নক্ষত্র বন্দনা পর্ব ২১

#নক্ষত্র_বন্দনা

#পর্ব_২১

#লেখায়_জারিন

১১৭.

মাত্রই কনফারেন্স রুমে টানা ২ ঘন্টার মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে এসে বসেছে নক্ষত্র। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ তার। এই প্রজেক্টটা নিয়ে অনেক বেশি খাটতে হয়েছে তাকে। ইরিন ছুটিতে থাকায় এই অতিরিক্ত খাটাখাটনি করতে হয়েছে তাকে। তার দিকটাও নক্ষত্রকেই সামলাতে হয়েছে।

অবশ্য ছুটি না দিয়েও বা কি করতো। মেয়েটা এই অসুস্থ শরীরে জেদ ধরেছিল মায়ের কাছে থাকবে বলে। বাবাকে সে যতই ভালোবাসুক মায়ের আদর স্নেহের একটা চাহিদা সব বাচ্চারই থাকে। তাই ইরিন ওকে নিয়ে গেছে নিজের কাছে। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ৪ দিনের।

নক্ষত্র অবশ্য প্রতিদিনই যায় পুতুলের সাথে দেখা করতে। অনেক বলেও তো ইরিন শেখ ভিলায় রাখা গেল না। ডিভোর্স ফাইল করার পর নাকি আর একসাথে থাকা মানায় না! নক্ষত্রের অসহ্য লাগে এসব। পুতুলকে ছাড়া তারও তো কষ্ট হয় থাকতে। ইরিন কেন সেটা বুঝে না? তারওপর মেয়েটা অসুস্থ। এসব ভাবলেই ইরিনের উপর রাগ বাড়ে ওর। কিন্তু, কিছু তো করারও নেই। ইরিনের ডিভোর্স চাওয়াটাও তো খুব একটা অযৌক্তিক নয়।

চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে এসব সাতপাঁচ ভাবছিল নক্ষত্র। হঠাৎ দরজায় নক পড়লো। দুবার নক হওয়ার ক্লান্ত চোখ মেলে সোজা হয়ে উঠে বসলো নক্ষত্র। নিজেকে ঠিকঠাক করে বললো, ‘কাম ইন।’

নক্ষত্রের অনুমমতি পেতেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো অফিসের পুরাতন পিয়ন জব্বার আলী। তার বাবার সময় থেকে কাজ করছেন তিনি এই অফিসে। নক্ষত্রকে ভীষণ স্নেহ করেন তিনি। মূলত নক্ষত্রের জন্যই আজও এই অফিসে কাজ করেন তিনি।

জব্বার আলীকে দেখে ক্লান্ত মুখের মলিন হাসলো নক্ষত্র। ক্লান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কিছু বলবেন কাকা?’

নক্ষত্রের ক্লান্ত মুখ দেখে মায়া হলো জব্বার আলীর।তাও কিছুটা ইতস্তত করে বললো, ‘হ..বাবা। একটা পোলা আইছে। অনেকক্ষণ ধইরা বইসা আছে। কইলো তোমার লগে দেখা করবো। পাঠামু?’

‘কে? নাম পরিচয় কিছু বলেনি?’ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো নক্ষত্র।

‘উউ…কি জ্যান নাম কইলো.. ‘ কপাল কুচকে মনে করার চেষ্টা করলেন জব্বার আলী। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আজকাল মস্তিষ্কও ঝিমিয়ে পড়েছে অনেকটাই। অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না হুটহাট।

নক্ষত্র বুঝলো জব্বার আলী আবারও ভুলে গেছে। তার এই স্বভাবে আলতো হাসলো সে। হাসিমুখেই বললো, ‘পাঠিয়ে দিন কাকা। আমি দেখে নিচ্ছি। ‘

‘আইচ্ছা,বাবা। ‘ ভুলে যাওয়ার কারণে লাজুক হেসে বললেন জব্বার আলী।

তাকে এভাবে হাসতে দেখে হাসি প্রশস্ত হলো নক্ষত্রেরও। মানুষটারও বয়স হয়ে গেছে। অথচ, শুধু তার জন্যই এখনো রোজ অফিসে হাজির হয় মানুষটা। সচারাচর নক্ষত্রের কেবিনে অন্যকোন পিয়নের আসা নিষিদ্ধ যদি না তিনি কোনদিন কোন কারণে তিনি অফিসে না আসতে পারেন।

‘দু’কাপ কফি দিয়েন কাকা। আমারটা কিন্তু..

‘ কড়া কইরা দিমু। জানি তো আমি, বাবা। বয়স হইছে বইলা একটু আদটু ভুইল্লা যাই কিছু বিষয়। তয় তোমার কি লাগে না লাগে তা কিন্তু ভুল হয় না আমার। ‘ নক্ষত্রের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন জব্বার আলী।

নক্ষত্র আবারও হাসলো তার কথায়। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো তার কথার প্রেক্ষিতে। তারপর বললো, কে এসেছে পাঠিয়ে দিন কাকা। আমি আজ আর অফিস করবো না। পুতুলের কাছে যাবো। ‘

‘আইচ্ছা, বাবা…অহনি পঠাইতাছি। ‘এই বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন জব্বার আলী…আগুন্তকের খোঁজে।

১১৮.

জব্বার আলী যাওয়ার মিনিট দুইয়ের মাথায় আবারও টোকা পড়লো দরজায়। ল্যাপটপ গুছিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল নক্ষত্র। তারমধ্যেই অনুমতি দিয়ে বললো, ‘প্লিজ..কাম ইন। ‘

অনুমতি পেতে দেরি হলে দরজা ঠেলে আগুন্তকের ভেতরে আসতে দেরি হলো না। নক্ষত্র দরজার দিকেই তাকিয়ে ছিল। আগুন্তককে দেখে কপাল কুচকে গেল তার। মুখটা চেনা ঠেকছে…কিন্তু কোথায় দেখেছে সঠিক মনে করতে পারলো না। আগুন্তক কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দিল। মিষ্টি হেসে বললো, ‘হ্যালো…মি. নক্ষত্র। আ’ম রাফিদ মোহসিন।’

রাফিদ নামটা শুনে আরও বেশি পরিচিত লাগলো আগুন্তকটিকে। কে হতে পারে মনে করার চেষ্টা করতে করতেই কপট হেসে সেও হাত বাড়িয়ে দিল আগুন্তকের দিকে। হ্যান্ডশ্যাক করে বললো, ‘হ্যালো। প্লিজ হ্যাভ আ সিট।’

‘থ্যাংক ইউ। ‘ বলে টেবিলের অপরপাশের চেয়ার টেনে নক্ষত্রের মুখোমুখি হয়ে বসলো রাফিদ । নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ পেশায় আমি একজন লয়ার। মিসেস. ইরিনের কেসটা আমিই হ্যান্ডেল করছি। ‘

ইরিনের নাম শুনে এবার ঝট করে মনে পড়ে গেল নক্ষত্রের সবটা। এই পরিচিত লাগা মানুষটাকে সে ইরিনের সাথেই দেখেছিল কিছুদিন আগে তার বাসার সামনে। ইরিন সেদিন রাফিদ নামটাই বলেছিল। রাফিদকে এবার ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখে নিল নক্ষত্র। ফর্সা, চৌকস মুখের আদল। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর দেখতে ছেলেটা। বয়স তার থেকে কমই হবে কিছুটা। তবে ইরিনের থেকে ছোট অবশ্যই নয়। তার এবং ইরিনের মাঝে ৬ বছরের তফাৎ। তাহলে এই ছেলের বয়স কত? ৩০/৩১ বছর? নাকি আরও কম? ইরিনের তো ৩০ চলে। সমবয়সী নাকি এরা? সব হিসাব কিতাব শেষে কিছু একটা ভেবে খানিক মন খারাপ হয়ে গেল নক্ষত্রের।

‘ওও…তারমানে এই ইয়াং লইয়ারের সাথেই এত হেসে হেসে কথা বলা হচ্ছিল সেদিন।ডিভোর্সের তোড়জোড় তো বেশ ভালোই চলছে তাহলে ম্যাডামের।’ মনে মনে কথাগুলো বলে ইরিনের ওপর ঈষৎ রাগ ঝাড়লো নক্ষত্র। রাফিদের সামনে তা প্রকাশ না করে বললো, ‘কিন্তু, ইরিনের লয়ার তো অন্য আরেকজন ছিল। তাই না? ‘

‘জ্বী। কিন্তু এখন আমিই উনার কেসটা হ্যান্ডেল করবো। ‘

‘অহ…আচ্ছা। কিন্তু, আপনি বোধয় জানেন না, মি. রাফিদ..আমি ডিভোর্স দিবো না বলে জানিয়ে দিয়েছিলাম কোর্টে। ইরিনের কাছে কোন ভ্যালিড ইস্যু নেই যার জন্য সে আমাকে ডিভোর্স দিবে। সো, আই হ্যাভ আ সাজেশন ফর ইউ…ইউ বেটার লিভ দিজ কেস। কোন লাভ হবে না অহেতুক বেকার খাটনি ছাড়া।’ মিষ্টি হেসে কড়া গলায় বললো নক্ষত্র।

রাফিদও আলতো করে হাসলো তার কথার বিপরীতে। ঝরঝরে গলায় বললো, ‘আপনাদের ডিভোর্স হোক সেটা আমিও চাই না। তবে, আমি এসেছি হোটেল এক্সটোরিয়ার কেসটাতে মিসেস. ইরিনের লয়ার হয়ে।’

রাফিদের এমন কথায় ছোটখাটো ঝটকা খেল নক্ষত্র। আগামী মাসে কেসের একটা হেয়ারিং আছে। কিন্তু, এই কেসের উকিল যে চেঞ্জ করেছে এটা নিয়ে ইরিন তো তাকে কিছু জানায়নি! নাকি আজকাল সব সিদ্ধান্ত নিজে নিজেই নিতে শুরু করেছে সে। ইরিনের উপর রাগ হলো তার আবারও। রাফিদের দিকে চিন্তিত মুখে তাকিয়ে বললো, ‘আমাদের এই কেসটা তো এডভোকেট আতাউর রহমান হ্যান্ডেল করছিলেন। তাছাড়া পুতুলের আম্মু এ বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। তাহলে হুট করে আপনি..?’

‘তিনি তো নিজেই জানেন না কিছু তো আপনাকে কি জানাবেন!’ দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো রাফিদ। যেন অনেক মজার কোন কথা বলেছে সে।

নক্ষত্র পুরো ভিমড়ি খেয়ে গেল রাফিদের এমন কথায় আর আচরণে। বিভ্রান্ত স্বরে বললো, ‘হোয়াট?’

‘জ্বী…তিনি জানেন না এখনো কিছুই। আমি বলিনি তাকে। আর রইলো স্যারের কথা, তার পরিবর্তেই আমি কাজ করছি এখন এই কেসটা নিয়ে। এই যে উনার কেস হ্যান্ডওভারের লেটার। ‘ কথাটা বলে একটা কাগজ এগিয়ে দিল সে নক্ষত্রের দিকে। নক্ষত্র হাত বাড়িয়ে নিয়ে দেখলো সেটা। কেসটা রাফিদকে হ্যান্ডওভার করার লিগ্যাল লেটার।

‘আচ্ছা। তো বলুন, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?’

‘আপনার সাথে কেসটা নিয়ে কিছু বিষয় আলোচনা করা দরকার আমার। যদিও আমি কেস স্টাডি করেছি। এ কয় বছরের সব প্রমাণপত্রও ঘেঁটে দেখেছি। তবুও, আপনার সাথে মুখোমুখি আলাপ করতে চাইছি বিষয়গুলি নিয়ে।’

‘কি বিষয়ে…বলুন।’

‘হোটেলের রিসিপসনিস্ট মনিরা আক্তারকে আপনি অপহরণ করেছিলেন এটা কি সত্যি?’

‘এ কথা আপনাকে কে বলেছে?’ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো নক্ষত্র।

‘আপনার ওয়াইফ।মিসেস. ইরিন। ‘

‘অহ। এটাও বলতে হয়েছে উনার। পেটে কিচ্ছু থাকে না এই মেয়ের।স্টুপিড একটা।’ মনে মনে ইরিনের উপর রাগ দেখিয়ে বললো নক্ষত্র। রাফিদকে বললো ,পুতুলের আম্মুকে তো আপনি জানাননি কেসটা আপনি নিয়েছেন। তাহলে আপনাকে সে কখন বললো এ কথা?’ চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহের দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো নক্ষত্র।

‘মিসেস. ইরিন আমার দুঃসম্পর্কের বন্ধু। উনার জীবন সম্পর্কে এটুকু তো আমার জানারই কথা, তাই না?’ হাসি হাসি মুখে বললো রাফিদ।

‘দুঃসম্পর্কের বন্ধু মানে?’ থতমত খাওয়া স্বরে প্রশ্ন করে নক্ষত্র।

‘তার আর আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটা অনেক দূরের তো তাই দূর…সম্পর্কের বন্ধু আমরা। যখন এই দূরত্ব ঘুঁচে যাবে তখন আমরা দুঃসম্পর্কের বন্ধু থেকে শুধু বন্ধু হয়ে যাবো। ‘ একদম ভেঙে ভেঙে ব্যাখা করে বললো রাফিদ।

নক্ষত্র বিভ্রান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সেটা দেখে রাফিদ তাড়া দিল, ‘এসব ছাড়ুন। আপনাকে যেটা জিজ্ঞেস করলাম সেটা কি সত্যি, মি.নক্ষত্র?’

‘ না…ঠিক অপহরণ নয়। জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম জাস্ট। ‘ গলা ঝেড়ে নিজের পক্ষ নিয়ে বললো নক্ষত্র।

‘ওই তো জোর করে তুলে নিয়ে পেট থেকে কথা বের করেছিলেন আর কি। উউউমমম…এটাকে অপহরণ না বললেও চলে। ‘ কিঞ্চিৎ রসিকতার স্বরে বললো রাফিদ। নক্ষত্র বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেল তার কথার ধরণে। গলার স্বর গম্ভীর রেখে বললো, ‘আপনি হঠাৎ এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছেন কেন?’

‘মনিরা আপনাকে ঠিক কি বলেছিল সেটা জানতে চাই। একদম পই পই করে সবটা মনে করে বলবেন প্লিজ। কোন কিছু বাদ দিবেন না। আমি চেষ্টা করবো নেক্সট হিয়ারিংয়েই কেসটা ক্লোজ করতে।’

‘পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে কেসটা। এতগুলো হেয়ারিংয়েও কিছু করতে পারলেন না আপনার স্যার। আর আপনি একটা হেয়ারিংয়েই কেস ক্লোজ করবেন?’ খানিক তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো নক্ষত্র।

‘কেস ঝুলে আছে আপনার ওয়াইফের কারণে। কিছুটা অবশ্য আতাউর স্যারেরও ঘাটতি ছিল। তবে মূল কারণ পরিস্থিতি এবং আপনার ওয়াইফ।’

‘মানে?’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো নক্ষত্র।

‘সেসব পরে বলছি। তার আগে আপনি মনিরার ব্যাপারটা বলুন আমাকে। ‘ ব্যাগ থেকে রেকর্ডারটা বের করতে করতে বললো রাফিদ।

‘আপনার বন্ধু আপনাকে এত কিছু বলেছে অথচ এই ঘটনা আপনি আমার কাছে থেকে জানতে চাইছেন?’

‘প্রত্যক্ষসাক্ষী আর পরোক্ষসাক্ষীর মধ্যে কিছু হলেও তফাৎ থাকে মি. নক্ষত্র। মিসেস. ইরিন আমাকে ততটুকুই বলেছেন যতটুকু কোর্টে মনিরা সাক্ষী দেওয়ার সময় বলেছিল। আমি সেটুকু পড়েছি। তবুও আপনার থেকে শুনতে চাইছি। যদিও ঘটনার অনেকদিন হয়ে গেছে। তারপরও যতটা মনে করতে পারেন বলুন প্লিজ। মে বি ইট ক্যান হেল্প অ্যাস টু সলভ দ্যা কেস।’

‘ওকে ফাইন। ‘

তাদের কথার মাঝেই জব্বার আলী কফি নিয়ে এলেন। নিজের কাপটা রেখে অন্য একটা কাপ নক্ষত্র এগিয়ে দিল রাফিদকে।

‘প্লিজ হ্যাভ দিস।’

রাফিদ কাপটা নিল হাসিমুখে। কফি খেতে খেতেই নক্ষত্র বলতে শুরু করো সেদিনের ঘটনা।

১১৯.

‘সেই সময় কেসটা যিনি হ্যান্ডেল করছিলেন এস.আই খালিদ, তিনি মনিরাকে জিজ্ঞেসাবাদ করলে মনিরা মিথ্যা সাক্ষী দেয় যে পুতুলের আম্মু আশরাফ মেহতাজ নামের লোকটির সাথে দেখা করতে যেত। রেজিস্টারেও তার রুমের গেস্ট হয়েই সাইন করেছিল পুতুলের আম্মু।এমনকি হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজেও ওয়াসিফকে পাওয়া যায়নি।আশরাফের চেক আউটের সময়টায় যাকে দেখা যায় সেও ওয়াসিফ ছিল না। যার জন্য পুলিশ কোনভাবেই প্রমাণ পাচ্ছিল না যে পুতুলের আম্মু সত্যি বলেছে। সব প্রমাণ তার বিরুদ্ধেই ছিল।

‘হ্যাঁ, এমনকি তার ফোনকলের রেকর্ডও ‘আশরাফ’ নামের লোকের নামে পাওয়া গেছিল।’ রাফিদ বললো কথা প্রসঙ্গে।

‘হ্যাঁ..ঠিক তাই। কিন্তু আনফরচুনেটলি আশরাফকে আর ওই ফোন নাম্বারে পাওয়া যায়নি।ফেইক আইডি দিয়ে সিমটা রেজিট্রেশন করা হয়েছিল। ‘

‘হু…তারপর?’

‘প্রথম হিয়ারিং এ আমরা কোন সাক্ষী পেশ করতে পারিনি নিজেদের পক্ষে। কোর্টে সময় চাওয়া হয়। পুতুলের আম্মু বলেছিল সে যতবারই ওয়াসিফের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল ততোবারই মনিরাই ইরিনকে এ্যাটেন করেছিল। রেজিস্টারটাও সেই এগিয়ে দিয়েছিল সাইনের জন্য। তার দেখানো জায়গাতেই সাইন করতো পুতুলের আম্মু।

আমি এই কথার উপর ভিত্তি করেই মনিরার পেছনে লোক লাগাই। ওর খোঁজ নেই। পরিবার বলতে মা আর অটিস্টিক ভাই। তার চিকিৎসার জন্য টাকা লাগে প্রচুর। হোটেলে দিনের বেলা কাজ করেও সংসার খরচের জন্য রাতে একজন ডাক্তারের চেম্বারে পেশেন্টের এ্যাটেন্ডেন্স হিসেবে কাজ করতো। সব মিলিয়ে আমার মাথায় এলো টাকার জন্য মনিরার মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া অসম্ভব কিছু না।

‘বাহ! গুড পয়েন্ট। আপনার তো পুরো গোয়েন্দা মস্তিষ্ক মি. নক্ষত্র।’ উচ্ছ্বাসিত স্বরে নক্ষত্রের প্রশংসা করে বললো রাফিদ।

নক্ষত্র তার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের কথা এগিয়ে নিয়ে গেল। কফিতে চুমুক দিয়ে বললো,

‘একরাতে চেম্বার থেকে ফেরার পথে আমার গাড়ির ড্রাইভার আর দুজন বিশ্বস্ত কর্মচারীকে দিয়ে তুলে আনালাম ওকে আমাদের নতুন কন্সট্রাকশন বিল্ডিংটায়। বেচারি এমনতেই ভয় পেয়ে গেছিল। তাই নতুন করে খুব একটা ভয় দেখাতে হয়নি। জাস্ট বলেছিলাম যে সত্যি না বললে সেও রেপড হবে যেমনটা পুতুলের আম্মু হয়েছিল। ব্যস এতেই কাজ হয়। সত্যি বলে সে।

‘সত্যি কি ছিল?’ কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে রাফিদ। নক্ষত্রের বলার ধরণ তার বেশ ভালো লেগেছে। বক্তা হিসেবে যে নক্ষত্র খুব ভালো একজন, সেটা তার কথাতেই স্পষ্ট।

রাফিদের চোখেমুখে উপচে পড়া কৌতুহল দেখে মুচকি হাসলো নক্ষত্র। চেয়ার ছেড়ে উঠে ফাইল ক্যাবিনেটের দিকে এগিয়ে গেল। পকেট থেকে চাবি বের করে ক্যাবিনের ড্রয়ার খুলে কিছু একটা বের করলো সে। রাফিদ দেখলো একটা সিডির বক্স।

নক্ষত্র ক্যাবিনেট বন্ধ করে নিজের চেয়ারে এসে বসলো। ল্যাপটপ পুনরায় বের করে তাতে সিডিটা ঢোকালো। একটু পরে ল্যাপটপ ঘুরিয়ে দিল রাফিদের দিকে।

১২০.

‘সেদিন সকাল ১১ টার দিকে ওয়াসিফ স্যার আসেন চেক আউট করতে। ফর্মালিটিজ কমপ্লিট করতে করতে নীচু গলায় আমাকে বলেন,

‘মনিরা একটা কাজ আছে তোমার জন্য। এই খামটা রাখো। এতে ৫০ হাজার আছে। কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলে আরও ২০ হাজার বোনাস পাবে। ‘

‘কি কাজ স্যার?’ আমার সন্দেহ হওয়ায় প্রশ্ন করি।

‘হোটেলে আজ পুলিশ আসবে। আমি যে রুমে ছিলাম সেখানে। ইরিনকে রেখে যাচ্ছি। অবস্থা ভালো না ওর । ‘

‘কি হয়েছে? কি করেছেন আপনি?’ ভয়ার্তক গলায় কিঞ্চিৎ চেঁচিয়ে বলেছিলাম আমি । ওয়াসিফ স্যার বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকাতেই ভয়ে আমি আশপাশ দেখি। এ সময় তেমন লোক থাকে না রিসিপশন এরিয়ায়। তাদের কেউ খেয়াল করেনি দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলি আমি।

‘ডিটেইলস বলার সময় নেই। ঘন্টা খানিক পরে তুমি রুম ক্লিন করতে লোক পাঠাবে। বলবে হানিমুন কাপল ছিল। রুমের বিছানা চাদর যেন আগে ক্লিনিং এর জন্য পাঠায়। বেডরুম আগে ক্লিন করবে তারপর ওয়াসরুমে যাবে ক্লিন করতে। এটুকু বলে ওয়াসিফ স্যার একপলক দেখলেন আমাকে। ইতোমধ্যে বেশ ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। ওয়াসিফ স্যার আমার থেকে চোখ সরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘আর ইউ ক্লিয়ার?’

‘আপনি কি করেছেন স্যার? মেয়েটা কি মরে টরে গেছে নাকি?’ ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করি আমি।

‘নাহ। মরেনি। তবে মরার সম্ভাবনা আছে। সেসব তোমার হেডেক নয়। তোমাকে যতটা বলা হয়েছে ততোটাই বলবে। টাকা লাগলে খরচ করবে। আমি দিয়ে দিবো। এখন শুধু এই কাজটা ঠিকঠাকভাবে করো।

‘ও..ওকে স্যার। ‘

‘আর হ্যাঁ, পুলিশ যাই জিজ্ঞেস করবে ডিটেইস যাবে আশরাফ মেহতাজের নামে। সে কে…কোথায় থাকে এ ব্যাপারে তুমি কিছুই জানো না। জাস্ট হোটেলের রেজিস্টারে যেটুকু উল্লেখ আছে তাই। ঘাঁবড়াবে না একদম।ঘাঁবড়ে গেলে তোমারই সমস্যা। পুলিশ তোমাকেই সন্দেহ করবে। আমার কিছুই হবে না। সো, ডোন্ট গেট প্যানিক এট অল। ওকে?’

‘জ্বী..স্যার।’

‘গুড।’

এরপর ওয়াসিফ স্যার চেক আউট করে চলে যান হোটেল থেকে।

‘তাহলে ওয়াসিফকে কেন দেখা যায়নি সিসিটিভি ফুটেইজে?’ নক্ষত্র জিজ্ঞেস করে তাকে।

‘উনার ছদ্মবেশ থাকতো হোটেলে এলে। এর আগেও দুবার এই পরিচয়েই এসেছিলেন। মুখে চাপ দাঁড়ি। মাথায় ক্যাপ। চোখে সানগ্লাস থাকতো উনার সবসময়। এটাই আশরাফ মেহতাজ। আর এটাই ওয়াসিফ স্যার। ‘

‘রুম ক্লিন করার জন্য স্টাফকে টাকা দিয়েছিলে তুমি?’

‘হ্যাঁ। দুই হাজার টাকা দিয়েছিলাম। বলেছিলাম রুমের গেস্ট টিপস দিয়েছে ক্লিন করার জন্য। হানিমুন কাপল ছিল বলায় চাদরে রক্ত দেখেও সন্দেহ করেনি।’

‘ইরিনকে কখন দেখেছিল সে?’

‘১২’৩০ টা নাদাগ। আমি ১২ টায় তাকে রুম ক্লিন করতে পাঠাই। রুম পুরো ক্লিন করে সে ওয়াসরুম ক্লিন করতে যায়। তখনই ম্যামকে দেখে বাথটবে। সুইসাইড করেছিলেন ম্যাম। হোটেল ম্যানেজারকে খবর দেওয়া হলে তারা পুলিশকে জানায়। প্রথমে ওই এরিয়ার পুলিশ আসে। তারপর, দেখলাম অন্য একদল পুলিশ আসলো। ‘

‘এই সাক্ষীটাই তুমি কোর্টে দিবে ঠিক আছে? ‘

‘স্যার…প্লিজ স্যার। আমাকে এর মধ্যে জড়াবেন না। আমার জেল হলে আমার মা আর অটিস্টিক ভাইটা না খেয়ে মরবে স্যার। ‘ আকুতি করে বললো মনিরা।

‘তুমি সাক্ষী দিলে তোমার কিছু না হওয়ার দায়িত্ব আমার। আর না দিলে তোমার যা হবে সেটা তোমার দায়। এখন ভেবে বলো কি করবে?

‘দিব। সাক্ষী দিব আমি ওয়াসিফ স্যারের নামে।’

‘গুড।’

১২১.

রাফিদ ভিডিও দেখে ল্যাপটপটা অফ করে দিল। নক্ষত্রের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো, ‘কাজটা ভালোই ছিল জাস্ট একটু বোকামি হয়ে গেছে শেষে। ‘

‘হ্যাঁ, এই ভুলটা না করলে ওয়াসিফের উকিল কখনোই বলতো না আমি ক্ষতি করা ভয় আর টাকার লোভ দেখিয়ে কাজটা করিয়েছি। আতাউর রহমান স্যারও যে ব্যাপারটা কেন খেয়াল করেননি আল্লাহ জানেন। ‘

‘খেয়াল করলে কেস এতদিন ঝুলাতো কিভাব?’ বিড়বিড় করে বললো রাফিদ।

‘কিছু বললেন আপনি?’ সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করে নক্ষত্র।

‘হ্যাঁ, ওই বলছিলাম যে…শেষে আপনার আর মনিরার কনভার্সনটুকু না থাকলেই হতো। এটুকুই কেস ঘুরিয়ে আপনার এগেইন্সটে করে দিয়েছিল।’

‘মনিরা স্বশরীরে সাক্ষী হয়েছিল। তার কথা বিশ্বাস না করলে পরে সিডি দেখানো হয়। এতেই আরও ঝামেলা হয়ে যায়। ‘

‘আচ্ছা, ওয়াসিফ আপনাদের নামে কেন কোন কেস করেনি? সে তো চাইলেই মানহানির মামলা করতে পারতো।’

‘ভালো সাজতে চেয়েছিল। অদ্রির সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বিয়েতে যেন কোন সমস্যা না হয় তাই জন্য আমাদের সাথে কোন ঝামেলা করতে চায়নি। তাছাড়া ওর বিরুদ্ধে লিগ্যালি কোন প্রুভ ছিল না আমাদের। যা যতটুকু জানতাম আমি, আম্মু আর পুতুলের আম্মুই জানতো। মুখের কথায় আর কি আসে যায় বলুন, আদালত প্রমাণ দেখতে চায়।’

‘হুম…সেটাই। আচ্ছা, ওয়াসিফের বিরুদ্ধে কি কোন প্রমাণই পাননি আপনারা এটুকু ছাড়া?’

‘না। ওয়াসিফের এক্সপোর্ট ইম্পোর্টের বিজনেস। বিভিন্ন দেশে ওর কন্টাক্ট। যাতায়াত থাকে অহরহ। সেই সূত্রে নকল পরিচয় তৈরী করা খুব একটা কঠিন ছিল না ওর জন্য। ওয়াসিফ যখনই অবৈধ কোন কাজের পরে দেশে আসতো আশরাফ মেহতাজের পরিচয়েই আসতো। বাড়িতে না গিয়ে হোটেলে থাকতো। ‘

‘অবৈধ কাজ মানে?’

‘চোরা চালানী না করলে কি রাতারাতি কারো বিজনেস এমন ফুলে ফেঁপে উঠে?’ তাছাড়া ওয়াসিফ লন্ডনে যাওয়ার পর ক্রিস্টিনা নামের এক মেয়ের সাথে ওর পরিচয় হয়। তারা লিভ টুগেদারে ছিল বেশ কয়েকমাস। তারপর, তাদের ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। এটা অবশ্য অনেক পরে জেনেছিলাম আমরা। ‘

‘কিভাবে?’

‘তাদের ব্রেক-আপের পর ক্রিস্টিনা জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট। ওয়াসিফকে সে জানায়নি এ ব্যাপারে। ৩ বছর সে নিজেই বেবিটাকে নিজের কাছে রেখে বড় করে। তারপর, ওর আরেক বয়ফ্রেন্ড ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়। কিন্তু ওর বয়ফ্রেন্ড বাচ্চাটাকে এক্সেপ্ট করতে চায় না। তখন সে বাংলাদেশে আসে ওয়াসিফকে বাচ্চাটার দায়িত্ব গছাতে । ওয়াসিফ তখন এখানেই এসেছিল কেসের জন্য। তখনই আমরা এসব জানতে পারি।’

‘বাহ! ব্যাটা তো দেখে সেই লেভেলের প্লেয়ার!’

‘বলতে পারেন। আর এই কারণেই আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে অদ্রিজার সুমতি হয়। ওয়াসিফের সাথে ওর বিয়েটা ভেঙে যায়। ‘

‘যাই হোক, তারপর?’

‘আশরাফ মেহতাজ বাংলাদেশ থেকে দুবাই যায়। দুবাই বেশি দূরে নয়।পুলিশ খোঁজ করার আগেই সে পৌঁছে যায়। ওয়াসিফের লোকেশন তখন ইতালিতে। ইতালির পুলিশ কনফার্ম করে ওয়াসিফ ইতালি এলেও ইতালি থেকে তখনো লন্ডন বা অন্য কোথাও ফ্লাই করেনি। বাংলাদেশ আসার আগে সে ইতালি গিয়েছিল। যাতে পুলিশ খুঁজলে ওয়াসিফকে লন্ডনে না পায়।

আশরাফ মেহতাজ দুবাই যাওয়ার পর আজ পর্যন্ত তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। দুবাই থেকে পরের ফ্লাইটে ইতালি ফিরে যায় জ্যাক ফার্নানডিজ। তারপর, ইতালি থেকে লন্ডন ব্যাক করে ওয়াসিফ রায়হান চৌধুরী। আ কমপ্লিট ক্লিয়ার প্ল্যান! ‘ কথা শেষ করে বাকা হাসে নক্ষত্র।

‘বাপ রে বাপ! এত তো দেখি পাক্কা ক্রিমিনাল! কিন্তু, আপনি এত কিছু জানলেন কি করে? ‘

‘ওয়াসিফ বলেছিল। ওয়াসিফের সাথে অদ্রিজার বিয়ে ভাঙার পর পারিবারিকভাবে পুরোটাই খোলাসা হয়। ওয়াসিফের সাথে ছোট থেকেই আমার অন্যরকম সম্পর্ক ছিল। আমার আপন বড় ভাইয়ের মত ছিল সে আমার কাছে। অদ্রির বিয়ে ওর সাথে দিতে না চাওয়া নিয়ে বেশ রেষারেষি হয়। তখন নুপুর রায়হান নিজের অতীত কুকর্ম উগড়ে দিয়ে মায়ের উপর রাগ ঝাড়েন। এই সত্যির জের ধরে ওয়াসিফও পুতুলের আম্মুর সাথে যা ঘটে তা স্বীকার করে। আমাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করে যা করতে পারি যেন করে দেখাই। জ্যাক নামের ছেলেটা ওরই ঠিক করা ছিল। পাসপোর্ট জ্যাকের নামেই ছিল। শুধু ট্রাভেল করেছে ওয়াসিফ ওরফে জ্যাক। কিন্তু, এসবই মৌখিক ছিল।লিগ্যালি ওকে টাচ করার কোন ওয়ে ছিল না।

আসলে, খুব দ্রুত নিঁখুত প্ল্যান সাজানোতে জুড়ি নেই ওয়াসিফের।এমনকি নুপুর রায়হানেরও!’

‘মায়ের রক্তেই ছেলে এমন হয়েছে। ‘ গম্ভীর গলায় বললো রাফিদ। ‘ তারপর, কিছুক্ষণ নিরবতায় কাটলো দুজনেরই।
শেষে নক্ষত্র বললো, ‘আর কিছু জানার আছে আপনার?’

‘উমমম..আপাদত না। প্রয়োজনে আবার কন্টাক্ট করবো আপনার সাথে। আজ তাহলে উঠি। ইন শাহ আল্লাহ সামনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য।’

‘আপনি বেশ কনফিডেন্ট দেখছি। তবে যাই হোক, ওয়াসিফের শাস্তি হোক এটাই চাই আমি। সেটাও লিগ্যালি…সবার সামনে সত্যিটা প্রকাশ পাওয়ার মাধ্যমে। ‘

‘ইন শাহ আল্লাহ। আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।’

‘আই অলসো হোপ সো!’

‘আসছি তবে। আপনার সাথে কথা বলে বেশ ভাল্লাগলো মি. নক্ষত্র।’

‘সেইম হেয়ার!’ মিষ্টি হেসে বললো নক্ষত্র।

রাফিদ বিদায় নিয়ে চলেই যাচ্ছিল, দরজার কাছে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ালো। নক্ষত্র সেটা দেখে জিজ্ঞেস করলো, ‘কিছু বলবেন?’

‘হ্যাঁ…একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল।’

‘ইয়াহ, শিওর।’

‘আপনি মিসেস. ইরিনকে নাম ধরে না ডেকে বারবার পুতুলের আম্মু কেন বলছিলেন?তিনি তো এখনো আপনার স্ত্রী। ‘

রাফিদের এ কথায় মলিন হাসলো নক্ষত্র। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘স্ত্রীর জায়গা ধরে রাখতে মা হয়েছিল সে আমার সন্তানের। তাই তাকে আমার সন্তানের মায়ের পরিচয়টাই দিয়েছি। ‘

রাফিদ বেশ অবাক হলো নক্ষত্রের এমন কথায়। কিন্তু, ঘাটলো না এই নিয়ে। ডায়রিতে তো লিখাই আছে, ‘স্ত্রী না হতে পারলেও তার সন্তানের মা হতে পেরেছে। এ যেন তাকে না পেয়েও তাকে পাওয়া হয়েছে। ‘ বাকিটুকু ইরিনের থেকেই জেনে নেওয়া যাবে। রাফিদ আর দাঁড়ালো না। আলতো হেসে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে। নক্ষত্রও বাঁকা হাসলো পুরোনো ক্ষতর পুরোনো যন্ত্রণা অনুভব করে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here