নিঃশ্বাসে তুই পর্ব -১২+১৩

#নিঃশ্বাসে_তুই (১২)
—————————-
“ওয়াও কী সুন্দর স্পেস।”

“হুম।”

“আরেহ হুম কী আগে ভালো ভাবে দেখ তো।”

“হুম দেখছি।”

পুষ্পর কথায় অহমি দৃষ্টি এদিক ওদিক ঘুরালো। নদীর কিনারায় এসে পৌঁছেছে তারা। গোধূলির নিশ্চল তাপদাহ স্থির নদীর পানিতে ঝলঝল করছে। মৃদু পবনে কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর। বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু যে এখানে এনেছে তারই এখন পর্যন্ত দেখা মেলেনি। মনে মনে সেই অদ্ভুত মানবকেই খুঁজে চলেছে অহমি। ড্রাইভার তাদের এখানে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করতে গেছে। বলে গিয়েছে ধ্রুব এখানেই আসতে বলেছে। কিন্তু কোথায় সে?

সহসা পুষ্পর ডাকে ভাবনা ছেদ ঘটে অহমির। পুষ্পর ইশারা অনুযায়ী নদীর সাইড দিয়ে ভেসে আসা স্পীড বোটের দিকে নজর দেয়। মুহুর্তেই থমকে যায় তার দৃষ্টি। এতক্ষণের অস্থিরতা দমন হয়। ব্ল্যাক শার্ট, ব্ল্যাক সানগ্লাস পরিহিত পারফেক্ট পুরুষটিকে দেখে নদীর স্থির স্রোতের মতো করেই তার অন্তঃকোণে বয়ে গেল এক শীতল স্রোত। স্বস্তি ফিরে হৃদয় কোণে। সুন্দর পরিবেশটা দ্বিগুণ সুন্দর হয়ে ওঠে। মৃদু হাসি ভেসে ওঠে অধর কোণে। যা তার বেখেয়ালিতে রয়ে যায়। তখনই পুষ্প বলে ওঠে,

“এই অমু এভাবে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে ব্ল্যাশিং হচ্ছি কেন? সামথিং সামথিং নয়তো?”

অহমির হুঁশ ফিরে। পুষ্পর মাথায় টোকা মে’রে বলে,

“আরেহ ধ্যাত কী যা তা বলিস।”

স্পীড বোট একেবারে ওদের নিকটে এসে থেমেছে। বোট থামতেই ধ্রুব তার এক হাত বাড়িয়ে দেয় অহমির দিকে। অহমি একবার ধ্রুবর হাতের দিকে তো একবার পুষ্পর দিকে আর একবার ধ্রুব’র চোখে তাকায়। পুষ্প অবাক হয় ব্যাপারটায় পরক্ষণেই আবার মনে মনে হেসে ফেলে। অহমির ইতস্তততা দেখে ধ্রুব চোখ রাঙায়। ততক্ষণাৎ ঝট করে অহমি নিজের হাত ধ্রুব’র হাতে রাখে। সেই সঙ্গে কেঁপে ওঠে তার সর্বাঙ্গ, অন্তরিক্ষ। এই প্রথম কোনো পুরুষ মানুষের ছোঁয়া তার ছোট্ট হৃদয়ে শিহরণের ঝড় তুলে দিয়েছে যেন। ধ্রুব অহমির হাতটি খুব শক্ত করে ধরে বোটের ওপরে তুলে নেয় ওকে। বোটে তোলা হয়ে গেছে ওকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে হাত দুটো পকেটে গুজে দাড়ায়। অহমিকে বলে পুষ্পর হাত ধরে ওকেও বোটে তুলতে। অহমি কম্পিত হাতটি বাড়িয়ে দেয় পুষ্পর দিকে। পুষ্প মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে ওর হাত ধরে ওঠার সময় খুব সন্তপর্ণে চিমটি কেটে দেয়। অহমি চোখ রাঙায়। পুষ্পর হাসি দ্বিগুণ হয়। ধ্রুব’র এসবে খেয়াল নেই। সে ফোনে বিজি হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। সে একদম স্বাভাবিক।

.

“থাক থাক মা পায়ে হাত দিতে হবে না। তুমি আমার বুকে এসো।”

তাহমিনা বেগমের কথায় ছিমছাম গড়নের হাসোজ্জল মুখশ্রীর মেয়েটি জড়িয়ে ধরল তাকে। তাহমিনা বেগম মেয়েটির মাথায় পুনরায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

“চিরসুখী হও।”

তখনই পেছন থেকে বিভোর লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে মাথা চুলকানোর ভঙ্গিতে বলে,

“মা ও হলো প্রমি। আজই এসেছে চিটাগং থেকে।”

তাহমিনা বেগম প্রমিকে পাশে দাড় করিয়ে বললেন,

“তা কী আর আমার বুঝতে বাকি আছে? আচ্ছা ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা। আমি নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর অর্পাকেও খবরটা দিয়ে আসি।”

প্রমি লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে ফেলল। তাহমিনা বেগম চলে গেলেন। প্রমির লজ্জাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়ে বিভোর রসিকতা করে বলল,

“চলুন ম্যাডাম। আপনার ফিউচার ঠিকানা সম্পর্কে খুটিনাটি জেনে নেবেন চলুন।”

প্রমি আলতো হাতে বিভোরের বাহুতে চাপড় মা’র’ল। বিভোর শব্দ করে হেসে উঠল। এতে করে যেন লজ্জার শেষ সীমানায় গিয়ে ঠেকল প্রমির অন্তরিক্ষ।

.

ভয়ে আ’ত্মা কেঁপে কেঁপে উঠছে অহমির। পুষ্প ওকে ধরে আছে এক হাতে। পুষ্প ভয় পাচ্ছে না মেয়েটার বরাবরই ভয়-ডর কম। সে পরিবেশটা বেশ ইনজয় করছে। ধ্রুব প্রগাঢ় দৃষ্টিতে বারকয়েক অহমিকে পর্যবেক্ষণ করে নিয়েছে। এভাবেই চলছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল তখন যখন
স্পীড বোটটা কিনারায় মোড় ঘুরতে গিয়ে একটু বেশিই স্পীড বেড়ে গেল। অনেকটা হেলে পড়ল পানির নিকটে। অহমি ‘আম্মা’ বলে চিৎকার করে উঠল। ততক্ষণাৎ ধ্রুব তাকে টেনে একদম নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিল। অকস্মাৎ ঘটনা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো অহমি, পুষ্প দুজনকেই। ভয়-শঙ্কা ভুলে অহমি তখন অনূভুতির জোয়ারে ভাসতে ব্যস্ত। দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলে আছে দুজনার। তখনই এক ধাক্কায় বোট এসে ভিড়ল কিনারায়। হুঁশ ফিরল দু’জনের। অহমিকে তখনও ছাড়ল না ধ্রুব। একেবারে পাড়ে তুলে ছাড়ল। পুষ্প ওদের পেছন পেছন উঠে এলো। সে একমনে হেসে চলেছে। তার কাছে সবকিছুই রহস্যময় লাগছে।

.

অর্পার সঙ্গে প্রমির বেশ সখ্যতা হয়ে গেল। প্রমি, অর্পা সইম ইয়ারে পড়াশোনা করে। প্রমি চিটাগংয়ে বাবার কাছে থেকে পড়াশোনা করে। এখানে এসেছে তার মায়ের কছে। তার বাব – মা আলাদা থাকে। তাই বলে যে তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে এমনটা নয়। প্রমির বাবার অফিসের দুটো শাখা। একটা চিটাগংয়ে আরেকটি খুলনাতে। একসঙ্গে দুটো সামলানো তারপক্ষে কঠিন। তাই প্রমির মা খুলনার অফিসটা দেখাশোনা করে আর প্রমির বাবা চিটাগং এরটা। প্রমি তার বাবাকে বেশি পছন্দ করে তাই সে সেখানেই থাকে। কাজের চাপ কম থাকলে সপ্তাহে দু-তিনদিন করে তার বাবা এসে খুলনায় থেকে যায়। প্রমির মাও অনেক সময় চিটাগং চলে যান। প্রমির মায়ের সঙ্গে প্রমির ছোট বোন খুলনাতে থাকে। প্রমি পড়াশোনার চাপে বেশি একটা খুলনা আসতে পারে না। এটা নিয়ে তার মায়ের অভিযোগের আর শেষ নেই।

“এখনই এই অবস্থা বিয়ের পর বাবাকে ছেড়ে কীভাবে থাকবে?”

অর্পার রসিকতায় মুখটা চুপসে গেল প্রমির। চোখ জোড়া ছলছল করছে। টোকা দিলেই পানি গড়িয়ে পড়বে। প্রমির এমন অবস্থা দেখে অর্পা হেসে দিয়ে বলল,

“আরেহ রিল্যাক্স, রিল্যাক্স আমি তো মজা করছিলাম। এসব নিয়ে পড়ে ভাবা যাবে এখনও তো অনেক সময় পড়ে আছে।”

প্রমি মাথা নুয়িয়ে ফেলল।

.

ছোটখাটো একটা পিকনিক স্পট। সমবয়সী ছেলেরা রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত। সকলে হাতে হাত লাগিয়ে কাজ করছে। অহমি ধ্রুব’র পেছনে পুষ্পর হাত ধরে কাচুমাচু হয়ে এগোচ্ছে। পুরো স্পট জুড়ে শুধু সে আর পুষ্প ব্যতিত কোনো মেয়ে নেই। তাদের দেখা মাত্রই ছেলেগুলো কাজ ফেলে ছুটে চলে এলো। একেকজনের সে কী উল্লাস। তাদের কথায়ই বোঝা যাচ্ছে ধ্রুবকে পেয়ে কতটা খুশি তারা। একেকজন এমন বলছে, ‘ভাই এসেছেন খুব খুশি হয়েছি, পুরোটা সময় থাকতে হবে কিন্তু, খুব মজা করব আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। এরই মধ্যে একজন বলে ওঠে,

“ভাই সঙ্গে কী ভাবি নাকি?”

এই প্রশ্নের জন্য ধ্রুব, অহমি, পুষ্প কেউই প্রস্তুত ছিল না। ধ্রুব এক পল অহমির দিকে তাকায়। অহমির ভীত দৃষ্টি তখন ধ্রুবতেই নিবদ্ধ ছিল। দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলে যায়। ধ্রুব চোখ সামনে নিয়ে কিছুটা ভরাট কন্ঠে বলে,

“এসব নিয়ে পড়ে কথা বলছি।”

ব্যস ছেলেগুলো আর কথা বাড়ায় না। হৈ হৈ করতে করতে ওদের নিয়ে নির্দ্দিষ্ট স্থানে চলে যায়।

.#নিঃশ্বাসে_তুই |১৩|

বিরিয়ানির গন্ধে চতুর্দিক মুখরিত। ছেলেগুলোর রান্নার হাত দারুণ। পাকা বাবুর্চিদের মতো রান্না করেছে। অহমি গুনে গুনে লোকমা মুখে তুলছে এমন একটা অবস্থা। পুষ্প বেশ স্বাভাবিক ভাবেই খাচ্ছে। ধ্রুব সটান হয়ে বসে ফোন টিপছে। মাঝে মধ্যে আড়চোখে অহমিকে লক্ষ্য করছে। সে নাকি একটু পর খাবে। ধ্রুব লক্ষ্য করল অহমি অস্বস্তিবোধ করছে। ঠিকঠাক খেতে পারছে না। ধ্রুব কিছু বলল না। কিছু সময়ের মধ্যে ওদের খাওয়া শেষ হয়ে গেল। অহমি খাবার রেখেই উঠে গেছে। মূলত পুষ্প উঠে গেছে তাই সেও উঠে পড়েছে। ধ্রুব দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।

খাওয়া দাওয়ার পর্যায় শেষে কিছুক্ষণ গান-বাজনা চলল। ধ্রুবকে অনেক রিকুয়েষ্ট করা হলো একটা গান গাওয়ার জন্য কিন্তু সে নারাজ। শেষে ব্যর্থ হয়ে ছেলেগুলো নিজেদের মতো করে আনন্দ পরিবেশন করল। অহমি, পুষ্প মনোযোগ দিয়ে শুনল ওদের গান। কেউ কেউ নাচও করল। কেউ বা আবার কৌতুক, অভিনয়। মোটকথা যে যা পারল করল। কাউকে ছাড় দেওয়া হলো না।

.

রাত আটটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট,
ধ্রুব’র গাড়িটি পুষ্পদের বাড়ির সম্মুখে এসে থেমেছে কেবলই। পুষ্প অহমিকে বিদায় জানিয়ে ভেতরে চলে গেল। ধ্রুবকেও ছোট্ট করে ‘আল্লাহ হাফেজ ভাইয়া’ বলতে ভুলল না। প্রতিত্তোরে ধ্রুব কিঞ্চিৎ মাথা নাড়ল। পুষ্প চলে যেতেই ধ্রুব আগের দিনের ন্যায় আজও সামনের সিট থেকে পেছনে অহমির পাশের সিটটি দখল করে নিল। ততক্ষণাৎ গাড়ি স্টার্ট দিল ড্রাইভার। অহমি আজ আর অতটা ঘাবড়াল না। পাথর মূর্তি রুপ ধারণ করল মাত্র।

ক্ষণকাল কেটে গেল। ধ্রুব বরাবরের ন্যায় ফোনে মনোযোগী। তার বরাবরই স্থির চিত্ত। অপরদিকে অহমি বরাবরই অস্থির চিত্ত। আজও সে হঠাৎ কিছু ভেবে অস্থির হয়ে উঠল। সেই অস্থিরতা লক্ষ্য করে ধ্রুব তার কার্য মধ্যেই গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“কিছু বলবে?”

অহমি অপ্রস্তুত হলো কিঞ্চিৎ কিন্তু প্রকাশ করল না। স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বলল,

“আসলে একটা কথা বলতে চাইছিলাম।”

ধ্রুব’র দৃষ্টি তখনও ফোনে নিবদ্ধ। পূর্বের ন্যায় গম্ভীর কন্ঠে সে বলল,

“শুনছি বলো।”

অহমি হাত মুচড়াতে মুচড়াতে অকস্মাৎ একটি অপ্রত্যাশিত বাক্য উচ্চারণ করে ফেলল। বলল,

“খেয়েছেন আপনি?”

ধ্রুব এতক্ষণ ফোন স্ক্রল করছিল। থেমে গেল তার হাত। ঝট করে পলক ফেরাল অহমির মুখশ্রীতে। অহমি ঘাবড়ে গেল। আমতা আমতা করে কিছু বলতে গেল। কিন্তু তার আগেই ধ্রুব’র শীতল কন্ঠ ভেসে এলো,

“খেয়ে নিব।”

ধ্রুব আগের ন্যায় ফোনে দৃষ্টি দিল। অহমি আর কিছু বলার সাহস করল না। চুপচাপ বসে রইল। দেখা যায় পরপরই ধ্রুবও ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। অহমি আড়চোখে দেখে সে দৃশ্য। একবার নয় বারকয়েক দেখে। ধ্রুবকে কেন জানি আজকে একটু বেশিই আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে তার কাছে। মনের মধ্যে ধ্রুব’র জন্য কিঞ্চিৎ হলেও ভালো লাগা কাজ করছে। এই যে শুরু থেকেই লোকটা তাকে সবসময় খুশি উপহার দিচ্ছে। যদিও সেই খুশির মুহুর্ত গুলো ধ্রুব’র উপস্থিতিতে পুরোপুরি উপভোগ করা হয় না তার তবুও যা করে এটাই বা কম কিসে। লোকটা যেন সর্বদা তার সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে আছে। তার প্রতি একটা চাপা কেয়ার করছে অথচ স্বীকার করছে না।

.

বাড়িতে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে অহমি পুষ্পকে ফোন করল। কিন্তু সে ফোন তুলল না। মেয়েটা কী তাহলে আগের দিনের জন্য রিভেঞ্জ নিচ্ছে? হয়তো। শান্ত স্বভাবের হলেও সর্বদা এক চাপা দুষ্টুমি খেলা করে তার সবটা জুড়ে। অহমি সেই ভেবে হাসতে হাসতে তাকে ছোট্ট একটা টেক্সট করল। লিখল,

“আমি কিন্তু ধরে ফেলেছি তোর চালাকি।”

পরক্ষণেই মায়ের ডাক কর্ণগোচর হতেই ফোন রেখে অহমি চলে গেল মায়ের কাছে। তাহমিনা বেগম তখন মেয়ের জন্য খাবার সাজাতে ব্যস্ত। অহমিকে দেখে তিনি মুখভঙ্গি একটু সিরিয়াস করে বললেন,

“তোর কী কোনো কাণ্ডজ্ঞান আছে অমু? সেই বেড়িয়েছিস আর এখন এলি। বুঝলাম বন্ধুদের সঙ্গে বেড়িয়েছিস তাই বলে এত রাত করতে হবে। শহরের পরিস্থিতি জানিস?এখানে মেয়েদের বাহিরে চলাচল কতটা রি’স্কি জানিস?কবে যে তোর আক্কেল হবে কে জানে। যাই হোক ভাইয়ের জীবনের একটি বিশেষ দিনেও তোমাকে পাওয়া গেল না।”

অহমি বুঝল তারমানে অর্পা মায়ের কাছে এসব বলে ম্যানেজ করেছে। পরক্ষণেই মায়ের বলা শেষোক্ত বাক্যটি মনে পড়তেই সে ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,

“ভাইয়ার জীবনের বিশেষ দিন মানে? কী হয়েছিল আজ? কীসের কথা বলছ তুমি, আম্মা?”

তাহমিনা বেগম দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললেন,

“প্রমি এসেছিল আজ। সন্ধ্যা অব্দি ছিল। তোর জন্য অপেক্ষা করে করে অবশেষে চলে গেছে। আজই চিটাগং থেকে এসেছে শরীর অনেক ক্লান্ত তার এজন্য তাড়াতাড়ি চলে গেছে। নয়তো একেবারে তোর সঙ্গে দেখা করে যেত।”

অহমি খুশিতে লাফিয়ে উঠল। তীব্র উল্লাসের সহিত বলল,

“প্রমি আপু এসেছে। ইস মিস করে গেলাম। এখন তো আফসোস হচ্ছে কেন যে লেট করলাম।”

অহমি মন খারাপ করে ফেলে। তাহমিনা বেগম মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলেন,

“আচ্ছা ব্যাপার না, মন খারাপ করিস না কাল আবার আসবে তখন কথা বলে নিস। এখন খেতে বস।”

অহমি ছোট্ট করে ‘হু’ বলল। পরক্ষণেই আবার খাওয়ার কথা মনে পড়তেই বলল,

“আম্মা এখন খেতে পারব না বন্ধুরা মিলে অনেক কিছু খেয়েছি। পেটে একটুও জায়গা অবশিষ্ট নেই।”

তাহমিনা বেগম মেয়ের করুন মুখশ্রীতে তাকিয়ে আদুরে গলায় বললেন,

“আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। পরে যদি ক্ষিধে লাগে তবে এসে খেয়ে যাস।”

অহমি খুশি হয়ে মায়ের ললাটে চুমু একে দিয়ে ‘আচ্ছা’ বলে চলে যায়। তাহমিনা বেগম মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বলেন,’পাগলী মেয়ে।’

.

প্রচন্ড রেগে গিয়ে রীতিমতো পুষ্পের ওপর চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে সাবিনা বেগম। তার রাগের কারণ নিষেধ করা সত্ত্বেও পুষ্প কেন বাহিরে বিচরণ বন্ধ করছে না। তার-ওপর আবার সে অনেক বার ফোন করা সত্ত্বেও ফোন তুলেনি। সেই থেকে সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে সে মেয়েটার ওপর। এখন পর্যন্ত ঘরে অব্দি যেতে দেয়নি। পুষ্প নানারকম যৌক্তিক এক্সকিউজ দিলেও তিনি শুনতে নারাজ। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে পুষ্প। এরই মধ্যে কারো কন্ঠস্বরে মাথা উঁচু করে পুষ্প। প্রিয় মানুষটির কন্ঠ ভেসে আসতেই ভরসার হাত খোঁজে। দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে প্রমির বুকে। অভিমানী কন্ঠে বলে,

“তুমি খুব পঁচা আপি। আমাকে ফেলে দূরে দূরে থাকো। আমাকে একটুও ভালবাস না। এই আমি তোমাকে কত ভালবাসি আর তুমি….. ”

প্রমি বোনের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। মিষ্টি হেসে বলে,

“এতো অভিযোগ! সহজে ক্ষমা পাব কী?”

পুষ্প দুষ্টু হেসে বলল, “উহুম এত সহজে নয়। আগে আমাকে জিজুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। নয়তো ডোন্ট ক্ষমা-টমা।”

প্রমি লজ্জা পেলেও প্রকাশ করল না। বোনটা তার বড় হয়ে গেছে সেই সঙ্গে সঙ্গে বড্ড পেকেও গেছে। প্রমি এবারেও মুচকি হাসল। তাদের এতক্ষণের মিল-মোহাব্বত কিছুই চোখে পড়ল না সাবিনা বেগমের। তিনি চেঁচাতেই ব্যস্ত। ধীরে ধীরে তার চেঁচানোর গতি বাড়ছে বৈ কমছে না। প্রমি অসহ্য হল। মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

“আহহহ আম্মা, চুপ করবে তুমি।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমি বললেই তো সব দোষ। সে যে এমন করে তার কোনো দোষ নেই।”

রাগে গটগট করতে করতে চলে যায় তিনি। প্রমিও বোনকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।

.
চলবে,
অহমিকা মুনতাহাজ ®……

ভুল কিছু বলে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here