নিবিদ্রিতা কাহন পর্ব -০৮

#নিবিদ্রিতা_কাহন—-৮
®মেহরুমা নূর

★আজ সানা আর তাসিরের বিবাহ বার্ষিকি।শাহরিয়ার বাড়িতে হৈচৈ পূর্ণ পরিবেশ। কে কি পড়বে, কীভাবে রেডি হবে সেই কোলাহলে ব্যাস্ত। এদিক থেকে ওদিক একেকজন একেক ঘরে ছোটাছুটি করছে। সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড, আদ্রিতা। সেই এক মাস আগে নিবিড় ভাইয়ার আসার উপলক্ষে ওরা এসেছিল তারপর আর আসেনি। আবার দেখা হবে ভেবেই খুশি লাগছে। অনেক দিন পার্টি হবে। কত্তো মজা করবে সেসব ভাবছে আর লাফাচ্ছে। সারাবাড়ি জুড়ে কতক্ষণ ঘুরে ঘুরে সবার রুমে ঠু মেরে দেখলো কে কি পড়ছে। তানহা ওর ভাইয়ার আনা চশমা গুলোর মধ্যে থেকে নতুন একটা চশমা পড়ে নিলো। আজ পার্টিতে সে এটাই পড়ে যাবে। চশমাটা চোখে পড়ে আদ্রিতাকে দেখিয়ে বলল,
“এই অরি, দেখতো এই চশমায় কেমন লাগছে আমাকে?”
আদ্রিতা মজা করে বলল,
“একদম ইউনিক,আউট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। এলিয়েন লেভেলের।”
“কি বললি! আমাকে এলিয়েন মনে হচ্ছে তোর?”
“তো কি বলবো? চশমাই তো লাগিয়েছিস। এমন ভাবে বলছিস যেন এটা আজ প্রথম পড়লি।আগেও চার ব্যাটারি লাগতো আজও তাই লাগছে।”
বলেই হেঁসে দিয়ে পালালো আদ্রিতা। নূরানের রুমে এসে দেখলো সে এখনো পেইন্টিং-এ লেগে আছে। আদ্রিতা কোমড়ে হাত রেখে বলল,
“ভাইয়া,তুমি রেডি হওনি এখনো? সোনা মা,দ্রুত রেডি হতে বলেছে শোনোনি?”
“আচ্ছা? তাহলে তুই এখানে কি করছিস?”
“আমি চেক করছি সবাই রেডি হয়েছে কিনা। তুমি জলদি তৈরি হও।”
“আমিতো তৈরিই আছি। বের হওয়ার সময় ডাক দিস আমি চলে আসবো।”
“কি বলো ভাইয়া!তুমি এই বাসার টিশার্ট আর ট্রাউজারেই যাবে?”
“হ্যাঁ, তো আর কি করতে হবে? শরীর ঢাকা থাকলেই হলো।”
“কি যে বলোনা তুমি! দাঁড়াও আমি তোমার কাপড়চোপড় বের করে দিচ্ছি। একদম এসব পঁচা পোশাক পরে যাবে না। আমার ভাইকে সবচেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম দেখতে হবে। ”
“দেখ অরি,আমার এসব ভালো লাগে না। আমিতো যেতামও না। নেহাৎ ফুপি মন খারাপ করবে তাই যাচ্ছি।”
“আর আমার কথা না শুনলে আমি রাগ করবো। তাই চুপচাপ আমি যেটা দিচ্ছি সেটা পড়ে নাও।”
নূরান অনেক মানা করার চেষ্টা করলেও কে শোনে কার কথা। অগত্যা আদ্রিতার জোরাজোরিতে তার পছন্দের কাপড়চোপড়ই পড়তে হলো। বোনকেও যে সে মন খারাপ হতে দিতে পারে না।”

জুহির রুমে এসেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল আদ্রিতা। দ্রুত চোখের উপর হাত রেখে বলল,
“ওহ,সরি সরি আমি কিছু দেখিনি। দেখলেও কাউকে বলবোনা যে ফিরোজ ভাইয়া ভাবিকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছিল, হি হি। ”
বলেই সেখান থেকেও হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেল।
জুহি ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেল। জুহি ফিরোজের কাঁধে গুতা দিয়ে বলল,
“এইজন্যই বলছিলাম দরজা লাগিয়ে নাও। কিন্তু তুমি শুনলেতো আমার কথা। এখন এই পাগলী নির্ঘাত সবাইকে বলে বেড়াবে। সবার সামনে কি মুখ দেখাব ? ”
ফিরোজ মুচকি হেঁসে বলল,
“আরে কোন মুখ আবার দেখাবে। এইযে আমার বউয়ের পরীর মতো সুন্দর মুখটাই দেখাবে। আর এতো লজ্জার কী আছে? নিজের বউকেইতো শাড়ি পরিয়েছি প্রতিবেশীর বউকে তো আর পড়াই নি। আমাদের বংশের ছেলেরা একটু বেশিই রোমান্টিক। এটা সবাই জানে। তাই প্যারা নিওনা,চিল।”
বলেই টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলো জুহির গালে। লাজুক হাসলো জুহি।

আদ্রিতাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে তানি অতিষ্ঠ সুরে বলে উঠলো,
“অরি মা,তুই এখনো রেডি হোসনি কেন? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। সানা তিন বার ফোন দিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা একা একা সব সামলাতে পারছেনা। আমাদের দ্রুত বের হতে হবে। যা,জলদি তৈরি হয়ে নে।
” হ্যাঁ সোনা মা,এখুনি হচ্ছি।”
বলেই ছুটলো নিজের রুমের দিকে। যেতে নিয়েই হঠাৎ নিবিড়ের রুমের সামনে এসে থেমে গেল। সবার রুমে উঁকি দেওয়া শেষ, শুধু এটাই বাদ৷ এখানেও কি একবার দেখবো? না দেখলে আবার রুমটা মাইন্ড করতে পারে। ভাববে আমি তাকে অবহেলা করলাম। কিন্তু মহৎ প্রাণ অরিতো কাউকে অবজ্ঞা করে না। তাই আদ্রিতা রুমটা আস্তে করে হালকা একটু খুলে সামনে ঝুঁকে কোনোরকমে শুধু মাথাটা হালকা এগিয়ে দিয়ে ভেতরে উঁকি দিলো। উঁকি দিয়েই চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল। নিবিড় মাত্রই প্যান্ট পায়ের ভেতর দিয়ে উপরে তুলছে।জাঙ্গিয়ার অর্ধেক তখনও বেড়িয়ে আছে। আদ্রিতা ফট করে চোখ খিঁচে বন্ধ করে দ্রুত ওখান থেকে সরে এলো। ছি ছি, কি দেখলো সে। লোকটাও কি অসভ্য! দরজা না লাগিয়েই কাপড় চেঞ্জ করছে। বিদেশ গিয়ে এতো পড়ালেখা করেও ম্যানারস শেখেনি, ছ্যা ছ্যা। নিবিড়কে এমন ভাবে বকছে যেন সব দোষ নিবিড়ের। তার ওভাবে অন্যের রুমে উঁকি দেওয়াটা মোটেও দোষের মাঝেই পড়ে না। বরং রুম আঁটকে না রেখে নিবিড়ই ঘোর অপরাধ করেছে।

পুরো আলমারি ঘেঁটেও নিজের জন্য কোনো পছন্দসই ড্রেস খুঁজে পেলনা আদ্রিতা। গাল ফুলিয়ে বসে পড়লো সে। এখন পার্টির জন্য কি পড়বে সে? এখনতো শপিংয়ে যাওয়ারও সময় নেই। মনটাই খারাপ হয়ে গেল তার। হঠাৎ তানহা ওর রুমে এসে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা নে। কাল রাতে ভাইয়া সবার জন্য শপিং করে এনেছিল। এটা তোর জন্য। আমার কাছে দিয়েছিল তোকে দেওয়ার জন্য। কারণ তুই ঘুমিয়ে পড়েছিলি।”
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে প্যাকেট আদ্রিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল তানহা। আদ্রিতা প্যাকেট খুলতেই মিষ্টি রঙের একটা জর্জেটের গাউন ড্রেস বেড়িয়ে এলো। আদ্রিতার চোখ চকচকে হয়ে উঠলো। যাক,দৈত্য দানব হলেও চয়েস ভালো আছে। কি সুন্দর ড্রেস। আজতো পার্টিতে আমাকেই সবচেয়ে সুন্দর লাগবে। খুশিমনে আদ্রিতা জলদি ড্রেস পড়ে তৈরি হয়ে নিলো। মেকাপ করলোনা৷ ওই বাসায় গিয়ে সানভির কাছ থেকে মেকাপ করিয়ে নিবে। সানভি আবার এসবে এক্সপার্ট। সারাদিন সাজসজ্জা নিয়ে গবেষণা করাই ওর কাজ। তাই এখন আর বেশি কিছু করলোনা। শুধু চুলটা আচড়ে নিয়ে জুতো পড়তে নিলো। জুতো পড়তে নিয়ে পায়ের নূপুর জোরা আবারও দেখলো আদ্রিতা। নূপুর জোরা তার এখন কেমন পছন্দের হয়ে উঠেছে। যেই দিক, তবে তার এখন এটা খুব ভালো লাগে। সবাই যখন ওর নূপুরের দিকে চোখ গেড়ে তাকিয়ে থাকে, তার খুব ভালো লাগে। নিজেকে খুব স্পেশাল মনে হয়। মনে মনে পরাকে ধন্যবাদ দেয় আদ্রিতা।ক্যাবিনেটের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিলো। ফোনটাও নিবিড় ভাইয়া দিয়েছে। সেদিনের পরের দিনই ফোনটা ওর রুমে রেখে গিয়েছিল।যেমন করে পেস্ট্রি কেক রেখে গিয়েছিল।ফোন খুলতেই হুমকি ভরা ম্যাসেজও মুখের উপর ছুড়ে মেরেছিলো। ম্যাসেজ টা এমন ছিলো যে আমি যদি আর কখনো নিজের ছবি ফেসবুকে আপলোড করি তাহলে নাকি পরদিনই আমার মৃ,ত্যু,র খবরও পোস্ট হবে। রাগ হয় আদ্রিতার। সেকি আগেও কখনো ছবি আপলোড করতো নাকি। ওই ছবিটা তো ওর বান্ধবী হিয়া করেছে। আর ওকে ট্যাগ দিয়েছিল। কিন্তু সেসব কথা বলার সময় দিলে তো।আগেই ফয়সালা জারি করে দেয়, হুহ্। ফোনটা হাতে নিয়ে নূপুর পড়া পায়ের কয়েকটা ছবি তুললো আদ্রিতা। তারপর বেড়িয়ে এলো। বাইরে থেকে তানি সবাইকে ডাকছে দ্রুত বের হওয়ার জন্য।

বাইরে এসে দেখলো তানি গিফট গুলো গাড়ির ডিকিতে তুলছে। আদ্রিতা এগিয়ে গিয়ে তানির গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল,
“ওয়াও সোনা মা, তোমাকে তো হেব্বি জোস লাগছে এই শাড়িতে। চাচ্চু আজ চোখ সরাতে পারবেনা দেইখো।”
তানি আদ্রিতার মাথায় আলতো করে চটি মেরে বলল,
“চুপ বদমাশ, মাকে কেউ এসব বলে?”
ধীরে ধীরে সবাই বেড়িয়ে এলো। ফিরোজ তিন্নিকে কোলে নিয়ে আসছে। সাথে জুহিও। তানহাও চশমা ঠিক করতে করতে এগিয়ে এলো। আবিরকে আসতে দেখে তানি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“এতো জলদিই আসলে! আরও তিন চার দিন লাগিয়ে আসতে।মেয়েদেরও এতো সময় লাগে না রেডি হতে যতটা তোমার লাগে। বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে ধরেছে।”
আবির অবিশ্বাস্য চেহারা করে বলল,
“হু ইজ বুড়ো ম্যান? আমাকে কোন দিক দিয়ে তোমার বুড়ো মনে হয়? এখনো রাস্তায় বের হলে মেয়েরা ফিদা হয়ে যায়।”
“হ্যাঁ, ওই রাস্তার কানা ফকিন্নি গুলো হবে।”
“এত্তো বিগ ইনসালাত! অরি মা,তুই ক।আমাকে কোনো দিক দিয়ে বুড়ো মনে হয়?”
“একদম না চাচ্চু। বরং তোমাকেতো নিবিড় ভাইয়ারও ছোট মনে হয়? তুমি মন খারাপ করোনা। আজ পার্টিতে একটা নতুন গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলো তাহলেই তোমার ইনসালাতের ফ্রুট কাস্টার্ড হয়ে যাবে।”
আবির আদ্রিতার কানের কাছে হালকা ঝুঁকে একটু দমানো গলায় বলল,
“এটা একটু বেশি হয়ে গেল না অরি মা?ভুলে যাস না, আমাদের কিন্তু এই বাড়িতেই থাকতে হবে। তোর সোনা মা কিন্তু ক্রাইম পেট্রোল দেখে দেখে অনেক আইডিয়া পেয়ে গেছে। আমাকে তার প্রথম কাস্টোমার না করে ফেলে।”
হাসলো আদ্রিতা। আরমান আর আহনাফ সাহেবও এলো। আহনাফ তুলির হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে আসছে। যদিও তিনি হাঁটতে পারেন তবুও সাবধানতার জন্য হইল চেয়ারেই নিয়ে যাচ্ছে। আরমান সাহেব নাতনীর কাছে এসে বললেন,
“বাহ! আমার গিন্নিটাকে তো একেবারে পরীর মতো লাগছে।”
“তোমাকেও অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে দাদু। আমাদের জুটি হিট।”
ওদের হাসি মজার মাঝে নূরানও বেরিয়ে এলো। তাকে দেখে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। নূরানকে ফর্মাল ড্রেসে মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগছে। কাঁধ সমান লম্বা চুলগুলো পেছনে ঝুঁটি বাঁধা। আজ কতদিন পর নূরানকে এমন বাহারি রুপে দেখছে তা জানা নেই।মনে হচ্ছে খাঁচা থেকে বদ্ধ পাখি বের হচ্ছে। নূরান ওর বাবার মতোই হ্যান্ডসাম হয়েছে। তবে স্বভাব পায়নি তার মতো। ওর আলাদা একটা ব্যাক্তিত্ব আছে। তানি এগিয়ে গিয়ে নূরানের মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহময় সুরে বলল,
“বাহ! আজ সবচেয়ে বেশি আমার আব্বাটাকে সুন্দর লাগছে।”
তানির কথায় নূরান লজ্জা পেল। এসব তার কাছে কেমন অড লাগে। তাই সে চুপচাপ একটা গাড়িতে গিয়ে এক কোণায় বসে পড়লো। সবশেষে আসলো নিবিড়। তাকে দেখেই আদ্রিতার হৃৎস্পন্দনের গতিবেগ বেড়ে গেল।নিবিড় ব্লু জিন্সের সাথে ডিজাইনার কুর্তা পড়েছে। যার রাউন্ড কলার,একপাশ দিয়ে কুঁচির মতো ডিজাইন আর নিচের একদিকে কোনার মতো ঝুলানো। আদ্রিতা খেয়াল করলো নিবিড়ের কাপড়ের রং আর ওর কাপড়ের রং এক। উনি কি ইচ্ছে করে ম্যাচিং পোশাক কিনেছেন? ভাবতেই বুকের মাঝে ঢাকঢোল পিটাতে লাগলো।পার্টিতো ওখানে যাওয়ার পর শুরু হবে। তাহলে আদ্রিতার এখুনি বুকের মাঝে ডিজে ওয়ালে বাবু বিট বাজাচ্ছে কেন?

ওরা গাড়িতে একে একে উঠতে নিলেই তখুনি অপরাহ্ন বাইক নিয়ে এসে ওখানে হাজির হলো। সবাইকে এভাবে দেখে বলে উঠলো,
“কিরে নিবিড়, কোথাও যাচ্ছিস তোরা?”
নিবিড় জবাব দিলো,
“হ্যাঁ, আজ ফুপিমণির বিবাহ বার্ষিকি। ওখানেই যাচ্ছি সবাই।”
“ও আচ্ছা। তাহলেতো আমি ভুল সময়ে এসে পড়লাম। আচ্ছা ঠিক আছে তোরা যা।আমি বরং অন্য সময় আসবো।”
“এসেছিস ভালো হয়েছে। তুইও চল আমাদের সাথে।”
“তা কি করে হয়?এটা তোদের ফ্যামিলি প্রোগ্রাম। আমি কি করে…
” আরে হইছে আর মেয়েদের মতো পার্ট খাইসনা। চুপচাপ চল আমাদের সাথে।”
তানিও বলল,
“হ্যাঁ অপু,চলনা আমাদের সাথে। সবারই ভালো লাগবে।”
অপরাহ্ন একবার আরচোখে তাকিয়ে মেরুন রঙের রাউন্ড জামায় আবৃত তানহাকে দেখে নিলো।শ্যামলমতী কন্যার নাকটা হালকা বুচি। এটা যেন মেয়েটাকে আরও কিউট করেছে। অভ্যাস অনুযায়ী চশমার কোন ঠেলে আদ্রিতার সাথে কি যেন নিয়ে কথা বলছে।তানহাকে দেখে হঠাৎ যেন অপরাহ্নেরও ওদের সাথে যাবার ইচ্ছে জাগলো। হয়তো এই চশমা ঠেলা মেয়েটাকে দেখার লোভ সামলাতে পারছেনা সে। জীবনের সাতাশ বসন্ত পার করে আসার পর হঠাৎই যেন কেমন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে তার অনুভূতি। তাইতো আর মানা করলোনা অপরাহ্ন। সে রাজি হয়ে গেল।

আরমান আর আহনাফ সাহেবরা এক গাড়িতে, তানি-আবির আর ফিরোজের পরিবার এক গাড়িতে আর ইয়াং জেনারেশন সব এক গাড়িতে সিদ্ধান্ত হলো। অপরাহ্ন নিজের বাইকেই ওদের গাড়ির সাথে যাবে জানালো। সবাই নিজ নিজ গাড়িতে উঠে বসলো। কিন্তু ছোট্ট তিন্নি জিদ ধরলো সে টম চাচ্চুর গাড়িতে যাবে। আদ্রিতাও ওকে কোলে নিয়ে ওদের গাড়িতে নিয়ে গেল।নূরান, তানহা আর আদ্রিতা পেছনে বসলো। নিবিড় ড্রাইভিং সিটে বসে বলল,
“তোরা কেউ সামনে আয়। আমি এখানে তোদের ড্রাইভার লাগিনি।”
নূরান বলল,
“ভাইয়া আমার সামনে বসতে অস্বস্তি লাগে। ওরা কেউ যাক।”
তানহা মাঝখানে বসা। তাই অগত্যা আদ্রিতাকেই উঠতে হলো। তিন্নিকে কোলে নিয়ে সে নিবিড়ের পাশে এসে বসলো।সানগ্লাস চোখে লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো নিবিড়। তিন্নি আদ্রিতার কোল থেকে বলে উঠলো,
“আমি টম চাচ্চুর চম্মা নিবো।”
আদ্রিতা আরচোখে একবার নিবিড়কে দেখে নিয়ে তিন্নিকে বুঝাল,
“ওটা নেওয়া যাবে না। ওটা তোমার বড়ো হবে।”
“না আমি নিবো।”
আদ্রিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিবিড় চশমাটা খুলে ওদের দিকে এগিয়ে দিলো। আদ্রিতা চশমা নিয়ে তিন্নির চোখে পড়িয়ে দিলো। তিন্নি খুশি হয়ে হাসলো। আদ্রিতা ফোন বের করে তিন্নির চশমা পড়া লুকের সাথে ছবি তুলতে লাগলো। হঠাৎ তিন্নি চশমা খুলে আদ্রিতার চোখে পড়িয়ে দিলো। আদ্রিতা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখলো তাকে এই চশমায় দারুণ লাগছে। সে প্রফুল্ল হয়ে আরও কিছু সেলফিতে গ্যালারি ডুবিয়ে ফেললো। নিজের কাজে মত্ত আদ্রিতা জানলোই না, তার এই প্রভাত কিরণের ন্যায় প্রাণোচ্ছল মুখখানা কারো বুকে প্রশান্তির ঝুম বর্ষণ করছে।

তাসিরদের বাড়ি পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলোনা। খুব একটা দূরে না, ওদের বাসা। ওদের আসা দেখে তাসির আর সানা এগিয়ে এলো। তাসির আরমান, আহনাফ আর তুলিকে সালাম করলো। আদ্রিতা পাশ থেকে বলে উঠলো,
“দামাতজী , এটা কেমন আচরণ! এখানে আমাকে সালাম দিলেন না কেন? আমি না আপনার শাশুড়ী! শাশুড়ী কিন্তু রাগ করেছে। এক্ষুনি আমার মেয়েকে এবাড়ি থেকে নিয়ে যাবো।”
তাসির মজা করে বলল,
“আরে আরে, ভুল হয়ে গেছে শাশুম্মা। শাশুড়ীকে নারাজ করার স্পর্ধা কই আমার। এইতো এক্ষুনি আপনার চরণধূলি নিচ্ছি।”
বলেই তাসির আদ্রিতার পায়ে সালাম করতে উদ্যোত হতেই আদ্রিতা লাফিয়ে সরে গেল। ওর কান্ড দেখে হাসলো সবাই।

সোফায় বসে আবির খেয়াল করলো তাসিরের মুখ কেমন শুকনো দেখাচ্ছে। আবির তাসিরের কাঁধে গুতা দিয়ে বলল,
“কিরে,এমন হুতুম পেঁচার মতো মুখ বানিয়ে আছিস কেন? সকাল সকাল কি ঝাড়ুর বারি খাইছস নাকি?”
তাসির ফোঁৎ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আর বলিস না। সানা চেয়েছিল আমি যেন ওকে রাত বারোটায় সবার আগে ওকে উইশ করি। কিন্তু আমি জাগনা পাইনি। এলার্মও দিয়েছিলাম তাও বুঝতে পারিনি। সকালে জাগনা পেয়ে ভাবলাম সবার আগে উইশ করবো। কিন্তু তার আগেই ছেলে মেয়ে দুটো এসে উইশ করে বসলো। ব্যাস, সেই থেকে রাগ করে আছে। ঠিকমতো কথা বলছেনা।”
আবির তাসিরের দুঃখে দুঃখিত হয়ে বলল,
“আহারে,আই ফিল ইউর পেইন। দোয়া করি আমার বইনডা আজ মাংসের বদলে তোরে না রান্না করে খাওয়াই দেয়। তোর মতো বুড়া গরুর মাংস মোটেও মজা হবে না।”
বলেই হাসলো আবির। ঘাড় বাঁকিয়ে কটমটে চোখে তাকালো তাসির। আবির সেটার তোয়াক্কা না করে দুষ্টু স্বরে বলে উঠলো,
“বাইদা ওয়ে, আজকে পার্টিতে আমগো এন্টারটেইনমেন্ট এর ব্যাবস্থা করছিস নাকি? কোনো আইটেম ডান্সার টান্সার হায়ার করছস নাকি?”
“তুই আর শুধরলি না। বুড়ো হয়ে গেছিস। ছেলে বিয়ে করালে দুদিন পর দাদার পদও পেয়ে যাবি। আর এখনো তোর এন্টারটেইনমেন্ট চাই?”
“আরে ধুরর,কি বুড়ো বুড়ো লাগিয়ে রেখেছিস! আরে বয়স হলো মনের ব্যাপার। মন জওয়ান থাকলেই হলো। আর আমার মন এখনও পঁচিশেই আছে। আমি কি তোর মতো নাকি, জন্মগত বুড়ো!”
“আচ্ছা ঠিক আছে জওয়ান পুরুষ, আমি বরং তানিকেই জানিয়ে দেই তোর মনোভাবের ব্যাপারে কেমন!”
আবির মেকি হেঁসে বলল,
“আরে তুইও না,মজাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নেস।এখন কি এই মাছুম বান্দা একটু মজাও করতে পারবেনা!”
হাসলো তাসির। দুনিয়া পাল্টে গেলেও এই আবিরটার আর কোনো উন্নতি হলোনা।

আয়নায় নিজেকে কয়েকবার করে দেখে নিলো আদ্রিতা।সানভি ওর মেকাপ করে দিয়েছে। এখানে এসেই সে সানভিকে ধরেছিলো সাজিয়ে দেওয়ার জন্য। আধাঘন্টা লাগিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে সে। এখন একদম নায়িকাদের মতো মনে হচ্ছে নিজেকে। এখন ফটাফট বাইরে বেড়িয়ে কয়েকটা সেলফি তুলবে। বাইরে ডেকোরেশন করা হয়েছে আজকের ফাংশনের জন্য। দুই হাতে জামার দুই পাশ ধরে নাচতে নাচতে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে। মনের আনন্দে নাচতে নাচতে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ নিবিড়ের বুকের সাথে গিয়ে তার নাক মুখ বাড়ি খেল। খানিক চমকালো আদ্রিতা। নাকে পেল আবারও সেই মনকাড়া সুবাস। বুঝতে পারলো কার বুকে ঠেকেছে সে। মুখ সরিয়ে এনে মাথা নিচু করেই বলল,
“সরি।”
বলেই দ্রুত পায়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। দু কদম এগুতেই পেছন থেকে নিবিড়ের রাশভারি কন্ঠ শোনা গেল,
“স্টপ।”
থেমে গেল আদ্রিতা। বুকের মাঝে একটু ধুকপুক করতে লাগলো। নিবিড় আদ্রিতার সামন এসে বলল,
“মাথা তোল।”
আদ্রিতা মাথা তুলল না। মাথা নিচু রেখেই বলল,
“সরি নিবিড় ভাইয়া, আমি সত্যিই দেখতে পাইনি।”
নিবিড়ের শক্ত কন্ঠস্বর,
“আমি মাথা তুলতে বলেছি তোকে।”
নিবিড় নিজেই আদ্রিতার থুতনি ধরে ঝটকায় মুখটা উপরে তুলল। আদ্রিতা চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল। নিবিড়ের চোয়াল শক্ত হলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এসব কি মেখেছিস?আসার সময়তো মানুষই ছিলি। তো এখন এমন বনমানুষ সেজেছিস কেন? তুই কি ফুপির ম্যারেজ ডে উপলক্ষে, আজ সবাইকে সার্কাস দেখানোর আয়োজন করেছিস নাকি?”
আদ্রিতা মাথা দুই দিকে নাড়াল। মানে সে এমন কোনো আয়োজন করেনি। নিবিড় বলল,
“তাহলে এমন জোকার সেজেছিস কেন? আর ঠোঁটে এমন শিয়ালের গু-এর মতো কি লাগিয়েছিস?”
রাগ হলো আদ্রিতার। লোকটার মাথায় গ্যাস্টিক আছে নাকি? আমার এতো সুন্দর সাজকে, জোকার বলছে! আর এতো সুন্দর ম্যাট লিপস্টিককে কি বিচ্ছিরি নাম দিচ্ছে! বেচারি লিপস্টিক এই অপমান সইবে কীভাবে? লিপস্টিকের এই বৃহৎ অপমানের জবাবে কিছু বলবে তার আগেই নিবিড় আদ্রিতার হাত ধরে টেনে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে গেল। রুমটা হয়তো গেস্ট রুম হবে। আপাতত খালি আছে। নিবিড় আদ্রিতাকে রুমে নিয়ে এসে হুমকি ভরা কন্ঠে বলল,
“পাঁচ মিনিট, জাস্ট পাঁচ মিনিট সময় আছে তোর কাছে। তার মধ্যেই মুখের এসব সিমেন্ট বালি তুলে জোকারের রুপ পরিষ্কার করে বের হবি। দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে এগুলো পরিষ্কার করে আয়।”

আদ্রিতা এই পর্যায়ে একটু প্রতিবাদী হতে চাইলো।মনে ছটাক খানিক সাহস জুগিয়ে নিবিড়ের আদেশ অমান্য করে আমতা-আমতা করে বলল,
“কে কেন? কেন মুছব? পার্টিতে সবাই আজকাল এভাবেই সাজে। সানভি আপুও তো সেজেছে। কই তাকেতো কিছু বলছেন না।”
নিবিড় দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“সানভি আর তুই কি এক ব্যক্তি? সানভি যা করবে তোকেও তাই করতে হবে? সানভি যেটা করে সেটা ওর ব্যক্তিত্ব।সানভি নিজেকে কৃত্রিম আঙ্গিকে গড়ে নিয়েছে, এটা ওর ব্যক্তিত্ব। তুই কেন নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় না রেখে অন্যের পথে চলবি? হংসী যদি ময়ুরের পাখনা লাগিয়ে তার মতো হতে চায়, তাহলে সে না হংসী থাকে, আর না হয় ময়ূর। মাঝখান থেকে সে নিজের নিজস্বতাও হারিয়ে ফেলে। এখন আমার রাগ আর বাড়াতে না চাইলে দ্রুত গিয়ে এগুলো সাফ করে আয় ফাস্ট। ”
নিবিড়ের কথা আদ্রিতার ছোট্ট মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারলোনা। তার মতে নিবিড় তার সাথে অযথাই রাগ দেখাচ্ছে। নিজের এতো মেহনত করে সময় লাগিয়ে করা সাজটা নষ্ট হতে বাঁচানোর প্রচেষ্টায় আদ্রিতা আরও একবার নাকচ করে বলল,
“না সাফ করবোনা। আজকের পার্টিতে আমি এভাবেই যাবো।”
বলেই সে দ্রুত বেড়িয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু সেটা আর পারলো কই। নিবিড় আদ্রিতার হাত টান দিয়ে ঝটকা মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। এক হাতে আদ্রিতার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে নিজের সাথে আঁটকে ধরলো। কেঁপে উঠল আদ্রিতা। চকিত নজরে তাকালো নিবিড়ের পানে। অগ্নি চোখ আর কঠিন মুখমণ্ডল দেখে আদ্রিতা যেটুকু সাহস অর্জন করেছিল তা,লেজ গুটিয়ে পালালো। শুকনো ঢোক গিলল সে। নিবিড় আদ্রিতার চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে বলল,
“সাফ করতে বলেছি মানে করবি তুই। নিজে থেকে করলে ভালো। নাহলে যদি আমাকে পরিষ্কার করিয়ে দিতে হয় তাহলে সেটা তোর কাছে ভালো লাগবে কিনা জানিনা তবে আমার কিন্তু মোটেও খারাপ লাগবে না। আই উড প্লেজারড টু ডু দিস।”
নিবিড়ের নজর এবার আদ্রিতার লিপস্টিক রাঙানো ওষ্ঠদ্বয়ে। সেই পানে নজর রেখেই বলল,
“বল,দিবো পরিষ্কার করে?”

আদ্রিতা নিবিড়ের কথার মর্মার্থ ধরতে ব্যার্থ। সে বোকার মতো বোঝার চেষ্টা করছে নিবিড়ের কথার অর্থ। নিবিড় আদ্রিতাকে ছেড়ে দিলো। বিছানায় এসে পায়ের উপর পা তুলে বসে আয়েশি সুরে বলল,
“পাঁচ মিনিটের দুই মিনিটের অলরেডি শেষ। আর তিন মিনিটের মধ্যে যদি এগুলো পরিষ্কার না করিস তাহলে আমি আমার মতো করে পরিষ্কার করে দিবো।ইউর টাইমস স্টার্ট নাও।ওয়ান,টু,থ্রি…….. ”
নিবিড় কাউন ডাউন করছে। হঠাৎ যেন মগজের এন্টিনা নড়লো আদ্রিতার। সঠিক সিগনালে পৌঁছাল। নিবিড়ের কথার মর্ম এবার ধরতে সক্ষম হলো সে। বিষয় টা আদ্রিতার বুঝতে দেরি তো,জামা ধরে উঁচু করে ওয়াশরুমে দৌড়াতে দেরি হলোনা। জান হাতে নিয়ে পালানোর মতো দৌড়ালো সে।”

বেঁধে দেওয়া সময়ের মাঝেই মুখের মেকাপ ধুয়ে পরিষ্কার করে বের হলো আদ্রিতা। তার এতো সুন্দর সাজটা শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে বাইরে এসে নিবিড়ের সামনে দাঁড়াল সে।নিবিড় ফোন ঘাঁটছিল। আদ্রিতাকে আসতে দেখে মুখ তুলে তাকালো। আদ্রিতার অভিমানী মুখটায় এখনো পানি লেগে আছে। চোখের পাপড়ি গুলো ভিজে আছে। সামনের কিছু চুলও ভিজে লেপ্টে আছে কপালে। এই মুহুর্তে আদ্রিতাকে শিশির ভেজা সদ্য ফোটা পুষ্প মনে হচ্ছে। তার এই মোহনীয়তা যে তার সম্মুখের ব্যক্তির অন্তর্দেশ পুড়িয়ে ঝলসে দিচ্ছে তা যদি মেয়েটা জানতো, তাহলে হয়তো আর কক্ষণো এই রুপে নিবিড়ের সামনে আসতো না সে। নিবিড় তার রপ্ত করা অভ্যাস অনুযায়ী গোপন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“মুখ মোছ। আর ড্রেসিং টেবিলের সামনে যা। আর স্বাভাবিক মানুষের মতো তৈরি হ।”

আদ্রিতা মাথা নিচু করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গেল। এই দৈত্য দানবের সাথে তার এখন কোনো কথাই বলতে ইচ্ছে করছেনা। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দেখলো আদ্রিতার ব্যবহার করা প্রোডাক্ট গুলো সেখানে রাখা আছে। আদ্রিতা একটু অবাকই হলো। বদ লোকটা এগুলো এতো জলদি কোথাথেকে আনলো! বেশি মাথা না ঘামিয়ে আদ্রিতা মুখ মুছে নিয়ে মুখে স্নো লাগালো। হালকা একটু ফেস পাউডার দিলো। চোখে একটু কাজল আর আইলাইনার দিলো। সব শেষে ঠোঁটে হালকা রঙের একটু লিপস্টিক লাগালো। কাজ শেষে থমথমে মেজাজেই বলল,
“হয়ে গেছে। এখন কি যেতে পারি আমি?”
নিবিড় তার মোবাইলে নজর রেখেই বলল,
“এখন একটু আয়নায় দেখ নিজেকে।”
আদ্রিতা মুখ কালো করেই আয়নায় দেখলো নিজেকে। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতেই চোখ দুটো চমকিত হলো তার৷ এখনতো তাকে আগের চেয়েও ভালো লাগছে। উনি সত্যিই বলছিলো। এতো এতো মেকাপের পরদে আসল সৌন্দর্যটাই হারিয়ে গিয়েছিল যেন৷ এখন এই সাধারণ ভাবেই ওকে কতো সুন্দর লাগছে। তা দেখে মন খারাপ টা দূর হয়ে গেল আদ্রিতার। মন প্রফুল্ল হয়ে উঠলো।

আয়নায় হঠাৎ নিবিড়ের প্রতিবিম্ব দেখে ঝট করে পাশে তাকালো আদ্রিতা। নিবিড় আদ্রিতার কাছে এলো। হাত উঠিয়ে আদ্রিতার কপালে পড়ে থাকা অগোছালো চুলগুলোকে আঙুলের সাহায্যে গুছিয়ে দিতে দিতে মোলায়েম সুরে বলল,
“প্লাস্টিকের ফুল যতোই সুন্দর আর টেকসই হোকনা কেন, তাতে কোনো সুবাস থাকেনা। তুই কারোর মন বাগানে ফোঁটা একমাত্র নিষ্পাপ ফুল। তোর কোনো প্লাস্টিকের ফুলের মতো কৃত্রিমতার প্রয়োজন নেই।”

নিবিড়ের বলা বাক্য গুলো সম্পূর্ণ বুঝতে না পারলেও কেন যেন খুব ভালো লাগলো আদ্রিতার। আনমনে সে তাকিয়ে রইলো নিবিড়ের পানে। মন খারাপ টা হুট করে একরাশ ভালো লাগায় পরিবর্তিত হলো যেন। নিবিড়ের শরীর থেকে সেই সুবাসটা আবারও মোহিত করছে আদ্রিতাকে। চোখে ঘোর লাগছে তার। হঠাৎ মনে তার একটা সুপ্ত বাসনা জাগছে। নিবিড়কে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে তার। ধরবো কি জড়িয়ে? উনি আবার রাগ করবেন নাতো? যদি ধমক দেন! উঠিয়ে আছাড় মারাটাও অপশনাল আছে। আদ্রিতার হিসাব নিকাশের মাঝেই নিবিড় হাত নামিয়ে বলল,
“এখন যা বাইরে। তবে সাবধানে চলবি। পার্টিতে বাইরের লোকজন আসবে অনেক। তাই একা একা বেশি থাকবিনা। তানহা আর সানভির সাথে থাকিস। ”
আদ্রিতা আনমনে বলে উঠলো,
“কেন আপনি থাকবেন না?”
চকিত নজরে তাকালো নিবিড়। কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদ্রিতার পানে। তারপর হঠাৎ মুখভঙ্গি পরিবর্তন করে বলে উঠলো,
“কেন? আমাকে দিয়ে কি করবি তুই? এই তোর ধান্দা কিরে? তুই আমার কোলে চড়ে বেরানোর ধান্দা খুঁজছিস নাতো? ভুলেও ভাবিস না। তোর মতো হাতিকে কোলে নিয়ে আমার কোমড় ভাঙ্গার কোনো ইচ্ছে নেই। যা দূরে গিয়ে মর।”

আদ্রিতার সব ভালো লাগা মুহুর্তেই হাওয়া ছোড়া বেলুনের ফুসস হয়ে উড়ে গেল। মানে সে ভেবে পায়না মানুষ এতটা বহুরূপী কীভাবে হতে পারে। অসভ্য দৈত্য দানব একটা। রাগে কটমট করতে করতে বেড়িয়ে গেল আদ্রিতা। পেছন থেকে নীরব হাসলো নিবিড়।
“আমিতো আছি,
তোর নিঃশ্বাসের কাছাকাছি।
কাঁটাতারের বেড়ায় নয়
তোকে আগলে নিতে
শুষ্ক পাতার ঢের হয়ে বক্ষ মেলে আছি।

চলব….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here