#না চাইলেও তুই আমার ( Villan Love’s)
#বৃষ্টি আক্তার (Dr’s Queen)
#পার্ট:২
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছো। এই বেসে তুমি নিহান চৌধুরীর সাথে বাহিরে বের হবা! পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি নিজেকে ভালো করে পরিপাটি করে নিচে আসো। তোমার সময় শুরু। Now go….
কি করবো বুঝতে পারছি না। দৌড়ে উপরে চলে আসলাম। খুব তাড়াতাড়ি রেডি হতে হবে।চোখে কাজল দিলাম , ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিলাম, বেনী করা চুল গুলো খুলে ছেড়ে দিলাম। তারপর কোনো রকমে খুব দ্রুত নিচে নেমে আসলাম। আমাকে দেখে উনি বলে উঠলেন, পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি নয় মিনিট পরে নিচে নেমেছো। এর জন্য তোমাকে শাস্তি দিতাম কিন্তু তোমাকে নিয়ে এই প্রথম বাহিরে বের হচ্ছি তাই ক্ষমা করে দিলাম। চলো,,
ওনার কথা শুনে খুব রাগ হলো আমার। লোকটা এমন সাইকো কেন! চার মিনিট দেরি করেছি বলে শাস্তিও দিতে চাচ্ছে।কি আজব রে!! এমন ভিলেন টাইপ লোক আমি আর একটাও দেখি নি। খাটাস একটা,,
সেই জায়গায় দাড়িয়ে মনে মনে কথা গুলো বললাম।
– তোমাকে এখানে সঙ এর মতো দাড়িয়ে থাকতে বলিনি। গিয়ে গাড়িতে উঠতে বলেছি( দাঁতে দাঁত চেপে)
– ন ন না মানে যাচ্ছি।
গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। উনি ড্রাইভ করছে। আমি চুপচাপ বসে আছি।উনি কিছুক্ষণ পরে গাড়ি থামিয়ে আমাকে বললেন, নামো
আমি গাড়ি থেকে নামলাম। নেমে দেখি উনি আমাকে কলেজে নিয়ে এসেছেন।
– আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?
– তোমাকে এই কলেজে ভর্তি করিয়েছি।আমি চাইনা আমার হবু বউকে কেউ অশিক্ষিত বলুক। আর হ্যাঁ, তোমাকে কলেজে ভর্তি করেছি দেখে ভেবো না তুমি এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবা। এই ভুলটা করার মোটেও সাহস করো না কারণ এর পরিণতি খুব খারাপ হবে।আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছো। আরেকটা কথা , কোনো ছেলের সাথে কথা বলবা না।কথা টা যেনো মনে থাকে।
উনার কথা গুলো সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো। আমি বুঝতে পারছি না এই লোকটা আসলে কি চায়।কেনো আমাকে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বন্ধী করে রাখতে চাচ্ছে । কিছুই বুঝতে পারছি না।
– শুনো, আমি তোমাকে নিতে আসবো।কোথাও যাবা না কিন্তু ওকে। যাও গিয়ে ক্লাস করো।
– হুম
উনি চলে গেলেন।আজকে খুব ভালো লাগছে আমার।আবার খোলা আকাশের নিচে নিজেকে অনুভব করতে পারছি। এই কদিন আবদ্ধ ঘরে থাকতে থাকতে প্রকৃতির আবহাওয়া টা কেমন সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম।যাই হোক এখন দাড়িয়ে না থেকে ক্লাসের দিকে গেলাম।
ক্লাসে যাওয়ার পরে একটা মেয়ে আমার কাছে এসে তার হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,
– হায়, আমি রাত্রি।তোমার নাম কি?
– আমার নাম নিধি।
– আমরা বন্ধু হতে পারি?
– হুম
– আচ্ছা তাহলে আমরা এখন থেকে বন্ধু।বন্ধুত্বের মধ্যে তুমি বলাটা মানায় না ।তুই করে বলবো তোকে।
– আচ্ছা😌
– চল একসাথে বসি। স্যার এখনি চলে আসবে।
– আচ্ছা ।
ক্লাস গুলা খুব ভালো ভাবেই করলাম।আর রাত্রির সাথেও আমার খুব ভালোই বন্ধুত্বটা জমে উঠেছে।কিছুক্ষণের জন্য ওই খাটাস টার কথা ভুলেই গেছিলাম। কলেজ ছুটি হয়ে গেছে।আমি গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি ওনার জন্য।ভেবেছিলাম আজকেও পালাবো কিন্তু তখনি ওনার বলে যাওয়া কথা গুলো মনে পরতেই ভয়ে চুপসে গেলাম।প্রায় কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর উনি আসলেন ।
– আজকের দিন টা কেমন ছিলো নিধু?
– জী ভালোই।
– কোনো ছেলের সাথে কথা বলনি তো?
– না।
– গুড গার্ল
অনেক্ষন পর বাসায় এসে পৌঁছেছি। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলাম, এই মানুষটা কি চায়? কেনো আমাকে তার কাছে বন্ধী করে রেখেছে? কেনো আমাকে কষ্ট দিচ্ছে? প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারছি না। হটাৎ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তরিগরি করে শোয়া থেকে উঠে বসে পরলাম।উনি রুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে আমাকে বললেন –
– কি ব্যাপার বসে আছো যে? আবার পালানোর কথা ভাবছো নাকি?
– আমি চুপ করে রইলাম।কোনো কথা বললাম না।উনি আবার বলে উঠলেন
– পালানোর চেষ্টা করলেও তুমি পালাতে পারবে না। তোমাকে আমার কাছেই বন্ধী হয়ে থাকতে হবে সারাজীবন। #না চাইলেও তুই আমার এটা মনে রেখো ।
– কেনো আমাকে বন্ধী করে রেখেছেন? কি ক্ষতি করেছি আপনার? কেনো এমন করছেন আপনি?
– কিছুই করোনি তুমি।
– তাহলে কেনো আমাকে বন্ধী করে রেখেছেন? কেনো আমাকে মুক্ত করে দিচ্ছেন না?
– কারণ তোমাকে আমার চাই।তাই তোমাকে আমার কাছেই সারাজীবন এইভাবে বন্ধী হয়ে থাকতে হবে।
– আমি মরে যাবো তবুও আপনার মতো মানুষের সাথে থাকবো না।
ঠাসসসস, ওনার থাপ্পড় খেয়ে আমি ফ্লোরে পরে গেলাম।উনি আমার হাতে ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দুই হাতের বাহু চেপে ধরে বলতে লাগলেন
– একবার মরার কথা বলেছিস তো বলেছিস কিন্তু নেক্সট টাইম যদি আবার বলিস তাহলে আমি নিজ হাতেই তোকে মেরে ফেলবো বুঝেছিস।
কথাটা বলে আমাকে ধাক্কা মেরে আবার ফ্লোরে ফেলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।বাহুতে খুব শক্ত করে চেপে ধরায় খুব ব্যাথা লাগছে,তার উপর এতো জোরে থাপ্পড় মারলেন। ব্যথায় রাগে দুঃখে সেখানে বসেই কান্না করতে লাগলাম।
– কেনো আমাকে এতো কষ্ট দেন উনি। কেনো আমার থেকে আমার স্বাধীন জীবন যাপন টা কেরে নিচ্ছে।কেনো ?
কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করতে লাগলাম। কান্না করতে করতে কখন যে দুপুর পেরিয়ে বিকাল হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি। বসা থেকে উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে লম্বা একটা সাওয়ার নিলাম। ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখি উনি বিছানার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।উনাকে দেখে খুব রাগ হলো। ইচ্ছে করছিলো উনার সামনে গিয়ে উরাধুরা মারা শুরু করি।তখই উনি বলে উঠলেন
– কি ব্যাপার ওয়াসরুমের সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি বিড়বিড় করছো🤨
– ক ক কই কিছু নাতো
– তাহলে ঐখানে এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো?
– ন ন না মানে এমনি
– হুম এদিকে আসো
আমি উনার কথা মতো ওনার সামনে গেলাম।উনি আমার যে গালে থাপ্পড় মেরেছেন সেই গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন খুব জোরে মেরেছি তাইনা। কি করবো বলো তুমি যে আমাকে বারবার রাগিয়ে দেও।আর আমিও আমার রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না। কথাটা মন খারাপ করে বললেন উনি।
– কি মানুষ রে ভাই, এক তো মারলো এখন আবার দরদ দেখাতে আসছে। একটা মানুষের কয়টা রূপ থাকে সেটা আমি উনাকে দেখলেই ভাবতে থাকি।
উনি আমার যে গালে থাপ্পড় মেরেছিলেন সে গালে টুপ করে একটা চুমু খেলেন।কোনো সাত পাঁচ না ভেবে আমি তাকে খুব জোড়ে ধাক্কা দিলাম আর উনি বিছানার উপর পরে গেলেন। উনি বিছানা থেকে উঠে আমার দিকে তাকালেন।ওনার চোখ গুলো লাল রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।চোখ মুখ শক্ত করে আমার দিকে এগোতে লাগলেন উনি । ওনার এই ভয়ার্ত চেহারা দেখে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। উনি যতো আমার দিকে এগোচ্ছেন আমি ততোই পিছনের দিকে যাচ্ছি। এইভাবে এক পা এক পা করে পেছনের দিকে যেতে যেতে একপর্যায়ে দেয়ালের সাথে আমার পিঠ ঠেকে গেছে।
চলবে,,,
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।