ধূসর রঙের প্রজাপতি পর্ব ৩১+৩২

#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_31

বোর্ট চলছে , দূরত্ব ও বাড়ছে। শুধু চলছে না ঝিলের ছোট্ট মন। বাজে এক অনুভূতি তে ছেঁয়ে গেছে সর্বাঙ্গ। মাহেরার গালে ঠাস ঠাস চর বসিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো। তবে এটা ও সত্য মাহেরা ঠিক ঠাক সাঁতার পারে না।
তবে মাহেরা যে ইচ্ছে করে নদীতে পরেছে তা ভালোই বুঝতে পারছে ঝিল। রাগের কারন টা হচ্ছে অভিনব কেন পানিতে ঝাঁপ দিয়ে দিলো। অন্য কেউ কি পারতো না ?
ঝিলের মুখ টা চুপসে গেছে। ফাঁটা বেলুন এর মতো মুখ খানি অভিনব কে পুরাচ্ছে। মনের ভেতর নীল ব্যথার আস্তরন তৈরি হলো । সে কি সত্যি ই ভুল করেছে ?
আচ্ছা মাহেরা কে পানি থেকে তোলাই কি ছিলো তাঁর অপরাধ । মানবিতার খাতিরেই তো করেছে সে।

অভিনবর সাথে একটা কথা ও হলো না আর। ঝিল আর অভিনবর মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব চলছে। বুকের ভেতর খা খা করছে।

বোর্ট লঞ্চের কাছে এসে থামলো। অভিনব ঝিলের জন্য অপেক্ষা করছে । কিন্তু ঝিল অভিনব কে পাশ কাটিয়ে একাই লঞ্চে উঠে পরলো। অভিনবর মুখ টা একটু খানি হয়ে গেল। এ কেমন যন্ত্রনা ? মেয়েটা কি তাঁর সাথে অভিমান করে রইল ?

_ অভিনব তাড়াতাড়ি আসো। ভিজে তো একাকার হয়ে আছো।
পাগল মেয়েটা কি করে যে পরলো। ওর জন্য তোমাকে কষ্ট করতে হলো।

_ ইটস ওকে মাহের। এটা টোটালি একটা এক্সিডেন ।

_ আচ্ছা আসো চেঞ্জ করে নাও।

অভিনব কথা বাড়ালো না। বুক চিরে আসা দীর্ঘশ্বাস টা লুকিয়ে লঞ্চে উঠে পরলো।

*

ঝিল বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসেছে। অভিনব মুখ গোমড়া করে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। অভিনব কে দেখে খানিক টা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। নিজেকে সামলে নিয়ে কাবাড থেকে ট্রাওয়াল টা রেখে দিলো। অভিনবর কপালে দুটো ভাঁজ পরলো । মেয়েটার আচারন অভিনবর হৃদয়ে রক্তের স্রোত নামিয়ে যাচ্ছে।

_ ঝিল

_ হুমম

অভিনব অবাক চোখে তাকালো। ঝিলের এই সাধারন আচারন টা ও তাঁকে নুইয়ে দিচ্ছে।

_ আজ একাই লঞ্চে নেমে আসলেন যে ?

ঝিল আলতো হাসলো। চুলে চিরুনি দিয়ে বলল
_ সব সময় তো কেউ আমার সাথে থাকবে না। তাই একাই চেষ্টা করলাম।

অভিনব কিছু বলল না। অভিনবর ভেজা শরীর দেখে ঝিলের কষ্ট হলো। পরক্ষণেই কষ্ট টা রাগে পরিনত হলো। অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু মেয়েটা একবার ও বলল না চেঞ্জ করতে। উপায় অন্তর না পেয়ে অভিনব ট্রাওয়াল নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।

ঝিলের দু চোখের কুর্নিশ নোনা জলে ভরে উঠলো। ফোন টা নিয়ে অবিনবর ছবি দেখতে লাগলো। এটা অভিনবর অগোচরে তোলা। অভিনব যখন বানর দের খাবার খাওয়াচ্ছিল ঠিক সেই সময় টায় একটা বানর অভিনবর দিকে লোলুপ দৃষ্টি তে চেয়ে ছিলো।
তখন গগন কাঁপিয়ে হেসেছিলো অভিনব। সেই হাস্য উজ্জল ছবি টা ঝিল ক্লিক করে নিয়েছিলো।

বাথরুমের দরজা খোলার শব্দে ঝিল ফোন টা লুকিয়ে ফেললো। ঝিলের হাঁস ফাঁস অবস্থা দেখে অভিনবর ভ্রু বেঁকে গেল। তবে সে সেই দিকে পাত্তা দিলো না। অভিনব ঝিলের উদ্দেশ্যে বলল
_ খাবার খেতে চলুন।

_ ভালো লাগছে না।

_ আচ্ছা।

অভিনব চলে গেল। ঝিলের মন টা পুনুরায় বিষিয়ে গেল। অভিনব তাকে একবার জোর ও করলো না। দু চোখে পানি টলমল করছে। বুকের ভেতর পুরছে। তবু ও চোখ থেকে পানি ঝরতে দিলো না।
অভিনবর এই যত সামান্য অবহেলা সহস্র ব্যথার মালা গেঁধে ফেলেছে।

জানালা দিয়ে অন্ধকার আকাশ টাকে দেখছে ঝিল। মন পাঁজরে মেঘ জমেছে। আড়ালে আবডালে পরে গেছে ভালোবাসা গুলো। অভিমান যেন দ্বিগুন উৎসাহ হয়ে ফিরছে। এ কেমন জীবন? ভিত্তি হীন , নীরবতা, নীল বেদনা সব মিলিয়ে নরকীয় খেলা।
হায়রে পৃথিবী। এই সুখ তো এই দুখ। মানুষ বিচিত্র রঙের প্রানী । ঠিক তেমনি এদের অনুভূতি গুলো ও বিচিত্র। পেসারের মতো আপ ডাউন করে। ঝিল তাচ্ছিল্য হেসে পেছন ফিরে তাকালো। অভিনব কে খাবার হাতে দেখতে ভারী অবাক হলো।
বিস্ময়ে হতবাক ঝিল বেদনার স্বরে উচ্চারন করলো
_ অভিনব।

অভিনবর কোনো উত্তর নেই। অভিনব একি ভঙ্গি তে দাঁড়িয়ে আছে। যেন কোনো যন্ত্র মানব। বেশ কিছুক্ষণ সেভাবেই চলে গেল।

খাবার টা টেবিলে রেখে ঝিলের পাশে এসে বসলো। ঝিল সামান্য হাসার চেষ্টা করলো। তবে কেন যেন হাসি টা বাষ্প হয়ে উবে গেল।

_ খাবার না খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পরে এটা জানেন ?

ঝিল উত্তর দিতে পারলো না। অভিনবর ভাব মুর্তি বোঝার চেষ্টা চালালো। তবে লাভের লাভ কিছু ই হলো না।
অভিনব আরেকটু কাছে এসে বলল
_ অভিমানী রাজকন্যা যখন খাবার খেতে চায় না তখন তাঁর পাপা তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়।
কিন্তু আমার কাছে আপনি তো সেটা নন।বরং আপনি আমার ভবিষ্যত রাজকন্যার মাম্মা হতে পারেন।

অভিনবর কথায় চমকালো। ছেলেটার মাথা ঠিক আছে ? সে কি সব বলে যাচ্ছে।

_ এখন অব্দি আপনি ই কিন্তু আমার মন রাজ্য রানী। আমি খাইয়ে দিতে পারি তো ?

_ অভিনব !

_ উহুহহ নো মোর ওয়ার্ড । সন্ধ্যার পর আপনি নিজ থেকে তো আমার সাথে কথাই বলেন নি।
তাই এখন আমি বলবো আর আপনি শুধু ই শুনবেন।

মেয়েটা বোকা বোকা ফেস করে তাকিয়ে রইলো। সব যেন তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ।
অভিনব চিংড়ি মাছের খোসা ছাড়িয়ে ভাত মাখালো। ঝিলের দিকে বাড়িয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ঝিল কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।
ক্রুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে অভিনব বলল
_ হা করুন তো আমার মন রাজ্য রানী। আপনাকে না খাইয়ে আমি ও যে খেতে পারবো না।

ঝিল ভদ্র মেয়ের মতো হা করলো। অভিনব তাঁর অধর কোনে হাসি রেখে ঝিলের মুখে খাবার তুলে দিলো।
ঝিলের চোখ দুটো ছলছল করছে। অভিনবর পাঁজরে চোখের পানি গুলো আটকে গেল। ঝিলের দিকে ভ্যাগা ভ্যাগা মুখ করে বলল
_ আম স্যরি।

_ কেন ?

_ আমি শুধুই মানবিকতার খাতিরে মাহেরা কে বাঁচাতে গিয়েছিলাম। আর কিছু ই নয়।

ঝিলের দু চোখ ফেঁটে কান্না আসছে। মুখ ঘুরিয়ে বলল
_ আমাক কেন বলছেন ?

অভিনব খাবার টা রেখে হাত ধুয়ে নিলো । ঝিলের হাত টা মুঠো বন্দী করে বলল
_ তাহলে কাকে বলবো ? আমার আপন কে আছে এখানে ?

_ আমি আপন ?

_ উহহুহ আপনি আমার মন রাজ্য রানী।

ঝিল আনমনেই হেসে উঠলো। নিজেদের সম্পর্কের যে যোজন যোজন দূরত্ব রয়েছে তা একদম ই খেয়াল নেই।
অভিনব ঝিলের হাত টা বুকে ছুঁইয়ে অনুনয়ের স্বরে বলল
_ মাফ করা যায় না ?

_ অভিনব।

_ মাফ করে দাও না ঝিল । দেখো বুকের ভেতর খা খা করছে। শূন্যতা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

ছলছল নয়নে তাকালো ঝিল । অভিনবর থেকে হাত সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না।
তাই খানিকটা জড়োসড়ো হয়ে বসলো। অভিনব ঝিলের কাছাকাছি আসতেই ঝিলের আত্মা কেঁপে উঠলো ।

_ আপনি জানেন ঝিল আমি কতোটা কষ্ট পেয়েছি ?
আপনার অবহেলা টুকু আমাকে কতো টা আঘাত করেছে। আগে তো এমন হয় নি এখন কেন এমন হয় ?

_ আপনি কি বলছেন ?

_ ভালোবাসি , আমি আপনাকে ভালোবাসি ঝিল । এই যে আমাদের আত্মিক যে সম্পর্ক এই সম্পর্কে ও আমি ভালোবাসি। খুব করে চাই আপনাকে।

ঝিল ঝটকা মেরে হাত টা ছাড়িয়ে নিলো। দু চোখ মুছে নিয়ে বলল
_ মাহেরা আপু আপনাকে পছন্দ করে সেটা ?

_ আমি জানি না। আমার কিচ্ছু যায় আসে না তাতে।

_ আপনি ভুল কিছু বলছেন না তো ?

_ উহহহু একদম নয়।

_ মাহেরা আপু আমার থেকে

ঝিল কে থামিয়ে দিলো অভিনব। কপালে কিঞ্চিত ভাঁজের সঞ্চার হয়েছে। দু চোখ রক্ত লাল হয়ে গেছে। অভিনবর এমন রূপ দেখে ঝিল আঁতকে উঠলো। বার বার শুকনো ঢোক গিলছে।

_ মাহেরা আপনার থেকে বেশি সুন্দরী তাই তো ?
আই ডোন্ট কেয়ার । আমার বিন্দু মাত্র ইন্টারেস্ট নেই তাঁতে । আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না আমি আপনাকে

_ ভালোবাসি, আমি ও আপনাকে ভালোবাসি অভিনব। খুব করে চাই আপনাকে।

অভিনব অবাক চোখে তাকালো। ঝিলের ঠোঁটের কোনে লজ্জা হাসি । অভিনবর ইচ্ছে হচ্ছে ঝিল কে বুকে জড়িয়ে নিতে । কিন্তু শরীরে সে শক্তি টুকু যেন নাই। অভিনবর চোখ ভিজে গেল। প্রেমের মায়ায় চোখের নোনা জল নিতান্তই তুচ্ছ।

*

অভিনবর দিকে তাকাতেই লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে ঝিল।
একটু আগে কি বলেছে ওহ। ইসসস
অভিনব ঝিলের মুখে ভালোবাসার কথা শুনেই বেরিয়ে যায়। দম বন্ধকর অনুভূতি হচ্ছিলো। বোধহয় প্রথম প্রেমে পরার অনুভূতি ঠিক ঠাক নিতে পারে নি সে। ঝিল ওহ যেন মনে মনে তাই চাইছিলো । অভিনব চলে যেতেই বুক ভরে শ্বাস নিলো।

তবে মিনিট পাঁচেক পর ই অভিনব চলে আসলো। সেই থেকেই ছেলেটা ঝিলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ঝিল মাথা উঁচু করতেই পারছে না। অভিনব আরেকটু লজ্জা দিতে রোমান্টিক গান প্লে করে দিলো।

লজ্জায় জ্বিভে কামড় দিলো ঝিল । ইসস এখন কি হবে ?
অভিনব ধীরে ধীরে ঝিলের দিকে আগালো। ঝিলের মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
_ মন রাজ্য রানী আপনি তো আমাকে মেরেই দিয়েছেন। এখন কি হবে আমার ?
আমি তো লাঘাম হীন হতে শুরু করেছি।

ঝিল মাথা নিচু করে নিলো। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল
_ আপনি খুব বাজে।

_ আচ্ছা?

_ হুমম ।

_ তা কিসের জন্য আমি বাজে? আমার জানা মতে আমি তো কিছুই করি নি।

ঝিল তেতে উঠলো। অভিনবর শার্ট খামচে ধরে বলল
_ পিঠে দু চারটে পরলে বুঝবেন। আপনি পানির মধ্য মাহেরা আপু কে জড়িয়ে ছিলেন ।
না জানি আর

_ ঝিল।

অভিনবর মুখে স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে । ঝিল ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল
_ আজ কাল কাউ কে বিশ্বাস করা যায় না। হতেই পারে আপনি

_ মারবো এক চর। কি সব বলে যাচ্ছে। আমি কিছু কেন করতে যাবো। জাস্ট মাহেরা কে এক হাতে জড়িয়ে ছিলাম । তার জন্য

ঝিল ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো। অভিনব কান্নার কারন জানতে চাইলেই কান্নার বেগ যেন বেড়ে গেল। আদুরে কন্ঠে বলল
_ আপনি মাহেরা আপুর পেটে ছুইয়েছেন। খুব খারাপ আপনি।

অভিনবর অবাক প্রায় অবস্থা , মেয়েটা এমন কেন ? পানি তে জড়িয়ে ধরলে অবশ্যই তাকে গাঁয়ের সাথে মিশিয়ে ধরতে হবে । তাই বলে অভিনব কি কোনো ফিলিংস নিয়ে ছুইয়েছে ?
হায়রে বোকা মেয়ে। নারী জাতি এমনি। পৃথিবী উল্টে গেলে ও স্বামী কে অন্য কারো সাথে মিনিট খানেক সহ্য করতে পারে না।
#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_32

নিশুতি রাতের পরিবেশ টা সব সময় ই সুন্দর। অবাক করা কিছু সৌন্দর্য চোখে ধরা দেয়। সাথে যদি থাকে প্রিয় মানুষ তাহলে তো জীবন টাই রঙিন হয়ে যায়। রাত প্রায় সাড়ে দশটা সবাই ঘুমিয়ে গেছে। অভিনব আর ঝিল ছাঁদের রেলিং এ উঠে বসে আছে। একটু হের ফের হলেই সোজা পানিতে। তবে কারো মাঝেই সেই ভয় টা নেই। দুজনেই আবেগে আপ্লুত হয়ে আছে। প্রথম প্রেমে পড়ার মতো রঙিন অনুভূতি তে ডুবে আছে। সব কেমন সুন্দর লাগছে। এই যে টলটল করা কালো পানি গুলো এগুলো ও কেমন সুন্দর। অথচ পরে গেলে মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি ।
কিন্তু ভয় লাগছে না। সমস্ত ভয় কে যেন জয় করে নিয়েছে।
চাঁদ মামা কুয়াশা সরিয়ে উঁকি মারছে । তবে দুষ্টু কুয়াশা গুলো আবার আড়াল করে দিচ্ছে। কি নিষ্ঠুর তাই না ?
চাঁদের নাকি কলঙ্ক রয়েছে। অথচ চাঁদ টা এতো সুন্দর। আসলে সুন্দর অনুভূতি গুলো কে কলঙ্কের তকমা লাগানো মানুষের অভ্যাস ।
সমস্ত কিছু ছাপিয়ে ঝিলের কৌতুহলী মন বায়না ধরলো।
_ আমরা এখন আশে পাশে ঘুরবো ।

_ এখন কি করে ?

_ ঐ যে বোর্ট এ করে যাবো। আশে পাশেই ঘুরবো। প্লিজ প্লিজ বারন করবেন না প্লিজ।

_ ঝিল এই রাতের বেলা ঘুরতে যাবেন ? এটা কতো টুকু ঠিক ভেবেছেন সেটা ?

_ হুম আমি জানি এটা একটু শক্ত কাজ। তবে আপনি চাইলেই হবে। প্লিজ প্লিজ এভাবে বারন করবেন না।

অভিনব বার কয়েক শ্বাস নিয়ে ভাবলো। তাঁরপর হাসি মুখে বলল
_ ডান , বাট এখানে কিছু কন্ডিশন আছে। যদি মেনে নিতে পারেন তো আমরা যাবো এই রাতের জঙ্গল দর্শনে।

_ কন্ডিশন ?

_ হুহহ

_ উমম , আচ্ছা ঠিক আছে। বলুন কি কন্ডিশন আছে। যদি ও আমি সব কন্ডিশনেই রাজি। তবু ও শুনে নেওয়া ভালো। বলুন এবার আপনার কন্ডিশন।

ঝিলের মনোযোগ দেখে অভিনব হাসলো। মেয়েটার সুন্দর মুখাশ্রি বুকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রেমের সাথে অবাধ্য ইচ্ছে ও যোগ হয়েছে। এখন প্রকৃতির সান্নিধ্য বড্ড প্রয়োজন।
অভিনব সিরিয়াস মুডে আসলো। ঝিলের হাত দুটো ধরতে নিয়ে ও ধরলো না। কেমন কেমন অনুভূতি হচ্ছে। যখন থেকে ভালোবাসি কথা টা বলেছে ঠিক তখনি এক রাশ লজ্জা এসে ভর করেছে।
_ শুনুন তাহলে। আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। রাজি ?

_ হুমম।

_প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের মাঝে সম্পর্ক টা কি ? লাইক বি এফ , জি এফ ?

ঝিল এক ফালি হাসলো। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল
_ উহহুহ আমাদের মাঝে সম্পর্ক টা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত স্বামী স্ত্রী র সম্পর্ক।
বি এফ , জি এফ এর সম্পর্ক বোধহয় নয়।

অভিনব ঝিলের উত্তরে তৃপ্ত হলো। এটাই শুনতে চেয়েছিলো ওহ।

_ আচ্ছা। তাহলে এটা বলুন স্বামী স্ত্রী একে অপরকে কিভাবে , আই মিন কি নামে সম্বোধন করে ?

_ বেশির ভাগ ই তুমি তুমি বলেই ডাকে। কিন্তু কেন বলুন তো ? হঠাৎ এমন আজব প্রশ্ন যে ?

অভিনব মুখে আঁধার টেনে নিলো । ঝিলের দিকে করুন দৃষ্টি তে তাকালো। ঝিলের মাথায় কিছুই ঢুকলো না। অভিনবর দীর্ঘশ্বাসে পরিবেশ ছেয়ে গেল। বুক ভরে অক্সিজেন নিয়ে বলল
_ আমরা কি বলি ? আপনি আপনি ? তাই তো ?

ঝিল উত্তর দিলো না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।অভিনব চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে। তবে ঝিল যে দৃশ্য লক্ষ্য করলো না। কারন সে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ।

_ আমরা কি আপনি আপনি থেকে তুমি তে আসতে পারি না ? এটা কি খুব কঠিন হবে ? কিংবা কোনো অনৈতিক আবেদন ?

_ কিন্তু আমি তো

_ বেশি প্রেসার ক্রিয়েট করা লাগবে না। জাস্ট একটু, একটু চেষ্টা , সেটা ও কি

_ পারবো । আমি চেষ্টা করবো তুমি তে আসার। সমস্ত আড়ষ্টতা ও দূর করবো।

অভিনব হাসলো। ঝিলের হাত টা মুঠো বন্দী করে নিয়ে হাঁটা লাগালো। এই সময় টাতে সবাই ঘুমিয়ে আছে। এটা শহর নয় যে সবাই জেগে থাকবে। পানির উপরে তাঁর উপর জঙ্গলের রাত দশ টা মানে ই অনেক রাত। বোর্ট চালকের কেবিনে গিয়ে নক করলো। নিশ্চয়ই লোকটা বিরক্ত হবে। তবে বউ এর ইচ্ছে টা ও যে বেশি গুরুত্বপূর্ন।
মিনিটের মাঝে ঘুমু ঘুমু মুখ নিয়ে বোর্ট চালক চলে আসলেন।
চোখে মুখে সামান্য বিরক্তির ছায়া।

_ বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত মামা। আসলে একটা আর্জি নিয়ে আসছিলাম যদি করে দিতেন।

_ কি আর্জি ?

_ আমরা বোর্ট এ করে আশে পাশে ঘুরতে চাচ্ছিলাম । কাইন্ডলি মামা একটু আসবেন।

_ কিন্তু স্যার

_ প্লিজ মামা আপনি বারন করবেন না। আমি খুব আশা নিয়ে এসেছি । এই যে মেয়েটাকে আশা দিয়েছি। কত শখ নিয়ে এসেছে বলুন তো ?

লোকটা যেন গলে গেল। মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। ঝিল তো মহা খুশি । অভিনব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বউ কে খুশি দেখার জন্য এই সব কিছু সামান্য মাত্র।

*

বোর্ট চলছে। অভিনব অবশ্য বোর্ট চালক কে এক্সট্রা পেমেন্ট দিবে বলে ঠিক করেছে। এই নিশুতি রাতে ওদের নিয়ে ঘুরবে যে এটাই তো অনেক । টচ লাইট মেরে আশে পাশে দেখছে। রাত যতো গভীর হয় পাখিরা তো ঘুমন্ত হয়। পুরো জঙ্গল নিস্তব্ধ হয়ে আছে।
তবে নিশাচর দের অস্তিত্ব এখনো আছে। কিছু নিশাচর পাখি কিচির মিচির শব্দ তুলছে ।
জঙ্গলের ঝোঁপ ঝার থেকে ঝিঝি পোকারা চি চি করে শব্দ তুলছে। সে শব্দে কানে যেন তালা লেগে গেল।
তবুও ঝিলের মুখে হাসির রেখা। বনের ভেতর দিয়ে বোর্ট চলছে। খুবি সামান্য গতিতে।
_ অভিনব একটা কথা বলুন তো। চাঁদ টা ও কি আমাদের সাথে যাচ্ছে ?

_ হুমমম যাচ্ছে তো। আমরা যে দিকে যাচ্ছি চাঁদ টা ও সে দিকেই যাচ্ছে। দেখেছেন চন্দ্র মামা ও আমাদের নিশুতি ভ্রমনের সাথে আছে।

_ একটা কথা বলি?

_ হুমম বলো।

_ এই যে আমাদের এই সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত গুলো এগুলো আদৌ কি দীর্ঘ হবে ?

অভিনবর ভ্রু কুঁচকে গেল। বিষয় টা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। ঝিলের কথাটা অভিনবর বুকে দীর্ঘশ্বাস নামিয়ে দিলো।
মেয়েটা এমন কেন ভাবছে ?

_ অভিনব কিছু বলছেন না যে ?

_ একটা কথা কি জানো ঝিল ? ভবিষ্যত যেমন ই হোক বর্তমান কে আগে সুন্দর করো।
হাতে হাত রেখে না হয় বাকি টা পথ চলবো। আমরা কখনো ই আলাদা হবো না। বুঝলে ?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো । অভিনব ক্যামেরা হাতে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করলো। ঝিল তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। অভিনবর মৃদু হাসি গাঁয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে যাচ্ছে।
জ্বলন্ত আগুনের মতো চোখ দুটো ক্যামেরায় থাকায় বিশেষ জিনিস টির বেশি প্রতি আকর্ষন করছে।
এক প্রকার ঝাঁপিয়ে নিয়ে নিলো ক্যামেরা টা। অভিনবর অবাক প্রায় অবস্থা ।

_ আগুনের ফুলকির মতো জ্বলছো কেন ? হঠাৎ করে কি হয়েছে ?

_ ক্যামেরায় কাকে দেখা হচ্ছিলো হুহহ ? বড্ড খারাপ মানুষ তো আপনি। বউ থাকতে আবার অন্য মেয়ের ছবি দেখছেন। নিশ্চয়ই এটা মাহেরা আপু ?

অভিনব ভ্যাগা ভ্যাগা দৃষ্টি তে তাকালো। এই মেয়েটা এতো সন্দেহ কেন করছে ? জীবনের প্রতি টা পদেই যদি সন্দেহ করে তাহলে কি করে হবে ?
এই সামান্য ছবির বিষয় টা ও ঘেটে দিচ্ছে। নারী তুমি যত ই ভালোবাসা পাও না কেন সন্দেহ করা তোমার সহজাত অভ্যাস । অভিনব অধর কোনে হাসলো।

_ ওকে বাবা এটায় মাহেরাই ছিলো । এবার মিসেস সরকার একটু চেইক করুন তো ছবি গুলো।

বাঁকানো ভ্রু যুগল অভিনবর দিকে অবিশ্বাসের রেখা ফুটালো। বিরক্তি নিয়ে ক্যামেরা ওপেন করলো। মিনিট পাঁচেক ছবি গুলো দেখতেই লাগলো। চোখ দুটো ছলছল করছে।
অভিনবর হৃদস্পন্দন এর গতি বেড়ে গেল। মেয়েটা কাঁদছে ? কিন্তু কেন ? অভিনব ঝটকা মেরে ক্যামেরা নিয়ে নিলো। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির দম ফেললো।

_ এতো এতো ছবি সব আমার ?

_ হুমম

_ এতো যত্ন করে রেখেছেন ? আমি তো বার বার চাইছিলাম ক্যামেরা টাই ভেঙে ফেলি। তখন আফরা , মাহেরা আপুদের ছবি তুলে নিলেন। এখন দেখি সেগুলো নেই। শুধু আমি আর আমি।

_ আপনি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাডাম। তুমি আমার বউ ঝিল। এই সম্পর্কের মানে বুঝো ? এক পাহাড় সমান সময় এক সাথে বাঁচার ইচ্ছা।
ভালোবাসা , ভালোলাগা , প্রেম সব কিছুর স্বার্থকতা বিয়ে তে হয়।
আর আমাদের , তো বিয়ে টাই ছিলো সব কিছুর শুরু। যদি সেদিন তুমি আমার গাড়ি তে এসে ধাক্কা না খেতে তাহলে আমি তোমায় পেতাম না ঝিল ।
কষ্ট হচ্ছে খুব। কেন দেড় বছর আগে তোমাকে খুজলাম না।

_ অভিনব

_ হুমম

_ আমাদের ভাগ্যে ছিলো এটা। ওমন একটা পরিস্থিতিতে আমি কিংবা আপনি কেউ ই প্রস্তুত ছিলাম না।
আপনি মন খারাপ করছেন কেন ?

_ এখনো আপনি করেই বলছো ?

জ্বিভ কেঁটে নিলো ঝিল । বা হাতে মাথা চুলকিয়ে বলল
_ স্যরি ।
তুমি করেই বলছি। এখন হ্যাপি তো ?

অভিনব একটু হাসলো। বাচ্চা বউ বিয়ে করার একটা সুবিধা অবশ্যই আছে। এই যে নিজের মতো করে গড়ে নেওয়া যায়।
পৃথিবী কে নিজ হাতে বোঝানো যায়। আর অধিকার টা সব সময় ই সেরা।

বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে লঞ্চে ফিরে আসলো। বোর্ট চালক কে এক্সট্রা পেমেন্ট দিতেই ওনি চকচকে চোখে তাকালেন ।
সবাই পেটের দায়ে কাজ করে। টাকার জন্য ই তো মানুষ প্রবাসী হয়। সব কিছুর সাথে টাকা ও প্রয়োজন হয়।

*

একি বেডে শোয়া নিয়ে দুজনের মাঝেই আড়ষ্টতা কাজ করছে। ঝিল বার বার হাত কচলাচ্ছে । কাল অভিনব বসে বসে ঘুমিয়েছে। আজ ও কি ছেলেটা এভাবেই থাকবে ?
ঝিল মিন মিন করে বলল
_ তুমি বেডে শুইয়ে পরো।

_ আর তুমি ?

_ আমি ?

_ হুমমম।

_ না মানে আমি , আমি

অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেললো। ঝিল কে ইশারায় বেডে বসতে বললো। ঝিল বসলো না। অভিনব ই উঠে আসলো । ঝিলের হাত দুটো মুঠো বন্দি করতেই ঝিল কেঁপে উঠলো।
অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। অভিনবর দিকে আবেদন ময়ী দৃষ্টি তে তাকালো। অভিনবর দৃষ্টি স্থির। নিজেকে সামলে নেওয়ার দারুন এক ক্ষমতা রয়েছে। ছেলেটা সব দিকেই পরিপূর্ন। তাহলে, আল্লাহ কেন এই পরিপূর্নর সাথে জোট বেঁধে দিলেন অপরিপূর্নর ?

_ আমাকে ভরসা করো তো ঝিল ?

_ হ্যাঁ ।

_ তাহলে সমস্যা কোথায় ? আমরা দুজন নিজেদের আড়ষ্টতা কাটাতে পারবো না বলো ?

_ হুমম পারবো তো । কিন্তু আমার কেমন কেমন লাগছে যে।

_ বর কে কেমন কেমন লাগছে ?

_ উহহুহ মন কে। আমার মনে হচ্ছে

_ কিছু ভুল হয়ে যাবে ?

ঝিল মাথা নিচু করে নিলো। লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে আছে। ঝিলের এলোমেলো চুল গুলো আরেকটু এলোমেলো করে দিলো।
ভ্যাগা ভ্যাগা করে তাকাতেই অভিনব খিল খিল করে হাসলো। মেয়েটা যেন সেই হাসিতেই আটকে গেল।
রহস্য ময় এই হাসিতেই ঘায়েল হয়েছে ওহ।

_ তোমার জন্য শাস্তি রয়েছে ঝিল।

_ শাস্তি ?

_ হুমমম। অনেক বড় শাস্তি।

_ কেন ? আমি কি আবার করেছি ?

_ তুমি কাল আমাকে রেখেই ঘুমিয়ে পরেছিলে।
আর আমি সারা রাত কষ্ট করেছি। আজ আমি ঘুমাবো আর তুমি বসে থাকবে।

_ অভিনব !

_ কোনো কথা নয়। এটাই শাস্তি , আর তোমাকে মেনে নিতে ও হবে।

ঝিল প্রথম দিকে একটু মন খারাপ করলে ও মুহুর্তেই হেসে ফেললো। অভিনব বেডে শুইয়ে পরলো আর ঝিল পাশে বসে রইলো।

ছেলেটার গাঁয়ের মিষ্টি গন্ধে পুরো কেবিন ম ম করছে । ইসস অভিনব বুঝি শুধুই তাঁর ?

_ লাইট টা অফ করে দাও ঝিল। আলো তে আমি ঘুমাতে পারছি না।

বিনা শব্দে লাইট নিভিয়ে দিলো ঝিল। ঘুট ঘুটে অন্ধকারে ঝিলের দম বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস যেন ভারী হয়ে পরছে। হঠাৎ অভিনব তাঁকে কাছে টেনে নিলো। এক হাতে জড়িয়ে ফিস ফিস করে বলল
_ অভ্যাস করে নাও বউ। আমি কিন্তু খুব খারাপ মানুষ ।

ঝিলের শ্বাসের গতি বেড়ে যাচ্ছে। ঝিল কে আরেক টু কাছে টেনে নিলো । মেয়েটার মাথা বুকে টেনে নিয়ে বলল
_ আমার অভ্যাস নেই কারো মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার।
তবে আমি চেষ্টা করছি তুমি ঘুমাও।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here