অভিনবর ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসি ফুটে উঠলো।
এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটা পৃথিবীর সব থেকে বেশি সুন্দরী।
যার জন্য দুনিয়া এফোর উফোর করতে ও রাজি।
ঝিলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। পকুর টা বেশ বড় আকারের।চারপাশে নারকেল গাছের মতো দেখতে কোনো এক গাছের সারি। পুরো পুকুরেই রয়েছে হাজারো পদ্মফুল। গোলাপি রঙের পদ্মফুলে পুরো পুকুর টা কে পদ্মরাজ্য মনে হচ্ছে।
যে রাজ্যের এক মাত্র রাজকন্যা ঝিল। মেয়েটার মুক্ত দানার মতো হাসি অভিনবর বুকে আচঁর কেঁটে দিলো।
শুকনো ঢোক গিলে অভিনব হাঁটা লাগালো। ঝিলের থেকে এক হাত দুরুত্ব বজায় রেখে বলল
_ তোমাকে পদ্মরানীর মতো লাগছে ঝিল । পদ্মফুল গুলো তোমাকে কাছে ডাকছে।
_ অভিনব !
_ সত্যি বলছি। ওয়েট দেখাচ্ছি।
ঝিল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। অভিনব পেছনে মুরিয়ে রাখা হাত টা সামনে নিয়ে আসলো। এক গুচ্ছ পদ্মফুল দেখে ঝিলের মন নেচে উঠলো।
কৃতঙ্গতার দৃষ্টি তে তাকিয়ে হাত বাড়ালো। অভিনব ফুল গুলো তে চুমু খেয়ে নিলো। তবু ও ঝিলের হাতে দিলো না।
বিস্ময়ে ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । এই মুহুর্তে অভিনবর দিকে তাকালে সে নির্ঘাত জ্ঞান হারাতো। অভিনবর চোখ দুটো ঝিলের হরিনী চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের গঠন মাপতে ব্যস্ত সে। আল্লাহর কি অপরূপ সৃষ্টি অথচ কোনো অহংকার নেই।
আর মানুষ সামান্য কিছুতেই অহংকারে নেতিয়ে যায়।
আর এভাবে আমাদের সমাজ মাটিতে পতিত হয়।
ভঙ্গুর হয়ে যায় আমাদের মানসিকতা।
_ অভিনব! কি হয়েছে তোমার ?
ঝিলের ঝাঁকুনি খেয়ে অভিনব অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। ঝিলের দিকে ফুল গুলো বারিয়ে দিয়ে মৃদু হাসলো।
*
বালুর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সবাই। আফরার ডাকে ঝিল থমকে দাঁড়িয়ে ছে। মেয়েটা তাকে কথার প্যাঁচে ফাসিয়ে দিয়েছে। অন্য দিকে অভিনবর দৃষ্টি করুন। চেয়ে ও পারছে না ঝিল কে সাথে নিয়ে হাঁটতে ।
উপায় না পেয়ে একাই হাঁটতে লাগলো। হঠাৎ করে মাহেরার আগমন। মেয়েটা হুট হাট যেন আকাশ থেকে পরে।
_ হায়।
_ হায়।
_ একা কেন ?
_ এমনি তেই ।
_ আচ্ছা অভিনব আমাকে তোমার কেমন লাগে ?
অভিনব প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকালো। মাহেরা বিচলিত হয়ে বলল
_ আই মিন আমি দেখতে কেমন ? সুন্দরী নাকি মোটামুটি , আমাকে ছেলেরা পছন্দ করে নাকি।
অভিনব বিষয় টা আঁচ করতে পারলো। মেয়েটা কে এখনি সব কিছু জানাতে চায় নি তাঁর একটাই কারন ভ্রমন। এখন জানলে একটু ও আনন্দ করতে পারবে না। তবে মাহেরা কে দেখে সিরিয়াস মনে হচ্ছে।
_ কি হলো বলো ? আমি কেমন সুন্দরী ?
অভিনব মৃদু হাসলো। কৌশলে সে উত্তর দিলো।
_ প্রতি টা মানুষ তাঁর নিজ জায়গা থেকে সুন্দরী।
তুমি ও তোমার দিক থেকে সুন্দরী ।
_ অভিনব ! এটা কেমন উত্তর হলো ? প্লিজ বলো আমি লাইফ পার্টনার হিসেবে কেমন ?
অভিনব অন্য দিক ফিরে চোখ বন্ধ করলো। বার কয়েক শ্বাস ফেলে বলল
_ তোমাকে যে ভালোবাসবে তাঁর কাছে লাইফ পার্টনার হিসেবে তুমি সেরা। ভালোবাসার প্রকার ভেদ টা একটু ভিন্ন।
_ আচ্ছা। আমাকে তোমার লাইফ
মাহেরা কে না বলতে দিয়েই অভিনব বলল
_ আমার ক্ষেত্রে সম্পূর্ন ভিন্ন। একজন ম্যারিড পারসন হিসেবে তোমাকে বিবেচনা করা আমার খাটে না।
মাহেরা অবাকের সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকে তাকলো। অভিনব নিছক ই মজা করছে তাঁর সাথে। মাহেরা হো হো করে হেসে উঠলো। অভিনবর ভেতর থেকে এক ফালি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। মাহেরার থেকে নিজেকে গোটানোর একটাই পদ্ধতি তা হলো সত্যি টা জানিয়ে দেওয়া।
_ মাহেরা আমাকে নিয়ে তোমার ভাবনা কে বাড়িয়ে ও না প্লিজ। এতে করে তুমিই কষ্ট পাবে। আই হোপ তুমি বুঝতে পারছো।
_ কিন্তু অভিনব
_ নো মোর ওয়ার্ড মাহেরা। ঝিল আমার স্ত্রী। ওহ যখন তোমার কথা জানতে পারবে তখন কষ্ট পাবে।
আমি আমার স্ত্রী কে কষ্ট দিতে চাই না। প্লিজ তুমি এ বিষয়ে আর ভেবো না।
_ অভিনব! আমার সাথে মজা করছো তুমি ?
_ একটু ও না। আমি সত্যি টাই বলছি। আই নো আমার আগে বলা উচিত ছিলো। কিছু পার্সোনাল প্রবলেম এর জন্য বলা হয় নি।
কিন্তু এখন প্রয়োজন মনে হলো তাই বিষয় টাকে ধামা চাঁপা দিতে চাচ্ছি না আমি।
তুমি নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী। তবে আমার কাছে সেই দৃষ্টিটা সম্পূর্ন ভিন্ন।
মাহেরার চোখে পানি চিক চিক করছে। অভিনবর বলা কথা গুলো সে বিশ্বাস করতে পারছে না। সত্যি কি ঝিল অভিনবর স্ত্রী?
ঝিলের মতো একটা মেয়ে অভিনব স্ত্রী। বিষয় টা ঠিক মেনে নিতে পারছে না। অভিনব ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বলল
_ যেহেতু তুমি সিরিয়াস তাই তোমার মনের শান্তির জন্য আজ ই আমি সবাই কে আমার আর ঝিলের বিষয় টা বুঝিয়ে বলবো।
_ ঝিল তোমার স্ত্রী ? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো ?
মাহেরা সামান্য বিদ্রুপ করে আবার বলল
_ তোমার মতো একটা ছেলে যে সব দিক থেকে পারফেক্ট সে একটা সাধারন মেয়ে কে বিয়ে করবে ?
_ আর কিছু বলো না মাহেরা। ভালোবাসার সঙ্গা টা তুমি জানো না । পারফেক্ট দেখে দৈনিক জিনিস পত্র হয় তবে ভালোবাসা নয়।
আমার জীবনের ঝিলের জায়গা অনেক অংশ জুড়ে।
ভালোবাসা অন্যায় নয় , তুমি ভালোবাসো আমি সেটা সম্মান করি।
তবে যাহ সম্ভব নয় তার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করাই কি উত্তম নয় ?
মাহেরা মাথা নিচু করে নিলো। অভিনব খুব ভালো করে বোঝালে ঝিল তাঁর জীবন সজ্ঞীনি । ভালো খারাপ দুটোই ওর। পারফেক্ট কাউ কে নয় ঝিল কেই শেষ অব্দি চায়।
মাহেরা উত্তর করতে পারে নি। মাহেরার বাঁচন ভঙ্গি তে অভিনবর রাগ করা উচিত ছিলো।
তবে ওহ রাগ করে নি। মাহেরার পরিস্থিতি টাই এমন যে বকে ঝকে কিছু বোঝানো যাবে না।
অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেললো। হয়তো মাহেরা কষ্ট পাচ্ছে তবে এতে ওর কি দোষ ? মানবিকতার খাতিরে বন্ধুত্ব হতে পারে ভালোবাসা না।
যার অস্তিত্ব সম্পূর্ন অন্য কারো সেই অস্তিত্ব বিলিয়ে দেওয়ার অধিকার ওর নেই।
আফরার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে ঝিল। অভিনবর ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠলো। প্রতি টা লোম কূপ সজাক হয়ে আছে। অস্ফুটন স্বরে উচ্চারন করলো
_ তুমি আমার বাগানের সব থেকে থেকে সুন্দরতম ফুল ঝিল। কখনো ঝরে যেও না। তুমি বিনা বেঁচে থাকা অসম্ভব না হলে ও বড্ড যন্ত্রনাদায়ক।
*
কাঠের ট্রেইল পেরিয়ে সবাই হাঁটা লাগালো। গন্তব্য ওয়াচ টাওয়ার। যদি ওহ শোনা গেছে এখান কার ওয়াচ টাওয়ার টা ভাঙচুর প্রায় তবু ও সবাই উঠবে বলে ঠিক করলো। বোধহয় এই বছর মেরামত করা হয় নি।
কারন কাঠের ব্রিজের কাঠ গুলো ও কেমন নড়বড়ে । ঝিল তো ভয়ে কাঁপছে আর তাই অভিনবর জ্যাকেট খামচে হেঁটে চলেছে। কাঠের ট্রেইল এর নিচের দিকে কিংবা দু পাশের মাটি তে কেওড়া গাছের শ্বাস মূল দেখা যাচ্ছে। খানিকটা বাঁশের মতোই। বাঁশ জন্মানোর সময় যেমন মুখি বের হয় ঠিক তেমনি। টাওয়ার এর দিকে তাকিয়ে অভিনব বলল
_ এটা তে রিক্স আছে , না যাওয়াই ভালো।
ঝিল ও সম্মতি জানালো। যদি ও কয়েক জন ওয়াচ টাওয়ারে উঠেছিলো। তবে গার্ড রা সর্তক করে দেওয়াতে সরে গেছে। হারবাড়িয়ার ফুল ভিউ টা আর দেখা হলো না। যদি ও ওয়াচ টাওয়ার গুলো তুলনা মূলক ভাবে বেশি উঁচু নয়।
ঝিলের মনে একটা প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারছে। করবে কি করবে না তাই ভেবে আর করা হয় নি। তবে এখন খুব জানতে ইচ্ছে করছে। অভিনবর বাহু তে খামচে ধরে বলল
_ একটা জিনিস জানার ছিলো।
_ হুমম বলো।
_ সুন্দরী গাছ কোন গুলো ?
অভিনব হালকা হেসে ঝিলের দিকে তাকালো। রসিকতার ছলে বলল
_ আমরা সামনে পিচ্ছি যে গাছ টা দাঁড়িয়ে আছে সে গাছের সামনে সুন্দরী গাছ তুচ্ছ।
তাকে দেখার কি খুব প্রয়োজন ?
_ শুধু শুধু তেল মারা যাকে বলে।
_ সত্যি বলছি ।
_ মানলাম না।
_ আচ্ছা বলো কি করলে মানবে।
_ ধ্যাত কিছু ই না। আমি জানি আমি সুন্দরী না।
_ ডাহা মিথ্যে কথা বললে । আসলেই মেয়েরা এমনি হয় যত ই সুন্দর হোক না কেন বলবেই আমি সুন্দর না।
কথা টা বলেই অভিনব চাঁপা হাসিতে মেতে উঠলো। ঝিল সে দিকে লক্ষ্য করলো না। আবেদনের স্বরে বলল
_ প্লিজ দেখা ও না কোনটা।
_ আচ্ছা দেখাচ্ছি।
ঝিল খুশি তে গদগদ হয়ে গেল। অভিনব আশে পাশে চোখ বুলিয়ে একটু জোড়ে হাঁটা লাগালো। একটা গাছের সাইডে গিয়ে ঝিল কে ইশারায় কাছে ডাকলো।
_ এই যে এটা সুন্দরী গাছ।
_ বুঝলে কী করে ?
ঝিলের এমন কথা তে অভিনবর বেশ হাসি পাচ্ছে। ঝিলের দিকে একটু ঝুকে বলল
_ ম্যাজিক।
_ অভিনব !
_ আরে এই যে দেখাচ্ছি তোমায়। দেখো এই গাছের পাতার পেছনের দিক টা সামান্য গোল্ডেন কালার। তাছাড়া পাতা দেখেই তো চেনা যায়। বিশেষ কোনো পদ্ধতি তে আমি তো চিনি নি কোনো গাছ ।
ঝিল লজ্জা পেল। সব কিছু চেনার জন্য তো এক্সট্রা ফরমুলা থাকে না সেটাই তো স্বাভাবিক।
_ আচ্ছা এবার চলো তো। এতো লাজ লজ্জায় লাল টুকুটুকে হতে হবে। তুমি এমনি তেই সুন্দর ।
_ অভিনব।
অভিনব হাসলো। ঝিলের হাত দুটো মুঠো বন্দী করে বলল
_ চলো।
হারবাড়িয়ার প্রধান আকর্ষন পদ্মপুকুর ই বলা যেতে পারে। কারন এখানে বানর ছাড়া কিছুর ই দেখা মিলে নি। হরিনের ছিটে ফোঁটা ও নেই।
তাহলে বাঘ কি করে থাকবে ?
কাঠের ট্রেইল দিয়ে হাঁটার সময় খটখট একটা আওয়াজ হচ্ছে। কখনো ভয় লাগছে তো কখনো বা ভালো লাগছে। সব কিছু মিলিয়ে মুগ্ধ কর একটা পরিবেশ।
কুয়াশা ভেদ করে এখনো সূর্য্যি মামা তাঁর কিরন দিতে পারে নি।
সব কিছু ই কুয়াশা ময়। কিছু দূরে কাঠের ব্রিজের উপর বানর চোখে পরলো। ঝিল ভয় পেয়ে অভিনব কে খামচে ধরলো।
_ এতো ভয় পাচ্ছো কেন ? আমি আছি তো।
আসো আমার সাথে , কিছুই হবে না।
ঝিল সম্মতি জানালে ও ভেতরে ভেতরে চুপসে গেছে। কখন না বানর টা তাঁর মাথায় এসে বসে।
ঝিলের ভাবনা সফল হলো না। বরং খুব সুন্দর ভাবে বানর টিক অতিক্রম করে ফেললো তাঁরা ।
বনের গহীন জঙ্গলের আশে পাশে ঝি ঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। ঝিল খানিকটা বিরক্ত হলো। কানে যেন তালা লেগে গেছে। তবে পাখির সুমধুর কন্ঠের বাহবা দিতেই হয়।
ভালো খারাপ মিলিয়ে যদি উপভোগ করতে পারা যায় তাহলেই স্বার্থকতা। সব ভালো হলে তো আর্টিফিশিয়াল মনে হবে। একজন প্রকৃতি প্রেমির কাছে আর্টিফিশিয়াল জিনিসের প্রতি আর্কষন অতি নগণ্য।