নিঃশ্বাসে তুই পর্ব -০৪+৫

#নিঃশ্বাসে_তুই (৪)

সোফার দু মাথায় দু’জনে উদাস ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বড়সড় রকমের শকট খেয়েছে তারা। দু’জনের ভাবমূর্তিই খাপছাড়া।

“এই সেই ধ্রুব চৌধুরী! যার কথা আপির মুখ থেকে শুনতে শুনতে তাকে ঘিরে গোটা এক কল্পরাজ্য তৈরি করে ফেলেছিলাম আমরা। এই সেই! এই সেই! অথচ কী কপাল আমার তার এতটা কাছে থেকেও একটিবার চোখ মেলে দেখার সৌভাগ্য হলো না।”

আফসোসের স্বরে কথা গুলো বলল অহমি। তার কথায় ফোঁড়ন কেটে পুষ্প বলল,

“হুম রে! কত কীই না করেছি আমরা এই লোকটাকে একটিবার চোখের দেখা দেখার জন্য। আমি তো না জেনেই দেখেছি কিন্তু তুই তো তাও পারলি না।”

“হুমমম।”

অহমি নাকে কান্না শুরু করে দেয়৷ পুষ্প সেদিকে তাকিয়ে লাফ মে’রে উঠে বসে। একটানে অহমিকেও টেনে তোলে। অতঃপর সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,

“চিন্তা করিস না দোস্ত। একবার যখন এসেছে তখন নিশ্চয়ই আবার আসবে। আর এবার এলে তুইও দেখতে পারবি সিওর।”

“বলছিস।”

“হ্যাঁ বলছি।”

“তাই যেন হয়।”

“হতেই হবে।”

.

চৌধুরী মঞ্জিল বেলা বারোটা:
সবে মাত্র ঘুম ভেঙে উঠল ধ্রুব। বালিশের পাশ থেকে মোবাইল ফোন হাতড়ে বের করে তাতে সময় দেখে নিল। মস্তিষ্ক সচল হতেই এক লাফে উঠে বসে পড়ল। অস্ফুটস্বরে বলল, “ওহ মাই গড, বারোটা বেজে গেছে। আজকেই লেট হতে হলো। ওহ শিট!”

চটজলদি বিছানা থেকে নেমে টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল সে। পনেরো মিনিটের মাথায় বেরিয়েও এলো। একটা ডেনিম জিন্স আর সাদা শার্টের সঙ্গে নিজেকে পরিপাটি করে নিল। হাতে হ্যান্ড ঘড়ি, চোখে সানগ্লাস আর সর্বাঙ্গে পারফিউমের সুগন্ধ লাগিয়ে দৌড়ের ওপর নিচে নেমে গেল। সানগ্লাস টা আপাততঃ শার্টের বুকের কাছের অংশে ঝুলিয়ে রেখে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল। তাকে দেখা মাত্রই রহিম চাচা খাবার নিয়ে হাজির। ধ্রুব সেখান থেকে এক গ্লাস জুস ঢকঢক করে খেয়ে নিল আর একটি স্যান্ডুইজ তুলে নিয়ে চিবাতে চিবাতে হাঁটা দিল। রহিম চাচা এহেন কান্ড দেখে হাঁক ছেড়ে বললেন,

“ছোট বাবা এগুলা কী করেন? খাবার তো সব পইরা রইল। ভালো ভাবে খাইয়া যায়।”

ধ্রুব মুখ দিয়ে জবাব দিল না। হাতের ইশারায় ‘না’ বুঝিয়ে দিল।

রহিম চাচা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সব খাবার গুলো আবার তুলে রাখলেন।

.

“তোদের কী মনে হয় না আমাদের একবার অর্পার বাড়িতে যাওয়া উচিত?”

ধ্রুব প্রশ্ন শুনে উপস্থিত সকলের মাথায় যেন ব’জ্র’পাত ঘটল। ধ্রুব চৌধুরী যে স্বইচ্ছায় কারও বাড়িতে যাওয়ার কথা বলছে এটা যেন সকলের ভাবনার বাহির। সকলে অবাকান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর পানে। ধ্রুব সকলের থেকে এমন রিয়াকশন পেয়ে কিঞ্চিৎ রেগে যায়। তার শ্যামবর্ণ মুখশ্রীতে বিরক্তির চরম মাত্রা ফুটে ওঠে। কাঠকাঠ গলায় বলে,

“এতে এতো অবাক হওয়ার কী আছে? কাল একজন অসুস্থ পিচ্চিকে ফেলে এসেছি আমরা। এখন পর্যন্ত সে কেমন আছে, না আছে কোনো খোঁজ খবর নিয়েছি কী আমরা? এটা কী বিবেকহীনতা নয়?”

আশ্চর্যতা ভেঙে শিলা বলল,”আমি রাতে ফোন করেছিলাম অর্পাকে। ও তো তখন বলল অহমি আগের থেকে বেটার আছে।”

শিলার কথায় তাল মিলিয়ে একে একে ইমন, সিদ্ধার্থ, সৌরভ, এনি,তামান্না, অনুষ্কা সকলেই বলল যে তারা সকলেই রাতে ফোন করেছিল। ইনফেক্ট সৌরভ আর এনি তো সকালের ফোন করে খবর নিয়েছে। দেখা যায় ধ্রুব ব্যতিত সকলেই ফোন করে খবর নিয়েছে। এমতাবস্থায় ধ্রুব লজ্জায় আড়ষ্টবোধ করল। কিন্তু তা তার চিরাচরিত গাম্ভীর্যতায় ঢাকা পড়ে রইল। সে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,

“তাহলে আর কী। সকলে খোঁজ নিয়েছিস কেবল আমি ছাড়া। ব্যাপারটা কেমন বেমানান তাই না। এই বেমানান রুপটাকে মানানসই রুপ দিতে আমি এখন একাই যাব তোরা সবাই থাকবি।”

ধ্রুবর কথায় সবাই আরেকদফা আশ্চর্য হয়ে যায়। কী বলছে ধ্রুব এটা? সে একা যাবে। মানে টা কী?ধ্রুব কাউকে
কিছু বলতে না দিয়েই রওনা হলো অর্পাদের বাড়িতে। ধ্রুব চলে যেতেই ইমন রসগোল্লার ন্যায় চোখ জোড়া বড় বড় করে কন্ঠ টেনে বলে ওঠে,

“দ্যা গ্রেট ধ্রুব চৌধুরী এই সামান্য বিষয় নিয়ে এতটা পজেজিভ কেননননন?”

ইমনের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে সকলে টেনে টেনে বলল,
“কেনননননন?”

.

পুষ্প চলে গেছে ক্ষণকাল পূর্বে। অহমি অনেক জোর করেও তাকে আর রাখতে পারে নি। অহমি ভেবেছে হয়তো পুষ্পর বাড়িতে কোনো ঝামেলা হয়েছে কিন্তু না পুষ্প চলে গিয়েছে কারণ সে ভালো ভাবেই জানত যে, সে যতক্ষণ এ বাড়িতে থাকবে বিভোর হয়তো বাড়িতে আসবে না আর আসলেও কমফোর্ট ফিল করবে না। তাই তো অনিচ্ছায় সত্ত্বেও নানানরকম অজুহাত দেখিয়ে সে চলে গেছে।

অহমি মন খারাপ করে বসে আছে। একা একা তার একদমই ভালো লাগছে না। তাহমিনা বেগম রান্না করছেন। রেণু তার সঙ্গে সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছে। অর্পা নিজের ঘরে। উপায়ন্তর না পেয়ে অহমি কল লাগাল তার বড় বোন অহনাকে। অহনার বিয়ে হয়েছে ছয় বছর হলো। তার স্বামী ইখলাস একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে। সুখের সংসার তাদের। তার একটি দু বছরের কন্যা সন্তান আছে। যেমন দেখতে পুতুলের ন্যায় সুন্দর বাচ্চাটি তেমনই তার চাঞ্চল্যতা। প্রথম মুলাকাতেই যে কাউকে নিজের ফ্যান বানিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে। অনেক ভেবে এই গুলুমুলু,কিউটের ডিব্বাটাকেই একাকিত্ব নিরাময়ের অ’স্ত্র হিসেবে কাজে লাগল অহমি। ফোন দিল বড় বোনকে।

“আসসালামু আলাইকুম। বড় আপ্পি কেমন আছো তুমি। তিশা কেমন আছে? জিজু কেমন আছে?”

ওপাশে থেকে মিষ্টি হাসির সুরের সঙ্গে জবাব ভেসে এলো,

“আলহামদুলিল্লাহ ভীষণ ভালো আছি। তোরা সকলে কেমন আছিস। তোর জিজু আর তিশা একটু বাহিরে গেছে ঘোরাঘুরি করতে।”

“ওহহহ। তা তুমি যাওনি। আর হ্যাঁ বাসার সকলে ভালোই আছে শুধু আমি ছাড়া।”

অহনা উত্তেজিত হয়ে উঠল। বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

“কেন কী হয়েছে আমার তোতাপাখিটার? মন খারাপ বুঝি?”

“ও মা তুমি দেখি কিছুই জানো না।”

অহনা আশ্চর্যান্বিত কন্ঠে বলে, “কেন কিছু জানার কথা ছিল বুঝি?”

অহমি বিষন্নময় কন্ঠে বলল, “হুম ছিল তো। আমি গতকাল ভয়াবহ এক্সিডেন্ট করেছি। এখনো অসুস্থ।”

অহনা দ্বিগুণ আশ্চর্যন্বিত হল। স্তব্ধ মা’রা কন্ঠে বলল, “পুরোটা বল।”

অহনার এমন থমথমে কন্ঠ শুনে অহমি একটু ঘাবড়াল তবুও ছোট ছোট করে পুরো ঘটনা উপস্থাপন করল অহনার সামনে। সব শুনে অহনা ধপ করে কল কেটে দিল। এতকিছু হয়ে গেল। মাতৃস্নেহে বড় করে তোলা ছোট্ট বোনটির এমন বিপর্যয় ঘটে গেল অথচ কেউ একটিবার তাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করল না। বিয়ে করে বুঝি সে সত্যিই পর হয়ে গেছে? সকলে তাকে এতটাই পর ভাবে। মা, অর্পা, বিভোর সকলে!!

অহনা এহেন আচরণে অহমি বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সে রেগে গেছে। উহুম ঠিক রেগে নয় অভিমান করেছে। এই অভিমান কীভাবে ভাঙবে? অহমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। মনটা ভালো হওয়ার বদলে আরও খারাপ হয়ে গেল। কেন যে সে অহনাকে এতসব বলতে গেল। তবে তার কী দোষ, সে তো আর জানত না অহনাকে এখনো অব্দি কেউ কিছু জানায় নি। মা শুনলে নিশ্চয়ই তাকেই এখন বকবে। ইশশশ! এই অসুস্থ শরীরে কী বকা খেতে ভালো লাগবে? এমন হাজারো চিন্তাভাবনার মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠল। অহমি দরজার দিকে তাকাল একবার ভেতরে তাকাল। পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেলেও কেউ এলো না দরজা খুলতে। হয়তো সকলে ব্যস্ত। এটা ভেবে অহমি নিজেই সোফা থেকে উঠে দাড়াল দরজা খোলার উদ্দেশ্যে। সোফা ধরে গুটিগুটি পায়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে দরজা অব্দি পৌঁছে গেল। দেওয়ালে ভর দিয়ে দাড়িয়ে দরজার লক খুলে দিল।

দরজা খুলতেই তার সম্মুখে এক…………

————-#নিঃশ্বাসে_তুই (৫)

দরজা খুলে অচেনা যুবকটিকে দেখে কিয়ৎক্ষণ এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল অহমি। শ্যামবর্ণ বিশিষ্ট গরিষ্ঠ দেহের তীক্ষ্ণ নজরধারি সুদর্শন যুবকটির দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলতেই কোন এক গভীর সমুদ্রের অতলে হারিয়ে গেল সে। ভ্রম কাটল রেণুর বাক্যে…

“আরেহ ছোট আপা আপনে কেন দরজা খুলতে গেলেন? আমি তো এহনই চইলা আইতাম। আচ্ছা আপনে ভেতরে আহেন ভাইজানরে ভেতরে ঢুকতে দেন।”

অহমি ভ্রু কুঁচকে তাকাল রেণুর দিকে। যাকে সে নিজেই চেনে না তাকে রেণু ‘ভাইজান’ কেন বলছে? অহমি প্রশ্নাত্মক কন্ঠে রেণুকে জিজ্ঞেস করে, ” ভাইজান মানে?”

রেণু এক গাল হেসে জবাব দেয়…
“ও মা ভাইজান মানে বুঝেন নাই। ওই তো ধ্রুব ভাইজান মেঝো আপার বন্ধু। তার কথাই বললাম আরকি৷ বেচারা কতক্ষণ আর বাহিরে দাড়ায়ে থাকব৷ আপনে ভেতরে আসলে সে ও তো আসতে পারে।”

অহমির কপালের ভাঁজ বিলীন হলো। অবাক দৃষ্টি মেলে সে আরেকবার ধ্রুবকে দেখে নিল। অতঃপর উদ্যত হলো দরজা থেকে সরে দাড়াতে। কিন্তু তার আগেই অসাবধানতায় পড়ে যেতে নেয়। সে ভয়ে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে ফেলে। পুরোপুরি পড়ার আগেই ধ্রুব তার বলিষ্ঠ হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে তাকে। মিলিয়ে নেয় নিজের সঙ্গে। আচমকা ভরসার স্পর্শ পেয়ে অহমি খামচে ধরে তার বক্ষের কাছের কিছু অংশ। পরক্ষণেই পুরুষ দেহের উষ্ণ স্পর্শ, মাতাল করা পারফিউমের সুঘ্রাণ নাকে আসতেই জেগে ওঠে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। বুকের মধ্যে ধড়াস করে ধাক্কা লাগে। পরপরই দ্রুত বেগে বদ্ধ চক্ষু উন্মুক্ত করে নেয়। যার ফলে দৃষ্টি হারায় পুনরায় সেই মোহনীয় দৃষ্টি জোড়ায়। সেই দৃঢ় দৃষ্টিতে পুনরায় আবদ্ধ হওয়াতে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে অহমির। সর্বাঙ্গে অস্পষ্ট মৃদু কম্পন খেলে যাচ্ছে। শক্ত করে ধরে থাকার কারণে সেই কম্পন বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পারছে ধ্রুব। তার অধর কোণে রহস্য ময় এক চিলতে হাসির দেখা মিলল। পরক্ষনেই অহমিকে অতি সন্তর্পণে সোজা করে দাড় করিয়ে দিল আগের ন্যায়। এতক্ষণের পুরো ঘটনা চক্ষু জোড়া বড় বড় করে, গাল হা করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে নিয়েছে রেণু৷ তার কাছে মনে হয়েছে পুরোই সিনেম্যাটিক সিন চলছে। হিরোইন পড়তে নিলে হিরো তাকে বাঁচিয়ে নেয়! এমনটাই।

.

ধ্রুব, অর্পা মুখোমুখি সোফায় বসে। অর্পার ডান পাশে তাহমিনা বেগম অহমিকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। রেণু গেছে ধ্রুব’র জন্য নাস্তা পানির ব্যবস্থা করতে। টুকটাক আলাপ আলোচনা শেষে তাহমিনা বেগম চলে গেলেন রান্নাঘরে। তার আবার তরকারি চুলায় বসানো। অহমিকে রেখে গেলেন অর্পার কাছে। তাহমিনা বেগম চলে যেতেই অর্পা একটু নড়েচড়ে বসল। কৌতুকের ছলে এক ভ্রু উঁচিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ধ্রুবকে প্রশ্ন করল,

“কী ব্যাপার ধ্রুব সাহেব, আপনি স্বয়ং আমাদের বাড়িতে উপস্থিত?”

অহমির সম্মুখে বসে এভাবে রসিকতা করায় বিরক্তবোধ করল ধ্রুব। চোখে মুখে বিরক্তি টেনে বলল,

“হোয়াট দ্যা হেল! সবার এই একই প্রশ্ন কেন? তোর অসুস্থ বোনকে দেখতে এসেছিলাম। প্রবলেম থাকলে বল চলে যাই।”

অর্পা বুঝতে পারল ধ্রুব রেগে যাচ্ছে। সে তড়িঘড়ি করে বলল,

“আরেহ নাহ নাহ প্রবলেম কেন হবে? আমি তো মজা করছিলাম দোস্ত।”

ধ্রুব আর কোনো প্রতুত্তর করল না। এদিকে অহমির মনে এক শীতল প্রবাহ বয়ে গেল যেন। ধ্রুব তাকে দেখতে এসেছে মনে হলেই মনটা প্রশান্তিময় হয়ে উঠছে তার। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল ধ্রুব এসে থেকে এখনো তার সঙ্গে একটি কথাও বলেনি। ইস তাহলে কেমন দেখা দেখতে এসেছে যে কথাই বলছে না। অন্তত কেমন আছি, শরীরের অবস্থা কেমন এটুকু তো জিজ্ঞেস করাই যেত। কিন্তু নাহ তাও না! মেঝো আপি ঠিকই বলে এই লোক একটা জলজ্যান্ত করলা। অহমির নানান রকম ভাবনার মধ্যে অর্পা তাকে ডেকে বলল,

“এই অমু কী হয়েছে তোর? শরীর খারাপ লাগছে কী? এতো চুপচাপ কীভাবে আছিস? তুই তো চুপ থাকার মেয়ে না! তাহলে?”

অর্পার কথায় ধ্রুব এক ভ্রু উঁচিয়ে এক পল অর্পার দিক তো এক পল অহমির দিকে তাকাল। অহমি তখন চঞ্চল চাহনি দ্বারা অর্পার কাছ থেকে সত্যি লুকতে ব্যস্ত।

“আরেহ না না! আমার আবার কী হবে। আমি একদম ঠিক আছি আপি। এমনিতেই চুপ থেকে তোমাদের কথা শুনছি আরকি। তুমিই তো বলো বাড়িতে মেহমান এলে ভদ্রতা বজায় রাখতে তাই আরকি।”

শেষোক্ত বাক্যটি অহমি মিনমিনিয়ে বলল। যা দেখে ধ্রুব কিঞ্চিৎ হেসে ফেলল। সূক্ষ্ম সে হাসি নজর এড়িয়ে গেল সকলের। অহমিকে সে যতই দেখছে বুঝতে পারছে মেয়েটি অন্য সবার থেকে আলাদা। তার মধ্যে অদ্ভুত ভিন্নতা রয়েছে। নয়তো এতো ইজিলি কেউ নিজের কর্মদো’ষ স্বীকার করে নেয় না। যেটা অহমি করে নিল নির্দ্বিধায়।

.

রেণু এসে ধ্রুবকে নাস্তা দিয়ে গেছে। ধ্রুব কিছুই নেয়নি। অর্পার জোরাজুরিতে শুধু কফিটা নিতে বাধ্য হয়েছে। তিনজনের হাতেই কফি। তখনই তাহমিনা বেগম অর্পাকে ডেকে বলেন,

“অর্পা তোর ফোন বাজছে।”

অর্পা উঠে চলে যায় নিজের ঘরে ফোনে কথা বলতে। এখন শুধু ধ্রুব আর অহমি বসে আছে। অহমির কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। ভেতরে ভেতরে উসখুস করছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। এমনই সময় সেই পরিস্থিতি আরও একটু অস্বাভাবিক করে তুলতে ধ্রুবের রাশভারি চাপা কন্ঠই যথেষ্ট ছিল….

“পুরো নাম?”

অহমি হকচকিয়ে ওঠে। মৃদু কম্পিত কণ্ঠে বলে,

“আমাকে বলছেন?”

ধ্রুবর কাঠকাঠ জবাব, “এখানে আরও কেউ আছে বুঝি?”

অহমি এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখে নেয় ভালভাবে। নাহ আশেপাশে আর কেউ নেই। তারমানে তাকেই বলছে। ভীত-সন্ত্রস্ত মনটাকে শক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে এক শুকনো ঢোক গলাধঃকরণের মধ্যদিয়ে বলল,

“অহমিকা মুনতাহাজ।”

“পড়ালেখা….?”

“ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।”

“কোন কলেজ?”

“খুলনা সিটি কলেজ।”

“এসএসসি রেজাল্ট?”

“A+”

“রান্নাবান্না?”

“তেমন কিছুই পারি না।”

“সংস্কৃত জ্ঞান?”

“একটু আধটু।”

“হুমমম চলবে।”

কফির শেষ চুমুকটি দিয়ে শেষোক্ত কথাটি বলল ধ্রুব। যার অর্থ অহমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। কিন্তু ধ্রুবর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তো হালকার উপরে অহমির একটা ছোটখাটো ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়েছে। যে তথ্য গুলি জানা একান্ত জরুরি ছিল তারজন্য। এতগুলো প্রশ্নের উত্তর শেষে এবার অহমি নিজে থেকে একটি প্রশ্ন করতে উদ্যত হলো ধ্রুবকে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়, তার প্রশ্নের আগেই সেখানে অর্পা উপস্থিত। অর্পাকে দেখে চুপ হয়ে যায় অহমি। ধ্রুব লক্ষ্য করে ব্যাপারটি কিন্তু কিছু বলে না। অর্পা হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে। সোফায় বসতে বসতে বলে,

“আজকের ব্রেকিং নিউজ, ‘দ্যা গ্রেটেস্ট ধ্রুব চৌধুরী স্বইচ্ছায় অর্পা মেহরিনের বাড়িতে।”

অর্পা হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। ধ্রুব বেশ বুঝতে পারল অর্পা এতক্ষণ তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে কথা বলছিল। ধ্রুবর মেজাজ এবার চরম ক্ষিপ্র হয়ে উঠল। সে দু হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সটান হয়ে উঠে দাড়াল। রক্তিম দৃষ্টি জোড়া এক পল অর্পার ঠাট্টামাখা হাসোজ্জল মুখপানে নিক্ষেপ করে কোনো কথা না বলেই গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। অর্পা আটকাতে চেয়েও আটকালো না। কারণ সে জানে এখন কোনো ভাবেই ধ্রুবকে আটকে রাখা সম্ভব নয়। সে চরম বিব্রত হয়েছে। অর্পা সেভাবেই সোফায় গড়াগড়ি খেতে লাগল। এদিকে অহমি শক্ত হয়ে বসে আছে। অর্পার দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। সে তো হারিয়ে গেছে সেই রক্তিম দৃষ্টি জোড়ার অতলে। বাব্বাহ! কী ভ’য়া’ন’ক সেই দৃষ্টি। শান্তশিষ্ট গুরুগম্ভীর মানুষটা কেমন মুহূর্তেই হিংস্র রুপ ধারণ করল। সত্যিই অদ্ভুত সে! অদ্ভুত তার কর্মকাণ্ড!

.

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here