ধূসর রঙের রংধনু পর্ব -১১+১২

#ধূসর_রঙের_রংধনু – ১১+১২
#তাসনিম_তামান্না

— কি হয়েছে বলো তো তোমার এমন অস্থির হয়ে পায়চারি করছ কেনো?
— ফরিদা যদি কখনো জানতে পারো আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি। তখন কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?
ফরিদা রাশেদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল
— আমার সাথে এই রাতের বেলা তুমি মজা করছ?
— আমি মজা করছি না ফরিদা আমি সিরিয়াস। পৃথিবী গোল আমার পাপ আমার সামনে ঘুরছে
— কিসব আবল তাবল বকছ?
— আমি ঠিকি বলছি ফরিদা। আমি ১৮ বছর আগে একটা বাচ্চাকে তার মা’র থেকে আলাদা করেছি আর সেটা কে জানো? অমৃতার চাচাতো বোন মৃত্তিকা যার নাম হৃদি।
ফরিদা আঁতকে উঠে বলল
— কি বলছ তুমি? একটা বাচ্চাকে তার মা’র কাছ থেকে আলাদা করেছ। এতো কত বড় অন্যায় অমানবিক নিষ্ঠুর কাজ তুমি করেছ?
— আমি ঠিকি বলছি ফরিদা এতো দিন পর আবার সবটা আসবে আমি ভাবতে পারি নি তাছাড়া তখন ঠিক ঐসময় দাঁড়িয়ে বাচ্চাটাকে মার কাছ থেকে আলাদা না করলে যে আমার ছেলেদের ক্ষ*তি করে দিত
— কি বলছ আগে কেনো বলো নি এসব? কিন্তু তুমি এতো বছর পর চিনলে কি করে ঔ মেয়েটাই সে
— তার চেহারা অবিকল রুদ্রের মতো
— রুদ্র কে?
— এদেশের শীর্ষ সাইন্টিস্ট তোমার ছোট ছেলের সাথে ওঠা বসা যার
ফরিদা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে বলল
— কি বলছ তুমি এসব আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
— আমি ঠিকি বলছি। তোমার ছেলে আজ ঐ মেয়েটাকেই চ*ড় মে*রেছে হয়ত ভালো করে দেখে নি ভালো করে দেখলেই কিছু একটা সন্দেহ করে বসবে
— এখন কি করবে?
— কিছু করার নাই সব ভাগ্যর ওপরে ছেড়ে দিয়েছি।
— তুমি সত্যিটা জানিয়ে দাও। মায়ের কোলটা পূর্ণ হোক। মেয়েটা তার আসল বাবা মাকে ফিরে পাক।
— না এটা করলে ফেঁ*সে যাবো …
— কিছু হবে না আমি বলছি

চন্দ্রহীন আকাশে গুটিকয়েক তারা মিটমিট করে জ্বলজ্বল করছে। আঁধার কালো অম্বরি জুড়ে মেঘেদের আনাগোনার শেষ নেই। শীতল বাতাসে বেলি ফুলের সুভাস ভেসে বেড়াচ্ছে। নিপা বারান্দায় একাকী কফি হাতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি উপভোগ করছে। চশমাটা খুলে রেখে রেলিংয়ে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
— কেমন আছো? আমার কথা তোমার মনে পড়ে? আমার কিন্তু তোমার কথা প্রতিমুহূর্তে মনে পড়ে। তোমার সাথে কত কথা বলি তুমি তো শুননো না। আচ্ছা আমার মেয়েটা কত বড় হয়েছে গো কেমন দেখতে হয়েছে নিশ্চয়ই তোমার মতো? কি গো আজও আমার ওপরে রাগ করে থাকবে? আজ কি তোমার মনে নেই আজ আমাদের ২১ তম এ্যানিভারসেরি ভুলে গেলে? আজও রাগ করে থাকবে? আচ্ছা বলো না কথা কিন্তু আমি কিন্তু ঠিকি তোমার সাথে কথা বলে যাবো। জানো তোমার ভাই রুদ্র আমাকে এতো ভালোবাসে কেনো? আমি ওকে বন্ধু ছাড়া কিছু ভাবতে পারলাম না এতো গুলো বছরেও। তুমি ই আমার স্বামীর জায়গায় থেকে গেলে। নিদ্র আমার আর রুদ্রের ছেলে দেখতে আমার মতো হলেও স্বাভাবে পুরোই রুদ্র। তুমি তো সবই জানো তাও আমার ওপরে রাগ করে থাকবে। ওরা কেউ বাসায় নেই আমার সবসময় নিজেকে একা মনে হয় তুমি ছাড়া আমার সব কিছু বৃথা…

নিচ থেকে গাড়ি শব্দ আসলো। দেখলো রুদ্র, নিদ্র ফিরেছে ঘড়ির দিকে সময় দেখলো ১২ঃ ৩৫ বাজে। নিপা নিচে এসে দেখলো বাবা ছেলে ড্রাইংরুমে বসে আছে সামনে একটা বক্স রাখা। নিপা গম্ভীর কণ্ঠে বলল
— এতোক্ষণ কোথায় ছিলে তোমরা এর চেয়ে বাসায় না আসলেই পারতে
রুদ্র হাসলো। নিদ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল
— হ্যাপি এ্যানিভারসেরি আম্মু।
নিপা চমকে নিদ্রর দিকে তাকালো নিদ্র চোখ নামিয়ে নিলো। নিদ্র মা বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না কখনো এটা মানে নিপা বুঝতে পারে না। রুদ্র বলল
— হ্যাপি এ্যানিভারসেরি নিপা আর অভ্র ভাইয়া।
নিপা কাঠকাঠ গলায় বলল
— রুদ্র তোমাকে কত বার বলেছি এসব আমার পছন্দ না তাও তোমরা কেক আনছ?
— আম্মু আমি চাই তুমি কেকটা কাটবে এতে বড় আব্বু খুশি হবে সাথে আপি ও
নিপা না বলতে গিয়ে ও বলতে ইচ্ছে করলো না এবার না হয় ছেলের কথাই শোনা হোক কোনো বারই তো শোনা হয় না। নিপা এগিয়ে এসে বলল
— বের করো কেকটা
নিদ্রের মুখে এক চিলতে হাসি এসে ধরা দিলো। নিদ্র খুব বেশি একটা হাসে না। নিদ্র হাসি মাখা মুখ দেখে নিপার অশান্ত মনটা শান্তি এসে বিরাজ করলো। মুগ্ধ চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো নিদ্রকে হাসলে কি সুন্দর লাগে। কিন্তু হাসে না। নিপার বলতে ইচ্ছে হলো ‘তুই আমার ছেলে হয়ে হাসিস না কেনো? হাসলে তোকে কত মিষ্টি লাগে। এবার থেকে আমার সামনে সারাক্ষণ হাসবি’।
কিন্তু সে কথা আর বলা হলো না।

ওপরে এসে শুয়ে শুয়ে নিপা অনেক জল্পনা কল্পনা করলো। রুদ্র আসতেই উঠে বসে বলল
— তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
রুদ্র বালিশ ঠিক করতে করতে বলল
— বলো
নিপা কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল
— তোমার কি আগের মতো অভ্রের নাম শুনলে রাগ হয় না? কিন্তু কেনো?
রুদ্র বালিশ ঠিক করা থামিয়ে দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল
— এতো দিন পর হঠাৎ এ কথা…
— এমনি জানতে ইচ্ছে হলো। মানুষের জানতে ইচ্ছে হয় না? আর তুমি ই তো আগে আমি অভ্রের নাম নিলেই রেগে মা*রতে আসতে
রুদ্র হেসে বলল
— কেনো না আমি তাকে তখন চিনতে পারি নি। কিন্তু সে আমাকে সর্বদা ভালোবেসে আগলে রেখেছিল। কিন্তু আমি তার থেকে দূরে দূরে থাকতাম আমাদের দূরত্ব বেড়ে যায়। আমি একা থাকতে পছন্দ করতাম। আর আমি ভাবি ও মা’কে আমার থেকে কেড়ে নিচ্ছে।
— আচ্ছা এতো ভালোবাসো কেনো আমাকে?
— তুমি আর নিদ্র ছাড়া আমার আর কে আছে বলো। তোমাদের জন্যই বেঁচে আছি না হলে কবেই ম*রে যেতাম
— রুদ্র চুপ করো তো শুধু বাজে কথা
— তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না
— কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি না? আমি তোমাকে বন্ধু হিসেবে ভালোবাসি। সংসারটা তো তোমার সাথেই করছি ভালো না বেসে কোথায় যাবো
— আচ্ছা ঘুমাও। কাল তুমি আর নিদ্র ও আমার সাথে ফুয়ানের বড় ভাইয়ের রিসিভশনে যাচ্ছো।
— সে কি আমরা আবার ওখানে গিয়ে কি করবো? তুমি আর নিদ্র না হয় যেও আমি যাবো না।
— না তা বললে কি করে হয়। আমার এদিনটা নিয়ে অন্য প্ল্যান ছিল। কিন্তু ফুয়ান, ফুয়ানের বাবা ফোন দিয়ে অনেক জোরাজোরি করলো না করে থাকতে পারলাম না
নিপা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
— আচ্ছা যাবো। সত্যি বলতে ভিড়ভাট্টা, চিৎকার চেচামেচি ভালো লাগে না
— গেলে দেখবে ভালো লাগবে। অনেক দিন তো কোনো অনুষ্ঠানে যাওই না।
নিপা উত্তর দিলো না। রুদ্র ফের বলল
— কাল শাড়ি পড়বে?
— কেনো?
— তোমাকে শাড়িতে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে হঠাৎ
— রোজই তো কলেজে পড়ে যায় দেখো না
— হুম দেখি কিন্তু ভুলে গেছি কেমন দেখতে লাগে তোমাকে
— পাগল তুমি

চলবে ইনশাআল্লাহ

#ধূসর_রঙের_রংধনু – ১২
#তাসনিম_তামান্না

মৃত্তিকা অমৃতার সাথে স্ট্রেজে বসে বকবক করছিল। অমৃতা মৃত্তিকার দুবছরের বড় হলেও দুজনের সম্পর্ক টম এন্ড জেরির মতো আবার একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারে না। মৃত্তিকা কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো। ফুয়ান ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মৃত্তিকা সেটা দেখে অমৃতাকে বলল
— বুঝলি আপু? তোকে আর এবাড়িতে একা থাকতে হবে না আমি চলে আসবো
মৃত্তিকার কথা অমৃতার মাথার ওপর দিয়ে গেলো বুঝতে না পেরে বলল
— মানে? কি বলছিস তুই?
— পরে বলছি তুই থাক আমি আসছি
— আবার কোথায় যাচ্ছিস অচেনা জায়গায় হারিয়ে যাবি…
— কিছু হবে না
মৃত্তিকা ফুয়ানের সামনে গিয়ে মাঝায় হাত দিয়ে দুলতে দুলতে ভ্রু নাড়িয়ে বলল
— কি মিস্টার? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
একটু থেমে চোখ মেরে চুল ঠিক করতে করতে বলল
— কালকে চ*ড় মে*রে আজ প্রেমে পড়ে গেলেন না-কি? অবশ্য আমি সুন্দরী কতশত ছেলে আমার পিছনে ঘুরে আমি পাত্তা দি না কিন্তু আপনি একটা চান্স পেতেই পারেন আফটার অল আপনি আমার একমাত্র বেয়াই বলে কথা…
ফুয়ান বিস্ময় নিয়ে বলল
— কাল আপনাকে চ*ড় মে*রেছি?
মৃত্তিকা কপাল কুঁচকে বলল
— অদ্ভুত মানুষ তো আপনি কাকে চ*ড় মা*রলেন তাকে দেখলেন না দুম করে মে*রে দিলেন
ফুয়ান ঘাবড়ে গেলো। ও সত্যি রাগের মাথায় মে*রে দিলেও মেয়েটার চেহারা খেয়াল করি নি। তাই ফুয়ান আমতা আমতা করে বলল
— না আসলে…
— কি আসলে নকলে? বাই দ্যা রাস্তা আপনি কি সত্যি সত্যি আমার প্রেমে পড়ে গেলেন না-কি? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
— না মানে…
— আর একবারও তাকিয়ে থাকলে চোখ খুলে মার্বেল খেলবো
কথা গুলো বলে পিছনে ঘুরে মুখ টিপে হেসে অমৃতার পাশে বসলো। পিছনে ফেলে গেলো অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা যুবক কে। অমৃতার পাশে বসতেই অমৃতা চোখ ছোট ছোট করে বলল
— তুই ফুয়ানের সাথে কি করছিলি? যদি আবার চ*ড় মে*রে দিত?
— তো আমি কি ছেড়ে দিতাম নাকি?
অমৃতা অবাক হয়ে বলল
— তুই ও মা*রতি?
— হ্যাঁ অবশ্যই
— তাহলে কাল মা*রলি না কেনো?
— কাল ক্রাসকে সরাসরি দেখে আবারও ক্রাস খেয়েছিলাম। আচ্ছা ওসব বাদ দে। তোর দেবরে নাম্বার টা দে তো
— কেনো কি করবি?
— প্রেম করবো।
— দেখ এসব ফাজলামি বাদ দে বাসায় জানাজানি হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে
— আরে চাপ নিস না বাসায় জানিয়েই প্রেম ইনফেট বিয়েও করে ফেলবো
— পাগল হয়ে গেছিস তুই? ফুয়ান তোকে চ*ড় মে রেছে তার জন্য দাউদ ভাই চাচা এটা মানবে না
— আরে ডোন্ট ওয়ারি চাপ লেনেকা নেহি দেনেকা
— মৃত্তিকা তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ
— ওকে তাহলে জিজুর কাছ থেকেই নিচ্ছি
বলে উঠতে নিলেই অমৃতা মৃত্তিকাকে হাত টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল
— তুই আমার সংসারে আ*গু*ন লাগাতে চাইছিস?
— না তোর সংসার বো*ম মে*রে উড়িয়ে দিবো
— তুই একটা অস্যহকর…
— তুই তাহলে দিচ্ছিস?
অমৃতা এক দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। মৃত্তিকা মনে মনে প্যাচ কষে নিয়ে হাসলো। মনে মনে বলল
— এই মৃত্তিকার একবার যেটা চাই সেটা হাসিল করেই ছাড়ে। মিস্টার ফুয়ান রেডি থাকেন আমার টর্চার টলারেট করার জন্য

রুদ্র, নিপা, নিদ্র আসতেই ফুয়ান ওদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তা দেখে রুদ্র বলল
— এতো উত্তেজিত হয়ে ও না ফুয়ান
— জী স্যার। আপনারা কাল আসেন নি বাবা এর জন্য রাগারাগি করেছে
— তোমার বাবাকে আমি বুঝিয়ে বলবো
খাওয়া শেষ করে রুদ্র উঠে গিয়ে একপাশে দাঁড়ালো। নিপা, নিদ্র তখন খাচ্ছে। ফুয়ান রুদ্রের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল
— স্যার কোনো অসুবিধা হয় নি তো ঠিক মতো খেতে পেরেছেন তো
— এতো টেনশন করো না ঠিক মতো খেয়েছি
ফুয়ান আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে উসখুস করতে লাগলো তা দেখে রুদ্র বলল
— ফুয়ান তুমি কি কিছু বলতে চাও?
— জী স্যার আসলে…
কথা টুকু বলে থেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাঙ্খিত মানুষটাকে পেয়ে আবারও বলল
— স্যার আমি যেটা দেখছি সেটা কি আপনিও দেখছেন?
ফুয়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে রুদ্র তাকিয়ে থমকে গেলো। সবটা এলোমেলো লাগলো। মৃত্তিকা খাওয়া দাওয়া শেষ করে তখন একপাশে দাঁড়িয়ে দাউদের সাথে কথা বলছিল। কথা বলতে কোনো ইম্পর্টেন্ট কথা না ফাউ কথা।
— শোনো ভাইয়া তোমার বিয়েতে সব ডেকোরেশন আমি করবো বুঝছ
— আচ্ছা করিস এবার চুপ যা
— কেনো চুপ যাবো? এটা একটা ইম্পটেন্ট কথা হচ্ছে আর তুমি চুপ করতে বলছ? না এটা মানা যায় না বাসায় গিয়ে ঋতু আপুকে সব নালিশ জানাতে হচ্ছে
— তুই এই চামচা গিরি থামাবি কবে?
— এটা সারাজীবন চলবে এর থেকে তোমার নিজথার নাই
— উফফ বকবক করে আমার মাথা খেয়ে নিলো রে কেউ আমাকে উদ্ধার করো বাঁচাও
মৃত্তিকা নাটক করে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
— ভাইয়া যা-ও আর কথা বলতে হবে না হুহ্ যে দিন বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবো সেদিন আমাকে মিস করবে
— আরে কথায় কথায় সেন্টি খেয়ে বসে থাকিস কেনো? আর তোকে বিয়ে করবেটাই বা কে?
মৃত্তিকা দাউদের শেষেউক্ত কথাটা শুনে ভয়ানক রেগে দাউদকে দুম করে মেরে চলে গেলো। যাওয়ার পথে নিপার সাথে ধাক্কা খেয়ে বলল
— সরি সরি আন্টি আমি আসলে খেয়াল করি নাই
নিপা হেসে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ‘ইট’স ওকে’ বলে অবাক হয়ে গেলো। মৃত্তিকা পাশ কাটিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলল
— আম্মু শুনো ইম্পর্টেন্ট কথা আছে…
মৃত্তিকার মা মালিহা অন্য আত্মীয় দের সাথে কথা বলায় ব্যবস্থ ছিল। তার মধ্যে মেয়ে ইম্পর্টেন্ট মানে তিনি জানেন সেটাই সবচেয়ে বড় ফালতু কথা না শুনেও উপায় নেই বিয়ে বাড়ি মাথায় উঠিয়ে দিবে। তাই অগত্যা বাধ্য হয়ে। মেয়ের কাছে এসে বলল
— কি হয়েছে?
— আমি বিয়ে করব
মালিহা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল
— হ্যাঁ রে তোর একটুও কি লজ্জা নাই? এতো বড় মেয়ে হয়ে মা’কে বলছি বিয়ে করবি?
— তো বিয়ে করতে ইচ্ছে হলে বলবো না?
— বিয়ে টিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে এডমিশনের জন্য প্রস্তুতি নাও না হলে তোমার বাবাকে বলে রিকশা ওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো
— রিকশাওয়ালা সাথেই কেনো? আইসক্রিম ওয়ালার সাথে দিও
মালিহা চোখ রাঙাতেই মৃত্তিকা ইনোসেন্ট ফেস করল। মালিহা চলে গেলো এই আধ পাগল মেয়েকে বুঝিয়েও লাভ নাই। মৃত্তিকা মুখ ভেংচি কেটে। চারিদিকে তাকালো কার মা থা খাওয়া যায় সেই ধান্ধায়। রুদ্র, নিপা, নিদ্র, আর ফুয়ান তখনো মৃত্তিকার কাজকর্ম খেয়াল করছিল। ফুয়ানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃত্তিকার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। ফুয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল
— এই বিয়ানসাহেব আমার মনে হয় ইউ ফল ইন লাভ তাও মেয়েটা কে জানেন মি। মৃত্তিকা রহমান।
মৃত্তিকার কথা শুনে ফুয়ান তাজ্জব বনে গেলো মেয়েটা মুখের ওপরে সব বলে দেয় যেনো কোনো কিছুই যায় আসে না।
— হোয়াট?
— আরে হোয়াট ফোয়াট বাদ দেন। প্রেমে পড়েছেন বললেই হয় তাহলে আমার এতোদিনে বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ হবে
— বিয়ে জন্য ছেলে খুঁজে পাচ্ছেন না?
— হ্যাঁ পাচ্ছি তো কিন্তু মা বাপে বিয়ে দেয় না তো
— বিয়ে দেয় না বলে কান্নাকাটি করেন
— লাভ নাই। তাই ভাবছি পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্চা সমেত ফিরে আসব। আইডিয়া টা জোস না তো চলেন বিয়ে করে ফেলি
ফুয়ান শুকনো কাশলো রুদ্র, নিপা, নিদ্র অবাক হয়ে কথা শুনছে।
— আরে আপনি যক্ষা রুগি না-কি? ব্যাপার না আমি ফিউচার ডক্টর তো আপনাকে মেডিসিন দিয়ে দিবো।
ফুয়ান কাশি থামিয়ে কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না।
— আরে নিরবতায় সম্মতির লক্ষ্মণ। তো চলেন মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি?
দাউদ এসে বোনের কান্ড কারখানা দেখে মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়। একটা ধমক দিতেই চুপ হয়ে গেলো মৃত্তিকা।
চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here