#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ১৭
সন্ধ্যার পর ক্লান্ত শরীরে হসপিটালে থেকে ধীর পায়ে নিজের গাড়ির দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যায় মিহান। গাড়ি খোলার জন্য হাত বাড়ালে পকেটে থাকা ফোনটা বেজে ওঠে। হাতে থাকা কোট টা গাড়ির উপর রেখে, গাড়িতে হেলান দিয়ে পকেটে থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনে তাকায় মিরার পাপা ফোন করেছে। কিন্তু কেনো? মিরার কোনো খবর পেয়েছে? না কী অন্য কিছু? মিহান আর না ভেবে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে মিরার পাপা বলে,
—” হ্যালো, মিহান!”
—” হ্যা, আঙ্কেল বলুন।”
—” মিহান তুমি কী এখন ফ্রি আছো?”
—” হ্যা, আঙ্কেল। কিছু বলবেন?”
—” হ্যা, মিরা ফোন করছিল ওর মাম্মা কে। ভালো আছে মিরা। দুই একদিনের মধ্যেই বাড়ি চলে আসবে। তুমি চিন্তা করো না।”
মিহান স্থিরর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
—” এখন কোথায় আছে মিরা?”
—” বললো তো বান্দরবান আছে।”
মিহান কঠিন গলায় বলে,
—” একা একা বান্দরবানে কী করছে ও?”
—” ওর দুই বেস্ট ফ্রেন্ড আছে সাথে। তুমি আর চিন্তা করো না। ওসব ছাড়ো এখন বলো, তুমি কিছু ভাবলে মিরাকে রাজি করাবার জন্য?”
মিরা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
—” ভাবছি আঙ্কেল। আপনাকে আমাকে একটা হেল্প করতে হবে।”
—” আমি তো বললাম আমি তোমার সাথে আছি তাহলে? বলো কী হেল্প লাগবে তোমার?”
—” আমি যতদূর জানি মিরার অনার্স শেষ হতে আর এক বছর বাকি আছে। আমি চাই এই এক বছর মিরা এখনকার কোনো ভার্সিটিতে পড়ুক।”
মিরার পাপা চিন্তিত সরে বলে,
—” কিন্তু ওর এক্সাম তো লন্ডনের ভার্সিটিতে থেকে দিতে হবে তাহলে?”
—” ও এক্সাম দিক লন্ডন থেকে এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এই তিন মাসের জন্য হলেও ওকে এখানকার কোনো ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিন। আপনি বললে আমার চেনাজানা অনেক ভার্সিটিতে আছে তাদের সাথে কথা বলতে পারি।”
মিরার পাপা ভাবনায় পড়ে যায় এখন সে কী করবে? কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
—” আমি মিরা ভার্সিটির টিচারদের সাথে কথা বলে তোমাকে জানাচ্ছি মিহান।”
মিহান ছোট করে বলে,
—” ঠিক আছে আঙ্কেল।”
মিহান ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একা একা বিরবির করে বলে,
—” আমি ওকে নিজের করে নেবো যে করেই হোক না কেনো। আচ্ছা মিরা কী আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে? মিরা রাজি হোক! না হোক! ওকে আমার জীবনে চাই। By hook or by crook. মিরা জান তোমাকে এতো কাছে পেয়েও আর তোমার থেকে দূরে থাকতে ইচ্ছা করছে না। খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে নিজের করে নেব। I Love You jan.”
__________________________________________
মিরারা সন্ধ্যার আগে নীলাচলে এসেছে। প্রেম আর প্রিয়া মিরার বর্ণনা অনুযায়ী সবকিছু মিলিয়ে দেখছে। সত্যি বলতে মিরা যা কিছু বলছে ভুল কিছু বলেনি। পাহাড়ের ঢালে ঢালে সাজানো হয়েছে এ জায়গাগুলো। ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে সামনের পাহাড়ের দৃশ্যও ভিন্ন ভিন্ন রকম। একটি থেকে আরেকটি একেবারেই আলাদা, স্বতন্ত্র। এই জায়গায় বর্ষা, শরৎ কি হেমন্ত— তিন ঋতুতে ছোঁয়া যায় মেঘ। নীলাচলে রয়েছে আকাশ, পাহাড় আর মেঘের অপূর্ব মিতালী আর তুলনাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। বিকেলের সূর্য অস্তের সময় নীলাচল তার পূর্ণ রূপ ধারণ করে। তা কিছুক্ষণ আগে ওরা উপলব্ধি করেছে। সকালে মেঘের ভেলার খেলা আর সূর্যোদয় দেখবে বলে মিরারা ওখানকার একটা রিসোর্টে রাত্রি যাপন করবে বলে ঠিক করে। শুধু ওরা না এখানে আরো অনেকে রিসোর্টে রাত্রি যাপন করবে বলে ঠিক করে। প্রেমকে রিপোর্টের ব্যবস্থা করতে বলে মিরা আর প্রিয়া নীলাচলের এক কোণে বসে সমগ্র বান্দরবান শহর এক নজরে দেখে। প্রিয়া খুব উত্তেজিত এইসব কিছু দেখে। সন্ধ্যার পর আবছা অন্ধকারে নীলাচলের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিরা আর প্রিয়ার একটু পাশেই দুই জোড়া কপত কপতি বসে আছে। তারাও এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে। প্রিয়া মিরার সাথে সেলফি তুলতে তুলতে বলে,
—” ভাগ্যিস কাল তুই আমার আর প্রেমের জন্য ফোন কিনে রেখেছিলি। না হলে এত সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করতে পারতাম না।”
মিরা হালকা হেসে বলে,
—” আমি জানি তো তুই সেলফি পাগলী। নে এবার ভালো করে ছবি তোল। বিয়ের আগে বর আর বেস্ট ফ্রেন্ডর কয়জন ঘুরতে আসতে পারে বল?”
প্রিয়া মুখ বাঁকা করে বলে,
—” ঘুরতে কোথায় এলাম? এলাম তো পালিয়ে।”
প্রিয়ার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে মিরা ফিক করে হেসে দেয়। প্রিয়া ভেংচি কেটে আবার সেলফি তুলতে শুরু করে। ওদের পাশে বসে থাকা দুই জোড়া কপত কপতির মধ্যে দিয়ে একজন মেয়ে মিরার দিকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। মিরা মাথাটা আসতে করে পিছনে ঘুরিয়ে দেখে মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। সাইটের লাইটের আলোতে স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে। মিরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে, গালা জেরে জিজ্ঞাসা করে,
—” কিছু বলবেন?”
মেয়েটা মিষ্টি হেসে বলে,
—” বলতে তো চাই।”
মিরা মেয়েটার কথার ধরন দেখে কপাল কিঞ্চিত ভাঁজ পড়ে। এদিকে প্রিয়া মিরাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসা করছে, মেয়েটি কে? মিরা এক নজর প্রিয়াকে দেখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” জ্বী বলুন কী বলতে চান?”
মেয়েটা ওদের অবাক করে দিয়ে ওদের পাশে বসে বলে,
—” তোমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো তাই না?”
মিরা ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকালো। ভাবনায় পড়ে যায় মিরা। এই মেয়ে এসব কীভাবে জানলো? একটু আগে যখন বলছিলো তখন শুনে? না কী? মিরা কিছু বলার আগে মেয়েটা হেসে বলে,
—” কী ভাবছো আমি এসব কীভাবে জানলাম? আরে একটু আগে তোমরা যখন বলাবলি করছিলে তখন শুনেছি। এবার বলো কাহিনী কী? যদি তোমাদের বলতে অসুবিধা না থাকে।”
মাঝে প্রিয়া বলে,
—” কিন্তু আপনি কে?”
মেয়েটা ওর সাথের তিনজনকে ডাকে। তারা এলে মেয়েটা একটা ছেলের হাত ধরে বলে,
—” আমি রিয়া মির্জা আমার হাসব্যান্ড তানভীর মির্জা। আমার দেবর রাফি মির্জা ওর ওয়াইফ নুর মির্জা।”
মিরা ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলে,
—” হ্যালো!”
ওরা সবাই মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” হ্যালো!”
রিয়া মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” এবার বলতে কোনো অসুবিধা নেই তো?”
মিরা ঠোঁটে হালকা হাসি টেনে বলে,
—” না সমস্যা নেই বসুন আপনার আমি বলছি সবকিছু।”
ওরা সবাই বসলে মিরা ওদের প্রেম আর প্রিয়ার সমস্যার কথা খুলে বলে। সব শুনে তানভীর বলে,
—” জটিল সমস্যা।”
নুর গালে হাত দিয়ে ভাবতে ভাবতে বলে,
—” কিন্তু ওদের তো আগে বিয়ে পড়ানো উচিত ছিলো!”
—” চিন্তা করো না কাল সকালে ওদের বিয়ের ব্যবস্থ করেছি।”
প্রিয়া অবাক কন্ঠে বলে,
—” কাল বিয়ে মানে?”
মিরা ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
—” আমরা যেই হোটেলে উঠেছিলাম তার পাশে একটা কাজি অফিস আছে। কাল তোদের বিয়ে করিয়ে নিয়ে ঢাকা ব্যাক করবো।”
প্রিয়া হা হয়ে যায় মিরার কথা শুনে। মিরার কথা শুনে তানভীর বলে,
—” মিরা আমি তোমার বড় ভাইয়ের মত তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে ওদের বিয়ের সাক্ষী হিসেবে আমরা থাকতে পারি? আমরা কাল এখন থেকে রাঙামাটি ঘুরতে যাবো। যাবার আগে না দুজন ভালোবাসার মানুষকে মিলিয়ে দিয়ে যাই।”
মিরা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
—” কিন্তু তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না? আর তোমাদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানলাম না। আচ্ছা তোমরা কী হানিমুনে এসেছো?”
মিরার কথা শুনে রিয়া আর তানভীর শব্দ করে হাসে। নুর লজ্জায় অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি বোকার মত মাথা চুলকাচ্ছে। প্রিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,
—” কী হলো তোমরা হাসছো কেনো?”
রিয়া কোনো রকম হাসি থামিয়ে বলে,
—” আমার আর তোমার তানভীর ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর। আর এই যে এদের দেখছো না রাফি আর নুর ওদের বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই মাসের বেশি। বিয়ের পনের দিন পর রাফি আমার শ্বশুর বাবার সাথে দেশের বাইরে চলে যায় অফিসের কাজে। বাবা আর রাফি দেশে আসলে তানভীর ওদের হানিমুনের ব্যবস্থ করে কিন্তু রাফি আর নুর জেদ ধরলো আমাদেরও যেতে হবে ওদের সাথে। তখন আমাদের শ্বশুড়ি মা আমাকে আর তানভীর কে দ্বিতীয় হানিমুনে পাঠায়। এবার বুঝলে হাসছি কেনো?”
মিরা আর প্রিয়া রিয়ার কথা শুনে নুরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়।
চলবে….
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
#পর্বঃ ১৮
আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে,
দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে।
বাহির পানে চোখ মেলেছি,
আমার হৃদয় পানে চাইনি।
আমার সকল ভালোবাসায়,
সকল আঘাত, সকল আশায় তুমি ছিলে,
আমার কাছে আমি তোমার কাছে যাই নি।
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়, আনন্দে তাই ভুলেছিলেম কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে,
আমার দুঃখ সুখের গানে সুর দিয়েছো,
তুমি আমি তোমার গান তো গাইনি।
—– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ঘুমন্ত অবস্থায় মিহানের কানে গানের সুর এসে ধরা দেয়। মিটমিটিয়ে চোখ খুলে তাকায় মিহান। দেওয়ালের ঘড়ির দিকে তাকায়। ভোর ছয়টা বাজে কেবল। কিন্তু এত সকালে গান গাইছে কে? গানের গলা শুনে মনে হচ্ছে তো ওর মম গান গাইছে। তবে কী? মিহান ঝটপট উঠে পড়ে এলোমেলো অবস্থায় গানের সূত্র ধরে বারান্দার দিকে যায় মিহান বড় বড় পা ফেলে। হুম। যা ভেবেছিলো তাই! মিহানের মম আর পাপা বাগানের দোলনায় বসে দুলছে। মিহানের মম ওর পাপার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে গান গাইছে। মিহান মৃদু হেসে ওদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। জীবনে যত ওঠা পড়া যাক না কেনো? মিহানের মম কখনো মিহানের পাপার হাত ছাড়েনি। মিহানের খুব মনে আছে, মিহান যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন ওর পাপার বিজনেস লসস এ রান করছিলো। মিহানের পাপা একদম ভেঙ্গে পড়েছিলো কিন্তু মিহানের মম তাকে মনের জোর দিয়ে তার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আবার ওদের বিজনেস টাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যায়। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে মিহান প্রায় সকালে ওরা দোলনায় বসে কিছু মুহূর্ত কাঁটায় দুজনে। মিহান কী কখনো পারবে মিরার সাথে এমন মুহূর্তে উপভোগ করতে মিরার সাথে? কেনো পারবে না? ওর ভালোবাসা তো আর ঠুনকো নয়। ওকে পারতে হবে। মিহান আর এক নজর ওদের দেখে নিজের রুমে দিকে পা বাড়িয়ে আপন মনে বাঁকা হেসে বলে,
—” মিরা জানপাখি রেডি হয়ে নেও, একটা পর একটা চমকের জন্য। get ready for surprise Mira jan.
__________________________________________
বিকেলের আগে মিরা খান বাড়িতে এসেছে। অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় দাঁড়ানোর উপর সবার সাথে কিছু কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। শরীরের ক্লান্তি থাকায় শাওয়ার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মিরা। মিরার মাম্মা সন্ধ্যার পর এক নজর এসে দেখে গেছে মিরাকে, ঘুমিয়ে থাকায় আর ডাক দেয়নি। রাত আটটার দিকে মিরা ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে নিচে যায়। আশেপাশে কাউকে না দেখে সার্ভেন্টকে এক মগ কফি দিতে বলে সোফায় বসে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে সার্ভেন্ট এসে মিরাকে কফি দিয়ে যায়। কফি চুমুক দিয়ে সিড়ির দিকে চোখ গেলে দেখে ওর মাম্মা পাপা সিড়ি দিয়ে নামছে। মিরা সেদিকে না তাকিয়ে নিজের কফি মগে মনযোগ দেয়। পাপা সামনের সোফায় বসে আর মাম্মা ওর পাশে বসে। মিরার মাম্মা আর পাপা তারা নিজেরা চোখের ইশারায় কিছু বলাবলি করে। মিরা আড়চোখে ওদের হাবভাব দেখে বলে,
—” কিছু বলবে তোমরা?”
মিরার পাপা গলা পরিষ্কার করে বলে,
—” হ্যা!”
মিরা কফি শেষ করে, মগটা সামনের টেবিলে রেখে বলে,
—” বলো।”
মিরার মাম্মা ওকে নিজের কাছে এনে, নিজের কোলে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
—” শোন মা আমি এখন যা বললো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবি।”
মিরা একটু আয়েশ করে শুয়ে বলে,
—” ঠিক আছে মাম্মা বলো কী বলবে?”
—” সব বাবা মা তার সন্তানদের ভালোর কথা ভাবে। সন্তানের থেকে বাবা মা ভালো বোঝে তার সন্তানের জন্য কোনটা সবথেকে ভালো হবে। আমি বা তোর পাপা কখনো কোনো কিছু নিয়ে জোর করিনি আর করবোও না। কিন্তু মিহান! হ্যা মিহানের কথাই বলছি, ওর তো কোনো দোষ নেই। সেই ছোটবেলা থেকে তোকে একতরফা ভালোবেসে গেছে। শুধু তুই একদিন মজার ছলে বলেছি তুই বিয়ে করলে ডাক্তারকে বিয়ে করবি। নিজের শখ আহ্লাদ ভুলে তোর জন্য ডাক্তারি পড়েছে। তুই ওকে কথা দিয়ে গেছিলি তুই লেখাপড়া শেষ করে দেশ এসে ওর সাথে দেখা করবি, শুধু তোর জন্য কখনো কোনো মেয়ের দিকে ঘুরেও তাকাওনি। এখন বল তোকে বিয়ে করতে চাওয়াটা কী ওর ভুল হয়েছে?”
মিহানের নাম শুনে মিরা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর মাম্মা দিকে, মন দিয়ে সব কথা শুনে শান্ত গলায় বলে,
—” না মাম্মা ওর চাওয়া কোনো ভুল নেই। কিন্তু আমি তো কখনো ওকে আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে ভাবিনি। তুমি বলো হঠাৎ করে ওকে লাইফ পার্টনার হিসেবে বেছে নেই কীভাবে? ওকে আমি খুব ছোটবেলায় চিনতাম। আমি ক্লাস সিক্সে আর ও তখন ক্লাস টেনে পড়তো। আর পরিচয়? সে তো সবে তিন বা চার মাসের ছিলো তারপর চলে গেলাম লন্ডন। ওকে আমি কখনো বন্ধু ছাড়া কিছু ভাবেনি। এখন তোমরা বলো আমি কী করবো?”
মেয়ের কথা শুনে মিরার পাপা হালকা হেসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আমি জানি মামনি কিন্তু মিহানকে তো একটা সুযোগ দিতে হবে তাই না। ওর কী এত দিনের ভালোবাসার কোনো মুল্যে নেই? অবশ্যই আছে তাই আমি ওকে একটা সুযোগ দিয়েছি। ওকে আমি তিন মাস সময় দিয়েছি। এই তিন মাস তোরা দুজন দুজনকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা কর, ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা কর। এই তিন মাস পরও যদি তোর মনে হয় মিহান তোর জন্য পারফেক্ট নয়। তাহলে আমরা তোকে জোর করবো না, তুই যে সিদ্ধান্ত বেছে নিবি তাই হবে।”
মিরা শোয়া থেকে উঠে চিন্তিত সরে বলে,
—” কিন্তু আমার লেখাপড়া?”
—” আমি তোর ভার্সিটির টিচারদের সাথে কথা বলেছি তারা বলেছে, পরিক্ষা লন্ডন ভার্সিটি থেকে দিতে হবে কিন্তু এখানে ক্লাস করতে পারবি। আমি জানি প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে সবকিছু মেনেজ করতে কারন দুই দেশের পড়াশোনার ধরন দুই রকম তাই।”
মিরা কিছুক্ষণ ভেবে মৃদু কন্ঠে বলে,
—” ঠিক আছে আমি রাজি কিন্তু এই তিন মাসে যদি আমার মনে হয় ভীতুরাম আমার জন্য পারফেক্ট তাহলে ওকে বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই আর যদি ওকে আমার জন্য পারফেক্ট না বলে মনে করি তাহলে আমাকে আর কেউ এই বিষয়ে জোর করবে না।”
মিরার মাম্মা ওকে কপালে চুমু দিয়ে বলে,
—” এই তো আমার লক্ষী মেয়ে।”
মিরার পাপা মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আমি জানতাম তুই রাজি হবি তাই আমি সব ব্যবস্থ আগে থেকে করে রেখেছি। নীলা যে ভার্সিটিতে পড়ে সেখানে তোর ভর্তির সবকিছু আমি আগে থেকে ঠিক করে ফেলেছি। তুই চাইলে কাল থেকে ক্লাস ক্লাস অ্যাটেন্ড করতে পারিস।”
—” আচ্ছা দেখি কী করা যায়।”
মিরার মাম্মা চিন্তিত সরে বলে,
—” হে রে মিরা তখন তো প্রেম আর প্রিয়ার ব্যপারে ভালো করে কিছু না বলে উপরে চলে গেলি। এখন বলতো?”
—” প্রেম আর প্রিয়ার আজ বিয়ে হয়েছে। তারপর বিকালে বান্দরবান থেকে ঢাকা চলে এলাম।”
মিরার পাপা বলে,
—” এখন ওরা কোথায়? আর আমাদের বাড়ি নিয়ে এলি না কেনো?”
—” আঙ্কেল মানে প্রেমের পাপা বলেছিলো ওদের এখানকার বাড়িতে থাকতে কিন্তু প্রেম মানা করে দেয় প্রেমের ইচ্ছে ওর মাম্মা ওদের দুজনকে বরন করে ঘরে তুলবে তাই। আঙ্কেল প্রেমকে আর কিছু না বলে ওদের জন্য একটা ফ্লাট অ্যারেঞ্জ করে ফ্লাট সাজাতে দুইদিন সময় লাগবে তাই ভাবলাম এই দুইদিন না হয় ওদের নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি। তাই সুযোগ বুঝে বান্দরবান চলে গেলাম।প্রেমদের এখানকার অফিসটা এখন থেকে প্রেম দেখাশোনা করবে। চিন্তা করো না আমি কাল ওদের এ বাড়িতে নিয়ে আসবো।”
মিরার পাপা হেসে বলে,
—” কী বুদ্ধি রে বাবা!”
মিরার পাপা কথা শুনে মিরা আর ওর মাম্মা শব্দ করে হেসে দেয়।
__________________________________________
মিরাকে সকল বেলা ঘুম থেকে টেনে তুলেছে নীলা। কাল রাতে যখন শুনলো মিরা ওর ভার্সিটিতে পড়বে তখন থেকে ওর খুশি দেখে কে? মিরা বলেছিলো তিন চার দিন পর থেকে ভার্সিটি যাবে কিন্তু নীলা মিরাকে নিয়ে আজই যাবে। মিরা মুখ গোমড়া করে রেডি হচ্ছে। রেডি হয়ে নীলার সাথে একসাথে নিচে যায় মিরা। নীলার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আজ ও অনেক খুশি। মিরা আর নীলা একসাথে ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে যায়।
চলবে….