না চাইলেও তুই আমার পর্ব ৩

#না চাইলেও তুই আমার ( Villan Love’s)
#বৃষ্টি আক্তার ( Dr’s Queen)
#পার্ট:৩

উনি এগোতে এগোতে একদম আমার কাছে চলে এসেছে। তার গরম নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে।উনি তার দুই হাত দেয়ালে রেখে আমাকে বলতে শুরু করলেন

– আমাকে ধাক্কা দেওয়ার সাহস কি করে হয় তোমার! এতো সাহস আসে কোথায় থেকে!
– …………
– কি হলো কথা বলছো না কেনো!
– …………
– চুপ করে আছো কেনো! Ans me damn it ( চিল্লিয়ে দেয়ালে ঘুষি মেরে)
– ওনার চিৎকারে আমি ভয়ে কান্না করে দিলাম।
– এই এই চুপ, একদম কান্না করবা না। কান্না করা ছাড়া কি আর কিছুই পারো না ( জোরে ধমক দিয়ে)

কান্নার জন্য কিছুই বলতে পারছি না আমি।উনি এবার আমার দুই গালে হাত রেখে কিছু বলতে যাবেন ঠিক তখনি আমি আবার তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলাম

– আপনি কেনো আমাকে বারবার স্পর্শ করেন! আপনি আমাকে একদম ছোঁবেন না। আপনার ছোয়ায় আমার শরীর ঘিন ঘিন করে। আপনাকে আমি শুধুই ঘৃণা করি।আপনি আমার কাছে ঘেসার চেষ্টাও করবেন না।

উনি আমার কথা শুনে ক্ষণিকের মধ্যে আমাকে দেয়ালের সাথে খুব শক্ত ভাবে চেপে ধরলেন আর বলতে শুরু করলেন-

– আমার ছোয়ায় তোর শরীর ঘিন ঘিন করে তাইনা।আমাকে ঘৃণা করিস অনেক তাইনা।তুই আমাকে ঘৃণা করলেও আমাকেই তোকে সহ্য করতে হবে। আমার করা স্পর্শই তোকে মেনে নিতে হবে বুঝলি।আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবার কথা চিন্তাও করিস না। কারণ #না চাইলেও তুই আমার কথা গুলো মাথায় ঢুকিয়ে নিস।আর আমাকে ধাক্কা দেওয়ার শাস্তি তোমায় পেতেই হবে জান (বাঁকা হেসে)।

কথাটা বলেই উনি আমাকে টানতে টানতে একটা বন্ধ ঘরের ভিতরে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারলেন।তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন –

– আজ সারারাত তুমি এই অন্ধকার ঘরে বন্ধী থাকবে।আর তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আরশোলা তো আছেই।
কথা গুলো বলে রুমের দরজা বাহির থেকে লক করে চলে গেলেন।আমি বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে বারবার চিৎকার করে বলতে লাগলাম –

– আমাকে প্লিজ এখানে একা রেখে যাবেন না।আমি অন্ধকারে খুব ভয় পাই।দোয়া করে দরজা টা খুলুন।আমি আর কখনো এমন করবো না।প্লিজ দরজা টা খুলুন।

কান্না করতে করতে কথা গুলো বলতে লাগলাম কিন্তু বাহির থেকে কোনো আওয়াজ শুনতে পেলাম না। একতো রুমটা গুটগুটে অন্ধকার তার উপর রুম ভর্তি আরশোলা সব মিলিয়ে ভয়ে চিৎকার করতে থাকি কিন্তু উনি আমার চিৎকার শুনে একবারের জন্যেও আমাকে মুক্ত করতে আসেনি।একপর্যায়ে ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।তারপরে আর কিছুই মনে নেই।
সকালে চোখ খুলে আমি নিজেকে খাটাস টার রুমে আবিষ্কার করলাম।পাশে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। উনার দিকে তাকানোর পর গতকালকের ঘটনাটা আমার মনে পরে যায়।ঘৃণায় তার দিক থেকে আমি মুখ সরিয়ে নিলাম।তখন উনি বললেন-

– এসব ঢং আমার সাথে দেখাবা না বুঝছো নিধু।আমাকে ঘৃণা করলেও তুমি আমার সাথেই থাকতে হবে তাই শুধু শুধু আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে কোনো লাভ হবে না বুঝলে জান। যাও তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো নাস্তা করতে হবে তোমার। কাল রাতেও কিছু খাও নাই।তাড়াতাড়ি যাও।আমি নিচে যাচ্ছি,তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো।কথা গুলো বলে উনি নিচে চলে গেলেন।

– একটা মানুষ এতোটা খারাপ হয় কিভাবে।ইচ্ছে করছে তাকে ইচ্ছে মতো ঝাল খাইয়ে মরুভূমিতে ছেড়ে দেই তখন পানি খেতে না পেরে ঝালে মরে যাবে।খাটাস একটা 😠।তোর জীবনেও ভালো হবে না দেখে নিস 😤

ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম।নিচে নেমে দেখি খাটাস টা খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।আমাকে দেখে তিনি বললেন –

– তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে নেও।কলেজে যেতে হবে তোমার আর আজকে আমার অফিসে একটু কাজ আছে তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে।তোমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিসে যাবো।
– হুম।

আমি আর কিছু বললাম না।চুপচাপ খেয়ে নিলাম।তারপর কলেজে উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।উনি আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলেন।আমিও ক্লাসে চলে গেলাম।ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে রাত্রি এসে বলতে লাগলো –

রাত্রি: কিরে নিধু আজকে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি?
নিধি: না এমনিতেই।
রাত্রি: আচ্ছা শুন, কালকে আমার বার্থডে আর আমি চাই তুই সবার আগে আমার বার্থডে তে অ্যাটেন্ড করবি ব্যাস।
নিধি: কিন্তু রাত আমি যেতে পারবো নারে😞
রাত্রি: আমি এতো কিছু জানিনা।তুই আসতে হবে এটাই আমার শেষ কথা।

আমি আর কথা বাড়ালাম না।জানি রাত এখন আমার কথা মোটেও শুনবে না।কিন্তু আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি কিভাবে ওনাকে কথা টা বলবো! আর উনি যদি আমাকে যেতে না দেয় তখন কি করবো।কিছুই ভালো লাগছে না । আমি কাল না গেলে রাত খুব রাগ করবে।কিন্তু আমি করবো!নিহান চৌধুরী কখনো আমাকে যেতে দিবে না সেটা আমি ভালো করেই জানি।
সব গুলা ক্লাসে মনমরা হয়ে বসে ছিলাম।কলেজ ছুটি হয়ে গেছে।রাত যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলো কাল ও আমার জন্য অপেক্ষা করবে।আমি গেটের সামনে দাড়িয়ে ওনার আসার অপেক্ষা করছি।কিছুক্ষণ পর উনি আসলেন।আমি গাড়িতে উঠে বসলাম।রাস্তায় একটাও কথা বলিনি।এর মধ্যে উনি অনেকবার আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
আমরা বাসায় এসে পড়লাম।আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসে বসে ভাবছিলাম কিভাবে এই বদমেজাজি খাটাস টাকে বলবো রাতের বার্থডে পার্টিতে যাওয়ার কথা। অনেকটা সাহস নিয়ে তার রুমের সামনে গেলাম।রুমের ভিতরে ঢুকবো কিনা ভাবছি ঠিক সে সময় নিহান বলে উঠলেন –

– দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি ভাবছো ভিতরে আসো।

আমি ভিতরে ঢুকলাম। উনি আমাকে জিজ্ঞেস করলো

– কিছু বলবে?
– হুম।
– কি বলবে বলো।
– আসলে কালকে আমার ফ্রেন্ডের বার্থডে।আমাকে ইনভাইট করেছে ।
– তো!
– না মানে আসলে
– কি বলো
– আমাকে যেতে দিবেন( ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাস করলাম)
উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমাকে বললেন
– ঠিক আছে যেও।
ওনার কথা শুনে মনে মনে অনেক এত্তগুলা ধন্যবাদ দিলাম।আর ভাবতে লাগলাম খাটাস টা এতো ভালো কি করে হয়ে গেলো🤔
যাই হোক,আমাকে যেতে দিচ্ছে এটাই অনেক🤗

পরের দিন খুব সুন্দরভাবে রেডি হয়ে রাতের বাসায় গেলাম।অবশ্য আমি একা একা আসিনি ,উনি আমাকে রাতের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।আর যাওয়ার সময় বলে গেলেন কোনো ছেলের সাথে যেনো কথা না বলি।আমিও মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা বললাম।

রাত্রি: নিধু তুই চলে এসেছিস ( জড়িয়ে ধরে)
নিধি: হুম।তুই বলেছিস আর আমি না এসে পারি বল😌
রাত্রি: হয়েছে আর ভাব নিতে হবে না চল।
নিধি: হুম চল।

পার্টিতে রাতের অনেক ফ্রেন্ড এসেছে। রাত আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বার্থডে তে আমরা সবাই খুব মজা করি।বার্থডে পার্টি শেষ হতেই নিহান আমাকে নিতে আসে।বাসায় যাওয়ার পর আমি ভাবতে লাগলাম মানুষটাকে যতোটা খারাপ ভাবি মানুষটা ততোটাও খারাপ নয়।

পরের দিন কলেজে গেলাম।কলেজে নতুন একটা ছেলের সাথে আমার পরিচয় হলো।ছেলেটির নাম হৃদয়।খুব মিশুক ছেলেটা।প্রথম দিনেই অনেকটাই ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে আমাদের। এভাবেই কিছুদিন চলে যায়।হৃদয়ের সাথে খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায় আমার।হৃদয় আমার অনেক কেয়ার করে,আমার ইচ্ছে অনিচ্ছের অনেক প্রাধান্য দেয়।আমার না বলা কথা গুলো খুব সহজেই বুঝে নিতে পারে। ওর এসবের কারণে ওর প্রতি কেমন জানি একটা ভালোলাগা কাজ করে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here