নিঃশ্বাসে তুই পর্ব -০২+৩

#নিঃশ্বাসে_তুই (২)

“কীভাবে হলো?”

“রিকশা আর বাইকে এক্সিডেন্ট করেছিল। সেই রিকশায় অমু ছিল। এক্সিডেন্ট টা গুরুতর না হলেও অমু টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ে যায়। রাস্তার পাশেই ছিল কাঁটাবন। কাঁটাগাছ গুলোর ওপর পড়ে ওর এই অবস্থা। ফোনে তো আমাকে এমনটাই বলেছিল। দেখা হওয়ার পর আর কিছু বলতে পারে নি।”

পুষ্পর বলা বাক্য শুনে ডক্টর খুব সূক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করল অহমিকে। ক্ষতস্থান গুলোতে মেডিসিন লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। আরও কিছু মেডিসিনের নাম প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়ে গেল। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিতে দিতে তাহমিনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“ভয়ের কিছু নেই। ঘুম ভাঙলে গরম দুধ সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাবার খায়িয়ে মেডিসিন গুলো খায়িয়ে দিবেন। ঠিকমতো মেডিসিন নিলে আর প্রপার রেস্ট নিলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। আ’ঘা’ত অতটাও গুরুতর নয় তবে ভয় পেয়েছে ভীষণ। তীব্র ভয়ে শরীর দূর্বল হয়ে সে’ন্স হারিয়েছে।”

তাহমিনা বেগম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন ডক্টরকে। ডক্টর প্রতিত্তোরে কিঞ্চিৎ হেসে বললেন, “ইট’স মাই ডিউটি।” বিভোর গেল ডক্টরকে এগিয়ে দিয়ে আসতে। তার চেহারার অবস্থা নাজেহাল। অতি স্নেহের ছোট্ট বোনটির এমন বেহাল দশা মেনে নিতে তার বড্ড বেশিই বেগ পেতে হচ্ছে। বন্ধু সমতুল্য পিচ্চি বোনটাকে সে একটু বেশিই ভালবাসে কিনা।

.

ঘুমন্ত অহমির মলিন মুখশ্রীতে নজর বুলিয়ে অর্পার বন্ধুরা সকলেই চলে গেছে ক্ষণকাল পূর্বে। সকলের সঙ্গে ধ্রুবও ছিল। আজ দিনের বেশিরভাগ অংশ তাদের এখানে থাকার প্ল্যানিং থাকলেও এখন তা বানচাল করা হয়েছে। অহমির এমন অবস্থায় তাদের হৈ-হুল্লোড়ে মেতে থাকাটা শোভা পায় না এজন্য নিজেরাই যে যার মতো বাড়ি ফিরে গেছে।

সময় সন্ধ্যা সাত টা বেজে সতেরো মিনিট:
ডাগর ডাগর চক্ষু জোড়া বহু কষ্টে টেনে টুনে খোলার চেষ্টা করছে অহমি। তার ঠিক ডান পাশেই পুষ্প শুয়ে আছে। বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রিয় বান্ধবীর কঠিন সময়ে সঙ্গ ছাড়বে না বলে সে তার বাড়িতে ফোন করে আগেই জানিয়ে দিয়েছে সে আজ বাড়িতে ফিরবে না। এটা শুনে কেউ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া করে নি। পুষ্প তা আগেই জানত। ওই পরিবারে তার বিন্দু মাত্র গুরুত্ব থাকলে হয়। সেই ছোট থেকে এতটা বড় হয়েছে তা শুধু অনাদরে, অবহেলায়, অত্যাচারে। তাই তো শেষমেশ যখন অহমির মতো কোমল মনের বিশ্বাসী বন্ধুর দেখা মিলেছে তখন সে তার সঙ্গ কীভাবে ছাড়বে? আ’মৃ’ত্যু এ সম্পর্ক অটুট রাখার দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয়েছে তারা।

বহু কষ্ঠে টেনে টুনে খোলা চোখ জোড়ার দৃষ্টি সর্বপ্রথম তার ডান পাশে শুয়ে থাকা শ্যামাঙ্গী বর্ণের মেয়েটির ওপর গিয়েই পড়ল। দূর্বল চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে মলিন হাসল অহমি। তবে সে হাসি তৃপ্তির হাসি। এক অন্তরিক্ষ নির্ভেজাল, স্বার্থহীন ভালবাসার একমাত্র অধিকারীনি হওয়ার মতো তৃপ্তিময় হাসি। নিজের দূর্বল হাতটি উঁচিয়ে অহমি পুষ্পর হাতের ওপর রাখল। সঙ্গে সঙ্গেই পুষ্প ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে উঠল। অধিক টেনশনে যা হয় আরকি। সে বোধ হয় অহমির জ্ঞা’ন ফেরার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল। অহমিকে চেতনায় দেখে বিচলিত পুষ্প অকস্মাৎ তাকে জড়িয়ে ধরল খুব শক্ত করে। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। অহমি পুষ্পর পৃষ্ঠদেশে নিজের একহাত রাখল৷ সেই সঙ্গে যেন পুষ্পর কান্না বেড়ে দ্বিগুণ হলো। সে সেভাবেই ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,

” কত করে না করেছিলাম একা যেতে। বলেছিলাম আমি পৌঁছে দেই। তোর শরীর ঠিক ছিল না আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। এখন দেখ কী কান্ডটাই না ঘটালি। আমি সঙ্গে থাকলে এট লিস্ট তোকে ধরে তো বসতাম। তখন কী আর এমন অঘটন ঘটতে পারত? আমাকে কষ্ট দিতে বেশ লাগে তোর তাই না। অসভ্য মেয়ে।”

অহমি নিরবে শুনল প্রিয় সত্ত্বার আকুল অভিযোগ। এখানেও অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল। বেশ ভালোই লাগছে তার। এমন ভালবাসাময় অভিযোগ শুনতে কে না চায়!!

সহসা কী একটা মনে পড়তেই পুষ্প চট করে অহমিকে ছেড়ে দেয়। তড়িঘড়ি করে উঠতে উঠতে বলে,

“তুই একটু অপেক্ষা কর। আমি আন্টি, আপুকে ডেকে নিয়ে আসি। তোর জন্য গরম গরম খাবারের এরেঞ্জ করছে তারা। আমাকে তোর কাছে রেখে দুজনেই কাজে লেগে পড়েছে। আমি এখনই আসছি।”

ক্ষণকালের মধ্যেই পুষ্প সকলকে ডেকে নিয়ে আসে। বিভোর তখন ডক্টরের দেওয়া মেডিসিন গুলো নিয়ে সবে বাড়িতে ফিরেছে। একটা মেডিসিন অনেক রেয়ার ছিল। কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই তো একটু লেট হয়েছে তার৷ সেই সারা খুলনার শহর খুঁজে খুঁজে অবশেষে পেয়েছে। রেণুর মুখ থেকে অহমির জ্ঞা’ন ফেরার খবর শোনা মস্তর এক বিন্দু সময় ব্যয় করে নি সে। গায়ের শার্ট টা তখন সবে মাত্র খুলেছিল। সেভাবেই ছুট্টে চলে যায় বোনের ঘরে।

তাহমিনা বেগম মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। অর্পা চিন্তিত মুখে বসে আছে। সে আবার একটু বেশিই ভাবুক টাইপ মেয়ে। বিভোর উদ্বিগ্ন কন্ঠে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে অহমিকে। রেণু রান্না ঘরের জিনিস পত্র গোছগাছ করছে। একটু পরে সে চলে যাবে। আজকের মতো তার কাজ শেষ। সকলের ভিড়ে একজন গুটিসুটি মে’রে দাড়িয়ে আছে আড়ালে। মাথা নিচু করে! উল্টো দিকে মুখ করে! ঠোঁট কামড়ে ধরে ওড়নার আঁচল হাতের আঙুলে প্যাঁচাতে ব্যস্ত সে। পেছনে ফেরার মতো ভুল সে কখনোই করবে না। এমন উদাম দেহে কেউ আসে? ভাবতেই লজ্জায় মা’থা কা’টা যাচ্ছে তার। কিন্তু যে এভাবে এসেছে তার তো কোনো খেয়ালই নেই। সেই বিভোর তো এখনো খেয়াল অব্দি করে নি যে এ ঘরে পুষ্পর উপস্থিতি মিশে আছে।

“পুস্প তুইও আয় খাবার খেয়ে নে। সেই কখন জোর করে দুটো খাইয়েছে অর্পা। অমুর চিন্তায় কম তো নাজেহাল অবস্থা হয়নি। এখন খেয়ে রেস্ট নে।”

তাহমিনা বেগমের কন্ঠে অকস্মাৎ চমকে ওঠে চারটি চোখ। দুজনেই তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে যায়। লজ্জা,অস্বস্তি, অস্থিরতা তীব্র ভাবে জেঁকে ধরেছে ওদের। অর্পাও সায় দিল তাহমিনা বেগমের সঙ্গে। পুষ্প কোন রকমে প্রতুত্তরে মাথা নেড়ে ‘হু’ বলে সেভাবেই দাড়িয়ে রইল। দীর্ঘ সময় পড়ে এভাবে পুষ্পকে নজরে পড়ায় বেশ রাগ হলো বিভোরের। আগে কেন দেখল না সে এই মেয়েকে? সহসা কাউকে কিছু না বলেই হনহনিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল সে। অহমি লক্ষ্য করল ব্যাপারটা। পুষ্প আড়চোখে দেখল বিভোরের চলে যাওয়া।

.

ঘুমের ঔষধের প্রভাব এখনো কিছু টা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অহমির সর্বাঙ্গে। ঘুম চোরা মেয়েটির চোখে যেন দুনিয়ার সকল মানুষের ঘুম এসে জড়ো হচ্ছে। ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতে চাওয়া নির্জীব চক্ষু জোড়া মেলে রাখার জন্য তুমুল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। তার পাশেই শুয়ে আছে পুস্প। তার দৃষ্টি জানালা ভেদ করে আসমানি চান্দের দিক।
গভীর চিন্তায় তলিয়ে গেছে সে। দূর্বল চাহনিতে পুষ্পকে এক পল দেখে নিল অহমি। পুনরায় চোখ বন্ধ করে নিল। তার এই সাময়িক অকেজো মস্তিষ্কেও বারংবার একটি কথা একটি প্রশ্ন জাগ্রত হচ্ছে। মনের প্রশ্নকে দমিয়ে রাখতে না পেরে পুষ্পর হাতের ওপর এক হাত রেখে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলল,

“পু পুসি একটা কথা বল তো! ভাইয়া তো বলল ও তখন বাড়িতে ছিল না। তবে আমাকে ভেতরে কে নিল? সবকিছু ঠিক কী করে হলো? ডক্টর কী করে এলো?”

চলবে,#নিঃশ্বাসে_তুই (৩)

“বাড়িতে তো তখন বিভোর ভাই ছিল না। আমি, আন্টি, অর্পা আপু, রেণু সকলে যখন তোকে নিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি তখনই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় এক রাজপুত্রের ন্যায় সুদর্শন যুবক। যেমন তাহার চেহারা, তেমনই তাহার এটিটিউড। আহা!আহা! আমি তো ফিদাহ্ হয়ে গেলাম রে।”

পুষ্প বুকের পা পাশে হাত রাখল। অতঃপর উৎফুল্ল কন্ঠে পুনরায় বলতে শুরু করল,

“আচ্ছা অমু বল তো কে সেই যুবক? আগে তো কখনো তোদের বাড়িতে তাকে দেখিনি। তুই ও তো কখনো বলিস নি। তাহলে কে সে? তারপর কী হল জানিস! সে এক ঝটকায় তোর অ’চে’ত’ন দেহটা কোলে তুলে নিল। ড্রয়িং রুমে এসে সন্তর্পণে সোফায় শুয়িয়ে দিল। তারপর ডক্টর আসতে লেট হবে বলে অর্পা আপুকে দিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স আনিয়ে নিজেই তোর ক্ষত স্থানে সাময়িক ট্রিটমেন্ট দিয়ে গেল। তবে আটকে গেল তোর পেটের ক্ষততে গিয়ে। তখন সে অর্পা আপুর কাছে দিয়ে ভেতরে চলে গেল। তারপর ডক্টর আসা অব্দি সর্বক্ষণ সে ছিল। ডক্টর চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পরে সে গেছে। ওহ আর একটা কথা, সে কিন্তু অর্পা আপুর ফ্রেন্ড’দের সঙ্গে সঙ্গে ছিল। হয়তো সে ও অর্পা আপুর কোনো ফ্রেন্ড হবে।”

ঘুমু ঘুমু মস্তিষ্কে পুষ্পর প্রতিটি কথাই খুব ভালো ভাবেই শুনল অহমি। কিন্তু কোনো দিরুক্তি করল না। ইচ্ছে থাকলেও মস্তিষ্ক আর সায় দিল না৷ সে হারিয়ে গেল গভীর ঘুমের অতলে। পুষ্পও ঘুমিয়ে পড়ল।

.

রাত বারোটা চৌধুরী মঞ্জিল:
কলিং বেল বাজতেই বাড়ির বিশ্বস্ত কাজের লোক রহিম চাচা এসে দরজা খুলে দিলেন। প্রতিদিনের ন্যায় ধ্রুব নিজের গাম্ভীর্যপূর্ণ রুপ নিয়ে প্রবেশ করল ভেতরে। সে রুপেই সরাসরি নিজের ঘরে চলে যাচ্ছিল সে। তখনই পেছন থেকে রহিম চাচার আবেদনময়ী কন্ঠ,

“প্রতিদিন এমন রাত করেন কেন ছোট বাবা। শরীর খারাপ করব যে। আবার ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া টুকুও করেন না। এমন অনিয়ম করলে কী চলব?”

ধ্রুব থামল। সেভাবেই দাড়িয়ে থেকে প্রতুত্তরে বলল,

“নিয়মের মধ্যে তখনই চলব যখন সে নিয়ম বেঁধে দেওয়ার জন্য কেউ একজন থাকবে। শরীরের প্রতি যত্ন তখনই নিব
যখন ভালবেসে সে শরীরের অধিকার আদায়ের জন্য কেউ একজন থাকবে। আপাততঃ যেমন চলছে চলতে দাও রহিম চাচা।”

রহিম চাচা চুপ হয়ে যায়। ধ্রুব এক তাচ্ছিল্য হাসি টেনে ওপরে চলে যায়। রহিম চাচা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেদিক পানে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলে,

“ছেলেটার মনে বড়-ই কষ্ট। বাপ-মা যদি ছেলেপেলের খবর না নেয় তাইলে আর সবকিছু ঠিক ভাবে চলে কেমনে। অবহেলায়, অবহেলায় ছেলেটা একদম ছন্নছাড়া হইয়া গেল। সে খুঁজে একটু ভালবাসা আর তার বাপ- মা’য় খুঁজে টাকা আর টাকা। তবু যদি কেউ একজন আসত তার জীবনে যে তাকে মন প্রাণ উজার করে ভালবাসত। এই কঠিন মানুষ টাকে বুঝে নিয়ে তাকে আপন করে নেওয়ার সাধ্যি কী আদৌ কারও হবে?”

.

মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে অহমির। সকালের সোনা রোদ পায়ের আঙ্গুলিদ্বয় নিখুঁত ভাবে স্পর্শ করে যাচ্ছে তার। অক্টোবর মাসের শেষের দিক। শীত পুরোপুরি না পড়লেও প্রকৃতিতে শীতের আমেজ এসে গেছে অনেকটা। সকাল সকাল ফ্যানের বাতাসে একটু হিমেল অনুভূতি হচ্ছে। যার দরুণ সকালের এই রোদের উষ্ণতা গায়ে মাখতে বেশ লাগছে।

অহমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তাহমিনা বেগম তাকে ডেকে দিয়েই চলে গেছেন। ডান পাশে তাকিয়ে দেখল পুষ্প ও নেই। এই মেয়ে টা পারেও বটে ভোর ছয়টা বাজতে না বাজতেই তার ঘুম উবে যায়। এখন হয়তো ছাদে গিয়ে পায়চারি করছে। নিজেদের বাড়িতে থাকলে তো ছাদে যাওয়ার অনুমতি হয় না ওর। এখানে যখনই আসে সময় পেলেই ছাদে চলে যায়। প্রকৃতি প্রেমী মেয়ে কীনা। একদম অহমির মতো। পুষ্পর বেশির ভাগ অভ্যাস অহমির সঙ্গে মিলে যায়। তাইতো দুজনের এত সখ্যতা।

অহমি অধর কোণে হাসি ফুটিয়ে বিছানা থেকে নামতে গেল ওয়াশরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আর তখনই দরজার কাছ থেকে ভেসে এলো পুষ্পর বিচলিত কন্ঠ,

“আরেহ কী করছিস কী অমু? লেগে যাবে তো। আমি আসছি দাড়া।”

বলতে দেড়ি তো পুষ্পর আসতে দেড়ি হয় না। সে এসেই অহমির এক সাইড দিয়ে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে দৃঢ় কন্ঠে বলে,

“নে এবার ঠিক আছে! চল। ”

অহমির পুষ্পর সঙ্গে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

“আমার অতটাও অসুবিধে হচ্ছে না পুসি। তুই কিন্তু একটু বেশিই স্ট্রেস নিচ্ছিস।”

“থাকল না হয় তোর ক্ষেত্রে আমার সবকিছুই একটু বেশি বেশি তাতে ক্ষতি কী বল?”

অহমি আর কিছু বলতে পারল না। প্রশান্তিময় মন নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। শরীরের আগে মনটা ফ্রেশ হয়ে গেল। এমন একটা শুভাকাঙ্খী সর্বদা ছায়ার মতো সঙ্গে থাকলে মনটা তো ক্ষণে ক্ষণে রিফ্রেশ হতে হবে।

.

ডাইনিং টেবিলে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে অর্পা,
অহমি,পুষ্প আর বিভোর। তাহমিনা বেগম আর রেণু ওদের খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। বিভোর বারকয়েক মাকে ডেকেছে ওদের সঙ্গে খেতে বসতে কিন্তু তিনি বসলেন না। ওদের খাওয়া হলেই খাবে বলে দিলেন।

বিভোর নিজ মনে খেয়ে চলেছে। কোনো দিকে হুঁশ নেই তার। এদিকে দুটি চোখ যে তাকে গিলে খেতে চাইছে সে খেয়াল তার নেই। সবার অগোচরে চোখ দুটি তাকেই দেখছে নিখুঁত ভাবে। খাওয়ার ফাঁকে অকস্মাৎ বিভোরের চোখ আটকে যায় সেই চোখে। ক্ষণকাল অতিবাহিত হতেই দু’জনেই চোখ সরিয়ে নেয়। বিভোর প্লেটে খাবার রেখেই উঠে যায়। চোখে মুখে তার বিরক্তি স্পষ্ট। তাহমিনা বেগম ছেলের ফেলে রাখা খাবারের প্লেট তুলতে তুলতে বললেন,

“এভাবে খাবার নষ্ট করতে নেই আব্বা। কবে শিখবি তোরা।”

বিভোর কিছুই শুনল না। গটগট পায়ে হেঁটে একেবারে বাড়ির বাহিরে যেতে যেতে বলল,

“আমি আসছি মা। ফিরতে লেট হতে পারে। দুপুরে অপেক্ষা করে থেকো না খেয়ে নিও।”

বিভোর চলে যায়। পুষ্পর চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। কোনো রকমে তা আড়ালে নিয়ে পানি দিয়ে টিপে টিপে খাবার গুলো গিলতে থাকে। খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে কাজ করছে না তার মধ্যে। তাহমিনা বেগম ছেলেকে ঘিরে নানান রকম অভিযোগ বলছেন একা একাই। এই যেমন,’না খেয়ে বেড়িয়ে গেল, কখন আসবে কে জানে, ছেলেটা দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে, একটি কথাও শুনে না, সবকিছুতে অনিয়ম চলবে তার, ইত্যাদি ইত্যাদি এমন হাজারো অভিযোগ।’

খাওয়া শেষে পুষ্প অহমিকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসল। অর্পা নিজের ঘরে যাচ্ছিল আবার কী মনে করে ড্রয়িং রুমে গেল। পুষ্প টিভি ছেড়ে গোপাল ভাড় ছেড়ে দিয়েছে। এই কার্টুন টা অহমি, পুষ্প দু’জনেরই ভীষণ পছন্দের। অর্পা এসে একটি রূপচর্চার ম্যাগাজিন বেছে নিয়ে আবার নিজের ঘরে চলে যেতে নেয়। তখনই অহমি পেছন থেকে তাকে ডাক দেয়। অহমির মাথায় এখনো গতদিনের প্রশ্ন গুলো ঘুরছে। তাই তো কৌতুহল দমাতে না পেরে বলল,

“আচ্ছা আপি কাল কে ছিল সেই ছেলে?যে আমাকে কোলে তুলে ভেতরে এনেছিল। আবার আমার সাময়িক ট্রিটমেন্টও করেছে। পুষ্প বলল আগে কখনো তাকে দেখে নি। তবে কে ছিল সে?”

অর্পা হেসে দিয়ে বলল, “ওহ হো! ও তো ধ্রুব ছিল। তোকে বলেছিলাম না আমার ফ্রেন্ড ধ্রুব কথা। ওই ছিল। এতদিনে বলে বলে কালই ওকে আমাদের বাড়িতে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম আর দেখ কী কপাল ওর কালকেই তোর এই অবস্থা হলো।”

কথা শেষ করেই অর্পা চলে গেল। পুষ্প আর অহমি একে অপরের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে একসঙ্গে বলে উঠল,

“ধ্রুব চৌধুরী……”

————
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here